এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাঙালনামা ৪

    Suddha Satya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ | ১৪৯০ বার পঠিত
  • ।। ধ্বংস থেকেই নতুন জন্মায় ।।

    সেই কবে কার্ল মার্ক্স ব্রিটিশদের ভারতে উপনিবেশ করা নিয়ে কত কথা বলে গ্যাছেন। সেই ১৮৫৩ সালে।

    “How came it that English supremacy was established in India? The paramount power of the Great Mogul was broken by the Mogul Viceroys. The power of the Viceroys was broken by the Mahrattas. The power of the Mahrattas was broken by the Afghans, and while all were struggling against all, the Briton rushed in and was enabled to subdue them all. A country not only divided between Mahommedan and Hindoo, but between tribe and tribe, between caste and caste; a society whose framework was based on a sort of equilibrium, resulting from a. general repulsion and constitutional exclusiveness between all its members. Such a country and such a society, were they not the predestined prey of conquest? If we knew nothing of the past history of Hindostan, would there not be the one great and incontestable fact, that even at this moment India is held in English thraldom by an Indian army maintained at the cost of India? India, then, could not escape the fate of being conquered, and the whole of her past history, if it be anything, is the history of the successive conquests she has undergone. Indian society has no history at all, at least no known history. What we call its history, is but the history of the successive intruders who founded their empires on the passive basis of that unresisting and unchanging society. The question, therefore, is not whether the English had a right to conquer India, but whether we are to prefer India conquered by the Turk, by the Persian, by the Russian, to India conquered by the Briton.”

    তাই তো! সমস্যা হচ্ছে একদমই Passive Society এটা ছিলনা। কিন্তু মার্ক্স সাহেবের কাছে যাওয়া তথ্যগুলো এমনই ছিল যে এর বেশী সম্ভব হয়নি। কিন্তু তবু অনেক বলেছেন। ব্রিটিশের কাজ কি তাও বলেছেন! তবে কথাটা হল এই যে কথাটা যে ভারত বিজিত হবেই এটা স্বতঃসিদ্ধ, এইটায় একটা সমস্যা আছে। এ কথা সকল দেশের ক্ষেত্রেই কমবেশী প্রয়োগ করা যায়। এমনকি মার্ক্স সাহেবের জার্মানী বা যেখানে বসে লিখছেন সেই ব্রিটেনের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। দেশ যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণই থাকবে তার বিজিত হবার সম্ভাবনা। এবং অত্যন্ত সক্রিয় একটি সমাজের ক্ষেত্রেও এইটা হবে। আর শাসকের সঙ্গী যারা তাদের কোনো দেশ হয় না। রোমের সেনারা সকলেই রোমান ছিল না। যে যুদ্ধ করতে জানে সে যুদ্ধ করার জন্য অর্থ নেয়। একমাত্র অতি বিত্তশালী সম্পদসম্পন্ন পরিবার ছাড়া যোদ্ধা যেখান থেকে আসে সেখানেই সর্বত্র একই নিয়ম। ব্যাতিক্রম নেই। বিত্তশালী পরিবার তার স্বার্থের জন্য স্বীয় অঞ্চলের বা রাজশক্তির বিরোধিতা করতে পারে, অন্যথায় সে রাজশক্তির অনুগতও ওই স্বার্থের জন্য। এখানে এই সমস্যাটা হচ্ছে তার কারণ মার্ক্স একটি আধুনিক ও সংগঠিত রাষ্ট্রে বসে লিখছেন। তিনিও ভুলে যাচ্ছেন যে রাষ্ট্রে বসে লিখছেন সেও একদিন শুধুমাত্র বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ছিল, রাষ্ট্র হয়নি। ১৮৫৩ সালে এই প্রবন্ধটি লেখার সময় থেকে কয়েকশো বছর আগে নানা জাতির মারামারি-কাটাকাটির মধ্যে দিয়ে গ্রেট ব্রিটেন গড়ে উঠেছে। এমনকি যে দেশে তাঁর লেখাটি ছাপা হল সেই আমেরিকাতেও রাষ্ট্র ব্যাপারটাই বেশ অজানা বিষয় ছিল কয়েকশতক আগেও।

    “England has to fulfill a double mission in India: one destructive, the other regenerating the annihilation of old Asiatic society, and the laying the material foundations of Western society in Asia.”

    এই যে নতুন করে ব্রিটিশ গড়বে আমাদের,তা কেন?তার আগে যারা তারা কেন পারলো না?উত্তর দিয়েছেন তারও!

    “Arabs, Turks, Tartars, Moguls, who had successively overrun India, soon became Hindooized, the barbarian conquerors being, by an eternal law of history, conquered themselves by the superior civilization of their subjects. The British were the first conquerors superior, and therefore, inaccessible to Hindoo civilization. They destroyed it by breaking up the native communities, by uprooting the native industry, and by levelling all that was great and elevated in the native society. The historic pages of their rule in India report hardly anything beyond that destruction. The work of regeneration hardly transpires through a heap of ruins. Nevertheless it has begun.”

    কথা হচ্ছে একথা কিছুকাল পরে রবীন্দ্রনাথও বলবেন। এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে সব এসেছে, গিয়েছে। মিশে গ্যাছে সব। একেই বলে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। গ্রীক রাজার বৈষ্ণব হয়েছে। শকরা বৌদ্ধ। দ্রাবিড়রা সবচেয়ে কট্টর ব্রাহ্মণ্যবাদী এবং বাঙ্গালী সেনের গ্যাঁড়াকলে দুটি বর্ণে বিভক্ত। লক্ষ করবেন বল্লালের আমলে জাতিবিভাগ বা বর্ণ বিভাগে কিন্তু হয় ব্রাহ্মণ নয় শুদ্র শুধু। ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যকে এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ যেটা বলবেন না, সেটা হল ইংরেজ এসে কিন্তু ভারতীয় হয়নি পুরোদস্তুর। তারা বরং তাদের ছাঁচে বানিয়ে নিয়েছে ভারত। একটা দেশ তো নয়! অনেক অনেক রাজ্য, অনেক অনেক ভাষা। তাকে জুড়ে দিয়েছে তরোয়ালে, রেলে। এ সব করে দিয়ে তারা মেশেনি, আলাদা থেকেছে। বলা ভাল এখানেও কিছু অত্যুক্তি আছে। এর আগে যারা এসেছিল তারাও কেউ পুরোদস্তুর মেশেনি, পরে যে ব্রিটিশ এলো সেও সব ছোঁয়া বাঁচাতে পারেনি। সকলেই কিছু না কিছু এনেছে, দিয়েছে এবং নিয়েছে। কারোর যন্ত্র উন্নত হলে কারোর মন্ত্র উন্নত। উন্নত মাপার মাপকাঠিটা শুধু কামান-বন্দুক, কলকব্জার হলে তৎক্ষণাৎ-এর একটা হিসেব হয় বটে, কিন্তু সময়ের দরবারে সেই হিসেবই শুধু পাকা কাগজ নয়।

    সগরও চেষ্টা করেছে একে গ্রাস করার একদিন। তার সাম্রাজ্য বানানোর প্রাচীন আকাঙ্খা। সগরের বাহিনী ছিল তার সবচেয়ে জোর। তাকেই বন্দী করেছিল কপিলের শিষ্য-অনুগত গণতান্ত্রিক জনপদীরা। সগরের বংশধরেরা সকলে চেষ্টা করেছে মৈত্রী হোক। কপিলের লোকেরা মেনে নিক সগরের বংশের শাসন। কিন্তু হয়নি। ষাট হাজার সন্তান সগরের মানে ষাট হাজার সৈনিক যারা জ্ঞাতি-গুষ্ঠীও বটে। তারা ভষ্ম হয়েছে মানে হেরেছে বা বন্দী হয়েছে। ছাড়িয়ে আনতে গেলে ভগীরথকে রাজী হতে হল শেষে গঙ্গা আনার জন্য খাল খুঁড়তে এদের সঙ্গে হাত মেলাতে। কেউ কারোর অধীন হল না। মৈত্রী হল। পাতালের লোকেরা বড় অবাধ্য। অশিক্ষিত, বর্বর যত্তসব! কিন্তু এ ছাড়া আর রাস্তা নেই। এককালে দেবরাজ বলে পরিচিত গোষ্ঠীপতি এক ইন্দ্রকেও বাঁধ ভেঙ্গে তাদের সিন্ধু উত্তর অঞ্চলের জন্যে জমি বানাতে হয়েছিল। বজ্র দিয়ে বৃত্রাসুর বধ বলে তাকে। কাজেই ভগীরথ কাজটা করতে স্বীকৃত হল অবশেষে। গঙ্গা এল এই পাতালে। জমি উর্বর হল। কালে কালে সাগরের সীমানা কমে বাড়লো নাব্য বঙ্গ। হরিৎ ক্ষেত্র তৈরী হল। সেই টানে টানে এল দখলদার।

    সবশেষে এল শেয়ার মার্কেটওলা ইংরেজ। এর আগে যত ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে তাতে আর যাই হোক এই লাভের গাড়ি যেমন করেই হোক চালাতে হবে এই মানসিকতা ছিল না। কারণ ব্যবসায়ীরা এখানেই থাকত। তাদেরও ভয় ছিল রাজার এবং প্রজার। বেশী বাড়াবাড়ি কেই বা মেনে নেয়? কিন্তু ইংরেজের বা ক্লাইভের মত লোকের সে ভয় ছিলনা। তার বাড়ি ছিল অন্যত্র। এখানে ছিল তার শাসন। নির্বিকারে সে খুঁজে চললো মুনাফার রাস্তা।

    ।। শেয়ার মার্কেট থেকে মুনাফার রাস্তা ।।

    এগারো শতকের দিকে কায়রোতে ইহুদি এবং মুসলিম ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক সংগঠন তৈরী করে ধার এবং তার শোধের ব্যবস্থা সংক্রান্ত সমস্ত কিছুই করেছিল। ফ্রান্সে বারোশো শতকের দিকে courratiers de change, যারা ব্যাঙ্কের তরফে কৃষিক্ষেত্রে ধার এবং তার পরিশোধের বিষয়টা দেখত তারা খুব চিন্তিত ছিল। তাদেরকে বলা যেতে পারে প্রথম দিকের ব্রোকার বা দালাল। এইভাবে ছড়াতে ছড়াতে ব্রাগেস থেকে ভেনিস হয়ে শেয়ারের ব্যবস্থা ডাচেদের হাতে বেশ খোলতাই হল।

    “It were the Dutches in the History of Stock Market who inaugurated the concept of joint stock exchanges which led the people to buy share and become share holders and invest money in various businesses and get their part of profit and loss. The Dutch East India Company in the year 1602 brought out first shares on the Stock Exchange of Amsterdam and it was also the first stock exchange to bring out bonds and stocks in the History of Stock Market.”

    ডাচেরাও একটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়েছিল। তারা যথেষ্ট ব্যবসা করছিল। মশলা থেকে ক্রীতদাস কোনো ব্যবসাতেই তাদের মার ছিল না। তাদের পাল্লা দিতে একসময় এল ব্রিটেন। তার দুটি কোম্পানি দু-দিকে ছড়িয়ে পরলো। ১৬০০ সালে The governor and Company of Merchants Trading in East Indies নামে একটি কোম্পানি, যা পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হবে, সেটি চার্টার পায় ব্যবসার। ১৬০৬-এ আরেকটি কোম্পানি, The Treasurers and Company of adventurers and planters of the city of London for the first colony in Virginia চার্টার পায়। একটি চলে যায় ভারতের দিকে, অন্যটি আমেরিকায়।ভারতের দিকে যাওয়া কোম্পানিটির উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা। কিন্তু আমেরিকার দিকে যাওয়া কোম্পানিটার কাঁচ, নৌকা তৈরী করা থেকে মেয়ে সরবরাহ যাদের বৌ বানানো যায় সব কাজে মন ছিল। অর্থাৎ একটি উপনিবেশ বানানোর বাসনা।
    প্রথম কোম্পানিটি ব্যবসার শুরুতেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যেমন ভারতে যাবার জন্য সে ১৬৮৮ সালে শেয়ার ছাড়ে লন্ডনের বাজারে ব্যবসায়ীদের জন্যে। তার কিছু আগে আরেকটি কোম্পানি, যার নাম Muscovy Company সেও বাজারে শেয়ার ছেড়েছিল রাশিয়ার উত্তরের দিকে শ্বেত সাগরের রাস্তা ধরে চীনে যাবার জন্য। ব্যাক্তিগতভাবে এই যাত্রাগুলোকে অর্থ যোগানো সম্ভব ছিলনা। একসময় কলম্বাসকেও এই সমস্যায় পরতে হয়েছে। কারণ এর যে বিপুল খরচ তা রাজা কোষাগার থেকে না বইলে ব্যাক্তির পক্ষে সমস্যা। যদি যাত্রা ব্যার্থ হয়, জাহাজডুবি থেকে জলদস্যুর আক্রমণ বা পথ হারিয়ে, রোগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া তাহলে গোটা টাকাটাই অপচয়। কলম্বাসের আমলে রাজারা টাকা তবু দিয়েছে নতুন উপনিবেশ গড়া বা নতুন দেশ থেকে লুঠ বা ব্যবসা, যেটা সহজ, তার মাধ্যমে টাকা তোলার জন্যে। কিন্তু ব্রিটেনে রাজা টাকা দেবার অবস্থায় ছিল না। কাজেই টাকা দেবে যার আছে সে। এটা অনেকটাই চাঁদে জমি কেনার মত। ভবিষ্যৎ-এ যদি লাভ হয় তাহলে তার ভাগ পাবে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এই ধরণের বিনিয়োগে লাভ হবে এটা ধরাটাই বেশ দুরাশা। সুতরাং এখানে টাকা লাগাতে পারে একমাত্র যাদের অঢেল আছে তারা। সেই সময়ে এমন লোকের মানে হল হয় অভিজাত নয় ধনী ব্যবসায়ী।শিল্পপতি শ্রেণী তখনো পুরো সুবিধা করে উঠতে পারেনি। বাদ পরে গেল জনগণ। তাদের এই ব্যবসায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এভাবে টাকা তোলার পদ্ধতিটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। এমনকি আর্ল অব বেডফোর্ডও এই ব্যবস্থা নিলেন সমুদ্রের ধারের জমিকে সমুদ্রের কবল থেকে উদ্ধার করতে। শেয়ার বাজার দিয়ে পয়সা তুলে সেই জমিকে লোনা মুক্ত করা থেকে বাঁধ দিয়ে ডাচেদের মতই আরো জমি পাওয়া সবেতেই সেই পয়সা লাগলো। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল এমন প্রায় ১৪০ টি জয়েন্ট-স্টক কোম্পানি তৈরী হয়ে গ্যাছে। ব্যবসা হত দুটি কফি শপে।

    কিন্তু সেই ব্রাগেসের বাড়ির থেকে শেয়ার ব্যবসা বেড়িয়ে কফি শপে আসার মধ্য দিয়ে কি হল? আসলে বিপ্লব হবেই এমন কেউ ধরেনি প্রথমে। কিন্তু পরিস্থিত যেদিকে যাচ্ছিল তাতে এই বিপ্লব অবশ্যই হত। প্রথমত, যারা টাকা ঢেলেছিল তাদের তাড়া ছিল টাকা তুলে নিয়ে লাভে পৌঁছনোর। কাজেই কোম্পানি খেলাটা গুছিয়েই খেলবে। খেলেছেও। চার্টার বজায় রাখার জন্যে বারে বারে অনেক টাকা ঘুষ দিয়েছে ক্রাউনকে। সে রাজা বা রাণী যাই হোক, যেই হোক, ঘুষ নিতে কেউ কম যায় না। তাদের লোকেরা তো আরো সরেস। কয়েককাঠি বাড়া। ১৬৮৮ সালে দুটি ঘটনা ঘটেছিল যাদের যোগসূত্র রয়েছে। শেয়ার মার্কেট থেকে কোম্পানির পয়সা তোলার মতই স্টুয়ার্টদের সরিয়ে তৃতীয় উইলিয়ামকে বসানো হয়েছিল ক্ষমতায়। প্রথম সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। জমিমালিক অভিজাতর সঙ্গে সমঝোতা হল অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বুর্জোয়ার। বাদ পরে গেল সেই মজুর আর কৃষক, যারা ছিল এই তথাকথিত গৌরবময় বিপ্লবের সেনানী। তাদের এমনকি নির্বাচনের অধিকারও দেওয়া হল না। খেয়াল করে দেখলে দেখা যায় কোম্পানির ভারত বা চীন যাত্রায় পয়সা ঢালায় যেমন এই দুটো শ্রেণীর হাত আছে, তেমনই দেশশাসনও এরাই ভাগ করে নিল। কাজেই বেড়ে গেল চার্টারের জন্যে ঘুষের পরিমাণও। সবাই মিলেজুলে খাবে বলেই না খুড়োর কল বানানোর এত খাটনি? তাই আগে যেখানে ঘুষের জন্যে খরচ ছিল বছরে খুব বেশী হলে ১২০০ পাউন্ড, সেটা বেড়ে হল ৯০০০০ পাউন্ড। ১৬৯৩-এ ব্রিটেনের পার্লামেন্টের এক তদন্ত এ কথা ইতিহাস বইয়ে লিপিবদ্ধ করে দিল। মানে আমরা জানার সূত্র পেলাম। এছাড়াও সরকারকে খুব কম সুদে বিরাট ঋণ দেওয়া বা প্রতিপক্ষ কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরকে কিনে নেওয়া সবই খেলার অঙ্গ ছিল।

    অনেক খেলা চলেছে সাম্রাজ্য জুড়ে। ক্লাইভ আসার আগে আরো অনেক কিছু ঘটে গ্যাছে। একচ্ছত্র ব্যবসার অনুমতি পেয়েছিল কোম্পানি। এর মানে অন্য কোনো সোস্যাইটি বা ব্যাক্তি ভারতে বা পূর্বে ব্যবসা করতেই পারবে না। ব্রিটিশ কোনো নাগরিককেও কোম্পানির অনুমতি সাপেক্ষে এখানে থাকতে হবে। তেমন বুঝলে কোম্পানি তাকে বের করে দিতে পারে ভারত থেকে। এই অধিকার থাকার মানে হল ব্রিটেনের জনসাধারণকে বঞ্চিত করা। কোম্পানিও যা মাল আনবে তা সে যে দামে ইচ্ছে বিক্রি করতে পারবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেনা মানে জিনিস দুর্মূল্য হবে সাধারনের জন্য। সাধারণ ইচ্ছে থাকলেও নিজে ব্যবসা করে এই অসঙ্গত মুনাফা পেতে পারবে না। ঘুষ খেতে রাজা থেকে ডিউক কেউ বাদ ছিলনা যেমন, তেমনই এই সত্যটা লোকে জানতোও বটে।

    তাই কোম্পানিকে পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে হাউস অব কমন্স।তাতে কোম্পানির ক্ষতি কিছু হয়নি।কারণ সে যে দেশে এসেছিল সেখানে তখন নরক গুলজার চলছে।মুঘল,মারাঠা,শিখ,আফগান সকলে সকলের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে। কোনো কেন্দ্রীয় শাসনের ন্যূনতম অস্তিত্ব নেই প্রায়। একেক অঞ্চলের সামন্তরা একেকজন নিজেই খোদা। কাজেই কে কাকে মানে? একমাত্র অস্ত্রের জোরেই কথা বলা সম্ভব। সেই রাস্তা অনেক আগেই নিয়েছিল ফরাসীরা। এবারে একসময়ে সেই রাস্তা নিল ব্রিটিশ কোম্পানিও। যাদের শেয়ারে সরকার চলছে তাদেরই শেয়ারে কোম্পানিও চলছে আসলে। কাজেই এই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউকে না কাউকে নায়ক সাজতেই হত। সাজল ক্লাইভ।

    ক্লাইভ যখন দক্ষিণ ভারতে কেরানী হতে পৌঁছল তখন দক্ষিণে রমরমা ফরাসীদের। ভারতের রাজনীতির খেলায় তারা ঢুকে পরেছে এবং তাদের কাজ তুর্কি ব্যবসায়ী বা যুদ্ধবাজের মতই। আলাদা করে তারা কিছুই করছে না। এদেশে বা অন্য দেশেও ব্যবসা বাড়ানোর সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হল রাজার কাছের লোক হওয়া। সে জন্যে রাজাকে উপঢৌকন থেকে শুরু করে তোষামোদে খুশি রাখা সবই তাদের কাজের মধ্যে পরে। কিন্তু রাজাদের খাঁই বড়। তাঁরা শুধু তোষামোদে সন্তুষ্ট হন না। কাজেই আরেকটা রাস্তা থাকে হাতে। সেটা হল যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ। এর দরকার রাজ্য শাসন করতে গেলে কখনোই ফুরোবেনা। সেই কাজের সঙ্গে যদি বাহিনী সরবরাহ করা যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। ইউরোপীয়রা এদেশে আসে যখন তখন একটা কথা তারা খুব সহজেই বুঝতে পারে, যে তাদের বাহিনী কেন এদের থেকে আলাদা! প্রাচ্যের এই দেশগুলোতে যুদ্ধ বিষয়টাও অন্য সব বিষয়ের মতই নির্ভর করতো ব্যাক্তিগত দক্ষতার উপরে। যারা সেরা যোদ্ধা তারা আসতো দুটি জায়গা থেকে। হয় তারা অভিজাত হত, নয় তারা হত সাধারণ যুদ্ধবাজের দল। প্রথমভাগ যদিও বা শাসনের খাতিরে বাইরে থেকে এলেও দেশের মাটির সঙ্গে ধীরে ধীরে বংশপরম্পরায় সংযুক্ত হয়েছে, দ্বিতীয়ভাগের সে দায় নেই। তারা মধ্য এশিয়ার যেকোনো দেশ থেকে এই হিন্দুস্তানের পাহাড়ি অঞ্চল যেকোনো জায়গার লোক হতেই পারে। এবারে এই ধরণের বাহিনীতে সংগঠন বস্তুটা বেশ কঠিন কাজ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাই সেনাপতির পতন মানে যুদ্ধ শেষ। অন্যদিকে ইউরোপের ইতিহাসে সে দিন আজ নেই। আজ তারা অনেক সঙ্ঘবদ্ধ। তাদের সামাজিক সংগঠনও উন্নত হয়ে উঠেছে আর্থিক সংগঠনের পাশাপাশি। সেই উন্নয়নটা তাদের লাভ আনতে সাহায্য করে ব্যবসায়। সে ব্যবসার মূল পথ চিরকালই থাকবে যুদ্ধ ব্যবসা। ক্লাইভ নিজে যুদ্ধ করেই তো জায়গা বানিয়েছিল।

    ।। মধ্যযুগের যুদ্ধ সম্পর্কে কিছু কথা ।।

    স্টিরাপ। এই বস্তুটা মধ্যযুগের যুদ্ধকে অনেক এগিয়ে দিয়েছিল। যদিও একদম শুরুর দিকে ইউরোপে এটা ব্যবহার হয়নি, তবুও একটা সময়ে বলা হত এটা চাকার থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার না। ঘোড়ায় ফিরতে হবে আবার। ঘোড়া চড়লে তার পাশ দিয়ে ঝোলানো যে স্টিরাপ থাকে তা দিয়েই কাজ হয় আসল। রেকাবে বসে ওখানে পা রেখে ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রনের সুবিধে থাকে। এই সুবিধা মধ্যযুগের অনেক যুদ্ধে নির্ধারক বিষয় হয়েছিল। তার সঙ্গে সঙ্গেই বিবর্তন ঘটেছিল লড়াই-এর পদ্ধতির।গোটা মধ্যযুগ ধরে চলেছিল যোদ্ধাদের সারির প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্যের লড়াই। সারির প্রস্থ যদি বেশী হয় তাহলে সমস্যা ছিল নিয়ন্ত্রণের। ধ্বনি দ্বারা, পতাকা এবং অন্যান্য সংকেত দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হত যুদ্ধের মধ্যে যোদ্ধাদের অবস্থান। আবার রক্ষণাত্মক ব্যবস্থা হিসেবে এর গুরুত্ব বেশী ছিল সরু সারির চেয়ে। আক্রমণে গেলে অনেক বেশী জোরালো ছিল সরু সারি। সেক্ষেত্রে একের পরে এক ঢেউ-এর মত আছড়ে পরা যেত বিপক্ষের উপর। সামনে থাকা পাইক উঁচানো সৈন্যের দল ঘোড়াকে আটকাতে তৎপর ছিল। তাই প্রথমে ঘোড়সওয়ারেরা যেতনা। যেত পাইক শোভিত যোদ্ধারা। পাইক হল বিরাট লম্বা কাঠের ডান্ডা, যার মাথায় ধাতব ধারাল পাত লাগানো থাকতো। খুব ভাল কাঠের পাইক অনেক সময় লম্বায় প্রায় ২২ ফুট অবধি হতে পারত।এই পাইকে পাইকে যুদ্ধের পরে ঝাঁপাতো ঘোড়সওয়ারের দল। ক্যাভালরিমেন। তারা স্টিরাপের উপরে পা রেখে ভাল ভাবে ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। তারা উচ্চতার থেকে মাটিতে থাকা সৈন্যদের নিকেশ করতে অনেক সুবিধা পেত। পাইকরা সাধারণত রক্ষা করত তীরন্দাজদের। ইনফ্যান্ট্রিম্যান বলা হত এদের। কিন্তু ক্যাভালরির কাজ ছিল বিপক্ষের এই ইনফ্যান্ট্রিকে কচুকাটা করা। কখনো কখনো যুদ্ধ করা ক্যাভালরির সঙ্গে। তবে সাধারণত দেখা যেত নিজেরা নিজেদের জাতভাইদের হত্যা তারা এড়িয়ে চলত। কারণ বেশীরভাগ ক্যাভালরির বা ঘোড়সওয়াররাই ছিল নাইট। বন্দী করলে বরং অনেক অর্থ যুদ্ধ শেষে মুক্তিপণ হিসেবে পাওয়া যেতে পারত।

    মজার কথা হল ঘোড়ার স্টিরাপের ব্যবহারকারীরা প্রথমে কিন্তু ইউরোপীয় ছিল না। ইউরোপে আগত অ্যাভাররা (যারা মঙ্গল অথবা হুণেদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে ভাষাতত্ত্ব বলছে) এর ব্যবহার শুরু করে ইউরোপে সপ্তুম শতকে। ইউরোপে এর ব্যবহার ছড়াতে লাগে প্রায় আরো তিন শতক। অথচ মঙ্গলদের সংগে সম্পর্কিত মুঘলরা কিন্ত এর সুবিধা নিতে পারেনি ইউরোপীয়দের সঙ্গে ভারতের মাটিতে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বস্তু ছিল কামান। সেটাও মুগলরা নিয়ে আসে ভারতে। কিন্তু মধ্যযুগের শেষের দিকে আসা কামানও তেমন বড় বিষয় সত্যি ছিলনা। একেকটা কামান গোটাদিনে একবার মাত্র দাগা যেতে পারত। তার চেয়েও বড় কথা হল কামানের লক্ষভেদের ক্ষমতাও বেশ সীমাবদ্ধ ছিল। কাজেই মধ্যযুগের শুরুর দিকে এ দিয়ে খুব একটা লাভ হয়নি। শেষের দিকে কিছু পরিবর্তন ঘটলো। কিন্তু ততদিনে আরো অনেকক্ষেত্রেই পরিবর্তন এসেছে বা আসছে। যেমন দুর্গ ব্যবস্থায়। সে কথায় যাবার আগে বলে নিই ক্লাইভের কথা।

    ।। ক্লাইভ, যুদ্ধ, সাম্রাজ্য, বিশ্বযুদ্ধের মহড়া এবং মুনাফা ।।

    তার খ্যাতির পিছনে রয়েছে কয়েকটি যুদ্ধ প্রাথমিকভাবে। প্রথম যুদ্ধটায় সে তার দলের বাকী ইংরেজ নিয়ে পালিয়েছিল একটি দূর্গে অবরুদ্ধ দশা থেকে। সেই সামান্য কেরাণীর যুদ্ধবৃত্তির শুরু। এই যে সামরিক ব্যবস্থায় নিজেদের প্রাধান্যের প্রতি বিশ্বাস সেটা এসেছে নিজেদের ইতিহাস থেকে। ক্লাইভের মত ইউরোপীয়রা এদেশে এসেই দেখতে পেত এরা যুদ্ধ পদ্ধতিতে অনেক পিছিয়ে। মধ্যযুগের শুরুর দিকে এদের অবস্থান। কাজেই থাঞ্জোরের রাজার সিংহাসন উদ্ধারের কাজে প্রথমবার ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জড়ালো কিছুটা সাহস করেই। চাপ ছিল মুনাফা বাড়াবার। ফরাসীরা দুপ্ল্যে এবং দুমার অধীনে অনেকদিন এই কাজটা করে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। এবারে ইউরোপে যখনি ব্রিটেন-ফ্রান্সের মধ্যে কোনো না কোনো কারণে যুদ্ধ হলেই সেই যুদ্ধের রেশে ভারতেও যুদ্ধ লেগে যায়। এই সুযোগে যে যতটা পারে অন্যের জায়গা দখল করে। ভাল করে দেখলে দেখা যাবে যে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলো পরের দিকের দুটি বিশ্বযুদ্ধের মহড়া অনেকদিন ধরেই চালিয়ে আসছে। এটা তাদের কয়েক শতাব্দীব্যাপী অভ্যাস। যুদ্ধের সঙ্গে বাজার বা মুনাফার সম্পর্কও তারা খুব ভাল জানত। তাই ইউরোপের যুদ্ধকেও টেনে নিয়ে যেত ভারতের মাটিতে।

    ক্লাইভও বুঝে নিয়েছিল এটাই রাস্তা।পরের পর সে যে যুদ্ধগুলোতে জড়িয়ে পরে সেই যুদ্ধগুলোর জন্যে তাকে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিট ‘স্বর্গজাত জেনারেল’ পর্যন্ত বলে ফেলেছিল। তবে সবচেয়ে খাঁটি পর্যবেক্ষণটি হল কোম্পানির ইষ্ট ইন্ডিয়া হাউসে বসা চিঠিপত্র বিভাগের প্রধান এবং ঐতিহাসিক মিলের।

    ‘…with the master of the troops it seems to be a law of nature, whenever they posses them in greater abundance than is necessary for the defence, to employ them for the disturbance of others.’

    লেখাটা History of India গ্রন্থভূক্ত। কিন্তু এটার পিছনে আরেকটা কথা থেকে গ্যাছে। সৈন্যদের খরচ আছে। তাকে পোষার খরচ যদি যুদ্ধ থেকে তুলে নেওয়া যায় তাহলে কোম্পানির ডিরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডাররা অখুশী হবেন কেন? তাঁরা তো মুনাফার জন্যেই করছেন। কিন্তু খরচ তুলতে গেলে প্রথমে যেটা দরকার সেটা হল নিজেদের অধিকার এই মাটিতে প্রতিষ্ঠা করা। সে কাজে ক্লাইভ বেশ উপযুক্ত লোক বলেই প্রমাণিত হয়েছে। বাণিজ্যের জন্যে আসা কোম্পানি ক্রমশ যুদ্ধবাজ হয়ে উঠলো। তারা সবচেয়ে বড় সাফল্য পেল পলাশীতে। গঙ্গাহৃদির যোদ্ধারা নিজেদের গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতা সগরের হাতে দিতে চায়নি বলে লড়েছিল। তাদের হাতে ছিল সামরিক উৎকর্ষ। সেই উৎকর্ষের মাধ্যম ছিল যুদ্ধে হাতির ব্যবহার। তারা এবং প্রাগজ্যোতিষপুর ছাড়া কেউ এর ব্যবহার জানতো না। সগরতো বটেই, আলেক্সান্ডারও যে বাহিনীতে বিদ্রোহের সন্মুখীন হয়েছিল সেটা এই রণহস্তিযূথের জন্য। মগধের নন্দরাজাদের সঙ্গে তখন এদের মৈত্রী। একটি কনফেডারেসীর মত ব্যবস্থার অঙ্গ এরা। প্রাগজ্যোতিষের সঙ্গে যুদ্ধে মগধের সাহায্য এদের লাগে। আবার গ্রীকদের সঙ্গে যুদ্ধে এদের হাতি আলেকক্সান্ডারকে ফেরার কথা ভাবতে বাধ্য করে যুদ্ধ ছেড়ে। সাধে কি ভার্জিলের কবিতায় গঙ্গাহৃদির (গঙ্গারিডি বা রিডাই ল্যাটিনে) যোদ্ধার বীরত্ব আসে? কিন্তু সিরাজের আমলে না ছিল সেই গঙ্গাহৃদি, না ছিল তার গণতান্ত্রিক চরিত্র!

    [মার্ক্সের লেখাটার নামঃ The Future Results of British Rule in India
    প্রকাশিতঃ in the New-York Daily Tribune, August 8, 1853; reprinted in the New-York Semi-Weekly Tribune, No. 856, August 9, 1853
    লেখা হয়েছিলঃ on July 22, 1853 ]

    (ক্রমশঃ)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ | ১৪৯০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    শুদ্ধ - Suddha Satya
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • আর্য | 233.29.193.158 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৪:৫৯46889
  • দারুণ লাগছে পড়তে...কত কিছু যে জানার আছে সত্যি অবাক ব্যাপার...

    পরের কিস্তি আসুক...
  • রূপঙ্কর সরকার | 126.203.223.65 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:১১46887
  • শুদ্ধ, পড়ে যাচ্ছি কিন্তু। কিছু কিছু জায়গায় মতান্তর ঘটছে বটে, তা বাঙালি কবেই বা সর্বজনীন ঐক্যমতে পৌঁছেছে। সেই জন্যই তো বাঙালি জ্যান্ত। যাক চলুক, সঙ্গে আছি।
  • Debajit Biswas | 212.142.90.101 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৯:১৩46888
  • শুদ্ধ দা, খুব ভালো লাগলো পড়ে। লেখার জন্য ধন্যবাদ।
  • নিরমাল্লো | 113.21.124.55 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৩৮46890
  • শরদিন্দুর এক লেখায় পড়েছিলাম যে, বৃত্যাকার পাথুরে ঘেরাটোপ (মানস সরোবরের) থেকে সিন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিলেন ইন্দ্র ... সেই ঘটনাই বৃত্যাসুর বধ। এটার কি সত্যি কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে, নাকি কেবল কল্পনা? সগরের ঘটনাও একই রকম জেনে অবাক লাগছে ... ভাগীরথীর খাল মানুষের কাটা! এগুলো কোথায় পড়া যায় ... সোর্স দিয়ো।
  • শুদ্ধ | 126.193.140.28 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:৪২46891
  • নির্মাল্য, ইতিহাস দু রকম। একটা লিনিয়ার। তারিখ, সাল উল্লেখ করে লেখা। ইঁট-কাঠের শক্ত প্রমাণ নির্ভর। ঘটনা সেখানে মুখ্য। ইন্টারপ্রিটেশন যতটা কম দিয়ে শুধু তথ্য সাজানো যায় তত ভাল। যদিও সে কাজটা কেউ তেমন আসলেই করে উঠতে পারেননি। অন্যটা ডায়ানামিক। ঘটনা সেখানে মুখ্য না, ঘটনার থেকে প্রাপ্তিকে রেকর্ড করে রাখার কাজ। অতএব ইন্টারপ্রিটেশনের ছড়াছড়ি। প্রথমধারাটা যদি হেরোডোটাস কিম্বা গিবন হয় পরেরটা আফ্রিকান লোকউপাখ্যান। অথবা এই উপমহাদেশের ইতিহাসপুরাণ।

    History হল His Story। আর ইতিহাস হল এমন হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। দুটোই আসলে এক প্রকারের গালগল্প। প্রথমটা যেহেতু হিস স্টোরি এবং 'হি' যেহেতু আদিগন্ত ভূমার মালিক বিধায় নিজেকে ভূষিত করে বসেছে, তাই সেই আগমার্কা এমন দাবী আছে। কিন্তু দ্বিতীয়টা সকলের গপ্পো। সেই গল্পকে ভাঙার কাজটা চলছে। ডায়ানামিক ইতিহাস থেকে সঙ্কলনের চেষ্টা এ সব। শরদিন্দুর মতন অনেকেই করেছেন, করছেন। বৃত্তাসুর বধ নিয়েও তাই ভাঙাচোরা হচ্ছেই। তেমনি ভাগীরথী নিয়ে। নদী বিশেষজ্ঞ কপিল ভট্টাচার্য্য, যিনি আমাদের এই বাংলায় মানবাধিকার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, তিনি বেশ ক'বার কথাটা বলেছিলেন। ব্রিটিশ এঞ্জিনীয়ারদের একাংশও বলেছেন যে ভাগীরথী আসলে মানুষের কাটা একটি খাল। ভূতত্ত্ববিদরাও তাই সন্দেহ করেছেন এর ভূ-প্রাকৃতিক গঠন দেখে। এই সব নানা টুকরো জুড়ে আমিও একটি কাহিনীকে দেখছি। অনেকদিন আগে 'গঙ্গাহৃদি' নামের একটি নাটক লিখেছিলাম। সেই নাটকে ও আখ্যানকে প্রথম ভেঙেছিলাম। এখানে তার সামান্য অংশ আছে। ইচ্ছে আছে নাটকটি নিয়মিত মঞ্চস্থ করার। না পারলে আবার কোনো উপন্যাসে আমার ভাবনাটা আঁকার চেষ্টা করবো।
  • শুদ্ধ | 126.193.140.28 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:৪৮46892
  • রূপঙ্করদা, বাঙালি জ্যান্ত থাকুক! মতান্তর ঘটতে থাকুক। তাহলেই বাঙালি গতিশীল থাকবে। ওই সঙ্গের লোভেই তো বঙ্গে লেখার কাজ। আছেন বলে আমিও আনন্দে আছি। :)
  • Pubদা | 209.67.140.46 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৩ ১০:০১46893
  • শুদ্ধ'দা - খুব ভালো লাগছে । অনেকটা "ভল্গা থেকে গঙ্গা"র মতন স্বাদ পাচ্ছি । অনেক ধন্যবাদ ।
  • kaushik | 127.211.91.76 (*) | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ ০৭:০৮46894
  • মন্ত্রমুগদ্ধের মত পড়ে যাচ্ছি। চলতে থাকুক। আমরাও সাথে সাথে চলি।
  • প্রলয় | 116.76.90.138 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৯:৩১46895
  • অনেক কিছু শিখছি। জানছি। অসম্ভব সুন্দর গদ্যে লিখেছ। দলিল, ইতিহাস, বিশ্লেষণ মিলে সত্যি অনেক মূল্যবাণ হয়ে উঠছে এই সিরিজ। শুদ্ধ-দা। পরের জন্যে অপেক্ষায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন