এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • করোনার বিভীষিকা -- যাঁরা বেঁচে ফিরে এসেছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত কাহিনি। 

    Partha Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৫২৯ বার পঠিত
  • এদের সবাই আমার বিশেষ বন্ধু।

    এই গল্পগুলো বলার দরকার আছে, কারণ সারা পৃথিবীতেই সোশ্যাল মিডিয়ার স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞদের কল্যাণে একটা জনমত সৃষ্টি করা হয়েছে যে কোভিডে হয় তেমন কেউ মারা যায়নি, আর নয়তো এই রোগের সিমটম (symptom)'গুলো সাধারণ সর্দিকাশি জ্বরের থেকে বেশি কিছু না।
     
    আর, খরচের ধাক্কায় সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া -- সে নিয়ে আর মাথা ঘামায় কে? এই আচ্ছে দিনে সবকিছুর প্রাইস যে বহুত আচ্ছে হবে, সেটাই কি কাম্য নয়?

    আমাকে এইরকম স্বঘোষিত কিছু বিশেষজ্ঞ মাঝে মাঝেই মেসেজ পাঠান, এবং এমন দাবীও করেন যে তাঁরা করোনা সরিয়ে দিতে পারেন। অবশ্য, তাঁদের কোনো মেডিকেল ডিগ্ৰী নেই, এবং এই বিষয়ে তেমন কিছু পড়াশোনাও নেই। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে এঁরাই জনপ্রিয়। তাঁদের গুল্প প্রচুর লোকজন মন দিয়ে শোনেন, এবং তারপর নিজেদেরও সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

    বৈজ্ঞানিক গবেষণা, আন্তর্জাতিক তথ্য সংগ্রহ, এবং বিশেষ করে বিশ্লেষণ -- এসব আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কোনোকালেই ছিলোনা, আর এখন তার গুরুত্ব এই গোমূত্র জমানাতে আরোই কমে গেছে। গরুর গায়ে হাত বুলিয়ে যে ব্লাড প্রেসার কমিয়ে ফেলা যায়, তা এখন নির্জলা খাঁটি দুধ, মানে, সত্য। কিংবা থালাবাটি বাজিয়ে যে কোভিড-নিবারক বটিকা আত্মশক্তির উদ্বোধন করা যায়, তা এখন স্বীকৃত সংসদীয় পদ্ধতি।

    যদিও তেমন কেউ এই ব্যক্তিগত কাহিনীগুলো পড়বেন বলে মনে হয়না, বরং ছদ্মনামে লুকিয়ে থাকা কিছু গেস্টাপো বাহিনীর লোক প্রথম থেকেই রেটিং এবং কমেন্টের মাধ্যমে যে কোনো বাস্তবতা-ভিত্তিক লেখাকে সবার চোখে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করবে, তাও যেহেতু এই বন্ধুরা আমাকে বিশ্বাস করে তাঁদের কষ্টের কথা জানিয়েছেন, এবং প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন, তাই ভবিষ্যতের জন্যে রেখে যাওয়া রেকর্ড হিসেবে এই কথাগুলো পাবলিক ফোরামে পোস্ট করা আমার কর্তব্য বলে মনে করলাম।

    কারণ, সেনসেশনাল মিডিয়াতে এসব গল্প তাদের বিক্রয়যোগ্য "স্টোরি" বলে কখনো বিবেচিত হবেনা। মুনাফা হবেনা এসব গল্প বলে।

    ঠিক যেমনভাবে তাঁরা পাঠিয়েছেন, আমি সেইভাবেই পোস্ট করছি কোনো পরিবর্তন না করে।  
    ________________________

    (১) জ্যোৎস্না ও তপন, কলকাতা।

    (এখানে বলে রাখা দরকার যে তপন লাইফ-লং চেন স্মোকার এবং লাং দুটোই আগে থেকে ক্ষতিগ্রস্ত। জ্যোৎস্নারও কো-মরবিডিটির নানা উপসর্গ আছে।)

    ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম কোভিডে। উপসর্গ ছিল, খুব জ্বর আর loose motion সঙ্গে বমি। কিচ্ছু খেতে পারতাম না, খাবার দেখলেই অসহ্য লাগত। নানা রকম ওষুধ পত্র খাওয়ার পর কিছুটা ভালো হলাম, কিন্তু দুর্বলতা কাটতে প্রায় মাস ছয়েক লেগেছিল। এই সময় তপনের ও কোভিড হয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিল asymptomatic. ওর খাওয়ার ইচ্ছা একদম চলে গিয়েছিল আর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এরপর আমরা দুজনেই দুটি করে vaccine নিই যথা সময়ে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ২৯শে নভেম্বর আমরা শান্তিনিকেতন যাই। ৩০ তারিখ ভোরবেলা থেকে তপন ধুম জ্বরে আক্রান্ত হয়। প্রথমদিন প্যারাসিটামল খেয়ে জ্বর কিছুটা কমছিল আবার ফিরে আসছিল, সেই সঙ্গে ছিল পেট খারাপ। ১লা ডিসেম্বর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক চালু করা হয়। কিন্তু কোনো ফল হচ্ছিল না। আমরা ৩ তারিখ কলকাতা ফিরে আসি। সেদিন বিকেলের দিক থেকে ওর oxygen saturation ওঠা নামা করতে থাকে। আমরা ৪ তারিখ পর্যন্ত দেখলাম। ৫ তারিখ saturation হয়ে গেল 85/86 তখন আর বাড়িতে রাখার ভরসা পেলাম না। ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকুরিয়া AMRI তে ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলাম, তখনো গায়ে অনেক জ্বর আর saturation অনেক কম। ওখানে কোভিড টেস্ট করে পজিটিভ আসে সঙ্গে নিউমোনিয়া, দুটো লাংস ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ৫০  শতাংশের বেশী damaged. নিশ্বাস নিতে পারছে না, saturation কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না, প্রচুর পরিমাণে high flow  oxygen দিতে হচ্ছিল। প্রথম দিন ডাক্তারবাবু বললেন একটা ইনজেকশন দিতে হবে যার দাম এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার টাকা। আমি নিরুপায়! পুত্রের ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম তাতে যদি ওকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারি, আমি অবশ্য ই ওই টাকা ব্যয় করব। পরে জানলাম এই ইনজেকশনটা দুজনকে দেওয়া যায়, যদি আর কাউকে পেয়ে যাই তাহলে টাকাটাও অর্ধেক হয়ে যাবে। আমরা সেরকম একজনকে পেয়েও গেলাম। দিন তিন/চার যমে মানুষে টানাটানি চলল। বিকেল বেলা একবার করে ওকে ভিডিও কলে দেখতে পেতাম দুটো কথা বলতে পারতাম। ও খুব হাঁপিয়ে যেত কথা বলতে। যাই হোক এইভাবে সুচিকিৎসার ফলে ১২ দিন পর আমরা ওকে বাড়ি নিয়ে আসি। এখনো নানা রকম চিকিৎসা চলছে এবং এখনো বলা যাচ্ছে না সম্পূর্ণ সুস্থ। তার মধ্যে আমার আবার কোভিড হল, হয়ত এত হাসপাতাল দৌড়াদৌড়ির ফল!! গলায় খুব ব্যাথা, সর্দি কাশি জ্বর, খাওয়ার ইচ্ছে একদম নেই। আবার টেস্ট আবার পজিটিভ। আবার ভোগান্তি। এই হল আমার কোভিড বা করোনার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা!!!!
     
    পোস্ট স্ক্রিপ্ট -- আমাদের প্রথম কোভিড হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে। আমরা vaccine নিই মার্চ ২০২১- এ। দ্বিতীয় ডোজটা নি ২০২১- এর মে মাসে। তপনের কোভিড হল ২০২১-এর ডিসেম্বর মাসে আর আমার হল ২০২২-এর জানুয়ারি মাসে।

    (ক্রমশঃ)

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৫২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন