এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জার্নাল ২০১৭

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ জুলাই ২০১৭ | ৯৮৩ বার পঠিত


  • শান্তি নয়, মুক্তি নয়, নিছক রণক্ষেত্র নয়, পৃথিবীকে
    নিরেট, গোবদা ভোঁতা হতে থাকা গেরস্থালীর
    ছুরির মতো লাগে।
    পর্দা বদলায়, বাসনকোসন, কাঁটা চামচ,
    অথবা নয়া মশলার কৌটো, যা কিনা একবার মাত্র হায়
    সুখী নতুন রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহৃত হয়ে বেশি পড়ে গেলে
    অত:পর যাবজ্জীবন ফ্রিজের প্রত্যন্ত গুহায়।
    দিন বদলায়, রান্নার লোক ঋতু পরিবর্তনে
    সবাই স্বীকার করেন আশু বদলান দরকার। কাজ চলছে না
    অথচ ছুরি বদলানটা আর হয়ে উঠছে না।

    দেখেছি, চাঁদ ওঠে গুঁড়ি মেরে এক শীতের রাতে একা একা
    মেঘের কম্বল গায়ে, যেন শিকারে বেরিয়েছে
    কম্বলের আড়াল থেকে শাণিত জ্যোৎস্না ফালা ফালা করে
    পাইনের বন। সরলবর্গীয় কাঠের বাড়িগুলি ঘিরে
    চিরুনি তল্লাশি চলে। যে জেগে উঠে চোখে চোখ রাখে
    তাকে যেন তখনই রাস্তায় নামিয়ে ঘোরাবে সে চৌমাথা অবধি।

    অথবা মনস্তত্ত্ব খচিত আয়না বলে যা বাজারে ইদানীং ছেয়ে গেছে
    যার কাছে কাকা পিসে মামা মেশো মায় বিড়ালছানাটি
    সরু মুখে বসে থাকে ঘাড় গুঁজে, যা দেখিয়েছে
    বাকিদের চেয়ে কীসে কতটা এগিয়েছে এযাবৎ
    নেচে কুঁদে হেসে গেয়ে, অথবা আলস্যতায়, তার
    শরীরের কোণে কোণে মাধবীর লতা উঠে গেছে।
    যে যেখানে যেমন ছিল ঠিক সেখানে চিত্রার্পিতের মতো
    থেকে গেছে।
    চান করে বেরিয়ে যে মাথার বাকি জল মুছবে বলে তোয়ালে নিয়ে বেরিয়েছে
    সে সেখানেই, কেউ বা জুতোর ফিতে বাঁধার ভঙ্গীতে
    কেউ কলম চিবিয়েইই চলেছে তো কেউ আটকিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীতে
    শীত কালে রাত হলে, চাঁদ চুপি চুপি মেঘের কম্বলে ঢেকে
    চৌকিদারিতে বেরোয়, কম্বলের ফাঁক থেকে ফালা ফালা
    জ্যোৎস্নার শিখা জ্বেলে জ্বেলে দেখে
    কারও কোনও নাড়াচাড়া আছে কি না-
    কে অন্তত মৃত্যু অবধি হেঁটে গেছে।

    তবু একে গুমখুন বলা হবে না কেন সে প্রশ্ন থাক
    তবু ছেলেধরা বলে যাকে পিটিয়ে মারল লোকে
    দিনের আলোতে তার কি মনস্তত্ত্ব আয়নাটি ভেঙে গিয়েছিল?
    সে কেন উন্মত্ত জনতা দেখে হাম্বা ডাকেনি?
    সে প্রশ্ন থাক।
    -এরা এ’বছরের পাঠক্রম বহির্ভূত - জান না কি?
    নাস্তিক বুঝি? ইতিহাস জানো? কত ধানে কত চাল?
    যাও দিকি, পরিবেশ দূষিত কোরো না, এখন বর্ষাকাল
    গো-রোপনে ব্রতী হও-
    যা বোঝো না তা নিয়ে প্রশ্ন কোর না -
    এই তো ঔপনিবেশিক শিক্ষার হাল আজকাল।

    যাই তবে, হে মহাজীবন, জনতার প্রসাদে আপনি স্বয়ম্ভূ আজ
    স্বর্ণরথে উড়ে যান - করে খায় অনুগত জন
    বাকিরা উচ্ছিষ্টলোভী, নাচে গায়, পাড়ায় পাড়ায়
    ভাঙা কাঁসি নিয়ে, আপনার কথামতো -
    আর সব কিছ থেমে গেলেও, পা রক্তাক্ত হয় হোক
    গরমে জিভ এলে যায় যাক - চোখ বুজে আসলে অবসাদে
    বাসন্তীর নাচ যে না থামে কখনও।
    থামলে যে কী ভীষন ব্যাপার হবে ভাবাও যায় না।

    অথচ, এই আমি আর আমাদের মতো রামা শ্যামা
    অমর আকবর অ্যান্টনি এরা তো যা খুশি করতাম
    করিনি কি? বাসের টিকিট মেরে হজমী আইসক্রিম
    পরীক্ষায় কম পেয়ে জ্বরের অভিনয়?
    দেখুন না, জন্মের পরমূহুর্ত থেকে বড় হয়ে গেছি বলে
    কাউকে বলিনি রাসমেলা থেকে বন্দুক কিনে দাও
    অথবা কাচের আংটি, টিনের লঞ্চ, যা কিনা সামান্য
    স্পিরিট ঢাললে ডেকচির জলে গোল গোল ঘোরে?
    স্কুলে গেছি, সিনেমার পোস্টার দেখেছি,
    মোহনবাগান ইষ্টবেঙ্গল করে জামার বোতাম ছেঁড়া মারপিটও
    চুল বড় হলে কানের পাশে ঝুলিয়েছি লুকিয়ে লুকিয়ে
    নায়িকার ভূমিকায় থাকত পাড়ার ঝুমাদি।

    কতবার পিঠ ঘেঁসে মিনিবাস চলে গেছে স্ট্রান্ড রোডে আমাদের।
    কতবার জ্বর হল। কতবার হা-ঘরের মতো পটাপট
    তিন চারটে মেরে দিয়ে বমি-টমি করে
    পিকনিকের মাংস ভাত মাঠে মারা গেছে- খেয়েছে কুকুরে
    তবুও কি বলতে গিয়েছি এইসব ঝিকিমিকি তারা?
    তখনও কি “ভারতমাতার জয়” বলার জন্য
    কানপাটিতে বন্দুক ঠেকাত কেউ?
    সোসাইটি হলে স্যর এসে বলতেন -
    এ্যাই ওই কোণের ছেলেটা, জাতীয় সঙ্গীত হবে
    চুপচাপ এক পায়ে দাঁড়া?


    মিথ্যে বলব না। মিথ্যে বলেছি বেশ অনেকবার
    বেঁচেও গিয়েছি কত, ধরাও পড়েছি
    চড় থাপ্পড় যা জুটেছে কপালে, দু একটা ক্ষত
    সে তো নদীনালা, রাস্তারও থাকে।
    ধর্মাবতার, সে তো সবই আত্মরক্ষার্থে,
    যদিও মাঝে সাজে স্বাদুতর পিত্তরক্ষাটিও উদ্দ্যেশ্য ছিল
    তবুও কি লুঠতরাজে নেমেছি কখনও?
    মারপিট করেছি, সে তো ওরা পাড়ার ম্যাচে
    আলফাল আউট দিচ্ছিল বলে -
    না হলে আমাদেরও খাওয়া দাওয়া সেরে
    লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার মতো ভালো কাজও ছিল।

    তবে এই আপনাকে দেখে, হে ধর্মাবতার মাইরি বলছি
    সিরিয়াল দেখার মতো শ্লাঘা অনুভব করি -
    কী করে পারেন মাইরি একটানা ঢপ দিয়ে যেতে?
    হাসি পায় না? স্কুলে কি গেছেন কখনও
    কেউ চুল টেনে পালায়নি বা ঠ্যাঙটা টানেনি
    তা কি করে হয়?
    নাকি মশাই আপনার স্কুল ছিল হামবাগ উচ্চ মহাবিদ্যালয়?

    হাসি পেত, খুব হাসি পেত, এখন পায়না
    আমি জানি দেখতে মানুষের মতো এমন হায়না
    পৃথিবীতে এমন করাল রূপে কখনও আসেনি
    বিষ দিয়ে যেখানে ঘেন্নার চাষ করছেন
    সেটা অমর আকবর অ্যান্টনিরও স্বীয় জন্মভূমি।


    তাই ফিরি, ফিরে পড়ি সহজ পাঠ গুলি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
    ছোট নদীগুলি পাড়ায় পাড়ায় যে যার মতোই থাকে
    যেন পর্ণমোচী গাছগুলি ঋতুতে ঋতুতে যায় বদলিয়ে
    স্বাভাবিক ভাবে, শিশুটিও খেলা করে অলস সকালে
    হিজিবিজি আঁকে, লেখে অক্ষরে অক্ষরে ঠোকাঠুকি
    করতে করতে দেখি একদিন ডানা পায়, উড়ে যায়
    সুনীল আকাশে এক বিশাল লেখার খাতায় -
    যাতে আর রুল টানার দরকার পড়ে না।

    সে যখন বড় হয়, ছোট হয়ে আসে ঘর বাড়ি আরও
    যখন সে ফিরেছে ছুটিতে, লাগে ভাল, বেশ কয়েকদিন পরে
    নতুন দোকান গুলি কবে জন্মাল? আখাম্বা মন্দির
    স্টেশনের রাস্তার ধারে? এত ভিড় ছিল নাকি আগে
    এত অটো টোটো রিক্সা গাড়ির ভিড়? চেনা মুখ নেই বলে
    সে গিয়ে পৌঁছল তার ছোট নদীটির ধারে।

    সেখানে থাকে না নদী, চলে গেছে।
    বাড়ি ভাড়া দিয়ে অন্য শহরে? বলতে পারে না কেউ
    যারা থাকে কিছুই জানে না, খুঁজতে খুঁজতে
    অবশেষে তাকে পাওয়া গেল - অসুস্থ, একা ছেঁড়া খাটিয়াতে
    ধুঁকছে পুরনো গাছের পাশে, গায়ের ক্ষত ঢেকেছে মাছিতে।

    জানা গেল, এইখান থেকে আড়াআড়ি রাজপথ গেছে বলে
    বেড়েছে জমির দাম, এছাড়া কারণ অনেক থাকে বদলের
    সমাজের চাওয়া পাওয়াগুলি, মানুষের, ফসলের দাম
    বাড়ে কমে। লোকে যায় এক ঢাল থেকে অন্য ঢালে
    এ বাজারে জিনিসের অগ্নিমূল্য বলে অন্য বাজারে
    আজ মন্দির তো কাল অন্য মাজারে - মোম জ্বালে
    মাথা নাড়ে হাততালি দেয়। তবে যদি ঠেকান যায়
    সংসারটিকে সামান্য আলো জ্বলে দু-বেলা খিদের অন্ধকারে।

    তাতে মরে যায় যাক নদী, ক্ষতি কার - কে যেন বিরহ লেখে
    নদী মরে গেলে সভ্যতার বিপদ বলে জানায় দিকে দিকে
    ওরা ওরকম, কাজের বালাই নেই - লেখা পড়া শিখে শিখে
    মূর্খ হয়েছে। জানে না ঠিক কত ধানে কতটুকু চাল
    সময় থাকতে মেপে নিতে হয় জল। কার কতখানি ঢাল।

    ঢাল তলোয়ার তাও দরকার পড়েনি এত
    অযথা অস্ত্র মিছিল আস্ফালন ধার্মিক পায়োরিয়া ক্ষত
    অলিতে গলিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে -
    অভিযোজিত অন্ধ মানুষের মন, খিদে আর তেষ্টায়
    সেইসব চেটেপুটে খায়। অনর্থক বখেড়া বাধায়
    টিকি দাড়ি টুপি নিয়ে হিস হিস করে কথা বলে চলে -
    সাপগুলি যেন বন্ধ ঘরের বাতা থেকে
    স্বাদু উষ্ণ আবহাওয়া পেলে উঠে আসে হাটের মাঝখানে।
    কে কী খায়, পরে, কার বাড়ির মেয়েগুলির
    প্রায়শই রাত করে ফেরে নিজ ঘরে - সাপেরা হিসেব রাখে সব।
    সীমাহীন অন্ধকারে পাহারা দেয় সভ্যতার শব।

    ওরাই জানিয়ে দেয় গোপন অন্ধি সন্ধিগুলি
    যেন তারা অন্য গ্রহের জীব, কাছাকাছি থাকে বলে
    তোমাদের রুটি রোজগারে এত টানাটানি -
    অন্ধ ক্ষুধার্ত মানুষ, আর যাই হোক - বেইমান নয়
    যার থেকে এইসব বিষগুলি পায়, খায় -
    তাদের শেখান মন্ত্র বলে সাপগুলি বের করে দেয়
    সর্বজন সমীপে - হাওয়ায় হাওয়ায়।


    পৃথিবীতে ধোয়া তুলসীপাতাগুলিও যথেষ্ট নিষ্পাপ নন।
    তাঁদের দল বেঁধে রাখা হয় শালগ্রাম শিলার পাশে
    তার সামনে ঘেটি ধরে প্রণাম শেখান হয় শিশুদের
    মস্তিস্ক প্রক্ষালন স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে-
    ধোয়া তুলসী গুলি কপালে চন্দন মেখে
    ফ্যাকফ্যাক করে হাসাহাসি করছে তখন।

    ক্রমে ক্রমে মানুষের শিশু শেখে চিত্তবৈকল্য হলেও
    ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে তাকে হত্যা করার নাম ধর্ম।
    মিথ্যে বলে নিজের শিক্ষাগুরুকে হত্যাও
    বীরত্বকে যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ করে না।
    গাড়লের মতো যিনি জুয়োখেলায় বউ বাজী রাখেন
    তাকে ধর্মরাজ বলা যায়। অজেয় শত্রুর কাছ থেকে
    দু-নম্বরী করে কেড়ে নেওয়া সমীচীন কবচ কুণ্ডল বর্ম।

    প্রজারা কাণাঘুষো করে কুৎসা ছড়ালে
    আদর্শ রামরাজ্যে রাজা নিজের স্ত্রী কে জ্বলন্ত
    আগুনে দিয়েছেন ফেলে।
    ক্রমে ক্রমে আরও শেখে শত্রুর ভাইয়ের
    বিশ্বাসঘাতকার সুযোগে জিতে গিয়ে
    রাজা রাম পূজিত হন অবতাররূপে যেন পরমেশ্বর
    আর একজন বিক্ষুদ্ধ সেনাপতি যুদ্ধে দাঁড়িয়ে হারালে
    তার ধর্মের প্রতিটি মানুষকে ঘটনার
    আড়াইশো বছর পরেও বলা যায় - শালা মীরজাফর।

    তাই আশ্চর্যের বাকি কিছুই থাকে না -
    শিক্ষিত স্নাতক হলে শিশূটিও জানে
    আঁতে ঘা লাগলেই হত্যা করাটা বড় অপরাধ নয়
    যদি তা যথেষ্ট করে চিহ্নিত করা যায় “ধর্মের প্রয়োজনে”।
    শেখে, নৌকা পার করার সময় এক মহিলাকে ছলে বলে
    ধর্ষণ করা হলে তাকে মহিমান্বিত করা হয়
    প্রেম নাম দিয়ে ভগবান কৃষ্ণ করেছেন বলে।
    শেখা হয় যাবতীয় অপরাধ মাফ হয় যদি থাকে
    চিরাচরিত সংস্কার, ধর্ম বা রাষ্ট্রের দোহাই-
    আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রাজা বা ধর্মগুরু
    আলবাল বলে গেলেও - তাঁদের প্রশ্ন করতে নাই।

    এত কিছু সত্বেও প্রশ্নের বেগ এলে,
    স্বাভাবিক মানবসভ্যতার সুকর্মফলে
    অথবা পশ্চিমি শিক্ষার মুক্তচিন্তা ফুসমন্তর দিলে
    কেউ যদি কথা তোলে - কিছুটা অন্য অন্য কিছু বলে
    তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা না গেলেও
    বেঁচে থাকা দুর্বসহ করে দেওয়া যায়
    সে নিতান্ত সংখ্যালঘু বলে।



    অঙ্ক তুমি ভালোই জানো, যদিও তাতে মানুষ ঠকাও ইচ্ছেমতো
    ভিক্ষে চুরি খুন খারাপি এই দেশে হায় সবই চলে ধর্ম খাপে
    তুমি লোকটা তারই মধ্যে দেশাত্ববোধ দাও ঢুকিয়ে মাপে মাপে
    তাইতো লোকে মাথায় তোলে ধান্দাবাজীর ব্যবসাটিরও বাড়বাড়ন্ত।

    বাচ্চা কাঁদলে চুপ করাতে খেলনাপাতি
    বাপ মায়েরা জোগাড় করে যা সঙ্গতি,
    তারা যদিও খেয়াল রাখে বাচ্চাগুলোর
    লাভ কীসে হয়, কীসে ক্ষতি।

    তুমিও তেমন মানুষ ভোলাও, লোভ লালসা অন্ধকারকে
    লাইসেন্স দাও দরাজ হাতে সামনে আনতে
    যাতে তোমার ব্যবসা চলে ঊর্ধ্বগতি।
    দেশকে পাঠায় সর্বনাশে এ দূর্গতি।

    স্বপ্ন দেখাও মানুষজনকে ঘুম পাড়িয়ে অন্ধ করে
    যে স্বপ্নরা ঘেন্না ছড়ায়, মানুষ মারে
    সে বিষের বীজ দাও ছড়িয়ে
    মানুষগুলোর বুকের মধ্যে অন্ধকারে।

    মনে পড়ছে? এতে তুমি রাজ্য জিতলে -
    হেসে খেলে, মানুষ মেরে নির্বিচারে।

    সে নয় হল, গরিবগুর্বো যত অথর্ব দেশবাসী
    এদের জন্য এই যথেষ্ট খড় ও ভুষি
    দু’একটা নয় ট্যারা ব্যাঁকা উল্টোটি গায়
    দেশের নামে তার চোয়ালে মারছ ঘুষি।

    কিন্তু যারা সাফসুতরো, গাড়ি চড়ে
    দেশ বিদেশেও যাচ্ছে দেদার তারা যদি কামড়ে ধরে?
    তুমিও জানো, ওদের জন্য অন্যরকম নাটক রাখা।
    জলের গেলাস তুলেই তুমি বলতে থেকো হাবিজাবি
    আহা উহু করতে করতে উলুতপুলুত - যা সব ন্যাকা।

    গ্যাস দিয়ে যাও, যা চাও বল
    মাঝে মধ্যে কেঁদেও ফেলো
    চশমা খুলে মুছে নিও সব পিচুটি
    টপ সিরিয়াল ফেল করবে নাটক দেখে
    গ্যাসের নাটক দেশাত্মবোধ চোলাই করা
    দেখেই নেশায় চেঁচায় মানুষ - মানুষ কাটি! মানুষ কাটি!

    মাঝে মধ্যে শহীদ জওয়ান দিচ্ছ মেরে সিয়াচেনে
    “কড়ি নিন্দা” চলতে থাকুক দাওয়াত খানার সঙ্গোপনে।
    এর মধ্যে জমাও তুমি চিত্রনাট্য, দাও ঢুকিয়ে নোটবন্দী,
    শ’খানেক নয় মরল এতে, তারা আবার দেবে নাকি জবানবন্দী?

    তুমি বাপু খুব সেয়ানা, এর মধ্যেও অন্য নাটক
    ঝুপড়ি জুড়ে মানুষ শুঁকছে রান্নাঘরে কার কি খানা
    কাদের ফ্রিজে জমাট বাঁধা কীসের মাংস
    সে মাংসতেও মানুষ মারে।
    তোমার দলের লোক মানে তো পরমহংস।

    ঈদের দিনে যাচ্ছে বাড়ি কাদের ছেলে নতুন জামা?
    জমবে খেলা। ফালা ফালা করে দেখাও কী খেয়েছে সে
    একটু আগে দুপুরবেলা?
    ভর্তি ট্রেনে লোকে যখন লোকারণ্য
    মানুষ মরলে, নাটক জমে তুমিই জানো,
    মাইরি তুমি মানুষ ধন্য।

    এই নাটকে সেই নাটকে থাকছে মানুষ যেই ফাটকে
    অমনি চড়ে দর বাজারের, অগ্নিমূল্য
    সুদ কমালে সঞ্চয়েতে, খুদ খাবে লোক ভুখা পেটে
    তবেই মানুষ সিধে থাকবে নতজানু কুকুরতুল্য।

    তুমি বরং ঘুরতে থাকো, ও দেশ, সে দেশ,
    সঙ্গে কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ চোর জোচ্চোর
    পরশটি থাক বাণী দিও, ফি সপ্তাহে ফের নামিও জবর খবর
    নতুন নাটক রিমোট চেলে, তবেই থাকবে শিরোনামে
    মিডিয়া তোমায় ভালোবেসেই ছদ্মবেশকে লক্ষ্মী বলে।

    চাকরি যাচ্ছে ভদ্রবেশীর,
    চাষায় দিচ্ছে গলায় দড়ি
    যে পারে নি তার জন্য তোমার পুলিশ
    বিনামূল্য গুলি ছঁড়বে এলোপাথাড়ি।

    যাক ভোগে যাক মানুষগুলো
    দেশাত্মবোধ থাকলে জেনো অমর তুমি ইতিহাসে,
    যে বাঁচবে সেই করবে ধন্য ধন্য।
    ধনে প্রাণে শেষ করেছ এ দেশটিকে
    ঘৃণা দ্বেষের নাটক দিয়ে থমকে চমকে ভয় দেখিয়ে হে ছাপ্পান্ন।


    প্রকৃত হারামি জানে তারা ছাড়া বাকিরা হারামি
    যত পারে কাঠি করে আগুন লাগায় ঘরে ঘরে
    দুই চোখ কুতকুতে অশিক্ষা অবিশ্বাস্য ভাঁড়ামি
    সংক্রামক ব্যধি বাকিদের স্বধর্মে দীক্ষিত করে।

    প্রকৃত হারামি জানে তারা ছাড়া বাকিরাই ভুল
    অন্ধত্ব বধিরতা নিয়ে চালকের আসনে বসেছে
    খর জিভ শুধুই বোঝাবে বিচ্যুতি কার কত চুল
    ক্রমাগত অপপ্রচারে শুধু নিজ জয়গান গেয়েছে।

    প্রকৃত হারামি নিজের কোলেই সব ঝোল টানে
    অপব্যাখ্যা মিথ্যের ঝুড়ি বোনে তীব্র অবিশ্বাস
    যেহেতু বধির, বলে চলে কিছুই ঢোকেনা কানে
    সামান্য বিরোধীতা পেলে টেনে ধরে স্বধর্ম ফাঁস।

    প্রকৃত হারামি পৃথিবীতে আসে পাপে অমঙ্গলে
    অসন্তোষ সীমাহীন তার হারামিপনার ফলে।



    এস দেহ, এ পৃথিবী প্রেমে জীর্ণ হয়েছে সহে
    সবুজ ঘাসের মোহে রোদ্দুর শান্তি পেতে ক্রমে
    মুখ লুকিয়েছে সেই ভ্রমে তুমিও প্রস্ফুটিত হও।
    খলখলে পথশিশু, দেরাজের বাতিল দলিল
    পুরনো বন্ধুদের ঠেকগুলি তালা পড়ে গেছে
    পথ নির্জন, ব্যাঙ্কারে শুধু যুদ্ধ সিনেমা চলছে।

    তবু দেহ, সুপ্ত ভ্রূণে যে বিশ্বাস রাখা ছিল গল্পে
    পাতালের গুহায় কাঠের কৌটোয় নিস্পৃহ ভ্রমর
    মৃদুস্বরে জীবনসঙ্গীত গায় আজও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,
    যখন জেনেছে প্রচারিত হত্যাদৃশ্য জ্বলন্ত কুপিয়ে।
    এ কাল মৃত্যু নয়, এ সামান্য রাত্রির ঝোঁক, মৌতাত
    যথা পেটভরা ভাত, পরিধেয়, আশ্রয় সু-বন্দোবস্তর
    বদলে আরকের নেশা, সহজলভ্য দেশপ্রেম মোড়কে।
    উত্তাপ রেখো, জেনো, আলোতেই বদলায় লোকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ জুলাই ২০১৭ | ৯৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ফরিদা | 11.38.4.11 (*) | ০৪ জুলাই ২০১৭ ১১:৪১61256
  • #
  • kumu | 132.162.167.163 (*) | ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৩61257
  • আশ্চর্য!!!
  • Du | 137.0.0.1 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৭61258
  • এমনই দেশের অবস্থা যে কবিতা পড়ে চিন্তা হতে শুরু করে কবির জন্য।
  • aranya | 137.0.0.1 (*) | ১৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:১৫61259
  • সেই। দু-কে ক
  • dc | 120.227.245.71 (*) | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৫:৩০61260
  • আমার তো যেকোন কবিতা পড়েই কবির জন্য চিন্তা হয়।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২১61261
  • পুরো সিরিজটা আবার পড়লাম আজ। কয়েকটা লাইন অনেকবার করে, অনেকক্ষণ ধরে।

    'মৃদুস্বরে জীবনসঙ্গীত গায় আজও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে,
    যখন জেনেছে প্রচারিত হত্যাদৃশ্য জ্বলন্ত কুপিয়ে।
    এ কাল মৃত্যু নয়, এ সামান্য রাত্রির ঝোঁক, মৌতাত
    যথা পেটভরা ভাত, পরিধেয়, আশ্রয় সু-বন্দোবস্তর
    বদলে আরকের নেশা, সহজলভ্য দেশপ্রেম মোড়কে।
    উত্তাপ রেখো, জেনো, আলোতেই বদলায় লোকে।'
  • সিকি | 132.177.247.60 (*) | ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫০61262
  • ফরিদা ...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন