এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  খবর  খবর্নয়

  • ভোটেই বোঝা গেছে পাল্টে গেছে ত্রিপুরা

    তমোঘ্ন লেখকের গ্রাহক হোন
    খবর | খবর্নয় | ১৩ এপ্রিল ২০১৯ | ১০৯৭ বার পঠিত
  • ৯১ সালের ভোটে আমি স্কুলে পড়ি। ভোটের পরের দিন সকালে কাকুর সঙ্গে রাস্তায় বের হয়েছিলেম। আমাদের পাড়ার যে স্কুলে ভোট হয়, সেই স্কুলের বাইরে রাস্তার উপর দুতিনটি কাগজ পড়ে ছিল। ধুলো-বালি মাখা। সেখান থেকে একটি কাগজ কাকু হাতে তুলে নিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ সেটির দিকে তাকিয়ে থেকে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়েছিল কাকুর মুখ দিয়ে। জিজ্ঞাসা করেছিলেম, 'কি কাগজ?' কাকু জানিয়েছিলেন ব্যালেট পেপার। আনন্দে রাস্তা থেকে আরেকটি তুলে নিয়েছিলেম হাতে। এর আগে কোনদিন ব্যালট পেপার দেখি নি। বড়রা ভোট দেন। তাদের মুখে ব্যাল্ট পেপারের কথা শুনি। তাই জিনিসটি হাতে নিয়ে দেখার লোভ আর সামলাতে পারিনি। উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করি। কাকু কাগজটি ফলে দিতে বলতেই মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে ছিল পকেটে করে নিয়ে আসি। তারপর ঐ কাগজটি আবার রাস্তায় ফেলে দিয়ে হাঁটা শুরু করেছিলেন।

    সেদিন প্রথম ব্যালট পেপার দেখে আনন্দ হয়েছিল। মনে মনে নিজেকে একটু বড় ভাবতে শুরু করি। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করেছিলেম আমি ব্যালট পেপার দেখেছি। যেটাতে ভোট দেয়, বুঝিয়ে বলেছিলাম বন্ধুদের। একটু বড় হবার পর বুঝতে পেরেছি ব্যালট পেপার রাস্তায় পড়ে থাকার জিনিস না। আর ব্যালট রাস্তায় এসে পড়ে থাকলে বুঝতে হবে দেশের সামনে বড় বিপদ। যেভাবে মন্দিরের বিগ্রহ রাস্তায় পাশে পড়ে থাকে না। তেমনি ব্যালট পেপারও নির্বাচন কেন্দ্র থেকে বাইরে এসে পড়লে ভালো দেখায় না।

    ১৯৯১ সালে সেবার ত্রিপুরার পশ্চিম আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন সন্তোষ মোহন দেব। তিনি নাকি রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। প্রায় চার লাখ ৩০ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। রেকর্ডের নমুনা ছিল এই রকম, মোট যা ভোট পড়েছিল তার ৮৩.৪৭ শতাংশ পেয়েছিলেন সন্তোষ মোহন দেব। সেবার নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন দশজন। সন্তোষ মোহন দেব ছাড়া বাকি নয় প্রার্থী কেউ ছয় শতাংশের বেশি ভোট পান নি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মানিক সরকার সেবার ছয় শতাংশের সাম্নায় বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সেদিন এই ছিল ত্রিপুরার পশ্চিম আসনের লোকসভা ভোটের চিত্র। সেই ভোটের হিসেব মেলাতে নির্বাচন কমিশনের দুদিন সময় লেগেছিল। এমন মারাত্মক ভোট নিয়ে যদিও অনেক কংগ্রেস কর্মী আজো লজ্জা পান।

    গত তিন দশকে এমন মারাত্মক ভোট আর দেখেনি ত্রিপুরা। এরপরও ত্রিপুরায় বহু ভোট হয়েছে। অনেক ভোট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গীদের বন্দুকের নলের নিচে ভোট হতেও দেখেছে ত্রিপুরার মানুষ। ২০০০ সালে ত্রিপুরা স্বশাসিত জিলা পরিষদের ভোটে কিছু কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীরা নিজেরাই ভোট করেছিল। ভোটের আগে সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের লোকজনদের, এমনকি সিপিএম নেতাদের সেবার অপহরণ করেছিল জঙ্গীরা। কিন্তু এ ধরনের আতঙ্ক কায়েম হলেও তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে নি। অন্য অংশে মানুষ প্রতিবাদী হয়ে নিজের মত নিজে প্রকাশ করেছিলেন। কখনো কখনো সিপিএমের দিকে ভোটে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে বিরোধীরা। তাও কিছু কিছু পকেটে। কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের এলাকায় জোর করিয়ে ভোট করিয়ে জয়ী হয়েছেন ত্রিপুরায়। কিন্তু রাজ্যের ইতিহাসে তারা কেউ একবারের বেশি স্থায়ী হন নি। পাঁচ বছর পরেই মানুষ তাদের বিদায় দিয়ে দিয়েছেন।

    কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে বৃহস্পতিবারের লোকসভার পশ্চিম আসনের ভোট ত্রিপুরাতে। একদম শহর থেকে গ্রাম। গ্রাম থেকে পাহাড়। সর্বত্র রিগিং'এর অভিযোগ উঠেছে। জোর করে ভোট দিতে দেয়া হয় নি। প্রকাশ্যে এসেছে ভোটে প্রহসনের ছবি। বিধায়করা নিজেরা পুলিসের উপর চাপ প্রয়োগ করেছেন তাদেরকে জায়গা ছেড়ে দেবার জন্য। মাথা নিচু করে সেই উর্দিধারী দাঁড়িয়ে রয়েছেন শাসক দলের বিধায়কের সামনে, এ ধরনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মহিলাদের রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ভোটের আগের রাত থেকেই গোটা লোকসভা আসনের সর্বত্র সন্ত্রস্ত করা হয়েছে সাধারন মানুষকে। এমন ধারার ভোট ত্রিপুরার মানুষ কোনদিন দেখেন নি।

    সেদিন রাস্তায় ব্যালট পেপার দেখে অবাক হয়েছিলাম। আজ আগরতলার রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে পাড়ার আড্ডায় শুধু ভোট দেবার গল্প। কিভাবে আটাকানো হয়েছে, ভোট দিতে যাবার সময় কি বলে দেয়া হয়েছে, ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে কিভাবে তাদের উপর নজর রাখা হয়েছে শুধু তা নিয়েই আলোচনা চলছে।

    এক বছর আগে গণতন্ত্রের কথা বলে ত্রিপুরার মসনদে বসা দলটি নিজেরাই বুঝতে পারলেন না তারা কতবড় সর্বনাশ করে ফেলেছেন। নিজেদের যাচাই করার যে সুযোগ তারা পেয়েছিলেন তা তারা হারিয়েছেন। অন্যদিকে মানুষকে এক বছরেই তারা বুঝিয়ে দিতে পেরেছেন গণতন্ত্রের কথা স্রেফ একটা ভাঁওতা তাদের কাছে।

    ৯১ সালের ভোটের পর ত্রিপুরা থেকে সন্তোষ মোহন দেব একটা অন্য নাম নিয়ে ফিরেছিলেন। ত্রিপুরার মানুষ এখনো তাকে সেই নামেই চেনেন। সন্তোষ মোহন হয়ে গিয়েছিলেন 'সন্ত্রাস মোহন'। এবারের ত্রিপুরার নির্বাচন শাসক দলকে কি পরিচয় দেয় তাই এখন দেখার।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • খবর | ১৩ এপ্রিল ২০১৯ | ১০৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 2345.110.674512.162 (*) | ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২৬78060
  • এসব বাকি দেশ কতটা জানছে?

    এদিকে ত্রিপুরায় ভোট পিছালো?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৯78061
  • সেসব তো বুঝলাম। কিন্তু বিজেপি কি হারবে?
  • pi | 7845.15.230123.200 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৯78062
  • এরকম সন্ত্রাস না হকে তো হারতই, অনেকে বলছেন।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২১78063
  • সেতো হারতই। সেইজন্যই তো এমন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। কিন্তু এইবার হারানোটা খুব দরকার ছিলো। নইলে ত্রিপুরা পুরো অন্ধকারে চলে যাবে।
  • pi | 7845.15.230123.200 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৫78064
  • পরের ফেজ পিছিয়েই গেছে, আধা সামরিক বাহিনি পর্যাপ্ত নেই বলে। কিন্তু এই ঘটনাগুলো ত্রিপুরার বাইরে আদৌ জানছেন ক'জন!

    কোন মিডিয়ায় পড়ছে দেখছেন সেভাবে?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৪78065
  • পিছিয়ে দেওয়ারটা এসেছে। ইন্ডিয়ায় আর কোনোদিন বোধয় শান্তিতে সুস্থভাবে ভোট হবেনা। আর কোনোদিন ভোটও নাও হতে পারে।
  • Du | 7845.184.4556.246 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৬78066
  • ইলেকশন কমিশনার মন্ত্রীর গুন গেয়েছে শুনলাম। আমি যা জেনেছি শুধুই ব্যক্তিগত সূত্রে
  • pi | 7845.15.230123.247 (*) | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:০৩78069
  • ত্রিপুরার গ্রুপে এসব আসছে:)

  • po | 2345.111.8912.33 (*) | ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৩৬78070
  • এবিপি আনন্দতে এই গুঁফো লোকটা কে? যিনি এখন বলছেন, ত্রিপুরায় ছিলাম, কী শান্তিপূর্ণ ভোট, আর ভোট নিয়ে কোন কিছুই নেই, লিখন, পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, পতাকা কিছু নেই!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন