এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • নকশিকাঁথা (১৩)

    বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৯ অক্টোবর ২০২১ | ১৩১৮ বার পঠিত

  • ১৩

    নিউ অরলিন্সে চিকনদারি ব্যবসা সরা-উথলানো দুধের মত ফুলে-ফেঁপে উঠছে দিনদিন। আইনুদ্দিন মণ্ডল ঘাঁটি গেড়েছে ১৮৮৫ সনের গোড়ায়, তারপরে এল ইব্রাহিম মুসা। প্রথম কিছু বছর এদিক-সেদিক থেকে, পাকাপাকি আস্তানা গেড়েছে কঙ্গো-স্কোয়ারের ধার ঘেঁষে, সেন্ট লুই স্ট্রিটের বাড়িতে, সেন্ট লুই সেমেট্রির থেকে ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে। এই বাড়িতে হয়ে গেল – সেও বছর পাঁচেক। ক’টা বাড়ি বাদ দিয়েই ১৪২৮ লুই স্ট্রিটে আছে আরও একদল চিকনদার। জয়নাল আবেদিন, সোফুর আলি, এশ্রাক, বাহাদুর আর সেলিম মণ্ডল। একই ধরনের সব দোতলা, তিনতলা বাড়ি সার সার দিয়ে, একখানা টানা বারান্দা আর তার দু’ধারে পর পর ঘর। চারপাশে খেটে খাওয়া মানুষের বসতি – সাদা, কালো, বাদামি সব রঙের আর হরেক জাতের। এই ধারটায় পথের চেকনাই কম, অনেকটা রাস্তাই মাটির। কোথাও খোয়া ফেলা আছে। এক জায়গায় আবার কাঠের পাটাতন দেওয়া, একটু উঁচুতে। বর্ষায় জলে ভেসে যায় নিচের জমি, তাই।

    ম্যানহাটানের আকাশ ছোঁয়া বাড়িঘর দেখে চোখ ছানাবড়া হয়েছিল, এখানে এসে যেন চোখ জুড়াল। ছোট ছোট বাড়ি, রাস্তার লোকগুলো আকারে বহরে ভিন্ন ধারার। কিন্তু লোকগুলোর চলনে, পথের ধারের খুনসুটি, হেঁড়ে গলার গান কিংবা গলা তুলে খেউড়, সব মিলে বিদেশ বিভুঁইটাকে ধরা-ছোঁয়ার সীমানায় এনে ফেলেছিল। আলেফের ভাল লাগছিল। তারা দল বেঁধে হাতে, মাথায় বোঁচকা নিয়ে আসছিল। ট্রেন থেকে নেবে বাগি ছিল, কিন্তু মোকসাদ নিতে দেয়নি। দু’দিন রেলের কামরায় বসে হাত পা ভেরে গ্যাচে, একটু মাল তুললে জানে জান আসবে। তাদের এমন অভ্যাস আছে, কথা না বাড়িয়ে হাঁটা দিয়েছে সবাই। দেড় মাইল তো পথ।

    স্টেশানের থেকে বেরিয়েই কত রকমের রঙে সাজানো ছিল রাস্তাটা। পরব আচে কোনো, না বসির ভাই?
    হবে কিচু, আমোদ আহ্লাদ চলচে কেমন ধারা!
    এক তরমুজওয়ালা একটা ঠ্যালায় করে একরাশ তরমুজ নিয়ে চলেছিল। এখানকার তরমুজ কেমন কে জানে, কিন্তু তার গলাটা ভারি মিঠে। সুর তুলে গান গাইছিল চলতে চলতে –
    “Chicken am gud,
    Possum am gud and very fine,
    But gimme I wish yo’ would
    The watermelon smiling in the vine.”
    দেকেচো মিয়া? বাবনানের তারেক আলি যেমনধারা গান গেয়ে হাটে ক্যাটাল ব্যাচে, তেমনটি কচ্চে। বসির বলল বটে, কিন্তু গান গেয়ে কি যে বলল লোকটা, বুঝতে পারল না তেমন।
    লম্বা পানা চেহারা লোকটার, কুচকুচে কালো শরীরে ঘাম চিকচিক করছে। এতক্ষণ গলা সরু করে গাইছিল, এবার ঘাড় উঁচু করে আকাশের পানে চেয়ে ডাক ছাড়ল - Buy ya watermelon frum Zack!

    কতদিন বাদে এমন জনবসতির মধ্যে দিয়ে যাওয়া। গাছ গাছালি কম, থাকলেও সেসব গাছ চেনে না ওরা। বাড়িগুলো থেকে চিমনি মাথা বের করে আছে, সেখান দিয়ে কাঠের ধোঁয়া বেরোচ্ছে গলগলিয়ে। নোনা শুয়োর ভাজা আর বাঁধাকপি-পাতা সেদ্ধর গন্ধে বিকেলের বাতাস ভারী, রান্না হচ্ছে সব বাড়িতে। দিনের কাজ সেরে ফিরেছে সব বাসিন্দা, মানুষের জীবনযাপনের উষ্ণ উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিল বেশ। রাস্তাতে বেশ লোকজন। বাচ্চা, মেয়ে, বুড়ো সব হাতে বালতি, ঘটিবাটি নিয়ে তিরতির করে পড়া এক জলের ধারার সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। বাচ্চারা তাদের দিকে অবাক চোখে তাকাচ্ছিল, চেহারার জন্য নয়। মাথার বোঁচকার কারনে। একটা ঢলঢলে প্যান্ট পরা বাচ্চা তার দিকে আঙ্গুল তুলে চেঁচাল – Man, his load is bigga’ than his ass!
    এই কথায় সেই যে একটা হাসি দানা বাঁধল, তার গুনগুন কানে এঁটে রইল যতক্ষণ না ওরা ১৪২০ নম্বরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেছে।

    জায়গাটা মন্দ নয়, কিন্তু ইদানিং খুব বদলে যাচ্চে। সেটাই বলছিল আইনুদ্দিন। এই জায়গাটা ওরা নাচনে-গানেওয়ালিদের আখড়া বানিয়ে দিচ্চে গো। এখন দিনভর মুজরো হবে আর মাগেদের নিয়ে শুতে আসবে লোক।
    সে কি? এমন কেন কচ্চে? এখেনে, আমাদের আস্তানার কাচে?
    তবে আর কইচি কি? ইদিকে সেন্ট লুই থে নে কাস্টম হাউজ, ওধারে বেসিন আর রবার্টসন স্ট্রিট, মাঝের সব চত্বরখান নিয়ে নাম করেছে ইস্টোরিভিল। শহরের যত শরীর বেচে খাওয়া মাগ এর বাইরে আর ব্যবসা করতে পারবেনিকো।
    কি ঘেন্নার কতা, এ তো খিদিরপুরের কলিন ইস্ট্রিটের মত ব্যাপার। এই আস্তানার কি হবে?

    এই বাড়িটা খুব ভাল তাদের জন্য। চারটে চারটে করে ঘর, এক নিগ্রো মেয়ে জামাইকা, তার থেকে ভাড়ায় আছে। অন্য বাড়িটাও এই রকম। সেসব ছাড়তে হবে নাকি?
    না, আমাদের ঘর ঠিক ইস্টোরিভিলের সীমানার বাইরে, আমাদের কোন হ্যাপা নেই। তবে কিনা বুইলে না। মাগ মেছেলার কারবার, খুনোখুনি তো লেগেই থাকে। চাপটা তো ফেলেছে নিগ্রোদের পরে। আফ্রিকান এপিস্কোপাল মেথডিস্ট চার্চ, নিগ্রোদের স্কুল সব তো এই দিগরে। একন কি হবে ওগুলোর? বুইলে না কালোদের হেনস্থা করার যোগ সাজশ যতো।
    আমাদের ব্যবসার কি হবে আইনুদ্দিন মিয়া?
    আমাদের আবার কি হবে? যেমন ব্যাপার কচ্চি, করবো। বেশ্যাপল্লির কারণে লোকের আনাগোনা বাড়চে এই চত্বরে। সেদিক দিয়ে খেতি কিচু নেইকো। আবার সামনেই দেকো ফ্রেঞ্চ মার্কিট। ওখেনে একটা দোকান দিইচি গেল সনে। এলাহি করেছে জায়গাটা!
    কি নেই মিয়া ফ্রেঞ্চ মার্কিটে? আইনুদ্দিন নতুন আসা লোকেদের জন্য বিন্যেস করে। আলাদিনের চিরাগ শুনেচো যেমন, ওই। চিরাগ ঘষে যা যা জুগাড় হবে, সব আচে এই বাজারে। সার সার দোকান মিয়া, সেখেনে রাশা থেইকে আসা ইহুদি ব্যাপারিও আচে, চীনা দেশ থেইকে আসা ড্রাগন চাইলেও মজুদ। জার্মান, ফরাসি দেশ, তা বাদে ধরো গিয়ে আমাদের রানীর দেশের ব্যাপারি, ভেনিস আর নেপলস থেইকে আসা পোরসেলিনের সামগ্রী, পারস্যদেশের কার্পেট, এই দেশের আদিবাসীদের পোড়ামাটি আর কাঠের দ্রব্য – এ কইচে আমায় দ্যাক, ও কইচে আমার দ্রব্য কম কিসে!

    এতো সব কারবারের মধ্যে আমাদের দেশগাঁয়ের জিনিস বিকোয়? বড় চমৎকার লাগছিল মোকসাদের। এতসব বড় বড় দেশ থেকে ফিরিঙ্গি ব্যাপারিরা থাকলে তারা কি করে পারবে চিকনের জিনিস বিক্রি করতে! আগে এসেছে সে এই শহরে, শুরু শুরুতে। এত সব দোকানপাট দেখেনি তখনো।
    কোম্পানির লোক আমাদের জিনিস মন্দ কয়ে বদনাম রটায়, সে কেবল নিজেদের মাল বেচার ফিকির। এখেনে আমাদের দোকান থেকে মহারানীর বান্দারাও সামগ্রী কিনতে আসে। দাড়ি চুমড়ে খুশিতে অসমান দাঁত বের করে হাসে আইনুদ্দিন।

    মোকসাদ লোক বড় খুঁতখুঁতে। তার সংশয় কাটে না। আসার মুখে দেকলাম এক পেল্লাই দোকান দিয়েচে, ওরিয়েন্টাল একজিবিং ইস্টোর। হরেক জিনিসের মধ্যে চিকনের কাজও কিচু মেলে দিয়েচে দেকলাম আইনুদ্দিন ভাই, আমরা কি অত বড় দোকানের মুখে পাল্লা দে পারি?
    পাল্লা কেন দেবে মোকসাদ মিয়া, গ্রাহকের কি আকাল আচে? আইনুদ্দিন মোকসাদকে আশ্বস্ত করল। আর পাল্লা দিতে বলো, সেটা পারচিও দেকতে গেলে। তা নইলে আমাদের এতগুনা নোক কি এখেনে ঘোড়ার ঘাস কাটচি? ওইসব বড় মানুষি দোকান গে কটা মানুষ কিনতে পারে ঘর সাজানোর সামগগির? তারা নেয় আমাদের কাচে।

    ইব্রাহিম মুসা কম কথার মানুষ। কিন্তু এত বছর থেকে থেকে নিউ অরলিন্স চেনে হাতের পাতার মত। সেই ব্যাখ্যান দেয়। কেবল ফ্রেঞ্চ মার্কিট না মোকসাদ ভাই, তুমি ক্যানাল ইস্ট্রিট বরাবর চলে যাও। পুরো চত্বরটায় দিনমানে লোকে উপচে পড়চে, এসব বস্তু পেলে হামলে পড়চে এক্কেরে। তাপ্পর ধরো র‍্যামপার্ট ইস্ট্রিটে গেলেই রেলের আলিশান ইস্টিশান, তোমরা এলে দেকলে নাকো? সেখেনেও ভাল ব্যাপার জমে। দোকান নেই, কিন্তু ইদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে বেচি আমরা ক’জনা।
    তোমাদের এখেনে বেশি চাহিদা দেকচি, আসবারি পার্কে কেবল গরমের দিনক’টা। পাঁচকড়ির বলার মধ্যে একটা আফসোস ঘাপটি মেরেছিল।
    এর পরেও আচে। সুরাপারু মার্কিট, তুলেন অ্যাভেনিউতে চায়না টাউন, সেন্ট মেরিজ মার্কিট। বাজার কম নেই এই শহরে, বেচার লোকের অভাব বরং।

    হাঁ করে গিলছিল আলেফ আর বসির। রেলের ইস্টিশানে নেবে অবধি দেখেছে এই শহরের রঙ-ঢঙ। যেন রোজকার উৎসব লেগে আছে। পথে পথে রঙ্গ রসিকতা, নাচ গানের আওয়াজ, গ্রাহকের প্রতীক্ষায় পশরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েরা, কিছুই চোখ এড়ায়নি তাদের। নিউ ইয়র্কের দশ-বিশ তলা ইমারত ওদের কাছে নতুন ছিল। কি তার চমক আর চেকনাই। আশবারি পার্কে দরিয়াপারের মেলা দেখে চুঁচড়োর দরগার বচ্ছরকার পরব ফিকে পড়ে গেছিল এ জন্মের মত। কিন্তু এই শহরের সাজ সহরত নকশা এমন, যেন চারদিকে আমোদের ভিয়েন বসেছে। এমন কোন রঙ তারা জানে না, যার কয়েক পোঁচ পড়েনি কোথাও না কোথাও। থেকে থেকে নিশেন উড়ছে। তাতে কত রকমের মুখ, জন্তু জানোয়ারের চেহারা দিয়ে চিত্র বিচিত্র করে রেখেছে। এই শহর তার উচ্ছল প্রাণ আর বেঁচে থাকার জীবন্ত ছবি নিয়ে শুরুতেই তাদের খুব টেনেছে।

    তাদের আসার খবর পেয়ে অন্য বাসা থেকে জয়নাল, সোফুর, বাহাদুররাও এসে হাজির। এই দূর দেশে নিজের গাঁ-গঞ্জের লোক এসে তাদের একটা মোচ্ছব লেগে গেল। এই সবের মধ্যে ফায়জল আলির হারানোর হা-হুতাশ চাপা পড়তে বেশি সময় লাগল না। মানুষ পিছন-আঁকড়ে বাঁচে না, সামনে তাকে এগিয়ে যেতেই হয়।
    ইবাদর ভাইকে দেকচি না, সে বান্দা কোতায়?
    সে বেরিয়েচে নতুন পত্তনের খোঁজে। আটলান্টাতে ঘাঁটি হয়েচে, ফলফলিয়ে বিকিকিনি বাড়ছে সেখেনেও। সে দেকতে বেরিয়েচে – আর কোতায় ব্যাপার ফাঁদা যায়। বারিক আর রহমত, ওই দুজনাও গ্যাচে ওর সনে।

    আলেফ মুরুব্বি মানুষদের মাঝে চুপচাপ ছিল। এখন এদের দেখে মুখে কথা ফুটল। এদের বয়েস তার মত কি বছর পাঁচ দশের বড় হবে। জিজ্ঞেস করল, তোমাদের এখেনে এখন কিসের পরব?
    পরব কোতায় আবার একন? পরবের সময় তো আসল বলে। দেকবে তকন কি চেকনাই, আর কত কত নোকের ঢল নাব্বে এই চত্বরে। এদের বচ্ছরকার পরব হয় ফারবারি মাসে, মারদি গেরাস।
    কি গেরাস?
    ফরাসি লোকেদের আনা মোচ্চব। আগে এখেনে ওদেরই পত্তন ছিল কিনা।
    আমাদের ওখেনে চন্দননগরে আচে না ফরাসি দেশের মানুষ? সেখেনে তো হয় না এমন?

    এস্রাক এদেশের ব্যাপার স্যাপার জানে বোঝে বেশি। খেরেস্তানদের ব্যাপার। আমাদিগের যেমন রামাদানে ফজর থেইকে মাগরিব রোজা রাখি, খেরেস্তানদের আচে লেন্ট। তার আগে পেট পুরে খাবে আর নাচা-গানা করে নেবে সবাই। পতেঘাটে গিজগিজ করে মানুষজনা।
    এস্রাকের কথায় সেলিম মাথা দোলায়। সেকি হুড়োহুড়ি গো মিয়া। যেদিকে দু’চোক যায় নোকে নোক। হিঁদুদের রত দেকেচো, ওমনিধারা রতে চেপে কাতারে কাতারে মানুষ যাবে।
    শুদু বুজি নোক? যত বেলুজ্জে মাগি বুকের আঁচল ফেলে দেকাবে তোমায়। চোখ চকচক করে বলল সোফুর।
    বেলুজ্জে কেন, মুক তো দেকা যায় না গো কারুর। সবার মুকে মুকোস আঁটা। কার মাই কে দেকাচ্চে তার কি কোন ঠিকেনা আচে মিয়া।
    এ কেমন পরব? এ দেশের মাগিগুলানের নজ্জা শরম নেই কো? বসির খুব অবাক বোধ করেছিল।
    যে দেশের যেমন ধারা বসির ভাই। আমরা ব্যাপারি মানুষ, আমাদের এসবে কি পেয়োজন? জয়নাল এদেশে বেশ ক’বছর, কত যে দেখেছে। সব মানুষের ধারা এক নয়, সেটা জানে।
    তবে রতে রতে খুব পাল্লাপাল্লি চলে। আমাদের দেশে জমিদারে জমিদারে যেমনটি দ্যাকনদারি, এখেনেও তাই। এর রত ডাকে আমায় দ্যাক, তো ও কইবে আমায় দ্যাক।
    হ্যাঁ, মুঠো মুঠো কাঁচের পুঁতি ছোঁড়ে ওদের রত থেকে। রঙ্গ বেরঙ্গের সেই পুঁতি সোফুর মিয়া জমিয়েচে বিবির গলার ফিরিঙ্গি মালা বান্যে দেবে বলে।

    সোফুর খুব লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে। মাগনা পেয়েচি তো কুইড়ে রেকেচি। বিবির কোন কাজে লাগলে দেবো খনে।
    ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয় এমনি কত কিচু। তারপর কে কিভাবে নিজের রত সাজাবে, কত উঁচু করবে এই নিয়ে কি যোগাড় যন্তর।
    কেন মিয়া, তাতে আমাদের নোকসানটা কোতায়? গেলবারে রেক্স কোরমোতে আমাদের ক্যাতো ক্যাতো সামগগির কিনেচিল তাদের বাহনের সজ্জার লেগে। আমাদের ব্যাপারের জন্য এমন পাল্লাপাল্লি সব শহরে চলুক। হাসতে হাসতে বলল আইনুদ্দিন মণ্ডল। মনে রেকো, এই পরবের জন্যেই শুরুতে এই দেশে আসা।
    রেক্স কোরমো কি এদের জমিদার?
    না না জমিদার কোতায়? একেক এলেকার পুঁজিওলা লোকেরা একাট্টা হয়ে এমন সব কোরমো তয়ের করেচে। কি কি সব নাম, কয়ে দে না রে সেলিম, আমার এতসব ফিরিঙ্গি নাম মুকেও আসতে চায় না।
    আচে এমন অনেক কোরমো। যেমন ব্যাকাস, জুলু কতরকম। রাতের বেলায় মশাল নিয়ে যায় আবার একদল, ফ্লেমাঙ্গো কয় তাদের। এমনি হরেক নাম।

    নিজের গ্রাম, শহর, দেশ ছেড়ে বহুদূরে আসা এই মানুষগুলো উবু হয়ে বসে গোল করে ঘিরে কথা বলতে থাকে। মিসিসিপির মিঠাপানির ট্রাউটের ঝোল আর কালো চালের ভাত সপসপ করে খায় সবাই। নতুন দেশের সব কিছু ওদের অবাক করে। কখনো বা ভয় পাওয়ায়, কিন্তু দমিয়ে দিতে পারে না। ওদের গল্পে-কাহিনীতে জিতে নেবার, এগিয়ে যাওয়ার, একবার না পারলে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকে। সেসবের নিচে চাপা পড়ে থাকে কবে শেরিফের তাড়া খেয়ে গলিতে গিয়ে লুকিয়েছিল, কখন এক সাদা মহল্লায় চোর বলে তাড়া খেয়েছিল। তাদের অদ্ভুত পোশাক দেখে ঘোড়ার গাড়িতে করে যাওয়া সাদা লেসের ঢেউ খেলানো পোশাকের মহিলাদের মুখ কেমন বেঁকেছিল – কি বলেছিল জানে না, কিন্তু নীল চোখের বিদ্রূপ ছলকে পড়াটা অনুভব করে কুঁকড়ে গেছিল হয়তো। কিন্তু সেসব কথা বুকে রেখে ঘোরে না ওরা, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মাথায় চিকনের বোঁচকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গলিতে গলিতে। নিজের দেশে পরাধীন থাকা এই মানুষগুলো দু’বেলা পেট পুরে খেতে পাচ্ছে, বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা জমছে, তাই দিয়ে জমি কিনবে সেই চিন্তায় নিজেদের মশগুল রাখে। ছোটখাটো মান অপমান গায়ে মাখলে চলে না।

    এত দূর দেশে এসে নিজেরাই নিজেদের বল-ভরসা। প্রাণের কথা বলার জন্যেও, তেমনি অসুখ বিসুখ বিপদে আপদে আর কেউ তো নেই। আলেফ এই দেশে নতুন। কতদিন এসেছে সেটা দু’হাতের আঙ্গুলের কড়ে গোনা যায়। কিন্তু ঝড়-ঝঞ্ঝা-বিপদ সব কিছুর মুখোমুখি হতে হয়েছে এই ক’দিনেই। এদেরকে দেখে, সবার কথা শুনতে ভালই লাগছিল। মনে হচ্ছিল এরা কত এলেমদার। একা একা কোথায় কোথায় গিয়ে ফিরি করে আসে। ভাবলেই তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এখন অবধি সে কোথাও একা যায়নি। তিন চার জনের দল ছিল। কিছু হলেই মোকসাদ চাচার দিকে চেয়েছে। আশবারি পার্কের বোর্ড ওয়াকে কিছুটা একা একা ফেরি করেছে, কিন্তু মনে জানত আর সবাই হাতের কাছেই। অবশ্য হাতের কাছে থেকেই বা কি লাভ হল? ফায়জলকে বাঁচান গেল কি?

    কথা চলছিল বসির আর আলেফ কোনদিকে যাবে।
    সাব্যস্ত হল আলেফ শুরুর ক’টা দিন এস্রাকের জুড়িদার হবে, বসির বসবে আয়িনুদ্দিন চাচার দোকানে। এস্রাক যায় ট্রেমে, কোনদিন যায় টুলেন অ্যাভেনিউ চায়না টাউন হয়ে আরও দূরে দূরে। সাইকেল বাহন আছে তার। আলেফের জন্যেও একটা পুরোন সাইকেলের ব্যবস্থা হল। কোনদিন অভ্যাস নেই, গাঁ গঞ্জে সাইকেল ছিল শুধু পোস্ট মাস্টারের, দূরে দূরে চিঠি বিলি করে বেড়াত। দিন তিনেক লাগল তার সড়গড় হতে। এস্রাক লোক ভাল, আলেফকে হাতে ধরে শেখাল। আলেফের বড় ভয় করছিল। একবার বলল, এস্রাকভাই গাঁয়ের রাস্তায় আমি রোজদিন কয়েক কোশ হেঁটেচি, এখানেও মাথায় করে নিয়ে ঘুরে বেড়াই না কেন?

    এস্রাক খুব একচোট হাসল। সে এক তাগড়া জোয়ান। বছর তিরিশেক বয়েস, এই দেশে আছে বছর পাঁচেক। ভয় ডর নেই কোন কিছুতে, চোখের চাহনি তেমনি সহজ ধারাল কাস্তের মত ঝাঁ চকচকে। হাসি তার লম্বা কালো দাড়ির ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে রইল, ঝিলিক মারল চোখেও। মিয়া যে দেশে এয়েচো তার ধারায় গড়ে পিটে নিতে হবে নিজেরে। দেশে গাঁয়ে কি করেচো সে কতা মনে বেঁধে রাকলে টিকতে পারবে নাকো।
    আমি বেশিদিন টিকতে চাইনে এস্রাক মিয়া। মনের মধ্যে গুনগুনাল আলেফ। বেশিদিন থাকতে হবে ভাবলেই বুকে আমিনার দুঃখটা চলকে ওঠে। এসে থেকে যা চলছে, এমন কি এই দেশে এসে পৌঁছানো নিয়ে যা হ্যাপা হল, মোকসাদ চাচার এত লোকসান যাচ্ছে, যে কবে ফিরবে তার হদিশ চাইতেও বাধো বাধো ঠেকে। এখানে এসেছে বিশদিন কিন্তু দেশ তো ছেড়েছে আধা সন হয়ে গেল।

    এস্রাকের এবারের হাসিটা উচ্চকিত নয়, কিন্তু এমন কথা অনেক শুনেছে এইরকম ভাব ছিল হাসিতে। ও টিঁকে যাবে নে। প্রেথম প্রেথম এমন বুক টাটায়, পরের থে দেকবে এই দেশটার থেকে আর মন ওটাতে পারবে নাকো। আমি বলি কি জানো, একবার যকন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েচো, এয়েচো এই দেশে, দ্যাকো দু’চোক মেলে, জানো এই দেশের মানুষ জনা রে।

    এরকম নানান কথা বলে এস্রাক। সাইকেলের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে গালিও পাড়ে। সাইকেল শেখাতে শেখাতে ক্লান্ত হয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে যখন বসল এস্রাক, তখন আলেফ জিজ্ঞেস করল। এই দেশের মানুষ জন কেমন দ্যাকো এস্রাক ভাই। আমার তো ফিরিঙ্গিগুলোকে দেকলেই কলিন রোডের বড় দারোগা সিম্পসন সাহিবের কতা মনে পড়ে পেট গুড়গুড় করে ওটে। একদিন বখেড়া হচ্চিল, কি গোবেড়েন দিল একটা লোকেরে। এখেনে সব লোকের ওমনি লম্বা চওড়া চেয়ারা –
    সে তো তুমি নিগ্রোদের চেয়ারা দেকলে আরও ভিমরি খাবে মিয়া। একেকজনা এমনি আচে, আমার চে আধ-হাত উপরি যায় ওদের মাতা। ও তে কিচু নয়। তবে কি জানো, আমাদের কাজ সাদাদের বিক্কিরি করা, ওদের ঠেঙ্গে একপাত পাড়তে জাচ্চি নাকো। নাক বড় উঁচু ওদের। হিঁদু বলে সিধোতে দেয় ওদের পল্লীতে, ব্যাস ওই অবদি। আমার স্যাঙাতি চলে নিগ্রোদের ঠেঙ্গে। আমি যেইচি ওদের ঘরে, খুব খাতির করে। এক বুড়িকে তো আমি আম্মা বলে ডাকতে নেগেচি।

    আলেফ এ কদিনেই জানতে পেরেছে এস্রাক মিয়ার সঙ্গে ট্রেমের এক নিগ্রো মেয়ের নাকি আশনাই। এশ্রাক মিয়ার চন্দনপুরে বিবি-বাচ্চা আছে সেও জানা। লোকটা ভাল কিন্তু এই একটা ব্যাপারে আলেফের মনটা খুঁতখুঁত করে। নিজের বিবিকে ভুলে এখানে নতুন করে গেরস্তি বসাতে চলেছে এটা কেমন ধারা কথা? কিন্তু মুখ ফুটে সেকথা এস্রাক মিয়াকে বলেনি। বলেছে আমিনাকে।
    সবাই ঘুমিয়ে গেলে আলেফ আমিনার ডিব্বাটা নিয়ে চুপিচুপি কপাট খুলে বাইরে এসে বসে। ক্যানাল ষ্ট্রীটের উপর বাসা, রাত হলেও শহর ঘুমাতে যায় না। রোশনাই যেমন কে তেমন জারি। ডিব্বার থেকে বেরিয়ে আমিনা পথের ধারে দাঁড়ায় আর চোখ বড় বড় করে দ্যাখে, আলেফ মিয়া ক্যামন ধারা দেশে এয়েচো, এখেনে নিশুত বলে কিচু নেই?

    এ কি তোর দাদপুর রে আমিনা? এ হল পচ্চিমদেশের ব্যাপার। যেদিকে চাইবি চোক ধেঁধে যাবে।
    মিয়ার মন বসে গ্যাচে এদিনি? দাদপুরের কতা আর মনে পড়ে না মিয়ার?
    আলেফ লজ্জা পায়। নিজের দেশ গাঁ কি ওমনি ভুলে যাবো?
    আর আমিনা রে?
    তোরে তো বুকে ধরে রেকিচি আমিনা, ভুলে গেলেই হল ওমনি?
    খিলখিল করে হাসে আমিনা, কেউ শুনে ফেলবে বলে ভয় ডর নেই সে মেয়ের। বুকে রেকেচো না ওই ডিব্বাতে? তারপরেই চোখ ছোট করে সুধায়, শহর দেকে চোখ ধেঁধেচে, আর এই দেশের মাগিগুলান, তাদের দেকে কি হয় আলেফ মিয়া?
    কি যে বলিস আমিনা। লজ্জা পায় আলেফ। এমন নয় যে এই দেশের মেয়েদের দেখে তার বুক কখনো তরাস খায় নি। সে তো এই দেশের সবকিছু দেখেই হয়। তাই বলে সে কি এস্রাক ভাই? আমিনাকে ছেড়ে আর কিছু ভাবতেই পারে না কখনো।

    এসব তখনকার কথা, যখন আলেফ সদ্য এসেছে নিউ অরলিন্স। তারপর মাস কয় যেতে যেতে বেচাকেনায় সড়গড় হয়ে গেল। এখন আর জুড়িদার লাগে না। এস্রাক মিয়া এখন থাকে ট্রেমে, মারলিনের ঠেঙ্গে ঘর বেঁধেছে। সোফুরভাই বেচাকেনার কাজ ধরেছে আটলান্টায়। বসিরউদ্দিন গেছে চারলেস্টান, জয়নাল মেমফিস। মোকসাদ আলি গেছে আরও দূরে, কোলোন। ক্যারিবিয়ান সমুদ্রতীরে পানামার বন্দর। তার সঙ্গে গেছে বাহাদুর, ওদিক থেকে পাঁচকড়ি মণ্ডল মাঝে মাঝেই যায় কোলোন। নিউ অরলিন্সে ব্যাপার কিছু কম নয়। মুসা মণ্ডল সাউথ আফ্রিকা ঘুরে আবার এসে পড়েছে, এসেছে আরও নতুন নতুন লোক। এখন আলেফ নিউ অরলিন্সে পুরোনোই বলা চলে।
    কিন্তু সাইকেলটা তার পুরোপুরি বশে এল না এখনো। না হলে এমন করে পথের মাঝে সাইকেল নিয়ে উলটে পড়ে?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৯ অক্টোবর ২০২১ | ১৩১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন