এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ছাতুমাখা, সাদা টেপজামা আর একলা বৈশাখ

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ | ১৩৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • চৈত্র সংক্রান্তি মানেই যেমন ছাতুমাখা ছিল, তেমনি পয়লা বৈশাখ মানেই ছিল সাদা নতুন টেপজামা, সুতো দিয়ে পাখি, ফুল, দুই একটা পাতা বা ঘাস সেলাই করা। চড়কতলায় মেলা বসত চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে, কিন্তু একে তো সে বাড়ী থেকে অনেক দূর, চৈত্র বৈশাখের গরমে অতদূরে কে নিয়ে যাবে, তাছাড়াও 'চড়ক' এর খেলাগুলো আমাদের দেখতে দিতে আমার মায়ের আপত্তি ছিল। ছোট বাচ্চারা আবার কাঁটা ফোঁড়া, ঝাঁপ খেলা এইসব দেখবে কী? বাচ্চাদের ঐসব 'বীভৎস' ব্যপার থেকে যথাসাধ্য দূরে রাখারই চেষ্টা করত তখন আমার মা ও আশেপাশের বাবা মায়েরা। দূরদর্শন তখনও হয় অধিকাংশ জায়গায় আসেই নি, অথবা এলেও তার গন্ডী অত্যন্ত সীমিত, সন্ধ্যেবেলায় ৩ ঘন্টা। তবে সেসব কিনা সত্তর দশক আর স্থান হল কোন্নগর-নবগ্রাম। তাই এখানে সেখানে হঠাৎ হঠাৎই সদ্যযুবক বা কিশোরদের 'লাশ' হয়ে যেতে দেখা যেত, রক্তের ছোপলাগা রাস্তা, হঠাৎই বোমবাজি শুরু হওয়া ইত্যাদিও ছিল বৈকী। তবু বীভৎস ব্যপার স্যাপার ছোটদের থেকে যতটা দূরে দূরে রাখা যায় আর কি!
    .

    আমাদের বাড়ীতে শুধু অরণ্যষষ্ঠী ছাড়া কোনও ষষ্ঠীরই চল ছিল না, নীলষষ্ঠীরও না। চৈত্র সংক্রান্তির দিন মামাবাড়ীতে কিছু একটা পুজো হত বটে, তাতে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হত। সাদা ঝরঝরে ভাতের সাথে তিতার ডাল, আলুপটলের ডালনা, কচি এঁচোড়ের তরকারী, পটলভাজা, কচি আমের টক এই হত ভোগ। কিন্তু সেদিন সকালে খাওয়া হবে ছাতুমাখা। যবের ছাতু, টকদই, আখের গুড়, কলা, পাতলা সাদা চিড়ে, খই কখনও বা দু চারটে বাতাসাও একসাথে মেখে এক মঅস্ত মন্ড বানানো হত পিতলের মাঝারী সাইজের গামলায়। তারপর তার থেকে এক এক দলা করে জলখাবারের রেকাবীতে তুলে দেওয়া হত যার যার মাপ অনুযায়ী। তখন আমাদের জলখাবারের রেকাবীগুলোও কাঁসার ছিল, দুপুর আর রাতের খাবার থালা গেলাসও কাঁসারই হত। স্টিল ঢুকতে শুরুকরে আশির দশকের শুরুর দিক থেকে, বুড়ীরমা-মাসি আর অত অত কাঁসার বাসন মাজতে পেরে উঠত না, সেই তখন জলখাবারের রেকাবী দিয়ে স্টিলের যাত্রা শুরু হয়।
    দেখেছো বদ্দিবুড়ীর অবস্থা, বলছিলাম চৈত্র সংক্রান্তির গল্প আর চলে গেছি বাসনের গল্পে! তা ঐ সংক্রান্তির সকালের ছাতুমাখাটা এমন চমৎকার নিটোল মসৃণ মাখত মা দিদারা যে সপাসপ গপাগপ একটা বড় দলা খেয়ে নিয়েও আরো একটু খেতে ইচ্ছে হত। এদিকে ছাতু যে বেদম পেট ভর্তি করে সে তো আর ছোট্টবেলায় জানা ছিল না, ফলে আরেকটু বায়না করলে মা যখন এইটুকুনি বাতাসার মতন দিয়ে বলত আর খাস না পেট ফাঁপবে শেষে, তখন মায়ের ওপরে এমন রাগ হত! ভদ্রমহিলার সব কিছুতেই বারণ খালি! আমার অবশ্য পুজোর চালকলামাখা খেতেও খুব ভাল্লাগতো আর সেটাও মা বেশী খেতে দিত না পেটব্যথা করবে বলে। তা চৈত্র সংক্রান্তিতে তো আর ইশকুল ছুটি থাকে না আর আমার আবার মর্নিং ইশকুল ছিল, তাই ছাতুমাখা খেয়েই ব্যাগ নিয়ে দৌড়।বাড়ী ফিরতে ফিরতে সাধারণত পুরুতমশাই পুজো শুরু হয়ে যেত। কাজেই স্নান করতে করতে সেসব শেষ হয়ে ভোগ খাওয়ার ডাকও পড়ে যেত। চড়কতলায় মেলা শুরু হত সেইদিনই। কিন্তু ঐ যে আগেই বলেছি সে মেলায় কেউ নিয়ে যাবে না। এর মধ্যে পাড়ায় যে সব বাড়ীর দোকান আছে তাঁরা এসে হালখাতার নেমন্তন্ন করে যেতেন।
    .
    পয়লা বৈশাখের দিন স্নান করে উঠে নতুন সাদা টেপজামা পরেছি যতদিন না টেপজামার ওপরে অন্য জামা পরার মত 'বড়' হয়েছি। সেসব টেপজামা কেনা হত গড়িয়াহাট থেকে, সাদা পাতলা কাপড়ের ওপরে সুতো দিয়ে পাখি আঁকা, ফুল আঁকা, দুইচারটে ঘাস, পাতা কখনও বা একটা মৌমাছিও। পাখিগুলোর সাধারণত পা থাকত না, শুধু একদিকের একটা ফুটকিমত চোখ, ঐ যেমন বাচ্চারা আঁকে খাতায়। আর জামাগুলো কি আরাম পরতে। যখন আর টেপজামা পরি না, তখনও সাদার ওপরে নানারকম ফুলফুল ছাপা পাতলা কাপড় কিনে জামা বানিয়ে দিত মা। জামা বানানো হত নবগ্রামের এক দোকানে, মহিলা একটু গোলমাল করতেন বটে, কিন্তু ওখানেই বানানো হত পয়লা বৈশাখের জামা, ষষ্ঠীর জামা, শুধু পুজোর জামা কেনা হত গড়িয়াহাট থেকে রেডিমেড। দিদা, মা, মামী, পিসীদের জন্যও পাতলা সাদা ছাপা শাড়ী কেনা হত, গরমের দুপুরে বাড়ীতে পরার জন্য। নরম মলমলের শাড়ী দুপুরে পরা, বিকেলে গা ধুয়ে পরার জন্য, শাড়ীগুলি এক বা দুই বছরের বেশী যেত না কখনই। ছেলেদের জন্য পায়জামাই হত বেশী, শুধু দাদুর জন্য খাদির ফতুয়া।
    .
    পয়লা বৈশাখের দিন সকালে মা বানাত ঢাকাই পরোটা, অনেকগুলি স্তরবিশিষ্ট মুচমুচে ফুসফুসে ঘিয়েভাজা ঐ অপূর্ব খাদ্যটি মা বানাত খুব কম। তবে বছরে আর কোনওদিন হোক বা না হোক পয়লা বৈশাখের সকালে ঢাকাই পরোটা আর আলুর দম হয়েছে বেশ অনেক বছর। আর দুপুরে পোলাও মাংস আর কাঁচা আমের চাটনি, লাল দইও থাকত কোনও কোনও বছর। আমাদের বাড়ীতে চিকেন ঢোকার ব্যপারে নিষেধ ছিল দিদার, কাজেই মাংস মানে পাঁঠা। আমাদের চরম অভাবের দিনেও মা কী করে যেন পয়লা বৈশাখ আর ভাইফোঁটার দুদিন ঠিক পোলাও মাংসের যোগাড় করত। হালখাতা করতে আমরা যাই নি কোনওদিনই। বাকীতে জিনিষ কেনা আমাদের বাড়ীতে নিষিদ্ধ ছিল, তাই হালখাতা করার সেইভাবে কোনও তাগিদ ছিল না। পাড়ার যাঁদের দোকান তাঁরা বেশীরভাগ বাড়ীতে দাদুকে মিষ্টি দিয়ে যেতেন, এমনি কখনও কিছু জিনিষ কিনতে বাসন্তী টী স্টোর্সে বা পরেশের দোকানে গেলে জিনিষের সাথে মিষ্টির প্যাকেট ভরে দিতেন ওঁরা। বাড়ী এসে প্যাকেট খুলে বালুশাই খুঁজতাম, ঐটা খুব পছন্দ ছিল আমাদের দুই ভাইবোনের। আর থাকত একটা করে বাংলা ক্যালেন্ডার যার প্রয়োজনীয়তা তখনই প্রায় শুন্যের কোঠায়। মা একটা টাঙিয়ে রাখত রান্নাঘরের আশেপাশে একাদশী দেখবার জন্য। বাংলা ক্যালেন্ডারে ১ লা বৈশাখ দেখে ভাইয়ের 'একলা বৈশাখ' উচ্চারণ শুনে খুব হাসায় শুনলাম নাকি আমাদের বাড়ীর প্রতিটি বাচ্চাই নাকি ক্যালেন্ডার দেখে একবার করে বৈশাখকে একলা করেছে।
    .
    বুড়ীর-মা মাসি অবসর নেওয়ার পর পিতল কাঁসার বাসনগুলোকেও আস্তে আস্তে অবসর গ্রহণ করাতে হয়। দিদার সেই মস্তবড় পিতলের গামলা কোথায় গেছে কে জানে! মা'র কাঁসার থালা গেলাস বাটি আর ছোট ছোট রেকাবীগুলো এখনও আছে একটা ট্রাঙ্কে ভরা। ঢাকাই পরোটা খাই নি আজ প্রায় আঠারো বছর হতে চলল, পোলাও মাংসও এখন আর খুব একটা হয় না। টেপজামা তো পুঁচকিগুলোকেও পরতে দেখি না আজকাল। সাদা মলমলের ছাপা শাড়ী কিন্তু এখনও পাওয়া যায়। বরং মিলের শাড়ীর বদলে ব্লক প্রিন্টের শাড়ীগুলো অনেক ভাল দেখতে। নবগ্রামে যে দিদির কাছে আমার জামা বানানো হত, ৮০-৮১ সাল নাগাদ তাঁর দোকান প্রায়ই বেশ কিছুদিন করে বন্ধ থাকত। কিছুদিন লিখলাম বটে, আসলে তা বেশ কিছু মাস, শুনেছিলাম ওঁকে নাকি কোন মানসিক চিকিৎসালয়ে ভর্তি হতে হয়, পাশের দোকান থেকে বয়স্ক মানুষটি জানিয়েছিলেন। তারপর দোকানটি একেবারে বন্ধ হয়ে থাকে অনেকদিন প্রায় দুই বছর। সেই দিদির কী যে হোল! তিনি নিজের চিন্তাভাবনার হদিশটুকু ফিরে পেয়েছিলেন কিনা সে খবর আর কিছুতেই পাই নি, কেউ বলতে পারে নি। দোকানটি পরে অন্য দোকান হয়ে খোলে। এখন তো সেটা এক ফ্ল্যাটবাড়ীর গ্যারাজ। এখনও আমাদের ছোট্ট মফস্বলে কেউ কেউ এসে হালখাতার নেমন্তন্ন করে যায়, কেউ যাবে না জেনেও, কোনও কোনও বাড়ী থেকে মিষ্টি দিয়ে যায়, মা'র এখন আর খেয়াল থাকে না তাই বর্ষীয়ান গৃহসহায়িকা ভাইকে মনে করিয়ে দেন মিষ্টি এনে রাখার কথা, পাঠাতে হবে কিছু বাড়ীতে।
    .
    জীবন -- আহা জীবন-- টেপজামা বাতিল হয়ে সাদা ফুলফুল জামা আসে, সেও বাতিল হয়ে আসে কটন স্কার্ট ব্লাউজ --- হাঁটুঢাকা ঘেরওয়ালা ফ্রক হয়ে খাটাউ ভয়েলের হাল্কা রঙের ফুলফুল শাড়ী --- খাটাউ ভয়েলও একদিন বাতিল হয় --- আসে অন্য কিছু। জীবন থামে না, ভালমন্দয় মিশিয়ে ঠিক এগিয়ে যায়।
    বছরগুলো কাটুক সকলের ভালমন্দয় মিলিয়ে, ভালর ভাগ একটু যেন বেশী বেশী পড়ে সক্কলের ভাগে, কারোর বৈশাখ একলা না হোক --- এইটুকুই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ | ১৩৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 2345.106.893423.39 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০৫47913
  • #
  • Amit | 012312.22.90056.164 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৪৭47914
  • মন ছুঁয়ে গেলো
  • শঙ্খ | 2345.110.454512.159 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ১০:২৩47915
  • বাহ
  • de | 90056.185.673423.57 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩২47917
  • খুব সুন্দর -

    ওই প্রিমিটিভ হাঁস আঁকা টেপফ্রক আমরা সবাই বোধ্ধয় পরেছি - নীচে v এর পা -

    ঢাকাই পরোটার রেসিপিটা মাসীমার কাছ থেকে নিয়ে লিখে দেবে?
  • Du | 237812.58.011212.245 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৪47918
  • আমাদেরও নববর্ষের জামাকাপড় সবাইকে দিতো মা, ফতুয়া পাজামা ছাপাশাড়ি, পেটিকোট, ঐ টেপজামা হয়ে ছিটের ফ্রক। একলা বৈশাখ বেশ উপভোগ করলাম। সবই তো রয়ে যায় মনে উঠে আসে এইরকম সব লেখায় কেমন যেন ধুধু করা সেই দিনগুলো।
  • | 2345.106.783423.207 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:২৪47919
  • দে, মাসীমার স্মৃতি আর তাঁকে সঙ্গ দেয় না। রেসিপি আমি দেখছি বাংলাদেশী বন্ধুরা নিশ্চয় দিতে পারবেন। পেলেই সর্ষেবাটায় তুলে দেব।
  • সুকি | 230123.142.450112.6 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৫০47920
  • ভালো লাগল দ-দি।

    কোন্নগরের দিকে এখন প্রচুর গরম পড়েছে, আগে এমন ছিল কিনা কে জানে!
  • শিবাংশু | 90045.205.122323.36 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:০৪47916
  • লেখাটা পৌঁছে গেলো বহুদূর। কারও শাদা টেপ, কারও শাদা গেঞ্জি। ছাতুগোলা আর বাকি সব...

    নস্টলজির মতো নষ্টামো আর কেউই করতে পারেনা। জয় হোক...
  • i | 122312.44.890112.206 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ১০:০৪47921
  • স্মৃতি ধরে টান দেওয়া আছেই, তারও বাইরে , শেষের কটা লাইন অন্য মাত্রা এনেছে।দ -র এহেন লেখা আরো পেতে চাই।

    এবারে পয়লা বৈশাখে নানা কারণে মন খুব অস্থির। আগরতলার গল্প আর এ'লেখা শান্তিজল , ক্ষণিকের ছায়া।

    শুভ হোক ১৪২৬।
  • স্বাতী রায় | 781212.194.4545.203 (*) | ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৩৭47922
  • স্মৃতি জাগানিয়া ... নরম তুলতুলে টেপ ফ্রকগুলোর কথা মনে পরে মনটা ভিজে গেল...
  • | 2345.106.673423.60 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৪47923
  • অমিত, শঙখ, থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু।

    শিবাংশু, ডিডিদাদা দেখলেই ভারী রাগ করবেন। উনি নষ্টলজি দেখলেউ কেমন রেগে যান। ☺

    দে, দু, স্বাতী, সেই টেপগুলো এখনকার বাচ্চারা পরে কিনা কে জানে! আশেপাশে দেখি না খুব একটা। আর খাটাউ ভয়েল মনে হয় উঠেই গেছে।

    সুকি, গরমকালে তো গরম পড়বেই। তবে আগে ত অনেক গাছগাছালি ছিল, তাই বোধহয় গরম অনেক সহনীয় লাগত।

    ছোটাই, ☺☺
  • dd | 670112.51.8912.136 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৮47924
  • এইসব নিতান্তো অপোপ্রচার। আমি কিছু অ্যান্টি নস্টালজি নই। তবে বলি নস্টালজি লিখতে হলে অল্প বয়সেই লিখে ফেলুন, বুড়োরা যখন লেখে তখন সবই ভুলে গেছে, বা গুলিয়ে ফেলেছে বা নিতান্তো গুল তাপ্পি দেয়। আমি আর লিখি না।

    আর কিছু প্রশ্নো, আপনেদের ছোটোব্যালায় বাথরুমে কেন্নো আর শামুক ছিলো না? মশার চোটে সন্ধ্যাবেলা বাইরে বেরুতে পাত্তেন? শিউলি গাছে শোঁয়োপোকা থাকতো ? আরশুলোর ভয়ে (কখনো উড়ন্ত) রেতের দিকে হেঁসেলে ঢুকতে পারতেন?

    কলাতে বীচি থাকতো? প্রায় সব ফলই বিকট টক হতো না? ভাগ্যক্রমে এক আদটা মিষ্টি হতো। মটরশুঁটি,ফুলকপি ইঃ মরসুমি সবজি দিন পনেরো পরেই উধাও হতো। আর রান্না করার আগে পোকাগুলান বেছে খেতে হতো। ভাত খাবার সময় কড়মড় করে কাঁকর খান নি কখনো?

    হায়,আমার নিজস্ব নস্টালজি কিরম গুবলেটে। বাকীদের কী মিষ্টি।
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:১৭47925
  • বাচ্চারা আবার নস্টালজি লিখবে কি? যুদ্ধ, দেশভাগ,দাঙ্গা, মন্বন্তর, খাটা পায়খানা কিছুই দেখে নি।
  • de | 4512.139.342312.36 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০২47926
  • এখনকার বাচ্চারা পরে না দমদি, আমারটা যখন ছোট ছিলো, এই বছর পাঁচেকের, তখন গড়িয়াহাট থেকে কিনে এনেছিলাম সখ করে। তিনি ছোট থেকেই একটু জেঠিমা গোছের, নাক সিঁটকিয়ে বলেছিলো, এতো ট্রানস্পারেন্ট হলে জামা পরার কি দরকার, খালি গায়ে থাকলেই তো পারি -

    তারপর থেকে আর আনিনি-
  • Ela | 015612.107.0112.8 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:০২47927
  • ঐ সাদা টেপজামা এখনও পাওয়া যায়। খোদ পার্কস্ট্রীট চত্বর থেকে আমি কিনলাম এই পয়লা বৈশাখে দুই কুট্টির জন্য। যারা পরে ঠিক সেরকমই খুশি আর আরাম পেল, যেমনটি আমরা পেতাম।

    দাম শুনবেন? হাতে এমব্রয়ডারি করাগুলো ৪৫ টাকা, আর মেশিনের গুলো ৪০।

    কেউ কিনতে চাইলে ঠিকানা দিয়ে দেব। ঐ দোকানে হাতে এমব্রয়ডারি করা বিছানায় পাতার সাদা চাদর আর অবিশ্বাস্য ঠিকঠাক দামে ভাল কোয়লিটির চামড়ার ব্যাগও মেলে। নিজেদের কারখানা আছে। আপনি ডিজাইন দিলে বানিয়েও দেবে।
  • Ela | 015612.107.0112.8 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:১২47928
  • ও বলাই তো হল না যে লেখাটা ভীষণ ভীষণ মনকাড়া। এ বছর পয়লা বৈশাখে আমার কিচ্ছুটি হয়নি কারণ দেওয়ার লোক হাসপাতালে। কবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে দেখি।
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:২৭47929
  • দিয়ে দেবেন তো ঠিকানাটা।
  • Ela | 015612.107.0112.8 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৩৬47930
  • মোকাম্বোর ফুট্পাথ দিয়ে একটু এগোন ফ্রীস্কুল স্ট্রীট ধরে। একটা গীটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রের দোকানের পাশে, বেশ বড় দোকান। দরাদরি চলে না তবে তার দরকারও পড়ে না। মালিক ভারি সজ্জন ও অমায়িক গোপ্পে ভদ্রলোক।
  • স্বাতী রায় | 781212.194.90067.1 (*) | ২০ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৪৫47931
  • ইসস বাথরুমে কেন্নোর কথায় মনে পড়ে গেল সব ভয়ানক গল্প - সেসব লিখলে না ....
  • pepe | 340112.21.672312.76 (*) | ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:২০47932
  • হাতিবাগানেও পাওয়া যায়, তবে প্রিন্টেড এর চাহিদা বেশি
  • | 2345.106.673423.31 (*) | ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১৫47933
  • এহেহে ম্যালা মন্তব্য জমে রয়েছে দেখি নি।

    ডিডির জন্য একটা 'নষ্টলজির ফ্লোরা ও ফনা' লিখতে হবে দেখছি। তবে আমি তো আরশোলা শামুক কেন্নো কাউকেই ভয়টয় পাই না। আমার ভাই তো কেন্নোর রঙে মুগ্ধ হয়ে ধরে মুখেই পুরে দিয়েছিল।

    এলাকে একগাদা ধন্যবাদ। স্রেফ চামড়ার ব্যাগের জন্যই যাব দোকানটায়।

    দে, অগত্যা! কি আর করবে!
  • Titir | 892312.210.780112.26 (*) | ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০০47934
  • ফিরে এল ছাতুমাখা আর পয়লা বৈশাখ স্মৃতির তরণী বেয়ে। তবে ছাতুমাখা আমাদের অঞ্চলে মুড়ি গুঁড়ো করে হত। তাতে মিশত আখের গুড় আর ঘন দুধ। এই ছাতু আবার সবাইকে দিতে হত। গ্রামে ঘরে বাস, তাই ধোপা,নাপিত, কামার, কুমোর সবাই এসে দিন ছাতু খেয়ে যেত।
    আর ছিল পয়লা বৈশাখের দিনে মাটির ভাঁড়, কুমোর দাদার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে তুলসী তলায় আর বট বা অশ্বত্থ গাছের তলায় ঝুলিয়ে দিত। মা বড়মা স্নান সেরে সেই ভাঁড়ে জল ঢেলে আসত। ভাঁড়ের তলার ফুটোতে দূর্বাঘাস গোঁজা। সেই দিয়ে সারাদিন জল পড়ত চুঁইয়ে চুঁইয়ে ।
  • শঙ্খ | 340112.242.90090012.194 (*) | ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:২৪47935
  • আবার পড়লুম, আবার মন ভরে গেলো, এবারে আর ইমোজি না, একটা কমেন্ট না করে ঠিক চলে যেতে পারলুম না।
  • Titir | 892312.210.780112.26 (*) | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০১:২৫47937
  • দ, আমাদের বাড়িতে একে বসুধারা বলত। সঠিক নাম জানি না। হয়ত অন্য নাম ও আছে।
    আর আপনি আজ্ঞে তা বাদ দিলে ভালো হয়।
  • tania | 565612.57.455623.1 (*) | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:০৫47938
  • দম দি, চোখের সামনে পষ্ট দেখতে পেলাম সব কিছু! পড়েটড়ে বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যাথা হল - আমার সত্যিই একলা বৈশাখ ছিল গো :-(

    সকাল বেলায় টিভিতে নববর্ষের বৈঠক চলত, তারপর স্নান করে নতুন জামা (টেপজামা নয়, ছিঁট কাপড়ের, বাড়িতে বানানো) পরে প্রণাম-ট্রনাম। দুপুরে ফ্রাইড রাইস আর চিকেনের ঝোল (আমাদের বাড়িতে এমনি রবিবার করে মাংস আসত না)। দুপুরে ম্যান্ডেটারি ঘুম (বছরের প্রথম দিনটা অন্তত লক্ষ্মী মেয়ে হও)! বিকেলে ঠাকুরের প্রসাদে রোজকারের বাতাসা-নকুলদানার পরিবর্তে সন্দেশ। আর কখনও সখনও কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে আসা - ঠাকুমাকে প্রণাম করতে।

    ভেবে দেখলাম, আমার নতুন বছর নিয়ে কোনো নষ্টলজি নেই - কি ইংরিজি, কি বাংলা।
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩২47936
  • ইশশ তিতির, একদম ভুলে গেছিলাম বৈশাখমাসে তুলসীগাছে বিন্দু বিন্দু জল দেওয়ার এই প্রথা। কী একটা ধারা যেন বলা হত --- একদম মনে পড়ছে না। বৈশাখের শুকনোদিনে ড্রিপ ইরিগেশানের এই প্রথা কতকাল আগে মানুষ বের করেছিল, অবাক লাগে। ভাগ্যিস মনে করালেন।

    শঙ্খ
    :-)
  • দ্যুতি | 785612.42.90023.112 (*) | ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫৩47939
  • বেশ লাগলো পড়তে। কত স্মৃতিযে মনে আসে
  • Ronita | 2405:8100:8000:5ca1::9e:86cf | ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৮:২৭506456
  • আমিও পড়েছি ছোটবেলাতে সাদা টেপফ্রক ফুল পাখি সেলাই করা। ছাতুমাখা খাইনি কখনো। ছাতুর শরবট আর পরোটা খেয়েছি।
  • | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৩530614
  • নষ্টলজি নষ্টলজি 
    (হুতোর দেখাদেখি আমিও নির্লজ্জের মতন  নিজের লেখা ভাসালাম)  cheeky
  • সুদীপ্ত | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০২530617
  • চড়কের মেলা আর নতুন জামার গন্ধ - এ দুটো বড্ড মন কেমন করা, আজকাল তো চড়কের মেলা খুব বেশী হয়ও না। ছাতু মাখা আর বড় দলা পাকানো শুনে ধাওতাল সাহুর কথা মনে পড়ল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন