সেদিন খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার সময় শেফ-কে বিদায় জানাতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – এই রেষ্টুরান্টের তেমন বিজ্ঞাপন দেখি না কেন! আবারো সেই টিপিক্যাল উত্তর পেলাম – “দরকার পড়ে না”! রোজই সব টেবিল বুক থাকে, বেশীর ভাগ কাষ্টমারই রিপিট কাষ্টমার। টুরিষ্ট তেমন কেউ আসেই না এখানে – প্রায় চোখের আড়ালে তাদের। টেবিল রিজার্ভ না করে গেলে চান্স কম। তবুও কোন কোন টুরিষ্ট ঘুরতে ঘুরতে এখানে খেতে ঢুকে পরে এবং টেবিল খালি থাকলে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ধরে নিতে হবে। রিজার্ভ করলে পুরো সন্ধ্যেটাই সেই টেবিলে অতিথি কাটাবে ধরে নেওয়া হয় – ফলে টেবিল টার্ন-রাউন্ড এর কোন কনসেপ্ট নেই এদের। ধীরে ধীরে খাওয়া এবং পান চলতেই থাকে। এত বেশী সময় নিয়ে চলতে থাকে খাওয়া দাওয়া যে এর ফাঁকে একটা পলাশীর যুদ্ধ টাইপের ছোটখাট ইভেন্ট কিছু ঢুকে যেতেই পারে! ... ...
- কোনো ক্রাইসিস পিরিয়ডে ঘুম থেকে উঠে, আগে ভাত আর ডাল বসিয়ে দিতে হয় জানোনা। তুমি তো অনেকক্ষণ উঠেছো। ডালটা সিটি দেওয়া থাকলে, তাতে ডুবিয়েও তো সবাই পাঁউরুটি খেতে পারতো। তিনটে অসুস্থ, দুটো সুস্থ মানুষ খাবে কী এখন। ঘড়িতে সকাল দশটা বাজতে যায়? কর্তা দেখলাম জুৎসই উত্তর হাতড়াচ্ছেন। এমন সময় রান্নার মেয়েটি ঘর থেকে বেরোলো, আর বাংলার পাঁচ, ছয়, সাত সবরকম মুখ করে চাল ধুতে শুরু করলো। সহোদরাও বেরিয়ে পড়লো। আমাদের ঘরে তো আর অ্যাটাচড বাথ নেই। আর পতিদেব সুযোগ বুঝে - 'ওরে বাবা, চারদিকে করোনা বেরিয়ে পড়েছে, মাস্ক আমার মা - স্ক' - এই বলে এক লাফে বেডরুমে ঢুকে পড়লেন। আমি দাঁত কিড়মিড় করে ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, কর্তা একেবারে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়েছে আর দুটো চোখ বার করে দেখছে, আমি তাকে দেখছি কিনা। যেই আমি তাকিয়েছি, দেখি মুখে একটা অসহায় হাসি, এদিকে কম্বল থেকে একটা পা বার করে নাচাচ্ছে - পা দেখিয়ে আমায় রাগাচ্ছে। কী আর করি। পাত্তা দিলাম না। কিন্তু বুঝলাম মাটন স্টুটা আমাকেই রাঁধতে হবে। একমনে মহা করোনাঞ্জয় মন্ত্র আওড়ালাম - "মাটোন আমার কাঁটোন সই উনুনের ঝিক। রাম করোনা বুকে আছে পারবো আমি ঠিক।" ... ...
-দ্যাখো, বীনস, অ্যাসপারাগস, স্পিনাচ, ব্রকোলি এই সব তো দিন রাত খাইয়ে খাইয়ে আমাকে প্রায় শুঁয়োপোকা করে ফেললে -মানে কি বলতে চাইছো -তেমন কিছুই বলতে চাইছি না, শুধু তোমার নোটিশে আনতে চাইছি যে ঘাস পাতা খেয়ে খেয়ে আমার অবস্থা নিমো স্টেশনের ধারে সজনে গাছে থাকা শুঁয়োপোকা গুলোর মত হয়ে গেছে! দ্যাখোনি তুমি স্টেশনে শুঁয়োপোকা? -দেখেছি, কিন্তু তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক ... ...
খাবারের বাছবিচারে প্রতাপ রায় সাবেক কলকাত্তাইয়া। রয়ালের চাঁপ, সাবিরের রেজালা, নিজামের রোল, চাচার ফাউল কাটলেটে এমনই আস্থা যে সে জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে পারেন না। তবে আশাভঙ্গও হয়। যেমন চাচার ফাউল কাটলেট। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে যে আশাভঙ্গ প্রতাপ রায়ের হয়েছিল, আমার হল বছর তিন-চার আগে। চাচা তো ফুটপাত বদল করে উল্টোফুটে চলে এসেছে। সেজে উঠেছে নবসাজে। সে রূপ অবশ্য পাড়ার নতুন কাফে ডি তেলেভাজার থেকে থেকে কিছু ভিন্ন নয়। তবু এখনও ফাউল কাটলেটটি করে। কিন্তু সে শুষ্কং-কাষ্ঠং কাটলেট খেলে চাচার দোকানের ওপর শ্রদ্ধার থেকে অন্য কিছুর উদয় হয় মনে। শিককাবাব আর করে না। ... ...