এর সংগে আছে মৌলিক অধিকার হনন। সারা দেশ জুড়ে আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মনিয়োজনের অধিকাগুলো থেকে বঞ্চিততো হনই। এর চেয়ে বড়ো অধিকার হনন ঘটে তাঁদের সাংবিধানিক মর্যাদার বঞ্চনায়। যেমন আসামেঃ এখানকার চা-বাগান, এখানকার শস্যক্ষেত্র, এবং আর্থনীতিক সমৃদ্ধিতে ঝাড়খণ্ড সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রা থেকে আসা আদিবাসীদের অবদান বিপুল। অথচ, এ রাজ্যে তাঁরা তফসিলি জনজাতি (এস-টি) মর্যাদা পাননা। কারণটা শ্রেণিগত – এ মর্যাদা পেলে সাংবিধানিক রক্ষা কবচগুলো ব্যবহার করে অন্তত একটা অংশের আদিবাসী নিজেদের জীবনযাত্রার মান বাড়াবার সুযোগ পাবেন, কিন্তু সেটা পেলে অবিশ্বাস্য সস্তা মজুরিতে চা-বাগানে কাজ করবে কে? সরকার, স্পষ্টত, অসমিয়া শাসকশ্রেণির পক্ষে, বা তাদেরই প্রতিভু। এর উপর আছে কথায় কথায় ঝাড়খণ্ডী আদিবাসীদের উপর সরকারি মদতে আসামেরই বোডোদের মতো কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীর অকল্পনীয় হিংসা – গত শতাব্দীর ভারতে আসামের কোকরাঝাড় জেলায় লক্ষ লক্ষ সাঁওতাল বোডো জঙ্গীদের হাতে প্রাণ হারান, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে লোকেরা পালাতে বাধ্য হন শরণার্থী শিবিরে। ... ...
পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া মেটিয়াবুরুজে সেই প্রথম পা রাখা। তার আগে ধারণা ছিলো মেটিয়াবুরুজ মানে শুধুই হিন্দির দাপাদাপি, গুটখার আস্ফালন, হইহল্লা আর প্রকাশ্যে মাফিয়ারাজ। মেটিবুরুজের কিছু অংশে এটি সত্য হলেও কিছু মানুষের বাংলা ভাষায় দখল, মার্জিত ব্যবহার এবং সর্বোপরি দিলদরিয়া ভাব কবেই আকৃষ্ট করেছিলো আমাদের। অনেক অবাঙালি এতো নিখুঁত বাংলা বলেন তা বহু হিন্দিপ্রেমী বাঙালীকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। ... ...
শ্রী অশোক কুমার মুখোপাধ্যায় যে ‘নিবন্ধের’ কথা লিখেছেন, এবং লীলা মজুমদারের ওপর বেরনো যে বইটির কথা এখানে উঠেছে, আমার এই লেখাটি আমি সেই প্রসঙ্গেই লিখছি। ৬ মে সকালে রবিবাসরীয়তে অশোকবাবুর লেখা পড়ার পর দুপুরবেলায় আমি আনন্দবাজারের সম্পাদককেও একটি ইমেল লিখেছিলাম। তিনি তখন তখনই উত্তর দেন, এবং বলেন যে, বিষয়টির কথা তিনি জেনেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমি আমার ইমেল এবং সম্পাদকের বক্তব্য প্রসঙ্গে একটি পোস্ট লিখেছিলাম ফেসবুকে। দু’দিন পর অশোক মুখোপাধ্যায়ের এই ঋণস্বীকার। আমি এই কথাটাই আনন্দবাজারের সম্পাদককে লিখেছিলাম, যে, আপনারা একটা লাইন ছেপে দেবেন দুঃখ প্রকাশ করে। ব্যাস, আপনাদের দিক থেকে আপনারা পরিষ্কার হয়ে যাবেন। ... ...
প্রাথমিক মুগ্ধতা কেটে যাওয়ার পরে, আমার অশোক মিত্রের লেখা খুব ভালো লাগতো না। তবে এটুকু স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি তাঁর লেখাতেই সঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, অরুণ কুমার সরকারদের কথা পড়েছি। শুধু এই জন্যেই তাঁকে মনে রাখা যায়। পরে যোগাড় করে কিছুটা পড়েছি, কিন্তু আধুনিক সমসাময়িক সাহিত্য চর্চা মানেই যে একেবারেই বহুল প্রচলিত পাঠকের রুচি নির্মাণে আগ্রহী সাহিত্য পত্রিকা, কিম্বা শুধুই ক্রুদ্ধ, সমান্তরাল অন্তর্মুখী অতি নাগরিক জগত তৈরি করে নেওয়া ছোটো পত্রিকার লেখা পাঠ নয়, তার যে একটা খোঁজ আছে, ইতিহাস আছে, এবং আধুনিকতা জিনিসটা যে একেবারে টুপ করিয়া পড়িল গোছের কৃষ্ণপ্রেমে নিবেদিত কদম্ব পুষ্প না, এই বোধটা যে কজনের লেখা পড়ে তৈরি হয়েছিল, অশোক মিত্র তাঁদের মধ্যে একজন। ... ...
এখন কথা হল, নারী কোন একমাত্রিক পরিচিতি নিয়ে চলে না। যোনিগত পরিচিতি ছাড়াও মেয়েদের বংশ, জাত, ধর্ম, শ্রেণী ইত্যাদি নানা পরিচয় থাকে।যত জীবন চলতে থাকে ততই মৌলিক পরিচয়গুলির সঙ্গে যুক্ত হয় তার প্রথাগত শিক্ষার তকমা, পেশার পরিচয়, তার রাজনৈতিক অথবা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কজনিত পরিচয়।আর এই যে লিঙ্গ, জাতপাত, ধর্মীয়, শ্রেণীগত, যৌনতা অথবা শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বিষয়ে মেয়েদের পরিচিতি, এর মধ্যে কোন পরিস্থিতিতে কোন পরিচয়ের কারণে তাকে ধর্ষিত, নির্যাতিত হ’তে হবে, তা নির্ভর করে তার পরিচিতিগত অবস্থানের প্রান্তিকতার ওপর।অনেকসময় একাধিক প্রান্তিক পরিচিতির কারণেও মেয়েদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে। ... ...
খোয়াবের কথাতেই মুহাম্মদ আব্দুস সামাদের ভ্যাল লেগে যায়। তার খোয়াব দেখার বাই আছে। সে কারণে তাকে বাল্যকালে বেশ ভুগতে হয়েছে। বাপে ক্ষেত খামারের কাজে লাগাতে পারেনি। কাঁচি হাতে পাঠালেই হয় তার হাত কাটত। অথবা কাকপায়া ঘাসের বদলে ধান গাছ কেটে ফেলত। এমন কি মাঝে মাঝে তার সন্ধানই পাওয়া যেত না। পাওয়া যেত, বটতলার ঝুরির ভেতরে চিত হয়ে সে ঘুমিয়ে আছে। মুখে মিটি মিটি হাসি। এই করেই শেষ পর্যন্ত পাঞ্জু শাহর দলে ঢুকে পড়েছে। ... ...
আগরতলা বইমেলাতে বিমলেন্দ্র চক্রবর্তীর কাছে ছবি ও কবিতার দাবী জানাতেই পাওয়া গেল দুটি ছড়া ও তাঁর অলঙ্করন। পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হলো এখানে! ... ...
পাঁচ মিনিট নয়, আধ ঘণ্টার মতো লাগল। জমাদার যখন রাস্তা থেকে রক্তের শেষ বিন্দুটি মুছে ফেলেছে, তখন অমিত বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিমি মতো দূরে। অনেকটা হাঁটা হয়েছে। আজ বাস চলবে না কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যাবে এই রাস্তা ধরে। আধ ঘণ্টা আগের থেকে প্রাইভেট গাড়ির যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফুটপাথের খোঁদলে পা পড়ল অমিতের এবং মুখ থেকে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এল একটা। গোড়ালির কাছে একটা ব্যথা, খুব পুরনো ব্যথা - বছর তেরোর পুরনো চোট। পায়ে পা জড়িয়ে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করতে গিয়ে বেকায়দায় গোড়ালি মচকে গিয়েছিল। দলের হয়ে একটা পেনাল্টি আদায় হয়েছিল বটে, গোলটাও হয়েছিল কিন্তু ব্যথাটা ভুগিয়েছিল অনেকদিন। আজ দীর্ঘদিন পর আবার সেটা জানান দিয়েছে। গাছের তলায় একটা বেদীর মতন, সেখানে বসে পড়ল অমিত। একটু জিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ... ...
হো হো হাসিতে তলিয়ে যায় সন্দেহবাজ লোকগুলো। আলোর দিকে পেছন দিয়ে বসে থাকে ওরা। অন্ধকারে মিশে যায় ওদের সাম্প্রদায়িক অসুন্দর মন। বাগানের অন্যদিকে তখন গান গাইছে দিভাই আপুলিরা, আনো আনো, আনো তব প্রলয়ের শাঁখ , মায়ার কুঞ্ঝটিজাল যাক দূরে , যাক যাক যাক -- কোনো এক নদীগন্ধমাখা শহরের তরুণ প্রাণরা বৈশাখকে বরণ করে নিতে কত কিছুই না বানাচ্ছে। পোস্টানো ছবিতে আমি ওদের হাত দেখি, হাতের আঙুল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রঙ, কাগজ। উদ্ভাসিত আলো এসে ছুঁয়ে গেছে ছেলেমেয়েদের চোখ মুখ। ওদের হাসি, হাসিতে বৈশাখী হাওয়া, ঝড়, বৃষ্টি , রোদ্দুরের জন্যে অনাবিল আহবান। কেউ কেউ ডাকে, ম্যাম আসুন। আসুন না প্লিজ। এ তো আপনারও শহর। দীর্ঘ রাস্তা জুড়ে আলপনা হবে। রঙ কেনা হয়ে গেছে। আপনিও আল্পনা আঁকবেন আমাদের সাথে। কি যে ভালো লাগবে ম্যাম! ... ...
এই ঝড় সম্পর্কে কিছুই জানা ছিল না আমার। জানতাম কেবল, এই ঝড় সৃষ্টির পেছনে আমার কোনো হাত নেই। জানতাম, আমাকেই খোঁজা হচ্ছে এখন। যতক্ষণ ঝড়ো বাতাস বইতো, ততক্ষণ আমি ঘামতে থাকতাম এই জানালাবিহীন গুমোট কক্ষে। এত ঝড় বাইরে অথচ এখানে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো বাসাটুকুও কষ্ট করে সঞ্চয় করতে হয়। মাথার ওপর দিয়ে কয়েকটি চামচিকা অনবরত যায়-আসে। ভয় হয়, ওরা শেষমেশ এই গোপন আস্তানার খবরটা ঝড়ের কাছে ফাঁস করে না দেয়। টিকটিকিটাকেও চোখ শাসিয়ে বারণ করে দিই। মাকড়সা দেখলেই মনে পড়ে যায় স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুসের কথা। আচ্ছা, ব্রুস যদি ঐ মাকড়সার প্রচেষ্টাকে গুনুত্ব দিয়ে না দেখতেন, কিংবা মাকড়সা যদি সত্যি সত্যি সেদিন না থাকতো ওখানে, তাহলে কি তিনি জয়ী হতে পারতেন? একটা মাকড়সার কারণেই কি তিনি তার রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে পারলেন--বদলে গেল একটা দেশের ইতিহাস? ... ...
একটু বাদেই শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অয়্যারলেসে খবর চালাচালি শুরু হয়ে যায়। হ্যালো চার্লি, নাম্বারপ্লেট ছাড়া একটা রহস্যজনক ওভারলোডেড ট্রাক কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না। কোনও শব্দ না করে মুহূর্তে গাড়িটা ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে। ওভার। হঠাৎ গুছাইতবাড়ি থানায় কারও মোবাইল থেকে একটা ফোন আসে। ভদ্রলোকের কালো মারুতি, শহরের বাইরে আম্বেদকর পার্কের সামনে উনি গাড়ির ভেতরে বসে ছিলেন। স্ত্রীকে স্টেশনে পৌঁছে দেবার জন্য ভদ্রলোক নিম্বার্ক হাউজিং কম্প্লেক্স থেকে রওনা হচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান একটু দূরে ঝাঁকড়া শিরীষ গাছের নীচে মস্ত বড়, যেন অনেকটা অন্ধকার জমাট বেঁধে রয়েছে, যেন কালো প্লাস্টিকে-মোড়া একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভদ্রলোক তার নিজের গাড়ির হেড-লাইট জ্বালাতেই আলো গিয়ে সেই গাড়ির সামনে পড়ল। তখনই তিনি দেখতে পান অনেক উঁচুতে ঝকঝকে দুটো আলো জ্বলে উঠল। কোনও শব্দ হল না, কিন্তু গাড়িটা এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে উধাও হয়ে গেল। ... ...
তুমি হড়বড়িয়ে বলো, আমি নিয়াজকে খুঁজছি। নিয়াজের বিরাট প্রবলেম… ঢাকার ঝড় নিয়াজের গ্রামেও হানা দিছে! নিয়াজ আছে কি আপনার ওখানে? নারীকণ্ঠটা জানায় সে কোনো নিয়াজকে চেনে না। তবে না… একটা নিয়াজকে সে চিনত। অনেক দিন আগে। কিন্তু ওই নিয়াজকে গত বছর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন অনেক দিন হয়ে যাওয়ায় নিয়াজকে এখন কেউ আর খোঁজেও না। আপনি কি সেই নিখোঁজ নিয়াজকে খুঁজছেন? তুমি বোধশূন্য হয়ে থাকা অবস্থাতেই বলে, আমি সবগুলো নিয়াজকেই খুঁজছি! ঢাকা শহর থেকে হাজার হাজার নিয়াজ বোধহয় নেই। আমি সবগুলো নিয়াজকে খুঁজছি! নারীকণ্ঠটায় এবার সন্দেহের ঘোর—কে আপনি আসলে বলেন তো? সত্যি করে বলেন তো? তুমি তোমার পরিচয় দিতে যাও, কিন্তু নিজেকে আবার সংবরণ করে নাও। অপরিচিত কারো কাছে নিজের পরিচয় এখন কোনোভাবেই প্রকাশ করা যায় না। তুমি তখন বলো, আমি নিয়াজ! ... ...
অষ্টমঙ্গলার ঠিক কুড়ি বছরের মাথায় ক্যান্সার ধরা পড়েছিল লতিকার। বহুদিনই একটা লাম্প পুষেছিল বুকে। যখন বোঝা গেল, অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে রোগ। ডাক্তার খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন লতিকাকে, অশোককে। বলেছিলেন, ভ্গবানকে ডাকুন। মির্যাকল তো হয়ও। বাড়ি ফিরে খিলখিল করে হেসেছিল লতিকা- 'একদম মিলি । পুরো মিলি। জয়া ভাদুড়ির সেই সীনটা মনে আছে?' অশোক পাগল হয়ে গিয়েছিল যেন- লতিকার ওপর রাগ করেছিল, খ্যাপার মত বলেছিল, 'শুধু সিনেমা , না? শুধু সিনেমা? তুমি মিলি হতে চেয়েছিলে , তাই বলো নি। আমি জানি। সিনেমাই সব তোমার। আমি, বাবলু -কেউ না?' লতিকা শান্ত চোখে তাকিয়েছিল। বলেছিল-'কেঁদো না।' ওকে নন্দিনী মালিয়ার মত লাগছিল অশোকের । যেন ওরা দুজনে ভ্রমর আর অমল। যেন ওদের জোর করে কেউ সিনেমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে-অভেদ্য এক পর্দায় আটকে গিয়েছে লতিকা আর ও- দম আটকে যাচ্ছে, কিছুতেই বেরোনো যাচ্ছে না - 'ছুটি'র লাস্ট সীন চলছে। সিনেমার থেকে বেরোতে না পেরে অশোক ভাবল, তবে সিনেমাই দেখা যাক। ... ...
সেদিন দেখলাম স্টিয়ারিং একহাতে ধরে আর এক হাত দিয়ে বুকপকেট থেকে মোবাইল বার করল ড্রাইভার। কিন্তু কিছু বলব কি, খুব জোর একটা ধাক্কায় মাথা ফেটে গেল আমার, আর সেটা ভাল করে বোঝবার আগেই জল উঠে এল ঠিক আমার নাকের তলায়। এক সেকেন্ডের খুচরোতে দেখলাম ঘোলা জল রঙ বদলালো লালে। পাঁকের বিশ্রী গন্ধ, দু পা ওপরে, জলের ভেতর মাথা নিচের দিকে করে পড়ছি তো পড়ছি, যেন একটা বিরাট অন্ধকূপ, যার শেষেও আলো নেই। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কী করলে মুক্তি পাব এই তীব্র শ্বাসকষ্ট থেকে ভাবতে ভাবতে আরও অন্ধকারে জড়িয়ে গেল চুল, পরনের শাড়ি উধাও হল। মামাবাড়িতে দেখা ছোটবেলার অনেক ঘটনাই মনে আছে। যে ঘটনাটা ঠিক এখন উঠে এসে লটকে রইল চোখের পাতায় তা হল লোহার শিকে চারদিক বন্ধ একটা ছোট খাঁচা। ভেতরে একটা নেংটি ইঁদুর। ছোটমামা খাঁচাশুদ্ধ সেটাকে চুবিয়ে ধরেছে পুকুরের জলে। সেটা বার বার খাঁচার ছাদের দিকে উঠে আসছে, কিন্তু পুরু সরের মতো জমা জলে থৈ না পেয়ে আবার নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। ... ...
এসে পড়েছে ১৪২৫ নববর্ষ সংখ্যার বকেয়া কবিতা। এই পর্বে লিখেছেন মিতুল দত্ত, চিরশ্রী দেবনাথ, সোনালী সেনগুপ্ত, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়, হিন্দোল ভট্টাচার্য। ... ...
পয়লা একলা - ঐ একই হলো, এমনিতেও পয়লা হলে সচরাচর একলা হয়। সে যাই হোক, সংক্রান্তি পেরিয়ে গেল, আজ কবিতার শুভ হালখাতা মহরৎ। কবিতার ভৌগোলিক গন্ডী হয়না, কিন্তু সাহিত্যের ভূগোল কিছু থাকে তো। ক'দিন আগেই আলোচনা হচ্ছিল বাংলা সাহিত্যের কলকাতা-কেন্দ্রিকতা নিয়ে। সেই ভূগোলের সীমানা ভাঙার চেষ্টা করছি, আপাতত তার সামান্য ছোঁয়া এখানেও থাকবে। হুগলী কপোতাক্ষ আড়িয়াল খাঁ বুঢ়া লুঈ ছুঁয়ে সুদিন আসুক, নতুন বছরের কবিতা পড়ি আমরা। এই পর্বে লিখছেন যশোধরা রায়চৌধুরী, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, মিঠুন ভৌমিক, সোমনাথ রায়, জারিফা জাহান, সায়ন কর ভৌমিক, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সুমন মান্না। প্রকাশিত হল নববর্ষ ১৪২৫ সংখ্যার প্রথম পর্বের কবিতাগুলি। খুব শিগ্গিরই বেরুবে আরো কবিতা, এই সংখ্যার পরের পর্বে। ... ...
নতুন অফিসার জয়েন করার পর এই প্রথম আমার সঙ্গে তার চার চক্ষুর মিলন হল। মানে সাক্ষাৎ হল। তারপর থেকেই ভদ্রলোক আমার পেছনে কাঠি করা শুরু করলো। বিষয়টা ইউনিয়নের কানে তুললাম। কিন্তু সেখানে দেখলাম সবটাই ‘তু তু ম্যায় ম্যায়’। আমি একজন বছর বিয়াল্লিশের গোলগাল ভদ্রমহিলা। বত্রিশ চৌত্রিশ সাইজের ব্লাউজ দেখলে দোকানেই বলে ফেলি বাবা একসময় এগুলো আমার গায়ে কি ঢিলা হত। মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করি ইস আবার যদি কখনও গায়ে হয়। আমি জানি বামফ্রন্টের ভারতবর্ষে সমাজতন্ত্র নিয়ে আসার মতো এ আমার ভ্রম স্বপ্ন। যাই হোক আমি জন্ম থেকেই প্রায় সকল সম্পর্কের মানুষের কাছ থেকে ল্যাং খেতে খেতে এখন আমি লেংরে লেংরে হাঁটি। সুতরাং অফিসার এহেন আচরণ করবে এটাই যেন স্বাভাবিক। ... ...
শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মহাশয়, আমার নাম নীলাভ। ডাক নাম নীল। আমার কিছু জিজ্ঞাসা আছে আপনার কাছে। হ্যাঁ, আগে বলে নিই, আমার বয়স চোদ্দো। ক্লাস এইট। আমার দাদার কুড়ি। ফিজিক্স পড়ে। দাদার জন্মদিনে দাদাকে একটি বই দিয়েছিল বাবা – এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম- সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। দাদার কাছ থেকে নিয়ে বইটা আমিও পড়েছি। সবটা ধরতে পারিনি , কিন্তু পড়তে খুব ভাল লেগেছে। বুঝিনি সবটা বলেই কিছু কিছু প্রশ্ন জেগেছে আপনার লেখা ওই বইটি নিয়ে, বলা যায় সময় নিয়ে। তা রাখছি। ১) বড় হতে কত সময় লাগে স্যার?২) আমার কাছে সময় সবসময় কম মনে হয় কেন? কারোর কারোর কাছে যে সময় আর ফুরোয় না, যেমন অভিরূপ। তার কথা পরে বলছি। ... ...
কিন্তু আজ আর শেষরক্ষা হল না। দানীবাবুর গলা থেকে সাঁই সাঁই আওয়াজ উঠছে। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। গ্যাঁ গ্যাঁ করে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। পালঙ্কের একটা কাঠের ময়ূরের গলা শক্ত করে চেপে ধরলেন। শঙ্কু জল খাওয়াতে গেল, গলা দিয়ে নামল না। জলের গেলাস পাশের টেবিলে নামিয়ে রেখে শঙ্কু কর্তার মুখে ইনহেলারটা ধরল। প্রবল যন্ত্রণায় মাথা সরিয়ে নিলেন কর্তা। বোঝা গেল, নাকে লাগানোর ক্ষমতাটুকুও আর নেই। শঙ্কু মোবাইল ফোন খুলল। দুর্বল সিগনাল দেখাচ্ছে। এই দুর্যোগ, তার মধ্যে আজকেই এমন বিপদে পড়তে হল? ... ...
“তোমাকে আমি ঠকাবো না।এটা জেনে রেখো” ।নাচো বলেছিলো।কথাটা বিশ্বাস করার অবশ্য কোন কারণ নেই।নাচো যেসব জিনিষ বিক্রি করে তার মধ্যে মিথ্যে কথাও একটা।না করলে ওর সংসার চলবেনা।শুধু একরকম জিনিষ বিক্রি করলে কারুরই সংসার চলেনা আজকালকার দিনে।নাচো মিথ্যে কথা বিক্রি করে, বেনামী বারুদ(অনেক আগে থেকে বলে কয়ে,অনেক দাম দিলে তবে পাবেন)বিক্রি করে,পুরোনো হাতফেরতা মণি-মানিক বিক্রি করে(পাতা ছেঁড়া হলুদ বই,রং ফিকে হয়ে যাওয়া ছবি,আর কি কি চান?)।নাচো পাতা বিক্রি করে।সরল ভালোমানুষ ন্যাকাচন্ডী পাতা নয়... যা পুড়িয়ে ধোঁয়া দিলে ভুত পালায় সেই পাতা।ভুতের উপদ্রব খুব আজকাল সর্বত্র।খারাপ স্বপ্নের ভুত, অস্বপ্নের ভুত, ভুতেরই বাড়বাড়ন্ত! নাচো'র কাছ থেকে আমি পাতা কিনি।শুকনো রঙের, উনোবুনো গন্ধের পাতা।খারাপ স্বপ্নদের দূরে রাখতে লাগে।অস্বপ্নদেরও। ... ...