ঈশ্বরের সংসারকোনও এক প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে, মাধ্যমিকের বাংলা কোয়েশ্চন পেপার হাতে পেয়ে তাতে চোখ বোলানোর আগে বিড়বিড় করে মানুষের নাম নিয়ে মাথায় কাগজটা ছুঁইয়ে নেয় ঈশ্বরের ভাইপো। মানুষের উদ্দেশে প্রণাম ঠুকে মনে মনে বলে, ‘প্লিজ, রচনাটা কমন পাইয়ে দিও!’অফিসে বেরনোর আগে ভিজে গায়ে পরনে গামছা ঈশ্বরের দাদা দেওয়ালে টাঙানো মানুষের ছবিতে চট করে মাথা ছুঁইয়ে নেন! তারপরে স্ত্রী’কে উদ্দেশ্য করে বলেন, কই গো ভাত দাও! অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো! তারপরে ফের ছবির দিকে মাথা ছুঁইয়ে ফের বিড়বিড়িয়ে ... ...
আমি আর সায়ন ফিরছিলুম একসঙ্গে অটোতে। এইট বি থেকে গড়িয়া। সায়ন শুধালো, শিবাংশুদা, কেমন লাগলো আজ? তখনই প্রথম আমি আলাদা করে ভাবতে প্ররোচিত হলুম। ঠিকই তো। কেমন লাগলো আমার এইসব কিছু। জানি, এই প্রশ্ন তো আমাকে আবার করা হবে। করা হলো। অনেকরাতে। স্বয়ং পাইদিদি। জীবনে প্রথম এতোজন উন্মোচিত সমকামী ও বৃহন্নলা মানুষজনের সঙ্গে এতোক্ষণ কাটালুম। তাদের কথা শুনলুম। তাদের ভাবনার জগতে রু-ব-রু মহড়া নিলুম। প্রথমবার এ জীবনে।কিছু বলার আগে একটা অব্স্থান নিতে হয়। 'সামাজিক অবস্থান'। নিত্য দেখি, 'মানবিকতা' নামক একটি ... ...
।। ধ্বংস থেকেই নতুন জন্মায় ।।সেই কবে কার্ল মার্ক্স ব্রিটিশদের ভারতে উপনিবেশ করা নিয়ে কত কথা বলে গ্যাছেন। সেই ১৮৫৩ সালে।“How came it that English supremacy was established in India? The paramount power of the Great Mogul was broken by the Mogul Viceroys. The power of the Viceroys was broken by the Mahrattas. The power of the Mahrattas was broken by the Afghans, and while all were struggling against all, the Briton rushed in and was enabled to subdue them all. A coun ... ...
...পার্মিয়ান এক্সটিংশন কীভাবে হয়েছিল, সেই খবর এখনো আমাদের অজানা। ইঙ্গিত পাওয়া যায় শুধু, টুকরো টুকরো, আবছা, অনিশ্চিত। এক পৃথিবী প্রাণের প্রায় সবটুকু নিংড়ে নিয়ে গেল যে ঘটনা, তার দাগ রয়ে গেছে এখানে সেখানে। যারা শুনতে জানে, তাদের কাছে সেই অতীত এখনো কথা কয়। আমরা ঘরে বসে কাগজেপত্রে সেই বয়ান পড়ি। অদেখা, অচেনা জীবনের ছায়া আমাদের মনে এসে পড়ে, যারা মুছে না গেলে এই উপন্যাসে আমাদের অস্তিত্ব লেখা হত না। ... ...
শুশুনিয়াকথা______[থিয়েট্রিক্স-সেপার এবারের ওয়ার্কশপ](১)যেখানে ছিলাম তার ঠিক পেছনের দিকটায় একটা পাহাড় উঠে গিয়েছে ঢেউ খেলানো মালভূমির জমি ফুঁড়ে। সারা গায়ে তার গাছের পোশাক। সবুজ আর সবুজ। তার মাথার উপর দিয়ে সীমানাহীন একটা আকাশ ঝুলে আছে, খুব লঘু হয়ে যেন। দেখতে চেয়েছে আমাদের খেলাধূলো। যখন যেমন আমরা বদলাচ্ছি সেও বদলাচ্ছে তার মেজাজ। ভোরের ঘুম জড়ানো ভার কাটিয়ে দিনের মধ্যে প্রখর হয়ে উঠছে। তার ঘুমের আলস্যর পাশ দিয়ে ছেলেমেয়েরা হেঁটে গিয়েছে পাহাড়ের চূড়োয়। বেশ ... ...
সত্যেন্দ্রনাথ বসু মশাইকে দিয়েও এই গল্পটা শুরু করলে খারাপ হয় না। দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি এমন এক দেশে জন্মেছিলেন, যে, সেখানকার লোকে তাঁর কাজ সম্পর্কে এক বিন্দু না জেনেও তাঁকে আইকন বানিয়ে দেবার আগে দু-বার ভাবে না। ইউরোপে জন্মালে বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি আরো বেশি স্বীকৃতি পেতেন, হয়তো নোবেল পুরস্কারও পেতেন, কিন্তু হিরো-বুভুক্ষুর দল তাঁকে নিয়ে এমন উৎকট মাতামাতি করত না (কতটা উৎকট তার পরিচয় পরে দেব)। সত্যেন্দ্রনাথ ঠিক কী করেছিলেন? ... ...
বাইরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে। জীবন্ত সম্প্রচারের সময় হয়ে এল। এই গুহাতে কোনো প্রাকৃতিক আলো , হাওয়া আসে না। গুহার নকল সিলিংকে পেঁচিয়ে শুয়ে আছে গোলাপি এলইডি আলোকলতা। তাদের ফুলের আভায় সারা ঘরে এক অদ্ভুত হালকা আলো আঁধারির খেলা। ... ...
চৌমাথায় একটি নড়বড়ে প্যাকিঙ বাক্সের ওপর কোনোমতে দাঁড়িয়ে নিজেকে ব্যালান্স করতে করতে বক্তৃতা দিচ্ছেন জরি ননি। সামনে পাহারারত নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। নিয়মমত এই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটপ্রচারের সাত দিনের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচটি স্ট্রীটকর্ণার মিটিং করতেই হবে বিরোধী প্রার্থীকে। প্রথম পাঁচদিন জরি ননি কাটালেন খেলাধুলো করে খেয়ে দেয়ে আয়েশ করে। আর মাঝে মাঝে হা হুতাশ করছেন – আর ক-দিন বাকি – ওরে বাবা পাঁচ পাঁচটা মিটিং – কবে করব – আমার কী হবে। কী কুক্ষণে যে সেবার নৈহাটি বেড়াতে গিয়ে তিনমাসের জায়গা ... ...
এবারের বিষয়বস্তু দুদফা মাস্ক পরা ও আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই লেখা ... ...
- এই ইলেকশানে তো খরচা আছে ! অন্তত তোমার ছবিওলা কয়েকটা লিফলেট ছাপাতে হবে না ? সেটা কোথা থেকে আসবে? পার্টি দেবে , না আমাকে দিতে হবে ? - তুমি লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বহুদিন কাজ করছ কিন্তু জানো কি কাকে শর্ট ক্যানভাসিং বলে ? ইলেকশন ফাইনান্সিং? আমি কত খরচা করতে পারি তার লিমিট আছে , কাউন্সিল ইলেকশনে পনেরশ পাউনড , পারলামেনট ইলেকশানে চুয়ান্ন হাজার পাউনড । পার্টি টাকা তোলে নানান ভাবে । এই আলোচনাটা কাল করতে পারি ? ... ...
মদের চাট হিসেবে শুধু পাকোড়া ছাড়া আর কিছু মেলে না l ঘরের পাশে কিছু নেই l শুধু কাশ ফুলের একটা ছোট বন l আর দুরে পাহাড় l আর কাছে বিস্তার l এবড়ো খেবড়ো l ঘরে টিভি নেই l এসি নেই l আর যা নেই, তার নাম কোলাহল l নীরবতার কলতান আছে l এক্ষণে মনে হয় স্তব্ধতার গান শুনি l দু পাশে জানালা l কাচ দেওয়া l আর ঘর ভরা দিনের আলো l বড় টিউবলাইট নাকি কাল থেকে খারাপ l ভাগ্যিস! তাই সাঁঝবেলার পরে নিবু নিবু আলো, হালকা পোকা আর নাছোড় ঝিঁঝিঁ পোকাদেরও হেরে গুম হয়ে থাকা l ঘরের পাশে কিছু নেই-টা ভুল l বেরিয়ে দেখলাম l আবার l ওদের ... ...
আফ্রিকায় নেকড়ে না থাকলেও নীলনদে কুমীরের কোনো অভাব ছিল না। এবং সেসব নাকি ছিল বেশ হিংস্র, বিশেষতঃ এই কোম ওম্বো-র আশেপাশে তাদের প্রচুর সংখ্যায় মিলত। মিশরের মানুষজন নীলনদ পারাপার করতেও ভয় পেতেন রীতিমতো। সেই ভয় আর বিপদ কাটাতে সুতরাং আবির্ভাব হলো দেবতা সোবেক-এর। সোবেক এর দেহ মানুষের হলেও মুখমন্ডল কুমীরের। হোরাসের মুখ যেমন বাজপাখির। সোবেক-এর সঙ্গে হাথোর কেন এক মন্দিরে যুগ্মভাবে পূজিত, সে রহস্য এখনও অধরা! ভক্তরা যেভাবে তাদের ভগবান-কে পেতে চায়; নইলে এই সোবেক ছিলেন হোরাসের কাকা সেথ-এর অনুসারী। অতএব হোরাসের পরম শত্রু। বলা হয়, সেথ যখন হোরাসের কাছে পরাজিত হলেন, তার সঙ্গীসাথীরা কুমীরের রূপ ধরে নীলনদ বেয়ে পলায়ন করেন, সোবেক তাই এই কুমীর-এর প্রতীক এবং দেবতা। আর সোবেক-এর পুজো করলে কুমীরের হাত থেকে মুক্তি। ... ...
একদা রামচন্দ্র গিয়াছিলেন বনে, / সীতারে করিল হরণ মায়াবী রাবণে। / আহা বেশ বেশ বেশ!/ রামা তখন শান্তমুর্তি, না হয়ে অবাক, / লক্ষ্মণেরে দিলেন বলে ‘যা গেছে তা যাক! / আহা বেশ বেশ বেশ! ... ...
প্রতি সন্ধ্যায় শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় থেকে মাত্র কয়েক ফার্লং দূরে যশোর রোডের ডানদিকে দেড়তলা বাড়িটা অন্ধকারেই থাকে। রাত ন'টা নাগাদ পুট করে গেটের আলোটা জ্বলে ওঠে। কোলাপসিবল গেটে চাবি তালার খুট খুট ধাতব শব্দ। সিঁড়ির আলো জ্বলে। ডাইনিং প্লেস, বেডরুম, বাথরুমে যাবার প্যাসেজ এবং সবশেষে বাথরুমের আলোগুলো পরপর জ্বলে উঠতে থাকে।আরামবাগের ফ্রোজেন চিকেন আরেকবার ডিপ ফ্রিজে ঢোকে। ব্রকোলি গাজর ক্যাপসিকাম স্টাফড্ মাশরুম হিমগর্ভে পরপর সজ্জিত হয়। বাথরুমের দরজার ... ...
আমাদের গ্রামে যে সব ইউক্রেনিয়ান পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হবে তাঁদের আজ এক লম্বা প্রশ্নোত্তরের ফর্ম ভর্তি করতে হচ্ছে – এই সব শিশু এবং তাঁদের মাতারা যে সন্ত্রাসবাদী বা অলিগারকের সন্ততি নন সেটি প্রথমে প্রমাণ করতে হবে। এই পদ্ধতির কেতাবি নাম ভেটিং। বিশ বছর আগে চেলসি ক্লাব এবং লন্ডন শহরে একাধিক অট্টালিকা কেনার সময়ে রোমান আব্রামোভিচকে ব্রিটেন কোন প্রশ্ন করে নি। আজ অন্তত মুখরক্ষার্থে ব্রিটিশ সরকার এইসব অপ্রিয় প্রশ্ন করছেন। মিখাইল ফ্রিডমান গত সপ্তাহে লন্ডনে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি সেই ডাক্তারের ২০০ পাউনডের ফি দিতে পারেন নি – সব টাকা আটকে আছে। ... ...
প্রিয় লেখককে নিয়ে মুগ্ধতা খুব স্বাভাবিক। যেমন প্রিয় নায়ক বা প্রিয় খেলোয়াড় । এই 'প্রেয়তা' আসলে কাঁচের দেওয়াল, চোখের কাছে স্পষ্ট, বাধাহীন, স্পর্শসম্ভব । কিন্তু ঘটনাটা সেভাবে ঘটেনা। চোখ ছুটে চলে, মনটাও; কিন্তু ছোঁয়া যায়না। কবি বা লেখকরা যে চরিত্র বা অলীকজগতকে তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন, তাঁরা নিজেরা কিন্তু সেই জগতের অধিবাসী ন'ন। ধরা যাক, সেই কিম্বদন্তী সময়ের শীর্ষেন্দু। সদ্য কলেজে গিয়েছি তখন। প্রতি সপ্তাহে 'যাও পাখি' ছিলো আমাদের বন্ধুদের আকাঙ্খার ঘর। আমি হয়তো তার আগে 'পারাপার' ... ...
পাড়ার নিজস্ব পেপারওয়ালা, সব্জিওয়ালা, ঠাকুরমশাই ও নাপিত কাকু থাকত। পাড়ার এক ঘরের মাস্টারমশাই, বেশ ক ঘরের হয়ে যেতেও সময় নিত না। তখন মোবাইল নেই, এক বাড়িতে ফোন বাজলে অন্য বাড়িতে ছুটে যেতে হত। শোনাতে হত তাদেরকেও হাল সমাচার। ছাদের অ্যান্টেনাগুলো নিজেদের মধ্যে চুপিচুপি গল্প সেরে নিত। দড়িতে দড়িতে শুকোত লাল-নীল ছাপা শাড়ি... কাঁটা ঘুড়ি অনেকদিন ঝুলে থাকত ইলেক্ট্রিকের তারে...আর সার বেঁধে পাখিরা কখনও ওতে বসে তাদের মিটিং সারত... ... ...
একটি আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির অপব্যবহারের কথাএকটা শিঙাড়ার জন্যেঃ মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বুকের ব্যথা নিয়ে শহরের সবচেয়ে নামকরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি। ভালোয়-মন্দয় মিশিয়ে গড়িয়ে, হোঁচট খেয়ে সংসারটা চলছিল। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এই উটকো ঝামেলা। কর্তাবাবু শীতের সন্ধেয় শখ করে ফুলকপির শিঙাড়া খেয়ে কয়েকবার চোঁয়া ঢেকুর তুলেলেন। রাতের খাবারও ভাল করে খেতে পারেন নি। শুতে যাবার সময় একবার বমিও করলেন। রাত ২টো নাগাদ বুকে একটা চাপ অনুভব করলেন। গরম জল আর বাঙলির পেটে ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...