এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  অপর বাংলা

  • মারণাস্ত্র সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়....

    বিপ্লব রহমান লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ০৪ জুন ২০২০ | ২৩৬২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)

  • রাত্তির ঘন হলে জমে উঠতে থাকে শব…


    “রাত্তির ঘন হলে জমে উঠতে থাকে শব - দুদিন আগেই বর্জন করেছিলে যাকে, সেই প্লাস্টিক ব্যাগ তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রেখেছে - প্রিয়জন ঘরে বন্দী - রাষ্ট্রীয় রক্ষীর সাথে ভ্যানে চড়ে চলেছ এমন দূরে, আর ফিরে আসা নেই - সে এক সময় যা ধকল গিয়েছে, চুপ করে বসে মনে পড়ে আর?”…(বিষাণ বসু)


    বাংলাদেশে বেড়েই চলছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৫ জন মারা গেছেন। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৪২৩ জন।


    এ নিয়ে এদেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮১ জন। আর মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৫৬৩ জন।


    সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে (৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান। দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন নিউজ বুলেটিনে এসব কথা জানান তিনি।


    আক্রান্তের দিক থেকে রেড জোন হচ্ছে, ঘন বসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকা, রাজধানীর উপকণ্ঠ নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা।   


    এদিকে, সরকারের ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে জনিয়েছেন, কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা শনাক্তের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি!


    স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সপ্তাহের নিউজ বুলেটিন পর্যবেক্ষণ করো দেখা যায়, মোট  নমুনা পরীক্ষায় শতকরা ২০-২৫ ভাগ জন করোনা আক্রান্ত। তার মানে, নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে রোগীর সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আরো বেশি বাড়বে। সরকারের নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা প্রতিদিন ৩০ হাজার। অথচ এই সক্ষমতার অর্ধেকও এখনো কার্যকর করা যায়নি।


    বেসরকারি হিসেবে বরাবরই ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। সংবাদ বিশ্লেষণ বলছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগি মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগই আক্রান্ত ছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃতদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সৎকার করা হচ্ছে। খবরে প্রকাশ, লাশ দাফন ও দাহ করা নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে জনসাধারণ বাধ সাধছেন। মৃতদেহ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমন শংকায় সামাজিক কররস্থান ও শাশ্মানে মরদেহ সৎকারে আপত্তি। এসব ক্ষেত্রে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।


    স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বাংলাদেশে জুন-জুলাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার চূড়ান্ত সময়।


    অস্ত্র মাত্রেই সর্বদা দৃশ্যমান হবে, এমন তো নয়…


    “এমনি করেই মুখোশ বেঁধে আমরা খেতে বসলাম রেস্তোরাঁয় - আর ওয়েটার দস্তানার আড়াল থেকে বের করে আনল মেন্যুকার্ড - মনে পড়ে, তুমি ভয় পেয়ে গেছিলে, কেননা এমন দস্তানার আড়াল থেকে হামেশাই ঝলসে ওঠে ছুরি - আর এই আড়াই মাস ধরে আর কিছু না হোক, ওর'ম সিনেমা তুমি দেখে ফেলেছ হাজার।


    অথচ, অস্ত্র মাত্রেই সর্বদা দৃশ্যমান হবে, এমন তো নয়। তুমি তো জানতেই, লুকিয়ে থাকা মারণাস্ত্রের খোঁজে ঘটে গিয়েছে আস্ত যুদ্ধ সব - ঠিকই, সেসব মিথ্যে ছলনা - তবু, তার পরেও ভেবেছিলে, অস্ত্র যখন চোখে পড়ছে না, অত ভয়ের কিছু নেই। ব্রতকথার শেষে ছোলাটুকু ভিজছিল স্যাভলনের জলে - ছোলা বেড়ে উঠছিল স্যাভলনে আর তোমার নিশ্চিন্ততায় - সে এক দেখার মত ঘটনা বটে!!” (বিষাণ)  


    এরকম একটি পরিস্থিতিতে টানা ৬৬ দিনের লকডাউন শেষে গত ৩১ মে থেকে “স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে” সরকারি-বেসরকারি অফিস, গণপরিবহন, দোকান-পাট, হাট-বাজারসহ সকল কিছু খুলে দেওয়া হলো।


    “সীমিত পরিসরে” গণপরিবহন চালুর খেসারত হিসেবে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আন্তঃজেলা ও লোকাল বাস-মিনিবাসে শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে! এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। সারাবিশ্বে যখন জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন, তখন জ্বালানি তেলের সঙ্গে বাস ভাড়া সমন্বয় না করে পরিবহনের চাঁদাবাজ মালিক-নেতা-শ্রমিক চক্রকে খুশী রাখতে যেন সাধারণ মানুষের পকেট কাটার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যারা দুমাসের কর্মহীনতায় অধিকাংশই নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়েছেন।


    বলাই বাহুল্য,  “স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে”  চালু অফিস ও পরিবহন ব্যবস্থার তথৈবচ অবস্থা। বাস-মিনিবাসে আসন সংখ্যার অর্ধেক নিয়ে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়ায় যান চলার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুন। খোদ রাজধানীসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাসে ওঠানামার ক্ষেত্রে মোটেই সামাজিক দূরত্ব বা নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই!


    ওদিকে লঞ্চে ভাড়া না বাড়লেও ডেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে গাদাগাদি করে। লঞ্চ মালিকরা বলছেন, দুমাস লকডাউনের পর পরিবহন খাতের ক্ষতি পূষিয়ে নিতে এছাড়া তাদের উপায় নেই! আর এসব অরাজকতা দেখারও যেন কেউ নেই।


    এ পরিস্থিতিতে গত চারদিন সরেজমিনে খোদ রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে, ব্যাংক, কুরিয়ার, দোকান-পাট, রাস্তাঘাট ইত্যাদিতে মোটেই মানা হচ্ছে না নূন্যতম স্বাস্থ্যবিধি। অর্ধেকের বেশি গ্রাহক, পথচারি, দোকানী, অফিস কর্মী, হকার, রিকশাওয়ালা, সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালক মাস্কও ব্যবহার করছেন না! লকডাউন তুলে নেওয়ার ঘোষণায়, দেশ যেন নতুন করে স্বাধীন হয়েছে, এমন ভাব। আর মাস্ক না ব্যবহারের পক্ষে কুযুক্তিরও অভাব নেই। অলি-আল্লাহর দেশ বলে কথা! এসব দেখাও যেন কেউ নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে দায়সারা মাইকিং চলছে অবশ্য। শিথিল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অরাজক যানজট পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই ঢাকার বাংলামোটরে বাস চাপায় মারা গেছেন দুই মোটরসাইল আরোহী!



    ভুতের পা উল্টো দিকে…


    “তার আগেই অবশ্য আমরা দেখেছি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে মানুষ - আর পুলিশ তাদের তাড়া করেছে। তখন রেললাইন দিয়ে হেঁটে চলেছে মানুষ - ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে লাইনেই - রেলগাড়ি এসে তাদের চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে। প্রখর রৌদ্র এড়িয়ে যখন রাত্তিরকে বেছে নিয়েছে বাড়ি ফিরবে বলে - নাইট কার্ফ্যু জারি করে দেওয়া গিয়েছে দিব্যি।


    বিরক্ত লাগছিল, সিরিয়াসলি, একঘেয়ে লাগছিল - রেললাইনে ছড়িয়ে থাকা রুটি - রেলস্টেশনে মৃতা মায়ের শরীর ধরে ঝাঁকাতে থাকা শিশু - ওই রেলের গাড়ি, ওই স্টেশন ধরেই কতবার ছুটে গিয়েছি স্বপ্নের দেশে - তখনও তো এরা ছিল, এই দেশে, এই আমাদেরই আশেপাশে - জানতেও পারিনি।” (বিষাণ)   


    বিশ্বের দেশে দেশে দেখা গেছে, করোনা মৃত্যু ও সংক্রমণ কমতে থাকলে, রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নিতে। এ পর্যন্ত কোনো দেশই সংক্রমণের চূড়ান্ত সময়ে লকডাউন তুলে নিয়ে মহামারীকে স্বাগত জানায়নি। এ দিক থেকে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। ম্যালথাসিয় তত্ত্বের সঠিক প্রয়োগে জনসংখ্যা হ্রাসের এ হেন প্রক্রিয়ায় আমার সোনার বাংলা উদাহরণ বটে! ভুতের পা নাকি উল্টো দিকে। আমরা বোধহয় সেই পা ধার করে এখন উল্টোদিকে যাত্রা করেছি।


    স্মরণ করা ভাল, এ দেশে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী গত ৮ মার্চ চিহ্নিত হওয়ার পর সংক্রমণরোধে যথাযথ লকডাউনের পরিবর্তে এখন পর্যন্ত ছয় দফায় রাষ্ট্রীয়ভাবে “সাধারণ ছুটি” ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দিলে রোগীর সংখ্যা দ্রুতই বাড়তে থাকে। এক মাসের মধ্যে রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। আবারো মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঈদ উপলক্ষে দোকান-পাট, কারখানা খোলা এবং অন্যান্য ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছেই। আর গণপরিবহন বন্ধ রেখে অন্তত দুদফায় পোশাক কারখানা খুলে দিয়ে হাজার হাজার পরিযায়ী নারী-পুরুষ শ্রমিককে চৈত্র মাসের খর রোদের ভেতর শত শত মাইল হাঁটিয়ে এনে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে! এই শ্রমিক নির্যাতনের বিচার তো দূরের কথা, এর কী কোনো কৈফিয়ৎ নাই?


    মহামারি মোকাবেলায় গঠিত “জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি”র পরামর্শ ছিল এ অবস্থায় আরো বেশি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু তাদের পরামর্শকে বিবেচনা না এনে “সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনায় এনে অর্থনীতি সচল” লকডাউন তুলে ফেলা কতটুকু আত্মঘাতি তা হয়তো নিকট ভবিষ্যতই বলতে পারে!


    তবে সরকার পক্ষের যুক্তিও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষকে তো বাঁচাতে হবে। সচল করতে হবে অর্থনীতির চাকা।



    তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরাজমান করোনা পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার কোনো রকম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা কৌশল ছাড়া লকডাউন তুলে ফেলার ফলে সংক্রমনের ঝুঁকিসহ দীর্ঘমেয়াদে জীবন ও জীবিকার সংকটে শুধু দরিদ্র ও সাধারণ নাগরিকরাই পড়বেন না, বরং সার্বিকভাবে সকলকেই মহাবিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।


    আর এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশ থাকবে বিচ্ছিন্ন। এতে এই করোনা পরবর্তী অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও হারাবে।


    লকডাউন-লকআপ অথবা ভাইরাসের ভিতরে বসবাস…


    “তারও অনেক আগে, আমরা নিজেদের কথা স্যানিটাইজ করতে শিখেছিলাম। অর্থাৎ কী বললে ভালো শোনায়, কেমন মুখে কোন কথাটা বললে মানায় দিব্যি - কোনটি বলতে পারলে নিজের ক্ষতি নেই, এসবই ছিল আমাদের আজীবন শিক্ষাক্রমে। কাজেই, যখন হাত স্যানিটাইজ করতে বলা হল, ঘাবড়াই নি একেবারেই। এই তো সেদিনই হাসতে হাসতে বলছিলে, মুখটাকেই যখন আটকাতে পেরেছি, হাত তো নস্যি!!


    অতএব, আমরা হইহই করে বাসে চেপে বেরিয়ে এলাম জাদুঘর - ডোডোপাখির দিকে চোখ টিপে বললাম, সি ইউ দেন - চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জিটা আমাদের দেখে হইহই করে উঠল, মানুষ না দেখে দেখে বড্ডো ক্লান্ত ছিল সে-ও - ভিক্টোরিয়ার ঘাসগুলো বেড়ে উঠেছে অনেকটা এরই মধ্যে, বসতে গেলে একটু অস্বস্তিই হয় - সে হোক, আমাদের হাতে দস্তানা, মুখে ঢাকনা আঁটা।       


    আসলে, ভুলে গেছিলাম, মারণাস্ত্র সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়। (বিষাণ)”


    সরকারের কী সামর্থ নাই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ নিত্য আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে কার্যকর লকডাউন নিশ্চিত করার? এ সময় কী অতি জরুরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জরুরি জনসেবাভিত্তিক কর্মকাণ্ড বাদে সমস্ত অফিস-আদালত ও শ্রমঘন কারখানা বন্ধ রাখা যায় না? জানমালের স্বার্থে, যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় খাদ্য, ওষুধসহ জরুরি পণ্য পরিবহন বাদে সব আন্তঃজেলা পরিবহন ও গণপরিবহন বন্ধ করা খুব কী অসম্ভব?


    তবে পুনর্বার লকডাউন কার্যকর করার প্রধান শর্ত থাকে, সব কর্মহীন মানুষের ঘরে ঘরে খাবার ও নগদ অর্থ পৌঁছানো, সব কারখানার শ্রমিক, সরকারি-বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখা, যেকোনো ধরণের ছাটাই বন্ধ রাখা – ইত্যাদি।


    নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মকাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন, সাবমেরিন কেনা, মুজিব বর্ষ উৎযাপনে কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যয়ের (যদিও করোনা ক্রান্তিতে সব অনুষ্ঠান বাতিল) সরকারের কী আর দম নাই?


    জানি, প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তর নাই জানা।


    “আসলে, ভুলিয়ে দিয়েছিলে, মারণাস্ত্রের কথা সবসময় বলতে থাকলে শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়।


    আসলে, অনেক অনেক দিন ধরে দম আটকে বেঁচে থাকতে থাকতে সবাই ভয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল - আর ভয় ব্যাপারটা সংস্কারে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যা মানলেও হয়, আবার না মানলেও আধুনিকতার হাততালি মেলে।


    অতএব…রাত্তির ঘন হলে জমে উঠতে থাকে শব - দুদিন আগেই বর্জন করেছিলে যাকে, সেই প্লাস্টিক ব্যাগ তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রেখেছে - প্রিয়জন আর ঘরে বন্দী নয় - তবু রাষ্ট্রীয় রক্ষীর সাথে ভ্যানে চড়ে চলেছ এমন দূরে, আর ফিরে আসা নেই...” (বিষাণ)


    ______________________


    সংযুক্ত : করোনাকালে কয়েক সাংবাদিক সহকর্মীর প্রজেক্ট "তিতা মিঠা (হয়তো)"



    ~


    ছবি : শিল কড়ই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অমিতা চক্রবর্তী


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • অপর বাংলা | ০৪ জুন ২০২০ | ২৩৬২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চিরুনি - Rashmita Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রৌহিন | 2401:4900:314e:2e69:bc32:dbd1:333e:ca22 | ০৪ জুন ২০২০ ১৮:৫৬93999
  • পরিকল্পনা! হায়, ওদেশ এদেশ, কাঁটাতারের দুপারেই যা নেই তা হল পরিকল্পনা। কারণ যাদের কেন্দ্র করে পরিকল্পনা, তাদের অস্তিত্বই তো স্বীকার করতে চাইনা আমরা। চায় না রাষ্ট্র

  • Prativa Sarker | ০৪ জুন ২০২০ ১৯:০৪94000
  • মহতের বাক্য মিথ্যা হয় ন।। কাজী নজরুল যে বলে গেছিলেন একই বৃন্তে দুইটি কুসুম... একটি কুসুম বাংলাদেশ, আর একটি আমরা। একই অবস্থা এপার ওপারে।

  • ইশরাত তানিয়া | ০৪ জুন ২০২০ ২০:৩৫94001
  • সময়ের চমৎকার ডকুমেন্টাশান। অনেকগুলো বিষয় এসেছে প্রাসঙ্গিকভাবে। এপার ওপার জুড়ে দেখছি সমন্বয়হীন সব পরিকল্পনা। বিস্তারিত লেখার জন্য লেখকে ধন্যবাদ। 

  • একলহমা | ০৫ জুন ২০২০ ০০:১৮94005
  • কি মাইনকা চিপায় আটকা পড়ছি আমরা। সংবাদে, কবিতায়, গানে অসাধারণ এই প্রতিবেদন! কিন্তু এ ত উচ্ছাসের নয় - থম মেরেে যাওয়ার।!

  • বিপ্লব রহমান | ০৫ জুন ২০২০ ০৮:৩১94010
  • রৌহিন,  প্রতিভা দি, ইশরাত, 

    অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।  করোনা শহীদ না হলে একদিন জমিয়ে আড্ডা দেব। 

    একলহমা, 

    সত্যিই এক কঠিন  ফাঁদ।  বিনীত পাঠের জন্য ধন্যবাদ              

  • b | 14.139.196.11 | ০৫ জুন ২০২০ ০৮:৫৬94011
  • বিপ্লব, বিষানের পুরো লেখাটা কোথাও পাওয়া যাবে?
  • বিপ্লব রহমান | ০৫ জুন ২০২০ ০৯:২০94013
  • b, 

    লেখায় পুরো কবিতাটিই পরম্পরায় উদ্ধৃত করা হয়েছে।  তবু আপনার জন্য : 

     ~ 

    "রাত্তির ঘন হলে জমে উঠতে থাকে শব - দুদিন আগেই বর্জন করেছিলে যাকে, সেই প্লাস্টিক ব্যাগ তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রেখেছে - প্রিয়জন ঘরে বন্দী - রাষ্ট্রীয় রক্ষীর সাথে ভ্যানে চড়ে চলেছ এমন দূরে, আর ফিরে আসা নেই - সে এক সময় যা ধকল গিয়েছে, চুপ করে বসে মনে পড়ে আর?

    এমনি করেই মুখোশ বেঁধে আমরা খেতে বসলাম রেস্তোরাঁয় - আর ওয়েটার দস্তানার আড়াল থেকে বের করে আনল মেন্যুকার্ড - মনে পড়ে, তুমি ভয় পেয়ে গেছিলে, কেননা এমন দস্তানার আড়াল থেকে হামেশাই ঝলসে ওঠে ছুরি - আর এই আড়াই মাস ধরে আর কিছু না হোক, ওর'ম সিনেমা তুমি দেখে ফেলেছ হাজার।

    অথচ, অস্ত্র মাত্রেই সর্বদা দৃশ্যমান হবে, এমন তো নয়। তুমি তো জানতেই, লুকিয়ে থাকা মারণাস্ত্রের খোঁজে ঘটে গিয়েছে আস্ত যুদ্ধ সব - ঠিকই, সেসব মিথ্যে ছলনা - তবু, তার পরেও ভেবেছিলে, অস্ত্র যখন চোখে পড়ছে না, অত ভয়ের কিছু নেই। ব্রতকথার শেষে ছোলাটুকু ভিজছিল স্যাভলনের জলে - ছোলা বেড়ে উঠছিল স্যাভলনে আর তোমার নিশ্চিন্ততায় - সে এক দেখার মত ঘটনা বটে!!   

    তার আগেই অবশ্য আমরা দেখেছি রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে মানুষ - আর পুলিশ তাদের তাড়া করেছে। তখন রেললাইন দিয়ে হেঁটে চলেছে মানুষ - ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে লাইনেই - রেলগাড়ি এসে তাদের চাপা দিয়ে চলে গিয়েছে। প্রখর রৌদ্র এড়িয়ে যখন রাত্তিরকে বেছে নিয়েছে বাড়ি ফিরবে বলে - নাইট কার্ফ্যু জারি করে দেওয়া গিয়েছে দিব্যি।

    বিরক্ত লাগছিল, সিরিয়াসলি, একঘেয়ে লাগছিল - রেললাইনে ছড়িয়ে থাকা রুটি - রেলস্টেশনে মৃতা মায়ের শরীর ধরে ঝাঁকাতে থাকা শিশু - ওই রেলের গাড়ি, ওই স্টেশন ধরেই কতবার ছুটে গিয়েছি স্বপ্নের দেশে - তখনও তো এরা ছিল, এই দেশে, এই আমাদেরই আশেপাশে - জানতেও পারিনি।    

    তারও অনেক আগে, আমরা নিজেদের কথা স্যানিটাইজ করতে শিখেছিলাম। অর্থাৎ কী বললে ভালো শোনায়, কেমন মুখে কোন কথাটা বললে মানায় দিব্যি - কোনটি বলতে পারলে নিজের ক্ষতি নেই, এসবই ছিল আমাদের আজীবন শিক্ষাক্রমে। কাজেই, যখন হাত স্যানিটাইজ করতে বলা হল, ঘাবড়াই নি একেবারেই। এই তো সেদিনই হাসতে হাসতে বলছিলে, মুখটাকেই যখন আটকাতে পেরেছি, হাত তো নস্যি!!

    অতএব, আমরা হইহই করে বাসে চেপে বেরিয়ে এলাম জাদুঘর - ডোডোপাখির দিকে চোখ টিপে বললাম, সি ইউ দেন - চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জিটা আমাদের দেখে হইহই করে উঠল, মানুষ না দেখে দেখে বড্ডো ক্লান্ত ছিল সে-ও - ভিক্টোরিয়ার ঘাসগুলো বেড়ে উঠেছে অনেকটা এরই মধ্যে, বসতে গেলে একটু অস্বস্তিই হয় - সে হোক, আমাদের হাতে দস্তানা, মুখে ঢাকনা আঁটা।        

    আসলে, ভুলে গেছিলাম, মারণাস্ত্র সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়।

    আসলে, ভুলিয়ে দিয়েছিলে, মারণাস্ত্রের কথা সবসময় বলতে থাকলে শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়।

    আসলে, অনেক অনেক দিন ধরে দম আটকে বেঁচে থাকতে থাকতে সবাই ভয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল - আর ভয় ব্যাপারটা সংস্কারে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যা মানলেও হয়, আবার না মানলেও আধুনিকতার হাততালি মেলে। 

    অতএব…

    রাত্তির ঘন হলে জমে উঠতে থাকে শব - দুদিন আগেই বর্জন করেছিলে যাকে, সেই প্লাস্টিক ব্যাগ তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রেখেছে - প্রিয়জন আর ঘরে বন্দী নয় - তবু রাষ্ট্রীয় রক্ষীর সাথে ভ্যানে চড়ে চলেছ এমন দূরে, আর ফিরে আসা নেই..."

    বিষাণ বসু

  • b | 14.139.196.11 | ০৫ জুন ২০২০ ১০:৩২94017
  • ধন্যবাদ। আমি সোর্সটা জানতে চাইছিলাম। কোনো লিংক ইত্যাদি?
  • বিপ্লব রহমান | ০৫ জুন ২০২০ ১০:৫৩94018
  • b, 

    বিষাণ বসুর ফেসবুক টাইমলাইন কবিতাটি হুবহু পেয়ে যাবেন। আগ্রহের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ          

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:2199:c70d:6748:6229:c79:470a | ০৭ জুন ২০২০ ১৪:০২94077
  • আমার ওই লেখাটার পরিমার্জিত রূপ অপরজন ওয়েবজিনে প্রকাশিত।

    সেই লিঙ্কটা দেওয়া রইল -

    https://aparjan.com/2020/06/06/may2020-bibapr/

    আর বিপ্লববাবুকে অনেক ভালোবাসা, আমার ওই এলোমেলো লেখাটাকে ঘিরে এমন চমৎকার একখানা লেখার জন্যে।

    ❤❤
  • বিপ্লব রহমান | ০৭ জুন ২০২০ ১৭:১০94081
  • মান্যবর বিষাণ বসু, 

    আপনার শক্তিশালী কবিতার কারণেই লেখাটি হলো। অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন