আমাদের কর্তা গিন্নি দু'জনের জীবনেই ঝুলন পূর্ণিমার স্মৃতি মনের ঝিলের গভীর স্তরে সাজানো আছে। আমার স্মৃতিতে ভরে আছে - কাঠকলে গিয়ে বস্তা করে কাঠের গুঁড়ো আনা, সেগুলো নানারকম রঙ করা, গ্রাম, শহর, জঙ্গল সব পাশাপাশি, একধারে পাহাড়, নদী, ঝরনা - সেই পাহাড়ের মাথায় শিব ঠাকুর। প্যাকিং বাক্স ওপরে ওপরে রেখে, কাদা জলে ছোপানো কাপড় দিয়ে ঢেকে সেই পাহাড়, কায়দা করে শিব ঠাকুর বসানো। নিচে বড় মোটর সাইকেলের পাশেই ছোট ছোট হাতির সারি। স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে করা একরত্তি পুকুরে উত্তরাধিকারে পাওয়া এক মস্ত পোর্সেলিনের হাঁস। আর ঝুলন যেদিন শেষ হয়, সেদিন হল রাখী। ... ...
জুনিয়ার হাইস্কুলগুলি নতুন হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি সব অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির ভৌগোলিক অবস্থান দেখলেই বোঝা যাবে কেন সেখানে ছাত্র-ছাত্রী কম। ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত জঙ্গলে ঘেরা গ্রামের একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কি ছাত্রসংখ্যা দুশো হবে? নাকি ছাত্র সংখ্যা ত্রিশের কম বলে তাকে তুলে দেওয়া চলে? যদি ধরেও নিই এলাকাবাসী ততটা সচেতন নন বা কী থেকে কী হল স্কুল বন্ধ হয়ে গেল এতটা ভাবার সময় যদি তাদের নাও থাকে তবুও কি সরকারের নৈতিক দায়িত্ব নেই স্কুলগুলিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার? অবশ্যই আছে। যেখানে প্রথম থেকেই ছাত্রসংখ্যা কম হওয়ার কথা সেখানে এই অজুহাতে স্কুল তুলে দিতে হলে এই ভাবনা যাদের মস্তিষ্কপ্রসূত তাদেরকেই আবার স্কুলে ভর্তি করতে হয়। কারণ তাদের ন্যূনতম জ্ঞানবোধপ্রজ্ঞাই তৈরি হয়নি। তাই এখানে কীভাবে স্কুলটিকে টিকিয়ে রেখে শিক্ষাদানের পরিবেশ বজায় থাকে তারই চেষ্টা করার জন্য সরকারি পরিদর্শক আছেন। তাঁর কাজ কেবল অফিসে বসে বসে মিডডে মিলের রিপোর্ট নেওয়া আর সরকারি প্রকল্পগুলি চলছে কিনা দেখা নয়। কেন স্কুলছুট হচ্ছে কোনও শিশু, কেন সে বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করতে চলে যাচ্ছে তার খোঁজ নেওয়াটাও তাঁর দায়িত্বে মধ্যেই পড়ে। ... ...
২রা মার্চ ছিল তাঁর জন্মদিন। ফেসবুকে তাঁর নাম দিয়ে সার্চ করলাম সেই তারিখের কয়েকদিন পরে। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই উঠে এল ৩৩ টা ছবি, আর অন্তত গোটা পঞ্চাশেক পোস্ট। ছবি এবং পোস্টগুলোর অনেক ক’টাই একই বা ছবি বা লেখার কপি, কিন্ত প্রকাশিত হয়েছে আলাদা আলাদা ফেসবুক পেজে। অনেকেই জানেন তাঁর বিষয়ে। গত শতকের নব্বই দশকের প্রথমার্ধেও বাংলা বইয়ের অ্যাভারেজ পাঠককে শৈলবালা ঘোষজায়ার নাম জিজ্ঞেস করলে ভুরু কপালে তুলে বলতেন, ‘ না, পড়েছি বলে মনে পড়ছে না!’ শৈলবালা পুনরাবিষ্কৃত হলেন, কারণ বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়ল। ... ...
মনে হল, হঠাৎ কী যেন একটা মজার প্রসঙ্গ এসে পড়ল এই ভাঙাচোরা উঁচুনীচু ভাগীরথীর পলি দিয়ে গড়া পাড়াটাতে। চারিদিকে বাকি দর্শকেরাও হাসতে শুরু করল। পুরুষ-মহিলা কন্ঠে নানারকম হাসি। হঠাৎ মনে হল ষাট-বাষট্টির আনিকুল যেন বাচ্চা একটা ছেলে। যেন আনিকুলের টিফিন টাইমে ইস্কুল পালানো বা রাগী স্যারের টিউশন থেকে প্রেম করতে পালানোর মতো বেশ একটা মজার ব্যাপার নিয়ে এক্ষুনি কথা হচ্ছে। ছেলেটা খিক খিক আওয়াজ করে হাসতে হাসতেই বলে চলেছে, পালাতে নিয়েছিল তো কয়বার! পেরেছে নাকি! পেরেছে নাকি! ... ...
তবু একদিন যাবার সময় হয় রঘুর। বনবিভাগ ফেরত চায় হাতিকে। তারা মিনতি করে হাতিটিকে রেখে দেবার কিন্তু নিষ্ফল সে আবেদন। রঘু চলে যায়। নীরবে চোখের জল ফেলে বোমান আর বেলি। সন্তানকে দূরে পাঠাতে হলে যেভাবে দুমড়ে যায় মন। কিন্তু ততোদিনে এসে গেছে নতুন একটি হস্তিশাবক, তারা নাম দিয়েছে আম্মু। হাতির সেবায় উৎসর্গীকৃত জীবন থেমে থাকে না। দূরের বন থেকে কখনো দেখা করতে আসে রঘু। বোমান হাঁক দেয়, কেমন আছিস রে রঘু? রঘু তার শরীরী ভাষায় জবাব পাঠায়। আশ্চর্য মুহূর্ত ধরে ক্যামেরা। ... ...
ভারি আশ্চর্য। এখানকার কোন মেয়ে বসে থাকেনা। ঘরের কাজের সঙ্গে মাঠে কাজ করে, কাজু বাদামের বিচি থেকে শাঁস ছাড়ায়, বিড়ি বাঁধে। সরকারি ভাতাও পাচ্ছে। একটু সম্পন্ন ঘরে পরিচারিকা বা রান্নার কাজও করছে। আবার শ্বশুরবাড়িতে বরের মার খাচ্ছে, অভিভাবকদের বকুনি খাচ্ছে - এমন অল ইন ওয়ান উপযোগী প্রাণী যার ঘরে থাকবে তার লাভ। মেয়ে কমার তো কথা নয়। পড়াশোনা জানা ঘরে মেয়েরা কেউ কেউ শিক্ষিকা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ নার্সিং পড়ে। বোধ করি সারা দেশে এখানকার নার্স আছে। হঠাৎ মাথার মধ্যে টপ করে একটা চিন্তা আসে। মেয়ে কমেছে না কি ছেলে বেড়েছে? ... ...
এমন প্রত্যক্ষ প্রমাণেরও অভাব নেই যেখানে মোদি সরকার এমন নীতি তৈরি করেছিল যা সরাসরি আদানি গোষ্ঠীকে উপকৃত করে। একদিকে আদানি অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে কয়লা আমদানি শুরু করে, অন্যদিকে সরকার সেই কয়লা আমদানিতে শুল্ক বাতিল করে। আদানি 'গ্রিন হাইড্রোজেন' তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করার পরপরই, সরকার গ্রিন মিশনের অধীনে এটিকে ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আদানি শস্য সঞ্চয় করার জন্য সাইলো নির্মাণ শুরু করে। কখন? যখন সরকার মজুত রাখার আইন শিথিল করার জন্য কৃষক বিরোধী আইন সংশোধন করে। সরকারি নিয়ম পরিবর্তন করার ফলে আদানি দেশের বেশিরভাগ বন্দর ও বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অর্থ মন্ত্রক এবং নীতি আয়োগের আপত্তিও উপেক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়াও সন্দেহ রয়েছে যে আদানির প্রতিদ্বন্দ্বী জিভিকে-র কাছে আয়কর এবং ইডি অভিযানের হুমকি দিয়ে মুম্বাই বিমানবন্দর আদানির হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল। ... ...
সম্প্রতি, ১৯ মার্চ, ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামশেদপুর শহরে বাংলা ভাষাভাষী মানুষজনদের এক বিপুল সমাবেশ দেখা গেল। প্রায় লক্ষাধিক বাঙালি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেই একত্রিত হয়েছিলেন এমনটাই ভাবা যায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বাংলা ভাষার দাবি নিয়ে, বাংলা ভাষাটিকে ধীরে ধীরে বিদ্যালয় পঠনপাঠন থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং বাংলা ভাষার পুন:বহালের দাবি নিয়ে জামশেদপুর শহরের, গোপাল ময়দান, বিষ্টুপুরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন। জানি না, সরকারের টনক কতটা নড়বে কিন্তু এই দাবি চাইতে আসা মানুষজনদের দেখে খুব আশাবাদী। তবে কি ২১শে ফেব্রুয়ারির মত, ১৯ শে মে -এর মত আরেকটি দিন ১৯শে মার্চ সংযোজিত হবে ভাষা আন্দোলনে? বাঙালি অলস জাতি এই অপবাদ মুছে ফেলে শুধুমাত্র ভাষার দাবিতে জেগে উঠবে ঝাড়খণ্ডের বাঙালি? ... ...
প্রথমদিন হাঁড়ি দুটো কথকের বাড়ির পাশে রক্তকরবী গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হল। তাদের খাবার দেওয়া হল দু-ঘটি জল আর দুমুঠো মাটি। টিভিতে শুনে তারা হিন্দি গান পটাপট গলায় তুলে ফেলল। কয়েকদিন পর তাদের স্থান হল মাটির হাঁড়ি থেকে অ্যালুমিনিয়ামের ডেচকিতে। সুষম খাদ্য তালিকা অনুযায়ী তাদের খাবার দেওয়া হতে থাকল। ভুজু ডিবরা গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় কথককে অনুরোধ করে গেল ‘গাঁইয়া ভূত’ বলে তাদের যেন অনাদর না করেন, সর্বদা যেন সন্তান স্নেহে ‘মানুষ’ করেন। সত্যিকারের কোনো দোষ করলে আচ্ছা করে কানমলা দিয়ে শাস্তি দিতেও যেন না ভুলে যান। ... ...
সারি মস্ত আবার তৈরি হয়েছে – কিন্তু সে কি পারে মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনতে? তিন বছরের গৃহযুদ্ধ বিনষ্ট করেছে পাঁচশো বছরের সহাবস্থান। ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে যায়, কিন্তু আগের মতো এক ঘরে একই ক্লাসে বসে না: সিলেবাস এক, ভাষা এক। কিন্তু ক্রোয়াট ও বসনিয়াক ছেলে মেয়েদের স্কুলে ঢোকার গেট আলাদা – মাঝে কাঁটাতারের বেড়া। ক্লাসরুম আলাদা। এক নতুন বৈষম্য। ... ...
কাজিদা, গান্ধীজী আর গুরুদেবের জোড়াসাঁকোর বাড়ির আলোচনার কথা তুমি তো জানই, গান্ধী তখন তাঁর অসহযোগিতার উপযোগিতা রবীন্দ্রনাথকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। অনেক কম বয়েসে জমিদারি চালাবার কাজ নিয়ে কবি যখন শিলাইদহে যান তখনই তিনি আমাদের দেশের গ্রামীণ দুর্দশার কারণ সম্যক বুঝেছিলেন। সেই কারণটাই তিনি বুঝিয়েছিলেন এল্ম্হার্স্ট সাহেবকে: এক, গ্রামের মানুষ এখন হারিয়েছে তার আত্মবিশ্বাস, সে নিজেই বিশ্বাস করে না যে তার বর্তমান দুর্দশার পরিবর্তন সম্ভব; আর দুই, তাদের বর্তমান অবক্ষয় রুখে দিয়ে প্রগতির পথে তাদের ফিরিয়ে আনতে হলে ফাঁকা রাজনৈতিক শ্লোগানে কাজ হবে না; দুর্দশার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাহায্যে দুর্দশার মূল কারণ নির্ধারণ করে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির প্রয়োগই এই দুর্দশা বদলাতে পারে। ... ...
কিছু ব্যতিক্রম বাদে কোনো ক্ষেত্রেই কোনো বিশেষজ্ঞ বা বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত নয়। ব্যতিক্রম হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ডক্টর বিজয় রাঘবন এবং জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান কস্তুরিরঙ্গন প্রমুখের নাম নেওয়া যেতে পারে। ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি জগতের কিছু বড় নাম সরকারে যোগ দিতে প্রস্তুত। কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রে এই সরকার সম্পূর্ণভাবে বলপ্রয়োগের ওপর নির্ভরশীল। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চের একজন প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি, যে নিম্নস্তরের মানুষ আজ এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রবেশ করেছে, তা আগে কখনও ঘটেনি। ... ...
— ঠাকুমা বলেছিলেন যে, প্রতি সন্ধেবেলাতেই বাড়ির দুর্গামন্ডপে বয়স্ক জ্ঞানীগুণী লোকেরা আসতেন। চা, তামাক, জলখাবার চলত। তারিণী বসে গড়গড়া টানতেন। আর সকলে মিলে নানা বিষয় আলোচনা হত। একদিন সেই সভায় তারিণী বৌমাকে রান্নাঘর থেকে ডেকে পাঠালেন, সবার সঙ্গে বসতে বললেন। বৌমা এত গুরুজনদের সঙ্গে বসবে কী, লজ্জায় ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে রইল। তারিণী বললেন, 'এই লজ্জা সংকোচ ভাঙতে হবে বৌমা, তোমাকে মেয়েদের ইস্কুলের ভার নিতে হবে। নতুন ইস্কুলের দরখাস্ত করা হচ্ছে।' — তখন ঠাকুমা কী করল? — ওরে ঠাকুমা পণ্ডিত বাড়ির মেয়ে, বাড়িতে টোল, চতুষ্পাঠী - এসব জন্ম থেকে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু নিজে কীকরে করবে, এই ভেবে পা কাঁপছিল, বুকের ভেতর ভয় করছিল। — তারপর? ... ...
সবচেয়ে বড় দ্বীপের মাথাটা মাপ নেওয়ার জন্য সুপ্রশস্ত। আমরাও সুযোগের সদব্যবহার করলাম - এখান থেকে লম্বা-চওড়া হ্রদ ও তাকে ঘিরে থাকা সুউচ্চ পর্বতমালাটি ভালভাবে দেখা যাচ্ছিল। এখান থেকে উত্তর-ঈশান কোণে রামাতা পাহাড় - সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। অগ্নি কোণ আর দক্ষিণ অগ্নিকোণের মাঝবরাবর কাতাঙ্গা কেপ, সেন্টাকেয়ী পূর্ব-অগ্নি কোণে; পূর্ব আর পূর্ব-ঈশান কোণের মাঝখানে মাগালা; মুজিমুর দক্ষিণ-পশ্চিম বিন্দুটি দক্ষিণ দিক বরাবর, মুজিমু দ্বীপের উত্তর বিন্দুটি দক্ষিণ-অগ্নি দিকে। ... ...
সময় বদলে গেছে। সন্দীপ দত্তের মতো লিটল ম্যাগাজিনের জন্য জীবনপাত করার লোক চারপাশে আর দেখি কই! টেমার লেনের লাইব্রেরিটির ভবিষ্যৎও অজানা। বিপুল ও দুর্লভ সব পত্রিকার দেখভাল করবেন কে এবার? সন্দীপ দত্ত চলে গেলেন। আমাদের কাছে রেখে গেলেন স্মৃতি ও প্রশ্ন। বেশ-কিছু দায়ও, যা হয়তো পালন করতে পারব না কোনোদিনই। শুধু গর্বের সুযোগ ফিরে-ফিরে আসবে— ‘আমরা সন্দীপ দত্তকে চিনতাম।’ ... ...
ভারত জোড়ো অভিযান বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে প্রতীক্ষিত সেতুবন্ধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি প্রথমবার নয় যেখানে অদলীয় রাজনৈতিক গঠন গড়ে তোলা হচ্ছে। সূচনা পর্বেই আমি উল্লেখ করেছি সেতুবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা: “আন্দোলন থেকে আসে গভীরতা, পার্টি দেয় ব্যাপ্তি। আন্দোলন ইস্যুর জোগান দেয়, পার্টি সেগুলিকে কার্যকরী ফলাফলে পরিণত করে।” আমি বিশেযভাবে আবেদন জানিয়েছিলাম “প্রতিরোধের অদলীয় রাজনীতির” উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে বর্তমান আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে কিন্তু কোনও একটি বিরোধী দলের পক্ষপাতমূলক স্বার্থে আবদ্ধ না হয়ে। ... ...
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া রাহুল গান্ধিকে ‘কোভিড নির্দেশিকা’ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি লেখেন এবং তাঁকে “কোভিড মহামারী থেকে দেশকে বাঁচাতে জাতীয় স্বার্থে ভারত জোড়ো যাত্রা স্থগিত করার” অনুরোধ করেন। বেচারা ভুলে গিয়েছেন, যে চিঠিটি লেখার সময় দেশে কোনও কোভিড নির্দেশিকা কার্যকর ছিল না। এমনকি দু’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরায় একটি বড় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। রাজস্থান বিজেপি ১ ডিসেম্বর থেকে সেরাজ্যে ‘জন আক্রোশ যাত্রা’ করেছে। মন্ত্রীর চিঠির পরেই বিজেপি দিল্লিতে ঘোষণা করেছিল যে তারা জাতির স্বার্থে রাজস্থানে যাত্রা স্থগিত করছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই রাজস্থানের বিজেপি জানিয়েছে, এই যাত্রা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে – কোভিড সংক্রমণ ভারত জোড়া যাত্রায় হয়, তবে বিজেপির যাত্রায় নয়। ... ...
উফফ্ দু-দন্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাবো তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামত ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না। না, মানে আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রীম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়ব না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কী আর তাল রাখতে পারি? যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না, তোরা এসে উপস্থিত হলি বে করব বায়না নিয়ে। বলি বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দী যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় না কি? ... ...
অবশেষে পোস্টার থেকে সরে দাঁড়ালেন আসল রাহুল গান্ধি। যাঁর রয়েছে গভীর আত্মবিশ্বাস। যিনি সত্যিকারের অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সাম্যের সাংবিধানিক আদর্শে বিশ্বাস করেন। একজন চিন্তাবিদ যিনি দেশ এবং বিশ্বের সমস্যাগুলি কেবল তুলে ধরেন না, বরং এক সংবেদনশীল মনের অধিকারী ব্যক্তি যিনি সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেন। একজন মানবিক নেতা যিনি ক্রমাগত সহমর্মিতাকে অনুসরণ করেন, যিনি ঘৃণাকে জয় করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। একজন রাজনীতিবিদ যিনি ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত নন। একজন সোজাসাপ্টা ব্যক্তি যিনি নাটক এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করেছেন। বিপরীতে নরেন্দ্র মোদি যেটা করতে অপারগ। ... ...
'দুষ্কালের আখ্যানমালা'র গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হবে একটা ট্রেনে করে যেতে যেতে জানলা দিয়ে আচমকা কয়েকটি চরিত্রের ঝলক এবং কিছু দৃশ্য দেখছেন, আর এই যাত্রাপথে ট্রেনটা আসলে এগিয়ে যাচ্ছে এক দুষ্কাল থেকে আরেক দুষ্কালের দিকে। চরিত্রগুলোকে পড়তে পড়তে আসলে আমরা যখন এই সামগ্রিক যাত্রাপথের কথা অল্প সময়ের জন্য বিস্মৃত হই, তখনই মাঝে মাঝে দিনের বেলা আচমকা সূর্যগ্রহণের মত এই সমস্ত দুষ্কালের ছায়া নেমে আসে চরিত্র এবং দৃশ্যাবলীগুলির ওপর। ... ...