এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্যাসেজ টু হেভেন (পর্ব-৩)

    Maskwaith Ahsan লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৯ জুন ২০১৫ | ১৫৩৭ বার পঠিত
  • পলিটিক্যাল প্রিভিউ
    হেভেনে সময় শান্তিতেই কাটে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যে লায়লা-মজনু, দেবদাস-পার্বতী, রোমিও- জুলিয়েটকে পুনর্মিলিত করেছেন; সেখানে নিত্যদিন খুটখাট লেগেই আছে। এদের প্রতিদিনের দাম্পত্য কলহ এমন একটা রূপ পরিগ্রহ করেছে যে; সৃষ্টিকর্তা রীতিমত ‘প্রেম’ বিষয়টি পুনর্ভাবনার প্রকল্প নিয়েছেন। গান্ধীজী এই প্রকল্প প্রধান। বিশেষজ্ঞ নিয়ে ভাবনা নেই; নেহেরু আছেন। বঙ্গবন্ধু এই কমিটিতে থাকতে রাজি হননি। বলেছেন, বরং কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে নিন। কবি মানুষ; এগুলো বোঝেন ভালো। লায়লা- পার্বতী- জুলিয়েটের পিতার নামের কাছে বঙ্গবন্ধু উনার নামটা লিখে দিতে বলেছেন। খবরটা শুনেই চিন্তায় পড়ে গেছেন তাজউদ্দীন, এরা তিনজনই তাহলে ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন করবে; এতো জানা কথা। এরকম ঘটনা একজন ঘটিয়েছে এরি মাঝে। বঙ্গবন্ধু বলেই দিয়েছেন, এদের যদি বনিবনা না হয় উজবুকগুলোর সঙ্গে; আমার বাড়ী পাঠিয়ে দিও; মেয়ের আদরে থাকবে। অতো প্রকল্প দরকার কী!

    গান্ধীজী ভারতে মোদীর প্রধানমন্ত্রী হবার পর থেকেই বিষণ্ণ; ভেবেছিলেন প্রেম সংস্কার প্রকল্পে ব্যস্ত হয়ে ভুলে যাবেন হিন্দু ভারতের ছবি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলছেন, পুরো উপমহাদেশের একটা পলিটিক্যাল প্রিভিউ করা উচিত। জরুরী বৈঠক ডাকুন।

    দেবুদা বেহেশতের প্রেসক্লাবে মিট দ্য প্রেস করে, কলকাতার তাপস পাল, লাহোরের ইমরান খান আর নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। সেন্টার ফর পারু ডার্লিং(সিপিডি)র কাজই এই। সাম্যবাদী ও ভোগবাদী এই দুটো ফ্রন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ‘তৃতীয় শক্তি’ তৈরীর চেষ্টা। পারু- অশান্তির জীবনে তৃতীয় চুমুক দেবুদার খুব জরুরী।

    গান্ধীজী জিন্নাকে আর ইকবালকে ডেকে পাঠান, কী বটিকা দিয়ে এলে যে ইমরান আজ তালিবান খান! তোমাদের অনুশোচনাহয়না! উভয় কবিই নিরুত্তর। মওলানা আবুল কালাম আজাদ দুঃখ করে বলেন, জিন্নাহ তোমার ঐ ইনডিভিজুয়ালিজমটাই ক্ষতি করেছে। এই রোগ তুমি লন্ডন থেকে নিয়ে এসেছিলে। গান্ধীজী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কী করলে জিন্নাহ; সব সমস্যার মূলে তোমার পাকিস্তান। ইকবাল একটু রুহ আফজায় গলা ভিজিয়ে গজল গায়। মাথা নীচু করে বেরিয়ে যায় জিন্নাহ, বাইরে সরোজিনী নাইডু গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। জিন্নাহকে নিয়ে ‘টেক টু’ ক্যাফেতে চলে যান। সেখানে আগেই আসর জমিয়ে বসে আছেন নেহেরু। লায়লা-পার্বতী- জুলিয়েটকে তৃতীয় শক্তির মজনু-দেবু-রোমিওর বিরুদ্ধে ক্ষেপাচ্ছেন। সরোজিনী জিন্নাকে বলেন, উল্টোদিকের ক্যাফে ফ্লোতে যাই চলো।

    বঙ্গবন্ধুর বাড়ীর বৈঠকখানায় গম্ভীরমুখে বসে সুভাষ বোস। সত্যজিত রায় একপাশে বসে ফেসবুকিং করছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে পৌঁছুলেন। একটু পর শেরে বাংলা ঢুকলেন। হঠাত তার ফোন আসে। গান্ধীজীর ফোন, বাঘাদা এই ‘লাহোর’ প্রস্তাব করার কী দরকার ছিলো! এখন ইমরান তালেবান খান হয়েছে সেই লাহোরেই। শেরে বাংলা কথা না বাড়িয়ে বলেন, আজ একটু বাংলার সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। পাকিস্তান নিয়ে জিন্নার সঙ্গে কথা বলেন। ভাসানী বাড়ীর ভেতর থেকে নামাজ পড়ে বৈঠকখানায় ঢুকেন। সবাইকে চা দিয়ে যায় খন্দকার মুশতাক। বঙ্গবন্ধুর একটি বাড়ী একটি খামারে মুশতাক গরু-ছাগল চরায়, অবসরে চা দেয়; তাকে দোজখ থেকে ডেপুটেশানে আনা হয়েছে। দোজখের লোকজন মুশতাকের নানা ঘিড়িঙ্গিতে অতিষ্ট হয়ে আবেদন করে চিড়িয়াটিকে সরিয়ে নেবার জন্য।

    নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সুভাষ বোস বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন, ওটা এরকম মায়া সিটি হয়ে গেল কেনো যে মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে; আর শামীম ছেলেটা এমন উদ্ধত কেন। ভাসানী ফোড়ন কাটেন, দেখতে শুনতে তো নতুন বাংলার বাঘ। শেরে বাংলা বলেন, মওলানা সাহেব ওকে বাগ বলেন। বাঘ ঐ একটাই আপনার সামনে বসে। মুশতাক একটা আস্ত কাঁঠাল নিয়ে আসে। ভেঙ্গে খেয়ে ফেলেন বাঘাদা। বঙ্গবন্ধু বলেন, বোস দা আমরা এতোগুলো লোক এখানে; আমাদের কারো আচরণে উদ্ধত ভাব দেখেছেন। সুভাষ বোস মাথা নাড়েন; না তো। বঙ্গবন্ধু বলেন, সময়ের সঙ্গে বিনয়-ভদ্রতা বিষয়গুলো উবে যাচ্ছে। কী করবো আমরা। সত্যজিত রায় হাসেন, মুজিব ভাই মায়াসিটি নিয়ে যত কান্ড নারায়ণগঞ্জ লিখবো কীনা ভাবছি।

    জ্যোতিবসু ঘরে ঢুকেই করজোড়ে ক্ষমা চান দেরীর জন্য। বঙ্গবন্ধু হাসেন, এই যে মায়াসিটির আশে পাশের এলাকার লোক এসে পড়েছেন। সুভাষ বোস সরাসরি আলাপে চলে আন, জ্যোতি বাম ফ্রন্টের একি হাল!

    জ্যোতিবসু বলেন, যেই যায় লংকায় সেই হয় রাবণ। সব তো চোর; জনপ্রিয়তা ধরে রাখবে কী ভাবে? বঙ্গবন্ধু যোগ করেন, আমিও যেমন একটা চোরের খনি আর দরবেশ পেয়েছি। সত্যজিত রায়কে বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেন, এই তাপস পালটা কে; কথা বার্তা তো পাকিস্তানের টিক্কা খানের মতো। নারীর প্রতি এমন অমর্যদাকর কথা একজন শিল্পী কি করে বলে। সত্যজিত রায় হাসেন, একে শিল্পী বলে চিনিনা; বাংলা ছবির সোনালী যুগের পতনের পর যাত্রার মতো কতগুলো ফিল্মের হিরো ছিলো সে; এখন এর বিদ্যা বুদ্ধি বুঝতেই পারছেন। জ্যোতিবসু এর সঙ্গে যোগ করেন, এর নেত্রী ক্ষমতাটা শুনেছি ইংরেজীতে বেশ ভালো। সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুঃসময় কবিতা পাঠ করার ভঙ্গিতে বলেন, কি এক সবুজ সুন্দর আমার সোনার বাংলা রেখে এলাম; আর কী হয়ে গেল। সাংস্কৃতিক মান এতো অধঃগামী হয় কী করে! এ ঘরে ক্ষমতাকে নিয়ে এলে তো পনেরো সেকেন্ড বসা যাবে না।

    কবি নজরুল তার বাসার লনে বসে দেবুদাকে বোঝাচ্ছিলেন, পার্বতীর দুর্ব্যবহারে দুঃখ না পেতে। নারী একটু কষ্ট দেবেই। দেবুদা কেঁদে ফেলে, নজুদা আমি আর কতো বড় হবো! নজরুল ইসলাম অনুরোধ করেন, প্লিজ দেবু কেঁদোনা। এরি মাঝে একটা পুরো টিস্যু বক্স শেষ করেছো। এমন সময় চন্দ্রমুখীর ফোন, একটু আসবে দেবুদা, খুব ভয় করছে তাপস পাল ফোন করেছিল। বলেছে বাম ফ্রন্টকে সাপোর্ট করো চন্দ্রলোক, আমি তোমার এপার্টমেন্টে তৃণমূলের র‍্যাপ সিঙ্গার পাঠাবো।

    দেবদাস ভয় পায়, তাপস পালতো মরেনি, সে পৃথিবী থেকে লং ডিসট্যান্স কল করেছে; তারতো মাথার ঠিক নেই; আত্মহত্যা করে চলে আসে যদি চন্দ্রের কোন ক্ষতি করতে।

    কবি নজরুল বলেন, শোন এই পাপস পালটা এতো সহজে মরবেনা; এ জাতীয় লোককে যমও ঘৃণা করে। ওখানেই দেখবে সে শেয়াল-কুকুরের খাদ্য হবে।
    (সব চরিত্র কাল্পনিক, বাস্তবের কারও সাথে এদের মিল নেই)
    (মতামত ব্যক্তিগত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৯ জুন ২০১৫ | ১৫৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • 0 | 132.163.78.114 (*) | ১০ জুন ২০১৫ ০৬:১৬67087
  • উত্তম জাঝা :-)
  • de | 69.185.236.51 (*) | ১০ জুন ২০১৫ ১১:৫৯67088
  • :)) ভালো হচ্ছে-
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন