বাইরে ডাক্তার ও সুঁইকুমারীর সমবেত গগনভেদী আর্ত্তনাদ, লোকজনের হৈচৈ,পাড়াতুতো কুকুরবাহিনীর উচ্চস্বরে প্রতিবাদ - এতসবের মধ্যেও চেম্বারে ঢুকে প্রথমেই নজরে পড়ল ডাক্তারবাবুর ফোনটি( ততক্ষণে আমরা নিজেদের মধ্যে ফিরে এসেচি, এ দরজা ভেঙে ঢোকার ক্ষমতা গরুর হবে না)। অকম্পিত হাতে ফোন তুলে দৃঢ়স্বরে বাড়ীতে বলে দিলাম বাচ্চাদের ক্যারাটে ক্লাশ থেকে নিয়ে আসতে। কর্ত্তা যথারীতি সামান্য প্রতিবাদ করছিলেন, তোমরা কোথায় আছ? আমি তো ঠিক চিনি না ক্যারাটে ম্যাডামের বাড়ী (পড়ুন - টিভিতে ম্যাচ চলছে) এইসব। তার উত্তরে আরও দৃঢ়স্বরে জানিয়ে দিলাম যে আমাদের গরু তাড়া করেছে, এ জীবনে বাড়ী ফেরা হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফিরতে না পারলে সবুজ ব্যাগে ব্যাংকের পাশবই ও টাকা রাখা আছে (সেই সেলফোন, এটিএম কার্ডবিহীন সময়ে ব্যাংকের বইয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল)। ... ...
শহর কোলকাতা থেকে অনতিদূরে মৌবনীদের সবুজ-মেরুন দোতলা বাড়ি। এর আগে যদিও লাল-হলুদ ছিল। প্রমিতা ওপারের মেয়ে, তায় তার ঢাকা নিবাসী মাসতুতো বোনের ছেলে এখানে থেকে এমবিএ পড়ছিল কিছুদিন। বাপের বাড়ির সদস্য পেয়ে শ্রীমতীদের মনের জোর বেড়ে গেলে গৃহশান্তির জন্য পুরুষমানুষকে অনেককিছুই করে ফেলতে হয় যা তাদের নীতিবিরুদ্ধ। তবে ওই, রাখে বাবা অদ্বৈতানন্দ তো মারে কে! মানে, মৌবনী সবে এমএসডব্লু শেষ করে চাকরিতে ঢুকবে ঢুকবে, ওমনি তার ভালোবাসাবাসি হলো বিভাসের সাথে। এ কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। কেজি স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত এই নিয়ে মৌবনী দুটি ছেলে ও একটি মেয়ের হাত ধরে বাড়ি এলো। প্রমিতা প্রথমবার সোনার বোতাম গড়ালেন, দ্বিতীয়বার সাদা পাথর দেওয়া আংটি ও তৃতীয়বার মানে অধ্যাপিকা বান্ধবীটির বেলায় পত্রপাঠ বাড়ি থেকে বার করে দিলেন। মাস্টার্স-এর সময়টায় মৌবনী পেয়িং গেস্ট থাকছিল যোধপুর পার্কের একটা ফ্ল্যাটে। কাজের সুবাদে তাদের উল্টোদিকের ফ্ল্যাটটিতে নিয়মিত আসত বিভাস। এভাবেই একদিন মুখোমুখি-চৌকাঠ পেরিয়ে তেলরং-ক্যানভাস সমেত হুড়মুড় করে ঢুকে পড়া মৌবনীর হৃদয়ে। প্রতিমার অবিশ্যি ছেলেটির পেশা টেশা দেখার চেয়ে পুলকের কারণ এই ছিল যে, সে পুরুষ। বিভাসের মা ছন্দা আবার কোন এক অদ্বৈতানন্দের দীক্ষিতা। তিনি পুত্র ও বাবাজী সমেত মৌবনীর বাড়িতে- এলেন দেখলেন জয় করলেন। ... ...
শিল্পী ছিল সুজয়ের বোন। সুজয় তখন যুবা করত। যুব কংগ্রেস। পাড়ার বিরাট মস্তান আর শিল্পীর পিছনে পরে গ্যালো আমাদের রমেন। রমেনরা তখন সর্দারপাড়ার দিকে বস্তিতে থাকে। উদ্বাস্তু বাড়ির দুর্দশা যেরকম হয়– বাবা মারা গ্যাছেন, ভাইগুলো ইস্কুলেও বোধহয় যায় না, তিনটে বোন আর রমেন নাকি প্রেমে পড়ে গেল! সুজয়ের বাবা রমেনদের বস্তিতে এসে চোটপাট করে গেলেন। সেই বস্তি আবার তখন কমিউনিস্ট পার্টির বেস, উলটে সব রুখে দাঁড়াল। এরপর সুজয় কেসটা হাতে নেয়। সেদিন আমরা ফিরছিলাম ময়দানে খেলা দেখে। লিগ ম্যাচ, ফোকটে টিকিট জোগাড় করে দিয়েছিল কেউ। মেন লাইনের ট্রেনে বেলঘড়িয়া নেমে হেঁটে ফিরতাম আমরা। দু তিনদিন আগে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। বড় রাস্তায় বোধ হয় জল জমে থাকত, তাই নিমতা বাজারের থেকে ভেতরের পথ দিয়ে ফিরছিলাম। ব্যাপারটা যে পার্টির ঝামেলায় চলে গ্যাছে সেই ধারণাটাই ছিল না আমার। ... ...
কিন্তু ইতিহাস (এবং সিনেমার ইতিহাস) সম্পর্কে অনবগত বা উদাসীন হলেই দিবাকরের এই ছবিটির মত দায়সারা ব্যাপার হয় – তাই ১৯৪৩-র প্রেক্ষাপটে এই ছবিটিতে বিশ্বযুদ্ধ আছে কিন্তু ধর্মতলায় আমেরিকান জি আই নেই, ‘জয় বাংলা’ নামে একটি রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কোনো অভিঘাত নেই, গান্ধিজি আছেন নেতাজী নেই, বোসপুকুরে খুন হয় কিন্তু অভুক্ত লাশেদের মন্বন্তর নেই, গ্রামপতনের শব্দ নেই, গাঙে মরা নেই তাই গঙ্গায় নায়িকা সাতার কাটতে ঝাঁপ দেন অনায়াসে। ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতার প্রশ্ন বাদ দিলেও ব্যোমকেশ-অজিত-সত্যবতীর মধ্যে কোনো রসায়ন নেই; রহস্য সন্ধানে মেথড নেই তার বদলে সাংবাদিকতার ন্যায় তথ্য উন্মোচন আছে; সন্দেহভাজনের তালিকা একটি গোয়েন্দা গল্পে ভীষণ ছোটো কারণ মূল চরিত্রের বাইরে অন্য চরিত্রদের সময়ই দেওয়া হয়নি যে তারা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে; একটি রহস্য কাহিনীতে প্লটের গভীরতাহীনতা আছে যা অন্তত গোয়েন্দা গল্পের শতাধিক বছরের ইতিহাসের পর মেনে নেওয়া যায়না। ... ...
দিবাকর ব্যানার্জি ইতিপূর্বে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর আন্তর্জাতিক সিনেমার সঙ্গে মোটের ওপর পরিচিতি রয়েছে। কখনো আলেহান্দ্রো গনজালেজ ইনারিতু প্রতিম নেটওয়ার্ক ন্যারেটিভের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি (‘লাভ, সেক্স আউর ধোঁকা’), কখনো ভারতীয়করণ ঘটিয়েছেন কোস্তা গাভরাসের ‘জেড’ এর মত ক্লাসিক ছবির (‘সাংহাই’)। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ব্যোমকেশের জন্যে তাঁর দর্শকের মানসিক প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই মনে হচ্ছে চারপাশের প্রতিক্রিয়া দেখে। বাংলায় এ ছবি করলে তাঁর এমনকি প্রাণ সংশয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এমনটাই আমার অন্তত মনে হচ্ছে। একটা ওয়েল-ডিফাইনড লিটারারি টেক্সটকে চলচ্চিত্রের বয়ানের অন্তর্ভুক্ত করলে তার নানা ইন্টারপ্রিটেশন উঠে আসে স্বাভাবিক নিয়মেই, এবং দর্শকের কাছে সেটা সবসময় রুচিকর নাও ঠেকতে পারে। এজন্যেই অনেকে নিজের ছবি-করিয়ে হিসেবে স্বাধীনতাটা বজায় রাখার জন্য স্বল্পপরিচিত বা অপরিচিত টেক্সট বেছে নেন, ফলে তার পাঠের ধরন নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু দিবাকর যে কাজটি করেছেন তার নজির অন্তত ভারতীয় মূলধারার ছবিতে খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যোমকেশের এমন (অ)বিনির্মাণ, গোটা ক্যাননকেই কার্যত হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া অথচ তাকে নিপুণভাবে ন্যারেটিভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, ইতিপূর্বে দেখেছি বলে মনে করতে পারিনা। ... ...
শেষ প্রশ্নটা থেকে শুরু করি। কলকাতা। মানুন না মানুন আমরা যারা কখনো বা কখনো এই শহরের সঙ্গে জড়িয়েছি তাদের বেশির ভাগই নিজের মধ্যে নিজস্ব কলকাতা বহন করে চলি। শ্লাঘা অনুভব করি একে খুব ভালো করে চিনি বলে। আশির গোড়ার দিকে ধুসর নীল রঙের সরকারী বাস এবং “বাঘমার্কা ডবলডেকার” গিয়ে যখন লাল রঙের বাসগুলো এল – এক লহমায় যেন ভোল বদলে গেল শহরটার। মনে পড়ে। এমনিতে চিংড়ি মালাকারির স্বাদের মতো এই শহরের চরিত্রে খুব একটা ফারাক হয় না – কিন্তু আমাদের মতো বিশেষজ্ঞরা ধরে ফেলতে পারে চিংড়িটা যথেষ্ট তাজা ছিল কিনা কিম্বা কেনা নারকোল দুধ ব্যবহৃত হয়েছে নাকি নারকোল কুরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সাম্প্রতিক হিন্দি সিনেমায় দেখা কলকাতা বলতে গেলে “কাহানী” র স্মৃতি ই তাজা। সেখানে কলকাতা মন ভরিয়ে দিয়েছিল বলে এবারে প্রত্যাশার পাশ নম্বর বেশিই রেখেছিলাম। সেই পরীক্ষায় জন্ম ইস্তক প্রবাসী বাঙালি দিবাকরবাবু একেবারে সফল। ... ...
এর মধ্যে বাড়িতে একদিন কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে খেতে ডেকেছিলাম। তার মধ্যে রেখা আর আলিশাও ছিল। ওদের আগেই ফুটফুটে দুটো যমজ হয়েছিল আলিশার গর্ভে, সাম্প্রতিক কালে রেখা অন্তসত্ত্বা। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা চারমূর্তি বসে গল্পগাছা করছিলাম। কথাবার্তা ঘুরতে ঘুরতে গে ম্যারেজ, লেসবিয়ান কাপল, আই ভি এফ, দত্তক ইত্যাদি হয়ে কিভাবে যেন কাটজুতে পৌঁছে গেল। আমি বললাম যে প্রাক্তন বিচারপতি কাটজু মনে করেন, বিয়ের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য সন্তান উতপাদন ও প্রতিপালন। তাই যেহেতু গে কাপলদের সন্তান হবে না, তাই গে ম্যারেজ অর্থহীন। আইলীন হঠাৎ রেগে গেল। কাটজুর উদ্দেশ্যে কিছু বাছা বাছা গালাগাল দিয়ে শুতে চলে গেল। খানিকবাদে ড্যানও চলে গেল। আইলীন যদিও তুমুল এলজিবিটি সমর্থক তবু এরকম রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত রেড ওয়াইন একটু বেশি হয়ে গেছে। ওরা দুজন চলে যাওয়ার পর আমি এই কথাটা গণেশকে বলতে ও অবাক হয়ে আমাকে বলল, ও তুমি জান না? আমি বললাম, কী জানব? ... ...
হ্যাঁ, নারীকে নিয়েই কথা আসে সারাবছর, অজস্র কথা। জীবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যায় নানারঙের কথা। সেইসব কথার পিঠে চড়ে আসে ভাবনারা। প্রশ্নেরা। ঘুরে বেড়ায় আলগোছে। নারীদিবসের আশেপাশে এইসব ভাবনাগুলো জমাট বাঁধে, মাথায় চড়ে বসে। আমাদের তাগাদা দেয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নিতে। আর সেই পুরোনো পড়া পুরোনো ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই কোথাও কোথাও নতুন কথাও জুড়ে যায় জায়গামত। এবারের পুরোনো পড়া ঝালানোর সময়েই পড়লাম স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘ঘরোয়া’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ই মার্চ)। খোদ নারীদিবসে দাঁড়িয়ে একজন নারীই যখন মেয়েদের ‘গুছিয়ে সংসার করার মোহে’র দিকে আঙুল তোলেন, তখন একটু ধাক্কা খেতে হয় বইকি, মানে এইটা ঠিক পুরোনো পড়ার সিলেবাসের মধ্যে ছিল না তো বরং (এই সাংবাদিকের লেখা) যেসব পুরোনো পড়া মনে পড়ে যায়, সেখানে উনিই সওয়াল করে এসেছেন মেয়েদের ঘরোয়া কাজের মূল্যায়নের পক্ষে; সারামাসের রান্নার লোকের মাইনের সঙ্গে বা বারো ঘন্টার আয়ার মাইনের সঙ্গে ড্রাইভার বা মিস্ত্রীর মাইনের একেবারে সোজাসুজি তুলনা করেছেন। তাহলে কি দুটোই সত্যি ! এইখান থেকে শুরু হয়ে যায় আমাদের লেখাপড়াশোনা যার সরল অর্থ হল আজকের পড়ার মধ্যে নতুন ও পুরোনো সবরকমের কথাই থাকবে, নারী ও আনাড়ি সকলের কথাই নামে ও বেনামে থাকবে। ... ...
তাহলে কী নিয়ে লিখবো আমি! কেউ কি বলতে পারবেন কী নিয়ে লিখতে সরকার, রাজনৈতিক দল, মৌলবাদী, জনগণ, স্বাধীনতা পক্ষ-বিপক্ষ সব গোষ্ঠী শান্ত থাকবে? আছেন কি কেউ বুদ্ধি দেওয়ার মতো? হ্যালো... ... ...
চাপাতিধারীদের অতর্কিত হামলা আতঙ্কের যে সমাজে আমাদের বসবাস, তাতে নবতর সংযোজন এই ব্লগার খুন। যে গভীর পাপ আমাদের মানহীন শিক্ষাব্যবস্থায়, আমলাতন্ত্রের দাপটে, সংস্কৃতি চর্চায়, সামাজিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতায়, দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতায়য় এত বছর ধরে চর্চা করে আসা হয়েছে, তার ফলাফল হাতেহাতে পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞান লেখকদের আড্ডা কি আর হবে এই দেশে? আইনস্টাইনের জন্মদিন পরের বছর কি পালন করা যাবে? শিশু-কিশোরদের মা বাবারা পাঠাবেন তো সাংস্কৃতিক আয়োজনে? সবশেষ ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকাণ্ড (৩০ মার্চ) এই ভীতির সংস্কৃতিকে আরও পাকাপোক্ত করার শয়তানি আযোজন। আমরা জানি যারা আসছে, সেই নতুন প্রজন্মের জন্যই আমাদের লড়ে যেতে হবে। সহিষ্ণু-মানবিক একটা সমাজ নির্মাণের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ চলবে। ... ...
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি নিজের ‘দেশ’, তা বলতে আমি হাতি ঘোড়া বেগুনপোড়া যা-ই বুঝিনা কেন, তাকে সমর্থন করব না? ভারত বা বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটাবো না? উত্তরে বলি (আমার কাছে উত্তর চাননি হয়তো, তবু এতখানি ধ্যাস্টামো যখন করেই ফেলেছি), সমর্থন আমিও করি – আপনিও করেন। সমর্থন করতেই পারি। খেলা দেখতে যারা ভালোবাসি, খেলা দেখবো। কিন্তু সেই দেখা, সেই সমর্থনকে আমার স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাকে গ্রাস করতে দেবো কেন? ধরুন কাল যদি ভারতের বুকে বসে ‘ভারতবাসী’ হয়ে কেউ অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করেই (কী ভাগ্যি কাল বিপক্ষে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ নেই), তবে তার সহজ এবং একমাত্র ব্যখ্যাটা এটাই হয়না যে সে বা তারা ‘দেশদ্রোহী’। না হয়না। কারণ প্রথম কথা ‘দেশ’ এর সংজ্ঞা প্রত্যেকের কাছে আলাদা এবং রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সীমানাকে অস্বীকার করা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। আর দ্বিতীয় কথা, এটা ‘যুদ্ধ’ নয়। দু দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দল নিজেদের মধ্যে খেলেছে, আমরা কোন না কোন দলকে ‘দেশ’ হিসাবে (বা আমার দল হিসাবে) ধরে নিয়ে সমর্থন করছি আমার স্বাধীন নির্বাচন অনুযায়ী, কোন রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতায় নয়। আমার বিপরীত দিকে বসা মানুষটারও তার মতন করে নির্বাচন করার অধিকার আছে বৈ কি। সেটা আমার সঙ্গে না মিললে সমর্থকের কথার লড়াই চলতেই পারে – দেশের বিরুদ্ধে লড়াই হয় না। জীবনে অনেক যুদ্ধ। বেঁচে থাকার যুদ্ধ, প্রতিদিনের হাসার যুদ্ধ। ওটা থেকে পালাবার পথ নেই বিশ্বাস করুন, ক্রিকেট আপনাকে ওই যুদ্ধে একটুও বাড়তি সুবিধা দেবে না। স্টেডিয়ামের লক্ষ ওয়াটের আলোর ছিটেফোঁটাও ঢুকবে না আপনার ঝুপড়িতে বা এক চিলতে ফ্ল্যাটে – ম্যান অফ দি ম্যাচের কোটি টাকার গাড়ি আপনার একটা ই এম আই শোধের কাজে আসবে না। না ওটা আমাদের যুদ্ধ নয় – স্রেফ এন্টারটেইনমেন্ট। ক্রিকেট থাকুক, সমর্থন থাকুক, আনন্দ বিষাদ থাকুক, সেই সঙ্গে স্যানিটিও থাকুক। ... ...
ভারতকে খুঁজে পাই ছ'বছরের কিছু বেশি আগে, যখন সদ্য অ্যামেরিকা এসেছি। অক্সিজেনের ঘাটতি না হলে সেটা যে ছিল টের পাওয়া যায় না, আমার ভারতে পাওয়াও কিছুটা ওরকম। ভৌগোলিক ভারতবর্ষে থাকতে মনেপ্রাণে উপলিব্ধি করতাম, কলকাতাটাই আমার দেশ। বাকি এলাকাগুলো পাসপোর্ট-ভিসাহীন বিদেশ, আসলে দেশ আর ঘরের পার্থক্য বুঝিনি। যাই হোক, সেই পার্থক্য নিরূপণের জন্য এ লেখা নয়, তবে দেশ মানে কেবল ঘুম থেকে দাঁত মাজতে মাজতে পাড়া ঘোরার আরামটুকুই নয়, সেটাই হয়তো বাকি লেখায় বোঝার চেষ্টা করবো। অ্যামেরিকায় এসে যেটা খেয়াল করতে শুরু করি, যে, এদেশের বৈভব ও বিস্তারে আমার কোনও অধিকার নেই। অধিকার নেই আমার কলেজ যাওয়ার রাস্তার গা ছমছমে অঞ্চলটায় কেন পুলিশ থাকেনা জিজ্ঞেস করার কিম্বা সিম্পলি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ম্যাগাজিন হক করার। ভারতে এসব বললেও হাইলি কোনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পাত্তা দেবেনা, কিন্তু বলবার/করবার অধিকারটুকু আছে- এই অধিকার থাকা আর না থাকার বোধ একটাভাবে নিজের জীবনচর্যাটায় পার্থক্য এনে দিচ্ছিল- দেখছিলাম, সত্যিই বিদেশে আছি। কিন্তু এ গল্প দেশ ও বিদেশের, মহাভারতের নয়; তবে হয়তো এইখান থেকেই শুরু। কোনওভাবেই মানিয়ে নিতে পারিনি অ্যামেরিকান সমাজে। মানিয়ে না নিতে পারা অবশ্যই অক্ষমতা, আর, আর-পাঁচজন দেশির মতন আমিও অ্যাপার্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও দেশি পার্টিতে বন্দি হয়ে বছর কাটাতে লাগলাম। আর, এই জীবনটা খুব পীড়া দিচ্ছিল। ক্রমশঃ কোর্সওয়ার্ক ক্লাসরুম থেকে দূরে সরে এলাম যখন এদেশি বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও কমলো, ফলে বিচ্ছিন্নতা বাড়লো- পুরো সমাজটার মধ্যে একদম বাইরের একজন অবজ়ার্ভার হয়ে থাকলাম। এবং এই পীড়াদায়ক বিচ্ছিন্নতা যেহেতু সবচেয়ে বাজে রাখে নিজেকে বারবার একটা খোঁজার জায়গা এলো, কোথায় আটকাচ্ছে বোঝার জায়গা এলো। ... ...
দেশ কী? জানি না। জানি ওই ২০১১র সেপ্টেম্বর মাসে পাওয়া কাগজটা আমার দেশ এর পরিচয় বহন করে। জানি ১৯৪৭ সালে আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। এও জানি, ওই ১৯৪৭ এই কিছু মানুষের টেনে দেওয়া কতগুলো দাগের মধ্যবর্তী অংশকে সারা জীবন দেশ বলে মেনে নিতে হবে। অথচ আমি জানি, আমি যেখানে থাকি, তার একশ মাইলের মধ্যে এমন জায়গা রয়েছে, যেখানকার অধিবাসীরা আমার ভাষাতেই কথা বলে, আমি যা খাই, তাই খায়, একই বৃষ্টিতে ভেজে। কিন্তু তারা ওই দাগের অন্যপ্রান্তে। আমি এও জানি, এক হাজার মাইল দূরে রয়েছে আরও অনেক মানুষ, যারা একেবারে অন্যরকম। আমার সাথে তাদের কিছুই মেলে না। কিন্তু তারা আমার দেশবাসী। ... ...
অর্ডিন্যন্সটি জারি হবার পরে এখন সিয়া, বিচার বিভাগীয় বিবেচনা, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্মতি গ্রহণ, তুলনামূলক বিচার ইত্যাদির সম্পূর্ণ বিলোপসাধন৷ যে দুই-তৃতীয়াংশ গ্রামবাসী দরিদ্র ভারতবাসী বিপুল ঋণের ভারে জর্জরিত, প্রায় সব ক্ষমতাসীন সরকারের আমলেই তাদের মধ্যে একই রকম উচ্চ হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলেছে৷ এরকম একটা অবস্থা কি কোন গণতন্ত্রে বাঞ্ছনীয়? এমন কি একজন প্রকৃত বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিভঙ্গীতেও কি এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং অনুৎসাহব্যঞ্জক একটা পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না? ... ...
আমি এইরকম একজন মহিলাকে দেখেছি যাঁর স্বামী একটা ছোট কারখানায় কাজ করতেন। একটাই ছেলে, কলেজে পড়ছিল। স্বামীর আয়ের যেটুকু হাতে আসতো তাই দিয়েই সাধ্যমত সংসার চালাচ্ছিলেন মহিলাটি। কিন্তু পই পই করে বলেও স্বামীকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারেননি একবিন্দু, আর পারেননি কিছু সঞ্চয় করাতেও। মধ্যবয়সের যাবতীয় পরিচিত ব্যাধিই ভদ্রলোকের শরীরে ছিল, রক্তের উচ্চচাপ, শর্করা মাত্রাও ছিল বিলক্ষন চড়া। তাই নিয়েই তিনি নিয়মিত ধূমপানে আর মদ্যপানে যতটা অভ্যস্ত ছিলেন ততটাই নারাজ ছিলেন ডাক্তারে-ওষুধে। ভদ্রমহিলা চেষ্টা কম করেননি কিন্তু ‘মেয়েছেলে’র কথায় কান দেওয়াকে কবেই আর পুরুষোচিত কাজ বলে ধরা হয়! ফল যা হবার তাই, একদিন অফিসে কাজ করতে করতেই শিয়রে শমন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ। দুদিন হাসপাতালে যুদ্ধের পর ভদ্রলোক চলেই গেলেন একেবারে। ... ...
জ্যোতি মারা যাবার পর এক দরদী রাজনৈতিক ব্যাক্তি এরকম বলেছিলেন... ভালই হয়েছে, মেয়েটা মরে বেঁচেছে। নইলে জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে থাকত। যদি সমাজের কোনো একটা মানসিক বিকার নিয়ে আমার সত্যিকারের বিবমিষা থাকে, তাহলে এটা। মেয়েটির বেঁচে থাকার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় এই মনোভাব। শুধু অন্য লোকে এ কথা বিশ্বাস করলে সমস্যা ছিল না; অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েটি নিজেও তাই বিশ্বাস করে। সমষ্টি এবং ব্যষ্টির নিঃশ্বাসে মিশে যাওয়া এই বিষাক্ত বিশ্বাসকে আক্রমণ করা ধর্ষককে হত্যা করার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েটিকে আর তার পরিবারকে “কিচ্ছু হয়নি” বলে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপাত দৃষ্টিতে একথা বলা অন্যায়। কিচ্ছু হয়নি মানে? এত বড় সর্বনাশের পর এই কথা? এই আরেকজন পুরুষতান্ত্রিক শূকর। সংবেদনশীলতার কণামাত্র নেই। এই সব অভিযোগ শুনেও আমি এই কথাটা বলতে চাই এবং বলে থাকি। যাঁদের বলেছি, তাঁরা প্রায় সকলেই আমাকে মার্জনা করেছেন। ব্যক্তিগত স্তরে যাঁদের সে কথা বলার প্রয়োজন হয়নি, কিন্তু যাঁদের এই কথাটা শোনা এবং বিশ্বাস করা প্রয়োজন, তাঁদের জন্য এখানে বলছি। “কিচ্ছু হয়নি।” অপরাধ নিতে পারেন। মার্জনা না করলেও চলবে। কিন্তু এই যে আপনার চরম অভিজ্ঞতাকে একরকম ট্রিভিয়ালাইজ করলাম, সেই অপরাধে আমাকে রোজ সকাল-বিকাল গালি দেবার ফাঁকে এই কথাটা নিজেকেও শোনান। শেষে যদি একদিন এটা বিশ্বাস করতে পারেন, দেখবেন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি যদি এসে গোপনে কাঁদে আপনার কাছে, তার কানে কানেও এই কথাটাই বলুন, “কিচ্ছু হয়নি। কোথাকার কে লম্পট কী করল, তার জন্য তোর জীবন যাবে? জীবন বুঝি এতই ফেলনা?” ... ...
নিখিলদার ব্যাগ থেকে সেই বোতলের উপস্থিতি টের পেলাম – সেখান থেকে মদ সরিয়ে আমি কার্তিকদাকে প্রথম চাখতে দিই। সেই সময়ের স্কুল অব থটস ছিল এই যে থ্রি এক্স রাম খেতে হয় হয় কষা মাংসের চাট দিয়ে। যথারীতি মাংস রান্নার ভার পড়ে কার্তিকদার উপরে – সেই বয়সে মদের ভাগ না-এলেও আমার প্রতি কার্তিকদার ভালোবাসার জন্য কষা মাংস আমি চেখে ছিলাম। দুর্গাপূজার ভাসানের সময় বাড়িতে মদের অনুপ্রবেশ নিমো গ্রামের সীমানায় বাঙাল অনুপ্রবেশের মতই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ঘটনা বলে পরে প্রমাণিত হয়েছে। আরো হালকা বয়েস বাড়লে প্রথম সময় এল মদ নিজের জিভে চাখার। আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার ও গাইড ছিল গদাকাকু। এত দিন পর্যন্ত কেবল মদ সাপ্লাইয়ে সাহায্য করেছি – যখন খাওয়া হত তখন আমার বয়সীদের উপস্থিতি এ্যলাও ছিল না। ফলে পরিমাপে গোলমাল করে ফেললাম – প্রথমে নিখিলদার ব্যাগ থেকে হাতানো থ্রি-এক্স রাম ও পরে গদাকাকুর সামনে বসে তার গাইডেন্সে অক্টোবরের শেষের বিকেলে ছাদে জিন পান। সন্ধ্যা বাড়ছে, আমার বাড়ছে কনফিউশন – তখনও বাড়ির ঠাকুরকে প্রণাম করে বিজয়া দশমী করতাম সবাইকে – সেই প্রথম বার স্কিপ হল, বড় কারো কাছে যেতে পারছি না মুখে গন্ধের ভয়ে – মাথা ঘুরছে, পায়ের নিচে বসানো আছে আলি চাচার বানানো তুবড়ির বস্তা, নিজেদের বানানো রঙমশাল, আর অগুনতি বুড়িমার চকোলেট বোম্বের বাক্স। পরের স্মৃতি আবছা – নদুকাকুর ঘরে খাটের ধারে আমি বমি করছি মেঝেতে, আমার বাম পাশে শুয়ে আমার উপর দিয়ে উঠে মেঝেতে বমির চেষ্টা করছে আমার গাইড গদাকাকু। ফুলমা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর বলছে এই গদাটার জন্য – ফলত গদাকাকু কোন জলপট্টি পাচ্ছে না, না পাচ্ছে বমি করার জন্য কোন হেল্প। সে নিশা আমাদের সহজে ছোটে নি – এবং পলকে পলকে তারে মনে উঠেছে। গাঁজা আমাদের ঘোষ বাড়িতে কোন দিন ট্রাই হয় নি। সেই দিন নিশা করে আমার এবং গদা কাকুর ঘৃণা লজ্জা ইত্যাদি ভয় প্রায় হাটে বিকিয়েছিল। ... ...
গাঁজা জিনিসটা সেইসময়ে যেহেতু খুব সস্তার নেশা ছিল, সেটা নিয়ে পার্লামেন্ট আগে খুব মাথা ঘামায় নি। মুঘল আমলেও গাঁজার ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বসেনি। তবে ১৭৭০-এ কোম্পানি যখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে পার্লামেন্টের দ্বারস্থ হয়, বেল আউট প্যাকেজের পাশাপাশি কোম্পানির থেকে লাভ বাড়ানোর অপশনগুলো পার্লামেন্ট বিচার করে। ১৭৯০ এ ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার গাঁজা-চরস-ভাং-এর ওপর ট্যাক্স বসানো হল। এই ট্যাক্স বসানোর ব্যাপারে পরবর্তীকালে কিছু মজার ঘটনা ঘটেছিল। গাঁজা ভাং-এর ব্যাপক ব্যবহারে কালেক্টররা বুঝে উঠতে পারছিল না কীভাবে ট্যাক্সেশন করলে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ আসে। ফলে কখনো দোকানগুলোকে গুণগত তারতম্যে বিক্রির ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, কখনো ট্যাক্সের নিয়ম পালটে দৈনিক ফিক্সড ট্যাক্স করা হয়, কখনো দামের ফারাক না দেখে সব ধরণের গাঁজা ভাং-এর ওপর ওজন অনুযায়ী ট্যাক্স ধরা হয়। ১৭৯০ এর নির্দেশনামায় কালেক্টররা সরাসরি ট্যাক্স নিতেন না, নিজের এলাকায় গাঁজা ভাং চরস বিক্রির থেকে জমিদারদের ট্যাক্স কালেক্ট করতে হত। ১৭৯৩ এ ৩৪ নং রেগুলেশন অনুযায়ী কোম্পানির অধীনস্থ এলাকায় গাঁজা ভাং চরস চাষও ব্যবসা করার জন্য আলাদা করে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হয়। বলাবাহুল্য, লাইসেন্সিং ছিল রেভিনিউ আদায় করার সবচেয়ে সহজ পন্থা। লাইসেন্স পাওয়া এবং রাখার জন্য নিয়মিত ফি দিতেই হত। রেগুলেশনের কারণ হিসেবে সেটা উল্লেখও করা হয় যে লাইসেন্সের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কমবে এবং সরকারের অর্থাগমও সম্ভব হবে। ১৮০০ সালে আরেকটা রেগুলেশন বের হয়, যাতে বলা হয় এগুলোর মধ্যে চরস সবচেয়ে ক্ষতিকারক এবং চরস বানানো বা বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। আর মজার ব্যাপার, ১৮২৪এ আরেক নির্দেশনামায় বলা হয় যে গাঁজা বা অন্যান্য নেশার জিনিসের থেকে মেডিকেলি চরসের কোনো বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, ফলে ব্যান তুলে নেওয়া হল। ১৮৪৯এ বেশি আবগারি শুল্ক আদায়ের জন্য খুচরো গাঁজার ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। এই সময় থেকে পরের কয়েক দশক ট্যাক্স দৈনিক হিসেবে হবে না ওজনের ওপর হবে এই নিয়ে বিভিন্ন আইন আসে। ফলে দ্যাখা যাচ্ছে যে কোম্পানির শাসনের আমলে গাঁজা ভাং-এর ব্যাপারে অর্থাগমের সুযোগ নিয়েই বেশি মাথা ঘামানো হয়েছিল। গাঁজা নিয়ে আফিং-এর মতন ব্যবসার সুযোগ ছিল না। কারণ গাঁজা সস্তা, প্রায় ঘরেই চাষ করে ঘরেই খাওয়া যায়, আর লোকে যেরকম সেরকম ভাবে জোগাড় করে নিতে পারে। সুতরাং চাষ আর পাইকারি ব্যবসাতে ট্যাক্স বসানোই এক্ষেত্রে একমাত্র উপায় ছিল। একই কারণে খুচরো গাঁজার ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণও করতে চেয়েছিল কোম্পানি। ... ...
ঝিম। এসময় বড়ো মায়াবী লাগে চারপাশ। গোধূলির জাদু আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে গাছেদের পাতায় পাতায়। সামনে শ্যাওলা-ঝাঁঝিতে ভরা ছলাৎছল ঝিলের জল। একপাশে ভিড় করে আছে কুচো কচুরিপানা। ত্রস্ত পায়ে জলপিপি ছুটে যায় জল বেয়ে বেয়ে। রূপসী জলসাপ সোনা ও কাজলে মুড়ে ডুবে থাকে নিঝুম আলস্যে। পানাকৌড়ি যুগল ডুবে যায় ভেসে ওঠে এমনিই। ওপারে এক দারুণ বালক চার খুঁটিতে বাঁধা নৌকায় এক মনে দাঁড় বায়। সে নৌকা কোথাও যায় না। স্থির সেই নৌকাটিতে দাঁড় বেয়ে চলে বালক অবিরাম, অক্লান্ত। সে বুঝি অনুশীলনরত। নৌকা যাবে না কোথাও, কোত্থাও। তেমনই কথা দেওয়া আছে ঘাটের সাথে। অথচ বালকটিকে যেতে হবে দূরে বহুদূরে....। আর আমরা, তাম্বুরিন বাজানো ডিলানের মানুষটির মত, কোথাও যাবার নেই যার, গাইতে থাকি। ... ...
কোটিল্য এরপর নানান মদের লিস্টি দিয়েছেন, যেমন মেদক, প্রসন্ন, আসভ, অরিষ্ট, মৈরেয় আর মধু। মধু মানে কিন্তু হানি নয়, আঙুরের থেকে তৈরি ওয়াইন। উনি রেসিপিও দিয়েছেন। একটা শুনুন। মৈরেয় বানাতে কী কী অ্যাডিটিভ লাগে। মেষশৃংগী গাছের ছাল গুড়ের সাথে মিশিয়ে বাটতে হবে। তার সাথে দিন গোলমরিচ ও ত্রিফলা চুর্ণ। ব্যাস,এটাই সিক্রেট রেসিপি। আমের রস থেকেও মদ হোতো। কতো রকমের মদ ছিলো? আয়ুর্বেদে বলে ষাটটি। কোটিল্য উল্লেখ করেছেন প্রায় দশ-বারোটির কথা। অগ্নিপুরাণেও আছে সাত-আটটির নাম। তন্ত্র ঘাঁটলেও গোটা দশেক জেনেরিক মদের নাম পাওয়া যায়। ... ...