এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • রাজত্বের দাম

    Ritwik Gangopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২০৬৭ বার পঠিত
  • - মহামান্য সম্রাটের জয় হোক।

    আলো আঁধারি মন্ত্রনা কক্ষ গমগম করে উঠলো।

    সম্রাট চিন্তান্বিত ভাবে বসে ছিলেন। মূল দরবার কক্ষের কাজ সেরে সামান্য কিছু আহার করেই তিনি আজ মন্ত্রনাকক্ষে চলে এসেছেন বা বলা যেতে পারে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার মন বিক্ষুব্ধ। চিন্তা এতটাই গভীর যে মন্ত্রনাকক্ষের দরজা খুলেছে, দুজন প্রহরীর সাথে প্রধান পুরোহিত প্রবেশ করেছেন, তিনজনের মানুষের পায়ের শব্দে কক্ষের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হয়েছে কিন্ত সম্রাট খেয়ালই করেন নি।

    সেনাপতি অবশ্য আগেই লক্ষ্য করেছেন এবং বিতৃষ্ণার দৃষ্টিতে পুরোহিতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

    ভারী গলার আচমকা আওয়াজে সম্রাটের হাতে ধরা গজদন্তের লাঠিটা পড়ে গেলো। মন্ত্রনাকক্ষের দেওয়ালে দেওয়ালে সেই শব্দ ধ্বনিত হয়ে বেরিয়ে গেলো ছোট গবাক্ষপথে। কোন কিছুতে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করতে হলে এই লাঠির মাথাটি বুড়ো আঙুল দিয়ে খোঁটা তার অভ্যাস।

    সম্রাটের বাঁ দিকে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরী তড়িঘড়ি লাঠিটা তুলে তাঁর হাতে শ্রদ্ধাভরে তুলে দিলো।

    - আসুন, প্রধান পুরোহিত।

    পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে নত হয়ে অভিবাদন জানানোর পর সম্রাটের ঈঙ্গিতে একটা অসামান্য সাইপ্রাস কাঠের চেয়ারে তিনি উপবিষ্ট হলেন।

    - মহান পক্ষীদেবতা,কুম্ভীরদেবতা আর।।।।

    সম্রাট ডান হাত তুলে পুরোহিতকে নিরস্ত করলেন।

    - এইসব সম্ভাষণ আমার কাছে নিরর্থক।

    পুরোহিতের ঘন ভ্রু জোড়া একত্র হয়ে এলো।

    - সম্রাট,যে দেবতার আপনি স্বয়ং প্রতিভূ।।। "

    - " এখন থাক। এই মন্ত্রনাকক্ষের মধ্যে সমস্ত বড়ো বড়ো উপাধি আউড়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয়না। তাছাড়া কথাবার্তা যা বলার সব বলে আমি একটু বিশ্রামে যেতে চাই। শরীরটা ভালো লাগছেনা।

    সেনাপতি শঙ্কান্বিত হয়ে বললেন ঃ " রাজবৈদ্যকে খবর দেবো মহামান্য?

    - নাহ। এ তো সেই একই অসুখ। ক্লান্তি, পিঠে বেদনা, পেটে যন্ত্রনা। গত তিন বছর ধরে চলেছে। ওষুধ খেয়ে কোন ফল হচ্ছে কি?

    সেনাপতি ব্যথিত ভাবে সম্রাটের দিকে তাকিয়ে রইলেন।প্রধান পুরোহিতের ঠোঁটে প্রায় অদৃশ্য একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

    সম্রাটের শারীরিক দুর্বলতা অবশ্য তার বয়েসের কারনে নয়। জন্ম থেকেই তিনি অশক্ত। সম্রাট সতেরো বছরের যুবক মাত্র। কিন্ত এর মধ্যেই তাঁর আট বছর রাজত্ব করা হয়ে গেছে।পিতার মৃত্যুর পর গোটা সাম্রাজ্যকে শক্ত হাতে বাঁধার চেষ্টা করেছেন। অবশ্যই শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় নয়। সে কাজে সাহায্য করছেন তার এবং প্রধান সেনাপতি, যিনি এখন সিংহাসনের বাঁদিকে বসে আছেন। কিন্ত লাভের লাভ বিশেষ কিছু হয়নি। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে।এই ধ্বংসের শুরু বর্তমান সম্রাটের বাবার আমলে। ভূতপূর্ব সম্রাট তাঁর অধিকৃত এই ভূখন্ডটিকে নিয়ে অদ্ভুত একটা খেলায় মেতেছিলেন। একটা বিদঘুটে স্বপ্নের পিছনে দৌড়ে বেড়িয়ে তিনি তার পার্শ্বচর, তার পুরোহিতকূল সর্বোপরি তার প্রজাদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। সাথে পেয়েছিলেন মূলত তার অসামান্য সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী রানীকে, যাকে গোটা সাম্রাজ্যের লোক চাইলেও অশ্রদ্ধা করতে পারেনা। সেই স্বপ্ন হলো, যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রবল প্রতাপ দেবতাদের সরিয়ে দিয়ে নতুন দেবতার আমদানী। তাঁর চিন্তা ছিলো, দেবতা হবে একজন। তিনিই সর্বশক্তিমান,তিনিই সর্বমঙ্গলদায়ক। সম্রাট শুধু তার বার্তাবাহক মাত্র। ভালো কথা। নিজের বিশ্বাস নিয়ে থাকলে কারো কোন আপত্তি ছিলোনা। কিন্ত তিনি প্রথমে নিজের মতবাদ প্রচার করতে লাগলেন। রাজপরিবারের সবাইকে সেই ধর্মে দীক্ষিত করলেন। পুরনো রাজধানী ছেড়ে এসে " নতুন দেবতার রাজধানী "তে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র সরিয়ে আনলেন। কিন্ত সনাতন যে ধর্ম প্রজাদের বুকের মধ্যে শয়ে শয়ে বছর ধরে প্রোথিত, তা স্থানচ্যুত হলোনা। প্রজারা সেই পুরনো দেবতাদের মন্দিরেই পুজো করতে লাগল। সম্রাট ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। পুরনো দেবতাদের বাসস্থান একের পর এক ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হতে লাগলো। প্রাচীন পুরোহিততন্ত্র ভেঙে দেওয়া হলো। সনাতন ধর্মের প্রতি সহানুভুতি সম্পন্ন প্রত্যেকের উপর নেমে এলো ভয়ঙ্কর শাস্তির খাঁড়া। গুপ্তচরে ছেয়ে গেলো শহরগুলির গলিপথ। চৌরাস্তার মোড়ে কান্নার রোল উঠেছে,আর প্রজাদের বুক চাপড়ানির শব্দ ছাপিয়ে পুরোন দেবতার কোন মূর্তি ভাঙা হচ্ছে - এই দৃশ্য হয়ে পড়েছিলো নিত্যনৈমিত্তিক।

    নতুন বিশ্বাস স্থাপন করার স্বপ্নে মশগুল সম্রাট তার সাম্রাজ্যের রাশ ঢিলে করতে লাগলেন ক্রমশ। পূর্বসীমান্তে আর দক্ষিনসীমান্তের ছোট করদ রাজ্যগুলি এই ডামাডোলের সুযোগে বিদ্রোহ ঘোষনা করলো। সেনাপতিরা সম্রাটের কাছে বারবার আর্জি জানালেন সেনা পাঠানোর জন্য। কাকস্য পরিবেদনা। সেনারা তো ধর্মস্থাপনে ব্যস্ত। এই নতুন ধর্ম আগের ধর্মের চেয়ে অনেক সিধে সরল এবং মুক্তচিন্তার অনুগামী হলেও রাজ্যশুদ্ধ প্রায় কেউ বিশ্বাসই করতে পারলোনা যে আকাশের দেবতা আর পাতালের দেবতা, জল এবং আগুনের দেবতা কি ভাবে এক হতে পারে। ঠিক এই টালমাটাল সময়ে ভগ্নহৃদয় সম্রাট দেহ রাখলেন। পেছনে ফেলে গেলেন নতুন দেবতার বিশাল বিশাল মন্দির, দুর্বল রাজধানী,ধর্মহীন বিক্ষুব্ধ প্রজা, চরম দুর্নীতিবাজ রাজকর্মচারীর দল আর ক্রমশ ছোট হতে থাকা সাম্রাজ্য।

    ঠিক এই সময়ে,মাত্র নয় বছর বয়েসে,এখনকার সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করেন। সাথে ছিলেন মামা,আর যে সেনাপতি সাম্রাজ্যের একেবারে উত্তর -পূর্বপ্রান্তে মাটি কামড়ে সাম্রাজ্য রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন ( আর অপৌত্তলিক সম্রাটের কাছে সাহায্য চেয়ে বিফল হয়ে তাকে ঘৃণার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠা করেছেন ) সেই পোড় খাওয়া যুদ্ধবিদ।

    - মহামান্য সম্রাট।

    প্রধান পুরোহিত উঠে দাঁড়ালেন। তারপর কোমর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বললেন ঃ আপনার অশেষ অনুগ্রহ, যে আমাকে আবার সনাতন দেবতাদের পূজার্চনার সুযোগ আপনি দিয়েছেন। ভুতপূর্ব সম্রাটের অভিশপ্ত রাজত্বের ফলে যে দেবতারা বিমুখ হয়েছেন, আমি তাদের প্রসন্ন করার চেষ্টা করছি মাত্র। হয়তো দেখবেন, আমাদের পবিত্র নদীর দুই কূল আবার ভরে উঠছে শস্যে। প্রজারা আবার সম্রাটের উপর বিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। সনাতন দেবতাদের কৃপাদৃষ্টি ছাড়া আমার বেঁচে থাকাও হয়তো সম্ভব হতোনা কারন আপনি জানেন যে আপনার বাবা আমার মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন।

    - হ্যাঁ,আর আপনি প্রচুর উপঢৌকনাদি দিয়ে জেল থেকে অন্তর্ধান করেছিলেন। সেটাও আমরা জানি।

    প্রধান সেনাপতির গলায় প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ।

    - কি করবো বলুন। আমার হাতে তো আর আপনার মতো তরবারী নেই যে।।।।

    - দেবতাদের অনুগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে পারতেন।

    প্রধান পুরোহিত আর কিছু না বলাই শ্রেয় ভেবে চুপ করে থাকলেন।

    প্রধান সেনাপতির দেবতা টেবতা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তিনি বোঝেন যুদ্ধকলা,চান শত্রু দেশের হাত থেকে সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা। আগের দেবতা, বা বর্তমান দেবতা - সবাইকেই তিনি ওম নমো ডোম নমো করে পূজা করে এসেছেন,ভবিষ্যতেও তাই ইচ্ছে আছে। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি পুরোহিততন্ত্রের খুব একটা সমর্থক নন। কিন্ত দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান পুরোহিতের রাজধানীতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারন এনার হাত দিয়েই দেবতাদের পূজা সুসম্পন্ন হয়,অন্তত মানুষের তাই বিশ্বাস।

    প্রধান সেনাপতি ভূতপূর্ব সম্রাটের যথেষ্ট আস্থাভাজন ছিলেন। সেই কারনে বিশাল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রক্ষার ভার তাকেই দেওয়া হয়েছিলো। তিনি ছোটখাটো বিদ্রোহ অঙ্কুরেই বিনাশ করে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেখিয়েছিলেন। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো, সম্রাটের পাগলামী শুরু হওয়া পর্যন্ত। প্রথমদিকে কেউই এসব খেয়াল নিয়ে খুব একটা চিন্তিত ছিলোনা। সমস্যা হলো ব্যাপক ধরপাকড় আর প্রাচীন দেবতাতন্ত্রকে গায়ের জোরে হটিয়ে দেওয়ার সময়ে। রাজ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে সম্রাট উদাসীন হয়ে গেলেন। সেনাছাউনির সৈন্যদলের বদলি আটকে থাকলো। তারা অধৈর্য হয়ে উঠলো। সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ ঝামেলায় সীমান্ত প্রদেশের রাজ্যগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো একই সাথে। এই সময়ে তিনি বারবার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন সম্রাটের কাছে। সেই আবেদন শুধু বিফল হয়েছে তাই নয়,সম্রাট সন্দেহ আর অভিযোগ ভরা একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাকে। তিনি প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সেনাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করেন। ফলতঃ তাকে রাজধানীতে ডেকে আনা হয়,এবং বন্দী করা হয়। তার সেই বন্দীদশা ঘুচেছে সম্রাট দেহ রাখবার পর,তার রানীর ছোট্ট রাজত্বকালে। মৃত সম্রাটের প্রতি ঘৃনা ছাড়া তার মনে কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই। রানীমাতা মারা যাওয়ার আগে নয় বছর বয়স্ক এক বালককে তার হাতেই ছাড়তে চেয়েছিলেন। তিনি এই সম্রাটকে স্নেহও করেন যথেষ্ট। মাঝখানে বাধ সাধলেন রানীমাতার বাবা। দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে রাজদরবারের পরামর্শদাতা হিসেবে থাকার কারনে নাবালকের দায়িত্ব তিনি প্রায় জোর করে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অবশ্য পদোন্নতি হওয়ার কারনে প্রধান সেনাপতি সেই নিয়ে আর বিশেষ উচ্চবাচ্য করেন নি। সেই থেকে রাজমাতার বাবা বকলমে রাজ্য চালান।
    প্রধান পুরোহিতের পদে পুনরাভিষেকের পর আজকের এই অত্যন্ত গোপনীয় ও জরুরী সভায় তারও থাকার কথা ছিলো। কোন জরুরী কারনে তিনি এখন রাজধানীতে নেই। কি কারন,সেটা অবশ্য কেউ জানেনা।

    - হ্যাঁ,জানি প্রধান পুরোহিত। আপনার ওপর দেবতাদের অনুগ্রহ আছে।

    সম্রাট যেন কিছুটা অন্যমনা।

    - দেবতাদের উপর যে অবিচার আমরা করেছি,তার ফলেই তারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন,এখন আস্তে আস্তে আবার তাদের আশীর্বাদ আমাদের উপর বর্ষিত হচ্ছে। তবে আমার ভূমিকাও একেবারে অবহেলা করা যায় কি? আমি সুরম্য মন্দির নির্মাণ করিয়েছি, প্রজাদের মধ্যে ঘোষনা করে তাদের সাহস যুগিয়েছি যে তারা যেন আবার পুরনো প্রথায় বিনা দ্বিধায় পূজার্চনা করতে পারে। নিজের নাম পর্যন্ত পালটিয়ে ফেলেছি এর জন্য। এগুলো কি কিছুই নয়?

    - অবশ্যই সম্রাট। আপনি যথাসাধ্য করছেন। অবশ্য নাম না বদলিয়ে কোন উপায় ছিলোনা। কারন আপনার নামের সাথেই মিশে ছিলো সেই অপদেবতার উল্লেখ।

    - স্বীকার করছি। কিন্ত এসব সত্বেও আজ দুশ্চিন্তা আমায় কুরে কুরে খাচ্ছে।

    - সুদিন ফেরার লক্ষনগুলি কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না সম্রাট।

    সম্রাট সামনের দিকে ঝুঁকে কিছু রুক্ষ কন্ঠেই বললেন - সীমান্ত সুরক্ষিত না থাকলে, বহিঃশত্রুর আক্রমণে সবসময়ে শিরঃপীড়া থাকলে কোন সুদিনই সুদিন লাগে না পুরোহিত। যদি সেই আদি জগত ত্রাতা রাজচক্রবর্তীর হাতে তৈরি এই সাম্রাজ্য গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়,তবে শস্যপূর্ণ গোলা নিয়ে কি লাভ?

    - যথার্থ।

    পুরোহিত মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন।

    - ঠিক এই কারনেই আজ আপনাকে ডাকা। আমার পিতামহের উপর দেবতাদের আশীর্বাদ ছিলো। আপনি ছিলেন তার যোগ্য সংবাহক। আমি চাই এই সংকট কালে আপনি বলুন যে কি প্রকারে দেবতাদের সন্তুষ্ট করা যায়।

    পুরোহিত চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে দু হাত প্রসারিত করলেন। কিছুক্ষন সব চুপ। প্রাসাদ চত্ত্বরের বাইরে কিছু হ্রেষাধ্বনি শোনা গেল । সম্রাট একদৃষ্টে পুরোহিতের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রধান সেনাপতি পুরোহিতের নাটক দেখে বিরক্তিতে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।

    উদগ্রীব কিছু মুহূর্তের পর প্রধান পুরোহিত আবার চোখ খুললেন। দৃষ্টিতে বোঝা গেলো, পথ তিনি খুঁজে পেয়েছেন।

    - সম্রাট। মার্জনা করবেন,কিন্ত আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হচ্ছি।

    - বলুন।

    - পৃথিবীতে দেবতাদের সাথে সংযোগ স্থাপনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম আপনিই। অথচ দেবতারা এই ব্যাপারে কি আপনার কাছে নিশ্চুপ ছিলেন?

    সম্রাট ভ্রূকুঞ্চিত করে বললেন - আমি যা নির্দেশ পেয়েছি,তাই তো কাজে লাগিয়েছি পুরোহিত। তারপরেও এ প্রশ্ন ওঠে কেন?

    পুরোহিত মাথা নাড়লেন। ডাইনে বাঁয়ে।

    - না। সব নির্দেশ বোধহয় আপনি কাজে লাগান নি।

    - হেঁয়ালি না করে আসল কথাটা পাড়লে ভালো হয় না কি?

    প্রধান সেনাপতি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন এই সব কথার ফুলঝুরি শুনে।

    সেই ধাতানিতে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে সরাসরি সম্রাটের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রধান পুরোহিত জিজ্ঞাসা করলেন - কিছু ধ্বংস না হলে সৃষ্টি হবে কি করে সম্রাট?

    - মানে?

    দক্ষিন দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে পুরোহিত বজ্রকন্ঠে বললেন - ওই দিকে, যেখানে সেই ভয়ংকর অপদেবতার অভ্রংলিহ দেবালয়গুলো এখনো সদর্পে দাঁড়িয়ে আছে,সেগুলোকে নিশ্চিহ্ন না করে আপনি নতুন মন্দির তৈরি করে শুধু সময়,অর্থ আর পরিশ্রম ব্যয় করেছেন সম্রাট!

    সেনাপতি আবার ঝাঁঝিয়ে উঠতে গিয়েও থমকে গেলেন। ঠিক তো! কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। একই রাজ্যে দু রকম দেবতার অস্তিত্ব থাকে কি করে? আর যিনি স্বয়ং দেবতার বার্তাবাহক, এই সহজ ভ্রান্তিটা কি ভাবে করতে পারেন? চোখে একরাশ প্রশ্ন নিয়ে সম্রাটের দিকে তাকালেন সেনাপ্রধান।

    - আ।।আমি এরকম কোন নির্দেশ পাইনি।

    পুরোহিত তীব্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন - আপনি দেবতাদের বার্তা পান তো, মহামান্য?

    নিজের অসুস্থতা ভুলে গিয়ে সদপদাপে উঠে দাঁড়ালেন সম্রাট।

    - আপনি কার সাথে কথা বলছেন সেটা ভুলে যাবেন না পুরোহিত!! আমি আপনাকে সসম্মানে ডেকে এনেছি,আবার এই মুহূর্তে ধাক্কা মারতে মারতে বধ্যভূমিতে পাঠাতে পারি! আমার ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাস করেন,আপনার এতো স্পর্ধা!!!

    - কে যাবে বধ্যভূমিতে?

    তিনজনেই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকালেন।

    উত্তেজিত বাদানুুবাদের মধ্যে কেউ খেয়ালই করেনি একজন দীর্ঘদেহী পুরুষ মন্ত্রনাকক্ষে প্রবেশ করেছেন। কোন প্রহরীর সাধ্য নেই প্রাসাদের প্রায় কোন অংশে তার গতিবিধিতে বাধা দেওয়ার। ইনিই বর্তমান সম্রাটের মাতামহ। ভূতপূর্ব তিন তিনজন শাসকের পার্শ্বচর হিসেবে তিনি রাজনীতি সম্বন্ধে একজন বিদগ্ধ হিসেবেই পরিচিত। এর সামনে কখনো কখনো সম্রাটকেও গলা নামাতে হয়।

    - প্রধান পুরোহিত আজ তার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছেন মাতামহ। আমি বাধ্য হয়েছি উত্তেজিত হতে। তাঁর মতে দেববাণী আমি শুনতে পাইনা।

    - আশা করি প্রধান পুরোহিত তার বক্তব্যের সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি দেখাতে পারবেন।

    সম্রাটের ডানদিকে,একধাপ নীচে একটি গোলাপী গ্রানাইট পাথরের সুরম্য চেয়ারে বসতে বসতে শান্তকন্ঠে বললেন মাতামহ তথা সাম্রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

    প্রধান পুরোহিত আবার উঠে দাঁড়ালেন।

    - সম্রাটের উত্তেজনার কারন ঘটানোর জন্য আমি সহস্রবার মার্জনা চাইছি। আসলে যেটা বলতে চেয়েছি।।।।

    - প্রধানমন্ত্রী মশায় আজকের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত ছিলেন আশা করি।

    সম্রাটের রাগ এখনো যায়নি।

    - না। বার্তাবাহক যতক্ষনে আমার প্রাসাদে গেছে,আমি বিশেষ কাজে নিস্ক্রান্ত হয়ে গেছিলাম।

    - যদিও আপনাকে রাস্তায় আটকাতে গেছিলো দ্রুতগামী অশ্ব।

    সেনাপতি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে এই বার্তা পেশ করলেন।

    - ততক্ষনে আর ফেরার উপায় ছিলো না।

    প্রধানমন্ত্রীর গলা ভাবলেশহীন।

    - সেই কাজ কি এই বৈঠকের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ?

    সম্রাটের গলায় অশনি সংকেত।

    - এই বৈঠকের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

    সম্রাট ডান হাতের ঈঙ্গিতে পুরোহিতকে আবার শুরু করতে বললেন। যদিও তার মুখ ভ্রুকুটিকুটিল হয়ে থাকলো।

    - যেটা বলতে চাইছি সম্রাট তা হোলো এই যে অনেক সময়ে দেবতারা ঈঙ্গিতে আমাদের অনেক কিছু জানান,যা আমরা বুঝতে পারিনা। হয়তো সেইরকম কিছু আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে।

    - হতে পারে। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন দেবতারা ওই পুরনো মন্দির গুলো ধ্বংস করলে খুশি হবেন?

    - নিশ্চয় মহামান্য। একথা তো আমরা সবাই বিশ্বাস করি,যে এক দেবতার আরাধনা সর্বতোভাবে বর্জনীয় হওয়া উচিত।

    - হ্যাঁ। তাতে সন্দেহ নেই।

    - ভবিষ্যতেও যাতে অপৌত্তলিক কোন অপদেবতার ছায়া আমাদের সাম্রাজ্যে না পড়ে সেটা নিশ্চিত করাও সম্রাটের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

    - ঠিক।

    - সেক্ষেত্রে ওই মন্দিরগুলি ধ্বংশ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই নরোত্তম ।

    সম্রাট নিজের অজান্তেই বিচলিত হয়ে ওঠেন। হাজার হোক,দক্ষিনের ওই রাজধানীর প্রাসাদ ও মন্দির চত্বরগুলিতে তার ছেলেবেলা কেটেছে। পিতামাতার স্নেহে ঘেরা সেই স্মৃতি ধুলোয় মিশিয়ে ফেলা খুব সহজ কাজ নয়।

    - বেশ। আপনি যা চাইছেন,তাই হবে।

    প্রধান পুরোহিত উচ্চকন্ঠে বললেন ঃ সম্রাটের জয় হোক।

    - আমি একটা কথা বলতে পারি?

    প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকালো সবাই।

    - আপনি কি আর কোন ক্রিয়া যোগ করতে চান?

    পুরোহিত কিছুটা আশ্চর্য।

    - বলছিলাম এই,যে নতুন মন্দির গড়া আর পুরনো মন্দির ভাঙা এই দুটোতে তো বিস্তর খরচ। এই ব্যয় সঙ্কোচের সময়ে সেটা খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে কি?

    - কিন্ত এটা না করলে তো দেবতারা সন্তুষ্ট
    হবেন না মাতামহ!

    সম্রাট অধীর ভাবে বললেন।

    - একটা সহজ উপায় আছে।

    - বেশ,শুনি।

    প্রধানমন্ত্রী হাতের ইশারায় কক্ষে উপস্থিত দুজন প্রহরীকে বাইরে যেতে বললেন। তারপর পাশের মদিরা পাত্র থেকে অল্প দ্রাক্ষারস গেলাসে নিয়ে বললেন

    - আমি একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটাকে প্রাঞ্জল করতে চাই। সম্রাট বা পুরোহিতের মতো দৈববাণী শোনার ক্ষমতা আমার না থাকলেও,কিছু অভিজ্ঞতা তো হয়েছে। সেই সুবাদেই বলছি ঃ

    ধরুন কারুর বাড়িতে একটি বিষবৃক্ষর চারা গজিয়েছে। এবার বাড়ির মালিক যদি সেই চারার পাতাগুলো তুলে নেয়,তাহলে কি হবে?

    - আবার পাতা গজিয়ে যাবে।

    সেনাপতির দ্রুত উত্তর।

    - যদি পাশেই একটি সুস্বাদু ফল গাছের চারা লাগানো হয়?

    - বিষবৃক্ষ সেই চারাকেও মেরে ফেলবে।

    - তাহলে এর সমাধান কি?

    - শিকড় শুদ্ধ গাছটা উপড়ে ফেলা।

    সেনাপতি হাতের ভঙ্গি করে দেখালেন।

    প্রধানমন্ত্রী চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন - এখানেও আমাদের বিষবৃক্ষটিকে শেকড় শুদ্ধ উপড়িয়ে তুলতে হবে।

    সেনাপতির চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

    - বুঝতে পেরেছি! তার মানে যে দানব " ওপারের জীবনের" সব সুযোগ সুবিধে ভোগ করছে, তার সমাধিকেই ধ্বংস করতে হবে।

    - কি বলছেন মাতামহ। উনি আপনার জামাতা!!!

    সম্রাট চেঁচিয়ে উঠলেন।

    - রাজত্বের নিরাপত্তার কাছে এই সম্পর্ক তুচ্ছ।

    প্রধান পুরোহিত লাফিয়ে উঠলেন।

    - অনবদ্য। অসামান্য। আমরা কেউ ভেবেই দেখিনি যে এত সহজ সমাধান হতে পারে।

    - ঠিক। এতে টাকাও বাঁঁচবে আর দেবতার অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি পাবো।

    সেনাপতির কন্ঠেও প্রশংসার সুর।

    সম্রাট নীরবে বসে রইলেন শুধু।

    - শুধু একটা সমস্যা আছে।

    প্রধানমন্ত্রী খালি গেলাসটা চেয়ারের হাতলে রাখলেন।

    - কি সেটা?

    - আপনি দক্ষিনদিকে যাত্রা করলেন। নির্দিষ্ট সমাধিস্থলে উপস্থিত হলেন যেখানে সেই দানব সম্রাট " ওপারের জীবন" উপভোগ করছেন। সমাধিস্থল খুললেন। সমাধিকক্ষে ঢুকলেন। তারপর সমাধি আধারের ঢাকনা খুলে আপনার তরবারী সেই অভিশপ্ত আত্মাকে ধ্বংস করতে গিয়ে দেখলো।।।

    সেনাপতি আর প্রধান পুরোহিত প্রায় একসাথে বলে উঠলেন - কি?

    - যাকে ছিন্নভিন্ন করতে এসেছেন,সেই বেপাত্তা।

    - তার মানে?

    সেনাপতি হতবাক।

    - মানে হচ্ছে এই, যে সমাধিস্থলে কেউ নেই। শবাধার অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই ভয়ংকর খবরটা পেয়েই আমি দক্ষিনদিকে যাত্রা করেছিলাম। প্রথমে বিশ্বাস করিনি,তাই নিজে দেখতে গেছিলাম। এমনকি এও ভেবেছিলাম,যে ধনরত্নের আকর্ষনে দুস্কৃতীরা হয়তো সমাধিস্থল লুট করেছে। এমন তো আজকাল আকছার হচ্ছে। বিশেষ করে এই টালমাটাল সময়ে।কিন্ত আমার আজ্ঞাবহ দুয়েকজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ব্যাপারটা অন্য।

    - উনি আমার পিতা। আমার জন্মদাতা। আমি কি করে ওনার অপমান সহ্য করতে পারি?

    সবার মুখ ঘুরে গেলো সম্রাটের দিকে। তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।

    - এই সব কিছুর পেছনে।।।।আপনি!!!

    সেনাপতি জ্যা মুক্ত তীরের মতো উঠে দাঁড়ালেন।

    - আপনি আমাদের সবাইকে অন্ধকারে রেখে সেই রাক্ষসকে সরিয়ে দিয়েছেন!!!

    প্রধানমন্ত্রী সেই একই রকম শান্তকন্ঠে বললেন- আর আমার বিশ্বাস যদি ভুল না হয়, তবে অপদেবতা " আটেনের" পূজারী সেই রাক্ষসের স্থান হয়েছে ভূতপূর্ব মহান সম্রাটদের গণ সমাধিস্থলের কাছেই। মানে প্রায় আমাদের নাকের ডগায়। সম্রাটের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।

    - একি অনাচার!! একি অনাচার!!

    প্রধান পুরোহিত মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।

    - বাহহ। দারুন। এই বৈঠকের ভাঁওতা,এই সাম্রাজ্যের মিথ্যে চিন্তা - সব অভিনয়!!

    প্রধান সেনাপতি গর্জন করে উঠলেন। সম্রাটের প্রতি সমস্ত স্নেহ ক্রোধাগ্নিতে মুহুর্তের মধ্যে বাষ্পীভূত হয়ে গেলো। এও তার পিতার মতোই শয়তান। হয়তো তার চেয়েও বেশী।

    - যতই মন্দিরের দেওয়ালে দেওয়ালে নিজের নতুন নাম আমুন - আনখ - তাত লিখুন না কেন,ভেতরে ভেতরে এখনো আপনি সেই আটেন - আনখ - তাত রয়ে গেছেন!!! নাকি নিজেকে ঈশ্বরের থেকেও বড় মনে করছেন আজকাল? ঈশ্বরের নামের আগে নিজের নাম বসাবেন নাকি এবার? আমুন - আনখ - তাতের বদলে তাত - আনখ - আমুন???

    সেনাপতির তীক্ষ্ণ অভিযোগের বর্শা আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো সম্রাটকে।

    - যাই হোক না কেন,তিনি একজন প্রজাপিতা।তার কি কোন অধিকার নেই,পবিত্র উপত্যকায় শায়িত হওয়ার?

    সম্রাট মরিয়া হয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

    - তিনি।।।একজন।।। শয়তান!! আর আপনি তাকে এইখানে এনে সীমাহীন অনাচার করেছেন।

    প্রধানমন্ত্রী ভাবলেশহীন ভাবে বললেন।

    এর পরের ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিলোনা। নিজের কোমরবন্ধ থেকে ছুরিকা বের করে সম্রাট হঠাত প্রধানমন্ত্রীর দিকে ধেয়ে গেলেন আহত নেকড়ের মতো। পরিনাম কি হতো বলা যায়না,যদিনা প্রধান সেনাপতি ততোধিক ক্ষিপ্রতায় সম্রাটকে নিবৃত করতেন।

    - সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় অভিশাপ আপনি!!! আপনি জেনেবুঝে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন যাতে আমাকে ফাঁদে ফেলা যায়। বছরের পর বছর সিংহাসনের লোভে আপনি শকুনের মতো প্রতীক্ষায় থেকেছেন। মা আমাকে বলেছিলেন আপনার লালসার কথা। আমি কান দিইনি। মুর্খ আমি।শুধু লোভী নন,আপনি অর্থগৃধণু প্রবঞ্চক লম্পট। আমি সবাইকে জানাবো আপনার কীর্তিকলাপ। আপনার মুন্ডু যদি মহান দেবতা আমুনের পায়ে গড়াগড়ি না যায় তো।।।।

    সম্রাট প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়লেন মানসিক উত্তেজনায়। তারপর নিজে নিজেই আবার সিংহাসনে এসে বসলেন অনেক কষ্টে। কিছুক্ষন দম নিয়ে তারপর জন্ম তৃষ্ণার্তের মতো এক ঢোঁকে অনেকটা মদিরা খেয়ে ফেললেন তিনি। অতঃপর ভাঙা গলায় বললেন -

    আমি কিচ্ছু জানিনা। আর আমাকে জোর করে বলানোয় আপ্নারা বাধ্য করতে পারেন না। বেরিয়ে যান সবাই এখান থেকে।

    প্রধান সেনাপতি তরবারী উন্মুক্ত করে বললেন -

    এই তরবারী এ মুহূর্ত থেকে আর আপনার জন্য নয়। ততক্ষন নয়,যতক্ষন আপনি আমাকে জানাচ্ছেন না,যে কোথায় আপনি সেই শয়তানকে গোপনে শায়িত করেছেন।

    - আমি একটা কথাও বলবোনা।

    - শুনে দুঃখ পেলাম। আপনার কাছে সাম্রাজ্য বড়, না পিতৃঋণ?

    প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠ যেন মাখন।

    - আমার শরীর ভালো লাগছেনা। আমি এখন কিছু বলতে পারবোনা। পরে।পরে।।।।

    উনিশ বছরের সম্রাট প্রবল মানসিক পীড়ায় বৃদ্ধদের মতো হাঁপাতে লাগলেন।

    প্রধানমন্ত্রী উঠে দাঁড়ালেন এবার।

    - সেই সমাধিস্থল খোঁজবার পন্থা আমরা জানি। ওটা বের করবোই।তবে সেই নির্দেশ আপনার থেকে এলে সবদিক থেকেই মঙ্গল। কথাটা ভেবে দেখবেন। আসুন প্রধান পুরোহিত। চলো হে হোরেমহেব। সম্রাটকে একটু ভাবার সময় দি।

    শেষ সম্বোধনটি প্রধান সেনাপতিকে উদ্দেশ্য করে।

    তিনজোড়া পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। দূরে পবিত্র নীল নদ বয়ে যেতে লাগলো একইভাবে। হতভাগ্য সম্রাট তুতেনখামেন ( তাত - আনখ - আমুন) বসে রইলেন।বসেই রইলেন।

    নিঃসঙ্গ।

    একা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২০৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৮65498
  • বেশ
  • শঙ্খ | 2345.110.9004512.28 (*) | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:২৬65499
  • বেশ নাটুকে
  • :) | 2390012.42.671212.17 (*) | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:২৫65500
  • গাছের/কাঠের নাম সাইপ্রেস (Cypress), দেশের নাম সাইপ্রাস (Cyprus)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন