অফিস যাওয়ার পথে যতগুলো সিগনাল পড়ে, বিজয় সরণীর সিগনালটাই তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, প্রায় পনের মিনিট ঠায় বসে থাকতে হয়। বুদ্ধিমান ড্রাইভাররা ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে সিটের উপর পা তুলে বসে, যতটুকু বিশ্রাম শুষে নেয়া যায়! যাত্রীরা অবশ্য শাপ-শাপান্ত শুরু করে দেয় প্রশাসনকে লক্ষ্য করে, এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলি টানেল, পদ্মা সেতু, মাস র্যাপিড ট্রানজিট – সব কিছুর মৃত্যু ঘটে এই পনের মিনিটে।
সিগনাল বাতির নির্বিকার আঙ্গুলের সামনে গাড়িগুলো যাত্রী নিয়ে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকলেও জায়গাটা নিশ্চল পড়ে থাকে না। এই মুহূর্তের অপেক্ষায় থাকা একদল মানুষের শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা। গাড়িজানালায় অচিরেই দৃষ্টিগোচর হয় প্রায় আহাজারি কতিপয় মানুষের – ম্যাট, টাওয়েল, ঝুরি, ফুল ইত্যাদি বিক্রির জন্যে। আরো কিছু লোক থাকে, যারা মুক্ত হস্তে সমানে করাঘাত করে যায় উইন্ডস্ক্রীনে, যে মুহূর্তটুকু তারা দাঁড়িয়ে থাকে, তীব্র পর্যবেক্ষণে রাখে গাড়ির মধ্যে উপবিষ্ট মানুষগুলোর অবয়ব, কাঁচের দেয়ালে অতি সূক্ষ্ম নড়াচড়া তাদের আশাবাদী বা আশাহত করে। অবশেষে পৃথিবীর এই ক্ষুদ্র স্থানটি ট্রাফিক সিগনালের জটে পড়েও অচল-মন্থর হওয়ার সুযোগ পায় না, পনের মিনিটের প্রতিটি মুহুর্তকণাকে সার্থক করে তুলতে অদম্য ছুটতে থাকে গাড়ির জানালায় অনেকগুলো হাত।
এই স্থান-কালের ক্ষুদ্র মঞ্চে মোরসালিনের অবস্থান গাড়ির মধ্যে, তবু সেও মরিয়া এ থেকে শক্তি শুষে নিতে। বলতে কি, মোরসালিন অফিস যাত্রায় সব থেকে মুখিয়ে থাকে এই ক্ষণটুকুর জন্য। স্কুল-কলেজে মোরসালিনকে দেখা যেত পরীক্ষক খাতা দেয়ার আগ পর্যন্ত বই হাত থেকে নামাত না, পরীক্ষার হলে বসে ঘন্টা বাজার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে যে পনের মিনিট পড়তে পেত, তা-ই নাকি তাকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিত। এইখানে সিগনালের অপেক্ষায় থেকেও সে ধ্যানস্থ হয়ে পড়ে, বই বা পত্রিকার ডুব সাতার যখন বিশ্বচরাচর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়, তখনই তীব্র নিনাদে নিদ টুটে যায়, বিস্ফোরিত চোখের সামনে পড়ে থাকে দুটি কালি-ঝুলি-ধুলি জিরজিরে হাত।
কখনো কখনো পকেটে হাত বাড়ায়। আজ এক চিলতে দেখে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ফ্লাইওভারে অবস্থানকালে সে অনেক নীচের দিগন্ত ছাড়িয়ে যাওয়া সরু রেলপথখানি প্রতিদিন একবার হলেও দেখে নেয়, লাইনের বস্তিগুলোতে চলা জীবনপ্রবাহ তাকে বিষাদগ্রস্ত করে, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে চিন্তার খোরাক দান করে। সেখান থেকে ফ্লাইওভারে উঠে আসা হাতই হয়ত তার চোখের সামনে প্রসারিত হয়। কিন্তু একই হাত বার বার এলে বিস্বাদ লাগে ব্যাপারটা। পাতা হাতের বাজারও একই অর্থনীতি চলে মনে হয়, পাতা হাতেও নতুনত্ব চাই, ভিন্ন গল্পের স্বাদ চাই হাতের বিবৃতিতে।
একটা জিনিস খুব কৌতূহলী করে, একটি ছড়ানো হাতকে মুঠো পুরতে দেখলে দূরের গাড়িগুলো ছেড়ে দিয়ে অন্য হাতগুলোও ছুটে যায় সেই হাতমুঠোর কাছে, অন্য গাড়িগুলো হাফ ছেড়ে বাঁচে আকর্ষণ হারিয়ে, কেউ কেউ অবশ্য ইর্ষান্বিত চোখে দেখে নেয় বাহু প্রসারণকারী গাড়িদেবকে। এদিকে প্রায়ই আশাহত হয়ে ফিরতে হয় অন্য হাতগুলোকে, বেশিরভাগ সময়ই একজন যাত্রী একটি হাতকেই শুধু সেবা করতে পারে, কখনো কখনো শত হাতের সেবকও পাওয়া যায়, শুধু সেই বিরল সুযোগটুকু নেয়ার জন্য প্রতিদিনই এক ভরকেন্দ্রের দিকে ধেয়ে যায় তারা? অথচ এক বিন্দুতে আকর্ষিত না হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে নিবেদন জানালে মুঠোভরার সম্ভাবনা এমনিতেই বেড়ে যায়, প্রকৃতির এই সহজ-স্বাভাবিক নিয়মকে চরম উপেক্ষা তাদের।
একবার হয়েছিল কি, রোড ডিভাইডারের ওপাশে এক জোড়া শিশুকে দেখে চোখ আটকে গেল, যেন পথের পাচালির অপু-দুর্গা। তারা ঐ পারের গাড়িগুলোকে দর্শন দিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ দূর্গা এপারে তাকালে মোরসালিন হাত ইশারা করল, দূর্গা সেই খবর ভাইকে পৌঁছে দিলে। অপু বিশেষ আগ্রহ দেখাল না লাইন ক্রসে, তবে মোরসালিনের সেই হাত ইশারা এপারে প্রবল আলোড়ন তুলল। হাতের মিছিল অনেকদূর পর্যন্ত পিছু নিয়েছিল, ভয়ে সিটের সাথে সেটিয়ে গিয়েছিল মোরসালিন, কদিন আর চোখই তুলেনি কাচের গ্লাসে উপুর্যপুরি করাঘাত পেয়েও। না তাকিয়েই দু হাত জোড় করে মাফ চেয়ে নিয়েছিল।
এ এক অদ্ভুত সমস্যা, হাত-জোড় পাতা হাতকে প্রায়ই সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। আজও হাত জোড় করেছিল মোরসালিন, তবে ভয় থেকে নয়, বিস্বাদ থেকে, কিন্তু সেই বিস্বাদ রূপ নিল বিষাদে। পাতা হাতগুলোর কি যেন এক আহবান রয়েছে, তাকে উপেক্ষা করা প্রাণে সয় না, সেগুলোর আত্মা তখন পিছু নিতে থাকে। অশুভ সেই বোধ তাকে ছেড়ে গেল না অফিসে পৌঁছুনোর পরেও। বিকেলে মোরসালিন গুলশানে ছুটলে হাতের পাতাগুলোও উড়ে চললো সাথে সাথে ।
জিএম সাহেব পাঁচটায় যেতে বলেছিলেন। মোরসালিন ঠিক সাড়ে চারটেয় পৌঁছে গিয়েছিল, সিগনালের ঝুঁকি এড়াতে সে আগেভাগেই রওনা দিয়েছিল, কিন্তু জ্যামটা ছিল অস্বাভাবিক রকম ছোট্র দৈর্ঘ্যের। এমন নয় যে, চাইলেই জিএম সাহেবের সাথে দেখা করতে পারে। সবময় হুবহু না মিললেও তার অ্যাপোয়েন্টগুলোর মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, প্রথম দুবার স্যার খুব বেশী ব্যস্ত থাকায় সেক্রেটারি সাহেব ফোন ধরবেন, পরের দুবার সেক্রেটারিও ফোন ধরবেন না, এভাবে দুদিন পার হলে জিএম সাহেব ফোন ধরবেন, ক্ষিপ্রতার সাথে জানতে চাইবেন, ‘কেমন আছেন’, এরপর দম না নিয়ে ‘ভাল আছি’ ইত্যকার রকেটগতির কুশল চলার পর জানাবেন, ‘এই সপ্তাহ তো শিডিউল খালি নেই’। এরপর ‘তাহলে পরের সপ্তাহে…’ এর প্রায় অবধারিত আর্জিটি শ্রবণ করার পর দুঃখ প্রকাশ করবেন, ‘সে তো খুবই সম্ভব ছিল, কিন্তু ঢাকার বাইরে যেতে হচ্ছে যে।’ অতঃপর গুণে গুণে ঠিক ১৫ দিন পরের একটি ভিজিট জুটবে বরাতে।
পুরো দশ তলা একটি ভবন জুড়ে জমির সাহেবের অফিস, আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের এক অদ্ভুত যৌগ, বহিরংগে ঐতিহ্যকে ঠেসে দিয়ে অন্তঃপুর সাজানো হয়েছে খোলামেলা আধুনিকতায়। অফিসটিতে আগেভাগে ঢুকে পড়তে পেরে অবশ্য খুশীই হয়েছিল, কিছুটা রিহার্সেল করে নিতে পারবে। সাক্ষাৎকারটি হওয়া চাই একশোতে একশো। মাথাটা খুব নীচু করে ঘরে ঢুকবে, সেখানে নিশ্চয়ই লোক থাকবে, জিএম ‘ভালো আছেন’ জিজ্ঞাসা করবেন, মাথা নাড়িয়ে মোরসালিন সায় দিয়ে যাবে, নিজস্ব মন্তব্য থেকে বিরত থাকবে, বিভিন্ন বাহ্যজ্ঞান থেকে বাচিঁয়ে পবিত্র করে হাজির করবে নিজেকে।প্রায় ছটা, তবু ওয়েটিং এর সিরিয়াল চলছিল, মাঝে একবার রুম থেকে বেরিয়ে মোরসালিনকে দেখে মৃদু হেসে এমডি সাহেবের রুমে ঢুকে গেলেন জিএম সাহেব। মোরসালিন প্রাণ ফিরে পেল, এতক্ষনে প্রায় জমে গিয়েছিল, যা হোক, তাকে মনে আছে তাহলে।
এমডি সাহেবের সাথে মিটিং কতক্ষণ চলবে, কেউ বলতে পারে না, অপেক্ষার প্রহর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বিরক্তির ছিটেফোঁটা দেখা যায় না মোরাসালিনের মধ্যে, বর্ধিত সময়টুকুতে আরো খানিকটা রিহার্সেল করে নেয়া যাক বরং। জিএম সাহেবের ঘরে ঢুকে সে মুখোমুখি বসবে না, সামনে বসার আমন্ত্রন থাকলেও এক কোণে আশ্রয় নিয়ে সে সারাটা সময় ধরে কার্পেটের দিকে তাকিয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক তাকাবে, কিন্তু জিএম সাহেবের দিকে সরাসরি চোখ তুলে তাকাবে না। কখনো জিএম তাকে কোন প্রশ্ন করে ফেললে সে এক পলকের জন্য তাকাবে, তারপর ভয় পেয়েছে বা ভুল হয়ে গেছে, এমন অপরাধী মুখ করে আবার মাথা নীচু করেই জবাব দেবে। জমির সাহেব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন ফাইল সিগনেচারের ফাঁকে ফাঁকে, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ভূ রাজনীতি। শুধু মাথে নেড়ে যেতে হবে মোরসালিনকে। জমির সাহেব মাঝে মাঝে অবশ্য ‘কি বলেন’ জিজ্ঞাসা করবে, তখনো মোরসালিন মুখ ফুটে শব্দ করবে না, সে জানে শব্দ করে একমত প্রকাশ করাটাও এক প্রকার আদবের খেলাপ ।
মোরসালিনকে খুব স্নেহ করেন জমির সাহেব। একবার জমির সাহেবের সেক্রেটারির জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে এজন্য। ‘স্যার আপনার কি হন? কিভাবে পরিচিত? আত্মীয় হন?’। আশ্চর্য হয়েছিল শুনে, স্যার নাকি তার রেফারেন্স দেন প্রায়ই, একটা সত্যিকারের ভদ্র ছেলে নাকি সে! বয়স কত হবে জমির সাহেবের? খুব বেশী হবে তার থেকে? তবু তার অবয়বে পিতার ছাপচিত্র! মোরসালিন সচেষ্ট থাকে সন্তান্তূল্য ভূমিকায় ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে।
জমির সাহেব ফিরে এলেন এমডি সাহেবের কক্ষের রুদ্ধদার বৈঠক থেকে, প্রায় ৫০ মিনিট পরে। আবারো মোরসালিনের দিকে চোখ পড়তেই মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে ঢুকে গেলেন তার নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে…. ক্ষনিক বাদেই দরজা মেলে কয়েকজন দর্শনার্থী বেরিয়ে গেলে ঢোকার অনুমতি মিলল মোরসালিনের। কক্ষ প্রায় ফাঁকাই ছিল, তাই কোণায় উপবিষ্ট হওয়ার সুযোগ পেল না, মুখোমুখি বসে কিছুক্ষণ ম্যাটের দিকে চেয়ে রইল, শূন্য কক্ষ তাকে কেমন ভীত করে তুলছিল। কক্ষচ্যুত গ্রহের উত্তেজনার মধ্যেই অবশেষে রিহার্সেল করা সংলাপগুলো প্রক্ষেপন করতে শুরু করল, তবে সংলাপ খুব জমে উঠার আগেই জমির সাহেব বিনীতভাবে নিজের অসুস্থতার কথা জানালেন, একজন ডাক্তারের সাথে অ্যাপোয়েন্ট…..এসব বলতে বলতে জমির সাহেব যখন দুহাত জোড় করতে চাইছিলেন মনে হল, মোরসালিন পান্ডুলিপির সংলাপ ত্যাগ করে নতুন কিছু সংলাপ জুড়লো, বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করল এমন সময়ে এসে বিব্রত করার জন্য, আল্লাহর রহমতে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন এমন আশারবানী রেখে প্রায় হন্তদন্ত হয়ে বিদায় নিল।
বিজয় সরণির জ্যামটাই দায়ি, বারবার করে এ কথাটাই মনে হচ্ছিল মোসালিনের। দশতলা ভবন থেকে নামার সময় মাথাটা রীতিমত ভনভন করছিল। ঐ সময় যে লোকগুলিকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিল, তাদের ভাগ্যেই জুটেছে তাহলে? জমির সাহেবের কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট জেতার খবর ভাবনার চেয়েও দ্রত ছড়িয়েছে? ধবধবে ফরসা আর হৃষ্টপুষ্ট সব কর্পোরেট হাত সারা বছর ধরেই পাতা থাকে জমির সাহেবের পানে, তবে এসব ব্যাপারে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে এলেই কার্যসিদ্ধি হয়, তা নয়; তবে প্রায়ই অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য কোন সুযোগই আর রাখে না প্রথম আসা দলটি। মোরসালিন জানে, আরো অনেক দলের আসা-যাওয়া চলতে থাকবে। যদিও আলাদা ভরকেন্দ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে ব্যবসা বাগানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তবু আদিম প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি থেকেই দলগুলো এক জায়গাতেই ভীড় করবে, একে অন্যকে কৌশলে হঠিয়ে দিয়ে জিততে চাইবে পকেট ভর্তির কারবার।
নীচতলায় নেমে এলিভেটরের মুখ খুলতেই মোরসালিনকে আমন্ত্রন জানাল রিসেপশান ডেস্কের পেছনে পুরো দেয়াল আলোকিত করে রাখা একটি ফ্রেম, কোম্পানির চেয়ারম্যানের সাথে একজন ডাকসাইটে মন্ত্রী, একজন আর একজনের সাথে হাত মেলাচ্ছেন। পাশেই একটি সুদৃশ্য কেবিনেটে বিভিন্ন প্রকল্পের লিফলেট সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে যাচ্ছিল মোরসালিন, চোখে পড়ল একটা হৃষ্টপুষ্ট মাছি কোথা থেকে জুটে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকল্প থেকে প্রকল্পে মনের সুখে।
রাস্তায় বের হয়ে বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করল মোরসালিন। এই জাতীয় পরিস্থিতিতে কেন যেন খুব হাঁটতে ইচ্ছে করে, তাই গাড়ি ছেড়ে দিল। রাস্তার পিচের সাথে মাংসপেশির ঘর্ষন উপভোগ করতে করতে শহরটা আরও কাছে থেকে ভাল করে দেখে নিচ্ছিল। দূরে দেখা যাচ্ছে নতুন লাগানো স্ট্রিট লাইট আলোকিত করে আছে বিশাল সাইনবোর্ড, একটি বড় দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি, বাংলাদেশ সফরে আসছেন তিনি, তার হাত দুইখানি জোড় করে বুক উচ্চতায় তুলে রাখা। হঠাৎ করেই প্রশ্নটা উঁকি দিয়ে গেল মোরসালিনের মাথায়, সেই প্রধানমন্ত্রী জমির সাহেবের মত করে মাফ চাইছেন না তো আবার? মনে পড়লো, একটি নির্বাচনী প্রচারেও তাকে হাতজোড় করতে দেখেছিল টিভির পর্দায়। আচ্ছা, ভোট ভিক্ষার সময় হাত না পেতে জোড় করছিল কেন সে?
বাসায় ফিরে খুব ভাল করে মাথাটা ধুয়ে নিল। এরপর সামান্য কিছু মুখে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। তার বিছানাটা জানালার ধারে, আর জানালার ধারে থাকে একটি নিমগাছ। ইদানিং সেই গাছের পাতাগুলো জানালার গ্রিল ছুঁয়ে ঘরের মধ্যে ঝুলে পড়তে চাইছে। শুয়ে শুয়েই হাত বাড়িয়ে সেই পাতা আলতো ছুঁয়ে দেয় মোরসালিন।
নিমের আদরটা খুব উপভোগ করে সে, সরু কান্ডে ভর করে দুইটি করে পাতা দুইদিকে ছড়িয়ে, যেন মানুষের হাতের মত করে পাতা রয়েছে জগতের সামনে! খোদার কি বিষ্ময়কর সৃষ্টি এই বৃক্ষ! প্রহরের পরিবর্তন হচ্ছিল, অদূর মিনার থেকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি, খোদার আহবান মানুষের তরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৃথিবীর প্রার্থনাকেন্দ্রসমূহ ভরে উঠবে রাশি রাশি জোড় হাতে।
..................
বিনীত,
মোহাম্মদ কাজী মামুন