এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মাতৃত্ব বিষয়ক

    Shakti kar bhowmik লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ জুন ২০১৭ | ৭১৪৮ বার পঠিত
  • এটি মূলতঃ তির্যকের 'রয়েছি মামণি হয়ে' ও শুচিস্মিতা'র 'সন্তানহীনতার অধিকার'এর পাঠপ্রতিক্রিয়া।
    --------------------------

    মা শব্দটি এখনও মহিমান্বিত । সুদূর অতীতের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তো নেই। এখনো এমন ভাবার কোন কারণ দেখি না যে ভবিষ্যতে মা শব্দের গুরুত্ব কোমলতা এবং মহিমা কমে যাবে। আমি এও বিশ্বাস করি না যে অন্তত মানব শিশুর জীবনে বাবার ভূমিকা কম গুরুত্ব পূর্ন। তবে এই আলোচনা মায়ের বৃত্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বিতর্ক এখনো এই পর্যায়ে আসেনি যে জৈবিক দিক দিয়ে শিশুর প্রাণোদ্গমে মা অথবা বাবা সমান গুরুত্ব পূর্ন কিনা। বিতর্ক সম্ভবত এবং মূলত এই কারণে যে মা'র ভূমিকা পালনকে গুরত্ব দিতে গিয়ে শ্রেণী নির্বিশেষে কতখানি ছাড়তে হয়, কেরিয়ার বিসর্জন দিতে হয়। সেটা কতোটা সমীচিন বা দরকারী, বিনিময়ে প্রাপ্তি কি বা কতোটুকু।
    নিজেকে বোঝানোর জন্য এই সত্য আরম্ভেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে মাতৃত্বের মহিমা পুরো না হলেও অনেকটাই আরোপিত। মা না হতে না পারলে নারীজন্ম বৃথা তাও নয়। বায়োলজিক্যাল মাদার না হলেও মাতৃব্যাক্তিত্ব কম হবে এও সত্য নয়। তবু দেশ কাল বা শ্রেণী নির্বিশেষে সন্তানের প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ স্থান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মায়েরা বাধ্য হয়ে বা না হয়ে ও দেন। দুচার জন ইন্দ্রা নুয়ি বা সুপ্রিয়া যোশির দৃষ্টান্ত সবার চোখে আসে বাকিদের যুদ্ধ স্বভাবিকতার মোড়ক গায়ে জড়িয়ে 'এ রকম তো হয়েই থাকে' এই তকমা র বেশি গুরত্ব পায় না। প্রশ্ন হয়তো এই যে মায়েরা কতো টুকু ছাড়বেন কেন ছাড়বেন আদৌ ছাড়বেন কিনা। প্রশ্নটি সম্প্রতি উঠতে শুরু করেছে, ওঠার সঙ্গত কারণ এবং পরিপার্শ্ব তৈরী হয়েছে। এর এথিক্যাল এবং সামাজিক দিক নিয়েও বিস্তৃত চিন্তার অবকাশ রয়েছে।
    অনেক মা উপার্জন বা পড়াশোনা ছেড়ে দেন, বা দিতে বাধ্য হন। অনেকে স্বেচ্ছায় বা বাধ্য হয়ে করেন। সমাজের উঁচুতলায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সমস্যাও আছে। কোন অবস্থাতেই কম গুরুত্ব পূর্ণ নয়। উনিশে এপ্রিল সিনেমার নৃত্যশিল্পীর ট্র্যাজেডি আমরা মনে রাখবো। তবু তাঁরা বুদ্ধির জোরে, বিত্তের জোরে নিজেদের সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা এবং মা হবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রক্ষা করতেপারেন। যদিও অনেক সময় এঁরা ও অসহায়। তবু তাঁরা নিজদের সমস্যা আমার চেয়ে আরো পরিষ্কার, বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারবেন। নীচের দিকে যাঁরা আছেন - আদিবাসী, চা শ্রমিক, গৃহপরিচারিকা এদের নিজের চোখে যেমন দেখেছি এবং চাকুরীরতা মধ্যবিত্ত মা হিসেবে সত্তরের দশকে যে অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছি আপাতত সে আলোচনাতেই আমি থাকবো।
    স্বীকার করে নিচ্ছি আদিবাসী জীবন বা চা শ্রমিকের জীবন আমার একটু দূর থেকেই দেখা। আদিবাসী মায়েদের মধ্যে যাঁরা শহর বাসিনী শিক্ষিতা তাঁরাও নিজেদের কথা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন। পাহাড়ে জীবন কঠিন। টাক্কল অর্থাত্ ছোট কুঠার জাতীয় ধাতব অস্ত্রে ধাপে ধাপে পাহাড় কুপিয়ে বীজ ছিটিয়ে ফসল বোনা। শষ্য সংগ্রহ, দূরের ছড়া, লুংগা বা ফুট নামের প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে জল সংগ্রহ, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ, বনজ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করার কাজ করতে হয় শিশু সন্তানকে পিঠে বহন করে। আমি ত্রিপুরার কথাই বলছি। পানে ভোজনে নাচে গানে নারী পুরুষে মোটামুটি সাম্য থাকলেও সন্তান পালনের দায় প্রধানত মায়েরই। তবে কঠোর পরিশ্রমী মায়ের সদাহাসিমুখ এবং শিশু মায়ের পিঠের বেতের ঝুড়িতে বা কাপড়ে বাঁধা অবস্থায় হয় নিদ্রিত বা প্রসন্ন মুখ দেখে মা শিশু দুজনকেই তৃপ্ত মনে হয়। সরল জীবন, চাহিদা সীমিত। অর্থমূল্য বেশি না হলেও পুষ্টিকর খাদ্যাভাস নিয়ে এঁরা নানা সমস্যার মধ্যেও শান্তি পূর্ণ জীবন যাপনের মন্ত্রটি জানেন। মাতৃত্বের ধকল এঁরা স্বাভাবিক বলে মেনে নেন। আর অন্তত চল্লিশ বছর বা তারও আগে চা বাগানে যা দেখেছি, এখনও শুনি সে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। মায়েরা পিঠে পাতা তোলার ঝুড়ি আর বুকে কাপড় দিয়ে বাচ্চাকে বেঁধে নিয়ে কাজ করেন, মাঝে মাঝে দুধ খাওয়ানো আর কাছে রাখতে পারার সুযোগটুকু পান, কিন্তু সে তো কোলের বা দুধের বাচ্চাটির জন্য। একটু বড় গুলো অরক্ষিত খেলে বেড়ায়। আইন বাঁচানোর জন্য একটা ক্রেশ বলে কিছু থাকে কিন্তু সে নামেই। তবু আমার মনে হয় এদের চেয়ে করুণ অবস্থা শহর বা শহরতলীর গরীব মায়েদের যাঁরা গৃহ পরিচারিকা বা ওই ধরনের কাজ করেন। খেলা বেগম প্রথম যখন দেখি বয়স কিছুতেই আঠারো র বেশি নয় কোলে বছর খানেকের শিশু। বসিয়ে রেখে বাসন মাজে অসীম ধৈর্যে বাচ্চার বায়না হাসিমুখে সামলায়। বছর আড়াই বয়েসে বাচ্চা যখন ভালো ভাবে হাঁটে, দৌড়োয় তখন জলে ডুবে মারা গেলো। সকলের অগোচরে। খেলার কাছে তার যাদুর স্মৃতি বলতে নিজের বাহুতে একটি আঁচিল যা ছুঁয়ে যাদু হাসতো। সন্তান ধারণে মায়ের মতামতের প্রশ্ন নেই। আমার চোখের সামনে খেলা বেগম আরো তিনটি ফুটফুটে কন্যার মা হোল। কি অসীম ধৈর্যে কাজ করে সংসার সামলায়, হাসিমুখ সর্বদা। শুকনো পাতার ওপর মেয়েকে শুইয়ে রেখে উঠোন ঝাঁট দেয়। সহসা একদিন এসে কেঁদে পড়ে, মেয়েটি মরে গেছে অপুষ্টি, অপরিচ্ছন্নতা জনিত ব্যাধিতে। খেলা বেগম এমন অনেকের প্রতিনিধি যাদের মা হওয়া না হওয়া সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বা সচেতনতা কোনটাই নেই। জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করবে না একথা বলার ক্ষমতাও নেই। এবার আমার মতো শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি মায়েদের কথা। আমার অভিজ্ঞতা অন্তত চল্লিশ বছর আগের। সব বিষয় নিয়ে যেমন ভিন্ন অভিজ্ঞতা থাকে তেমন এক্ষেত্রেও হতে পারে, তবু আমি নিজেকে অনেকের একজন মনে করেই লিখছি।
    আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের চাকুরীরতা মেয়ে। সত্তরের দশকে মা হয়েছি। খুব রক্ষণশীল নিজেও নই, পরিবার ও না। মনে রাখা ভালো, মা হওয়ার আনন্দ, নিজের মধ্যে একটা প্রাণ একটু একটু করে মঞ্জরিত হবে এমন একটা রোম্যান্টিক মানসিকতা যদি আরোপিতও হয় তবু মনে ছিলো। ইচ্ছে করে মা না হওয়ার কথা তখন মনে আসেনি এখনও কজনের আসে। তবু যখন এখন মধুর নারী ব্যাক্তিত্ব এবং প্রখর ধীমতি মেয়েরা পরিচ্ছন্ন সুযুক্তিতে সন্তান না চাওয়ার সপক্ষে নিজেদের মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে মত প্রকাশ করে, মন দিয়ে খুঁটিয়ে পড়ি, আর অবাক হয়ে ভাবি এরা কতো স্বয়ংসম্পূর্ন, কতো দৃঢ় এদের দাম্পত্য বোঝাপড়ার বন্ধন। কতো গভীর প্রত্যয় থেকে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এদের কথা মনে রেখেও বলি এখনও মায়েরা অনেক সমস্যা অনেক যন্ত্রণা সয়ে মা হতে চাইবে, কঠোর পরিণতি, নির্মম অবহেলার মুখোমুখি হবে। আপাতত আমি অনেকের একজন হিসেবে নিজে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম, নীরিহ শিক্ষকতা পেশা সত্বেও অসুবিধার মোকাবিলা করতে হয়েছিলো তাই বলি।

    কি ভাবে আরম্ভ করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না; মূলত লেখার বিষয় তো কেরিয়ার বা পেশা তার সঙ্গে সন্তানের কল্যাণসাধনের সমস্যা। আমাদের যখন বিয়ে হয় আমার স্বামী এবং পরিবারের অন্যরা আগরতলায়। আমি কৈলাশহর নামে উত্তর ত্রিপুরার একটি ছোট্ট শহরে স্কুলে পড়াই। কিলোমিটারের হিসেবে দুশোর কম কিন্তু তেলিয়ামুড়া, আঠারোমুড়া, বড়মুড়া পাহাড় বিরক্তিকর আর বিপদজনক পাকদন্ডি পথ পেরিয়ে বারঘন্টার বাস যাত্রা সত্যি দুর্গম। বিমান পরিষেবা ছিলো কিন্তু সামান্য দুর্যোগে ফ্লাইট বাতিল হোত। সেই দূরান্তে আত্মীয় স্বজনহীন পরিবেশে থাকা, খাওয়ার কথা না বলাই ভালো। টয়লেট দুর্গম। বাংলা দেশ যুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ছুটি ছাটা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তখনও বলবৎ। এখনকার মতো সহজ প্রেগনেন্সি টেস্ট তখন চালুই হয়নি। গেলাম মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য, যদি কদিন বাড়ী গিয়ে থাকা যায়। যেহেতু তখন আমার মুখের কথার ভিত্তিতে সার্টিফিকেট দিতে হবে, বয়স্ক ডাক্তারবাবুটি টাকাও নিলেন আবার সন্দেহ প্রকাশ করলেন আমার কথা সত্যি কিনা। সঙ্গে ছিলো আমার বন্ধু এবং সহকর্মী সতী। দু'জনই রাগে অপমানে জর্জরিত হয়ে ফিরলাম। দিন কাটতে লাগলো আগ্রহ আর উৎকণ্ঠায়। ভাবী মাকে সুস্থ প্রসব সম্পর্কে বা প্রসবের পরবর্তী পর্যায় সম্পর্কে অবহিত করার মতো কোন লেখালেখি তখন এখনকার মতো সহজলভ্য ছিলো না। গ্রামীণ সমাজে হয়তো মেয়েরা পরস্পরকে এসব ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে সহায়তা করেন। বাধ্যতামূলক শহুরে সফিস্টিকেসন সেই সুবিধা দেয় না। সন্তানের পিতার তো ছুটি পাওয়ার প্রশ্নই নেই। মেটার্নিটি লিভ তখন ছেচল্লিশ আর তেতাল্লিশ দিনে ভাগ করা। আগে পরে সন্তানের জন্ম হলে সেই ছুটিতেও কাটা। আমার দুটি সন্তানই ছুটি নষ্ট করলো। বলা বাহুল্য সবারই এরকম হতো। বড় ছেলে জন্ম নিলো নির্ধারিত দিনের আঠারো দিন পর সুতরাং আঠারো দিন ছুটি বাতিল। একমাস হওয়ার আগেই কাজে যোগ দিতে হবে। বিনা বেতনে ক'দিন ছুটির ব্যবস্থা হোল। বেশি নয়। বোর্ডের পরীক্ষার সিলেবাস শেষ করতে হবে। সিলেকশন গ্রেড টিচার এমনিতেই কম। দিনে পাঁচটি অন্তত পিরিয়ড। সাকিং মাদারদের কিছু সুবিধা হয়তো দেয়া যায় সদিচ্ছা থাকলে তবু কিছু সংখ্যক মুরুব্বি শিক্ষক এবং অভিভাবক মত প্রকাশ করেন চাকুরীজীবি মায়ের বাচ্চাদের একটু কষ্ট তো হবেই। বক্তব্য যতো না নীতিগত তার চেয়ে বেশি অসূয়াপ্রসূত। চাকরি করার কি দরকার না করলেই হয়। শেষ পিরিয়ড গুলোতে শাড়ীর আঁচল ভিজে যায়। শিশুকে বাড়ীতে অশিক্ষিত পরিচারিকা বোতলে খাওয়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আর মা'কে সাকার দিয়ে দুধ সাক করে স্কুলের বাথরুমের বেসিনে ফেলতে হয়, সে যে কি বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা সে বোধহয় ভুক্তভোগী ছাড়া বোঝাই সম্ভব নয়। শিশুর মুখের দুধ স্কুলের টয়লেটের বেসিনে ফেলে দিতে বাধ্য হওয়ার যন্ত্রণা এতো দিন পরে ও ভুলিনি। এই বেদনা আরো বাড়লো সম্প্রতি যখন পত্রিকায় পড়লাম সিডনি পার্লামেন্টে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন সেনেটর ল্যরিসা ওয়াটার্স তাঁর দুমাসের শিশু সন্তান আলিয়া জয়কে পার্লামেন্টে প্রকাশ্যে স্তন্যদান করেছেন এবং আরো জানলাম এই দৃশ্য ইতালি এবং স্পেনে একেবারেই বিরল নয়। শিশুর এবং মায়ের এই স্বাভাবিক অধিকার একসময় আমাদের দেশে স্বীকৃত তো ছিলোই। শিশুসন্তান বাড়ীতে রেখে জীবিকার বা পড়াশোনা করতে চাওয়া বা বাধ্য হওয়া মায়েদের এবং তাদের বাচ্চাদের দুর্ভোগ কখনো অনুকম্পা কখনো তরিয়ে উপভোগ করার বিষয় হতে দেখেছি। নিজের কথার মধ্যে আমার এক মাসির কথা না বলে পারছি না। আমার মাসি আমারও আগের প্রজন্ম, সুতরাং তাঁর আরো বেশি দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হয়েছে। মাসি আন্ডার সেক্রেটারি ছিলেন। মেসোমশাই শিক্ষক তথা কর্মচারী সংগঠনের নেতা,মানুষ ভালো কিন্তু সংসার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী একমাত্র পুত্রবধূ হিসেবে অতি বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়ির সেবা এবং তিনটি পিঠাপিঠি ছেলে মেয়েকে সামলে রোজ চোখের জল মুছতে মুছতে অফিস যেতেন এবং অসামান্য দক্ষতার পরিচয় রেখে অবসরের পর এখন শয্যাগত। এবার আবার নিজের কথা। এম এ পরীক্ষা দেয়ার আগে বিয়ে হয়ে গেলো। হয়তো নিজেরও কিছু অবহেলা ছিলো, পরীক্ষা দিলাম না। অথচ অনেক মেয়েই যেমন, অন্তত সেকালে পড়ার ইচ্ছাটা ছেড়ে দেয় তাও করলাম না, ঠিক করলাম প্রাইভেট পরীক্ষা দেবো। সন্তান এলো, ফীজ দিলাম। পরীক্ষা দিলাম না। প্রথম সন্তান যা করে তাই ভালো লাগে, ওকে নিয়েই দিন রাত আনন্দে ভেসে থাকি, শিক্ষকতা তো আছেই। খোঁটা ব্যঙ্গ বিদ্রুপও শুনি মনোযোগের অভাব নিয়ে। দু'বছর পর আবার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলাম। পরীক্ষার রুটিন এমন হোল বুঝালাম এবারও হবে না। তবুও শেষ পর্য্যন্ত ভাবলাম দেবোই পরীক্ষা। ছোট ছেলের বয়স মাত্র তিনদিন। আমার মিঠুমাসি বায়োলজিক্যাল মাদার না হয়েও তিনি অনেকের মা। ভার নিলেন শিশু পরিচর্যার কিন্তু ওইটুকু অসহায় দুগ্ধপোষ্যকে ফেলে ইচ্ছে হোল না। শাশুড়ি মা ও বললেন এই তিনদিন আগে বাচ্চা হয়েছে, মাথা ঘুরবে চোখে অন্ধকার দেখবে এবার থাক। থাকলো সে বারও।
    বুঝতে পারছি এই লেখা দীর্ঘ হচ্ছে ,ধৈর্য নষ্ট করবে অনেকরই। তবুও এই লেখা দলিল হয়ে থাক আজ থেকে চল্লিশ বছর বা তার আগে আমার মতো বা আরো বেশি যুদ্ধ করে যে মায়েরা জীবিকার দাবী, পড়াশোনা অব্যাহত রাখার লড়াই সঙ্গে পরিবার জীবনকে পর্যাপ্ত স্বচ্ছলতার অভাব সত্বেও এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, তাঁদের পায়ে ছিলো উনিশের শেকল, উড়তে চেয়েছিলেন বিশের আকাশে। আজকে একুশের দ্বিতীয় দশকে এই বিবরণ ইতিহাস ছাড়া কিছু নয় তা না। অনেকের কাছেই এই ছবিই সাম্প্রতিক।
    আরো দুএক বছর। ঠিক করলাম পরীক্ষা দেবোই। হনার্সটা করা আছে গ্র্যাজুয়েশনএর সঙ্গে। বড় ছেলের জন্মের পর আর ছোটছেলের জন্মের সময় যখন আসন্ন তখন অনেক ঝামেলা অসুবিধার মধ্যে টুক করে বি এড করে নিয়েছি। সেই বিবরণ ও আরো এক মহাভারত। বলছি না আপাতত। এম এ পরীক্ষা দেবো, স্কুল আছে, সংসার আছে। অতি অসুবিধাজনক কাজের মেয়ে আছে। আর আছে ব্যস্ত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার স্বামীর ট্যুর প্রোগ্রাম। এর মধ্যে সময় করে পড়তে বসি। ছোট ছেলে বই আর আমার মধ্যে বসে থেকে আমার মনযোগ আকর্ষণে সচেষ্ট থাকে। বড় ছেলে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে যার ছেলে আছে সে কি পড়ে? কই, অনিল বাবুর রানী তো পড়ে না। সে জানে রাণী মানে রাজার বৌ। পাশের বাড়ির বহু প্রসবীনি গৃহিনী হচ্ছেন অনিলবাবুর রাণী। তিনি সম্ভবত নিজের ইচ্ছা ব্যতিরেকেই পাঁচটি সন্তানের মা। প্রায়ই করুণ হেসে রসিকতা করেন কোথায় যাবো বলুন, মুরগী মায়ের মতো পাঁচটা বাচ্চা লাইন করে পেছনে যাবে। যাই হোক করে পাঁচ পেপার তো পরীক্ষা দিয়ে দিলাম। সিক্সথ পেপারের আগের দিন স্বামী জানালেন পরের দিন তাঁর ট্যুর আছে। তাঁরও না গিয়ে উপায় ছিলো না কিন্তু আমি অভিমান ভরে ঘোষণা করলাম, এবারও ড্রপ দেবো, মনে আশা কেউ সাধবে, এতো কষ্ট করে পাঁচটা পেপার দিয়েছো যখন এবার ড্রপ দিও না। বয়েই গেছে কারো আমাকে সাধতে। রাত তিনটের সময় উঠে চোখের জল মুছে পড়তে বসলাম। বাকি তিনটে পেপার পরীক্ষা দিলাম।ভাগ্যদেবী প্রসন্ন ছিলেন,পাশ করে গেলাম। পাশ করলাম। ছত্রিশ বছর শিক্ষকতা করলাম। সায়েন্স আর্টস কমার্স তিনটে স্ট্রিম, ওয়ান থেকে টুয়েলভ অবধি ক্লাস। সহস্রাধিক ছাত্র ছাত্রী শতাধিক শিক্ষক অশিক্ষিক কর্মচারীসহ স্কুলের প্রশাসন এবং অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনের সংকট কিভাবে অতিক্রম করেছি সে কথা বলার পরিসর এখানে নেই। সহকর্মী মহিলা ও ছাত্রীদের দেখা না দেখা সমস্যা গুলো ও বলছি না।
    ছেলেরা বুঝতো মা বাবা ওদের জন্য কতটা উদ্বিগ্ন থাকেন। সেই ছোট বেলাতেও সহজে বিব্রত করতে চাইতো না। একদিন শঙ্খ তখন চার। আমি গেট খুলে ঢুকছি। দেখি ছেলে শুকনো মুখে পথ চেয়ে জানালায়। মায়ের চোখ - কি হয়েছে শঙ্খ তুমি খাওনি এখনও? না। চোখে জল এসে গেছে। কেন সন্ধ্যা দিদি খেতে দেয়নি। না, যার ওপর দায়িত্ব ছিলো, বেতনভুক সেই মেয়েটি ফ্যান চালিয়ে ঘুমোচ্ছে, শঙ্খ ক্ষুধার্ত পেট পাটির ওপর চেপে মায়ের পথ চেয়ে অপেক্ষা করছিলো। রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতিতে ভৃত্যরাজকতন্ত্রের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার কাছাকাছিই হবে আমার ছেলেদের শিশুবয়সের অভিজ্ঞতা। তবুও সন্ধ্যা অনেকের চেয়ে ভালো ছিলো। ওদের বাবা যথেষ্ট সহমর্মী ছিলেন। শঙ্খ যখন বোতলে দুধ খায় তিনি প্রতিদিন লাঞ্চে এসে ওকে দুধ খাওয়াতেন। বাইরে থেকে উর্ধতন কেউ এলেও বলতেন এই সময় আমার ছেলেকে সময়টা দিতেই হবে। যা তখন কেন এখনো অনেকে নিজের পক্ষে গৌরবজনক ভাববেন না। তখন মোবাইল? প্রশ্নই নেই। ল্যান্ড ফোন ক'টা ছিলো। বাড়ী থেকে বেরিয়েই মনে হোত, এই বোধহয় বাচ্চাটা পড়ে গেছে, এই বুঝি বোতল মুখে বিষম খেলো। নিরবচ্ছিন্ন উদ্বেগ নিত্যসঙ্গী। তার ফল নানা ধরনের দৈহিক অসুস্থতা। আমি একবারও বলতে চাই না এই উদ্বেগ শুধুই আমার ছিলো; আমার জীবিকার প্রয়োজন ওদের বাবার ও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ছিলো। আমার চাকরি পরিবারের প্রয়োজন ছিলো আবার সমান ভাবে বিড়ম্বনাও ছিলো হয়তো। এই যন্ত্রণা আমার জীবনের সুন্দর সময়কে নিত্কণ্টকাকীর্ণ করে রাখতো।
    আর একদিন, ছোট ছেলেটি মাত্র আড়াই মাস। উচ্চমাধ্যমিকের খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব পেয়েছি প্রথম বারের মতো। গৌরবজনক কাজ বলেই বিবেচিত। খাতা দেখতে হয় সংরক্ষিত কেন্দ্রে,নিরাপত্তা বেষ্টনীতে। দিনে ত্রিশটি খাতা ভেন্যুতে বসে দেখতে হয়। দশটি করে খাতার প্যাকেট শেষ হলে স্ক্রুটিনি হয়ে যায়। ভুল পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে হেড এক্জামিনার ডেকে পাঠান। বাড়ীতে খাতা দেখার প্রথা ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষাপর্ষদে নেই। দুটো ছোটবাচ্চা বাড়ীতে থাকে। মিঠু মাসি, কণামাসি, ছোটমাসির সযত্ন তত্বাবধানে। পৌনে ন'টায় বেরোই ফিরি সন্ধ্যা ছটা নাগাদ। নিত্য লোডশেডিং, আগরতলার রাজকীয় মশক বৃন্দ গান জুড়ে দেয়। ওদের হাত থেকে বাঁচতে তুমুল গরমে মশারিই আশ্রয়। হ্যারিকেনের ম্লান আলোয় দুই শিশুই অপ্রসন্ন। ছোটটি কেঁদে তার বিরক্তি জ্ঞাপন করে। মাঝে মাঝে মিঠু মাসি বলেন, সারাদিন বেশ তো থাকিস মা ফিরলেই এরকম কেন করিস। ছ বছরের মাসতুতো ভাই শুভ বিজ্ঞ মন্তব্য করে খুকুভাই সারাদিন খাতা দেখে কেন? ওদের রাগ হয়না? তাও চালিয়ে যাচ্ছি। কর্তব্য স্বীকার করেছি, না পারলে চলবে কেন? দুদিন প্রবল বৃষ্টি। ছোট নদীখাত, নাম কাটাখাল। প্রবল বন্যা। পর্ষদ সভাপতি এসে ঘোষণা করলেন মহিলা পরীক্ষকরা অসমাপ্ত খাতার প্যাকেট জমা দিয়ে চলে যান। পুল ভেসে গেছে। গাড়ি চলছে না। প্লাবিত নদীর ওপারে দুধের শিশু এপারে নিরুপায় মা। অবস্থা অনুমেয়। টাকা? না সেবার টাকা পরীক্ষকরা প্রায় কেউ নিজেরা নেননি। শিক্ষা অধিকর্তার অলিখিত অনুরোধে একটি নামকরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্টান নির্মাণে দান করতে হয়েছিলো। একটু দুঃখ কি আর হয়নি, মেনে নিয়েছিলাম। তবে আমি স্বীকার করবো কিছুটা কম হলেও শিশু সন্তানের জন্য ওদের বাবার উদ্বেগ এবং সান্নিধ্যস্পৃহা কম ছিলো না। সংক্ষেপে সেই কাহিনী না বললে বিবরণ একপেশে হবে।
    ত্রিপুরার গন্ডাছড়া বা ডম্বুর ইত্যাদি এলাকায় চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর আগে যাতায়ত দুরূহ ছিলো। হাতির পিঠে, পায়ে হেঁটে সরকারী কাজে যাতায়ত করতে হোত। সাধারণত রিয়াঙ্গরা পথপ্রদর্শক হতেন। কথিত ছিলো এঁরা সাপ খান বলে সাপ এঁদের আশেপাশে আসেনা। শঙ্খ যখন ছয় মাসের শিশু তখন ওর বাবা সরকারী কাজে গন্ডাছড়া গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। এতোদিন পরও পুরোনো চিঠির ছত্রে ছত্রে নির্জন ডাকবাংলোয় শিশুসন্তানকে দূরে রেখে কর্তব্যরত পিতার সোচ্চার ক্রন্দনের অশ্রুআভাস ছড়িয়ে আছে।
    আর এক চাকুরীরতা মা ও সন্তানের দুর্ভোগ মনে পড়ে। ধরা যাক্ তার নাম অনুরাধা। ত্রিপুরাতেই শিক্ষকতা করতেন। বিয়ের পর কলকাতায় চলে আসেন স্বামীগৃহে। কয়েক বছর পর শিশু সন্তান সহ তাঁকে ফিরতে হয় আগরতলায়। আগেই যেহেতু পারমানেন্ট এমপ্লয়ী ছিলেন ফের চাকরিতে যোগ দিতে অসুবিধা হয়নি। কিন্তু পোস্টিং হয় মফস্বলে যেখানে একা মায়ের পক্ষে বাচ্চা নিয়ে বাস করা খুব অসুবিধাজনক। বাধ্য হয়ে ছেলেকে মোটমুটি ভালো অংকের বিনিময়ে একটি হস্টেলএ রাখতে হয়। শর্ত ছ'মাস মা অথবা কোন আত্মীয় শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। মা বিপর্যস্ত, ছেলেটি চিরকালের জন্য মানসিক সমস্যার কবলে পড়ে। এখন মা অকাল মৃত, ছেলেটি ও ভালো নেই। অনেক ঘটনা আমার মতো অনেকেই জানেন, উদাহরণ বাড়িয়ে কি হবে?
    এতো দৃষ্টান্ত টেনে না আনলে লেখাটা আরো টানটান হতো আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আজকে আমার নিজের কাছেই রচনার সৌকর্যসাধনের চেয়ে বড় এই প্রশ্ন, সন্তানের পক্ষে, তার মা বাবা এবং আপনজনের পক্ষে একটি শিশু কে পরিপালন কতোখানি আয়াসসাধ্য অপরদিকে কতো খানি প্রার্থিত, যে জীব জগতে সন্তানস্পৃহা লুপ্ত হওয়ার নয়। এতো সমস্যা সয়েও প্রাণীকুল সন্তান লোভাতুর কিন্তু আধুনিক মানুষ মানুষীরা কেউ কেউ অন্য ভাবে ও ভাবছেন। ভাবাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য যথেষ্ট প্রাঞ্জল এবং যুক্তিসঙ্গত। নিজের জীর্ণ পুরাতন বুদ্ধি নিয়ে সেই জগতটা নিয়ে ভাবি।
    কিছু মেধাবী বুদ্ধিমতী মেয়ে খুব সুন্দর ভাবে সন্তানহীনতার অধিকারের সপক্ষে বলছেন। বড়কথা জীবনসঙ্গীরা এব্যাপারে সহমত। প্রশ্নটার যথার্থতায় আমি অন্তত নিঃসন্দেহ, এই পৃথিবীকে আমরা তো নবজাতকের বাসযোগ্য করে তুলতে পারিনি উল্টো কতো না আবর্জনার আমদানি করেছি। দূষণক্লিষ্ট করে তুলেছি ধরিত্রীকে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকে তাদের অনাগত সন্তানের জন্য পৃথিবীকে যথেষ্ট নিরাপদ মনে করছেন না। সন্দেহ, রোগ, ব্যাধি, সন্ত্রাস জর্জরিত পৃথিবী। গত তেইশে মে দুহাজারসতেরো তেও ক'টি শিশু কনসার্ট শুনতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। খাদ্য বস্ত্রের ও যথেষ্ট যোগান কোথায়? কোথায় স্বচ্ছন্দ বাসস্থান? শুচিস্মিতার লেখাটি আমি মন দিয়ে পড়েছি। ওর যে যুক্তি আমার কাছে সবচেয়ে সুক্ষ্ম মনে হয়েছে, নিজের সন্তানের সুপ্রতিষ্ঠিত সুস্থ জীবনের জন্য অধিকাংশের থেকে বিচ্ছিন্ন নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে তাকে বড় করে তোলায় অনীহা।
    যুক্তিসহ লেখাটি আমার মতো অনেককে নূতন ভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করবে সন্দেহ নেই। গত শতকের শেষ দশকে একটা প্রশ্ন প্রায়শ আলোচিত হতে দেখতাম, ভারত বর্ষে প্রধানত বুদ্ধদেব পরে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য এবং সাম্প্রতিক অতীতে স্বামী বিবেকানন্দ সর্বোচ্চ মেধার তারুণ্যকে ব্রহ্মচর্যতে অনুপ্রাণিত করায় ভারতীয় সমাজে সৎ এবং আদর্শবাদী নাগরিক সংখ্যায় ঘাটতি হয়েছে। শুচিস্মিতার সঙ্গে যেহেতু ব্যাক্তিগত পরিচয় আছে ধীরস্থির বুদ্ধিমতী মাধুর্যময়ী মেয়েটিকে আমার খুব ভালোও লাগে, আমি সরাসরি প্রশ্ন করতে পারলাম, তোমাদের মতো মননশীল মানুষেরা সন্তানহীনতার সিদ্ধান্ত নিলে সমাজে কি উন্নতমনা নাগরিককের আরো বেশি অভাব হবে না? প্রত্যাশিত ভাবেই উত্তর এসেছিলো, যারা এতোদিন সুযোগ পায়নি সমুচিত সুযোগ পেলে তারাও এগিয়ে আসতে পারবে। আমার কাছে এই চিন্তার ধারাপথ অভিনব হলেও অযৌক্তিক মনে হয়নি। সব জেনে বুঝেও মানতেই হয় যে যেকোন উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের মতো মানুষ শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সৃষ্টির শেষ দিন পর্যন্ত সন্তান কামনা করে। অন্তত অধিকাংশ মানুষ। ভোরবেলা একটি কচি মুখ পরম মমতায় মুছিয়ে দিয়ে একটু পাউডার মাখিয়ে নূতন অস্তিত্বের কোমল আঘ্রাণ পেতে অনেকেই আকুল থাকবে। রাতে ঘুমন্ত শিশুমুখ সারা দিনের যন্ত্রণা ভোলাবে। সবচেয়ে বড় কথা সন্তান হীনতার সিদ্ধন্ত খুব কম ক্ষেত্রেই একার ব্যাপার। দুজনের মিলিত সিদ্ধান্ত যেখানে, সেখানে সময়ান্তরে একজন যদি এই মত থেকে সরে আসতে চায় তখন সেই মতান্তর সম্পর্ককে টালমাটাল করে দেবেই। আর পৃথিবীর যেকোন সমাজে গুহাবাসী সাধু ছাড়া মানুষ তো একা নয়। সমাজের পরিবারের প্রত্যাশা পুরোপুরি অস্বীকার ক'জনই বা করতে পারে। অতএব ধরে নেয়া যায় জগত পারাবারের তীরে শিশুদের খেলা কোনদিন থেমে যাবার মতো দুর্দিন আসবে না।
    মানুষের সভ্যতা যুদ্ধাস্ত্র নির্মাণ, স্থাপত্য, ভাষ্কর্য, সাহিত্যে, শিল্পে যতটা মনোযোগ দিয়েছে, মাতৃত্বের সহায়তায়, শিশু সুরক্ষায় ততটা মনোযোগ কখনো দেয়নি। আন্তর্জাতিক স্তরে এবিষয়ে নূতন করে ভাবতে হবে। মাতৃত্বের মহিমা কীর্তন, মাকে দেবী জ্ঞানে পূজা বিধান দিয়ে তাঁর বাস্তব অবস্থানের ফারাকটা ভুললে চলবে না। মা তাঁর জীবনের দুর্লভ সময়, তাঁর কেরিয়ার হয়তো স্বেচ্ছায়ই সন্তানের কল্যাণে ব্যয় করেন, শেষ বয়স যায় উপেক্ষা আর অবহেলায়, পিতার অবর্তমানে বিধবা মায়ের দুর্দশা অবর্ণনীয় হয়ে ওঠে। মনে রাখতে হবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, আমি বলছি অধিকাংশের কথা ।
    এখনও কাগজ খুললেই দেখা যায় কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মা এবং শিশুর দুর্গতি ।মা হতে না পেরে দুর্দশা। কতো দিকে নজর দেয়া বাকি আছে। কতো প্রতিকার এখনো বাকি। চিন্তা করতে হবে। নূতন চিন্তাকে গ্রহণ করতে হবে। শিশু কোলে নিয়ে মানব সভ্যতা অগ্রসর হবে। মায়েদের সমস্যার সমাধান না ভাবলে চলবে কি করে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ জুন ২০১৭ | ৭১৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৮ জুন ২০১৭ ১০:৪৮60472
  • বলা যায় না, কোনদিন হয়তো ফতোয়া জারি করে দিল, ৫টি সন্তান মাস্ট। পিঠোপিঠি হইলেই ভালো হয়। শুধু তাই না, মাকে একেবারে বন্ডে সই করিয়া "শিশুগণের দেখভাল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে বাধ্য থাকিতে হইবেক"।
    জয় সিয়ারাম!!!!! ঃ-)
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৮ জুন ২০১৭ ১০:৫১60473
  • কেহ যদি গাঁইগুঁই করে? তাহা হইলে----
    বুঝিতেই পারিতেছেন।
    ঃ-)
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৩:১০60474
  • দুটোর বেশি সন্তান হলে বেশি ছুটি মিলবে না!তিন নম্বর টি কে মানুষ করতে হবে না?ওটি কি ছাগলের তৃতীয় সন্তান নাকি!
  • সিকি | 158.168.96.23 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৪:৪৭60475
  • নির্মল, নির্মল।
  • pi | 57.29.128.231 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৪:৫৯60476
  • কেন, ছাগল তৃতীয় সন্তানকে মানুষ করেনা ?

    যাহোক, অরণ্যদার পোস্টের মত ভয়েসগুলো আরো আসা উচিত।তবে যদি এই নিয়ে ভুল ধারণাগুলো ভাঙে আর মেয়েদেরই সব করতে হবে, এই চাপিয়ে দেওয়াটা ছেলী, মেয়ে, পরিবার, সমাজ , সবার তরফ থেকে বন্ধ হয় বা নিদেনপক্ষে কমে।
  • রামরাহা | 37.63.133.200 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৫:১২60477
  • বিলেতে (এবং আমেরিকাতেও) হবু বাপদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। ন্যাপি বদলানো, বটল ফিডিং ইত্যাদি আবশ্যিক জিনিসের। ব্রেস্ট ফিডিং বাদ দিয়ে বাকি কাজ ভালোভাবে না করতে পারার কোনোই কারণ নেই।
  • সিকি | 158.168.96.23 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৫:৪১60478
  • সে তো একেবারেই নেই। চামচ বা ঝিনুক দিয়ে সেরেল্যাক খাওয়ানো, টয়লেট ট্রেনিং, চান করানো, খিদে বা তেষ্টা বা ব্যথা পেলে কান্না শুনে বুঝতে শেখা - কোনও কাজের জন্যেই মায়েরা নিতান্ত অপরিহার্য নয়, বাবারা সমস্তই দিব্য পারে। যদি করতে চায়।
  • Rabaahuta | 233.186.119.7 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৬:০৬60479
  • তির্যক | 121.93.217.187 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৬:৫১60480
  • মাসীমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বইমেলায়। মনে হয়েছিল একেবারে সার্থকনাম্নী একজন মহিলা। সে অবশ্য প্রাক "মামণি হয়ে" পর্ব। তার আগে থেকেই মাসীমার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি বারবার। তাই মাসীমা আমার লেখা এতটা মন দিয়ে পড়েছেন আর অনেকটাই একাত্ম হয়েছেন যেজন্য তার প্রতিক্রিয়ায় এতটা লিখেছেন, এটা আমার কাছে একটা বিরাট সম্মানের বিষয়।
    লেখাটি পড়েই বোঝা যাচ্ছে অনেক কথা, নিজের ও অন্যের অভিজ্ঞতার কথা হুড়হুড় করে মনে পড়ে গেছে। আর সত্যিই নিজের জীবনে আরো হাজারটা ভূমিকা পালন করেও শেষ অবধি মামণি হয়ে থাকা বা হয়ে ওঠার বিষয়টা স্বীকার করে নিতেই হয়েছে। মাতৃত্বের বিকল্প নয়, মাতৃত্বের সঙ্গে একাকার হয়ে থাকা আত্মত্যাগের বিকল্প খুঁজতে হয়েছে। আর খোঁজটা চলছেই।
    *****
    বিশেষ কারণ ছাড়া মাতৃত্বের দরুণ টানা ছুটি সত্যিই ৬ মাসের বেশি হওয়া উচিত নয়। কোনো প্রফেশনালের পক্ষেই ৬ মাসের বেশি কাজের বাইরে থাকা উচিত নয়। সিসিএল এর
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৬:৫২60481
  • বাবারা সব ই পারে। কিন্তু মায়ের বন্ডিং বাবাদের থাকে না। একজন মা, ন মাস ক্যারি করে বেবিকে আর ব্রেস্ট ফিডিং এ যে মা এবং বেবির বেটার বন্ডিং হয় সেটা প্রমাণিত সত্য।
    সুতরাং সদ্যজাত শিশুর ফার্স্ট ফিউ মান্থস মা এর উপস্থিতি বাবার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ।
    যেজন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ম্যাটারনিটি লিভ প্যাটার নিটি লিভার চেয়ে বেশি।
    যদি কেউ বলে থাকে মায়ের চাইতে ইন জেনেরাল বাবা বেটার কেয়ার গিভার হয় -তাহলে ভুল বলেছেন।
    আর বিলেতে ওই হবু বাবার ট্রেনিং অনেক নিয়েছি। কিন্তু তাতে করে সিদ্ধান্ত বদলে যায় না।
    এখানেই যারা বাবা আছেন,,তাদের জানতে বলছি ইনক্লিউডিং,অরণ্য -আপনাদের মধ্যে কে মনে করেন তিনি মায়ের চেয়ে বেশি কেয়ার নিতে পেরেছেন বেবির জন্মের প্রথম কয়েক মাসে।
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৭:০৫60482
  • ও আর একটা কথা । আগেই লিখেছিলাম সন্তান লালন পালনে যদি বাধ্য বাধকতা থাকে ;তাহলে মা এর দায়িত্ব প্রথমেই আসবে। কারণ মায়ের পরিচয় নিয়ে ধন্দ থাকেনা।
    বাবার পরিচয় নিয়ে থাকতেই পারে। অন্তত যতক্ষণ না
    ডি এন এ টেস্ট মাস্ট হচ্ছে।
    জেরেমি কাইলের শো দেখলেই মালুম পড়ে যাবে।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৭:১১60483
  • আমি কি ভুল বুঝছি? এইসব মহিয়সী মহিলা(ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলিনি কিন্তু)-র উদাহরণ দিয়ে এটা কি দ্যাখানো হচ্ছে না, যে দ্যাখো, ইচ্ছে থাকলেই সবাই সব প্রতিকূলতা-র ওপরে যেতে পারে। এর উল্টোপিঠের যে করোলারিটি অনুক্ত থেকে যায় (এবং জেনেরালি সেল্ফ হেল্প বুকের যে সমস্যা) তা হল, যে পারে না, তার যথেষ্ট ইচ্ছে নেই, কিম্বা পরিশ্রম করার মানসিকতা নেই, অর্থাৎ সবটাই তার-ই দোষ।
  • তির্যক | 121.93.217.187 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৭:১২60484
  • ধারণাটা সত্যিই মায়েদের পক্ষে খুব সুবিধাজনক। যারা দুই-চার-আট-দশ হিসেব করছেন তারা বোধহয় জানেন না এটা টানা ছুটি নয়। বাচ্চার ১৮ বছর বয়স হওয়া অবধি মা দরকার মত এই ছুটিটা নিতে পারেন। দুটি বাচ্চার ক্ষেত্রে নিয়মটা কি ভাল জানা নেই কিন্তু যেহেতু দুটো বাচ্চার ১৮ বছর হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই ওভারল্যাপিং থাকে তাই ছুটিটাও সেইভাবে হিসেব হয়। মাতৃত্বের ঠিক পরেই শুধু তো বাচ্চার দেখশোনা দুধ খাওয়ানো-ন্যাপি বদলানো নয়, মায়ের নিজেরও যত্ন আর বিশ্রাম দরকার হয়। মাতৃত্বের ছুটিটা তাই মা-বাবার সমান সমান হওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু সিসিএল এর ছুটিটা মা বা বাবা কে নেবেন বা কতটা নেবেন সেটা নিজেরা ঠিক করে নিতে পারলে আরো ভালো হয়।
    কিন্তু এ সবই সরকারী বা আধা-সরকারী বা অন্ততঃ সংগঠিত কর্মীদের জন্য। 'যে মেয়েটা কাজ করে খায় রাস্তায়-দর্জি দোকানে / তার ছুটি মিলবে কোথায়, তার ছুটি লেখা কোনখানে !' (বদলটুকু মার্জনীয়)
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৭:২৫60485
  • এটাও মহামতি কনফুসিয়াস এর কনফিউশন।
    নিজেরাও জানেনা ঠিক কি হলে ভালো হয়।
    যদি মায়ের সন্তান পালন ডিউটি করতে অনীহা থাকে তো প্যাটার্নিটি লিভ বাড়িয়ে ;মায়েরা কাজে যোগদান করতে পারে।এনিয়ে একটা আন্দোলন ও করা যেতে পারে।
    অথবা মহামতি বিপের সল্যুশন আছেই -দে সবকটাকে শিশু খামারে ঢুকিয়ে। রাষ্ট্র দুধ দই এর ব্যবস্থা করে দেবে।
    এটা যেন কিরকম লাগছে। ২ বছরের ছুটি ও নেবো আর বলে বেড়াবো কায়দা করে পুরুষ তন্ত্র মায়েদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে দিলো! ২ বছরের ছুটি উঠিয়ে দেবার জন্য আন্দোলন করলেই হয়!
    অনেকটা বসে লেডিস সিট্ রাখার মতন।লেডিস সিট্ দেখলে
    বসে পড়বো আর বলে বেড়াবো এটা পুরুষ তন্ত্রের চালবাজি। কেমন কায়দা করে দেখিয়ে দিলো-যে নারীরা দুর্বল!
  • সিকি | 158.168.96.23 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৮:০৯60486
  • সসঙ্কোচে আরও একবার জানিয়েই দিই, বিহ্বল মুগ্ধতার কোনও সীমাপরিসীমা থাকছে না।

    অবিশ্যি মর্মপীড় বলেছেন, সঙ্কোচের বিহ্বলতায় নাকি নিজেরই অপমান হয়। তাই সঙ্কটের কল্পনা করে বড়ই ম্রিয়মান হয়ে রইলাম ইন অ্যাডভান্স।
  • তির্যক | 121.93.217.187 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৮:৪৩60487
  • এই দুবছরের ছুটিটা অনেকেরই গাত্রদাহের কারণ হয়। সরকারী আপিসেই অনেককে এর বিরুদ্ধে বলতে শুনেছি। কিন্তু এস এম কেন যে এই আন্দোলনটা শুরু করছেন না, সেটা ভেবে অবাক হচ্ছি। শুরু করলেই নিশ্চই এই গুরু থেকেই সঙ্গে অনেককে পেয়ে যাবেন। এদিকে মায়ের অবশ্যকর্তব্য, বন্ডিং ইত্যাদি বিষয়ে পুউরো মনুসংহিতা আউড়াবেন আবার কিছু না জেনে বা আধখেঁচড়া জেনে সি সি এল এর বিরুদ্ধে গলা চড়াবেন !

    মুগ্ধতা (বা দগ্ধতা) অসংকোচেই জানালাম।
  • | 144.159.168.72 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৮:৪৬60488
  • ক্ষি বিনোদন!
    আমিও মুগ্ধস্ট!!``
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৯:১০60489
  • দু বছর ছুটি ও নেবো আবার বলে বেড়াবো ইটা কায়দা করে পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ চাপিয়ে দিয়েছে!পুরো মুগ্ধবোধ তো!
    আবার সঙ্গে অসংগঠিত কর্মী মহিলা দের জন্য সামান্য
    আহা উহু ফোড়ন দিতে ভোলে নি কেউ ই দেখছি।
  • তির্যক | 121.93.217.187 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৯:৪১60490
  • সসংকোচে জানতে চাই @ এস এম,

    একটু পূর্বাপর গুলিয়ে যাচ্ছে। মাতৃত্বের ব্যাগেজ টি (মায়ের মত কেউ পারে না ইত্যাদি) আগে চাপানো হয়েছে নাকি দু বছরের ছুটি ? আর যারা এই ছুটি পান না তারাও কি এই দায়িত্ব পালন করেন না ?
  • sm | 52.110.187.162 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ০৯:৫৬60491
  • আমার পোস্ট গুলো ভালো করে পড়ুন।
    প্রথম বক্তব্য ৬ মাসের বেশি লিভ ভারতের মতো দেশে কাম্য নয়।
    দুই ,যারা মনে করেন এটি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ কায়দা করে মা দের এক্সট্রা দায়িত্ব দিয়েছে,তাদের এই ছুটি না নেওয়াই উচিত।
    তিন,বাচ্চার বেস্ট কেয়ার গিভার মা। বাচ্চার সঙ্গে বন্ডিং মায়ের ই বেশি।
  • তির্যক | 121.93.217.187 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ১০:২৮60492
  • আপনার পোস্ট ভালো করেই পড়েছি। এটা আপনারও দায়িত্ব অন্যের পোস্ট ভালো করে পড়া।

    ১। ৬ মাসের বেশি ছুটির দাবী কেউ করেনি। আমি নিজেই মনে করি কোনো প্রফেশনালের পক্ষেই ৬ মাসের বেশি কাজের বাইরে থাকা উচিত নয়। এটা শুধু দেশের কথা ভেবে নয় নিজের (মায়ের) কেরিয়ারের কথা ভেবেও।

    ২। কিন্তু বাচ্চাকে বড় করার দায়িত্ব মানে শুধু প্রথম ৬ মাসে দুধ খাওয়ানো আর ন্যাপি বদলানো নয়। বাচ্চার শরীর খারাপ আছে, বছর বছর পরীক্ষা আছে, আরও এটা সেটা। এযাবত সেসব বাবদ ছুটি মায়েরাই নিয়ে থাকেন। চাইল্ড কেয়ার লিভ এই বাবদ ছুটি মঞ্জুর করে। সন্তানের ১৮ বছর বয়স অবধি বিভিন্ন ইন্টার্ভ্যালে মোট দু বছর (টানা নয়)। অবশ্যই এটা পিতৃতান্ত্রিক ব্যব্স্থার ফসল যে বেশির ভাগ দায়িত্ব মা-কে নিতে হয়। সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হন বাচ্চার দায়িত্ব তো তাঁদেরও নিতে হয়। তাহলে ছুটিটা তাঁরা পেলে আপত্তি কোথায় ? আদর্শ ব্যবস্থায় এই ছুটিটা বাবা / মা এর জন্য হলে ভালো হয়। তবে কোনো নিয়মই একবারে নিখুঁত হয় না। হয়তো এই নিয়মও ভবিষ্যতে পিতৃতন্ত্রের খোপ থেকে বেরিয়ে আরও সুবিধাজনক হয়ে উঠবে।

    ৩। বন্ডিং = কেয়ার গিভিং নয়
  • sm | 52.110.178.123 (*) | ২৯ জুন ২০১৭ ১১:৫২60493
  • ৬ মাসের বেশি ছুটি দাবি না করলে তো ভালোই।আমার ও তো একমত। গোল টা কোথায়?
    দুই নম্বর পয়েন্ট এ বলেছেন। সি সি এল নেওয়ার উদ্দেশ্য অনেক ঝামেলা সামলানো। যেমন বাচ্চাদের পরীক্ষা,পড়াশুনো,টিউশন ,শরীর খারাপ ও চিকিৎস্যা;ইত্যাদি।
    তা, এসব জিনিস গুলো তো বাবারা আমাদের দেশে ভালোই সামলায়।তো ,মায়েরা এসব ছুটি নিচ্ছে কেন?ছুটির দরখাস্ত তো কম পড়ে না !
    মায়েদের ই তো উচিত এই সিসিএল না নিয়ে বাবা দের দিক বলে আন্দোলন করা। এমন টি তো হতে দেখিনা।
    তিন,আমার জীবনে প্রকৃত কেয়ার গিভার আমার বাবা
    ও মা । কারণ আমার সঙ্গে এদের বন্ডিং বেটার অন্য কারোর চেয়ে। তাই ,আমি মনে করি বন্ডিং আর কেয়ার গিভিং পাশা পাশি চলে।মোটেও সমার্থক নয়।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৫60494
  • এটাও তুললাম।
  • pi | 785612.51.0112.30 (*) | ২৩ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪০60495
  • বাবা বা মায়ের ছুটি নেওয়ার অপশন থাকলে সেই মায়েরই ছুটি নেওয়া হবে/মায়ের ঘাড়ে চাপবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। দু'বছরের ছুটি হলে মা বাবা এক বছর করে দেওয়া উচিত, সিঙ্গল পেরেন্ট, মা বা বাবা হলে এক বছর।

    আর এটা কি এখনো এই স্টেজেই ?
    Gandhi told the The Indian Express that men in India would just use paternity leave as a holiday, considering that they don't even use their present quota of leaves to take care of their children.

    "Paternity leave can be considered only if, once the woman goes back to work after her 26 weeks of leave, we find that men are availing their sick leave for a month to take care of the child. Let me see how many men do that. I will be happy to give it but for a man, it will be just a holiday, he won't do anything,"

    সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে প্যাটার্নিটি লিভের লেটেস্ট কন্ডিশন জানাবেন কেউ ?
  • Paramita | 892312.221.452323.205 (*) | ২৩ মার্চ ২০১৯ ১০:২৩60496
  • খুব রিলেট করতে পারলাম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে চাকুরিরতা মা ও সরকারি কর্মচারী বাবার সন্তান হিসেবে। দুজন সারাজীবন দু নৌকোয় পা দিয়ে সমাজ, পরিবার এমনকি সন্তানের কাছ থেকেও আশাপূরণের এক অদ্ভুত ব্যালান্সের খেলা খেলতে দেখেছি।

    আর নিজে মা হিসেবে প্রথম বিশ্বের ডিফল্ট ম্যাটারনিটি বেনিফিটস নিয়েও খুব ভুগেছি। চার থেকে ছ সপ্তাহের ছুটি, যখন শরীর একদিকে ভালো করে সেরেই ওঠে না, আর অন্যদিকে রাতজাগা ও সদ্যজাত সন্তানকে প্রেপ করা ভবিষ্যতে যাতে মাকে ছাড়াও স্তন্যদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত না হয় - একমাস পরে যখন মা কাজে জয়েন করবে। বাজারের সর্বোত্তম পাম্পিং সিস্টেমও আসলে একই কাজ দুবার করে করায় - একবার দিনে সাত আটবার পাম্প করে করে দুধ সঞ্চয় করা, অন্যবার মা, বাবা কেয়ারগিভার-এর কাজ সেই দুধ দিনে বা রাতে শিশুকে খাওয়ানো, ধোয়াধুয়ি ইত্যাদি। শিশুটি একরকম সিস্টেমেই অভ্যস্ত হবে,তাই সেই অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক পাম্পিং এর ব্যবস্থা করা থেকে কর্মরতা মায়ের ছাড় নেই।

    অন্য অপশান ছিল আনপেড লিভ নেওয়া - FMLA খাতে । মাইনে ছাড়াও লম্বা ছুটি কেরিয়ারের জন্য প্রার্থিত নয়। সেই পথে যাই নি।

    পনেরো বছরে আমেরিকায় কিছু ছবি পাল্টেছে। মাদার্স রুম,ওয়ার্ক ফ্রম হোম, বাবাদের একইরকম বেনিফিট দেওয়া, FMLA কিছুটা কম্পেনসেট করা এগুলো বড়ো কোম্পানিগুলো অবশ্য কর্তব্য বলে ধরে আজকাল। কিন্তু সে আর কজন? প্রদীপের নিচে অন্ধকার, LED মোমবাতি হলেও, এখনো বেশ জ্বলজ্বলে।
  • পারমিতা | 892312.221.452323.205 (*) | ২৩ মার্চ ২০১৯ ১০:৪৭60497
  • বলতে ভুলেছি, নমাস সন্তানধারণ ও স্তন্যদুগ্ধের ব্যবস্থা ছাড়া সব কাজই বাবার পক্ষে করা সম্ভব। কর্মরতা মায়ের সবচেয়ে আগে তার সাপোর্ট সিস্টেমটি গড়ে তোলা দরকার। স্বামী, পরিবার, হায়ার্ড হেল্পার নিয়ে। বাচ্চার সব কাজ নিজের হাতে করলেই আদর্শ মা হওয়া হয়, এমনটি একদম নয়। অনেকে চাকরি ছেড়ে দেন দুদিক সামলাতে। প্রায়োরিটি কল। কিন্তু যদি কেরিয়ারও একইরকম প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে সাপোর্ট সিস্টেমের সাহায্য নিতেই হবে। সত্তর-আশির দশকে আমি দেখেছি আমার মা সারাদিন ডেলিপ্যাসেঞ্জারি করে স্কুলে প্রধানা শিক্ষিকার কাজ সামলে বাড়ি ফিরে যেটুকু সময় পেতেন আমার পড়াশুনো, নিজের বই পড়া, পরের দিনের ক্লাসের প্রিপারেশন করা এতে সময় দিতেন । রান্নার লোক চিরকাল ছিল । মা সুপারভিশন করতেন, কিন্তু নিজে করতেন না। তাতে আমার নিজের মাকে এখন একটু বেশীই মডেল করতে ইচ্ছে করে । নো অফেন্স টু যাঁরা দুদিক সামলাতে পারেন।
  • Ela | 015612.107.0112.8 (*) | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৩60499
  • দুদিক সমানভাবে কেউই সামলাতে পারে না। নিজের বা অন্যের কাছে এ ধরনের অবাস্তব প্রত্যাশা না রাখাই ভাল।

    আর এটা শুধু মায়েদের বা মেয়েদের কথা নয়। সবার জন্যই প্রযোজ্য।
  • Dyuti Mustafi | 785612.42.12.69 (*) | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩৩60498
  • লেখাটি খুব ভাবালো, ভিতর থেকে অনেক কিছু ঠ্যালা মারছে, এরকম সব মায়েরা লিখুন জীবনের গল্প এটাই মনে হয়। আর নিজে দুই সন্তানের মা হয়ে অনেক কিছু বলার আছে আজকের প্রজন্মকে। এদের চিন্তাকে আমিও স্বাগত জানাই। সাথে এদের সুবিধা অসুবিধা খুব বুঝি, ভাবায়। গুছিয়ে লিখতে হবে, দেখা যাক সে স ম য় মুড কবে হয়।
    আচ্ছা লেখাটি শংখের মায়ের, প্রণাম নেবেন কাকীমা। দেখা করার ইচ্ছে রইলো।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন