এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ক্যাম্পাসিং-এর গপ্পো

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ | ৩০৭৩ বার পঠিত
  • মাস তিনেকের জন্য প্রজেক্টে লঙ্কাকাণ্ড বাধাবার কড়ারে এসেছি ব্যাঙ্গালোরে। তো শুরু থেকেই প্রজেক্টে এমন আগুন জ্বলে রয়েছে, যে আমাকে আলাদা করে আর কিছু করতে হচ্ছে না, ধুনুচির বাতাস করা ছাড়া। আগুন সেঁকছি, ঘ্যানঘ্যান করছি, আর দিল্লি ফেরার দিন গুনছি। এই সময়ে জনৈকা হেইচার মেল করে জানালেন, সারামাসব্যাপী ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টের ড্রাইভ চলেছে কর্ণাটক জুড়ে। প্রতি উইকেন্ডে কর্ণাটকের এক এক প্রান্ত। কে কোন উইকেন্ডে খালি আছো, জানিয়ে মেল করো।

    চাকরি জীবনে অজস্র ইন্টারভিউ নিয়েছি, নিয়েই থাকি। কিন্তু সে সব এক্সপেরিয়েন্সড লোকজনের ইন্টারভিউ। সদ্য কলেজ থেকে পাস করা ফ্রেশারদের ইন্টারভিউ কখনও নিই নি। কেমন করে তাদের ইন্টারভিউ নিতে হয়, তা-ও জানি না। কী যে তাদের কোয়ালিফায়িং ক্রাইটেরিয়া, কী বা তাদের জিজ্ঞেস করতে হয়, জাস্ট কোনও আইডিয়া নেই। আমি যে কলেজটি থেকে পাস করেছি, সেখানে সেই কালে ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট হত না। ট্রেনিং প্লেসমেন্ট অফিসার ঝম্পটি সর্বক্ষণ কচর মচর করে পান চিবোতেন, আর বড় বড় বাতেল্লা মারতেন, যাশুনে ঐ কিশোর বয়েসেও কেশরাজি জ্বলে যেত। কিন্তু কিছু বলার থাকত না। আমাদের আগের বছরে একবার এসেছিল "সুভাষ কনস্ট্রাকশন" নামে কলকাতার একটা সিবিল কোম্পানি, আর এয়ারফোর্স এসেছিল রিটেন টেস্ট নিতে। কাউকেই সিলেক্ট করে নি। আমাদের বারে আমাদের বাগডোগরা যেতে হয়েছিল রিটেন টেস্ট দিতে। দু একজন পাস করেছিল, পরে ফিজিকাল ফিটনেসে কেটে যায়। আরেকটা কোন কোম্পানি যেন এসেছিল মেকানিকালের, মাত্র দুজনকে ফাইনাল রাউন্ডে সিলেক্ট করে জিজ্ঞেস করেছিল, শিবপুর যাদবপুরকে তো আমরা মাসে বারো হাজার করে দিই, তোমাদের ন হাজার দিলে চলবে তো? মেকানিকালের টপারটি বেশ স্মার্ট, খুব ঠাণ্ডা মাথায় "বাবার লুঙ্গি দেখেছো?" বলে বেরিয়ে এসেছিল। রতন টাটার ট্রাক নিয়ে এসে ইঞ্জিনীয়ার ভর্তি করে ফেরত যাবার কথা পানখোর ঝম্পুর মুখের রূপকথার গল্প হয়েই থাকল। আমরা বেরিয়ে এলাম কলেজ থেকে খালি হাতে। ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট অতএব, আদতে কী জিনিস হয়, আমরা কোনওদিনই নিজের চোখে দেখি নি। অতএব, এই সুযোগ, ছাড়ব কেন?

    আমার পুজোর ছুটি ইত্যাদি ক্যালকুলেট করে দেখলাম উনিশ-কুড়ির উইকেন্ডে খালি আছি। যেমনই হোক, এইচ আর নিশ্চয়ই ব্রিফ করে দেবে, বাচ্চাদের কীভাবে ইন্টারভিউ নিতে হয়, জয় গুরু বলে নিজের নামটা দিয়ে দিলাম।

    চোদ্দ তারিখে যখন "হেইচার"এর ফোন এল, জানলাম আমাকে বেলগাম আর বাগালকোটের দুটি কলেজে যেতে হবে উইকেন্ডের দুই দিনে। থাকার ব্যবস্থা নাকি হুবলিতে। ভূগোল বইতে হুবলির নাম দেখেছি, বেলগাম-এর নামও দেখেছি। বাগালকোট কোথায় তা জানি না, নামও শুনি নি। গুগুল ম্যাপ দেখে মোটামুটি একটা আইডিয়া পেলাম, যে সেটা প্রায় মহারাষ্ট্র বর্ডার ঘেঁষা।

    হুবলির দূরত্ব প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার। লুরু থেকে। কিন্তু যেতে নাকি সময় লাগবে প্রায় দশ থেকে এগারো ঘণ্টা। তিনটের সময়ে অফিসের গেট থেকে বাস ছাড়বে।

    অতএব, শুভদিনে, শুক্রবার বিকেল তিন ঘটিকায় গুটিগুটি অফিস থেকে বেরিয়ে বাইরে অপেক্ষমান বাসে উঠে পড়লাম। কোঅর্ডিনেটর ছেলেটির নাম অর্পিত, বেশ হাসিখুশি ছেলে, মুখ দেখে মনে হল এ অন্তত হিন্দি বলতে পারে।

    বাস ছাড়ল সাড়ে তিনটেয়। কাউকে চিনি না। পুরো বিজাতীয় ভাষায় হুল্লোড় এবং মাঝেমাঝে হিন্দিতে কিছু কিছু কমেন্ট ভেসে আসছিল। খানিকক্ষণ আগেই আমার এক খুব প্রিয়জনের চলে যাবার খবর এসেছে। মন বসছিল না কিছুতেই। জানলার একটা কোণ ঘেঁষে তাই বসে বাইরেটা দেখতে লাগলাম।

    এরই মধ্যে কে একজন বাসের ভিডিওতে একটি কন্নড় কিংবা তামিল মুভি লাগিয়ে দিলেন। ব্যস, সাড়ে সব্বোনাশ। কানফাটানো বক্সের ঠিক নিচেই আমার সীট, আদ্যোপান্ত কিছুটি বুঝছি না, খালি নাচ, প্রেম আর ঢিসুম ঢিসুম। কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়? আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    ঘুম যখন ভাঙ্ল, তখন বাস বেরিয়ে পড়েছে লুরু ছেড়ে। চওড়া হাইওয়ে। লুরুর রাস্তাঘাট টিপিকালি সরু সরু, অনেকটা আমাদের ব্যান্ডেল হুগলির জিটি রোডের মত, কিন্তু বাইরের এই ন্যাশনাল হাইওয়েটা বেশ সুন্দর চওড়া, এবং ওয়েল মেনটেইনড।

    জনতার সমবেত আবেদনে পরের সিনেমা লাগানো হল, চেন্নাই এক্সপ্রেস। যাক, তবু তো হিন্দি। মন দিয়ে চেন্নাই এক্সপ্রেস দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলাম অনেকখানি পথ।

    (চলবে)


    টেস্ট --
    নটা নাগাদ "কামাত হোটেল" নামক কোনও একটা রেস্টুরেন্টে বসা হল ডিনার করার জন্য। রেস্টু-টি পুরো ভেজ। কী নিই না নিই ভাবতে ভাবতে নর্থ ইন্ডিয়ান থালি নিলাম। খেতে শুরু করে বুঝলাম, মুক্তি নেই। একটা ফুলকপি টাইপের কিছুর ঘ্যাঁট ছিল, আরেকটায় মাশরুম, বোধ হয় লাউ বা স্কোয়াশ এইসবের ঘ্যাঁট ছিল। দুটি খরখরে কাঠ হয়ে যাওয়া রুটি, একটি টিপিকাল ব্যাঙ্গালোরের স্বাদযুক্ত ছোট্ট একবাটি "বিরিয়ানি", তার সাথে আরও ছোট ছোট বাটিতে দই এবং রায়তা তো আছেই। কী আর করা, খুঁজে খুঁজে ফুলকপি আর মাশরুম খুঁজে কোনও রকমে দুটো রুটি খেলাম। সবকিছুই ইনভ্যারিয়েবলি টক টক স্বাদ, নর্থ ইন্ডিয়ান থালি তো কী হয়েছে।

    আমার পাশে বসা দুই পাবলিক দেখলাম দিব্যি চেটেপুটে, আক্ষরিক অর্থে বিরিয়ানি আরও একবাটি চেয়ে নিয়ে তাতে হড়াস করে দই রায়তা ঢেলে হাত দিয়ে চটকে মেখে হড়াস হড়াস করে হাত ঘুরিয়ে খেয়ে ফেলল, স্টিলের থালা ঝকঝক করছে। এদিকে আমার থালায় তখনও অসম যুদ্ধের ক্ষতচিহ্ন বর্তমান। হে আল্লা, আমার কেন এত খাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়! শুরুই হল এই দিয়ে, এখনও আগামী দুদিন কী আছে, কে জানে, এই ভেবে আরেকটা পাঁপড় টাইপের রুটি চেয়ে নিলাম এবং কোনওমতে খেলাম। লম্বা জার্নিতে বেশি না খাওয়াই ভালো।

    রাত প্রায় পৌনে দুটো নাগাদ হুবলিতে হংস হোটেলে পৌঁছলাম। বুকিং করাই ছিল। রুমে ঢুকলাম, ড্রেস পাল্টে সোজা ঘুমিয়ে পড়লাম। শোবার আগে মোবাইল খুলে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম, এই হোটেলে ওয়াই ফাই নেই।

    পরদিন সকাল আটটাতেই উঠতে হবে, নাকি সেখান থেকে আরও তিন ঘণ্টার জার্নি বেলগাম, তো সকালে তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। ব্রেকফাস্ট মানে তো সেই দুখানি চকচকে স্টেনলেস স্টিলের সিলিন্ডার ভর্তি ইডলি, আর বড়া, আমার ডিপার্টমেন্ট নয়, জনতা রে-রে করে সেদিকে ধেয়ে গেল, আমি হাল্কা করে হোটেলের লোকটাকে বললাম আমাকে ব্রেড ওমলেট করে দিতে, তা সে চমৎকার ব্রেড ওমলেট জ্যাম ইত্যাদি বানিয়ে দিল।

    বাস ছাড়লা প্রায় সাড়ে নটায়, এবং পৌনে বারোটা নাগাদ আমরা প্রথম ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে পৌঁছলাম। বেলগাম।

    হেইচারবাবু প্রথমেই বলে দিলেন, ফোক্‌স, এটা কর্ণাটকের প্রায় রুরাল বেল্ট, শহরের চাকচিক্য থেকে অনেক দূরে, আমরা নিয়মিত এখান থেকে লট লট ভালো ছেলেমেয়ে পেয়ে থাকি, হয় তো এদের সবার কমিউনিকেশন স্কিল খুব ভালো হবে না, একটাই রিকোয়েস্ট, শুধু ভালো ইংরেজি বলতে পারে না বলে কাউকে রিজেক্ট করে দিও না। টেকনিকাল স্কিল দ্যাখো, অ্যানালিটিকাল স্কিল দ্যাখো, প্রবলেম সলভিং ক্যাপাবিলিটি দ্যাখো, তার বেসিসে সিলেকশন করো।

    খুব ভালো কথা। সব্বার তিন রাউন্ড ইন্টারভিউ হবে। টেকনিকাল রাউন্ড, বা টিআর, ম্যানেজারিয়াল রাউন্ড বা এমআর, আর হেইচার। আমার কিনা ডেজিগনেশন একটু ওপরের দিকে, তাই আমাকে দেওয়া হল এমআর। টিআর আর এমআর প্যানেল একসাথে বসবে। তারা সিলেক্ট করলে এইচারের কাছে যাবে।

    ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। যদিও আমি কাউক্কে জানাই নি আমার ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনীয়ারিং ছিল গ্র্যাডে, এইচারকে বলেছি কম্প সায়েন্স, পোস্ট গ্র্যাডের হিসেবে, তবু আমাকে টেকনিকাল অন্তত নিতে হবে না, তাতে বেশ খুশি হলাম। আমার সাথে যে ছেলেটি বসল টিআর হিসেবে, তার সাবজেক্ট ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকম। সে বলে দিল, তাকে যেন ঐ বিষয়েরই ছেলেমেয়ে পাঠানো হয়। সঙ্গে কম্প সায়েন পাঠানো যেতে পারে, সিকিবাবু সামলে নেবেন।

    প্রথম ছেলে এল। এরা অবশ্য এখনও পুরো ইঞ্জিনীয়ার নয়, সবে থার্ড ইয়ার কমপ্লিট করেছে, সাত নম্বর সেমিস্টারে আছে এখন। ইলেকট্রনিক্স। আমার সঙ্গের টিআর তাকে সুকুমার রায় স্টাইলে প্রশ্ন করতে লাগল, ফড়িংয়ের কটা ঠ্যাং, আরশুলা কী কী খায়। আসলে সে জিজ্ঞেস করেছিল কোন একটা যেন আইসি-র (integrated circuit) কটা পিন থাকে। তারপরে রেডিও সিগন্যাল নিয়ে পড়ল, ক ধরণের রেডিও সিগন্যাল হয় (এ তো আম্মো জানি), ফ্রিকোয়েন্সি মড্যুলেশনের রেঞ্জ কত থেকে কত। এইখানে এসে কবি কেঁদে ফেললেন। টিআর সাহায্য করল, তোমাদের বেলগামে এফ এম রেডিও নেই?

    - হ্যাঁ আছে। একটা চ্যানেল আসে।

    - তার ফ্রিকোয়েন্সি কত?

    - নাইন্টি টু পয়েন্ট ওয়ান ... হার্টজ।

    - হার্টজ?

    - না না, গিগাহার্টজ।

    - গিগাহার্টজ?

    - ছেলেটা ঘাবড়ে ঘুবড়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

    আমি সস্নেহে জিজ্ঞেস করলাম, নার্ভাস লাগছে? ভয় পাচ্ছো কেন? আচ্ছা চলো, তোমার হবি কী কী বলো।

    সে খানিক কিছু বলল, চেস খেলা ইত্যাদি। আমি বললাম, তা চেস যখন খেলো, লজিকাল রিজনিং নিশ্চয়ই তোমর পছন্দ হবে। তুমি বললে সি জানো, একটা ছোট প্রোগ্রাম আমাকে লিখে দেখাবে? এক থেকে পঞ্চাশের মধ্যে যতগুলো প্রাইম নাম্বার আছে, তার একটা লিস্ট আমাকে বানিয়ে দিতে পারবে?

    পেন আর কাগজ হাতে নিয়ে ছেলেটা কেমন যেন অসহায় ভাবে বসে রইল, তারপরে এসটিডিআইও ডট এইচ লিখতে শুরু করল খুব ধীরে ধীরে।

    আমি থামিয়ে বললাম, ডেকোরেশন ছাড়ো। তোমাকে দিলাম জিরো আর ফিফটি, দুটো নাম্বার। দুটো ভেরিয়েবল। তুমি শুরু প্রাইম নাম্বারের লজিকটা আমাকে লিখে দেখাও।

    লক্ষ্য করে দেখলাম, পেন ধরা ছেলেটার হাত ভয়ঙ্করভাবে কাঁপছে। সাড়ে বারোটা বাজে, জিজ্ঞেস করলাম, লাঞ্চ করেছো? - না করি নি এখনও। -সকালে কখন খেয়েছো? তুমি কি হাংরি? - না, সকাল থেকে কিছু খাই নি, প্রিপারেশন নিতে গিয়ে ...

    কী ঝামেলা। বললাম, আচ্ছা, তোমাকে প্রোগ্রাম লিখতে হবে না, তুমি এমনি বোঝাও, প্রাইম নাম্বার বের করতে গেলে তুমি কী কী করবে।

    কুঁতিয়ে কাঁতিয়ে অনেক কষ্টে বলতে পারল, তবে ভাগশেষটা সি-তে কীভাবে লেখে, সেটা সে বলতে পারল না। অথচ সিক্সথ সেমেই নাকি সে সি শেষ করে এসেছে।

    অগত্যা আনসান দু চাট্টে কোশ্চেন করে তাকে "সিলেক্ট" করে এইচারের কাছে পাঠিয়ে দিতে হল।

    ফুলফর্মে ইন্টারভিউ শুরু হল।

    (চলবে)
    এর পরে এক খুকি, তার পরে আরো এক খুকি, তারপর খোকা, তারপর খুকি, এইভাবে চলতে থাকল ইন্টারভিউ। মূলত ইলেকট্রনিক্সের ছেলেমেয়েরাই আসছিল আমাদের টেবিলে। যেটা খুব কমন দেখলাম সবার মধ্যে, তারা বিভিন্ন আইসিতে কটা করে পিন থাকে জানে, কিন্তু এফ এম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ জানে না। কেউ না। কম্পিউটার সায়েন্সের এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িতে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে? মেয়েটি বলল, হ্যাঁ আছে। বললাম, অ্যাসেম্বলড না ব্র্যান্ডেড?

    খুব নার্ভাস হেসে মেয়েটি জানাল, ওটা তার দাদার কম্পু, তাই অ্যাসেম্বলড না কী, সে জানে না। তা ঠিক। বললাম, স্পেসিফিকেশন বলতে পারবে? মেয়েটি থেমে থেমে মোটামুটি বলতে পারল, কেবল ভুল করে হার্ড ডিস্ক পাঁচশো বারো এমবি বলে ফেলেছিল, পরে জানা গেল, হার্ড ডিস্ক কেন, র‌্যামও পাঁচশো এমবির থেকে অনেক বেশি, সব হল, কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, হার্ড ডিস্ক আর র‌্যামের পর আর কিছুই বলতে পারল না। অনেক হিন্ট দেবার পরে "বিট" বলে একটা স্পেসিফিকেশন হয় কম্পুতে, সেটা বলতে পারল। কিন্তু সেটা কার স্পেসিফিকেশন, অপারেটিং সিস্টেমের, না প্রসেসরের, সেটা বলতে পারল না।

    টেকনিকাল দূরে রেখে প্রত্যেককেই টুকটাক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি। আমি ম্যানেজার্স প্যানেল বলে কতা! বাড়িতে কে কে আছে, বাবা / মা কী করেন, দূরে পোস্টিং পেলে যেতে অসুবিধা হবে কিনা ইত্যাদি খেজুর। লক্ষ্য করে দেখলাম, প্রায় সমস্ত ছেলেমেয়েই হয় বেশ গরীব ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে, নয় তো বাড়িতে আগের জেনারেশনে লেখাপড়ার তেমন চল নেই। বাবা চাষ করেন, বাবা টেলারিং শপে কাজ করেন, বাবার বাজারে সব্জীর দোকান আছে ... এই গ্রুপটাই বিশাল। খুব কম ছেলেমেয়ে দেখলাম যাদের বাবা সরকারি বা প্রাইভেট চাকরিতে আছেন।

    মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে সবাইকেই একটা প্রশ্ন করি, তুমি যদি এম টেকের চান্স পাও, আর সাথে এই চাকরিতে জয়েন করারও চান্স পাও, কোনদিকে যাবে, কেন যাবে? প্রায় প্রত্যেকেই শুরুতে বড় বড় আদর্শের কথা বলে (আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনীয়ার হতে চেয়েছিলাম, আমি বড় প্রোগ্রামার হতে চাই, সেটাই আমার অ্যাম্বিশন ইত্যাদি) খুব কুণ্ঠিতভাবে অবশেষে জানাল, পরিবারকে সাপোর্ট দিতে তারা চাকরিই বেছে নিতে চায়। বেশির ভাগেরই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, এর পর পড়াশোনা বেশিদূর টেনে নিয়ে যাবার ক্ষমতা তাদের বাড়ির নেই।

    আমাদের দোকান সম্বন্ধে কী জানো? এর উত্তরে কেউ বলল, আমাদের দোকান নাকি গ্লোবালি এক নম্বরে, কেউ বলল, ইন্ডিয়াতে টপ, কেউ ভালো করে ওয়েবসাইট গাঁতিয়ে এসেছে, পুরো প্রথম প্যারাগ্রাফটা মুখস্ত বলে দিল, কটা দেশে অপারেশন, কত ডলারের সফটওয়্যার এক্সপোর্টের বিজনেস, স-ব। এক খুকি অত্যধিক জোশে (প্রশংসা করেছিলাম, বাবল সর্ট আর হিপ সর্ট করে দিয়েছিল, আর প্যালিনড্রোম আইডেন্টিফিকেশনের প্রোগ্রামটা প্রায় ঠিক লিখে দিয়েছিল) বলে বসল, তার নাকি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল এই কোম্পানিতে যোগদান করার। হেহে করে হেসে প্রশ্ন করলাম, ছোটবেলায় তুমি কী জানতে এই কোম্পানি সম্পর্কে? মেয়েটা খুব লজ্জা পেয়ে বলল, না, আমার দাদা এক সময়ে এই কোম্পানিতে চাকরি করত, দাদার কাছে খুব শুনেছি।

    দুপুর নাগাদ কলেজের তরফে লাঞ্চ। চিরাচরিত দক্ষিণ ভারতীয় রুটি (উত্তর ভারতীয় রুটির সঙ্গে এর বিস্তর ফারাক, এগুলো দুখোল হয়ে ফোলে না, স্বাদ আলাদা, প্রায়শই এর অর্ধেক কাঁচা থেকে যায়), এর সাথে একটা টক টক পনিরের তরকারি ছিল। তাই দিয়ে কোনওমতে ক্ষুন্নিবৃত্তি করলাম।

    বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ বেলগামের কলেজে রিক্রুটমেন্ট শেষ হল, ওভারঅল বোধ হয় দশজন রিজেক্টেড, বিরানব্বই জনের থেকে। আমার টেবিল থেকে দুজন।

    ট্রেনিং প্লেসমেন্ট অফিসার গদগদভাবে সবার হাতে একটা সুন্দর প্যাকিং করা গরম প্যাকেট তুলে দিলেন যাবার সময়ে, লোকাল সুইটস। বাসে উঠল সমোসা, চিপসের প্যাকেট, জলের বোতল। সমস্তই কলেজের এক্সপেন্সে। হইহই করে এগিয়ে চলল বাস।

    সমোসাটায় মুখ লাগিয়ে বুঝলাম ওটা আমি খেতে পারব না। অবিশ্যি আমি উত্তর ভারতীয় সমোসাও খুব ভক্তিভরে খেতে পারি না। বাঙালি সিঙাড়ার কাছে কোনওটাই কম্প্যারিজনে আসে না।

    গড়গড়িয়ে এগিয়ে চলল বাস। পরের গন্তব্য, বাগালকোট। প্রায় মহারাষ্ট্র বর্ডারের কাছে। এখান থেকে চার ঘণ্টার রাস্তা।

    সমতল রিলিফ পাল্টে এইবার একটু আধটু ঢেউখেলানো রাস্তা দেখা গেল। পশ্চিমঘাটের কাছাকাছি এসে গেছি আমরা। একটা পয়েন্ট থেকে দেখলাম, রাস্তার ধারে মাইলস্টোন, পানাজী, ৯৭ কিলোমিটার।

    কোঅর্ডিনেটর অঙ্কিত, যাকে দেখে জার্নির শুরুতে মনে হয়েছিল, এ হিন্দিভাষী হলেও হতে পারে, পাশে এসে বসল। হ্যাঁ, মোরাদাবাদের ছেলে, কিন্তু কোঅর্ডিনেট করছিল বলে আমি ওকে রিক্রুটমেন্ট টিমের এমপ্লয়ি ভেবেছিলাম, তা সে নয়। নিতান্তই বাচ্চা, এ বছরের গোড়ায় জয়েন করেছে, ট্রেনিং পিরিয়ড শেষ হয়েছে, প্রজেক্ট পায় নি, তাই এইচার থেকে ওকে এবং আরো কয়েকটা বাচ্চাকে এই কোঅর্ডিনেশনের দায়িত্ব দিয়েছে। আমায় খুব করে বলল, লুরুতে যদি কোনও "টেস্টিং"এর প্রজেক্টে ওকে কাজ দিয়ে দিতে পারি। কী আর বলব, আমি নিজেই লুরুতে অতিথি কয়েক সপ্তাহের জন্য।

    রাত সাড়ে আটটা নাগাদ, চতুর্দিক জনমানবহীন এলাকায় একা জ্বলজ্বল করতে থাকা একটা রিসর্টের সামনে এসে দাঁড়াল বাস। এখানেই ডিনার হবে। বাগালকোটের কলেজের টিপিও ব্যবস্থা করে রেখেছেন।

    আমরা বাস থেকে নামলাম।
    বাগালকোটের কলেজের টিপিও এগিয়ে এলেন। শান্ত সৌম্যদর্শন অর্ধপ্রবীণ মানুষ। সবিনয়ে বাসশুদ্ধু লোককে জানালেন, এইখানেই কিঞ্চিৎ ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলেজ এখান থেকে দশ কিলোমিটার মাত্র, খেয়ে দেয়ে আমরা যাবো সেই কলেজের গেস্টহাউসে। সকালে উঠে রিক্রুটমেন্ট ড্রাইভ শুরু হবে।

    একটানা বাসজার্নি করে আমরা সবাইই তখন বেশ ক্লান্ত। টিপিও ভদ্রলোকের একটি বাক্যে আমি নিমেষে চাঙ্গা হয়ে উঠলাম। বেশ বড় ডাইনিং এরিয়ার দুটি প্রমিনেন্ট বিভাগ। তার একটি বিভাগের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে তিনি বললেন, "নন-ভেজও আছে।"

    গত চব্বিশ ঘণ্টা ধরে ভেজ খেয়ে আমার তখন বেশ বন্য অবস্থা, আবার ভেজ খেতে হলে কাউকে গুঁতিয়ে দিতেও পারতাম, নন ভেজ শুনে প্রাণে বল এল। তড়িঘড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবারের লাইনে দাঁড়ালাম।

    নামেই নন ভেজ, খুব বেশি অপশন ছিল না। বাটার চিকেন। ব্যস। রুটি আর বাটার চিকেন নিয়ে বসলাম। খানিক খাবার পরেই বুঝলাম, এ-ও দক্ষিণ ভারতীয় বাঃ চিঃ। বেশ টক টক স্বাদ। আরও খানিকটা খাবার পরে বুঝলাম, যে পিসটা ছেঁড়ার চেষ্টা করছি, সেটা আধসেদ্ধ। হাল ছেড়ে আরেকটা পিসে কামড় দিলাম, এবং আবারও হাল ছেড়ে আরেকটা পিসে। বুঝলাম কপালে আজও দুঃখ আছে। অগত্যা বাঃচিঃ-র গ্রেভি দিয়েই খানিক রুটি খেয়ে ক্ষান্ত হয়ে আইসক্রিমের দিকে এগোলাম।

    খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার বাসযাত্রা শুরু হল। তবে এবার মাত্রই দশ কিলোমিটার। খানিকক্ষণের মধ্যেই একটা ঘোরানো পথ বেয়ে বাস পৌঁছে গেল টিলার মাথায়, সেখানে একটা ঝক্কাস গেস্টহাউস। শান্ত নিঝঝুম টিলাপাহাড়, দূরে দূরে লাইন দিয়ে শহরের লাইট, একটু দূরেই কীসের যেন একট ফ্যাক্টরি, চিমনির কাছে লাল আলো জ্বলছে, নিবছে। মায়াবী পরিবেশ একেবারে। হাল্কা ঠাণ্ডা আমেজ চারদিকে।

    আমার সাথে টিআর প্যানেলে যে ছেলেটা ছিল, তার সাথে একটু হাঁটতে বেরোলাম। ছেলেটা এই এলাকার। বলল, এই অঞ্চলে মূলত লিঙ্গায়েতরাই মেজরিটি। লিঙ্গায়েত কারা? ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কয়েকজন বাবাজীর ছবি টাঙানো ছিল রিসেপশনে, তাদের নাম উচ্চারণ করা আমার সাধ্য নয়, সেই সব ছবি দেখিয়ে বলল, এরাই নাকি লিঙ্গায়েত কমিউনিটির আদিপুরুষ, হিন্দু ধর্মের মধ্যে এরা একটা রেভলউশন আনে-টানে, নাকি মহিলাদেরও উপবীত ধারণের অধিকার আছে, এই মর্মে এরা হিন্দুধর্মে একটা সংস্কার আনার চেষ্টা করে। তো, লিঙ্গায়েতরাই এখানে প্রায় সমস্ত স্কুল কলেজ ইত্যাদির প্রতিষ্ঠাতা। কাল যে ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে যাবো, সেটাও জনৈক লিঙ্গায়েত বাবার প্রতিষ্ঠা।

    বেশ কথা। খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি গল্পগুজব ইত্যাদি সেরে সাড়ে বারোটা নাগাদ আমরা সব্বাই ঘুমোতে গেলাম। সকাল সাড়ে সাতটায় ব্রেকফাস্ট।

    অসুবিধাগুলো হল সকালে উঠে। সাতটায় তো উঠে পড়েছি। রুম একজনের সাথে শেয়ারিং, তাই অন্যজন বাথরুমের অধিকার নেবার আগেই আমি নিজের চান টান সেরে নিতে চাই। সকালে উঠে খেয়াল হয়েছে, রুমে তো টাওয়েল নেই। চান করব কী করে?

    ঢুলুঢুলু চক্ষে রিসেপশনে গেলাম। সেখানে এক স্থানীয় বৃদ্ধ, বোধ হয় গেস্টহাউসের কেয়ারটেকার হবেন, বসে আছেন ইয়াব্বড়ো বড়ো দুটি স্টেনলেস স্টীলের সিলিন্ডার নিয়ে। আমাকে দেখেই বিজাতীয় ভাষায় (কন্নড়) কিছু বললেন, তার মধ্যে টী আর কফিটুকু বুঝলাম। হিন্দিতে বললাম, কফি পরে খাবো, আগে আমাকে একটা টাওয়েল দিন। বৃদ্ধ শুনে খুব হাসিহাসি মুখে উঠে এসে একটা সিলিন্ডারের ট্যাপ খুলে এক কাপ কফি ভরে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।

    এ তো মহা মুশকিল। আকারে ইঙ্গিতে বোঝাবার চেষ্টা করলাম, কফি নেহি, টাওয়েল, টাওয়েল, নাহানে কে লিয়ে।

    সেই সময়েই আরেকজন এসে পড়েছিল, সম্ভবত সে-ও টাওয়েলের খোঁজে, এসে আমাকে উদ্ধার করল। কন্নড় ভাষায় কী বলল, বুড়ো বুঝল, পাশের স্টোররুম খুলে দুটি তোয়ালে বের করে আমাদের হাতে দিল।

    আটটায় মাঝের চাতালে ব্রেকফাস্ট লাগল। স্টীলের থালা এল, চাম এল, হাতা এল, এবং দুটি স্টীলের বড় বড় সিলিন্ডার এল। একটাতে ভর্তি ইডলি, আরেকটাতে ভর্তি বড়া।

    দুটোর একটাও আমি খাই না। চুপি চুপি সকালের সেভিয়ারকে বললাম, বস, আমি এগুলো খেতে পারি না, তুমি একটু বলবে, আমার জন্য যদি একটু ব্রেড বাটার বা ব্রেড জ্যামের ন্ব্যবস্থা করে দিতে পারে?

    ছেলেটি খুবই পরোপকারী, সঙ্গে সঙ্গে যারা সার্ভ করছিল, তাদের ব্রেড-আ, বাটার-আ, জ্যাম-আ সমেত কী সব বলল কন্নড় ভাষায়। তারা বুঝল এবং আরেকজনকে একই নির্দেশ পাস করল। আরেকজন বাইরে চলে গেল। ছেলেটি এসে আমাকে বলল, চিন্ত অকোরো না, ওরা ব্যবস্থা করছে।

    চল্লিশ জনের টিম, সবাই ধীরেসুস্থে এল, সম্বর চাটনি লেবড়ে মিশিয়ে ইডলি এবং বড়া খেল, আমার ব্রেডও এল না, বাটারও এল না। হাল ছেড়ে দিয়ে ভাবছি আজকের ব্রেকফাস্টটা তা হলে মায়াই হয়ে গেল, দেখি, কলেজের ক্যান্টিনে কিছু চিপসের প্যাকেট ট্যাকেট পেলে কিনে নেওয়া যাবে। পৌনে নটা, সবাই খেয়েদেয়ে ঢেঁকুর তুলে রেডি। বাসের ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে। জনতা সবাই একত্র হয়ে ছবি তুলছে।



    আমি বাসে উঠে বসে পড়েছি, এমন সময়ে জানা গেল আমার ব্রেড বাটার জ্যাম সবকিছুই এসে পড়েছে। বেচারা ক্যান্টিনের লোক শুধু আমার জন্যেই পাহাড় থেকে নেমে দোকানে গিয়ে সব কিনে টিনে এনেছে। কী অন্যায় অত্যাচার! মরমে মরে গেলাম একেবারে।

    যদিও তাতে খাবার কিছু সুরাহা হল না। ব্রেড যে সেঁকতে হয়, সেটা বোধ হয় গেস্টহাউসের লোকজন জানত না। কাঁচা পাঁউরুটিতেই ছুরি দিয়ে মাখন লাগাবার চেষ্টা করতে লাগল, ফলে পাঁউরুটি গেল ছিন্নভিন্ন হয়ে। সেই রকম দুটি আধছেঁড়া বাটার-মাখা পাঁউরুটি তুলে নিয়ে কোনওরকমে গলায় ঠুসে আবার বাসে গিয়ে উঠলাম।

    শহরের মাঝখানে এসে পড়ল বাস। দেখলাম চারপাশে একই সঙ্গে কন্নড় এবং মারাঠি ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। বুঝলাম, একেবারে মহারাষ্ট্রের বর্ডারে এসে পড়েছি। মিক্স পপুলেশন। ... একটু এগোতেই আমরা ঢুকে গেলাম বাগালকোটের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। বেশ বড়সড় হলঘরে একটু দূরে দূরে টেবিল চেয়ার পাতা, টেবিলে গোলাপফুল এবং ল্যাপটপ।

    দ্বিতীয় দফার রিক্রুটমেন্ট শুরু হল।

    (চলবে)
    কালকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ আমি বেশ কশাস। প্রাইম নাম্বার বের করার ফাংশন কাউক্কে লিখতে বলি নি, মাক্কালী। শুধু বলেছিলাম, প্রথম জনকে, অড নাম্বার বের করে দেখাও, এক থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। বিজোড় সংখ্যা, তাতেও সে খুকি কেমন ভ্যাবলা হয়ে বসে রইল। আর প্রত্যেকের সাথে কমন ব্যাপার হচ্ছে, হাতে পেন দিলেই কেমন থরথর করে হাত কাঁপছে তাদের। এ কী ঝাম!

    একটু বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখলাম ব্যাপারটা আর ততটা ডিফিকাল্ট থাকছে না। যাকেই জিজ্ঞেস করছি, সটাসট অড নাম্বার বের করার লজিক লিখে দিচ্ছে, ভ্যালু সোয়্যাপ করে দেখিয়ে দিচ্ছে। হাত কাঁপা কমে আসছে। চার পাঁচজন এই রকম স্মার্ট ছেলেপুলে দেখে একটু কেমন সন্দেহ হল। পঞ্চমজন অড নাম্বার বের করে দিতেই তাকে এইবার বললাম, রিভার্স অর্ডারে পঞ্চাশ থেকে এক পর্যন্ত সবকটা ইভেন নাম্বার প্রিন্ট করে দেখাও।

    বল্লে বিশ্বাস করবেন না, হাত কাঁপা এবং ভ্যাবলার মতন ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন আবার ফিরে এল। সস্নেহে জিজ্ঞেস করলাম, বাইরে খুব ছড়িয়ে গেছে, না, যে ভেতরে গেলেই অড নাম্বার বের করার লজিক লিখতে দিচ্ছে? টুক করে মাগ্গা মেরে এসেছো, না?

    ছেলেটা ফ্যাকাশে ভাবে হাসল। বললাম, আচ্ছা, ঐ অড নাম্বারগুলোই উল্টো অর্ডারে লিখে দেখাও তো?

    সে প্রচুর মাথা চুলকালো, কিন্তু পারল না।

    বেচারার কপাল খারাপ, তাকে রিজেক্ট মারতে হল।

    একটি মেয়ে, খুব সপ্রতিভ (আর বলতে নেই, মেয়েদের সাথে আমিও খুবই সপ্রতিভ) টকাটক বেশ কয়েকটা অ্যালগো বলে দিল, বয়েজ কড নর্মালাইজেশন বলে দিল, এই হিপ সর্ট করে দিচ্ছে তো ঐ জাভার পলিমরফিজম জলের মতন বুঝিয়ে দিচ্ছে। টেকনিকালি তাকে কিসুই জিজ্ঞেস করার নেই। অগত্যা, "এম আর" রাউন্ডের খেজুর।

    দেখলাম, মেয়েটি এতই গাঁতু, সে পড়াশোনার বাইরে দিনদুনিয়ার আর কোনও খবরই রাখে না। মানে, আগেও কেউই রাখত না, প্রায় সবাইকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কোশ্চেন করে চলেছি, মেয়েটি এখানে একটি প্লেসহোল্ডার মাত্র।

    - নিউজপেপার পড়ো?
    - না মানে, সেভাবে পড়া হয় না।
    - আজ পড়েছো?
    - না, আজ প্রিপারেশন নিতে গিয়ে ...
    - কাল পড়েছো?
    - না, মানে, কালও ...
    - কদিন আগে নিউজ পেপার পড়েছো?
    - তিন চারদিন আগে।
    - বেশ। গত এক সপ্তাহে, হেডলাইন হয়েছে, এমন কোনও একটা নিউজ বলো।

    খুকি চুপ। আকাশ ভাবছে, পাতাল ভাবছে। হিন্ট দিলাম, গত সপ্তাহেই একটা বেশ বড় লেভেলের ন্যাচারাল ক্যালামিটি ঘটে গেছে ইন্ডিয়াতে, জানো?

    খুকি হালে পানি পেল, - ও হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা সাইক্লোন এসেছিল।

    - কোন কোন স্টেট অ্যাফেক্টেড হয়েছে সেই সাইক্লোনে?

    খুকি অনেক ভেবে বলল, - গুজরাত?

    আমি ধপাস করে চেয়ারে এলিয়ে পড়লাম, তুমি ইন্ডিয়ার ম্যাপ দেখেছো কখনও? জানো কি, সাইক্লোনটা কোন সাগরে অরিজিনেট করেছিল?

    খুকি চুপ।

    এই প্রসঙ্গে, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের টুকটাক প্রশ্ন অন্যদেরও করেছিলাম, কিছু মনে রাখার মত প্রশ্ন উত্তরঃ

    ভারতে এখন রুলিং পার্টি কী?
    - কংগ্রেস।
    কংগ্রেস পার্টির প্রেসিডেন্টের নাম কী?
    - মনমোহন সিং।
    রিসেন্টলি একটা খুব ইমপর্ট্যান্ট বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছে, কোন বিল?
    - (উত্তর নেই)
    ক্রিকেট মাঠের পিচ-এর লেংথ কত?
    - (উত্তর নেই)
    সচিন তেন্ডুলকারের লাস্ট টেস্ট কোন মাঠে খেলা হবে?
    - (উত্তর নেই)

    এইসব উত্তাল বাউন্সার পেরিয়ে যখন সিলেকশন শেষ হল, দেখা গেল রিজেকশন রেট খুবই লো। প্রায় সকলেই সিলেক্টেড। ও হ্যাঁ, এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো, যারা ইন্টারভিউতে এসেছিল, তারা সমস্ত ডিপার্টমেন্টের টপ টেন, প্রথমে রিটেন টেস্টে বসেছিল, যারা যারা তাতে শর্টলিস্টেড হয়েছিল, কেবল তারাই এসেছিল ইন্টারভিউ দিতে।

    দুপুরে ট্রেনিং প্লেসমেন্ট অফিসার ভদ্রলোক খুব বিনয়ী ভাবে এসে বললেন, লাঞ্চে আজ আমরা এখানকার ট্র্যাডিশনাল খাবারের ব্যবস্থা করেছি।

    শুনেই তো আমার হয়ে গেছে। বাঙালি আর কাশ্মিরী ছাড়া বাকি ভারতীয় জাতিদের "ট্র্যাডিশনাল ফুড"কে আমি খুব এড়িয়ে চলি, কারণ বাকি সব্বাই ট্র্যাডিশনের নামে ভেজ খাওয়ায়। আর হলও তাই, ভেজ বলে ভেজ? জ দিয়ে কী একটা জিনিসের (জোয়ার নয়, অন্য কিছু) রুটি, সে রুটি আবার দু রকমের, একটা টেস্টলেস রুমালির মত, আরেকটা পাঁপড়, মানে লিটারেলি পাঁপড়, স্বাদহীন। শুনলাম, ঐ রুমালিকেই নাকি শুকিয়ে পাঁপড় বানানো হয়, প্রিজার্ভ করে রাখা যায়, অনেকদিন ধরে খাওয়া যায়। সঙ্গে একটা বিকট টক এবং ঝাল গ্রেভি মতন, তার মাঝে একটা চকলেট বোমার সাইজের গোল মতন জিনিস, কুচকুচে কালো, সেটা বেগুনও হতে পারে, পটলও হতে পারে, অন্য কিছুও হতে পারে, মোদ্দা কথা, খানিকটা ইলিপটিকাল গোল কালো একটা জিনিস। গা-টা কেমন হড়হড় করছে। কোনও রকমে তারই গ্রেভি দিয়ে একটি রুটি খেলাম। "বিরিয়ানি" বলে যা দিয়েছিল, সে জিনিস মুখে দিলে আপনাদেরও চোখে জল চলে আসবে।

    তৃতীয় বিকল্প হিসেবে ছিল, একমেবাদ্বিতীয়ম কার্ড রাইস। স্যালাডে শসা ছিল, ঐ একটা রুটি আর গাদাগুচ্ছের শসা খেয়ে খিদে মরালাম।

    যাই হোক, বিকেল সাড়ে চারটেয় সিলেকশন শেষ হল, ফিরে চলা এবার ব্যাঙ্গালুরুর দিকে। এগারো ঘণ্টার জার্নি। অর্পিত ছেলেটা, যে এই পুরো ট্রিপের কোঅর্ডিনেটর ছিল, তাকে গিয়ে পাকড়ালাম, রাতে যদি কোনও ভালো নন ভেজ রেস্টুরেন্টে / ধাবায় না থামিয়েছিস তো তোকে আমি দেখে নেব।

    তারও অবস্থা আমার মতই খারাপ। সে কেবল শসা দিয়ে রুটি খেয়েছে। ঝোলটাও খেতে পারে নি।

    তা, অর্পিত কথা রেখেছিল। রাতে মাঝরাস্তায় কোথাও একটা গাড়ি দাঁড়িয়েছিল ডিনারের জন্য, সেখানে চিকেন ললিপপ আর দো পেঁয়াজা খেয়ে কেমন একটা সন্দেহ হল, গিয়ে জিজ্ঞেস করতে জানতে পারলাম, যা ভেবেছি তাইই, কুক উত্তর ভারতীয়, তাই এমন সুন্দর স্বাদ।

    আর কোনও গল্প নাই, পেটপুরে খেলাম, প্রায় দুদিন বাদে।

    আন্দাজ সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ লুরু এসে পৌঁছলাম। প্রথম ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টের জার্নি শেষ হল।

    ও হ্যাঁ, পুরো ট্রিপে চেন্নাই এক্সপ্রেস সিনেমাটা দেখে ফেলেছি বার দুয়েক। এখন এমনকি আমার লুঙ্গি ডান্স গানটাও বেশ ভালো লাগছে শুনতে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ | ৩০৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | 132.177.153.230 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৭:০৯46720
  • ভেরিয়েবল কম্পোনেন্ট একটা কাটা যায়, লাগাতার তিরিশ দিন বেঞ্চে থাকলে। সেটা বোধ হয় আপনার কোম্পানি স্পেসিফিক :) কারণ অন্য কিছু কোম্পানিতে আমি কাজ করেছি, সেখানে এই কনসেপ্ট নাই।

    তিন মাস নোটিস পিরিয়ডের কেসটা এখন বেশ বাঁশ হয়েছে, যে ছাড়ছে তার জন্যেও, আর যে কোম্পানি তাকে নিতে চাইছে, তার জন্যেও।
  • রোবু | 213.147.88.10 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৭:১১46721
  • নাহ। আমিই তো বেঞ্চের জন্য লোক নিলাম। তিনমাস পরে জয়েন করবে।
  • শঙ্খ | 118.35.15.41 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৪১46722
  • বেঞ্চে থাকলে মাইনে কাটা যায়?

    কোন কোম্পানি? সেই মত এড়িয়ে চলতে হবে। ইন্ডিয়াতে জানি না, তবে এখানে বার দুয়েক বেঞ্চে ছিলুম, এক মাস করে। আর একমাস ছিলুম পাইপলাইনে। আটলান্টাতে দুর্গাপুজো ঠিকঠাক সেরে সুরে তারপরে নিউ ইয়র্কে এসে জয়েন করলুম। এক ডলারও কম দেয়নি তো।

    তবে এখন প্রোজেক্ট শেষের দু সপ্তাহ আগেই লাইন ম্যানেজারদের কাছে মেইল চলে যায়, অমুক রিসোর্স, অমুক কম্পিটেন্সি, এই এই কনস্ট্রেইন আছে, রিলিজ হচ্ছে। কার দরকার তুলে নাও পুল থেকে। তাতে বেঞ্চে বসে থাকার দিন বেশ কমে গেছে। ২০০৮ এর আগে নাকি লোকজন মাস দুই তিন করেও বসে থাকত, তাও আবার ইউএসে।
  • hu | 188.91.253.11 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:০৮46705
  • হাহাহা, সিকির ক্রিকেট নিয়ে প্রশ্ন করাটা হাইট। এবার থেকেও আমিও ফুটবলের টইতে লিখব ঃ-)))
  • ন্যাড়া | 219.131.62.113 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:২৫46723
  • আমাকে কেউ একটা বেঞ্চের জন্যে চাকরি দে না রে বাবা। বেঞ্চেই থাকব, প্রজেক্ট দাও, বসতে দাও, ল্যাপটপ দাও - এসব বলে ঘ্যানঘ্যানও করব না। মাসে মাসে ঠিকমতন মাইনে দিয়ে গেলেই হবে।
  • সিকি | 132.177.153.230 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৩০46706
  • :)
  • san | 69.144.58.33 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৩২46707
  • ওমা মাটনঝোল দিয়ে রাগীবল তো ভালই খেতাম !
    সব প্রদেশের রান্না একরকম হবে নাকি ?
  • Arpan | 190.215.54.0 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৩৬46724
  • ঠিকমতন মানে, ভেরিয়েবল কম পাবে। বাকি সব ঠিক থাকবে।
  • rivu | 140.203.154.17 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৪৫46725
  • আই টি তে কি ইন্কম্পিতেন্সির জন্যে চাকরি যেতে পারে? মানে একটা লোক জাস্ট কাজটা করতে পারছেনা বলে কোম্পানি তাকে কাটিয়ে দিল?
  • ন্যাড়া | 219.131.62.113 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৪৬46726
  • অর্পণ দিচ্ছিস? ভেরিয়েবল চাই না, বাকি সব দিয়ে চলিয়ে নেব।
  • Arpan | 190.215.54.0 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৯:৪৯46727
  • আমাদের দোকানে প্রচুর লোক নিচ্ছে। বেঞ্চ স্ট্রেংথ বাড়াবে বলে।

    তবে তোমার লেভেলের লোককে বেঞ্চে কি আর রাখবে? তুমি তো ম্যানেজমেন্ট ওভারহেড হবে।
  • ন্যাড়া | 219.131.62.113 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ১০:০১46728
  • একটা ভিপি-টিপি রোল দে। বেঞ্চে বসে রিটায়ারমেন্ট অব্দি কাটিয়ে দিই।
  • রামখেলতিলকসিং | 131.241.218.132 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ১০:২৯46708
  • আরে তখন (মানে বছর পনেরো আগে) ডিমান্ড কম ছিলো, তাই যতটুকু দরকার ততটুকু ক্যাম্পাসিং করতো। এখন ডিমান্ড বেশি, সাপ্লাইও বেশি। আর T&M মোডে কাজ করালে বিলিংও বেশি। কাজেই...

    হাজার কয়েক লোক (মোটামুটি তিন লাখের ১০%) বসিয়ে রাখতে টিসিএস বা কগনির মত কোং-এর কিস্যু আসে যায় না, বরং বড় প্রোজেক্ট এলে ঝটাকসে লোক নামিয়ে দেওয়ার জন্যে বড় বেঞ্চি দরকার।
  • SG | 134.124.204.10 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০৪46709
  • এত সব শক্ত শক্ত প্রশ্ন আমাদের সময় , মানে ১২ বছর আগে করলে ১ আধ জন চান্স পেত CST ছাড়া বাকি dept থেকে ।।।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:৩২46729
  • আছে .... http://www.dice.com/job/result/jobeblok/15640
    কেউ আছে নাকি? আরো একটি পজিশনও আছে - লিনাক্ষ, সোলার/লুসিন,মোঙ্গোডিবি,টমক্যাট --- সেটির অ্যাড এখনও আসে নি, আসবে। গ্যারান্টিড নো-চাপ আবহাওয়া - সকালে এসো, দুপুরে নিশ্চিন্তে লাঞ্চ খাও, বিকেলে বাড়ি যাও (খেয়ে দেয়ে টিভি দেখে শুয়ে পড়ো)। পাঁচটার পরে আপিসে থাকলে লোকজন ভুরু কোঁচকাবে। ভিসার ব্যবস্থা নাই - নাগরিক বা সবুজ কার্ড বাঞ্ছনীয়।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:৫০46730
  • ইয়ার্কি না, জানাশোনা উপযুক্ত এবং উৎসাহী ক্যান্ডিডেট কেউ থাগলে একটু রেফার কোরো।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:১১46731
  • ওহে লসাগু, পয়সাকড়ি কিরকম দেবে? পেনশন আছে? মেডিকেল ফর লাইফ? বাড়ি থেকে কাজ করতে দেবে?
  • রামখেলতিলকসিং | 131.241.218.132 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:২৫46732
  • @ঋভু - হ্যাঁ যেতে পারে। পর পর দুবার লোয়েস্ট অ্যাপ্রেইজাল পেলে গোলাপী চিঠি ধরিয়ে দেয়।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৪৯46733
  • নাহে ন্যাড়া, তোমাদের অ্যাফোর্ড করতে পারবে না। অত এক্সপেরিয়েন্স না, ৫/১০ বছর হলে আদর্শ। পয়সা রাফ রেঞ্জ ধরো - ৯০/১১০। পেনশন আছে, নিয়ম একটু বদল হয়েছে, এখন এমপ্লয়িদের একটু কন্ট্রিবিউট করতে হয়। ২০ বছর চাকরি করে রিটায়ার করলে মেডিক্যাল ফর লাইফ, ১০ বছরে হাফ প্রিমিয়াম। বাড়ি থেকে কাজ করতে দেয়, সপ্তাহে দু-তিনদিন হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
  • রামখেলতিলকসিং | 131.241.218.132 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৫২46734
  • ওচ্চেয়ে অনেক কম, এই ধরেন ৭০ মতন মাইনেতে এখান থেকে কাজ করতে দেবে?
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:০০46735
  • পার্মানেন্ট এম্‌প্লয়ি পজিশন না হয়ে টেম্পোরারি কন্ট্র্যাক্ট হলে সম্ভব। আমার আগের আপিসে এক প্রজেক্টে একজন ব্যাঙ্গালোর থেকে কাজ করত, সপ্তাহে পোনেরো ঘন্টার বেশী নয়, বিলিং ছিল ঘন্টা প্রতি ৮০ - হাতে পেত ৭০। প্রায় বছর দেড়েক কাজ করেছিল।
  • Shibir | 113.16.68.8 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ০৭:০৪46737
  • PM - TCS এ KPO তে নোটিশ পিরিয়ড 90 দিন । একদিনও কম নয় । তবে IT তে কত জানিনা ।
  • Arpan | 52.107.175.150 (*) | ০৭ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৫৭46736
  • আমাদের আপিসে আজ খোঁজ নিলাম। এক মাসের উপর বেঞ্চে থাকলে ভেরিয়েবল পুরো মায়া।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন