এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • বিদ্যাসাগর

    Atanu Datta লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ৩০ এপ্রিল ২০২০ | ৩৫৩৩ বার পঠিত


  • দুপুর থেকেই শরীরে একটা অস্বস্তি ছিল কুমার বাবুর। একবার ভাবলেন আজ আর হাঁটতে যাবেন না। কিন্তু যতই সময় এগিয়ে আসতে থাকলো মনের ভেতরটা কেমন যেন আনচান করে উঠল। আসলে চা খাওয়া, খবর শোনার মত এটাও একটা নেশাতে দাঁড়িয়েছে আজকাল। না হাঁটলেই কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। খাবার যেন হজম হতে চায় না। ঘুমের সমস্যা হয়। তবে তার কতটা সত্যিই শারীরিক আর কতটা মানসিক তা নিয়ে অবশ্য নিজেরও একটু ধন্দ আছে ওনার।

    বিকেলের একটু আগে মনে হয় শরীরটা আগের থেকে ভাল। বেশি না ভেবে পাঞ্জাবিটা গলিয়ে, চুল আঁচড়ে মোবাইল আর কিছু টাকা পকেটে গুঁজে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় বৌমা জেগে থাকলে চা করে দেয়। তাতে শরীরটা একটু চাঙ্গা লাগে। আজও একটু খেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু বৌমা ঘুমোচ্ছে বলে ভাবেন ফিরে এসেই খাবেন। পার্কের পাশে একটা চায়ের দোকান আছে বটে, কিন্তু অত্যধিক চিনির জন্য খাওয়া মুশকিল।

    পার্কে পৌঁছেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কাল সন্ধেবেলা খবরটা শোনার পর থেকে এমনিতেই খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছেন। নিউজ দেখছিলেন, তখনই ভেসে ওঠে খবরটা। ভোটযুদ্ধের রাজনৈতিক ঝগড়ায় কারা যেন বিদ্যাসাগরের মুর্তি ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল নিশ্চয় কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। তারপর যখন বুঝলেন ঘটনাটা নিদারুণ ভাবে সত্যি, মনটা একদম খারাপ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত এরা বিদ্যাসাগরকেও ছাড়ল না। এমন এক মনিষী যিনি সারাটা জীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন, শেষ পর্যন্ত তাঁকেও? কাল ওই খবর দেখার পর আর টিভি দেখার মন হয় নি। শুয়ে ছিলেন গিয়ে নিজের ঘরে। খালি বিদ্যাসাগরের কথাই মনে পড়ছিল। প্রথম ওনার কথা বাবার মখে শুনেছিলেন। বিদ্যাসাগরের ছোটবেলার কথা। কষ্ট করে পড়ার কথা। মায়ের সাথে দেখা করার জন্য সাঁতরে দামোদর নদী পার হওয়া, আরো কত কি। পরে বড়ে হয়ে আরো অনেক কিছু জেনেছেন তাঁর জীবন সম্বন্ধে। যত জেনেছেন তত অবাক হয়েছেন। গর্ব হয়েছে তার চেয়ে বেশি। আর সেই মানুষটার মুর্তি কিনা... এই সব ভাবতে ভাবতে রাতে কাল বায়ু চড়ে গেছিল। ঘুম হয় নি মোটেই। আর সেই থেকে শরীরটায় একটা আই ঢাই ভাব। দুপুরের খাওয়া নাম মাত্র খেয়েছেন। এই এতক্ষণে হাঁটতে যেন একটু হালকা লাগে ওনার।

    এই পার্কটা পাড়ার শেষ দিকে। সাইজে একদম ছোট। দু খানা বট গাছ রয়েছে এক কোণে। তারই ডালপালায় প্রায় এক চতুর্থাংশ ঢাকা পড়েছে। বাকি অংশেও প্রচুর গাছ। পার্কের মাঝখানে একটা বহু পুরনো ভাঙা ফোয়ারা। সিমেন্টের গোল চৌবাচ্চার মত অংশটা ভেঙ্গে পড়েছে, ভেতরে জমেছে আবর্জনা। পার্কটার চারিদিকে ঘিরে রয়েছে একটা ওয়াকিং বা জগিং ট্র্যাক। খুব বেশী লোক আসে না এখানে। কিছুটা দূরেই একটা বড় পার্ক রয়েছে, ওখানেই যায়। শুধু কুমার বাবুর মত কিছু রেগুলার রয়েছেন তারাই আসেন।

    দু চক্কর হাঁটার পর হঠাৎ কুমার বাবুর বুকের ভেতর হালকা একটা চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয়। ভাবেন বোধহয় বেশী তাড়াতাড়ি হেঁটেছেন বলে। কাছেই যে বেঞ্চটা পান সেটায় বসে পড়েন। একটু আরাম হয় বসাতে। সুর্য ডুবে গেছে। অন্ধকার হব হব। ভাবেন একটু জিরিয়েই উঠবেন। বাড়ি যেতে হবে। আবার মনে হয় বাড়িতে গিয়েই বা করবেন কি। সেই তো একঘেয়ে জীবন। কুমার বাবু একজন অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। রিটায়ার করেছেন তাও নেই নেই করে প্রায় এগারো বছর হয়ে গেল। ছেলে বৌ নাতিকে নিয়ে ওনার এবং স্ত্রী নিরুপমার দিন খুব একটা মন্দ কাটছিল না। কিন্তু কপাল। বছর দুয়েক আগে অল্প কদিনের অসুস্থতায় নিরুপমা সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। তারপরেই একদম ভেঙ্গে পড়েন কুমার বাবু। বুড়িয়ে যান হঠাৎ করে। সংসারের ওপর থেকে সব মায়া ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে। এখন তো অভ্যেসে বেঁচে থাকা।

    শরীরটা একটু ভালো লাগায় এবার চারিদিকে তাকান কুমার বাবু। পার্কটা প্রায় সুনসান হয়ে এসেছে। কেউ আর চোখে পড়ে না। শুধু বেশ খানিকটা দূরে একটা অবয়ব নজরে আসে। সামনের একটা বেঞ্চে বসে, একদম টানটান হয়ে। গায়ে একটা চাদর জড়ানো, দু কাঁধের ওপর দিয়ে খুঁট পেছনে ফেলা। চেহারাটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগে। আচমকা চমকে ওঠেন। এতো বিদ্যাসাগর!

    বুকটা ধক ধক করতে থাকে। উঠে দাঁড়ান তিনি। আস্তে আস্তে এগোতে থাকেন লোকটার দিকে। যতই এগোন ওনার বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায় ইনিই বিদ্যাসাগর। আধো অন্ধকারে চোখে পড়ে সেই চেহারা, সেই মুখ। গায়েও সেই চাদর, পরনে ধুতি। ওনার এগিয়ে আসার শব্দে লোকটা ঘুরে তাকায় কুমার বাবুর দিকে। বুকের ব্যাথাটা বাড়ে। তারপরই তীব্র হয়ে ওঠে। ডান হাত দিয়ে বুকের কাছটা খামছে ধরেন কুমার বাবু। মাতালের মত এলো মেলো পা ফেলে এগিয়ে যেতে চান সামনের দিকে। পারেন না সামনে ঝুঁকে পড়তে পড়তে বোঝেন দুটো শক্ত সমর্থ হাত তাঁকে ধরে ফেলে সামলাচ্ছে পড়ার থেকে। অনেক কষ্টে তাকান একবার কুমার বাবু। দেখেন বিদ্যাসাগর তাকে জড়িয়ে ধরছেন বুকের ভেতরে। ভয়ঙ্কর ব্যাথার মধ্যেও এক অদ্ভুত শান্তিতে নিজেকে ছেড়ে দেন। মুখে বলে ওঠেন “বিদ্যাসাগর”। অজ্ঞান হয়ে যান তিনি।

    চোখ খুলতেই মুখের ওপর ছেলে আর বৌমার চিন্তিত মুখ নজর আসে। ওনাকে চোখ খুলতে দেখে দুজনে আশ্বস্ত হয়। বৌমা তো কেঁদেই ফেলে। বলে
    - এখন একটু ভালো লাগছে বাবা?

    কুমার বাবু মাথা নাড়েন। আস্তে আস্তে সব ঘটনা মনে পড়ে যায়। বিদ্যাসাগরের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ছেলেকে কিছু বলতে যান। ছেলে মানা করে। বলে ডাক্তারবাবু বারণ করেছে। বৌমা তাড়াতাড়ি একজন নার্সকে ডেকে নিয়ে আসে। নার্স একটা ইঞ্জেকশন দেয়। বলে মেসোমশাই ঘুমোন এখন। বিদ্যাসাগরের কথা ভাবতে ভাবতে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যান কুমার বাবু। কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি ঘুমিয়ে পড়েন।

    পরদিন সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগে। দেখেন হাতের চ্যানেল দিয়ে শরীরে স্যালাইন চলছে। একটু পরে ছেলে আসে। নাতি বৌমার কথা জিগ্যেস করে উনি ছেলেকে বলেন।

    - কাল আমাকে কে এখানে নিয়ে এসেছিল জানিস?
    - না তো। এরা বলল কোন এক গেঁয়ো মজুর টাইপের লোক নাকি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে গেছে এখানে।
    - আমি জানি, আমাকে বিদ্যাসাগর এখানে পৌঁছে দিয়ে গেছে।
    - বিদ্যাসাগর? কোন বিদ্যাসাগর? তোমার চেনা জানা কেউ?
    - না রে, ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর।

    কুমার বাবুর ছেলে অবাক চোখে তাকায় একবার বাবার দিকে, ভাবে অসুখে কি মাথাটাই গেল? তারপর বলে

    - বিদ্যাসাগর না ছাই। যে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, খুব উপকার করেছে মানছি, তোমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছে খুব সত্যি কথা। কিন্তু সে তার দাম উশুল করে নিয়ে গেছে।

    কিছু মাথায় ঢোকে না কুমার বাবুর। ছেলে বলে চলে

    - লোকটা তোমার আঙুল থেকে আঙটি দুটো, গলার চেনটা, মোবাইল, পকেটে যা টাকা ছিল এমন কি চশমাটা পর্যন্ত, সব ঝেড়ে নিয়ে গেছে।

    অবিশ্বাসের চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন কুমার বাবু। আমতা আমতা করে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেন না। নিজের খালি হাতের দিকে একবার শুধু নজরটা যায়। হঠাত করে আবার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়।

    - গুড মর্নিং, কেমন ফীল করছেন এখন।

    কুমার বাবু বোঝেন গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে ডাক্তার এসেছেন রাউন্ডে। ছেলে একটু পেছনে সরে যায়। রোগীর কেস শিটের ওপর চোখ বুলোতে বুলোতে ডাক্তার বলেন

    - বেশ বাজে অ্যাটাক ছিল এটা। ঠিক সময় এখানে পৌঁছে যাওয়াতে এবারের মত পার পেয়ে গেলেন। তবে এরপরে কিন্তু খুব সাবধানে থাকতে হবে। একদম নিয়ম মেনে। আপাতত আর একটা দিন অবজারভেশনে রাখবো। সব ঠিক থাকলে পরশু বাড়ি যাবেন। বাকি চিকিৎসা ওখান থেকেও চলতে পারে।

    এরপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন

    - ওষুধ ঠিকই চলছে। কাল যেগুলো এনেছিলেন সেই ওষুধগুলোই চলুক এখন।
    - ইয়ে, মানে কাল আমরা তো কোন ওষুধ এনে দিই নি, আপনারাই বোধ হয়…
    - না আমরা দিই নি তো... কাল আমিই প্রেসক্রিপশন লিখেছিলাম, এনার সাথে যে ছিল সে কোথায়। সেই তো নিয়ে এল ওষুধ সব। সিস্টারকে ডাকুন তো। কাল সন্ধেবেলা তো ওনারও ডিউটি ছিল।

    সিস্টার এসে বলে

    - কাল ওনাকে যে নিয়ে এসেছিল সেই লোকটাই তো ওষুধ পত্র সব কিনে এনে দেয় তখন। কেন লোকটাকে চেনেন না আপনারা?
    - না তো…
    - সে কি, কাল তো অনেক টাকা খরচা করেছে লোকটা। ক্যাবের ভাড়াও ওই মেটায়। চাদরের খুঁটে বাঁধা ছিল টাকা, তাই থেকে। আজকাল তো ওভাবে কেউ টাকা রাখে না, তাই মনে আছে।
    - কিন্তু কেন?
    - সেটা আমি কি করে জানব? আমরা তখন পেশেন্ট নিয়ে ব্যস্ত। আমি তো ভাবলাম নিশ্চয় আপনাদেরই চেনা জানা কেউ। যাকগে দেখুন আসবে ঠিক আপনাদের কাছে টাকা ফেরত নিতে। তবে কাল ঠিক সময়ে এনাকে যদি না আনতো তাহলে বাঁচানো মুশকিল ছিল।
    আর হ্যাঁ ওনার আঙটি, চেন, মোবাইল চশমা টাকা সব কাল ওই লোকটাই খুলে আমাদের কাছে জমা করে গেছে। আপনি ছেলে হন তো, এসে নিয়ে যান।

    কুমার বাবুর ছেলে নার্সের সাথে গিয়ে জিনিষ গুলো নিয়ে আসে। বাকি সব জিনিষের সাথে ভাঁজ করা ছেঁড়া খাতার দুটো পাতাও পায়। খুলে দেখে মুক্তোর মত হস্তাক্ষরে লেখা একটা চিঠি।

    চোখ বুলোতেই ছেলের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যেতে দেখেন কুমার বাবু। কিছু না বলে চিঠিটা এগিয়ে দেয় ছেলে বাবার দিকে। চশমা পরে চিঠিটা সামনে ধরেন উনি।

    “মহোদয়,

    আশা করি এই পত্র যখন আপনি পড়িবেন তখন আপনি সুস্থ। আপনাদের কিছু না জানাইয়া চলিয়া গেলাম, সেই কারণে ক্ষমাপ্রার্থী। হয়ত আপনারা আমাকে কৃতজ্ঞতা না জানাইতে পারিয়া দুঃখিত, ক্ষুব্ধ, এমন কি কুপিতও হইতে পারেন। এবং ঠিক সেই কারণেই এই পত্রের আবশ্যকতা।

    অধমের নাম শ্রী ঈশ্বর চন্দ্র চক্রবর্তী। মেদিনীপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের গরীব ব্রাহ্মণ। পূর্বে শিক্ষকতা এবং অতি অল্প পরিমাণ চাষযোগ্য জমি থাকায় কৃষিকর্ম করিয়া দিবস অতিবাহিত করিতাম। পরিবার বহু পূর্বেই ভগবানের শ্রী চরণে ঠাঁই পাইয়াছেন। একই পুত্র, সে শিক্ষা শেষে কলিকাতা শহরে আসিয়া উপার্জন শুরু করে। সময় কালে নিজেই বিবাহও করে। তাহাতে আমিও কোন আপত্তি করি নাই। একাই ভালো কাটিতেছিল। একদিন পুত্র বধুমাতা সহিত আসিয়া বলিল, তাহার কিছু অর্থের প্রয়োজন। আমি গরীব ব্রাহ্মণ অর্থ কোথায় পাই কহিলে উহারা বলে আমার গ্রামের যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া আমি যেন কলিকাতা শহরে আসিয়া নির্ঝঞ্ঝাট জীবন যাপন করি। সেই প্ররোচনায় এবং পৌত্র সাহচর্যের লোভে আমিও কেবল পারিবারিক ভিটাটুকু ছাড়িয়া সকল বিক্রয় করিয়া কলিকাতায় আসি।

    তাহার পর দেখি উহাদের আসল রূপ। কিছু দিবস অতিক্রান্ত হইবার পর, বাস্তু ভবন কেন বিক্রয় করি নাই, তাহা বলিয়া, বধুমাতা ক্রমাগত প্রতিদিন যেন বেশি হিংস্র হইয়া উঠিতেছিল। পুত্র সব দেখিয়াও না দেখার ভান করিত। পৌত্র ধীরে ধীরে দূরে সরিয়া গেল। খাদ্য কোনদিন জুটিত কোনদিন উপবাস। তবুও সমস্ত অপমান সহ্য করিয়া পড়িয়া ছিলাম। উপায়ও কি ছিল? তবে সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গিল কাল। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে বধুমাতা আমার উপর হাত তুলিল। মস্তকে লাঠি দিয়া মারিল এবং ধাক্কা মারিয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল।

    আমি পার্কে আসিয়াছিলাম আত্মহননের উদ্দেশ্যে। বিষ ক্রয় করিয়াছিলাম প্রচুর পরিমাণে। এই দুইটি পাতা পৌত্রের খাতা হইতে ছিঁড়িয়া আনিয়াছিলাম শেষ ইচ্ছা ব্যক্ত করিবার হেতু। কিছু টাকা গোপনে লুকাইয়া রাখিয়াছিলাম, ভাবিয়াছিলাম আমার অন্ত্যেষ্টিতে কাজে লাগিবে। সেই লিখা শুরু করিবার মুহূর্তে আপনি আসিলেন। আমার উপর নিজের অসুস্থ শরীর সমর্পণ করিলেন। আমিও সব ভুলিয়া তৎপর হইলাম আপনাকে বাঁচাইবার জন্য।

    কাজেই বুঝিতেই পারিতেছেন, আমি আপনাকে বাঁচাই নাই, আপনি আমাকে বাঁচাইয়াছেন। হ্যাঁ, আমি আর আত্মহনন করিব না। ইহ জীবনে আর যাহাই হই কাপুরুষ হইব না। ফিরিয়া যাইব গ্রামে। দুস্থ শিশুদের পড়াইব, আর্তের সেবা করিব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলিব। আপনি কল্য অজ্ঞান হইবার পূর্বে বলিয়াছিলেন বিদ্যাসাগর। হ্যাঁ আমি বিদ্যাসাগর হইব।

    আমার অতি তুচ্ছ কিছু অর্থের জন্য ভাবিবেন না। আপনি আমাকে জীবন দিয়াছেন। আমি জীবনের অন্তিম দিবস অবধি সেই ঋণে ঋণী থাকিব। আপনার অতি শীঘ্র সুস্থতা এবং দীর্ঘ পরমায়ু কামনা করি।
    ভালো থাকিবেন

    ইতি
    বিনীত

    শ্রী ঈশ্বর চন্দ্র।
    (আমি অদ্য হইতে পদবী পরিহার করিলাম)"

    ====০০০০====
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ৩০ এপ্রিল ২০২০ | ৩৫৩৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Jharna Biswas | ৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৫৮92853
  • ভীষণ ভালো গল্প...অপরিচিত মানুষটির প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা... 

    পত্রটিও দারুন ভাবে লেখা... 

  • বিপ্লব রহমান | ৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৩৯92854
  • বেশ ভাল লেখা। চিঠিটিও সে সময়ের ভাষারীতিতে বেশ হয়েছে।  তবে দু-একটি খেদ রয়েছে। যথা :

    কুমার বাবুর বিদ্যাসাগরের অনেক অবদানের কথা মনে পড়লো, বর্ণপরিচায় লেখা ও বিধবা বিবাহের প্রচলন -- এই দুটি অন্যতম কথা মনে পড়লো না, এটি একটু কমতি বলে মনে হয়েছে। 

    আরেকটি বিষয়, মাতৃ আজ্ঞা পালনে বিদ্যাসাগরের দমোদর নদী সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি নাকি নিছকই গল্প-গাথা। এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন? 

    গল্পে বিদ্যাসাগরের ছবিটি বাহুল্য, অমুক তারিখে ফেসবুকে প্রকাশিত ঘোষণাটিও। এটি সম্পাদনা যোগ্য। এছাড়া বিভাগে "গপ্পো" যোগ করার পর শিরোনামে আবারো "গল্প" কথাটি জুড়ে দেওয়ার কোনোই দরকার নেই। 

    লেখককে হরিদাস পালে ম্বাগতম। ইচ্ছে হলে ডান দিকে ওপরে "ব্যবহারকারীর খুঁটিনাটি"তে গিয়ে নিজের নামটি বাংলায় করে নিতে পারেন। শুভ 

  • অতনু দত্ত | ০১ মে ২০২০ ০২:১৩92861
  • @ ঝর্ণাঃ অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।

    @ বিপ্লবঃ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যে ক'টি জিনিষ আপনি বলেছেন, প্রতিটির সাথেই সহমত। আসলে লেখার সময় একজন সাধারণ মানুষের মনে তাৎক্ষণিক কি প্রতিক্রিয়া আসতে পারে ওরকম একটা ঘটনার পরে, তাই মাথায় ছিল। হ্যাঁ তবুও ওই দুটো কথা উল্লেখ করা উচিৎ ছিল, লেখাটা যখন বিদ্যাসাগর নিয়ে। 

    দামোদর নদের ঘটনাটাও বোধ হয় গল্পই হবে, তবুও ছোটবেলায় শুনেছিলাম বাবার মুখে তাই মনে রয়ে গেছিল। গল্পেও সেভাবেই এসেছে। বাকি ভুলগুলো শুধরে নিলাম। শুধরে দেওয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ আপনাকে। আশা করি ভবিষ্যতেও এমনি করেই পাশে থাকবেন। 

  • একলহমা | ০১ মে ২০২০ ০২:৩৩92862
  • গল্প ভালো লেগেছে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন