এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সলস্টিস

    ইন্দ্রাণী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫৯৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সাপ তার ছেড়ে আসা খোলসে আর ঢোকে না। ঢুকতে পারে না।  সেই সব খোলস , শরীরের মাপের সঙ্গে মেলে না, কখনও গভীর ক্ষতচিহ্নও তাতে লেগে থাকে । স্নান সেরে পাঞ্জাবি গলাতে গিয়ে মনে হ'ল। পাটেপাটে ইস্ত্রি করা সাদা পাঞ্জাবিতে সব ক'টা বোতামই লাগানো ছিল;  তিনটে বোতাম খুলে মাথা গলাতেই কাঁধের দিকটা টাইট লাগল- টেনে টুনে বুক অবধি যাও বা গেল , পেটের দিকে নামতে গিয়ে পাঁজরে আটকালো। তখন আয়নায় তাকিয়ে দেখি, পাজামা পরা একটা আধবুড়ো শরীর; ফোলা পেট আর বুকের মাঝখানে আটকে থাকা পাঞ্জাবি ফাঁসতে শুরু করেছে-একটা সাপ যেন তার ছেড়ে যাওয়া খোলসে ঢুকতে যাচ্ছে আর ফেটে ফেটে তারপর গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে শুকনো সাদা চামড়া, আঁশ। খেয়াল করলাম, চশমার তলায় আমার চোখ সরু আর ছুঁচোলো - সাপ দেখলে যেমন হয়।  আসলে,একটা মানুষ কুকুর ভালোবাসে,  তারপর বিড়াল, গরু, ছাগল, খরগোশ, বাঁদর ,বাঘ, সিংহকে ভালোবেসে ফেলে;  কিন্তু, সাপ দেখলে, সে-ই  বদলে যায়- চোখ সরু আর ছুঁচোলো করে লাঠি খোঁজে তখন, কিম্বা আধলা ইঁট। চোখ সরিয়ে  সুটকেশ থেকে টি শার্ট বের করে পরলাম। এই দু বছরে বেশ মোটা হয়েছি। লকডাউনে বাড়িতে বসে কাজ, অনলাইন বাজার,  হাঁটা নেই চলা নেই - সর্বক্ষণ চেয়ারে; মনিটরে চোখ,  আর মুখ চলছে। কুচি আমার মোটা হওয়ার কথা জানত না-  দু'বছর আগের ছেড়ে যাওয়া পাজামা পাঞ্জাবি কেচে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে তুলে রেখে দিয়েছিল। ভিজে চুপ্পুস হয়ে বাড়ি ঢুকতেই তোয়ালে , পাজামা, পাঞ্জাবি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, " আগে স্নান করে নে "।
    -ভর সন্ধ্যায় স্নান করব? মাথা মুছে চেঞ্জ করে নিলেই তো হয়-
    -দিদা বলত , বৃষ্টিতে ভিজলেই স্নান করে নিতে হয়- মনে নেই? সেই যে তুই ফুটবল খেলে ফিরেছিলি, আমি নাচের স্কুল থেকে...
    কুচি চুপ করে গেল। চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। দেখলাম, দেওয়ালের তলার দিকে নোনা ধরেছে, লাল মেঝেতে ফাটা দাগ; সেই সব দাগ জুড়ে জুড়ে ছবি আঁকা যায়- জীবিত বা মৃত আত্মজন, পশু, পাখি, মেঘ। মুখ তুলে বললাম, " মিস্ত্রি লাগাতে হবে রে। দেওয়ালটা দেখেছিস?"
    - বর্ষাটা কাটুক, তারপর।

    বস্তুত মৌসুমী বায়ু পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে কাঁটায় কাঁটায় পয়লা আষাঢ়, ষোলই জুন। আজ বাইশ। কাল খুব ভোরে  দিল্লি থেকে  রওনা হয়েছিলাম - এন এইচ নাইনটিন ধরে টানা চালিয়েছি;  রাতে ঘন্টা পাঁচেক ঘুমিয়ে নিলাম গাড়িতেই; শুয়ে শুয়ে রেডিওর নব ঘোরাচ্ছিলাম, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে  আগামী পাঁচ দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা - এফ এমে বলছিল। আজ  যখন ধানবাদ ক্রস করছি- সকাল হচ্ছে, হালকা কমলা আকাশ রং বদলাতে শুরু করল- হলদে হয়ে পাঁশুটে ,  ঝেঁপে  বৃষ্টি  শুরু হতেই ধূসর , তারপর একদম পিচ ডার্ক। গুমগুম আওয়াজ উঠছিল গোটা আকাশ জুড়ে যেন কংক্রীটের মেঝেতে শয়ে শয়ে ভারি ডাম্বেল গড়িয়ে যাচ্ছে।  অন্ধকার আকাশ থেকে জলে বোনা ঝুলন্ত চাদর নেমে এসেছিল চোখের সামনে; হেডলাইট, ওয়াইপার  অন করে স্পীড কমিয়ে দিলাম -  এই ভাবে চালালে পৌঁছতে  রাত  হয়ে যাবে, শিয়োর। 
    আসানসোল আর দুর্গাপুরের মাঝখানে একটা স্ট্রেচ আচমকা শুকনো পেয়ে স্পীড তুলেছিলাম;  বিশাল বিশাল জলভরা বেলুন নিয়ে আকাশ  এখানেও মোটামুটি রেডি, সাদা জামা পরা শুকনো মানুষজন  দেখলেই ছুঁড়তে শুরু করবে ; কালো অ্যাসফল্টে  সেই সব সুযোগসন্ধানী মেঘেদের ছায়া  -  ভেজা টায়ারের দাগ  ভূতুড়ে দেখাচ্ছিল তাতে,  আলো কমে আসছিল ক্রমশ।

    দু'বছর বাড়ি আসি নি কোভিডের অজুহাতে। বাড়িও  ফাঁকা হয়ে গেছে এই সময়ে- কুচি এখন  একাই থাকে। আরতিদি পুরোনো লোক,  সকাল -বিকেল এসে ধোয়া কাচা করে দিয়ে যায়। রাতেও থাকতে চেয়েছিল- কুচি ওকে না বলে দিয়েছে। এসবই কুচি আমাকে ফোনে বলেছিল।  আসলে, শেষবার যখন বাড়ি আসি, বাবাকে  উইল করতে বলেছিলাম - একটা ঘর, বাথরুম আমার জন্য রেখে বাকিটা কুচির নামে লিখে দিক। বাবা বলেছিল, 'কুচি-ই  তো আমাকে দেখছে,  খুব যত্ন করে,  বুঝলি? এই মেয়েটা না থাকলে আমার যে কী দশা হ'ত! পুরো বাড়ি কুচির নামে লিখে দেব।' আমি গলা তুলেছিলাম, ' আমি এলে থাকব কোথায়?'
    -কুচি কি তোকে থাকতে দেবে না?
    "দেবে। কিন্তু পরে ওর যদি সংসার টংসার হয়, তবে..." , শেষের দিকে আমার গলা বালি-কাগজের মত হয়ে গিয়েছিল, যেন পুরোনো সব রঙ ঘষে ঘষে তুলে ফেলবে এখনই ।
    -কুচির সংসারে তুই আসবিই বা কেন?
    -বাঃ বাড়ি আসব না আমি? কলকাতায় আমার থাকার জায়গা কোথায়?
    আমি কোনদিনই  গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, সেদিনও পারছিলাম না , গলা চড়িয়েছিলাম অকারণ - "একটা ঘর আর বাথরুমই তো। এ'বাড়িতে এটুকুও থাকবে না আমার?" বাবাও কী জানি কেন, খুব জেদ করছিল। তারপর কাশতে লাগল। কুচি  জল নিয়ে ঘরে এসে বলল," দাদা তুই ঘরে যা। আমি মামাকে বোঝাব। এ বাড়ি তোর, আমার কিছু চাই না। " বাবা জল খেয়ে আমার দিকে চোখ সরু করে তাকাল , আধলা ইঁট খুঁজছিল সম্ভবত; তারপর চেঁচিয়ে উঠল, "তুই এলেই সমস্যা। কেন আসিস?  দিদি ঠিকই বলত।"

    দিদি মানে কুচির মা, আমার পিসি। জানি না কী বলত পিসি। তবে তপন বলত স্পষ্ট করে- " তোর কমিউনিকেশন স্কিল জিরো মাইরি। জিরো-ও নয়। নেগেটিভ পুরো। লাইফে চাপ নামবে তোর, দেখিস।  ঐ দ্যাখ, ঐ মেয়েটা, ঐ যে শিল্পী, আচ্ছা মেয়ে বাদ দে, ঐ দ্যাখ হাসি হাসি মুখে মৃন্ময় যাচ্ছে, ফার্স্ট হয়েছে, সবাই হ্যান্ডশেক  করছে, নিদেনপক্ষে, পিঠে চাপড়, তুই যা দেখি একবার , কনগ্র্যাচুলেট করে আয়-"
    -খামোকা কনগ্র্যাচুলেট করতে যাবো কেন?  পড়াশোনা করেছে, খেটেছে, ফার্স্ট হয়েছে।
    -দেখলি তো তোর প্রবলেম টা কী?
    -কী?
    -কমিউনিকেট করতে পারিস না-
    - কী আবার কমিউনিকেট করব!
    -যা বললি, সেটাই-
    -এ’ আবার বলার কী আছে, মৃন্ময় নিজেই জানে-
    -দ্যাখ ভাই, এ দুনিয়ায় থাকতে গেলে এই এক্স্ট্রা কথা বলতেই হয়-
    -বলতেই হয়?
    - হ্যাঁ বলতেই হয়, নইলে কী হয় জানিস?
    - না। কী?
    - ধর, পরের সেমে মৃন্ময়ের  রেজাল্ট খারাপ হল-
    - যত্তো ইমাজিনারি সিচুয়েশন ভাই-
    - শোন না। মনে কর, ওর রেজাল্ট খারাপ হল, হয়তো ফ্যামিলি প্রবলেম বা অসুখ বিসুখ, কেউ ল্যাং মারলো- হতে তো পারে , আর ও পরীক্ষায় ছড়ালো- কী হবে জানিস?
    -তোর হাতে প্রচুর টাইম, আটভাট বকছিস। কী আবার হবে?
    -অনেকে খুশি হবে। ধরে নে, এই আজ এই যারা ওর পিঠ চাপড়াচ্ছে, সব্বাই খুশি হবে। কিন্তু তোর কষ্ট হবে-
    -মাইন্ড রীডার  হ'লি নাকি? টিয়াপাখি নিয়ে বসগে যা-
    -এবার তুই হয়তো দেখলি মৃন্ময় মনমরা হয়ে বসে আছে, তোর খারাপ লাগলো, তুই বলতে গেলি-  কৈ বাত নেহি, পরের সেমে  ফাটিয়ে দিবি শ্লা-
    - হ্যাঁ, তো?
    - মৃন্ময় তোর কথা বিশ্বাস করবে না। যারা মুখে চুক চুক করছে মনে মনে খুশি, ও তাদেরই ইয়ে ভাববে, সমব্যথী আর কী- তোকে  হিংসুটে বলে চিনবে-
    -কেন?
    -ভালো দিনে মানে এই ফার্স্ট হওয়ার দিনে, কোনো কথা বলিস নি অথচ খারাপ দিনে ..
    -কী জটিল বে!
    -এইটাই লাইফ। এখন থেকে শেখ। নইলে পস্তাবি । কাউকে ভালোবাসতে গেলে, সে ভাববে তাকে খুন করতে আসছিস..
    -যাঃ যত্তো ফালতু-
    মৃন্ময় এখন অ্যামেরিকা- রেজাল্ট টসকায় নি কোনোদিন। শালা  তপনও ওখানেই।  আমিও ছিলাম। ডিভোর্সের খবর পেয়ে ফোন করেছিল তপন, বলল, "জানতাম, শালা। তোর দ্বারা হবে না।"
    আমিও জানি এখন। বাবা বলেছিল, আমি এলেই সমস্যা। আসলে আমিই সমস্যা।
    তপন আমাকে ঠিক চিনেছিল। সাবধান করে দিয়েছিল। পাশে থাকে নি। থাকার কথা ছিল না। আমিই বা কার পাশে থেকেছি কবে? কিন্তু কুচি ছিল। বরাবর। বাবার উদ্দাম ঠ্যাঙানি খেয়ে অন্ধকার ঘরে বসে আছি, রাতের খাওয়া বন্ধ; ছোট্টো কুচি গুটগুট করে এসে বলল-"দাদা কাঁদছিস? কেক খাবি? মুখ খোল"। ঐটুকু তো মুঠি। খাবলা দিয়ে টিফিন কেক এনেছে, ঘামে ভিজে মুঠির চাপে সে কেক তখন গুঁড়োগুঁড়ো।  ঘরে লাইট জ্বালিয়েছিল কুচি।
    -অন্ধকারে  বসে থাকে না-
    কেকের গুঁড়োয় আমার মুখ ভর্তি, গেঞ্জিতে , মেঝেয় কেকের গুঁড়ো। একটা দুটো পিঁপড়ে আসতে শুরু করেছে। 
    -খা দাদা, খেয়ে নে।


    দুর্গাপুর পেরোতে , বৃষ্টির তোড়ে বাকি আলোটুকু ধুয়ে যাচ্ছিল। পিচরাস্তায়  ঠিকরে ওঠা বৃষ্টি এ গাড়ি, ও গাড়ির টায়ারে ছোটাছুটি করছিল, জলবিন্দুরা কুয়াশার মত আবরণ তৈরি করছিল , সামনের গাড়ির লাল টেললাইট ফলো করে এগোতে হচ্ছিল বড় সাবধানে। একটা একজিট নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম শুনশান গলিতে।  এফ এম বন্ধ করে দিলে এখন শুধু মেটাল বডি আর জলের ঠোকাঠুকি, ওয়াইপারের সুইশ সোয়াশ, সুইশ সোয়াশ  আর রেনওয়াটার পাইপ থেকে গবগব করে জল বেরোনোর ননস্টপ আওয়াজ।  লাল, হলুদ, নীল, সবুজ একতলা, দোতলা, তিনতলা বাড়ির দেওয়াল বেয়ে জল নামছিল  নিঃশব্দে, গড়ানো ঢালের গলি বেয়ে বড় রাস্তায় পড়ছিল। ওদিকের দেওয়াল ঘেঁষে একটা শেড, তার পাশে আগাগোড়া প্লাস্টিক ঢাকা ঠ্যালাগাড়ি-  ট্রেনে কাটা পড়া ডেডবডি যেন। শিউলিদের গলির কথা মনে হ'ল।

    এক বৈশাখের দুপুরে,  মা যখন মারা যাচ্ছিল, আমি তখন শিউলির সঙ্গে উদ্দাম প্রেম করছি ওদের বাড়িতে। মা বহুবছর শয্যাশায়ী- সেদিন সকাল থেকেই হেঁচকি উঠছিল; পিসি বলছিল, "আজ আর কলেজ যাস না ";  আর আমি অ্যাভয়েড করতে চাইছিলাম মা'র মরে যাওয়ার টাইমটা, লোকজন, কান্না, বল হরি হরিবোল; কলেজ শব্দটা লুফে নিয়ে বলেছিলাম, " আজ পরীক্ষা, যেতেই হবে"। প্রথমে কলেজ, তারপর শিউলির সঙ্গে ওর বাড়ি। ওকে আঁকড়ে ধরে , শরীর ঘষেছি যেন বালির স্তুপে উটপাখি। তখন মোবাইল ছিল না- রক্ষে। কলেজের অফিসে ফোন করেছিল বাড়ি থেকে- পরীক্ষার ভাঁওতাবাজি বুঝে গিয়েছিল। বালি টালি ঝেড়ে , অনেক রাতে  ফিরেছিলাম, মা ততক্ষণে পুড়ে গিয়েছে। সবাই চোখ সরু করে তাকিয়েছিল-  আলজিভের কাছাকাছি আমার বিষদাঁত দেখা যাচ্ছিল সম্ভবত। টানা তিনদিন কথা বলে নি বাবা, পিসি। কুচি এক বাটি  মুড়ি আর  শশা নিয়ে এসেছিল  আমার ঘরে, সকালবেলা, "তোর বড্ড নরম মন, দাদা, তুই পালিয়ে  গিয়েছিলি;  ওরা তোকে ভুল বুঝেছে। খেয়ে নে । খা দাদা। মামার কাছে গিয়ে দাঁড়া। অনেক কাজ সামনে।"
    শিউলির সঙ্গে  আমার সম্পর্ক টেঁকে নি- কাটা পড়ে ডেডবডি হয়ে গিয়েছিল ;  মার শ্রাদ্ধের পরে কলেজ গিয়ে দেখলাম শিউলির  চোখ সরু আর ছুঁচোলো- আসলে,  মা'র মৃত্যুর দিনক্ষণ ওর কানে এসেছিল। 
    মাধুরীর সঙ্গে আমার বিয়ের দিন, কুচি তত্ত্বের মাছাভাজা খাইয়ে গিয়েছিল- "না খেয়ে অতক্ষণ থাকতেই পারবি না। খেয়ে নে দাদা। " তারপর একটু থেমে বলেছিল, " শিউলিদি তোকে বুঝতে পারে নি, বৌদি ঠিক পারবে। খুব সুখী হবি তুই দাদা। "

    বৃষ্টি সামান্য ধরেছে। গলির পিছনের বাড়ি থেকে একটা অল্টো বেরোবে- হর্ন দিচ্ছিল। ঠেলাগাড়ির পাশ কাটিয়ে বড় রাস্তায় পড়ে হাইওয়ের দিকে টার্ন নিলাম। ট্রাফিকে আটকে আছি; সিগনাল রং পাল্টাচ্ছিল- লাল থেকে হলুদ হয়ে সবুজ হতেই গাড়ির লাইন এগোল নতমুখী পিঁপড়ের সারির মতো। সবুজ আবার যখন  হলুদ হয়ে লাল হয়েছে,  সামনের দুটো গাড়িতে  ছোটো করে ধাক্কা লাগল। গাড়ির দরজা খুলে নেমে এল দু'জন - হাতা গুটিয়ে পরস্পরের দিকে এগোলো; গন্ডগোল পেকে উঠছিল ঝড়জলের রাস্তায়। সাইড মিররে দেখছিলাম, পিছনের গাড়ি লেন চেঞ্জ করছে। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম-  রিভার্সে গিয়ে, লেন চেঞ্জ করতে হবে;  রিভার্স করতে এখনও ভয় পাই।
    স্টেটসে তখন মাধুরী, আমি, বিল্টু। বিল্টুর তিন সবে। অফিস মায়া করে দুপুর দুপুর বাড়ি এসেছি। রিভার্সে গাড়ি ঢোকাচ্ছিলাম । মাধুরীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার ছিল- অস্থির ছিলাম, উত্তেজিতও। মিরর দেখি নি।  বিল্টুর চিৎকার, নেবারের হাঁ হাঁ করে ছুটে আসায় ঘাবড়ে গিয়েছি। বিল চেঁচিয়েছিল, 'হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান ম্যান? কান্ট ইউ সী?" হৃদপিণ্ড লাফ দিয়ে গলায় ঠেকেছিল- বিল্টুর পায়ের ওপর গাড়ি চালিয়ে  দিয়েছি;  ভর দুপুরে বাড়ির বাইরে কী করছিল ছেলেটা!  'স্টপ স্টপ ডোন্ট মুভ ' বলতে বলতে বিল ছুটে আসে, আর ওর বৌ জেনিফার; উল্টোদিকের  বাড়ির টোনি।  " ইউ আর লাকি ম্যান" বিল্টুকে কোলে তুলে নেয় টোনি, কপালে বুকে যোগ চিহ্ন এঁকে বলেছিল - " প্রভু যীশুর কৃপায় সফ্ট টিসু ছুঁয়ে গেছে। আর একটু হলেই হয়েছিল। এনিওয়ে,  লেট্স টেক হিম টু ইমার্জেন্সি।  এক্স রে তো করতেই হবে। পেনকিলার লাগবে।  আর ইউ ব্লাইন্ড, হে?"  বিল্টু তারস্বরে কেঁদে যাচ্ছিল। ঘামে ভিজে গিয়েছিল  শার্ট, পেট মুচড়ে উঠেছিল;  বাথরুমে গেলে হাসপাতালে যেতে দেরি হয়ে যাবে- আরো ঘামছিলাম ফলত।  হাত কাঁপছিল। বিল বলেছিল, "আমি চালাচ্ছি, তুমি বিল্টুকে নিয়ে পিছনে বোসো। "
    এই সময় দরজা খুলে এসে দাঁড়িয়েছিল মাধুরী; ও চোখ কচলালো, এদিক ওদিক তাকালো, ওর চোখ আরো বড় হল যেন সকেট থেকে এক্ষুণি ছিটকে বেরিয়ে আসবে। বিল বলল, "মাধুরীকে নিয়ে এসো, ও যাবে না সঙ্গে?" বিল্টুকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমেছি,  মাধুরীর দিকে এগোচ্ছি, ;  আমার সর্বাঙ্গ ঘামে ভেজা, বিল্টু অক্লান্ত চেঁচাচ্ছে, ওর পায়ের পাতার রং লালচে থেকে বেগুণী হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ, তখন , ভরা বিকেলের আলোয় স্পষ্ট দেখেছিলাম, মাধুরীর চোখ বদলে যাচ্ছে, বিস্ফার কমে গিয়ে সরু হ'ল , তারপর ছুঁচোলো।


    বাড়ি ঢুকতে রাত। সরু গলিতে গাড়ি ঢোকে না, বড় রাস্তা থেকে এ'টুকু দৌড়ে আসতে আসতে ভিজে একসা;  কুচি বলল, " একটা ফোন করতি, ছাতা নিয়ে যেতাম-" , তারপর স্নান করে নিতে বলেছিল।  ছেঁড়া পাঞ্জাবি বিনে ফেলে টি-শার্ট পরতে পরতেই , কুচি ডাকল, " খেয়ে নিবি আয়। সেই কখন বেরিয়েছিস। খিদে পায় নি?"
    নিচের বড় ঘরে খেতে বসেছিলাম আমি আর কুচি।  টিভির খবরে বৃষ্টির কথা বলছিল। স্ক্রীন জুড়ে,  জলে ডোবা পথঘাট, ভেঙে পড়া গাছ, পুরোনো বাড়ির বারান্দা ধসে পড়েছে;  খবর চলতে চলতেই, বাইরে, দু বার বাজ পড়ল বিকট আওয়াজ করে- কুচিকে কেঁপে উঠতে দেখলাম।  ডানদিকের জানলা নিয়ে জোলো হাওয়া আর বৃষ্টির আওয়াজ ঢুকছিল। পুরোনো গ্রিল থেকে মরচের গন্ধ  মিশে যাচ্ছিল তাতে।কুচি আঁচল টানল গায়ে, “জানলাটা বন্ধ করে দিয়ে আসি, দাঁড়া। “
    দুর্যোগের জন্য গোটা পাড়া নিঝ্ঝুম  - একটা কুকুরও ডাকছিল না কোথাও। আশেপাশের বাড়ির টিভির শব্দ , ঝগড়ার আওয়াজ, রাস্তায়  রিক্সার হর্ন  -কিচ্ছু নেই। যেন , বাইরের পৃথিবী ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে  গেছে। জানলা বন্ধ করে দিতে,  বৃষ্টির আওয়াজও শোনা যাচ্ছিল না। দেওয়ালে দেওয়ালে এ ‘বাড়ির মৃত মানুষদের ছবি, শুকনো মালা ঝুলছিল তাতে-  জলবেষ্টিত দ্বীপের মত লাগছিল খাওয়ার ঘরকে , যেন এক  জাহাজডুবির পর,  আমি আর কুচি এই দ্বীপে এসে উঠেছি - পৃথিবীর শেষ  দুইজন জীবিত প্রাণী। টুকটাক কথা, তারপর আবার  মাথা নামিয়ে নিঃশব্দে খাচ্ছি আমরা-  পাঁউরুটির ফাঁক ফোকরের মতো, এই সব নীরবতার বড় বড় ছ্যাঁদা একটা শেপ নিয়ে নিচ্ছিল ক্রমশ,  তার ছায়া পড়ছিল নোনা ধরা দেওয়ালে।
    আমি উশখুশ করছিলাম, " সত্যি তোর ভয় করে না কুচি? আরতিদিকে রাতে থাকতে বললেই পারতি।"
    -দরকার নেই। রাতটুকুই তো। সকাল হলেই তো চলে আসে।
    -আজ তো আসে নি বললি-
    -সে তো বৃষ্টির জন্য, এই রকম বৃষ্টি চললে কালও হয়তো আসবে না
    -এখন চারদিন এরকমই চলবে-
    "  তুই তো আছিস ক'দিন, আছিস তো?" কুর্চি হাসল," তাহলে আর ভয় কী?"
    মাথা নামিয়ে ফলফুল আঁকা টেবিল ক্লথ, চিনেমাটির  থালা, বাটি দেখতে লাগলাম। কুচি উঠে গিয়ে জলের জাগ ভরে আনল। গুচ্ছের রান্না করেছে- পটল ভাজা, মোচার ঘন্ট, মাছ, চিকেন, চাটনি।
    -এই বাদলায় এত সব রান্না করতে গেলি কেন? বাজার করলি কী করে?
    -ওমা, আজ বাজার করেছি না কি? আরতিদি করে দিয়ে গেছে কাল । আজ সকালে চঞ্চল চিকেনটা দিয়ে গেল শুধু-
    -কে চঞ্চল?
    -ঐ তো গলির মুখের বাড়ি,  তোর দু ব্যাচ পরের ছেলেটা। ভালো ক্রিকেট খেলতো, মনে নেই?
    "সে কেন চিকেন এনে দিতে গেল তোকে?"  - আমার গলায় খসখসে ভাব এসে গেল । অটোম্যাটিক।
    "ওকে বলেছিলাম এনে দিতে" কুচি রুটি ছিঁড়তে  ছিঁড়তে চোখ তুলেছিল- ওর  রোগা ফরসা মুখ; কালচে বাদামী মণিতে টিভির নীল আলো।
    "ওকে মানে চঞ্চলকে? তোর বন্ধু না কি ও ও করে বলছিস? বাইরের লোককে বলতেই বা যাবি কেন, আরতিদি থাকতে?  আর,  দোকানে ফোন করলেও তো দিয়ে যেত",  আমার গলা চড়ে গিয়েছিল সামান্য।
    কুচি উঠে গিয়ে জানলা খুলে দিয়ে এল -" গুমোট লাগছে।"
    বৃষ্টির আওয়াজ আবার ঘরে ঢুকতেই আমি গলা নামিয়ে ফেললাম,  যেন বৃষ্টি আমার  দিকে চোখ সরু করে তাকাবে এখনই।  কুচি গায়ে আঁচল টেনে থালায় আঁকিবুঁকি কাটল কিছুক্ষণ, তারপর মুরগীর ঝোলে রুটির টুকরো  ডোবালো। আমি চাটনির ছোটো বাটিতে চুমুক দিচ্ছিলাম । খাওয়ার বাকি সময়টুকু আমরা বন্যা পরিস্থিতি আলোচনা করলাম গলা নামিয়ে।

    মাঝরাতে ঘুম ভেঙে বাথরুমে গিয়েছিলাম। বৃষ্টি পড়ছিল সেই একভাবে, অঝোরে। দমকা হাওয়ায় নারকেল গাছের মাথা নড়ছিল-  জানলা দিয়ে দেখলাম । জল খেয়ে আবার শুয়েছি, দরজায় টোকা । লাফ দিয়ে উঠে দরজা খুলতেই দেখি কুচির উস্কোখুস্কো চুল , গালে একটা সাদাটে দাগ-নুনের মনে হ'ল।
    -কী রে কুচি, কী হয়েছে?
    -কিছু না। তুই আলো জ্বালালি দেখলাম।  ঘুম আসছে না? কিছু লাগবে?
    -ক্কী? কী আবার লাগবে?
    -এত কম খেলি। খিদে পাচ্ছে?
    "পাগল না কী! এই বয়সে মাঝরাত্তিরে কারোর খিদে পায়?" আমি হাসার চেষ্টা করলাম।
    কুচি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল,  বুড়ো আঙুল ঘষছিল মাটিতে;  গলায় আঁচল জড়ানো- বরাবর ঠান্ডা লাগার ধাত। রোগা মুখ, পাতলা ঠোঁট, নাক, ভীতু চোখ। কেমন মরিয়ার মত গলা তুলল কুচি , " তুই কেন এসেছিস এ’বাড়িতে , এতদিন পরে? বললি না তো!"
    এই সময়ে বিদ্যুৎ চমকেছিল, বাজ পড়েছিল জোরে;  নীল আলোয় আমার চোখ কুঁচকে গেল।
    কুচির কথা জানি না। আমি নিজেকে খোলসে ঢুকিয়ে নিচ্ছিলাম- চামড়া ছিঁড়ে যাচ্ছিল। লাল মেঝেয় ছেঁড়া খোলসের টুকরো মাড়িয়ে সদর খুলে বেরিয়ে এলাম গাড়ির চাবি নিয়ে। গলির মুখে দাঁড়িয়ে গাড়িটা ভিজছিল - যেন তার সওয়ার পদাতিক হয়ে যুদ্ধে গিয়েছে, ফিরবে কী না ঠিক নেই; এঞ্জিন চালু করতেই কেশর ঝাঁকিয়ে গা ঝাড়া দিল।  কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলাম। রাস্তার জমা জলে কিছু গাড়ি থেমে ছিল। জলের ফোয়ারা তুলে বেরিয়ে আসছিল কেউ । দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মুখে নিজস্ব জলপ্রপাত তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমাদের সবার। কেউ নির্জনতা খুঁজেছিল সেখানে , অন্যরা তাকে বিপজ্জনক ভেবেছিল।

    [প্রথম প্রকাশঃ যতি, ২০২২]

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৫৯৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৭516299
  • ইন্দ্রাণী
     আপনার কি একটা শটও ফস্কায় না? কোন মিসহিট নেই। সবগুলোই বাউন্ডারি পেরিয়ে যায়, কী করে?
    এমন ধারাবাহিক ভাবে স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখা! 
    আর নীলচে বিদ্যুৎ , আর বাজের শব্দ!
  • ইন্দ্রাণী | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৮516310
  • রঞ্জনদা,
    আবার আপনি আজ্ঞে কেন? মেলার মাঠে পরস্পর অপরিচিত তকমাটুকুও তো ঘুচে গেছে।
    বাউণ্ডারি পেরোয় কী না জানি না। প্রতিটি বল দেখে শুনে মুণ্ডু বাঁচিয়ে খেলি-হেলমেট তো নাই। যাই হোক, থ্যাঙ্কু। তবে এই গল্পটা সেভাবে এডিট করা হয় নি, কাল পোস্ট করার সময় শেষের কিছু লাইন বদলে দিয়েছিলাম। আরো কিছু কাজ করার আছে। পরে একসময় করব।

    কুমুদিকে সেই যে কথা দিয়েছিলাম, যেখানে যা লিখি, গুরুতে পোস্ট করব। গতবছর, তার আগের বছরের কিছু লেখা জমে গিয়েছিল সেই সবই একে একে তুলে দিয়েছি গত দু তিন মাসে।
    হাত খালি এবার।

    নমস্কার জানবেন।
  • Nirmalya Nag | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৪৩516328
  • ঝড় জলের রাত, ঝড় জলের জীবন মিলে মিশে এক হয়ে গেল। এবং কী অসামান্য ডিটেইলস। 
     
  • | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:২২516608
  • ঝড়ঝঞ্ঝা,  প্রকৃতিরও মানুষেরও  আলগা জোড়গুলোকে খুলে দেয় আরো। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:২৪516610
  • একদম ক্ষুরের উপর দিয়ে গল্পটাকে হাঁটিয়ে নিয়ে গেলে ছোটাইদি। দুরন্ত।
  • ইন্দ্রাণী | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:৩১516617
  • নির্মাল্য, দ, অমিতাভ,
    অনেক ধন্যবাদ। হরিদাস পালে পোস্ট করার সময় প্রথম প্রকাশিত ভারসনটির সমাপ্তি খানিক এডিট করেছি। হয়তো পরেও আর একটু এডিট করব।
    আপনাদের লেখা, তোলা ছবি থেকে অনেক শিখি, অনুপ্রেরণা পাই।
    সত্য কইলাম।
  • নিলয় | 2401:4900:1cd1:628e:6192:1eb1:756b:a99b | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:৩৩516627
  • খুব ভালো লাগলো। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৯516635
  • সামার/জুন সলস্টিস?
  • :|: | 174.251.160.146 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৪516669
  • গল্পকারের মুন্সিয়ানা বিচারের ক্ষমতা নাই। বহুস্তরীয় কাহিনী। 
    সংক্রান্তির ইংরিজি নামকরণ কোনও বিশেষ ব্যঞ্জনা আনছে কিনা সেটা ঠিক ধরতে পারছিনা।
    আগের গল্পেও মনে হয়েছিলো না-দেখা-প্রেমিকের কাহিনীর নামকরণ ইংরিজিতে দেখে।  
  • ইন্দ্রাণী | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২২516673
  • ধন্যবাদ নিলয়।

    &/ আর :I: কি স্বগতোক্তি করছেন না প্রশ্ন -বুঝতে পারছি না ঠিক।
    দেখুন যে ভাষায় মূল কাহিনী বা কবিতা লেখা, তার নামকরণ অন্য ভাষায়- এর অনেক উদাহরণ আছে (কীটসের কবিতার ফরাসী নাম দিয়ে শুরু করা যায় )- আপনারা আমার থেকে ঢের  ভালো জানেন সে সব। নামকরণ নিয়েও নানা কবি, লেখকের নানা বক্তব্য রয়েছে- সে সব তত্ত্বকথায় যাচ্ছিনা। তবে একজনকে সব ব্যাপারে টেনে আনার স্বভাব যখন, একটু বলি...
    যে মানুষটির দুটি বিখ্যাত গল্পের নাম ডিটেকটিভ ( গোয়েন্দা নয়) এবং ল্যাবরেটরি (গবেষণাগার নয়) , তিনি যখন তাঁর উপন্যাসের 'তিন পুরুষ' নাম বদলে 'যোগাযোগ' করেছিলেন, 'বিচিত্রা' পত্রিকায় কৈফিয়ৎ হিসেবে যা লিখেছিলেন, তাতে নামকরণকে লাউয়ের বোঁটার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, বলেছিলেন- ওটাতে ধরার সুবিধে। আরো বলেছিলেন, "ব্যক্তিগত নাম ডাকবার জন্যে, বিষয়গত নাম স্বভাবনির্দেশের জন্যে। মানুষকেও যখন ব্যক্তি বলে দেখি নে, বিষয় বলে দেখি, তখন তার গুণ বা অবস্থা মিলিয়ে তার উপাধি দিই—কাউকে বলি বড়োবউ, কাউকে বলি মাস্টারমশায়।"
    তো যাই হোক, এবারে নিজের কথা বলতে গিয়ে আর একটা গল্প মনে পড়ছে- কিছুদিন আগেই একজনের কাছে শুনলাম- স্কুলে প্রশ্ন এসেছে -জাহাজ জলে ভাসে কেন? তো ছাত্র লিখল- নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
    আমার উত্তর বা কৈফিয়ৎ কতকটা ঐ প্রকার- নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। তো সেই কারণটা পাঠককে বুঝিয়ে  বলব না , তাহলে আমার চিন্তা, আমার অভিপ্রায় অনুযায়ী পাঠককে চালিত করা হবে। এই ব্যাপারটা একেবারেই কাম্য নয়। 
    মূল কথা হল- কতটা কমিউনিকেট করতে পারলাম আপনাদের সঙ্গে। গল্প পড়ে আপনারা শিরোনাম নিয়ে ভেবেছেন- এ লেখকের প্রাপ্তি।

    নমস্কার জানবেন।
  • | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৭516674
  • এরম।.. 
    সলস্টিস অর্থাৎ সূর্য হয় সর্বোচ্চ অথবা সর্বনিম্ন বিন্দুতে অবস্থান করছে, এরপরেই কোন একদিকে হেলতে থাকবে। তো সেদিক থেকে গল্পটার নামকরণ আমার কাছে দারুণ লেগেছে। সম্পর্কের শেষ জোড়টুকু আলগা হয়ে খসে পড়া সাপের খোলসত্যাগের যন্ত্রণা এবং একইসাথে  নির্ভার হয়ে যাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে আমার কাছে এই নাম অতি চমৎকার। 
    (ইহা একটি স্বগতোক্তি। কারোর একমত হবার দরকার নেই)  
  • | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:০৮516675
  • erm...
    সলস্টিস অর্থাৎ সূর্য হয় সর্বোচ্চ অথবা সর্বনিম্ন বিন্দুতে অবস্থান করছে, এরপরেই কোন একদিকে হেলতে থাকবে। তো সেদিক থেকে গল্পটার নামকরণ আমার কাছে দারুণ লেগেছে। সম্পর্কের শেষ জোড়টুকু আলগা হয়ে খসে পড়া সাপের খোলসত্যাগের যন্ত্রণা এবং একইসাথে  নির্ভার হয়ে যাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে আমার কাছে এই নাম অতি চমৎকার। 
    (ইহা একটি স্বগতোক্তি। কারোর একমত হবার দরকার নেই)  
  • &/ | 107.77.235.197 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:১৫516680
  • আমি কিন্তু স্বগতোক্তি করিনি, জানতে চাইছিলাম এটা কোন সলস্টিস ,সামার সলস্টিস কিনা। অন্য কোনো কারণ নেই। গল্পটি পড়েছি ,তবে মতামত দেবার যোগ্যতা আমার নেই। 
  • kk | 2601:14a:500:e780:d4:4b64:7995:1dd9 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:১০516683
  • আগেও বোধহয় বলেছিলাম একবার, ইন্দ্রাণীদি'র গল্পগুলো পড়লে মনের মধ্যে সব লুকোনোর জায়গা গুলো উবে যায়। অনুভূতি, অন্ধকার, আনাচকানাচ এসব কিছুর সামনে সোজা দাঁড় করিয়ে দেয়। সেটা অস্বস্তিকর, সেটা ভয়ের। কিন্তু সেটা খুব সত্যি। এই যে মানুষগুলোকে সবাই সাপ মনে করে (সে নিজেও) তারা সত্যি করে কেমন ফীল করে এটা এত স্পষ্ট করে আঁকা কম লোকেই পারে।
    নামকরণ বা লেখার মধ্যে অন্য ভাষার ব্যবহার আমার কিছু খারাপ লাগেনা। অনেক অনুভূতিই আছে যেগুলো একটা বিশেষ শব্দ দিয়ে যত ভালো বোঝানো যায়, তারই অন্য প্রতিশব্দ দিয়ে যায়না। এটা আমার মনে হয়। সহজে, স্পনটেনিয়াসলি যে শব্দ মনে আসে তা সে যে ভাষারই হোক না কেন, আমার মনে হয় তাই লেখা হোক। অনুভূতি, মনের ভাব, আনন্দ, যন্ত্রনা এগুলোর তো কোনো সীমানা নেই। ভাষার গণ্ডী বেঁধে দিয়ে লাভ কী?
  • ইন্দ্রাণী | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০২:৪৮516688
  • প্রিয় &/,
    সবসময় এত তাড়াহুড়োয় থাকি, তোমার প্রশ্ন বুঝতে পারি নি। দুঃখিত। কিছু মনে কোরো না।
    এখানে বাহ্যিক মিল যদি দেখো, গল্পের সময়টা উত্তর গোলার্দ্ধের সামার সলস্টিস। কিন্তু শিরোনামে ভাব টাই মাথায় রেখেছি- সেক্ষেত্রে সামার কী উইন্টার এর আলাদা কোনো মূল্য নেই।
    আবারও দুঃখ প্রকাশ করছি যদি তোমাকে কোনোভাবে আঘাত দিয়ে থাকি।

    প্রিয় দ,
    স্বগতোক্তি ভালো লেগেছে।

    প্রিয় কেকে,
    থ্যাঙ্কু।
    শব্দ ব্যবহারে স্বতঃস্ফূর্ততা ছাড়াও আর একটা ব্যাপার লেখার সময় মাথায় / মনে থাকে- সেটা অনুষঙ্গ। একটা শব্দের সঙ্গে যা কিছু জড়িয়ে- দৃশ্য, গান, ছবি, স্মৃতি, বা একটা শব্দ পড়লেই মনের মধ্যে সেকন্ডের জন্য যে কথাটা ভেসে ওঠে- এই সব ভাবি। একটা গল্প লিখেছিলাম- তাতে একটি ছবি দেখে চরিত্রটির মনে লাইটহাউজ আর বাতিঘর দুটো শব্দ মনে আসে। চরিত্রটির স্বভাব যেমন তাতে লাইটহাউজ ভাবলে চকচকে ইংরিজি বই তে এল এ লাইটহাউজ , সঙ্গে সার্চলাইটের আলো মনে পড়ায় , সে ইংরিজি শব্দটি খারিজ করে বাতিঘর বেছে নিয়েছিল।
    গল্পের শিরোনামে প্রচলিত বাংলা শব্দ বা তার তার ইংরিজি ব্যবহার করব বিবেচনা করার সময় শব্দের অনুষঙ্গ মাথায় রাখি।
    এই সব আর কী।

    প্রিয় :I:,
    আর একটা কথা লিখতে গিয়ে ভুলে গেলাম কাল। ইংরিজি শব্দ ব্যবহারে বিশেষ ব্যঞ্জনা আসে কী না, সেটা লেখক আর বলবেন না। লেখকের কাছে সংক্রান্তি আর সলস্টিসের অনুষঙ্গ এক নয়। এই টুকুই। এই গল্প আর আমার নয়। আপনার তথা পাঠকের বিচারই শেষ কথা।
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:২০516690
  • না না, আঘাতের প্রশ্ন তো ওঠে না, মতামতও কোনো দিই নি লেখাসংক্রান্ত। সে যোগ্যতা আমার নেই। শুধু সলস্টিস নামটা দেখে মনে হল দুই গোলার্ধে তো পরিস্থিতি আলাদা দুই সলস্টিসে, তাই একসময় অ্যাস্ট্রোনমাররা মিলে ঠিক করেছিলেন সামার/উইন্টার না বলে জুন/ডিসেম্বর সলস্টিস বলা হবে। তাতে সঙ্গতি থাকবে দুই গোলার্ধেই। তাই ভাবছিলাম কোনটা এটা। আর মনে পড়ছিল এর ব্যুৎপত্তি, সল (সূর্য) আর স্টিট বা এইরকম কিছু (থেমে যাওয়া)। ওই উত্তর বা দক্ষিণ সীমায় সূর্য থেমে যায় বলে হত, তাই মনে হয় অমন নাম দিয়েছিল। এইসব আরকি। নামের অনুষঙ্গে এতসব ভেসে এল, তারপরে লেখার মধ্যে ঢুকে এক জটিল অরণ্যে হারিয়ে গেলাম। ঃ-)
  • :|: | 174.251.160.146 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৩৪516691
  • উত্তর দেবার জন্য ধন্যবাদ। আমারটা প্রশ্নর থেকেও বেশী স্বগতোক্তি ছিলো। আগে বলেইছি তো আপনার লেখার মুন্সিয়ানা বিচারের ক্ষমতাই নেই। অতটা তলিয়ে বুঝেছি কিনা সেটাই বুঝিনা। সেই জন্যই স্বগতোক্তি। 
    সংক্রান্তিতে একটা শেষের ব্যাপার আছে এবং একটা নতুন শুরুর আভাসও। সেটা শিরে সংক্রান্তির মতো সংকটময় অবস্থা হলেও। তো নায়কের চলে যাওয়ার সময়টায় শেষ এবং আরেক যাত্রার শুরুটা আনাড়ি পাঠকের কাছে ধরা দেওয়ায় মনে হয়েছিলো বাংলা অর্থে নামকরণ মন্দ হতো না।  ইংরিজি না বাংলা -- তা নিয়ে অভিযোগ করিনি একেবারেই। অন্য পাঠকরা এবং লেখক স্বয়ং -- এই নামটা গল্পের মুডের সঙ্গে বেশী মেলাতে পেরেছেন -- সেটাই শেষ কথা। নমস্কার জানবেন।
  • মোনালিসা ঘোষ | 2402:3a80:1989:7220:14af:3e8f:ebdf:8673 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০৬516717
  • আবার একটা কি লিখে ফেললি ! এমন একজন মানুষ যে নিজের ফ্যাচাংগুলোকে সামলাতে পারেনা । সমাজ কেবল তাকে তাদের মত করে দেখতে চায় । সে তার বুদ্ধিতে চলে । বিচ্ছিরি ব্যাপার । আর ক্রমশঃ একা হয়ে পড়ে । একা হওয়াটা এদের নিয়তি । 
    যারা কুকুর ভালোবাসে , বাসতে বাসতে গরু , ছাগল , বাঘ সবই ভালোবেসে , তারা যে সাপকে ভালোবাসবে না , এটা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মানতে পারলাম না । 
     
    শিবের গলায় বাসুকি , শেষনাগে বিষ্ণু , মানুষের কুলকুল্ডলিনীতে ঘাপটি মেরে থাকে সাড়ে তিন প্যাঁচের অনন্তনাগ । সাপ ওয়েভ , সাপ মায়া , সাপ ছেড়ে তাই যাব কোথায় ! 
  • Subhadeep Ghosh | ১৪ মার্চ ২০২৩ ২০:১১517392
  • অসামান্য। চেতনা প্রবাহ মুগ্ধ করল।
  • ইন্দ্রাণী | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৫517422
  • শুভদীপ,
    ধন্যবাদ জানবেন।

    মোনালিসা,
    কথা তো হয়েই গেছে এই নিয়ে। তাই এখানে আর লিখছি না।

    :|:,
    শেষ কথা বলে কিছু নেই তো।
    একাকী গায়কের নহে তো গান....আর এই সংযোগের জন্যই নিরন্তর জাদুশব্দ খুঁজে চলা-
  • বিদিশা দাশ | 2402:e280:3d13:3dd:611d:5ea3:9f40:ffaf | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৩527388
  • কত্ত কত্ত ছেঁড়া খোলস পড়ে রয়েছে চারদিকে। দেওয়াল তৈরি হয়ে গেছে। ক্ষুধিত পাষাণ ঝুট হ্যায় ।
  • Subhadeep Ghosh | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৯527632
  • ইন্দ্রাণী, আপনার gmail id-টা সম্ভব হলে একটু share করবেন।
    ধন্যবাদ,
    শুভদীপ ঘোষ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন