গরম লাগছিল প্রচন্ড। কিভাবে এই জ্বালা থেকে মুক্তি পাই, সাজেশন চাওয়ায় বিল্লি তৎক্ষণাৎ বললো, তিব্বত গেলেই পারো। আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম, "বলে কী! তিব্বত? যাওয়ার জোগাড় করতে করতেই তো ঘেমে নেয়ে মরে যাব!" বিল্লি একটুও না দমে বললো, "সে মরতে পারো, কিন্তু একবার চেষ্টা চরিত্তির করে যদি পৌঁছে যাও তিব্বতে, দেখবে এ জীবনের মতো গরম উধাও হয়ে গেছে! তাপ্পর যতই যাও বীরভূম বা আফ্রিকা, গরম আর লাগবে না। এমনকি বরাত থাকলে পরের জন্মে গ্রিনল্যান্ডেও জন্ম হতে পারে।" ... ...
ছাদের পাঁচিল টপকে পাশের ছাদে গিয়ে খেলার সময় কখনও টের পাই নি যে দু’একটা কুচোকে বাদ দিলে বেশিরভাগই আমাদের দু’ভাইয়ের থেকে বয়সে বড়। ক্রমশঃ ওদের মুখের ভাষা বদলাতে লাগল। আমরা নতুন নতুন শব্দ শুনে ভোকাবুলারি বাড়াতে লাগলাম। যেমন, তিনক্লাস উঁচুতে পড়া নন্টে হয়ত ঝগড়া হলে ফন্টেকে বলল — যা না , এখানে টাইম পাস না করে নিজের মালের পেছনে ছোট্ ! ... ...
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিও’র ব্যানারে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু ও সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার। যতদূর জানা গেছে রেহনা মরিয়ম নূর একজন নারী শিক্ষকের গল্প, তার জীবন সংগ্রামের গল্প। নারী শিক্ষক চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজমেরি হক বাঁধন। ছবিতে বাঁধন ছাড়াও অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্রডাকশন। ... ...
কৃষিকাজের জন্য হেবার-পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদন আজ একটি বিশাল শিল্প। প্রতিটি মানুষের দেহে যে নাইট্রোজেন, তার সবচেয়ে বড় অংশটাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত হয়। এটা খুবই সম্ভব যে, আমি এবং আমার মতো অধিকাংশ মানুষই জন্মাতই না, যদি না ফ্রিটজ হাবের, হেবার প্রসেস আবিষ্কার করতেন। ... ...
হাতে লেখা পান্ডুলিপির প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল ... ...
ঠিক যেমন কবিতা আসলে একটাই, আমরা কেবল নাম দিয়ে তাকে ভাঙি, পথকেও আমরা ভেঙে নিই বছরে। নতুন, পুরোনো, ইত্যাদিতে। কিন্তু তাতে পথের মনে হয় বিশেষ কিছু আসে যায় না। ... ...
কেন এরকম জড়িয়ে যায় সব স্বাদ, রঙ, গন্ধ, আলো, সাজ আমার স্মৃতিতে? কেন স্মৃতির চেয়েও বেশি ভাস্বর হয়ে ওঠে গ্রন্থি ছুঁয়ে থাকা এক-একটি সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়া সুতো? ... ...
কফিহাউসের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল ধীমানের। কফিহাউস বলতে যাদবপুর কফিহাউস। কলকাতায় কফিহাউস মোট তিনটে, অন্তত ধীমান তাই জানে। কিন্তু অন্য দুটো কফিহাউস ধীমানের তেমন পছন্দ নয়। কলেজ স্ট্রীটের কফিহাউসটা একটা প্রাগৈতিহাসিক, অন্ধকার গুহার মত মনে হয় আর সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এরটায় ঢুকলেই মনে হয় কোন অফিসের ক্যান্টিন। যাদবপুর কফিহাউস সে তুলনায় অনেক বেশী খোলামেলা, এখানে অনেক বেশী আলো হাওয়া। ... ...
করোনা দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর ভারতবর্ষের কিছু জায়গায় কিছু চরিত্র কিছু ঘটনা। ... ...
দানিশ সিদ্দিকির কাজ নিয়ে একটা লেখার কথা ভেবেছিলাম। হয়তো কয়েক বছর পর হত, আবার হয়তো কোনওদিনই হত না। স্বাধীন ভারতের একমাত্র পুলিৎজার জয়ী ফোটো জার্নালিস্ট, তাঁর কথা দেশের মানুষ জানল তালিবানের হাতে মারা যাওয়ার পর। দানিশের কেরিয়ার আর ছবি নিয়ে বিশেষ আলোচনাও হল না, ন্যারেটিভ ঘুরিয়ে দেওয়া হল অন্যদিকে। ... ...
ইদানিং খেয়াল হয়েছে যে গিটারটা ভাল করে শেখা হয় নি, ভাল করে শিখে বাজানো হয় নি। আঙুল কাঁপে, এমনকি কখনও কখনও গিটারশুদ্ধু পুরো অবয়ব কাঁপে, ধপাস করে সবশুদ্ধু চেয়ার থেকে পরেও যান - কিন্ত সুর আঁকড়ে ধরে থাকেন। ... ...
যখন দেখলাম আমার এইচ আই ভির পুরো গোপন ব্যাপারটা হাট হয়ে গেল, তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এসব নিয়েই চলব। যত বেশি আমি আপসেট হব ততবেশি সমাজ আমার ঘাড়ে চেপে বসবে। যতই জানি একই সুঁচ- সিরিঞ্জের ব্যবহারে, সংক্রমিত রক্ত বা রক্তজাত দ্রব্যের সংবাহনে, এমনকি গর্ভবতী মা যদি এইচ আই ভি আক্রান্ত হন তাহলে তার ভবিষ্যৎ শিশুর এইচ আই ভি সংক্রমণ হয়। তবুও অসুরক্ষিত বা বিনা কন্ডোমে যৌনমিলনে এইচ আই ভি ছড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেননা খিদে ঘুমের মত সেক্সটাও যে মানুষের জীবনে অপরিহার্য। আর সেক্স নিয়ে আমাদের অনেকরকম ট্যাবু, অনেকরকম ঢাকঢাক গুড়গুড়। আর তাছাড়া তথাকথিত যৌনতার বাইরের যৌনতা তো এই সেদিনও আইনস্বীকৃত ছিল না। এর ওপর ছিল আমার চূড়ান্ত নীতিবাগীশ দায়িত্ব। তাই যত বেশি আমাকে কোনও সম্পর্কে যেতে দেখলে লোকে আমার এইচ আই ভি নিয়ে বাকীদের সাবধান করত, তার থেকেও বেশি আগেভাগে কোনও ক্যাজুয়াল সম্পর্কে যেতে হলে আমার এইচ আই ভি নিয়ে আমিই সোচ্চার হয়ে বলতে শুরু করলাম। তাতে করে আমার যৌনজীবনটা অনেকটা কম্প্রোমাইজড হলেও মনে হত সুখের থেকে স্বস্তি ভাল। যদিও আজ আমার অনেক বন্ধুই সম্পর্কে আছেন যাদের একজন এইচ আই ভি আক্রান্ত আর অন্য জন এই আই ভি আক্রান্ত নন। ... ...
আমরা বাচ্চারা ফুটপাথ আর গলির মুখে চার আনার রবারের বল নিয়ে ক্রিকেট খেলায় মশুগুল। ব্যাট করছে নীচের তলার আখতারদা -- নিলোফারের ছোড়দা -- ক্লাস এইটে পড়ে। বল করছি আমি, ক্লাস টু। লোপ্পা বলটায় আখতারদা এমন মারলো যে রাস্তা পেরিয়ে সার্কাস হোটেলের বারান্দায় শিককাবাব তৈরির উনুনের পাশে গিয়ে পড়লো। ওরা গেল খেপে, বল আটকে রেখে দিল। আখতারদা গিয়ে কীসব বলে নিয়ে এল বটে, কিন্তু তারপর ব্যাটটা অভিজিতের হাতে দিয়ে নিজে বল তুলে নিল। ... ...
কিশোর কবি সুকান্ত এসব ছড়া লিখেছিলেন সম্ভবতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলিতে বেলেঘাটায় বসে। আমাদের বাড়িতে রেডিও এল ১৯৫৭ সালে, তখন ক্লাস টু’তে পড়ি। এর আগে কাকারা রেডিও ভাড়া করে আনতেন মহালয়ার একদিন আগে, বাড়ির সবাই ভোর চারটেয় উঠে ‘শ্রীমহিষাসুরমর্দিনী’ শুনবে যে! সেটা আসলে কালীবাবুর ইলেক্ট্রিকের দোকানে তৈরি লোক্যাল সেট, খালি কোলকাতা ক’ স্টেশন শোনা যায়। ... ...
বুড়ার গেস্ট হাউসে জায়গা নেই, কারণ দুটো মাত্র ঘর। সে দুটোয় আমি এবং দুই বাঙালি দিদি আগে থেকেই রয়েছি। তাই আমার বস কোসলে স্যার আর বিলাসপুরের এসপি মিঃ শ্রীবাস্তব রাজবাড়িরই একটা ঘরে আস্তানা গেড়েছেন। ওঁরা সন্ধ্যেবেলা পৌঁছে আগে কুমারসাহেব এবং থানেদার ঈশ্বর পান্ডের সঙ্গে কথা বলে সব শুনে নিয়েছেন। জবানবন্দীর ফাইলের এক সেট কপি এখন ওনাদের কাছে। বডি রয়েছে বুড়ারের সরকারি হাসপাতালের মর্গে। সেখানে পাঠানোর আগে থানেদার ঈশ্বর পান্ডে বডি যে অবস্থায় মাটিতে পড়ে ছিল তার ছবি তুলে নিয়েছেন। হাসপাতালের ডাক্তার রক্তের স্যাম্পলও নিয়েছে। ... ...
সুজিত ডাক্তার চোঁয়া ঢেঁকুরের রুগী দেখতে এসে আধঘন্টার মধ্যে লিভার ক্যান্সার প্রেডিক্ট করে "খুবই ভয়ের ব্যাপার" বলে শেষ করেছেন। সেই থেকে ভিড় জমে গেছে সান্যালের আঙিনায়; গুমরে-ডুকরে বিলাপ উঠছে -- ডাক্তারবুড়োর সহজ কালমেঘের অঙ্কে যে সমস্যা মিটতে পারতো, এখন মনে হচ্ছে অঙ্কলজিস্ট ছাড়া গতি নেই। মুড়িমাসিও নাকিসুরে কেঁদে বললো, তার মুড়ির ধুলো চোখে ঢুকে করকর করছিল, সুজিত ডাক্তার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক ঝলক দেখে নাকি বলেছে, রেটিনা ফেটে গেছে। ... ...
বেলা ১টা নাগাদ পৌঁছে গেছিলাম কার্জন পার্কে। সে এক উৎসবের মেজাজ সারা পার্কটাকে ছেয়ে ফেলেছে। জায়গায় জায়গায় গোল হয়ে বসে গেছে গানের দলগুলো। এখানে অরণি তো ওখানে মাস সিংগার্সের বন্ধুরা। ওদিকে উত্তরপাড়ার ইউনিট থিয়েটারের (যারা ‘হচ্ছেটা কী’ আর ‘লাশ বিপণি’ করত) বন্ধুরা নাটকের একটা বিশেষ অংশের মুভমেন্টগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছে। এদিকে আরএকজন একটা আশ্চর্য মূকাভিনয় করে দেখাচ্ছে - প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে সামনের দিকে কিন্তু আসলে পেছনে হাঁটছে - ইন্দিরার ‘প্রগতিশীলতার’ আসল চেহারা। ... ...
ছোটবেলায় কাজ ছিল, নতুন নতুন রাস্তায় গিয়ে সে রাস্তার নাম দেওয়া দেশের মতো করে। তখন মাথায় সবে সবে কলম্বাস! একটা কানাগলির নাম ছিল বারান্দাপুরী, সে গলির বাড়িগুলোর বারান্দা আমরা কিনে নেব। ঝিলের পাশের যে ঘরোয়া আলোছায়া রাস্তা, তার নাম দি রেখেছিল দীঘিনগর। এই দীঘিনগর নাকি অভিশপ্ত। দীঘিতে যারা যারা আজ অব্দি ডুবে গেছে, রাত্রে ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁলে জলে নাকি আজও বুদবুদ ওঠে, জলে কি যেন ভেসে ওঠে … ... ...
ফুলবানু বাস-টারমিনাল এলাকাতে থাকতেই পছন্দ করে। বাস-টারমিনালে ঢুকতে দশ টাকা দিতে হয় বটে, তবে এখানে আয় ভালো। কল্যাণপুর থেকে শত শত বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু ওখানকার মানুষগুলো দান-খয়রাতে তেমন পটু না। হাতটা বড়িয়ে দিলেই রেগে যায়। গাবতলী বাস-টারমিনালই তার পছন্দ। এখানকার মানুষগুলোর বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায় এরা কল্যাণপুরের মানুষগুলোর চেয়ে অর্থবিত্তে কমা। তবুও এরাই বাসে ওঠার আগে না হলেও দু’ টাকা দেয়। জ্ঞান হওয়া অবধি সে এখানেই। ... ...