এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • একটি উজ্জ্বল মাছ (উপন্যাস -দ্বিতীয় পর্ব)

    Hasan Mostafiz লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ২৮ জুন ২০২০ | ৩৮৬২ বার পঠিত
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    ৮.
    কচ্ছপতলিতে চাঁদের গাড়ি থামতেই খুব সিগারেটের তৃষ্ণা পেল।অনেকক্ষণ খাইনি।আমার দেখাদেখি সবাই সিগারেট ধরালো।গরম পড়লেও বাতাসের বেগ প্রচণ্ড।সিগারেট ধরাতে মোটামুটি যুদ্ধ করা লাগলো।শুভ সিগারেট ধরাতেই প্রচুর কাশতে লাগলো।এবার ইনু পাত্তা দিলো না।একদম নির্বিকার।বান্দরবানে ঠিকমতো ডাটা কানেকশন পাওয়া যায় না।গেলেও কম সময়ে।ইনু আমাদের "তোরা দাঁড়া" বলে একটু দূরে চলে গেল।
    আমি শিওর ও এখন লুবনাকে ফোন দিবে।আমার এখনো অবাক লাগে কি এমন আছে লুবনার মধ্যে যে ওর জন্য ইনু এত দুর্বল।ভালোবাসা জিনিসটা আমার কাছে শারীরিক চাহিদা ছাড়া কিছুই মনে হয় না।সে হিসেবে বাংলাদেশের বিয়েব্যবস্থাও আমার পছন্দ নয়।বাংলাদেশের সবাই এখনো সেই যান্ত্রিক নিয়মে বিয়ে করে।বিয়ের পর তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে সন্তান নিতে।সেই সন্তান না পেলে এই বিজ্ঞানের যুগেও দোষ হয় মেয়েদের।সন্তান হবার পর সন্তানের নির্দিষ্ট কোনো চয়েস থাকে না।বাবা মা যেহেতু তাদের পৃথিবীতে এনেছেন,সন্তানের যেন কর্তব্য তাদের কথার বাইরে না যাওয়া।এই কাজটা আমি ছোটবেলায় অনেক করেছি।কিন্তু আমার লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে।স্কুলে শখ করে ডিবেট ক্লাবে নাম দিয়েছিলাম।বাবা সেটা পছন্দ করলেন না।অতঃপর ছেড়ে দিতে হলো।আরেকবার স্কুলে ঠিক হলো জর্জ বার্নার্ড শ এর পিগমেলিয়ন নাটকের বাংলা শর্টকাট ভার্সন মঞ্চস্থ করা হবে।খুব আগ্রহ নিয়ে যুক্ত হয়েছিলাম।বাবা সেটিও পছন্দ করলেন না।শেষ সময়ে বাবা ঠিক করলেন সুনামগঞ্জে আমার পড়ালেখা হচ্ছে না।একদিক দিয়ে সেটির যুক্তি ছিলো।কারণ আসলেই লেখাপড়া হত না।বাসায় সারাদিন অশান্তি লেগে থাকতো।বাবা তখন তার ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।মামলায় ওনার হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিলো।তাও হাল ছাড়েননি।নিজের টিনের ব্যবসায় খেয়াল রাখলেন না।প্রচুর ঋণ নিলেন।মামলা হেরে যাওয়ার পর পাওনাদাররা বাসায় এসে মাকে ইচ্ছামতো অপমান করতো।অথচ বাবা বাসায় থাকতেন না।মা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতেন।বাবার প্রতি কোনো অভিযোগ ছিলো না তার।এই অভিযোগ না থাকার একটি কারণ ছিলো।বাবা নিজের প্রয়োজনে সবার থেকে ঋণ নিলেও মার চিকিৎসার জন্য কখনো ঋণ নিতেন না।বহু স্বামী আছে বউদের আদর করে তাদের দেহে চিহ্ন সৃষ্টি করেন কিন্তু ডাক্তারের কাছে নেওয়ার বেলায় তাদের রূপ বদলে যায়।বাবা মাকে আদর না করলেও ডাক্তারের কাছে সবসময় নিতেন।ওষুধপত্রের কথা বলতে হত না।নিজেই প্রেসক্রিপশন ঘেটে হিসাব করে ওষুধ নিয়ে আসতেন।
    বাবা ঢাকায় এনে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন আইডিয়াল স্কুলে।সেখানেই আমার শুভর সাথে পরিচয়।
    আইডিয়াল স্কুলের সময়টা আমার জন্য মোটেও সুখের ছিলো না।স্কুলটা একদম রসহীন।শিক্ষকগুলি চোর,বাটপার, পাকা মেকি অভিনেতা। অন্য কারোর সাথে আমার ভাব না হলেও শুভ নামে এই ছেলেটার সাথে আমার প্রচণ্ড ভাব হলো।শুভর সবকিছু ভালো হলেও একটা বদঅভ্যাস ছিলো।সে স্কুল থেকে বের হয়েই আমাকে নিয়ে টংয়ে চলে যেত।নিজে সিগারেট আর চা খেত।আমাকে বহুবার বলার পরেও আমি তখনও সিগারেট ধরিনি।মার কথা মনে পড়তো।মা প্রমিজ করিয়েছিলেন আমি যেন সিগারেট,মদ না খাই।
    সুরভি চলে যাবার পর আমি সেই প্রমিজ আর রাখতে পারিনি।
    ইনু হন্তদন্ত হয়ে আমাদের কাছে দাঁড়ালো।লুবনা ফোন ধরেনি।বরং ম্যাসেজ দিয়েছে-"এখন কথা বলতে পারব না।পরে ফোন দিও"।
    ইনু গম্ভীর গলায় বলল-আমি শিওর মাগি ব্রেকাপ করবে।কিন্তু এত ভণিতা করে কেন?বললেই পারে।
    আমার ইচ্ছা হলো প্রশ্ন করি তুই নিজেই কেন ব্রেকাপ করছিস না।কিন্তু পরে আর করলাম না।শুভ এর মধ্যে বলে ফেললো -জানিস,আমেরিকার সাইকিয়াট্রিষ্টরা দাবি করেছে যারা পাগল তাদের বেশিরভাগই হলো সমকামি?
    আবরার বলল-চুপ থাক।ওরা বাংলাদেশের পাগল দেখলে এসব বলতো না।
    বলা যায় না।হয়ত হতেও পারে।মনোবিজ্ঞানীগণ তাদের গবেষণার ব্যাপারে নিজেই শিওর থাকেন না।হাভার্ড ভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রফেসর স্টিভেন পিকার বুড়ো বয়স পর্যন্ত সব গবেষণা করে শেষে এসে বলেছিলেন-

    "আমার সব গবেষণা ভুলও প্রমাণ হতে পারে।কিন্তু সেটিই হবে আমার জন্য অগ্রগতি "।

    অর্থাৎ সময়ের সাথে মন চেঞ্জ হয়।মনকে কখনো বেড়াজালে বন্দি রাখা যায় না।বাংলাদেশে যে মনোবিজ্ঞানের অবস্থা খুবই করুণ এটার একটা ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।এদেশে মানসিক রোগী কিংবা স্কিৎসোফ্রেনিয়া রোগীদেরও পাগল বলা হয়।অথচ এরা মোটেও পাগল নয়।সে ভাষায় এত ক্রিয়াপদ এবং এত সম্বোধন পদ সেই ভাষায় যদি পাগলের ঠিক অর্থ না থাকে তাহলে আর কিছু বলার থাকে না।

    কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আমরা আর্মি ক্যাম্পে গেলাম।আর্মি ক্যাম্পে যেতেই দেখলাম একজন অফিসার আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন।ইনু বিরক্ত হলো। ওর বড় ভাই আগেই জানিয়ে রেখেছেন সবকিছু।অফিসার আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন।পেঁপের শরবত সবাই খেলেও আমি খেতে পারলাম না।পেঁপে আমার সহ্য হয় না।
    যাবার সময়ে গাইড মামাকে তিনি ডেকে বললেন-শুনো,এরা স্যারের অতিথি।ঠিকমতো সব দেখায় আনো।
    আর্মি ক্যাম্প থেকে বের হয়েই আমাদের হাঁটা শুরু হলো।কচ্ছপতলিতে পাহাড়ের উপর আদিবাসীদের ঘরবাড়ি।মাঝে মাঝে কিছু কালো শূকরকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে।এখানে শূকরের মাংস খুব জনপ্রিয়।এরা " হরক হরক"করে ডাকছে।পাহাড়ের উপরেই আদিবাসীদের কুঁড়েঘর।সবাই এগিয়ে গেলেও আমি দেখলাম আমি পারছি না।এত উঁচু রাস্তা আমার এই ভুঁড়ি নিয়ে উঠা কষ্টকর।সবচেয়ে এগিয়ে গেছে শুভ।ওর হাসিমুখ দেখে গাইড মামাও হাসছেন।আমি হঠাৎ বসে পড়লাম।মাথা খুব ঘুরাচ্ছে।ইনু রেগে গেল।আমরা সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় পাব দেবতাখুম দেখার জন্য।তারপর আবার ফিরে গিয়ে কেওক্রাডং পাহাড়ে উঠতে হবে।আমি জোরে জোরে দম নিলাম কিছুক্ষণ।তারপর উঠতেই হলো।আমরা যত গভীরে যাচ্ছি তত বন জঙ্গল চোখে পড়ছে।মাঝে মাঝে কিছু শূকর ডেকে উঠে।সেই সাথে পাখির ডাক।বনের মধ্যে বলে শেয়ালের উৎপাত অনেক।
    পাহাড় গুলো পার হতেই আমরা দেবতাখুমের খর্ণার স্রোতের কাছে এসে পড়লাম।এত গরমের মধ্যেও পানি বরফশীতল।কারোর কথা না শুনেই আমি এই পানি মুখে নিলাম।মুখ পাথরের গুড়োয় ভরে গেল।আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই দেবতাখুম পৌঁছে গেলাম।ওখানে আদিবাসীরা ঘর বানিয়ে রেখেছে।পর্যটকদের জন্য সেখানে রান্না করা হয়।আমরা ডিম,ভাত আর আলুভর্তার অর্ডার দিলাম।

    ৯.

    মতিঝিলে কিছুদিন আন্দোলন করার পর আমি মিরপুরে ইসিবি চত্বরেও কিছুদিন ছিলাম।কিন্তু সেদিন আমাদের উপর কারা যেন ইট পাথর নিক্ষেপ করলো।এদের বয়স ছিলো আমাদের চেয়েও ছোট।কথাবার্তার স্টাইলও কেমন নিম্নবর্গের মতো।আবরার সেদিন খুব ক্ষেপে গিয়েছিলো।কারণ এত সাহস তারা কই পায়।আবরার কলেজে যাওয়া বন্ধ করে সারাদিন মিরপুরে আন্দোলনে থাকতো।
    আমি পরেরদিন গেলাম সায়েন্স ল্যাবের কাছে।সেখানে আন্দোলন সবচেয়ে দৃঢ় ছিলো।কেউ রাস্তায় বসে গান করছে।কেউ রাস্তা কন্ট্রোল করছে।কেউ অ্যাম্বুলেন্স ঠিকমতো হসপিটালে পৌঁছে দিচ্ছে।রাস্তায় একটুও ট্রাফিক জ্যাম নেই।অপরূপ দৃশ্য।অথচ এই জায়গায় সবসময় জ্যাম লেগে থাকতো।
    আমরা সবাই নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছিলাম,কিন্তু সেদিনও কারা যেন আমার ইট পাথর ছুঁড়তে শুরু করলো।এদের কারোর হাতে ছিলো হকিস্টিক, কারোর হাতে গাছের ভাঙা মোটা ডাল।হঠাৎ এদের ছোঁড়া ইট আমার কপালে এসে লাগলো।হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত পড়ছে।চশমা রক্তে ভিজে ঝাপসা হয়ে গেছে।এবার আমার গাল ক্ষোভে ফুলে উঠলো।পেয়েছে কি তারা?এসব আমরা মেনে নিব?আমি দৌড়ে গিয়ে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালাম।সেখান থেকে ইট কুড়িয়ে নিয়ে ছুঁড়তে লাগলাম।ওরা প্রায় কাছাকাছি চলে আসছিলো।অথচ আমার কোনো ভয় হচ্ছিলো না।আমি ইট কুড়িয়ে জোরে ছুঁড়তে লাগলাম।তখনই কে যেন আমার হাত ধরে বলল-কি করছেন এসব?সরে আসুন।
    দেখলাম স্কুল ড্রেসপরা একটা মেয়ে আমার হাত ধরে টানছে।ওরও কপাল ফেটে গেছে।রক্তে গাল লাল।ও টেনে আমাকে নিয়ে একটা গলির ভিতর ঢুকে গেল।বাইরে খুব বিশ্রী অবস্থা।অকথ্য ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করছে।আমি আর মেয়েটি হাঁপাচ্ছিলাম।মেয়েটি ব্যাগ থেকে পানি বের করে নিজে একটু খেয়ে আমাকে বলল-নিন।
    আমার তখন রাগে হাত পা কাঁপছে।আমি বললাম-লাগবে না।
    -খান না।এতক্ষণ যুদ্ধ করলেন।
    -এসব অবিচার করবে আর আমরা মেনে নিব?
    -আমি তো আর কিছু করিনি।নেন পানি খান।
    -তুমি আমাকে নিয়ে এলে কেন?
    মেয়েটি হেসে বলল-আপনিই বা এলেন কেন?আপনার শরীরে তো জোর আছে।হাত ইচ্ছা করলেই ছাড়িয়ে নিতে পারতেন।
    একটু চমকে গেলাম।সত্যিই তো।আমি চাইলেই হাত ছাড়িয়ে নিতে পারতাম।কিন্তু এলাম কেন?একটা মেয়ে হাত ধরেছে তাই?তাহলে কি ছেলে ধরলে আনতাম না?
    পানি শেষ পর্যন্ত খেলাম।তারপর বললাম-নাম কি তোমার?
    -কেন নাম দিয়ে কি হবে?
    -জানলে ক্ষতি কি?
    -না জানলেই বা ক্ষতি কি?
    কি জ্বালা!এরকম করলে কতক্ষণ মেজাজ ঠান্ডা রাখা যায়।রক্তপাত ততক্ষণে কমেছে।আমি চশমাটা মুছে নিলাম।বাইরের অবস্থাও এখন স্বাভাবিক।পুলিশ এসে সব ঠান্ডা করেছে।আমি মেয়েটাকে বললাম-চলি।
    -সেকী?একা যাবেন কেন?একসাথে যাই।
    -তুমি একা আসতে পারলে একা যেতেও পারো।
    মেয়েটা কিছু বলল না।স্কুলড্রেস দেখে বুঝা যাচ্ছে ভিকারুননিসার মেয়ে।এভাবে রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে?ওরও কপাল কেটেছে। বললাম-আচ্ছা চলো আগে ফার্মেসিতে গিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে নেই।
    ব্যান্ডেজ করাতে করাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।আমি মেয়েটিকে রিকশা ঠিক করে দিলাম।ভাড়া দিতে চাইলে নিলো না।যাবার সময় আবার বলল -ধন্যবাদ।
    -কি জন্য?
    -এতক্ষণ ছিলেন,সেজন্য।
    -ও আচ্ছা।
    -চলি আশা করি একদিন আবার কথা হবে।
    রিকশা চলে যেতে লাগলো।আমি এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকলাম।মেয়েটিও হঠাৎ মাথা বের করে পিছনে ফিরে আমার দিকে হাত নাড়লো।ওর চোখ যেন কথা দিচ্ছে যে আমাদের একদিন আবার কথা হবে।

    রাতের বেলা শুভর কাছ থেকে একটা নোট নেবার কথা।ও বলল সেটা ওর কাছে নেই।জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক মেয়ের কাছে আছে তাকে নক দিয়ে নিতে।ফেসবুকে দেখলাম এই নামে কত মেয়ে আছে।একটা একাউন্ট দেখে মনে হলো এটাই সেই মেয়েটা।নক দিয়ে বললাম-হ্যাঁ,জান্নাতুল,আমি হাসান।শুভ নিশ্চয়ই আমার কথা বলেছে।উপবৃত্তের নোটগুলা একটু দাও তো।
    কিছুক্ষণ পরেই রিপ্লাই এলো-কেমন আছেন?
    কি কথার কি জবাব।তাও ভাবলাম মেয়েটা হয়ত ভদ্রতা দেখাচ্ছে।বললাম-জি ভালো।
    এবার ম্যাসেজ এলো-ব্যান্ডেজ খুলেছেন?আপনার কপাল বেশি কেটেছিলো।
    আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।এই কি সেই মেয়েটা!সন্ধ্যায় ওকে বিদায় দিয়ে ভেবেছিলাম আর কখনো কথা হবে না,অথচ একদিন পার না হতেই আবার যোগাযোগ হলো?
    -তুমি কেমন আছো?
    -ভালো।
    -তোমার নাম তাহলে জান্নাতুল?এটা তো বেশি ইসলামিক নাম হয়ে গেল।
    -আপনাকে কে বলেছে আমার নাম জান্নাতুল?
    -তাহলে এই নাম দেওয়া কেন?
    -আসল নাম দেইনি।
    -ও আচ্ছা।
    সেদিন অনেক কথা হলো।যদিও বেশিরভাগই আমার মনে নয়।তবে কোনো মেয়ে আমার সাথে এত ঘনিষ্ঠভাবে কখনো কথা বলেনি।ওর প্রতিটি কথাই পড়ে মনে হত ক যথেষ্ট আধুনিক।আট দশটা মেয়ের মতো ধর্মের গো-বাঁধা পাবলিক না।সেদিন রাত ২টায় আমরা কথা বলা শুরু করেছিলাম।কথা বলা শেষ হলো সকাল ৭টায়।সেদিন আর ঘুম হয়নি।কিছুক্ষণ পরেই কলেজে যাবার সময় এসে গেল।আমি ওকে বললাম-এখন কলেজ যাব।আসি
    -আচ্ছা
    -তোমার নামটা এখন তো বলো?
    -না।
    -তোমাকে তাহলে কি নামে ডাকব?
    -ধরে নাও আমার নাম তমা।
    -তমা?
    -হ্যাঁ।
    -এটা আসল নাম না নকল নাম?
    -নকল।
    -আসল নাম কবে বলবে?
    -কলেজ যাও এখন।
    আমি আর ওকে জোর করলাম না।থাক,মেয়েটা বলতে চাচ্ছে না তখন জোর করে লাভ কি?
    কলেজে যাবার সময়েই দেখলাম সুরভি ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কলেজ যাচ্ছে।সুরভির কি আমার কথা মনে আছে?এই মেয়েটিকে আমি দেখেছিলাম আইডিয়াল স্কুলের সায়েন্স ফেস্টে।দেখে পছন্দ হলেও কথা বলার সাহস হয়নি।কলেজ লাইফে এসে আমিরের কাছ থেকে নম্বর চুরি করে হাইকু কবিতা পাঠিয়ে ওর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিলাম।এরপর বহুদিন কথা হয় না।হয়ত ও আমাকে ভুলে গেছে।সেটাই স্বাভাবিক।ভুলে না গেলে বিশেষ কিছু হওয়া যায় না।
    আমি কলেজের দিকে চলে গেলাম।

    ১০

    আন্দোলনটা যেভাবে হঠাৎ জেগে উঠেছিলো,ঠিক সেভাবে অতি অল্প সময়ে তলিয়ে গেল।সরকারকে এটার ক্রেডিট দিতেই হবে।কারণ কিছুদিন পরই সরকার শিক্ষার্থীদের বুঝাতে দায়িত্ব দিলেন ছাত্রলীগকে।ছাত্রলীগ একদম উঁচু থেকে শুরু করলো।প্রথমে তারা বুয়েটের কিছু শিক্ষার্থীদের উপর বিনা কারণে হামলা করলো।এসবের ছবিও তারা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলো।কিন্তু তখন সরকার তদন্ত করে এসব বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ করেনি।রাজশাহীতে "হাতুড়ি মুরাদ" নামে এক ক্যাডার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এক শিক্ষার্থীকে পঙ্গু করে ফেললো।তাকে ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়নি।সে কিছুদিন পরেই ধুমধামের সাথে বিয়ে করলো।কিন্তু বাসর রাতেই তার নববধূ আত্মহত্যা করে।কেন কেউ জানে না।কিন্তু হাতুড়ি মুরাদের প্রমোশন হয়েছে।সে তার জেলায় এখন জুনিয়র সম্পাদক।

    ছাত্রলীগের ছেলেরা এরপর আক্রমণ করলো নর্থ সাউথ ভার্সিটিতে।মেয়ে শিক্ষার্থীদের বুকের ওড়না টেনে নিয়ে ফাঁস দিয়েছিলো।নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীরা আর সহ্য করতে পারেনি।তারা শেষে পিটিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছিলো।কিন্তু কিছু দাঁড়িয়ে ছিলো পুলিশের বাহিনী।তারা এবার এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের উপর রবার বুলেট আর টিয়ার গ্যাস ছুড়লো।শিক্ষার্থীরা বাঁচতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেও রক্ষা পেলো না।পুলিশ হলের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে ভিতরে টিয়ার গ্যাস ছেড়ে দিলো।শিক্ষার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে "পানি,পানি" বলে চিৎকার করেও এই ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে রেহাই পায়নি।পরের দিন সরকার সংবাদ সম্মেলনে বলল জঙ্গিবাদ রুখে দিতে নর্থ-সাউথে এমন অভিযান চালানো হয়েছে।
    এখানেই থেমে থাকেনি।নর্থ সাউথের এক শিক্ষার্থী রাতের বেলা বাড়ি ফিরছিলো।তাকে রিকশা থেকে নামিয়ে ছাত্রলীগের জানোয়াররা ইচ্ছামতো প্রহার করে।ছেলেটিকে একদম মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।তার বন্ধুরা সবার কাছে কেঁদে কেটে অনুরোধ করছিলো কেউ যেন একটু রক্ত দেয়,কেউ যেন বিকাশে চিকিৎসার টাকা দেয়।আবরার আর ইনু রক্ত দিয়েছিলো।কিন্তু শেষে ছেলেটি আর বাঁচেনি।ব্রেন-হেমোরেজে মারা যায়।

    এসবের প্রতিবাদ উন্মাদও করেছিলো।চমৎকার সব কার্টুন আর ফিচার বের হয়েছিলো।কিন্তু সত্যি বলতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর আমি এসব থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।কারণ এসবের পরিণতি কী?তাও কেউ প্রতিবাদ করেনি।সবার চোখ ছিলো বাঘের কামড়ের মতো বন্ধ।কাজে আর এসবে সময় নষ্ট করার আর দরকার দেখিনি।
    আমি তখন রাত জেগে শুধু তমার সাথে কথা বলি।ওর আসল নাম আমাকে তখনও বলেনি, আমিও জোর করিনি।ওর সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগতো।যেন কতদিন ধরে আমাদের পরিচয়।ও যখন হাসতো আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম।ম্যাসেঞ্জারে প্রাথমিক আড্ডার পর একদিন হঠাৎ ফোন দিলাম।আশ্চর্য ও বিনা সন্দেহে ফোন ধরেছিলো।আমি সেদিন ওকে কবিদের প্রেমিকা আর স্ত্রীদের নিয়ে গল্প বলেছিলাম।অনেকেই বলে কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশের জন্য আত্মহত্যা করেছে।আমি এসব বিশ্বাস করি না।লাবণ্য দাশ যখন লুকিয়ে লুকিয়ে বিপ্লবের কাজ করছিলেন তখন সে কারণে তার বিয়ে হচ্ছিলো না।কবি নিজের থেকে তাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছেন।বিয়ের পর কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন।একদিন স্ত্রী গোসল করতে দেরি হয়ে যাচ্ছিলো।গোসলের সময় কাপড় ধুবেন কিন্তু কবি কিছুতেই গায়ের গেঞ্জি দিচ্ছিলেন না।তিনি তখন কবিতা লেখায় ব্যস্ত।লাবণ্য দাশ কাঁচি নিয়ে এসে কবির গেঞ্জি টেনে ধরে বলেছিলেন-দেই, কেটে দেই?
    কবি হেসে বলেছিলেন-কাটলে তাহলে আগেই কাটতে।
    যাদের সম্পর্ক এমন,সেখানে কবি মোটেও তাঁর স্ত্রীর প্রতি অভিমানে এমন করতে পারেন না।তমা এসব শুনে বলেছিলো-তুমি কি ফেমিনিস্ট?
    আমি চমকে উঠে বলেছিলাম-আরে ধুর, নাহ।
    -তাহলে তুমি কেন এসব বিশ্বাস করো না?
    -সবাই অযৌক্তিক কাহিনী বিশ্বাস করলে আমি কেন করব?
    ওকে আরেকটি জীবনানন্দের গল্প বললাম।জীবনানন্দ যখন সুইসাইড করেন,তাঁর দুই হাতে ডাব ছিলো।এই গল্পটা শুনে ও শুধু হাসছিলো।অনেক ধমক দিয়েও ওর হাসি থামাতে পারিনি।
    এভাবে অনেকক্ষণ গল্প চলছিলো।আড্ডার এক ফাঁকে তমা হঠাৎ বলল-হাসান।
    -হু
    -তুমি কি মনে করো আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ আছে?
    আমি অবাক হয়ে বললাম-হঠাৎ এ কথা?
    -বলো না।
    -কি জানি।
    -প্লিজ ভেবো না।কারণ আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না।আমি তোমার সামনে কখনো আসবো না।
    -বেশ এসো না।
    -তুমি মনে কষ্ট পাবে না?
    আমি উত্তর দেইনি।
    কিন্তু তমা একদিন ঠিকই ভিডিও কলে এলো।ওর নিজের একটি স্কেচ দেখাতে গিয়ে ও সামনে এলো।আবার ওকে আমি দেখলাম।সেদিন ভালোমতো খেয়াল করে দেখলাম ওর চেহারায় তথাকথিত সৌন্দর্য নেই।গায়ের রং শ্যামলা।ঠোঁট খুবই চিকন।পাটিতে একটি দাঁত এক্সট্রা।কিন্তু তবুও চেহারায় সুপ্ত মাধুর্য আছে।আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও বলেছিলো-কি দেখ?
    -তোমাকে।
    -এত দেখার কি আছে?
    -সব নারীকেই ভালোভাবে দেখতে হয় ।
    -ফ্লার্ট হচ্ছে?
    -হু হচ্ছে।
    দুষ্টুমির মধ্যে হঠাৎ তমা অন্যমনস্ক হয়ে গেল।আমার দিকে তাকিয়ে বলল-হাসান এই শেষ আর তোমার সামনে আসব না
    -আচ্ছা।
    কিন্তু তমা এসেছিলো।ও এসেছিলো অর্ণা রূপে।

    তমার সাথে দিনকাল কাটলেও এর বাইরে কিছু ঘটনা ঘটছিলো।যেমন একদিন কলেজের পর আমির অনেক অনুরোধ করলো কিছুক্ষণ দাঁড়াতে।ওর গার্লফ্রেন্ড(সাবা) দেখা করতে আসবে।ওদের রিলেশনের পিছনে বলে সুরভির অবদান আছে।সুরভির কথা শুনেই আমি দাঁড়ালাম।কিছুক্ষণ পর সাবা এলো।আরামবাগের ফুটওভার ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে।সেদিন ওকে প্রথম দেখলাম।দেখতে খুব কালো।আমিরের চেয়ে বেঁটে।গাল ভরাট কিন্তু দেহ সামান্য স্থুল। ওকে দেখে মনে হল ও সামান্য বিব্রত।পরে এগিয়ে যেতেই বিষয়টা বুঝলাম।এক দাড়িওয়ালা যুবক ওকে বিরক্ত করছে।আমির সামনে যেয়ে ক্ষেপে বলল-আপনি কি চান?
    যুবক নির্বিকারভাবে বলল-ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই।
    সাবা রিলিফ পেতে বলল-দেখো না,শুধু শুধু বিরক্ত করছে।
    মেয়েদের সামনে সবাই বীরত্ব দেখাতে চায়।আমি ভরাট গলায় বললাম-আপনি আমার সাথে বন্ধুত্ব করুন।আমার চেহারা কি ভালো না?
    যুবকটি অনেক খুশি হয়ে আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে চলে গেল।সে চলে যেতেই আমির আর সাবার যে কি হাসি!যেন মাত্র কমেডি স্টেজ শো করলাম।

    এরকিছুদিন পরই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোনকল পেলাম।ফোন ধরতেই একটি মিহি গলা শুনলাম-ভাই ভালো আছেন?
    -কে আপনি?
    -ঐযে ভাই আপনি ওদিন আমার বন্ধু হয়ে আমাকে নম্বর দিলেন।
    এরপরে লোকটি প্রায় তিনঘণ্টা আমার সাথে কথা বলল।বেশিরভাগ কথাই সত্য কিনা জানি না।তার ছোটবেলা থেকেই বাপ মা নেই।মামার বাসায় বড় হয়েছেন।মামি বলে ছোটবেলার থেকেই তাকে সেক্সুয়ালি অ্যাসল্ট করেন।
    এসবের উপর ভিত্তি করে আমি একটা গল্প লিখেছিলাম।

    ১১

    পাহাড়ি এলাকার কিছু বিতর্কিত কান্ড দেখলে খুবই বিস্মিত হতে হয়।যেমন ঝর্ণার কাছে দ্রুত যাওয়াত জন্য ব্রীজের বানানোর কথা থাকলেও অর্ধেক বানিয়ে সেটা আর সম্পন্ন করা হয়নি।কিন্তু এখানে ঠিকই বিদেশি হুইস্কি পৌঁছে গেছে।আবার বিদ্যুৎ না থাকলেও কনডেন্স মিল্ক ঠিকই আছে।সেটা দিয়ে ওরিফা মামার আত্মীয়রা আমাদেত কফি বানিয়ে খাওয়ালেন।দূর থেকে পানির নিজস্ব ভ্রমণের ক্ষেপা আন্দোলনের স্লোগান আসছে।এসব শুনলেই মনটা কেঁপে উঠে।চারপাশে অজস্র পাথর পড়ে আছে।মন্দ লাগে না।
    কিছুক্ষণ বিশ্রামের পরই আমরা যে যার মতো লাইফ জ্যাকেট পরে নিলাম।আমাদের সাথে গাইড মামার একজন বন্ধু যুক্ত হলো।তিনি নৌকা চালাবেন।
    পানির কাছে পৌঁছাতে আমাদের প্রথমে পায়ে হেঁটে যেতে হলো।পাথরগুলোর উপর পা ফেলাই যায় না।প্রচণ্ড পিছলে।গাইড মামা তখন বললেন-যে পাথরুগুলির রং সাদা সেখানে পা ফেলুন।
    পরে দেখলাম আসলেই, সাদা পাথরগুলি একদম পিছলে নয়।খালের কাছে আসার পর এখন কিছুদূর নৌকায় যেতে হবে।শুভ নৌকায় উঠতে যেতেই নৌকাটা প্রচণ্ড দুলে উঠলো।শুভ সাথে সাথে নেমে বলল-নারে, পারব না।ভয় লাগে।
    ইনু এসে ওর পিঠে দুম করে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বলল-ওঠ,এখনই ওঠ।
    শুভ সাথে সাথে নৌকায় উঠে গেল।সবাই উঠার পর নৌকা ছেড়ে দিলো।পানিতে বৈঠা মারার মধুর শব্দ হচ্ছে।আসলেই শুনতে ভালো লাগে।পানির মধ্যেও বড় বড় পাথর ভেসে আছে।মাঝে মাঝে কিছু কিছু মাছ পানি থেকে লাফ দিয়ে উঠে আবার পানির ভিতরে চলে যায়।

    কিছুদূর যাবার পর এবার ভেলায় যেতে হবে।আমি আর শুভ একটা ভেলায় উঠলাম।আবরার আর ইনু অন্যটায়।কিন্তু জীবনে প্রথমবার ভেলা চালাচ্ছি।দিক ঠিক থাকে না।বারবার বেঁকে পানিপথের সমান্তরাল হয়ে যায়।পিছনে শুভ আবার ভয় পাচ্ছে।ইনুদের ভেলাটা ওদিকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।গাইড মামা আমাদের সাথে সাথে নৌকা চালিয়ে আসছিলেন।আমার আর শুভর অবস্থা দেখে বললেন-আপনারা নৌকাটা ধরুন।তাহলে নৌকার টানে যেতে পারবেন।
    আমরা এবার শুধু সাদা পাথর দেখছি।গাইড মামা হঠাৎ একটা বৃহৎ পাথরের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন-ওটা দেখেছেন?
    খুবই সাধারণ পাথর লাগলো।তবে সাইজে অনেক বড়।এবং দেখতে স্বেদবীজের মতো।এমন রংকে কবিরা বলেন-"ধবলদুধের রং"।গাইড মামা বললেন-এই পাথরের উপর বসে উড়কা বুড়ি পূজো করতেন।
    এসব মিথ শুনতে খারাপ লাগে।গাইড মামা বলতে লাগলেন-উড়কা বুড়ি খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতেন।সেটা শুনে বনের সব বানর,বাঘ, শেয়াল তার কাছে আসতো।উড়কা বুড়ির সাথে দেবীর পুজো দিত।
    আমি বললাম-বুড়ি এখনো বেঁচে আছেন?
    গাইড মামা উৎসাহের সাথে বললেন-জি উনি এখনো ওনার বাড়িতে থাকেন।ওনার বয়স দুইশ বছরের উপরে।
    আমি হেসে বললাম-এসব কেউ বিশ্বাস করে?
    গাইড মামা খুব ব্যথিত চোখে আমার দিকে তাকালেন।
    একটু পরেই আমরা সিপ্পী পাহাড়ের কাছে চলে এলাম।নিচে প্রচুর পাথর।এখন আর ভেলায় যাওয়া যাবে না।সাঁতরিয়ে যেতে হবে।পানিতে নামতেই বুঝলাম আমাকে দিয়ে সাঁতার সম্ভব না।কিন্তু ইনু আর আবরার সাঁতার জানে।ওরা ঠিকই সাঁতরিয়ে অন্য পাশে চলে গেল।শুভ বলল ও আর যাবে না।ওর শরীর খারাপ লাগছে।আমি প্রথম প্রথম কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম সাঁতার কাটতে।কিন্তু কিছুতেই এগুতে পারছি না।বারবার ডুবে যাচ্ছি।আর আঁশটে পানি বারবার মুখে ঢুকে যাচ্ছে।সেটা দেখে গাইড মামা বললেন-আমি আপনাকে ওপারে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি শুধু দেহের ওজন ছেড়ে দিন।
    ওজন ছেড়ে দিতেই দেখলাম পানিতে ভেসে থাকতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।মনে হচ্ছে আমি পানির বিছানায় শুয়ে আছি।গাইড মামা আমাকে টানতে টানতে ওপারে সাঁতরিয়ে নিয়ে গেলেন।সেখানে পানির স্রোত আরো তীব্র।গভীরতাও প্রচুর।ঝর্ণা দেখতে গেলে হয় ভেলায় নাহলে সাঁতরিয়ে যেতে হবে।আমরা সবাই খুব ক্লান্ত।আমি আর আবরার গেলাম না।ইনু ঠিকই সাঁতরিয়ে সিপ্পী পাহাড় পেরিয়ে ঝর্ণা দেখে এল।
    ফিরে এসে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম।এরপর গরম ভাত, আলুভর্তা আর ডিমের তরকারি দিয়ে লাঞ্চ সারলাম।সত্যি বলতে রান্না খুব ভালো।নতুন এক ধরনের সবজি খেলাম যেটাকে আদাফুলের তরকারি বলে।অতি চমৎকার।জীবনে প্রথম কাচা মরিচ দিয়ে ভাত মেখে খেলাম।
    ফেরার পথে আমরা আর পাহাড়ের উপর দিয়ে যাব না ঠিক করলাম।বরং আমরা যে থেকে লাগলাম যেদিকে ঝর্ণার পানি যায় সেদিকে।ওদিক দিয়ে যেতে বলে সময় কম লাগে।যাবার সময়ে হঠাৎ গাইড মামার বন্ধুর চিৎকার দিয়ে উঠলেন।দেখা গেল,তাকে একটা কাঁকড়া ধরেছে।কিছুদূরেই আদিবাসীরা মাছ ধরছিলো।একজন মাঝারি সাইজের একটা শোল মাছ ধরেছে দেখলাম।চুপচাপ চলতে মনেহয় সবারই একঘেয়েমি লাগছিলো।তখনই গাইড মামা অদ্ভুত সব গল্প শুরু করলেন।বেশিরভাগই যৌনতা সম্পর্কিত গল্প।যেমন গাইড মামা তার কিশোর বয়সে কিছুদিন গ্রামে ছিলেন।গ্রামে একবার একটা বাঘ এসে পড়লো।বাঘটা বুড়ো এবং ক্লান্ত ছিলো।এজন্যেই সবাই সহজে হত্যা করতে পেরেছিলো।পরে দেখা গিয়েছিলো বাঘটির সামনে দাঁত নাই।গাইড মামার বলে দেহে প্রথম যৌন চাহিদা জেগেছিলো বাঘের যোনি দেখে।শুভ এটা শুনে "ওয়াক" করে এক দলা থুথু ফেললো।সেই বাঘের মাংস বলে গাইড মামা খেয়ে দেখেছিলেন।আবার সুন্দরবনে বলে এমন এক লোক আছে যে কুকুরের সাথে সঙ্গম করে।
    পাহাড় যত দেখি তত ভালো লাগে।এইসব পাহাড় পরে শিল্পীর তুলির সাহায্যে তাদের ক্যানভাসে স্থান পায়।এসব পাহাড় বা প্রকৃতি মানুষকে নন্দনতত্ত্ব শেখায়।তলস্তয় তার নন্দনতত্ত্বের সংজ্ঞায় প্রকৃতিকে অবহেলা করলে ই.এইচ.গোম্ব্রিচ এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।আমার মতেও তাই।প্রকৃতি ছাড়া কিছুই সৃষ্টি বা ব্যাখ্যা সম্ভব না।মানুষ যা দেখে তাই সৃষ্টি করে। বসের সাথে এক আড্ডায় শুনেছিলাম এই যে কার্টুনিস্ট কিংবা শিল্পীরা এলিয়েন আঁকে,এই এলিয়েনদেরও হয় পা থাকে কিংবা কান থাকে, হাত থাকে।সংখ্যা হয়ত দুইটির বেশি,কিন্তু ব্যাপারটা হলো মানুষ নির্দিষ্ট কল্পনার বাইরে এই এলিয়েন আঁকতে পারে না।গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস প্রায় এক হাতে ম্যাজিক রিয়ালিজমকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।অথচ তিনি এর ক্রেডিট নেননি।তিনি বলেছিলেন-এসব প্রকৃতিতে আগেই ছিলো,আমি স্রেফ এর পরিচয় তুলে ধরেছি।
    এসব ভাবতে ভাবতেই আমরা কচ্ছপতলিতে এসে গেলাম।এসে শুনলাম রোয়াংছড়িতে বান্দরবান শহরের বাস ছেড়ে দিয়েছে।গেলে এখন পুরো পথ চাঁদের গাড়িে যেতে হবে।
    বিদায়বেলায় গাইড মামা আমার হাত ধরে বললেন-ভাইয়া,আপনি তো লেখেন।আমাকে নিয়ে একটা গল্প লেইখেন কিন্তু।
    উনি খেয়াল করেছিলেন আমি যাই দেখি সেটাই নোটবুকে লিখে রাখি।যেমন-

    শুকরের হড়কা ডাক
    পাহাড়ে মরিচ চাষ
    বাঘের জনন ছিদ্র
    এসব উনি যে পাত্তা দিয়েছেন সেটাই অবাক ব্যাপার।

    চাঁদের গাড়িতে যাবার সময়ে প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমি তলিয়ে যাব।সে সময়ে বারবার কত কিছু মনে পড়ছে।সব যেন আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাব।

    ১২.

    দেখতে দেখতে একসময়ে আরেকটা বছর শেষ হয়ে গেল।আমি ফার্স্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম।উন্মাদেও প্রতিদিন যাওয়া হয়।উন্মাদে প্রথম বের হয় আমার লেখা একটি ইন্টারভিউ।হাতের পাঁচ আঙ্গুলকে দিয়ে আমি চারপাশের কিছু অন্যায়ের প্রতি প্রতিবাদ করেছিলাম।সেটি বস ভালোই পছন্দ করেছিলেন।এছাড়া বছরের শেষে একটি মজার ঘটনাও ঘটলো।যাত্রাবাড়ী থেকে ফিরছিলাম।বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।আমার পাশে এক ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন।গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, মাথা টাক কিন্তু মুখে সাদা দাড়ি।বয়স ৫০ এর উপরে।আমাকে দেখে বললেন-কই যাবেন?
    আমি বললাম-মতিঝিল,আপনি?
    উনি হেসে বললেন-আমি একটু ওয়াসা অফিস যাব।ওয়াসার পরিচালককে শরবত খাওয়াবো।
    শুনে প্রচণ্ড অবাক হলাম।উনি আমার প্রশ্নসাপেক্ষ চেহারা দেখে হেসে ফেলে বললেন-আমি জুরাইন থাকি।আর বইলেন না,ওখানকার পানি ড্রেনের চেয়ে নোংরা।অথচ ওয়াসার পরিচালক কাল বলে কিনা তারা এমন বিশুদ্ধ পানি দেয় যে ও পানি বলে না ফুটিয়েও খাওয়া যায়।আমি সেজন্য জুরাইনের পানির শরবত বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।ওনাকে খাওয়াবো।
    আমি ভেবেছিলাম লোকটা পাগল।কিন্তু পরেরদিন নিউজ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।ঐ ভদ্রলোক আসলেই ওয়াসার অফিসে গিয়েছিলেন এবং জগ আর গ্লাস হাতে পরিচালককে বারবার সাধছিলেন শরবত খাওয়ার জন্য।ভদ্রলোকের ওমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে যে রসবোধ আছে সেটারও প্রশংসা করতে হয়।কারণ উনি এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন-ওনার ডায়বেটিস থাকলে শুধু লেবু দিয়ে শরবত দিব।লবণও আছে।অসুবিধা নেই।
    ভদ্রলোককে শেষে পুলিশ পিটিয়ে ওয়াসার অফিস থেকে বের করে দেয়।এরপরে আমি কখনো যাত্রাবাড়ী গেলে বহু আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছি যে ভদ্রলোকের সাথে আবার একদিন দেখা হবে।ওনাকে নিয়ে উন্মাদে একটা ফিচার করব।কিন্তু আর কখনো দেখা হয়নি।

    মেলায় প্রথম দিন মহা ঝামেলা হল।প্রধানমন্ত্রী রাস্তা দিয়ে যাবেন দেখে পুরা রাস্তা বন্ধ।কোনো মানে হয় না।খুব কষ্টে মেলায় ঢুকে স্টল গোছালাম।স্টল গোছানোর সময়তেই আরেকটা ঘটনা ঘটলো যেটা আমি সারাজীবন মনে রাখব।স্টলে বসে থাকার সময়ে দূর থেকে দেখলাম এক ভদ্রলোক আপনমনে কাগজ কুড়াচ্ছেন।শরীরের পাঞ্জাবিটা একটু পুরনো। দেখে ওত ইম্পর্ট্যান্ট কাউকে মনে হলো না।কিন্তু উনি যখন সোজা হয়ে দাঁড়ালেন তখন আমি চমকে উঠলাম।ভদ্রলোকের নাম আল মাহমুদ।বখতিয়ারের ঘোড়া,সোনালি কাবিনের মতো কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা।আমি দূর থেকে হাত নেড়ে তাকে ডাকলাম-স্যার, স্যার….
    একজন সাধারণ ভক্তের ডাক হয়ত উনি এড়াতে পারেননি।উনি নিজে আসতে পারছিলেন না।ওনাকে স্টলের সামনে নিয়ে আসলেন আরেক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন-কি উন্মাদ,খবর কেমন?
    আমার তখন খুশিতে গদগদ অবস্থা।আমি চিকন গলায় বললাম-স্যার,আমিও কবিতা লিখি সামান্য।
    উনি হেসে বললেন-বেশ তো,আমার কাছে একদিন নিয়ে এসো।
    আমি বেছে বেছে সপ্তাহজুড়ে ঠিক করলাম কোন কোন কবিতা তাকে দেখাবো।কিন্তু দুঃখের ব্যাপার,এক সপ্তাহ পরই উনি মারা যান।আমার ওনাকে আর কবিতা দেখানো হয়নি।
    সারাদিন খুব ক্লান্ত থাকতাম।সকালে ক্লাস,দুপুরে ল্যাব,এরপরই মেলায় ডিউটি করতে যেতাম।রাতে এসে আর জাগায় শক্তি থাকতো না।তমা ততদিনে আমাকে নিকনেম দিয়েছে।আমাকে ও ডাকে তাবি বলে।এই শব্দটা ও কোথার থেকে পেয়েছে কে জানে।আর আমি ওকে ডাকতাম মার্গারেট বলে।এই নামটা আমি নিয়েছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী থেকে।মার্গারেট নামে তার এক ফরাসি বান্ধবী ছিলো।বন্ধুত্বের এক পর্যায়ে ওনাকে ভালোবেসে ফেললেও মার্গারেট তাকে আর বিয়ে করতে রাজি হননি।আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও বাংলায় লেখার জন্য ভারতে ফিরে আসেন।এভাবে তাদের যোগাযোগ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।আমারও কেন জানি মনে হয়েছিলো তমা একদিন চলে যাবে।সেজন্য এই নিকনেম দিয়েছিলাম।
    স্টলেও অনেক মজার মজার ঘটনা ঘটতো।বেশি মজা হত দরদাম নিয়ে।বইমেলাকে অনেকেই ভাবে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান।ইচ্ছামতো বইয়ের দাম কমাতে চায়।তাদের বুঝিয়েও লাভ হয় না।
    ক্লান্তি-অবসাদ আমাকে ঘিরে ধরলেও আমি তমাকে সময় দিয়ে রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত কথা বলতাম।এভাবে বলতে বলতে একসময়ে ওকে সুরভির কথা বলে ফেললাম।ও কিছুক্ষণ কথা বলল না।তারপর আমাকে বলল-তুমি ওকে আর কল দাওনি?
    আমি সরল গলায় বললাম-না।
    -কেন?
    -শুধু শুধু অপমানিত হতে যাব কেন?
    -ওকে প্রথম কবে ভালো লেগেছিলো?
    আমি ভেবে বললাম-দুই বছর আগে।
    অর্ণা তখন গম্ভীর গলায় বলল-তুমি ওকে আগামীকাল ফোন দিবে।
    আমি জিজ্ঞাসা করলাম-কেন?
    তমা বলল-বলেছি দিবে।
    পরেরদিন সারা সকাল কলেজে কাটলো।দুপুরে গেলাম স্টলে।সেদিন সামান্য মন খারাপ ছিলো।বইমেলায় প্রচুর বই চুরি হয়।আমি ভেবেছিলাম আমার সাথে এই কাজটা ঘটবে না।আসলেই ঘটেনি।আমার কাছ থেকে চুরি হয়েছে টাকা।যেটা ইতিহাসে প্রথম।এর আগে কোনো স্টল থেকে টাকা চুরি হয়নি।এক ভদ্রলোক আমার দিকে হেসে বলেছিলেন-শুনুন,আমি একটা বই কিনেছি,আমাকে ১০০০ টাকা ফেরত দেবার কথা।এখনো দিলেন না?
    কথার স্বর মার্জিত দেখে আমি খুশিমনে ফেরত দিলাম।কিছুক্ষণ পরে শুনলাম স্টলে ১০০০ টাকার হিসাব মিলছে না।তখনই বুঝলাম চুরি হয়েছে।বস সেদিন প্রথম মেলায় স্টলে এসেছেন।ওনার সামনে এমন অপদস্ত হলাম।আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো।
    বস যখন উঠে পাঠকদের কাছে গেলেন,ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।আমার সাথে থাকা শোয়েব ভাইকে বললাম-আপনি একটু কিছুক্ষণ দেখবেন?আমি একটু বসব।
    উনি স্টলের দুইপাশে দেখতে লাগলেন,আমি কিছুক্ষণের জন্য বসলাম।কি মনে হল জানি,তবে বারবার ইচ্ছা করছিলো কাউকে ফোন দেই।আর বিন্দুমাত্র ভাবলাম না,সরাসরি ফোন দিলাম সুরভিকে।সুরভি ধরতেই আমি বললাম-চিনতে পারছো?
    প্রথমে কোনো সাড়াশব্দ নেই।এরপরে ও কাতর কণ্ঠে বলল-এতদিন পরে আমার কথা মনে পড়লো?
    -সামান্য ব্যস্ত ছিলাম।
    -একটা ফোন তো দিতে পারতে।কবিতাও তো আর পাঠাও না।
    আমি হেসে বললাম-তুমি ওসব পড়?কোনো পত্রিকার সম্পাদক ওগুলো ছাপায় না।
    সুরভি এবার ক্ষেপে বলল-তাহলে পাঠাও কেন?
    -কি জানি,হয়ত তোমাকে ভালোবাসি সেজন্য।
    এই কথা বলে নিজেই চমকে গেলাম।কীসের ভালোবাসা,আমি ওকে ঐভাবে কখনো চাইনি।তাও কেন বললাম?
    ভাবলাম এবার এ ধরনের কথা আর চালানো ঠিক হবে না।আমি গলা ঝেড়ে বললাম-শুনো,এভাবে কথা বলতে আর ভালো লাগে না।তুমি যদি চাও,তাহলে আমি দেখা করতে চাই।কবে কোথায় সেটা তুমি ঠিক করো।
    বলে ওর জবাবের জন্য অপেক্ষা না করেই ফোন রেখে দিলাম।
    সেদিন মেলায় ছিলো পাঠকের ঢল।সুনামগঞ্জের বন্যা যেভাবে বাঁধ ভেঙে দেয়,পাঠকরাও সেভাবে স্টলের লোকদের বিভ্রান্ত করে দিচ্ছিলেন।এক স্টলে দেখলাম রীতিমতো মারামারি লেগে গেছে।আমরা দম ফেলার সময় পাচ্ছিলাম না।
    রাত ৯টার দিকে যখন স্টল বন্ধ করলাম,তখন শুনলাম বিক্রি আজকে অনেক হয়েছে।ভালোই লাগলো জেনে।হোস্টেলে ফেরার সময়ে হেডফোন বের করলাম গান শুনবো,তখনই দেখি সুরভি ম্যাসেজ দিয়ে রেখেছে।ব্যস্ততার মাঝে ফোন চেক করতে পারিনি।সুরভি আগামীকাল দেখা করতে চায় মতিঝিলের ঈদগাহ মাঠে।
    রাতেই আমি তমাকে সব ডিটেইলস জানালাম।তমা প্রথমে কিছুই বলল না।আমি বললাম-তুমি চাইলে আমি দেখা করব না।
    তমা অবাক হয়ে বলল-তুমি দেখা করবে কি করবে না সেটা তোমার ব্যাপার।
    -তুমি চাও আমি দেখা করি?
    তমা আর কিছু বলল না।পুরো রাত আমরা নীরবে কাটিয়ে দিলাম।কেউ কাউকে কিছু বলতে পারলাম না।

    ১৩

    দিনটা আমার জন্য বিশেষ ছিলো।উঠেছিলাম খুব ভোরে।নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিলো।বাথরুমে আয়নায় নিজেকে দেখে প্রথমবার সুন্দর লেগেছিলো।ভেবেছিলাম শেভ করব।পরে ভাবলাম থাক না।
    খুব আনন্দ।মাথার চুল থেকে পায়ের বুড়ো আঙ্গলের নখের ডগা পর্যন্ত ছিলো উদাসী মনোভাব।আমি যেন নতুন কিছু পাচ্ছি। সেটা হয়ত আমার প্রাপ্য।
    সুরভির সাথে সেদিন দেখা করার কথা কলেজের পরে।
    কোনো ক্লাসেই মন বসে না।লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে গিয়েছিলাম।কিছুক্ষণ পর পর মোবাইল চেক করি সুরভি কোনো ম্যাসেজ দিয়েছে কিনা।সুরভিও অবশ্য কলেজ করছে,ম্যাসেজ দেওয়ার কথা না।কিন্তু তমা অনেক ম্যাসেজ দিচ্ছিলো।
    -গিয়েছো?
    -শোনো,দেখা করার সময় একদম হাসবে না।
    -এই, কড়া গলায় কথা বলবে না।ধমক দিবে না।
    আমি প্রথমে বুঝিনি,কিন্তু পরে বুঝলাম তমা যদি সেদিন আমাকে বলতো-যেয়ো না,দেখা করো না।
    আমি করতাম না।কিন্তু ও সেদিন বলেনি।কেন বলবে?আমি কখনো ওর ছিলাম না।

    কলেজ ছুটির পর বের হয়ে ভাবলাম কিছু নিব কিনা। ওর সম্বন্ধে কিছুই জানি না।সেই দুই বছর আগে ওকে প্রথম দেখা,আগ বাড়িয়ে নিজের থেকে কথাও বলিনি।অথচ সেই মেয়েটি আজ এতদিন পর আমার সাথে দেখা করছে।
    প্রথমে ভাবলাম,ফুল নিব কিনা।পরে দেখলাম ব্যাপারটা বেশি বিচ্ছিরি হয়ে যায়।ফুল নেওয়ার কি আছে।পরে ভাবলাম, কিছুই নিব না।
    ঈদগাহ মাঠে গিয়ে ওকে ফোন দিলাম।আমি দূর থেকে ওকে দেখতে পাচ্ছিলাম।কিন্তু মনে ভয়ও হচ্ছিলো।ও যদি অপমান করে?
    সুরভি ফোন ধরেই বলল-তুমি কোথায়?
    -এই তো মাঠের অপজিটে।
    -এসো,এই পাশে এসো।
    বলে ফোন রেখে দিলো।আমি ওপাশে গিয়ে দেখলাম,ওর সাথে সাবা দাঁড়ানো।আমাকে দেখেই সাবা ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলো।যাবার সময়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
    আমি সামনে যেতেই সুরভি বলল-তোমার ক্ষিধে লাগেনি?
    আমি চমকে উঠে বলে ফেললাম-হ্যাঁঁ।
    সুরভি তখন ওর ব্যাগ থেকে চিপসের প্যাকেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিল।
    চিপস জিনিসটা আমার পছন্দের না।এটা খেতে গেলেই আমার জিহ্বা কেঁপে উঠে।সেদিন আসলেই আমার উপর কারো নির্লোভ দৃষ্টি ছিলো কিনা,তাই কোথার থেকে ভিখারী উপস্থিত হয়ে বলতে গেল-বাজান, গত দুইদিন ধইরা…….
    ওত অপেক্ষা কে করে?আমি ওর হাত থেকে প্যাকেটটা ছোঁ মেরে টেনে নিয়ে গিয়ে ভিখারিকে দিয়ে বললাম-আপাতত টাকা নিন।আপাতত এটা খান।
    ভেবেছিলাম ভিখারি বিরক্ত হয়ে বদদোয়া দিবে।ভিখারিদের বদদোয়া ছেলে-মেয়ে সবার জন্য একটাই।সেটা হলো বাচ্চা না হওয়া।খালি ভাষার বদল ঘটে।মেয়েদের ক্ষেত্রে "তোর পেটে বাচ্চা আইবো না", ছেলেদের ক্ষেত্রে" তোর বউয়ের পেটে বাচ্চা আনতি ফারবি না"।
    এই ভিখারি সেদিক গেল না।সে চিপস নিয়ে বিদায় হলো।আমার সেদিন প্রচণ্ড মাথাব্যথা ছিলো।আমি ঈদগাহ মাঠের সাথে বানানো দেয়ালের বর্ডারে বসে পড়লাম।সুরভি তা দেখে আঁৎকে উঠে বলল-এই কী করো।উঠো।
    আমি বললাম-খুব মাথা ধরেছে।তাই বসলাম।
    -তোমার প্যান্টে ময়লা লাগছে তো।
    -তুমিও বসো আমার পাশে।
    আমি সেদিন কোনো কিশোরীর স্পষ্ট লজ্জা দেখলাম।আমি তখন ভালো করে সুরভিকে খেয়াল করলাম।শরীর একটু স্থূল,হাসলে মাড়ি পর্যন্ত দাঁত বেরিয়ে আসে।মুখটা ফর্সা।গাল বেশি ভরাট হওয়ায় হাসলে ওকে দেখতে ভালো লাগে।উচ্চতা একটু বেশি কম।সেটিও মার্জনা করা যায়।
    ওর এত লজ্জা পাওয়াটা দৃষ্টিকটু।ওর সম্বন্ধে আমি অনেক কিছুই জানি না।যেমন এস.এস.সি পাশের পর সবার শিক্ষার্থীর মাঝে মাঝে সামান্য বিলাসিতা জন্মায়।তারা তখন টাকা খরচ করে ইংলিশ কোর্স করে।সুরভি যেমন-তেমন জায়গায় না,ও ইংলিশ কোর্স করেছিলো ব্রিটিশ কাউন্সিলে।আবার ডিবেটও করে।এইসব জায়গায় আমি শিওর ও ছেলেদের সাথে মিশেছে, পাশে বসেছে।আমি এটাও বলতে পারি,কোনো ছেলে দুষ্টুমি করে ওর গাল টিপে দিয়েছে।তাহলে আমার সাথে বসতে এত দ্বিধা কেন?
    সুরভি মিনমিন করে বলল-আজ থাক।
    -বেশ।
    আমি এবার হেলাল দিয়ে বসলাম।সুরভি এবার কাছে এসে দাঁড়ালো।ওর শরীর থেকে ঘামের গন্ধ আসছে।আমার একটুও খারাপ লাগছিলো না।আমি সেদিন ওকে হঠাৎ বললাম-জানো,আমি একটা রম্য ক্যারেক্টার বানাচ্ছি।
    সুরভি যেন কথা বলার কিছু পেল।আগ্রহ নিয়ে বলল-তাই?
    আমিও আরো বলতে যাব তখনই ঘড়ি দেখে মুখ শুকিয়ে গেল।পৌনে দুইটা বেজে গেছে।এক্ষুণি আমাকে রেডি হয়ে মেলার স্টলে বসতে হবে।
    বিদায়ের সময়েও দেখলাম সুরভি লজ্জা পাচ্ছিলো।এত লজ্জার ফল যে পরে নির্মম হবে তা কে জানতো।

    হোস্টেলে এসে দেখলাম নিচে অনেক তল্পিতল্পা,ট্রাকভর্তি মালামাল।খবর নিয়ে জানলাম,হোস্টেল মালিক দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন।অথচ আমরা কোনো সাড়াশব্দ পাইনি।প্রথম বউ একদম নীরবে চলে গেছেন।এতে ওনার আত্মমর্যাদা কমলো না বাড়লো?আমার মতে,নীরবতা কখনো অধিক শ্রদ্ধা বয়ে আনতে পারে না।
    কম বয়স এমন এক ভদ্রমহিলাকে আমি দেখলাম সবকিছু তদারকি করছেন।মহিলাদের সৌন্দর্য নিয়ে আমার ওত ধারণা নেই।অনেকেই মুখ দেখে বয়স বলতে পারে,আমি দেহ দেখেও কারোর বয়স বলতে পারি না।মহিলার বিশেষ সৌন্দর্য আমার চোখে পড়লো না।কিন্তু উনি যখন আমাকে দেখে কাছে এগিয়ে আসতে লাগলেন,তখন তার সৌন্দর্য দেখলাম।সুবিশাল পাহাড় উচ্চতার দুই স্তন।আমার দিকে দ্রুত আসছেন দেখে ওনার বুকও ছিলো দোদুল্যমান।
    কিছু মানুষের স্বভাবই থাকে,বিনা কারণে কিছু ছুঁয়ে দেখা।উনিও এসে আমার গাল ছুঁলেন।ঠান্ডা হাত,খারাপ লাগলো না।
    বললেন-তুমি কে?নাম কী?
    -আমার নাম হাসান।এখানে থাকি।
    -ও তাই?অন্যরা কই বলো তো?আর কাউকে তো কলেজ থেকে ফিরতে দেখছি না।
    -অন্য সবার হয়ত ল্যাব আছে।
    ভদ্রমহিলা এবার হাসিমুখে বললেন-তোমাদের জন্য আমি কিছু রান্নাবান্না করেছি।অন্যদের যেহেতু আসতে দেরি আছে,তুমিই আগে খেয়ে নাও।
    আমি আপত্তি করার সত্ত্বেও উনি ছাড়লেন না।বলতে গেলে,যত্ন করে খাওয়ালেন।রান্না ওমন বিশেষ কিছু না।সাদা পোলাও আর মুরগির ঝাল মাংস।কিন্তু যেটা ভালো লাগলো সেটা হলো,উনি নিজে এসে খাবার পরিবেশন করলেন।পরিবেশনের সময়ে ভুলে ওনার কোমরের সাথে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে গিয়েছিলো।খুবই সাধারণ ব্যাপার।কিন্তু আমার প্রচণ্ড অস্বস্তি লাগছিল।শরীরে এক ধরনের বায়োলজিক্যাল জলোচ্ছ্বাস তৈরি হতে লাগল।সে জেগে উঠছে।হয়ত পরিপূর্ণভাবে না।কিন্তু যতদূর উঠছে ততদূরই অনেক।বিনয় মজুমদারের ভুট্টা সিরিজের কথা বারবার মনে পড়ছে।আমি তাকে মনে মনে বলি-ঘুমিয়ে যা,এখনই ঘুমিয়ে যা।
    কিন্তু স্রোতের উচ্ছ্বাস আরো বেড়ে যায়।তখনই তমার কথা মনে পড়লো।ছিঃ! ও এসব দেখলে কী ভাববে?আমার অবাক লাগলো,আমার চিন্তা করা উচিত সুরভির কথা,কিন্তু আমি কিনা ভাবছি তমার কথা।

    ভদ্রমহিলা অনেক চেষ্টা করলেন আইসক্রিম খাওয়ানোর জন্য।কিন্তু আমি আর থাকিনি।দ্রুত সেখান থেকে চলে এসেছিলাম।

    ১৪

    স্টলে ডিউটি করতে তখন ভালোই লাগত।মন সবসময় ফুরফুরে থাকত।কোনো কাস্টমার এসে দুর্ব্যবহার করলে রাগি না,ব্যথিত হই না।আবার তারা যে ছাড় চায়,সেটাও দেই না।বস আমার কয়েকদিন চালচলন দেখে একদিন জিজ্ঞাসা করলেন-কি?তুমিও জুটি বেধেছো?
    আমি উত্তর না দিয়ে হাসলাম।বসও হাসলেন।শেষে উন্মাদ থেকে বের হওয়া একটা রম্যের বই উনি সুরভির জন্য গিফট হিসেবে দিলেন।
    স্টলের কাছাকাছি প্রায়ই দেখতাম একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে।সে স্টলের পাশের গেটে দাঁড়িয়ে উসখুস করতো।আমি মজা নিয়েই তাকিয়ে থাকতাম।সে অস্বস্তি বোধ করতো।মেলায় সে যে প্রতিদিন আসতো তা না,তবে যখন আসতো সে ঘুরেফিরে উন্মাদ স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো।একদিন আর লোভ সামলাতে পারলাম না।নিজের থেকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-আপনি সবসময় এই গেটের এখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?
    ছেলেটি বিব্রত বোধ করলো।বারবার হাত নিজের চুলে বুলিয়ে এলোমেলো করে ফেললো।শেষে আস্তে আস্তে একটা ফালতু কথা বলল-চা খাবেন?
    ভীষণ রাগ হলো।কিন্তু মাঝে মাঝে রাগ করতে গেলেই একটা ঘটনা মনে পড়ে।আমি তখন সুনামগঞ্জের স্কুলে পড়ি।অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাবা আমাকে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিলেন।বাবার ঐদিন অনেক মেজাজ খারাপ।ভাইদের সাথে মামলায় তার হারার চান্স বেশি।ডাক্তার দেখানোর পর বাবা হসপিটালের নিচের ফার্মেসিতে মেডিসিন নিতে গেলেন।ট্যাবলেটের পাতা বাবা চাইলেন তিন পাতা কিন্তু ওষুধ বিক্রেতা দিলো এক পাতা।আর নেই।বাবা রাগে সেই পাতা বিক্রেতার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরেছিলেন।বিক্রেতা কিছুই বলেননি,তার চাহনিই যথেষ্ট ছিলো।
    সেই থেকে কারোর সাথে দুর্ব্যবহার করতে গেলে ঐ ওষুধ বিক্রেতার কথা মনে পড়ে।
    আমি শান্তভাবে বললাম- না,আপনি প্রায়ই এখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?বই কিনবেন উন্মাদ থেকে?কিনতে চাইলে কিনুন না।
    ছেলেটি প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়লো।পরে আমতা আমতা করে বলল-আমি আসলে আসি আপনার সাথের ছেলেটির জন্য।
    -শোয়েব ভাইয়ের জন্য?
    -জি।
    -ও,আপনি বুঝি ওনার বন্ধু?
    আবার তার অস্বস্তি হলো।এরপরে আবার বলল-না ও আসলে আমাকে ভালোভাবে চিনে না।আমরা একই ভার্সিটিতে পড়ি।আলাদা ডিপার্টমেন্ট।
    আমি বললাম-তো আসুন না।কথা বলুন।পরিচিত হন।
    আমার জোরাজুরি ওনাকে আরো বিব্রত করে দিলো।উনি দ্রুত আমার থেকে বিদায় ছুটে গেট থেকে বেরিয়ে গেলেন।
    এরপরে কিছুদিন দেখা নেই।এর মাঝেই হঠাৎ একদিন তমা মেলায় এলো।আমাকে একটুও জানায় নি।আমি মেলায় কাজ করছি,এমনে সময়ে ম্যাসেঞ্জারে দেখলাম ও ছবি পাঠিয়েছে।দেখলাম,এটা আমারই ছবি।পিছন থেকে তোলা।আমি সাথে সাথে স্টল থেকে বের হয়ে ওকে খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু খুঁজে পেলাম না।হঠাৎ আবার ম্যাসেজ পেলাম।ম্যাসেজে লেখা-"পিছনে তাকাও"।
    পিছনে তাকিয়েই দেখলাম তমা দাঁড়ানো।সাথে ওর চাচাতো বোন।আমার আর কোনো কিছুতে খেয়াল নেই।আমি মুগ্ধ হয়ে তমাকে দেখছি।ও বলেছিলো আমার সামনে কখনো আসবে না,অথচ নিজেই এসে উপস্থিত।
    আমাকে কিছু বলতে না দেখে তমা বলল-কি হলো?
    -তুমি…….
    আমরা দুজন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছি।এসময়ে ওর বোন নীরবতা ভাঙলো।
    আমি ওকে অনেক অনুরোধ করলাম বসের সাথে দেখা করতে।কিন্তু ও রাজি হলো না।মেলায় ১০ মিনিটের বেশি থাকলো না।
    চলে যাবার সময়ে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল।আমি কাঁদছিলাম।অথচ তমা/অর্ণা দেখলো না।

    এর কিছুদিন পর সুরভি জানালো,ও মেলায় আসবে। আমি যেন অপেক্ষা করি।বেশ খুশিই হলাম।মেলায় টানা থাকতে থাকতে একঘেয়েমি লাগছিলো।
    সেদিন সকাল থেকেই আমি ওর অপেক্ষায় ছিলাম।গেটের কাছে যখন ওকে দেখলাম,তখনই ফোন কল এলো।ফোন ধরতেই তমা বলল-এই আমি মেলায় আসছি।
    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম-তুমিও আসবে?
    -আমিও মানে?আরেকজন কে?
    আমি বললাম-সুরভিও মেলায় এসেছে।
    তমা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল।তারপর বলল-আমি আজকে শাড়ি পরেছি।
    আমি আর কথা না বলে ফোন কেটে দিলাম।সুরভি আমার দিকে এগিয়ে আসলো।আমি মুখে জোর করে হাসি আনলাম।ওর গায়ে কলেজ ড্রেস।সাথে অন্যান্য বন্ধবীও ছিলো কিন্তু ওরা চলে গেছে।আমি সুরভিকে বললাম-হাত দাও, হাত ধরি।
    সুরভি অবাক হয়ে বলল-কেন?
    -ওমা,হাত ধরে হাঁটবো না?
    সুরভি মাথা নিচু করে বলল-এখনো সময় হয়নি।
    একটু দমে গেলাম।এ ধরনের উক্তি কখনো ছেলেদের জন্য শুভ হয় না।
    স্টল থেকে কিছুক্ষণের জন্য ছুটি নিয়ে সুরভির সাথে ঘুরতে লাগলাম।সুরভি কিছু বই কিনলো।সাদাত মান্টোর নতুন অনুবাদ বের করেছেন জাভেদ হুসেন নামে একজন লেখক।ওকে বললাম বইটা কিনতে।
    বেড়াবার একটা মুহুর্তে দেখলাম আমার সামনে তমা,সাথে ওর সেই চাচাতো বোন।দুজনই লাল শাড়ি পরেছে।কিন্তু তমার কপালে একটা মাঝারি আকারের টিপ।আমি মুগ্ধ হয়ে তমাকে দেখতে লাগলাম।সেদিন মনে হলো শ্যামলা বলেই ওকে বেশি সুন্দর লাগছে।কতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম জানি না,সুরভি আমাকে ঠোকা দিয়ে বলল-কি হয়েছে?
    এর মাঝেই আমার সামনে তমা উপস্থিত হলো।আমি সুরভির সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।সুরভি দেখলাম সব স্বাভাবিকভাবেই নিলো।তবে আমি সামান্য বিব্রত ছিলাম।তমা এটা বুঝতে পেরে বিদায় নিয়ে আবার বেড়াতে লাগলো।
    সুরভির দেরি হয়ে যাচ্ছে।ওকে যেতে হবে।যাবার সময়ে আমি বললাম-This is not fair.
    সুরভি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো।আমি বললাম-দেখ,আমি তোমাকে জোর করি না কিছুতেই।তোমাকে যত ধরনের কম্ফোর্ট দেওয়া দরকার আমি দিচ্ছি।তাও কেন তুমি আমাকে সুযোগ দিচ্ছো না?
    বলে আমি চুপচাপ হাঁটতে লাগলাম।তখন হঠাৎ সুরভি বলল-সুযোগ না দিলে তোমাকে আমি দেখতে আসি?
    আমি স্টলের সামনে চলে এসেছিলাম তাই ওকে আর কিছু বলতে পারলাম না।ও চলে যাবার সময়ে পিছন থেকে চেঁচিয়ে বললাম-সাবধানে যেয়ো।
    ও পিছনে তাকিয়ে হাসলো।
    স্টলে ঢুকেই আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।কত পাঠক এসেছে বই কিনতে,আমরা স্টল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম।স্টলের সেলসম্যানদের চার হাত। এক হাতে বই প্যাক করে,দ্বিতীয় হাতে টাকা নেয়,তৃতীয় হাতে বই প্যাকেট করে পাঠককে দেয়,চতুর্থ হাতে বাড়তি টাকা ফেরত দেয়।
    কাজে ব্যস্ততার মাঝেই খেয়াল করলাম,তমা স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।ও এখনো চলে যায়নি,এটা দেখে খারাপ লাগলো।আমি এতই ব্যস্ত যে ওকে নিয়ে বেড়াবার সময় নেই।তবুও অনেক বলে স্টল থেকে বের হয়ে ওর কাছে গেলাম।তখন পাক্কা দুপুর।বললাম-লাঞ্চ করবে?আমাদের এক্সট্রা খাবার আছে।
    ও রাজি হলো না।আবার বললাম-আজ এখানে যে?
    -আমার বড় বোনের সাথে বেড়াতে এসেছিলাম।আরো অনেকে আছে।
    আমার ভালো লাগছিলো না।আমি সোজাসাপ্টা ওকে প্রশ্ন করলাম-তমা,তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
    তমা হাসলো।এই ধরনের হাসি হলো প্রত্যাখানের হাসি।এগুলো খুব নিষ্ঠুর হয়।ও আমার চোখের দিকে অনিমেষ দৃষ্টিতে বলল-না।
    আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম।বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে।তবুও হার মানলাম না।আমি ওকে বললাম-ভালোবাসো না প্রমাণ দাও।আমার হাত ধরে বলো।
    তমা একটুও ঘাবড়ালো না।নিজেই আমার হাত ধরে বলল-তাবি,আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
    আমি হাত সরিয়ে বললাম -তোমার বোন তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।তুমি বরং আজ যাও।
    তমা এই কথাটাই হয়ত শুনতে চাচ্ছিলো।বলল-আসি।
    বলে চলে যেতে লাগলো।পিছন থেকে স্পষ্ট পিঠ দেখা যাচ্ছে।আমি ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিলাম।তমা একবারো পিছনে ফিরে তাকালো না।একবারো না।

    ১৫

    কিছু কিছু সকাল আসে যেদিন আমি খুব অন্যমনস্ক থাকি।জীবনটার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মায়।মনে হয়,আমাকে বানিয়ে আল্লাহ মাটির অপচয় করেছেন।ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে ধর্মের টিচারের কাছে শুনেছিলাম মাটি দ্বারা মানুষ বানানো হবে শুনে মাটিরা দুঃখে কেঁদেছিলো।মানুষের পাপের কারণে অসহায় মাটিরও আগুনে পুড়তে হবে।
    সেদিন সকালে হঠাৎ একটা ফোনকল এলো।কলটা সুরভির।ধরতেই বুঝলাম ও কাঁদছে।কম্পিত গলায় বলেছিল-হাসান,তুমি আসলেই আমাকে ভালোবাসো?
    আমি বলেছিলাম-হ্যাঁঁ।
    -আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে নাতো?
    -না।
    তখন হাসির শব্দ এলো।অথচ আমি হাসতে পারছি না।গত রাতে বুঝলাম আমি আসলে তমাকে ভালোবাসি।কিন্ত ও আমাকে সঙ্গ দিবে না।তাই সুরভির কাছে হার মানলাম।
    তমা শুনে বলেছিলো- congratulations.
    -হু।
    -ওকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেয়ো।
    -হু।
    -কিছু গিফট দিয়ো।
    -হু।
    -খালি "হু" বলছো কেন?
    আমার মনের মধ্যে তখন কত প্রশ্ন।অথচ তমাকে কিছুই বলতে পারছিলাম না।ওর বুঝা উচিত আমি সুরভির চেয়েও বেশি দুর্বল ওর প্রতি।ও বললে আমি সুরভির থেকে দূরে সরে যাব।অথচ তমা মুখ ফুটে কিছু বলে না।

    মেলায়ও সেদিন ভালো লাগছিলো না।আগে কিছু কাস্টমারদের সাথে আমার স্থূল দেহ নিয়ে সূক্ষ্ম রসিকতা করতাম,সেদিন তাও করছি না।চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছি এমন সময়ে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক এসে বলল-আপনার বাবা কি খুব বিখ্যাত?
    আমি চারপাশে তাকালাম।কই আমার বাবা তো নেই।উনি জানেনই না আমি এসব করছি।আমি ভুরু কুঁচকে বললাম-আপনি কার কথা বলছেন?
    ভদ্রলোক তখন বসের দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন-উনি আপনার বাবা নন?
    আমি হেসে ফেললাম।মেলায় এরকম বহুবার হলো।সবাই মনে করছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কার্টুনিস্ট আর রম্যলেখক আমার পিতা।ওনার চেহারার সাথে আমার বলে আশ্চর্য মিল আছে।আমি ভদ্রলোককে বললাম-জি না,উনি আমার বস।
    ভদ্রলোক বিভ্রান্ত হয়ে বললেন-ওহ সরি।কিছু মনে করবেন না।
    আমি হাসিমুখে বললাম-আপনার আগে আরো পাঁচজন এই কথা বলেছে।
    ভদ্রলোকও এবার হেসে বললেন-তাই নাকি?তাহলে আপনি ওনার চেয়ে পাঁচগুণ বিখ্যাত হবেন।
    কথাটা বুকে খুব লাগলো।পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম উনি ঢাকা কলেজের বাংলা শিক্ষক।ছোটবেলা থেকেই উন্মাদ পড়েন।
    এই গল্পটা বসকে বলতেই বস হেসে বলেছিলেন-আমার কিন্তু শুধু এক মেয়ে।
    অন্যসবাইকে এই গল্প বলার পর কেউ পাত্তাই দিলো না।কেন দিবে?এই গল্প তেমন কিছুই নয়।
    শোয়েব ভাইয়ের ভার্সিটির ছেলেটি আর আসে না।আমি বহুবার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছি।কেউই আসেনি।চিন্তা হয় প্রচণ্ড।পরেই আবার ভাবি,এই ছেলের জন্য এত চিন্তা হবার কি আছে।নিশ্চয়ই কোনো কাজে ব্যস্ত,কিংবা এখন অন্য ছেলের জন্য অন্য জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

    কিছুরাত আগে ফিরবার সময়ে দেখি গেটের সামনে নেওয়াজের বাপ দাঁড়িয়ে আছেন।তাকে দেখে খুব ভালো লাগলো।এই মানুষটার সাথে আমাদের পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই,অথচ প্রচণ্ড মায়ায় উনি আমাদের সব কাজ করে দেন।গুদামের টিন ভালোমতো পৌঁছে দেওয়া,ছোটবেলায় আমাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া,মার ওষুধের প্যাকেজ নিয়ে আসা,বাবা হসপিটালে ভর্তি দেখে বাজার করা-সব উনি করতেন।এসবের মাঝেও উনি নিজের সংসার দেখেন,সাথে তার মেয়ের সংসারও দেখেন।মেয়ের স্বামী ছয়টা বাচ্চা হবার পর কোথায় নিরুদ্দেশ হয়েছে কে জানে।নেওয়াজের বাপ ঘানি টানতে টানতে অস্থির।বস্তিতেও থাকতে পারছেন না কারণ শহরবাসীরা ঠিক করেছে বস্তি নষ্ট করে দিবে।তার নাতীরা চুরি করে,বিল্ডিংয়ের সিঁড়িতে বাথরুম করে নোংরা করে।একা উনি কত সামলাবেন।আমি যখন ঢাকায় চলে আসি সেদিন আমার সাথে উনি দেখা করতে আসেন।হাঁটতে পারছিলেন না,খুড়াচ্ছিলেন।আমাকে দেখে বললেন-কিছু না বাজান।এই ঘা হইসে।ডায়বেটিস আছে তো,তাই সারতেসে না।
    ঢাকায় আসার পর শুনলাম ঘা আরো বেড়েছে।তাই বাবা ওনাকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন চিকিৎসার জন্য।
    নেওয়াজের বাপ আমাকে জড়িয়ে ধরে সেরাতে অনেক কাঁদলেন।বারবার বললেন-বাজান,যত কষ্টই হোক,মরতে ইচ্ছা করে না।
    পরে উনি হসপিটালে ভর্তি হলেন।গ্যাংগ্রিন ধরা পড়লো।
    কিছুদিন পর দ্রুত কলেজ থেকে ফিরে মেলার স্টলে বসব দেখে বের হচ্ছি,দেখি গেটে ওনার ছোটভাই দাঁড়ানো।আমাকে দেখে বললেন-নেওয়াজের বাপ আফনারে দেখবার চায়।
    সেদিন আর সময় ছিলো না দেখে বললাম পরে যাব।মেলায় স্টলে বসে প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।ওদিকে বারবার মোবাইল বাজচ্ছে কিন্তু ধরতে পারছি না।বিকেলের দিকে লোকজন একটু কমলে কলব্যাক করলাম।নেওয়াজের বাপের ভাই ফোন ধরে কান্নামাখা গলায় বলল-বাজান,উনি মইরা গেসেন।
    আমি নির্বিকারভাবে বললাম-আচ্ছা।
    এরপরে আবার ব্যস্ত হয়ে গেলাম।কিছুই মনে ছিল না।মেলার মাঝে উন্মাদের এক পুরনো লেখক একগাদা খাবার নিয়ে এলেন।আমরা সবাই হাসি-তামাশা করতে করতে তা খেলাম।
    স্টল বন্ধ করে রাতে যখন ফিরছি, সুরভির কল এলো।সুরভির ফোন ধরতেই খেয়াল করলাম আমার গলা ভেঙে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমি আর পারলাম না।হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম।সুরভি বারবার ফোনে বলছিলো-এই কি হয়েছে?হ্যালো!হাসান…….
    আমার বারবার বলতে ইচ্ছা করছিলো-সুরভি,আমি তমাকে ভালোবাসি।আমাকে ক্ষমা করো।
    কিন্তু পারলাম না।নিঃসঙ্গ থাকার অভিশাপ আর নিতে পারছিলাম না।
    রাতে ফেরবার সময়ে হোস্টেল গেটের সামনে দেখলাম নেওয়াজের বাপ এর ভাই দাঁড়ানো।আমাকে দেখে বললেন-একটু ফর জানাযা।আননে যাইবেন?
    আমি বিনা দ্বিধায় বললাম-না।
    ভদ্রলোক আর কোনো কথা বললেন না।নিঃশব্দে চলে গেলেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • ধারাবাহিক | ২৮ জুন ২০২০ | ৩৮৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ০১ জুলাই ২০২০ ১২:০৮94790
  • এই পর্বে চার নোক্তা

    *পাহাড়ি গাইডের বিকৃত যৌনতায় বিবমিষা লেগেছে। রোয়াংছড়ি পর্ব প্রকৃতির বর্ণনা দাবি করে।

    *কিশোর বিদ্রোহে হেলমেট লীগের নাম সরাসরি না দেওয়াই বোধহয়  ভাল।     

    *টিন এজ প্রেম কৌতুহল জাগায়। তমা/অর্ণা নাম বিভ্রাট বিভ্রান্তি তৈরি করে।    

    *পুরো লেখাটি খুব আঁটসাঁট, এর রিপোর্টাজ ধাঁচ হোঁচট খাওয়ায়, তবে এটাই হয়তো লেখকের স্টাইল।             

    আরো লিখুন। শুভ কামনা   

  • Hasan Mostafiz | ০১ জুলাই ২০২০ ১৬:২৪94794
  • বিপ্লব রহমান

    রোয়াংছড়ি প্রকৃতির বর্ণনা দাবি করলেও আপনি যেহেতু পূর্ববর্তী অংশ পড়েছেন আপনি খেয়াল অবশ্যই করেছেন আমি প্রাকৃতিক বর্ণনা সবদিক দিয়ে বর্জন করেছি।তাই এটা সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া।

    আর নাম বিভ্রাটটা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন কিন্তু আমি এটা উপন্যাসের একটা অনিবার্য অংশই বলব।

    আর শেষ কথার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।অবশেষে একজনকে পাওয়া গেল যিনি আমার লেখার স্টাইল বুঝেছে।

    শুভকামনা আপনাকে।      

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন