এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শুদ্ধ

    Suddha Satya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ১৬৪৮ বার পঠিত
  • ভূমিকা
    বেশ ক'বছর আগে চেষ্টা করছিলাম উপন্যাস নিয়ে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। একটি শারদীয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল তখন। বই করার কথা ছিল তাঁদের। সে সামর্থ্য নানা কারণে তাঁদের না থাকায় বই-এর চেহারা আর পায়নি। গুরুর তৃতীয় তরঙ্গ দেখে মনে হল একবার ঝালিয়ে নিই স্মৃতি। সুধীদের মতামতে সমৃদ্ধ হই। পূজো আবার আসছে। এখানের বন্ধুদের পড়া নয় সে জানি। তাই ভরসা করে দিয়ে দিলাম। অন্তত পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটছি বলে গাল খাবো না। ধারাবাহিক করেই দিচ্ছি। অলমতি বিস্তারেণ!
    _________________________________________________________________________________

    কাঙালনামা
    _________

    ।।প্রস্তাবনার শেষে।।

    ‘মৃতের দেশ’। ‘মহেঞ্জদাঢ়ো’! এখান থেকে একটা গোটা সভ্যতা নাকি উবে গিয়েছিল। তাদের ধানের সাধারণ ভান্ডার ফেলে। তাদের স্নানের ঘর ফেলে রেখে। ভাবতাম গেল কোথায় সব? এখানে তো সেই পম্পেই-এর মত একরাত্রে অগ্নুৎপাত ঘটেনি। আগ্নেয়গিরি ছাই করে দেয়নি সব গৌরব, তাহলে? এখানে এক বিপুল বন্যা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গ্যাছে এমন চিহ্ন নেই? তাহলে? কেউ কেউ বলতেন আর্যরা এসে নাকি সব মেরে ফেলেছিল! তাই! তার-ও তো চিহ্ন নেই! বড় ধোঁয়াশা লাগত। কি হয়েছিল? জানার সব রাস্তাই শেষ? জানতে কেউ কি আগ্রহী? নাকি এই সভ্যতা আমাদের এক প্রাচীনতা দিয়েছে এই গর্বেই সব শেষ? কেন শেষ?

    ইতিহাস লাগে কাদের? যাদের ভবিষ্যৎ আছে। এটা কি একটু আপ্তবাক্যর মত বললাম? বেশ তবে রোগের কথাই ধরি। আমার সুগার আছে কিনা বা থাইরয়েড হবে কিনা তার খোঁজ-এ অনেক সময় চলে যেতে হয় পূর্বজদের কাছে। তাতে অনেকটা সম্ভাবনা বোঝা যায়।মানুষের জিন-এ থাকে তার এক ইতিহাস। সেই ইতিহাস কখন কি চেহারায় দেখা দেবে সেটা জানার জন্যে থাকে প্রভূত ব্যাকুলতা।ইতিহাস একটা বাড়ির মত। যত উচ্চতা অবধি বাড়ির বিস্তার সেই অনুপাতে ভিত নীচে যেতে হবে। না হলে হবে না। বাড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়বে। অর্থাৎ ইতিহাস ভবিষ্যৎ-এর সম্ভাবনাকে কে কেমন করে দেখেছে তার উপরেও আবিষ্কার করবে। আমরা যে আজ-ও সিন্ধু সভ্যতার শিলালিপি পাঠ করতে পারলাম না তা কি আমাদের সম্ভাবনার কথা তেমন করে ভাবা যায় নি বলে?

    ।।এখানে এক নেই নগর আছে।।

    কোথায়? কলকাতায়? সে কি? সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ। এখানেই একটু থামুন। একটু জিরান দিয়ে নি। সরস্বতী নদী মৃত।আচ্ছা, সপ্তগ্রাম কেন মরলো? অমন বন্দর শহর একটা। বাংলায় কি কদর ছিল তার! গৌঢ় মরেছে। কর্ণসুবর্ণও। জানেন সবটাই আপনি পাঠক। নদী সরে গিয়েছিল। বন্দর ছিলনা আর। ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা মৃত। তাহলে কি হবে? পথে পথে বিপদ দস্যু। জলপথেই তবু একটু নিরাপদ। সময়-ও কম লাগত। সমুদ্রের থেকে মাল এনে তাকে নদীর পথে নিয়ে যাও গ্রামের দিকে। প্রথমে বন্দরে। তারপরে সেখান থেকে বড় বড় গ্রামে, যাকে কসবা বলা হত। এমনই এক বন্দর গ্রাম কসবাতে আমার আবাস। বনগ্রাম। এমন সব গ্রাম থেকেও ছোট গ্রামে সওদা যাবে। এ বাণিজ্য লক্ষী! বিজয় সিংহ, না না, ধনপতি সদাগর দেখলেন মা লক্ষী ভাসছেন সিংহল সমুদ্রের পথে। কমলে কামিনী। ধনপতি না তার পুত্র? ‘মধুকর ডিঙা নিয়া বাণিজ্যেতে যায়/সপ্তনদী পার হয়্যা সপ্তসিন্ধু ধায়’! এভাবেও লেখা যেত। সেই বাণিজ্যের রাস্তা নদী সরে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে। হরপ্পা না, মহেঞ্জদাঢ়ো না, কালিবঙ্গাল বা লোথালে এসবে বাণিজ্য হত। নাকি সপ্তগ্রামের মতই? ঠিক জানা যাচ্ছে না। এবারে কথা বলতেই হবে। আমি একজন সংবাদ-সংগ্রাহক। এখানে এসেছি সংবাদ নিতে। কার জন্যে? সে সবে পরে বিস্তার! একজনকে দেখতে পাচ্ছি। পরণে একটি চটা ধরা শেরোয়ানী। আমারো এমন শখ ছিল। কিন্তু হয়নি পরা।

    -সালাম ওয়ালেকুম!
    আগন্তুককে দেখে একটু ধীরে পথিক বলেন,
    -ওয়ালেকুম আসসালাম!
    -জনাব,এখানে একটি নেই নগর আছে?
    -আছে বা ছিল দিয়ে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন মেহমান! এখানে আদতে একটি আছে নগর ছিল। নেই নগর-ও ঠিক তার সঙ্গেই আছে।

    ।।আছে নেই-এর তত্ত্ব।।

    আমি বুঝিনি কি বলছে এ? নেই নগর আছে, না নেই? আছে নগর নেই কেন? নেই নগর আছে কেন? এসব দোলাচল বড়।

    -জনাব,এখানে কি সব-ই ধাঁধা?

    আপাদমস্তক লোকটি আমাকে দেখল। এ যেন সেই বালক কাজের মাঝে খুব জ্বালালে যেমন হয় আর কি! তবে কাজ লোকটি সত্যি করছিল বটে। দাঁত খুঁটছিল মন দিয়ে। তার মাঝে কথা বলতে হলে বিরক্ত লাগাই স্বাভাবিক। সে চলে গেল। কোন কথাই না বলে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।

    তখন ১৮৫৬ সাল হবে। রেলের ইঞ্জিনীয়ররা কাজ করছে এখানে। রেলপথ হবে। তারা আমারই মতন শুনেছে এখানে আকাশে বাতাসে গল্প ছড়িয়ে আছে একটা শহরের যা আছে এখানে, কিন্তু নেইও বটে। মানে এককালে ছিল। তের কোশ জুড়েই ছিল বা আছে।

    কোশ, মানে ক্রোশ। সংস্কৃত শব্দ, আমাদের অনেকেরই চেনা। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে এর সম্যক মাপ দিয়েছেন। পরপর বলি!

    * ১ আঙ্গুল (হাতের একটা আঙ্গুলের মাপ) = আজকের দিনের ৩/৪ ইঞ্চি প্রায়
    * ৪ আঙ্গুল = ধনুগ্রহ (ধনুকের ধারণাংশ) = ৩ ইঞ্চি
    * ৮ আঙ্গুল = ১ ধনুর্মুষ্টি (বুড়ো আঙ্গুল সোজা করে নিয়ে) = ৬ ইঞ্চি
    * ১২ আঙ্গুল = ১ ভিতস্তা (বুড়ো থেকে কড়ে আঙ্গুলের সবটা ছড়ালে হাতের পাতা খুলে যে মাপ) = ৯ ইঞ্চি
    * ২ ভিতস্তা (কণুইয়ের শীর্ষবিন্দু থেকে মধ্যম অঙ্গুলির ডগা) = ১ আরান্তি অথবা হস্ত বা হাত = ১৮ ইঞ্চি
    * ৪ আরান্তি অথবা হস্ত বা হাত = ১ দন্ড বা ধণুষ (ধণুক) = ৬ ফুট
    * ১০ দন্ড বা ধণুষ = ১ রজ্জু = ৬০ ফুট;
    * ২ রজ্জু = ১ পরিদেশ = ১২০ ফুট
    * ২০০০ দন্ড বা ধণুষ = ১ ক্রোশ = ৪০০০ ইয়ার্ডস বা ২.২৫ মাইল বা প্রায় ৩.৬৬ কিমি
    * ৪ ক্রোশ = ১ যোজন = ৯ মাইল বা প্রায় ১৫ কিমি

    তাহলে তের ক্রোশ বিস্তৃত শহর মানে? ৪৭.৫৮ কিমি প্রায়। ব্রাহ্মীণাবাদের মাপ এটা। সেই শহর দখল করাটা বা তার জন্যে জমি নেওয়াটাও কৌটিল্য বা তার সময় প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আঙ্গুল দিয়ে খেলাটা শুরু হবে, সেটা একসময় ধনুকের ডগায় পৌঁছবে।তার পরে যে জমি আসবে তাকে মুঠিতে ধরে মাপতে না পারলে তখন দড়িতে মাপ। না মাপতে পারলে তাকে মাপ ক্রোশ-এ। মনে পরে তোডরমলের হিসেবের কথা? কৌটিল্য বা তোডরমল কেউ একজন করেছে। নাকি তাঁদের বাদ দিয়েও আরো অনেক আছেন? জানিনা।এসব প্রশ্ন বড় কূট!

    কিন্তু এখানে যে শহরটির খোঁজ আমাকে না দিয়েই লোকটি চলে গেল সে কি বলতে চাইছিল?প্রবাদ বলছে আছে শহর।আমি পাচ্ছিনা।নেই নগর।

    ।।চার্লস মেসনঃ নেই নগরের খোঁজ।।

    এসেছিলেন। লিখেও গ্যাছেন। কিন্তু ১৮৪২ সাল। একটি উপনিবেশ সবে হাতে এসেছে। সেখানে সোনা-দানা চাই। সেখানে সোনা কিনতে পারে এমন কিছু চাই। ধান থেকে রেশম বা তাঁতের বস্ত্র যা কিছু হোক। বাণিজ্যের সব দরজা খুলতে হবে। লন্ডনে বড় কোলাহল এ নিয়ে। কিন্তু সে সব নিতে গেলে চাই বন্দর বানানো। চাই বন্দর অব্দি আসার রাস্তা। সে রাস্তায় গরুর বা ঘোড়ার গাড়িতে হলে খিদে মিটবে না ব্রিটেনের রাজার থুড়ি রাণির। সে রাস্তায় বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দস্যু। না হলেও হাতে তরওয়াল, বর্শা, টাঙ্গি, দা। ধীর এবং বিপদসঙ্কুল রাস্তার চেয়েও দ্রুত গতির রাস্তা আছে। লোহার রাস্তা। আগুণের গাড়ি চলবে তার উপর দিয়ে। লোহার রাস্তায় লোহার গাড়ি।সেনায় বা পুলিশে মুড়ে দেওয়া যাবে সে গাড়ি দরকারে। এ দেশে অনেকে যুদ্ধই করে গ্যাছে আজন্ম কাল। চাষ-বাস অনেক কাল হল নেই এখানে তেমন। হরপ্পার ধানের গোলা ফাঁকা।

    ১৮৫৬ সাল। ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হয়ে জন আর উইলিয়াম ব্রান্টন এখানে লাহোর আর করাচীকে জুড়তে এল। বাণিজ্য আর দখল করা জায়গায় সেনা পরিবহন দুটোই হবে একসঙ্গে। কোন বিদ্রোহের আঁচ দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে দমন করার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।কিন্তু লোহার গাড়ির জন্যে লাগবে লোহার রাস্তা। সে রাস্তা পাততে গেলে আবার লাগবে লোহাকে সামলানোর পদ্ধতি। পরের পর স্লিপার পেতে যাওয়া হবে মাটির উপর। তার উপরে থাকবে লোহার লাইন। সেই লাইনের উপর দিয়ে দৌড়বে লোহার এঞ্জিন। সঙ্গে থাকবে গাড়ির কামরা। এবারে চাপে সে গাড়ি মাটিতে বসে যাবেনা তো? স্লিপারগুলো রোদে, চাপে সরে যাবেনা তো পরস্পরের থেকে? তাহলেই চিত্তির! বিস্তর ক্ষতি, দুর্ঘটনার ফল।

    না যাওয়ার জন্যে লাগে বালাস্ট। মাটির ঠিক উপরে সেটা পাতা হয়। সেটা দিয়েই ঘিরে দেওয়া হয় স্লিপারের চারপাশ। এমনকি দুটো স্লিপারের মধ্যেও থাকে বালাস্ট। সেই বালাস্টের পাথর লাগবে।

    জনঃ এ তো ভারি মুশকিল হল! পাথর এখানে আনলে যে খরচ হবে তাতো বাজেটে নেই হে!
    উইলিয়ামঃ সেটা তো বটেই। কিন্তু কাজটা করতেই হবে যে করে হোক। আমি আর খুব বেশী গ্রীষ্ম এখানে থাকতে চাইও না জন।
    জনঃ সে কি আমিও চাই? কিছু টাকা করে নিতে পারলেই হয়। তবে কাজটা কিন্তু এমন করা দরকার যাতে সকলে আমদের মনে রাখে। এ সুযোগ বারবার আসবে না উইলিয়াম। কোম্পানির ব্যবসা বাড়ছে ঠিকই। সঙ্গে দেশে শত্রুও। এমন জায়গায় শুধু এরাই ব্যবসা করবে তা কি করে হতে দেওয়া যায়! সবাই দেশে এটা নিয়ে ভাবছে। তাছাড়া ভেবে দেখ, এরা যদি এভাবে ক্রমশ বেড়ে চলে সেটা ব্রিটেনের পক্ষে কতটা ভাল?
    উইলিয়ামঃ এই শুরু হয়ে গেল তো? খ্রীষ্টের দিব্বি জন, আমার এই রাজনীতির কচকচানি ভাল লাগেনা।
    জনঃ ভাই, এটা না বুঝলে অনেক কিছুই বোঝা যাবেনা। আমাদের এখানে কি কাজ? কে দিল?
    উইলিয়ামঃ হেঁয়ালি করছ কেন?
    জনঃ আজকে আমরা এই কাজটা পেয়েছি, কিন্তু কাল অন্য কোম্পানি এলে আমাদেরই নেবে তার মানে কি? তাছাড়া আমরা যে টাকা নিচ্ছি তা প্রতিযোগিতা বেড়ে গেলে পাব? অন্যেরা আরো কম পয়সায় করলে কি হবে?
    উইলিয়ামঃ আমাদের যোগ্যতা কি কম নাকি?
    জনঃ তাদেরো যে কম হবে তার কি মানে?
    উইলিয়ামঃ ধুস! তুমি না সব গুলিয়ে দাও!
    জনঃ হুম! গোলাতে হবেনা। ভাব যে পাথর আমরা কোথা থেকে পেতে পারি। কোম্পানীকে কম খরচ দেখিয়ে ক্রেডিট নেব, আর সঙ্গে এই কাজে লোক আর পরিবহন বাবদ একটু…! হেঁ হেঁ হেঁ হেঁ!
    উইলিয়ামঃ লন্ডনে আমাদের একটা ভিলা হতে কত সময় লাগবে?
    জনঃ কাজের কাজ আগে হোক তারপরে এ সব!
    উইলিয়ামঃ বেশ।

    তাঁবুর বাইরে বেরিয়ে যায় উইলিয়াম। সে বেশী কথা বলতে পছন্দ করেনা সত্যি। রাত্রে তার পছন্দসই পানীয় আর একটু নারীসঙ্গ,ব্যাস!কিন্তু এখানে বড্ড ঝামেলা তা নিয়েও। “নচ গার্লস”-ও নেই এখানে। সারারাত শুধু মদ আর ফাঁকা। দিনের বেলা প্রখর রোদ। অনেক দূরে দূরে দুয়েকটা গ্রাম। ব্যাস! বেরিয়ে সামনেই কুলি গুলোকে চোখে পড়ল। কাজ করে চলেছে ওরা এই গরমেও। যেন কিছুই হয়নি এখানে।রোদ যেন ওদের স্পর্শ করেনা। উইলিয়াম না হয় শীতের দেশ থেকে এসেছে, কিন্তু এখানে যারা অভিজাত তারাও তো এই গরমে কোথাও কিছু করতে চায়না। পারলে সারা দুপুর জলঝারির আরামে কাটায়। “হুক্কা বরদার”,আর “পাঙ্খা পুলার” দিয়ে সারা দুপুর কাটায়।বিকেলে উঠে বেড়াতে যায় আবার সাহেবদের দেখা দেখি। রাত্রে মেহফিল। সন্ধ্যা থেকে তার প্রস্তুতি। আহ! ক্যালকাটা এ ব্যাপারে তার বেশ লাগে। আরে, একটা হারামজাদা দাঁড়িয়ে আছে? শুয়োরের বাচ্চাটা তাকে দেখছেও না। উইলিয়াম কে না দেখা আর একটা ম্যিউটিনির মধ্যে ফারাক কি? আবার দাঁত খুঁটছে হারামী!

    -You bloody nigger! Come here!

    ।।আঙুলের ইশারায় নাচে বিশ্ব।।

    এমন একেকটা সময় আসে যখন মনে হয় তাই। এখন যেমন উইলিয়ামের মনে হচ্ছে। সে আঙুল তুলে ডাকবে আর ওই বুড়ো হারামি দাঁড়িয়ে থাকবে? এর জন্যে তার জন্ম হয়নি। সে ডাকলে দৌড়তে দৌড়তে আসতে হবে ওকে। কিন্তু লোকটা আসেনা। বরং উলটো দিকে ফিরে হাঁটা দেয়। উইলিয়ামের গোটা শরীরে যেন রক্তস্রোত দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাকে অবহেলা করার সাহস দেখাচ্ছে ওই হারামী?তাকে?

    এই যে আঙুল তুলে ডাকা এটা খুব স্বাভাবিক কাজ উইলিয়ামদের কাছে। কারণ তারা এমনি শিখেছে। তাদের যারা শাসক ছিল বিভিন্ন সময়ে তারা এভাবেই ডেকেছে তাদেরকেও। অনেক আগে একবার রোমানরা এসেছিল। জুলিয়াস সিজার বলে লোকটা তাদের নেতা হয়ে এসেছিল। প্রথমে তারা ছিল ফ্রান্সে। গলেদের সঙ্গে যুদ্ধে মত্ত ছিল সিজার। ঠিক তখন-ই তার গড়া রোমান ট্রিয়ামভিরেট গোল্লায় গ্যাছে।বন্ধু এবং জামাতা পম্পেই-এর সঙ্গে বেশ ঝামেলা চলছে। সেনেট তাকে কনসালের যে পদ দিয়েছে সেই পদের বশে তাকে গল-এ থাকা-কালীন গ্রেপ্তার করা যাবেনা সেনেটের অনুমতি ছাড়া। কিন্তু রোমেও ফেরার উপায় নেই। এই অবস্থায় সবচেয়ে সহজ কাজ হল রোমের মহান সেনেটের জন্যে আরো ক্ষমতার ব্যবস্থা। তাতে তার দেশে ফেরার বিষয়টা কিছুটা সুগম হতে পারে। টাকা কি না করতে পারে!
    গলেদের সাহায্য আসছে ওই রহস্যজনক দেশটি থেকে, এটাই অভিযোগ। দেশটি মহাদেশের একদম প্রান্তে এবং তার চারপাশের সমুদ্র তাকে বেশ দুরুহ করেছে।

    পাইথিয়াস বলে এক গ্রীক নাবিকের লেখাকে অনেক বিশেষজ্ঞ উড়িয়ে দিয়েছেন। এমন কোনো দেশ নেই বলেই তাদের দাবী। কিন্তু সিজার জানেন আছে। গলের সঙ্গে তার সম্পর্কও আছে। গলেদের যে অংশটা বেলজিক, যারা পরে বেলজিয়াম বলে দেশটার নামের জন্যে পরিচিত হবে আরো, সেই অংশটা ওখানে অনেককাল ব্যবসা করছে। সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল দখল করেছে। চাষ-বাস, লুঠতরাজ, যুদ্ধ-বিগ্রহে তাদের দিন কাটে সেখানে। তাদের দমন করার নামে অভিযান হবে। তার আগে খবর চাই দেশটার সম্পর্কে। বণিকেরা, যারা ওখানে যায়, তারা সব বেলজিক-গল। তারা খবর দিলোনা ঠিকমত। এক রোমানকে একটি জাহাজ দিয়ে পাঠানো হল সেখানে। সে নামলো না সেখানে। সমুদ্র থেকে দেখে এল। কারণ বর্বরদের হাতে নিজেকে ছাড়ার মত ভরসা সে পায়নি।

    বর্বর? উইলিয়াম যে লোকটার জন্যে বন্দুক আনতে বললো তার মতই? নাকি তার থেকেও বর্বর? কেন বর্বর? তারা সব লম্বা চুল রাখে তাই? বহুগামিতা অবাধে চলে তাই? কে কার সঙ্গে শুচ্ছে এটা নিয়ে মাথা-ব্যাথা কম তাই? সন্তান হলে সে সন্তানের দায় যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তার, এটা প্রথা বলে? সিজার যতগুলো বিয়ে তার কি হবে? বলা হয় ব্রুটাসের বউ-এর সঙ্গে তার একটা পরকিয়া ছিল, তার কি হবে? সম্রাট নীরোর বোনের সঙ্গে সম্পর্ক? কিসে বর্বর কে? কম চুল রাখাটা বর্বরতা নয়তো? কে জানে? যে যেমন পারে তেমনি ব্যাখ্যা দেয় সভ্যতার! উইলিয়ামের মনে হচ্ছে ওই লোকটি বর্বর! তার ডাক না শুনে, পাথর না টেনে, লাইনের জন্যে স্লীপার না পেতে সে দাঁত খুঁটছিল। তাই উইলিয়াম কুলিকে হুকুম করেছে বন্দুক আনতে। কুলি বন্দুক আনতে গিয়ে জনকে দেখে। জন জানতে পারে উইলিয়াম বন্দুক চেয়েছে। তার ছোটভাইটির মাথা সে জানে। সে বেরিয়ে আসে।

    [ক্রমশঃ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ | ১৬৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 24.97.235.89 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০২:০২45475
  • আমার ব্যক্তিগত মত হল এরকম সাইজের বা এর চেয়ে অল্প বড় ব্লগ হলে দিনে একটা করে ঠিক আছে় পাঠক পড়ে ভেবে দেখার সময় পাবে পরেরটা আসার আগে।

    তবে পুরোটা দিয়ে দিলেও আপত্তি নাই। বড় লেখা পড়তে আমার অন্তত কোনও অসুবিধে হয় না।
  • brc-slg | 37.125.201.49 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৩:৫১45476
  • ....................................................................................

    "দ"-এর সাথে সহমত।
    শুদ্ধ, আপনি আপনার সুবিধেমত পোস্ট করতে থাকুন। পাঠক/পাঠিকা তাঁদের সুবিধেমত পড়বেন।
    ---
    আপনার যে যে লেখা অতীতে পড়ার সুযোগ হয়েছে, সব লেখাতেই আপনার চিত্রকল্প নির্মাণের পারদর্শিতা এবং জীবনকে পড়ার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়েই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনার মেধায় হৃদয় আছে।

    আশায় আছি, আপনার 'কাজ'-টি বড় মাপের হতে চলেছে।

    "কত রকমের সুদ এই পৃথিবীতে আছে আর তত্ত্বতালাস / শুধু এ-শহর জানে ..."

    ভাল থাকবেন ভাই।
  • kaushik | 127.211.91.76 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৪:৫৪45468
  • দারুন লাগল শুরুটা! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
  • | 24.97.72.255 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৫:১৮45469


  • তারপর?
  • dd | 132.167.5.27 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৬:০৯45470
  • শুরু থেকেই জবরদস্ত। চলুক চলুক।
  • Blank | 69.93.240.103 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৭:১২45471
  • ব্যাপক লাগছে
  • sumeru | 127.194.86.154 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৭:৩৫45472
  • ব্রেশ। ব্রেশ। সবটুকু দিয়ে ফ্যালাও।
  • kumu | 133.63.112.158 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৮:৫১45473
  • চমৎকার।তারপর?
  • শুদ্ধ | 126.193.139.17 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৯:০৯45474
  • ধন্যবাদ সকলকে।

    কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না কদিন পরে পরে দেওয়া উচিত? সবটুকু একসঙ্গে দিলে তো বিরাট হয়ে যাবে সুমেরু? dd, kumudi, blank, দ, Kaushik -সাজেশনে সাহায্য প্লিজ!!!
  • শুদ্ধ | 126.193.139.172 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০১:৫২45479
  • brc-slg, আপনাদের শুভেচ্ছাই পাথেয়।

    ঐশিক, ধন্যবাদ। পরের কিস্তি দিয়ে দিয়েছি।

    Kaushik, আমিও ওই দুটো-তিনটেই ভাবছি। নেট-এ টানা পড়তে অনেকের অসুবিধে হয় শুনছি। তাই একসঙ্গে দিচ্ছি না।

    ধন্যবাদ সকলকে সাজেশনের জন্য। :)
  • নিরমাল্লো | 113.21.127.54 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৬:৪৩45480
  • পরের পর্বের জন্যে প্রতীক্ষা।
  • π | 172.129.44.87 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ০৭:২৬45481
  • ভালো লাগছে, শুদ্ধদা।
  • ঐশিক | 213.200.33.67 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১০:২৮45477
  • ভালো লাগছে, পরের কিস্তির আশায় রইলাম
  • kaushik | 127.211.91.76 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ১১:৩৩45478
  • সবটা একসাথে দিলে একটু যেন মনে হয় খেই হারিয়ে ফেললাম। এই মাপের পর্ব সপ্তাহে বড়জোর দুটো হলে ঠিক। কারন এই লেখাটি ঠিক পাল্প ফিকশন নয় - পাঠককে একটু লেখাটাকে নিয়ে চিন্তার সুযোগ দিলে ভালো।

    এটা আমার মত।
  • arya | 229.65.188.75 (*) | ০১ অক্টোবর ২০১৩ ১১:৫৭45482
  • দারুণ লাগছে পড়তে...কেউ যেন পাশে বসেই গল্প বলছে...
  • প্রলয় মুখার্জী | 233.196.200.161 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৭:৪০45483
  • চিত্রকল্প তুমি যে ভাবে এনেছ। কৌশল , বলার ধরণ, সাজিয়ে তোলা, একটা জানার কৌতুহল তৈরী করে দেওয়া। এ সব কিছু নিয়ে বিষয়বস্তু, পরিবেশনা ক্লাসিক পর্যায়ের। কোনো কথা নেই।
  • প্রলয় | 233.196.200.161 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৩ ০৭:৪২45484
  • তথ্যভিত্তিক লেখাকে কি অসাধারণ পরিবেশনায় নিজস্ব গল্প হয়ে উঠছে। দারুণ শুদ্ধ-দা। পড়ছি। কৌটিল্যের মাপ জানাই ছিল না। বরাবরের মত ছাত্র আমি :)
  • শুদ্ধ | 126.193.140.28 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:৪৬45485
  • প্রলয়, কিছু যদি তোর ভাঁড়ারে যায় তাহলেই কাজ স্বার্থক হবে আমার।

    আর্য, উৎসাহ পেলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন