এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  লিঙ্গরাজনীতি  অন্য যৌনতা

  • বাঙালি মেয়ের পোশাক আশাক

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    লিঙ্গরাজনীতি | অন্য যৌনতা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২১৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • ঠাকুরবাড়ির জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বাঙালি ভদ্রমহিলাদের আধুনিক শাড়ি পরার কায়দার সূচনা করেন, উনবিংশ শতকের শেষের দিকে। মোটামুটি ষাটের দশকের মাঝামাঝি। হিসেবের সুবিধের জন্য বলে দেওয়া যায়, রবীন্দ্রনাথের জন্মও ওই দশকেই। তিনি তখন শিশু। তার আগে, বাঙালি ঘরের মেয়েরা কী পরতেন? যা পড়া যায়, তাঁরা মোটের উপর পর্দানশীন থাকতেন, এবং একই সঙ্গে বাইরে পরার মতো 'শ্লীল' কোনো পোশাক তাঁদের ছিলনা, কোনোমতে একখন্ড শাড়ি জড়িয়ে রাখতেন। এটা হল ইংরেজ আমলের কথা, সিপাহীবিদ্রোহ সবে শেষ হয়েছে, ইংরেজরা জাঁকিয়ে বসেছে। কিন্তু কথা হল, তার আগে বাঙালি মেয়েরা কী পরতেন? আলিবর্দি বা সিরাজের আমলে? পলাশীর যুদ্ধের আগে? নবাবী অভিজাতদের একটা পোশাক ছিল, তার ছবি-টবিও পাওয়া যায় কিছু, সে জিনিস শাড়ি নয়। কিন্তু সাধারণ ঘরের মেয়েরা?

    ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর কাব্যে এর একটা উত্তর পাওয়া যায়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র সিরাজের চেয়ে বছর কুড়ির বড়। তাঁর সভাকবি ভারতচন্দ্র। বিদ্যাসুন্দর যদিও অতীতকালের কোনো এক কল্পিত আখ্যান, কিন্তু বর্ণনা একেবারেই সমসাময়িক। বিদ্যাসুন্দরের আমলের রাজসভায় ইংরেজ ফরাসী ওলন্দাজ, সব্বার দেখা পাওয়া যায় বিদ্যাসুন্দরে। সেই কাব্যের বিদ্যা এক অতি সুন্দরী নারী, আর সুন্দর এক অতি রূপবান পুরুষ। সেই কাব্যে সুন্দর যখন বর্ধমান প্রবেশ করছে, তখন নগরের অনেক নাগরী অর্থাৎ কিনা নাগরিকারা স্নান করতে যাচ্ছেন। ওই রূপবান পুরুষ দেখে তারা হাঁ, বস্ত্র খুলে পড়ে যায় আর কি। ভারতচন্দ্র লিখছেন "শাড়ি পর লো কষিয়া"। অর্থাৎ নাগরিকারা শাড়িই পরেছেন, অন্য কিছু না। এ আমরা এমনিই জানি, কিন্তু প্রমাণ ছাড়া স্রেফ সাধারণ জ্ঞান দিয়ে অতীতের কিছু বিশ্বাস করে নেওয়া ঠিক না। এবার, কথা হল, বস্ত্র খসে পড়ে যাচ্ছে মানে কী কী খসে পড়ছে? "কবরী ভূষণ, কাঁচুলী কষণ, কটির বসন খসে অমনি"। অর্থাৎ শুধু শাড়ি না, কাঁচুলিও ছিল। কটির বসন খসে যাওয়ার পরেও তারা রঙ্গঢঙ্গ করছে। "চলিতে না পারে, দেখাইয়া ঠারে, এ বলে উহারে দেখ লো সই"। 

    এর থেকে তিনটে জিনিস বোঝা যায়। এক, মেয়েদের পোশাক শাড়ি-কাঁচুলি। নিম্নাঙ্গে কটিবস্ত্রের নিচে কিছু একটা থাকা প্রত্যাশিত, কিন্তু সেটা ভারতচন্দ্র লেখেননি। দুই, তারা প্রকাশ্যে স্নানে যেত। একেবারেই অসূর্যম্পশ্যা না। তিন, লজ্জাবতী লতা তো নয়ই, বরং রঙ্গঢঙ্গ দিব্যি চলত প্রকাশ্যে। অবশ্যই এটা ইতিহাস নয়, কাব্য, কিন্তু একেবারে বানিয়ে লিখে দিলে লোকে রসাস্বাদন করতে পারতনা, বাজারে টিকেও থাকতনা। মেয়েদের প্রকাশ্যে বেরোনোর ঐতিহাসিক সাক্ষ্যও আছে। সে একটু ঘুরপথে। সিরাজদৌল্লা নবাব হবার আগে দুর্দম চরিত্রের ছিলেন, মেয়েদের পিছনে লাগতেন বলে শোনা যায়। ফরাসি সেনাপতি ল লিখেছেন, যে, সিরাজ অনুচরদের পাঠাতেন, স্নানে আসা মেয়েদের মধ্যে কে সুন্দরী দেখে আসতে। তারপর তিনি তাদের তুলে আনবার ছক করতেন। সে আমলের প্রায় সরকারি ঐতিহাসিক গোলাম হোসেন খানের সিয়ার-উল-মুতখখিরিন এও ছোট্টো করে এই প্রসঙ্গ আছে। রানী ভবানীর মেয়ে তারার উপরেও এইভাবেই নাকি সিরাজের নজর পড়েছিল, এটা অবশ্য কোনো প্রত্যক্ষদর্শী লিখে যাননি, কিন্তু গপ্পো আছে প্রচুর। সত্যতা নিয়ে তর্কও আছে বিস্তর। কিন্তু এখানে সত্যমিথ্যা যাচাই করার কথা হচ্ছেনা। মেয়েরা প্রকাশ্যে বেরোতো, স্নানে যেত, এবং তাদের সৌন্দর্য-টৌন্দর্যও বোঝা যেত, এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এবং তাদের হরণ করা যে অনৈতিক কাজ, তাতেও সবাই একমত।

    এরকমটাই অবশ্য হবার কথা। কারণ, মেয়েরা সে সময় কাজ-টাজ করত, মূলত সুতো কাটার কাজ। সিরাজের আমলে প্রায় সমমাপের যে দুজন জমিদারের কথা পাওয়া যায়, তার একজন পুরুষ, কৃষ্ণচন্দ্র, অন্যজন নারী, রানী ভবানী। ফলে বাইরে বেরোতনা, এবং কাজ করার মতো কোনো পোশাক ছিলনা, এ সম্ভব না।

    তাহলে জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর শাড়ি আবিষ্কারের গল্পটা কি মিথ? তাও না। কলকাতা শহরের বাবুদের মধ্যে গোড়া থেকেই পর্দানশীন অন্তঃপুরিকার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। ইংরেজের শহর কলকাতার বাঙালি বাবুর অন্তঃপুরের প্রথম বর্ণনা দেন সম্ভবত ফ্যানি পার্কস। একজন ইংরেজ মহিলা, যিনি কলকাতায় বিশের দশকে বছর দশেক থেকে গেছেন, এবং লিখেওছেন। সময়টা জ্ঞানদানন্দিনীর শাড়ি আবিষ্কারের মোটামুটি চল্লিশ বছর আগে। ফ্যানির বর্ণনায় সে সময়ের রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ির অন্দরমহলের বর্ণনা আছে। একটি অনুষ্ঠানে রাজার বাড়ি গিয়েছিলেন ফ্যানি, এবং মহিলা বলেই অন্তঃপুরিকাদের সাক্ষাৎ পান। তাঁরা থাকতেন পর্দার আড়ালে। অনেকেই সুন্দরী। অলঙ্কার আবৃতা। এবং একবস্ত্রা। শাড়ি পরতেন, এবং তার নিচে আর কিছু না। সে শাড়ি এতই সূক্ষ্ণ, যে, তার ভিতর দিয়েও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আভাস পাওয়া যেত। অর্থাৎ, ১৭৫০ থেকে ১৮২০, এই সত্তর বছরের যাত্রায় কাঁচুলি এবং নিম্নাঙ্গের সম্ভাব্য অন্তর্বাস ঝরিয়ে ফেলে কলকাতার বাবুঘরের মেয়েরা হয়ে গিয়েছিলেন একবস্ত্রা এবং অসূর্যাম্পশ্যা। এর মাঝে অনেক ওলটপালট হয়েছে। ইংরেজ যুগ এসেছে, তাঁতশিল্প ধ্বংস হয়েছে, মন্বন্তরে এক তৃতীয়াংশ লোক মারা গেছে। তার সঙ্গে নারীর পোশাক এবং অবস্থান কিভাবে বদলেছে, আন্দাজ করা যায়। এই যাত্রাপথের মানচিত্র ঐতিহাসিকদের খুঁজে বার করা উচিত।

    এর সঙ্গে আরও একটা মানচিত্রও বদলেছে। সেটা হল যৌন-উদ্দীপক পোশাক। রামমোহন রায়ের বাড়ির অনুষ্ঠানেই ভারতবিখ্যাত নিকি বাইজি এসেছিলেন, ফ্যানি তাঁর পোশাকেরও বর্ণনা দিয়েছেন। সাটিনের পোশাক (শাড়ি নয়), সঙ্গে পাজামা। এবং সঙ্গে মাতাল করা নাচ। সে নাচ নাকি এতই উদ্দীপক, যে, বিলিতি মহিলারাও ওই পোশাক পরে নিজেদের জমায়েতে ওই নাচ নাচার চেষ্টা করতেন। এবং গরমের দেশে গলদঘর্ম হয়ে, কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এতই গুরুতর বিষয় হয়ে গিয়েছিল, যে, এই পোশাক পরতে বারণ করে একটি নোটিসও জারি হয়েছিল। কিন্তু সে অন্য বিষয়। বাইজিদের পোশাক, যদি পলাশীর আগে থেকে বদলায়নি ধরে নিই, তাহলে যৌন উদ্দীপনা নিয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস নজরে পড়ে। সর্বাঙ্গ ঢাকা ঝলমলে আঁটোসাটো পোশাক সে সময় ছিল উদ্দীপক। আর খোলামেলা, কাঁধ-খোলা শাড়ি হল 'স্বাভাবিক'। তাতেও আকর্ষণ থাকলেই পারে, কিন্তু ওটা আলাদা করে উদ্দীপক কিছু না। পলাশীর যুদ্ধের পর, ৭০ বছরে বাইজির উদ্দীপনা বদলায়নি, কিন্তু কাঁধ-খোলা মেয়েদের পোশাকও জনারণ্যে পরার অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। এর কিছুদিন পরে, আরও জগাখিচুড়ি তৈরি হবে, নগ্নতার সঙ্গে উদ্দীপনার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে। এবং বাঙালি মেয়েদের পোশাককে প্রায় নগ্ন এবং পরিত্যাজ্য ভাবা হবে। 

    ফ্যানির অন্দরমহলের বর্ণনা কুড়ির দশকের। তার চল্লিশ বছর পরেও কলকাতার বাবু এলাকায় অন্দরমহলের চিত্র বদলায়নি। চিত্রা দেবের ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলেও একই রকম একবস্ত্রা নারীর দেখা পাওয়া যায়। কাঁচুলি বা অন্তর্বাসের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। ফলে সত্যিই ও পরে বেরোনো মুশকিল। কিন্তু থাকলেও লাভ হতনা, কারণ, খোলা কাঁধ পেট বা শরীরের পাশের অংশ, সবই তখন নগ্নতার নামান্তর। ফলত জ্ঞানদানন্দিনী যে পোশাক চালু করলেন, তা সর্বাঙ্গ ঢাকা। চিত্রা দেব লিখেছেন, সায়া, সেমিজ, ব্লাউজ এবং জ্যাকেট, এই চারটি জিনিস যোগ হল। সুনীতি দেবী তাতে কিছু রদবদল করলেন, ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ১৭৫০ সালে গরমের দেশে খোলামেলা যে পোশাকে নারী রঙ্গঢঙ্গ করত, তা একশ বছর পরে মোটামুটি বস্তার আকার নিল।

    সর্বাঙ্গঢাকা পোশাকে জ্ঞানদানন্দিনী। চিত্রা দেবের বই থেকে নেওয়া।  

    এটা অবশ্য শুধু মহিলাদেরই হয়েছে তা নয়। পুরুষদের পোশাকও ছিল দুই খন্ড বস্ত্র। তা ক্রমে পরিণত হয়েছে ফর্মাল ফুলহাতা শার্টে। মেয়েদের ক্ষেত্রে অত্যাচার একটু কম সময় চলেছে। মোটামুটি রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই টের পাওয়া যায়, বস্তা পরার চেয়ে শরীর একটু দেখা গেলে, একটু বিভঙ্গ প্রকাশিত হলে, সেটা দেখতে শুনতে ভালো লাগে (শেষের কবিতা দ্রষ্টব্য)। তারও কিছুদিন পরে স্লিভলেস ব্লাউজ এবং একদম হাল আমলে মেয়েরা হল্টারনেক টপ-ইত্যাদি পরছেন। এই শেষটা মোটামুটি কাঁচুলি গোত্রীয়। সব মিলিয়ে ১৭৫০ সালের পোশাকে আরেকবার পৌঁছতে আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। প্রসঙ্গত পুরুষরাও এখন হাফপ্যান্ট পরা চালু করেছেন।

    হল্টারনেক ব্লাউজ দিয়ে সার্চ করে পাওয়া একটি নমুনা ছবি

    গপ্পোটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু ফ্যানি পার্কস এবং চিত্রাদেবের অন্দরমহলের বর্ণনার একটা পাল্টা বর্ণনাও আছে। সেটি বিনোদিনী দাসীর, যিনি নটী বিনোদিনী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রায় সমবয়সী। এবং খাস কলকাতার মেয়ে। কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে তাঁদের নিজ পাকা বাটি ছিল। যদিও, কলকাতার বাবু সম্প্রদায়ের কেউ নন তাঁরা। ফলে, বিনোদিনীর আত্মজীবনী পড়লেই দেখা যায়, তাঁর শৈশবের অন্দরমহল এবং রবীন্দ্রনাথের শৈশবের অন্দরমহলের আকাশ-পাতাল তফাত। বিনোদিনীর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে কোনো পুরুষ অভিভাবক ছিলনা। পরিবার ছিল, মা এবং দিদিমা এই দুই নারীচালিত। দুজনেই বিধবা। ছিল একঘর ভাড়াটে। ভাড়া আদায় করে সংসার চলত। বাড়ির যাবতীয় কাজ, ডাক্তার-বদ্যি সহ নারীরাই করতেন। পরে অবশ্য অবস্থা পড়ে যাবার পর ছেলের বৌয়ের গয়না বেচেই সংসার চলত। এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতে আসেন আরেক নারী, যেখান থেকে তাঁর থিয়েটার জীবনের সূচনা। কিন্তু সে তো অন্য বিষয়। কিন্তু বাবু সম্প্রদায়ের অন্তঃপুরের যে চিত্র পাওয়া যায়, তার থেকে এটা পুরো আলাদা। বিনোদিনী মা-দিদিমার পোশাকের বর্ণনা দেননি, বেশি বলা হয়ে যাচ্ছে বলে প্রসঙ্গ থেকে সরে গেছেন। কিন্তু দিলে ভালো হত। কারণ, ফ্যানি পার্কস থেকে চিত্রা দেব, অন্দরমহলের পুরো আখ্যানটাই বাবু সম্প্রদায়ের। ভদ্রলোক সম্প্রদায় তখনও তৈরি হচ্ছে, অতএব বাবু বলাই শ্রেয়। তাতে বিনোদিনী যোগ করেছেন অসঙ্গতি। অর্থাৎ, পরগাছা বাবুদের অন্তঃপুরে একবস্ত্রা পর্দানশীন নারী, যাঁরা এমনকি গঙ্গায় ডুবও দিতেন পাল্কিসমেত, সেটাই একমাত্র চিত্র না। বলা যায় ছোট্টো একটা খন্ডচিত্র। তার বাইরে খেটে-খাওয়া, খুঁটে খাওয়া নারী ছিলেন বিস্তর, অন্তঃপুরে পড়ে থাকলে যাঁদের চলবেনা। তাঁদের পোশাকের বিবর্তনেরও একটা মানচিত্র তৈরি করা দরকার। কিন্তু করা মুশকিল। কারণ ইতিহাস বলতে যা লিপিবদ্ধ আছে, তার বেশিটাই বাবুদের ইতিহাস। ওইটাকেই আমরা সমাজের ইতিহাস বলে চিনতে শিখি। যেমন চিনি উপনিবেশের ইতিহাসকেই নিজের ইতিহাস বলে চিনতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • লিঙ্গরাজনীতি | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ২১৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিএস  | 103.99.156.98 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১০523997
  • শুধু বই পরে পোশাকটোশাকের ব্যাপার পুরো বোঝা যাবে না। ছবি দেখ। বিশেষ করে, বেলজিয়ান আর্টিস্ট বালথাজার সলভিন্সের আঁকা ছবিগুলো, মোটামুটি ১৮০০ - ১৮২০ সময়ের, প্রায় এথনোগ্রাফারের দৃষ্টি। এবং এইসব ছবিগুলো ভদ্রলোক শ্রেণীর লোকজনের নয় কিন্তু মূলতঃ কলকাতাকেন্দ্রিক (ব্ল্যাক টাউন), দূর গ্রামবাংলা খুব একটা নেই। কিন্তু কোন ছবিতেই শাড়ী - কাঁচুলি দেখিনি। মেয়েরা মোটামুটি ওপর থেকে নীচ অবধি পোশাকে ঢাকা, শালওয়ার - কামিজ টাইপের পোশাক আছে আবার শাড়ীও আছে। শাড়ী যখন পরছে তখন গায়ে সাধারণতঃ জামা নেই। বাজারের ছবি আছে, সেখানেও ওরকম পোশাকেই। কারা শাড়ী পরেছে আর কারা নয়, সেটা নির্ভর করে মেয়েরা কারা, তাদের ওপরে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও মোটামুটি মাথা থেকে পা অবধি ঢাকা আর নয় গা খালি, নীচে ধুতি। এইরকমই দেখলাম।

    এই দুটো লেখা ও ছবি দেখতে পার, আরো আরো আছে অবশ্য।

    https://www.laits.utexas.edu/solvyns-project/hardgraveportrait.html

    https://www.architecturaldigest.in/story/etchings-by-baltazard-solvyns-beautiful-showcase-of-bengal-1790s/
  • সিএস  | 103.99.156.98 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৫524000
  • এই ছবিটা বলছ ? 
     
     
     
    ফোরগ্রাউণ্ডে যে মহিলাটি, মনে হয় এদেশের , ঘাগরা টাইপের পোশাক। কিন্তু সঙ্গে মনে হয় ট্রাউসার পরিহিত পুরুষ ? তাহলে কি দু'জনেই ইওরোপীয় ? 
     
    কিন্তু এদের পেছনে তিনজন পুরো ইওরোপীয় পোশাকে, ঘোড়ায় চড়ে যে, সেও । আবার এই দু'জনের দুইপাশে এদেশীয় লোকজন, তাদের পোশাকে, শাড়ি, পাগড়ি ইত্যাদি। খালি গা - ধুতি, বাচ্চাটির প্রয় কোন জামাই নেই। 
     
    এইটা মনে হয়, ঘরের ভেতরের বাঙালী মহিলার ছবি, শাড়ি আছে, জামা নেই। 
     
     
     
    এইটা রাস্তার ছবি, নারী - পুরুষ, মনে হয় বিবিধ জাতের এবং বিবিধ পোশাকে।
     
  • π | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৭524001
  • হ্যাঁ, এই প্রথম ছবিটার কথাই জিগেশ করছিলাম।
  • হিজি - বিজ- বিজ  | 2603:8000:a403:4186:4e1d:2d03:503f:26fd | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৯524003
  • বেশ ইন্টারেস্টিং লেখা। 
    আচ্ছা এই  " কারা শাড়ী পরেছে আর কারা নয়, সেটা নির্ভর করে মেয়েরা কারা "  এটা কী তাঁদের ধর্মীয় চরিত্রের কথা বলছেন? (মোটাভাই এর ​​​​​​​সাথে গুলবেন ​​​​​​​না ​​​​​​​তা ​​​​​​​বলে )
     
    "প্রসঙ্গত পুরুষরাও এখন হাফপ্যান্ট পরা চালু করেছেন। " ধুস এখন কেন নাগপুরে তো অনেককাল আগে থেকেই পরে শুনেছি। 
  • সিএস   | 103.99.156.98 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:০৫524007
  • কয়েকটা ছবি দেখি, মেয়েদের, সলভিন্সের আঁকা।

    ছবি-১ঃ
     

     
    ১৮১০ এর ছবি, মহিলাটি ঠিক খেটে খাওয়া মহিলা নয়, হয়ত আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, বাড়িতেই মূলতঃ থাকে, যেখানে বসে আছে সেটা মাটির কাছাকাছি নয়, মাটি থেকে উঁচুতে গদিওয়ালা খাট বিশেষ। ছবিটা মূলতঃ সাদা বা ধূসরে, কিন্তু কিছু জায়গা সোনালী, হাত, কান, কপাল ইত্যাদির গয়নাতে, খাটের পাশে যে তোরঙ্গটি, সেটির হ্যাণ্ডেলেও। এগুলো মনে হয় সোনার , কিন্তু পোশাক বলতে শাড়িই। হ্যাঁ, সেই শাড়ির গুণ কিরকম, বিশেষত্ব কীরকম স্পষ্ট নয়, হয়ত অনুমান করা যায় যে সেটি একেবারে সাধারণ হবে না। এই ছবি নিয়ে সলভিন্সের যে মন্তব্য আছে সে পড়ে মনে হয়, ছবিটি কোন 'সাধারণ ' ঘরের মহিলার ছবি নয়, রক্ষিতা বিশেষের ছবি যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে এবং শুয়ে-বসে দিন কাটানোর সময়ও আছে। 
     
    ছবি-২ঃ 
     
     
    বাজরের ছবি, মেয়েদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়, খাটিয়ে মেয়ে ও পুরুষরাই যেন এই ছবির থীম। মেয়েরা শুধু শাড়িতেই কিন্তু এই শাড়ির সাদা আর আগের ছবির সাদা যেন আলাদা, আগের ছবিতে ঠিক সাদা ছিল না, অনেকটা ঘিয়ে রঙের। অনুমান করি, দুই ছবির মেয়েরা আলাদা রকমের শাড়ি পরছে। ছবিটার ডানদিকে ঝুড়ি মাথায় এক মহিলার ছবি আছে, হাঁটু অবধি আঢাকা পা, পাশ থেকে স্তনের অংশ দেখা জাচ্ছে, বাঁ হাত্টিও অনাবৃত। এইরকম পোশাক ও দেহভঙ্গীতে বাজারে কাজ করতে অসুবিধে নেই বলে মনে হয়, এসবই তাদের কাজ ও দৈনন্দিনের অংশ, পুরুষরা যেমন শুধু ধুতিতে। আবার অন্য ছবিতে, পুরুষদের দেখা যাবে পাগড়ি - জামা - ধুতি ইত্যাদিতে, তারা মনে হয় বেনিয়া গোছের চরিত্র, কোম্পানীর কাজের সাথে যুক্ত, এই ছবিতে যারা তাদের কাজের জগত আলাদা, ফলে পোশাকের বিবিধ ব্যবহার, মেয়েদের ক্ষেত্রেও যেমন। এখন এই খেটে খাওয়া মহিলার পোশাক , ছবিটি যখন ১৮১০ নাগাদ আঁকা হচ্ছে তার আগের বিশ তিরিশ বছরের তুলনায় বদলায়নি মনে হয়, একেবারেই সাধারণ। কিন্তু এই সাধারণ ভাব ভারতচন্দ্রের লেখায় মেয়েদের পোশাকের সাথে  তুলনা করা যায় কিনা সন্দেহ আছে, সেগুলো আলাদা। 
     
    ছবি-৩ঃ 
     
     
    এরা নচ-গার্ল, পোশাক আলাদা, শাড়ি নয়, মাথা থেকে পা অবধি ঢাকা, ঢিলেঢালা। বাঈজীদের পোশাক যেমন হয়, মনে হয় না, এই পোশাকও নবাবী আমল থেকে বিশেষ বদলেছে। (কিন্তু এই পোশাক কীভাবেই ব উত্তেজনা তৈরী করতে পারে ? নিকি বাঈজী সেইজন্যই সাটিনের পোশাক ব্যবহার করত ? ) এই ছবিতে আবার দুইধরণের পুরুষেরা আছে, তাদের পোশাকও আলাদা, যারা বাজনা বাজাচ্ছে তাদের গায়ে কোন পোশাক নেই, এই কাজ করতে ঘাম ঝরে,সেই  জন্যই ? 
     
    তিনটি ছবি দেখে মনে হয়, মেয়েদের পোশাক, বিভিন্ন রকমের মেয়েদের পোশাক তাদের কাজ বা দৈনন্দিনের মধ্যে তফাত থাকার জন্য আলাদা হলেও (নচ-্গার্ল, বাজারে কাজ করা মেয়ে, ঘরে থাকা মেয়ে )ঐ প্রতিটি ভাগে পোশাকের বদল অনেকদিন ধরেই হয়নি । পোশাকের বদল হল ভদ্রলোক শ্রেণীর মেয়েদের ক্ষেত্রে, খালি গা ঢেকে দিয়ে জ্যাকেট - ব্লাউজ গায়ে ঊঠল কিন্তু এ তো স্বাভাবিকই , ভদ্রলোক শ্রেণীটিই তো নতুন তৈরী হল, নতুন ক্যাটাগরি, আগের থেকে নানারকমের বদল ঘটিয়ে , অর্থনীতি আর কাজের বদলসুদ্ধ,নানারকমের কন্ফ্লিক্টসুদ্ধ। কনফ্লিক্টের মধ্যে ভিক্টোরিয় নীতিবোধ মনে হয় একটি দিক, মেয়েদের পোশাকের বদল হয়ত এর সাথে যুক্ত (ভদ্রলোক পরিবারের মেয়েদেরকায়িক শ্রম থেকে দূরে সরে যাওয়ার সাথেও হয়ত যূক্ত ) , মেমদের পোশাকও ভিক্টোরিয়ভাব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত , সাহিত্য সংক্রান্ত রুচিও তো এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, বিদ্যাসুন্দর নিয়ে তর্ক তো ১৮৫০-৬০ দশক নাগাদই ঘটল। 
  • বিপ্লব রহমান | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮524013
  • সব ছবি আসছে না, এপের কারণেও হতে পারে 
  • :|: | 174.251.161.181 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:১৪524015
  • "সময়টা জ্ঞানদানন্দিনীর শাড়ি আবিষ্কারের মোটামুটি চল্লিশ বছর আগে।"
    জ্ঞানদানন্দিনী ঠিক আবিষ্কার করেননি। বাঙালী আটপৌরে শাড়ি পরার ধরণটির সঙ্গে মারাঠিদের কুঁচিয়ে পরার ধরণটিকে মিলিয়ে মিশিয়ে আজকের স্টাইলে উত্তীর্ন করেছিলেন। বাইরে চলা ফেরায় সুবিধা হবার জন্যে। এইরকমটাই শুনেছি। 
  • সিএস | 2401:4900:708f:f373:b4d8:6b84:a6db:f243 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২২524017
  • এই লেখা পড়তে গিয়ে ভারতের বিদ্যাসুন্দর খামচাখামচি করে পড়ে ফেললাম। সে অতি রসসিক্ত লেখা, কামজর্জর নারীউক্তি সমেত, ভুঁড়ো বরেদের নিন্দা সুদ্ধ, বিপরীত রতিবিহারের বর্ণনা নিয়ে। এও মনে পড়ল, রামপ্রসাদও বিদ্যাসুন্দর লিখেছিলেন, সে মনে হয় অতখানি ইরোটিক নয়, রাজার মনে হয় পছন্দ হয়নি, ভারতচন্দ্রকে দিয়েও লিখিয়েছিলেন। এটাই বেশী পপুলার হয়েছিল, উনিশ শতকে গিয়ে মিশনরি আর ভদ্রলোকদের সমস্যায় ফেলেছিল।

    হ্যাঁ, জ্ঞানদানন্দিনী শাড়ি পড়ার ধরণে বদল করেছিলেন, পার্সি প্রভাব ছিল মনে হয়, সত্যেন ঠাকুর তো ঐদিকেই কাজের সূত্রে। পরে মনে হয় শাড়ি পড়ার ধরণ আরো বদলে গেছিল, এখন যা প্রচলিত, সে মনে হয় মাদ্রাজী প্রভাব।
  • kk | 2607:fb91:140e:8383:c128:6648:7f7f:4c61 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৩১524018
  • ভালো লাগলো।ইন্টারেস্টিং বিষয়। সিএস এর ছবির অ্যানালিসিস গুলোও খুব ভালো লাগলো।
  • | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৮524019
  • ইন্টারেস্টিং বিষয়। জ্ঞানদানন্দিনী  শাড়ি আবিষ্কার করেন নি, পরার ধরণ বদলে নিয়েছিলেন।  
    সিএসের আলোচনা খুবই ভাল লাগল। 
  • raamprasaad | 117.194.215.9 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৪524020
  • রামপ্রসাদেরটা পড়েছি। খামতি শুধু ইরোটিকতার নয়, ভারতের নাগরিক বৈদগ্ধ , পালিশ,  বিভিন্ন রকম অলঙ্কার ও ছন্দের উপরে দখল, এসব অনেক বেশী পরিমাণে ছিলো বলে মনে হয়। বিদ্যাসুন্দরের কাহিনীর ​​​​​​​সাথে ​​​​​​​ঐ স্মার্টনেসটা ​​​​​​​খাপ ​​​​​​​খেয়ে ​​​​​​​যায়।
  • @ সি এস | 117.194.215.9 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৯524021
  • আর হ্যাঁ সি এস একদম-ই লেখেন না। আনা কারেনিনা নিয়ে লিখেছিলেন, শেষ করেন নাই। কুন্দেরা  নিয়ে লেখাটা একেবারেই ফেসবুকিয় ইসেকর্ম। কি আর বলি ! 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:6b8e | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:১৬524024
  • খাইসে, কারেনিনাকে নিয়ে কী লিখলাম ?
  • ঋতু শী | 103.175.63.10 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৮524028
  • আমরা যেটা জানি, জ্ঞানদা নন্দিনী দেবী, আধুনিক কালে মেয়েরা যেভাবে শাড়ী পরে, তার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। অর্থাৎ খানিকটা কুঁচি দিয়ে, বাকিটা আঁচল করে। তার আগে কোনরকমে জড়িয়ে আটপৌরে ভাবেই সকলে শাড়ী পরতো। শাড়ী আবিষ্কার করেছিলেন কোথাও পড়িনি।
  • স্বাতী রায় | 117.194.32.245 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০২524031
  • আমি যতটুকু পড়েছি শ্লীল অশ্লীলতার প্রসঙ্গ এসেছিল সূক্ষ্ম গা দেখা যাওয়া শাড়ি -ধুতি নিয়ে। সংবাদ পত্রে সেকালের কথায় দ্বিতীয় খন্ডে আছে সে কথা। সেখানে ১৮৩৫ সালে একজন লিখছেন বাবু/ জমিদার / সেরেস্তাদার/ পত্তনীদার রা যেমন জামা নিমা কাবা কোরতা ইত্যাদি হিন্দুস্থানি পোশাক পরেন,তাঁরা বাড়ির মেয়েদেরও লাচ্ছা উড়নি পরালে তত দোষের হবে না। আর  ১৮৫১ সালের একটা খবর আছে  যে বর্ধমানের রাজা তার অধিকারে সূক্ষ্ম বস্ত্র পরা নিষেধ করছেন। একজন সরু ধুতি চাদর পরে দেখা করতে এসেছিল বলে তার দেওয়া নজর তিনি নেননি।

    নাহলে তো মেয়েরা দিব্য খালি গায়ে দু ফেরতা করে সায়াহীন শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াত। ওই ঠিক সি এসের দেওয়া ছবির মতন। যেটা সমাজের স্ত্যান্ডার্ড  তাতে মেয়েদের যেখানে মোবিলিটি  এলাউড, সেই স্তরে সমস্যা হবে কেন? সেই স্তরের মেয়েরা অবশ্য গারা জাতীয় মোটা কাপড় পরতেন। মিহি শাড়ির খরিদ্দার এঁরা নন।  আমিই তো ছোটবেলায় এমন ভাবে বয়স্কা দু একজনকে দোকান হাট করতে দেখেছি গ্রামের দিকে।  এঁরা খুব ভদ্র কোথাও যেতে হলে গায়ে শীত গ্রীষ্ম নির্বিশেষে একখান চাদর জড়াতেন। খালি গায়ে উপর হাতে সোনার গয়না পড়া মহিলাও দেখেছি বাগবাজারের অন্দর মহলে। 
  • অঞ্জন পাল | 103.175.62.186 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:০৩524032
  • দারুণ বিশ্লেষণী লেখা 
  • সিএস  | 2405:201:802c:7838:2959:e239:c5e:e4c1 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:১৯524035
  • আরো কয়েকটা ছবি দেখি, সলভিন্সেরঃ

    এই ছবিটা আগেও দিয়েছিলাম কিন্তু বিশদে তখন দেখিনি।
     
     
     
    ছবিটির নাম Of the Nations Most Known in Hindoostan , নেশন বলতে এখানে বিভিন্ন জাত - ধর্ম - পেশা - নারী - পুরুষ, যাদের এদেশে বেশী দেখা যায়, তাএর কথাই বলা হচ্ছে। হিন্দু আছে, মুসলমান আছে, ইওরোপীয় আছে, মাঝখানে কালো কোট পড়ে যে,স e হয়ত কোম্পানির কর্তা, তার সাথে যে মেয়েটি কথা বলছে সে হয়ত ভারতীয়, ছবিটির বাঁদিকে এদেশীয় লোকজন বিভিন্ন পোশাকে, তাদের মাঝে একজন নীল জ্যাকেট পড়া মানুষ আছে যে মনে হয় এক নাবিক (অন্য একটি ছবি আছে একইরকমের) কিন্তু নাবিক বলেই হয়ত অন্য সাহেবদের মধ্যে তাকে রাখা হয়নি, এদেশীয়দের মধ্যেই তাকে মেশানো হয়েছে। নচগার্লটি সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে, আর্টিস্ট তাকে লুকোনর চেষ্টা করেননি, বাঁদিকে যে মহিলাটি বসে আছে তার পরণে ব্লাউজের মত কিছু একটা, আর একজন মেয়ে আছে পেছন ফিরে কিন্তু তার শাড়ির তলায় হয়ত কিছু পরা নেই  !বিভিন্ন রকমের টুপি ও ছাতার ব্যবহারও রয়েছে এবং ছবিটির পেছনে বাড়ির মাথায় দেখা যায় একজোড়া নারী ও পুরুষ যুগলে কোন কাজ করছে। মাঝখানের সাহবকে বাদ দিয়ে বাকিরা কমবেশী সাধারণ লোক বলেই মনে হয়, বিদেশীদের ধরেই। কারোরই জামা কাপড়ের অভাব বা শরীরের ভঙ্গুরতা দেখা যায় না, কর্মঠ বলেই মনে হয় । 
     
    এই ছবিটা একজন গয়লানির। দু'ফেরতা দিয়ে কাপড় পরা, জ্কাজের সুবিধের জন্যই হয়ত সেই কাপড় লম্বায় কিছুটা খাটো। হাতের সোনালি অংশটি পিতলের গয়না যা আত্মরক্ষায়ও হয়ত ব্যবহার করত। 
     
     
    গয়লানির আরো স্পষ্ট ও উজ্জ্বল ছবিও আছে, পিতলের গয়নাটি আরো বড় আকারের, কাপড়ের অভাব এখানেও ঘটেনি।  
     
     
    এও লক্ষ্য করার যে প্রায় সব ছবিতেই এদেশীয় নারী - পুরুষরা সাদা কাপড়ই পরে আছে, বাইজিরা ছাড়া, তাদের পোশাক অনেক রঙীন। প্রথম ছবির বসে থাকা মহিলাটির গায়ে যে লাল রঙের কাপড় সেটা কী গামছা ? সাদা কাপড় পরার সাথে হয়ত আর্থিক সামর্থ্য যুক্ত ছিল। 
     
    আর এই ছবিটা, পুজোর। 
     
     
    লক্ষ্য করি দুটি দিক, তিনটি নারীমূর্তিকে প্রথমে দেখে মনে হতে পারে যেন তাদের মধ্যে মৎসকন্যার ধাঁচ। এবং তার পরে লক্ষ্য করি তাদের শরীরের ওপরের অংশের জামাটি, যা কাঁচুলির থেকে ঢের বেশী বা পরবর্তীকালের ব্লাউজের মতই ! কোন আইকোনগ্রাফি বা বঙ্গজীবনের কোন দিকের প্রভাবে থেকে ১৭৯০ র  দশক বা তার কিছু পরে এরকম দেবীমূর্তি তৈরী হত জানা নেই। আবার ডানদিকের ছোট মেয়েটির ক্ষেত্রে দেখুন, তার শরীরে কিন্তু জড়ানো আছে সাধারণ শাড়িই, মাথা থেকে পা পর্যন্ত। 
     
    সলভিন্সের যাবতীয় ছবির লিংক দিলাম, ইচ্ছুকরা দেখতে পারেন। সলভিন্স ছবি এঁকেছিলেন জানতাম কিন্তু এরকম বিশদে বাংলার ছবি, বিবিধ মানুষ - পেশা - বাদ্যযন্ত্র - উৎসব এবং সব ক্ষেত্রেই এত এত সাধারণ মানুষের ছবি, সে কথা জানতাম না ! ভদ্রলোক শ্রেণী তখনও তৈরী হয়ে ওঠেনি বলেই হয়ত তাদের উপস্থিতিহীন এইসব ছবি। এইসব ছবিগুলির মধ্যেই হয়ত ১৮ শতকের শেষ থেকে উনিশ শতকের প্রথম দুইদশকের বাংলার মানুষের দৈনন্দিন বা সমাজচিত্র ছড়িয়ে আছে। 
     
     
     
  • hu | 72.241.81.21 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৭524037
  • সিএসের ছবিসহ বিশ্লেষণ খুবই ভালো লাগলো। ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দর তো পড়িনি। তবে সৈকতদার লেখা পড়ে বুঝলাম এটা অতীতকালের কোনো কল্পিত আখ্যান। সেক্ষেত্রে অতীতকালে যেমন জামাকাপড় মেয়েরা পড়ত বলে কবির ধারনা তেমনটাই কি তিনি লিখবেন না? অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শকুন্তলাকে বাকল পরিয়েছেন। তার মানে কি অবনীন্দ্রনাথের সময়ে বাকল পরার চল ছিল? অবশ্য আবার একবার পড়ে দেখছি সৈকতদা লিখেছেন - ইংরেজ, ফরাসী, ওলন্দাজদেরও দেখা মিলছে বিদ্যাসুন্দরে। বিভিন্ন কালের মিশ্রণ হয়েছে তার মানে। সেক্ষেত্রে মনে হয় এই বইয়ে ঐসময়ের প্রামাণ্য চিত্র ফুটেছে এমন ধারণা না করাই সঙ্গত হবে। ইরোটিক বই লেখার সময় গা থেকে কাপড় খসে যাচ্ছে এবং তাতেও কিছু এসে যাচ্ছে না এমনটা লেখাই স্বাভাবিক। বাস্তব চিত্র যাই হোক না কেন।
  • ইন্দ্রাণী | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:১১524038
  • সি এস এর লেখা খুব ভালো লাগলো। থ‍্যাঙ্কু।

    বঙ্গের পোষাক নিয়ে বইপত্র আছে তো। মধ্যযুগের পোষাক নিয়ে মঙ্গলকাব্যে অনেক তথ্য রয়েছে। যাঁরা চর্চা করেন, বলতে পারবেন উদাহরণ সহযোগে।
    আমার অতীব স্বল্পপাঠে  মনে পড়ছে,
    নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙালি ইতিহাস, সুকুমার সেনের কিছু লেখা, প্রতিক্ষণ প্রকাশিত পূর্ণেন্দু পত্রীর ব‌ঙ্গবাসীর অঙ্গবাস। মনফকিরার একটা ব‌ই ছিল, নাম মনে নেই।
    আরো অনেক প্রামাণ্য ব‌ই নিশ্চয়ই আছে যেখানে বাঙালির পোষাকের বিবর্তন কার্যকারণসহ লেখা রয়েছে। যাঁদের এবিষয়ে আগ্রহ, পড়াশোনা, তাঁরা অবশ্যই জানবেন।
  • kc | 188.236.57.19 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:২০524039
  • ইন্দ্রাণী'দি আমার সবথেকে ভালো লাগে গোলাম মুরশিদের 'হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি' সব বইগুলো মানে নীহাররঞ্জন, সুকুমার সেন, মঙ্গল কাব্য ও আরও অনেক বই থেকে মোটামুটি জিস্টগুলো তুলে এনেছেন। রিসেন্টলি এশিয়াটিক সোসাইটি থেকেও  একটা বেশ মোটা বই বেরিয়েছে, নামটা কিছুতেই মনে পড়লনা।
  • ইন্দ্রাণী | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৯524040
  • হ‍্যাঁ কেসি, থ‍্যাঙ্কু। গোলাম মুর্শিদের ব‌ইখানা দেখা হয়নি অদ‍্যাবধি। ইংরিজি ভাষাতেও পাওয়া যায় সম্ভবত।
    এই বিষয়ে বাংলা ও ইংরিজিতে আরো ব‌ই, এবং খণ্ড সময় ধরে পিএইচ ডি থিসিস নিশ্চয়ই রয়েছে।
    আরো সন্ধান পেলে জানাবেন অবশ্যই।
  • :|: | 174.251.161.181 | ০১ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০০524097
  • কি আশ্চয্যি! দেশ পত্রিকাও গ্রন্থলোকে শাড়ি নিয়ে আলোচনায় 
  • সায়ন্তিকা দাশগুপ্ত | 104.129.57.136 | ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩২524406
  • জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে শুরু হয়ে সাধারণ গৃহস্থ পরিবারে পৌঁছতে এই নতুন কায়দায় পরা শাড়ির কতদিন সময় লেগেছিল?
     
    নিচের ছবিটি পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির এক সদস্যার (মোটামুটি ১৯৩০-৪০)। ইনি তো তখন‌ও পুরনো ধরনের শাড়ি পরে আছেন বলেই মনে হয়। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন