এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  শনিবারবেলা

  • জন স্নো, কলেরা ও ব্রড স্ট্রিটের একটি পাম্প

    যদুবাবু
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৬৬৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কৈফিয়ত: যদুবাবুর টিউশনি অনেকদিন বন্ধ ছিলো। বিভিন্ন তালেগোলে এবং পঞ্চভূতের ফাঁদে পড়ে তিনি কাতরাচ্ছিলেন – অকাদেমিক মাত্রেই জানেন এ ভূতেদের উৎপাত বা আবদার যাই বলুন মোটামুটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। তবুও, সেই তাঁদের শ্রীচরণে নিবেদনমিদং করে এসেছি আরেক কিস্তি নিয়ে।
    আজকের বিষয় – কজালিটি, অর্থাৎ কার্যকারণসম্বন্ধ।

    কার্য-কারণ-সম্বন্ধ অর্থাৎ কজালিটি নিয়ে আগের কিস্তিতে অল্প আলোচনা করেছিলাম, আজকে সেই আলোচনার-ই দ্বিতীয় কিস্তি, কিন্তু আজকের বিষয় রাশিবজ্ঞান, না ইতিহাস, না পুরনো দিনের সেপিয়া-টোনে-ছোপানো একটা রহস্য গল্প – তা বলা ভারি শক্ত। তবু, আজ তো শনিবার, সপ্তাহের সেরা দিন, পাতা উল্টোতে উল্টোতে একটু পিছিয়ে যেতে ক্ষতি কী?

    একটু নয় আসলে, অনেকটাই। চলে যাব সো-ও-জা ১৮৫০-এর আশেপাশের লন্ডনে। সে লন্ডন কেমন ছিল, এখনকার লন্ডন দেখে তার কিছুই বোঝার জো নেই, শহরের মুখ-মুখোশ সব-ই গেছে বদলে। ভরসা সেই ডিকেন্সের চোখ, যিনি বলেছিলেন লন্ডন শহরকে পড়া উচিত একটি বইয়ের মত। ডিকেন্সের বর্ণনা ছড়িয়ে আছে বইয়ের পাতায়, সেই ছবির দিকে তাকালেই ধাক্কা লাগবে পাশাপাশিই বিসদৃশভাবে গুঁজে দেওয়া ‘স্প্রিং অফ হোপ’ আর ‘উইন্টার অফ ডেস্পেয়ার’-এর দৃশ্যে। সেই ফ্রেমের একদিকে ভক্সহল গার্ডেনের মায়াবী সন্ধ্যা, ‘temples and saloons and cosmoramas and fountains… captivated our hearts … dazzled our senses’, আর তার ঠিক বিপ্রতীপ কোণে কোভেন্ট গার্ডেনের সকাল, “strewed with decayed cabbage-leaves, broken haybands. . . men are shouting, carts backing, horses neighing, boys fighting, basket-women talking, piemen expatiating on the excellence of their pastry, and donkeys braying.”

    উপায়হীন, ক্ষমতাহীন মানুষদের ইতিহাস অবশ্য কখনোই পাল্টায়নি, কিন্তু সেই ১৮৫০-এ লন্ডনের গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতন আতঙ্কের এক বিশাল কারণ ছিল কলেরার মহামারি। শুধু ১৮৪৮-৪৯-এই লন্ডনে কলেরাতেই মারা যান ১৪,১৩৭ জন মানুষ, মৃত্যুর হার ১০,০০০-এ ৬২ জন। কলেরার উপসর্গগুলিও সাংঘাতিক, প্রচণ্ড ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স আর ডিহাইড্রেশন - ফলে ক্রমাগত ভেদবমি আর আমাশা – মরণাপন্ন কলেরা রোগীর ডিহাইড্রেশন এত ভয়ানক হয় যে গায়ের রঙ নীলাভ হয়ে যায়।


    শিল্পীর কল্পনায় ভয়ঙ্কর মায়াজমার দানব

    রোগের কারণ তখনও জানা নেই, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা (miasma) থেকেই কলেরা ছড়ায়, মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না, কল্পনা করা হত মায়াজমা যেন পচনশীল জৈববস্তুর থেকে উঠে আসা অদৃশ্য বিষকণা, যার লক্ষণ দুর্গন্ধ। বিশাল লন্ডনের কোনো কোনো জায়গায় তখন সত্যিই এত বিষম দুর্গন্ধ বেরতো, যে বড়োলোক বাবুবিবিরা নাকের ডগায় একটি সুগন্ধি দ্রব্য বা রুমাল রেখে হাঁটতেন রাস্তাঘাটে। প্রখর গ্রীষ্মে টেমস নদীর উপরে মলয় বাতাস দিলে যে দুর্গন্ধ ভেসে আসত, লণ্ডনিয়ার-রা তার নাম দিয়েছিলেন, ‘দ্য গ্রেট স্টিঙ্ক’! এখানে বলে রাখা যায়, যে সেই সময়ের বিজ্ঞানীমহলে মায়াজমা থিয়োরি-তেই বিশ্বাস করতেন অধিকাংশ লোক, আর অল্প কিছু মানুষ তখন ধীরে ধীরে বলতে শুরু করেছেন অন্য একটি সংক্রমণের তত্ত্ব – জার্ম থিয়োরি – জীবাণু তত্ত্ব, যদিও জীবাণু আর রোগের কার্যকারণ তখনো দূর-অস্ত।


    বাবু জন স্নো

    ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, বেশ কয়েক বছর ধরে কারণ খুঁজে চলেছেন কলেরা মহামারির। জন স্নো লক্ষ করেছিলেন, যে কলেরার মহামারি যেন হঠাৎ করেই আবির্ভূত হয়, আর মহামারির আকার নেয় খুব তাড়াতাড়ি – আক্রান্ত হওয়ার দুই-একদিনের মধ্যেই মানুষ মারা যায়, এক সপ্তাহের মধ্যে শ’য়ে শ’য়ে, এক মাসে অযুত-পরিমাণ মৃত্যু। কার্যকারণ খুঁজতে বসে ডাক্তারবাবুর সন্দেহ হল মায়াজমা থিয়োরিটি নিয়েই। স্নো দেখলেন, একই পাড়ায় হয়তো এক বাড়ির সবাই কলেরায় মৃত, অথচ পড়শির বাড়িতে আঁচড়টুকু পড়েনি, বায়ুবাহিত রোগই যদি হবে, তবে পাশের বাড়ির হবে না-ই বা কেন? এক-ই বায়ুতে শ্বাস তো নিচ্ছেন তাঁরাও।

    কলেরা রোগের লক্ষণ, আগেই বলেছি, প্রচণ্ড ডায়েরিয়া আর ভেদবমি – স্নোয়ের সন্দেহ হল হয়তো বায়ু নয়, কলেরা রোগ ছড়ায় হয়তো খাবার-দাবার বা জলের মাধ্যমে, হয়তো চূড়ান্ত গরমে পচা-গলা বর্জ্যপদার্থ কোনোভাবে এসে মিশছে শহরের জলের সাপ্লাইতে, আর সেই দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা। কিন্তু প্রমাণ? কার্য-কারণ সম্বন্ধ?

    ১৮৫৪-র আগস্টে সাউথ লন্ডনের ঘিঞ্জি সোহো ডিস্ট্রিক্টে আবার হানা দিল কলেরা। আবার সেই অগুন্তি মৃত্যুর মিছিল শুরু হল লন্ডনের বুকে। জন স্নো লিখেছেন, “The most terrible outbreak of cholera which ever occurred in this kingdom, is probably that which took place in Broad Street, Golden Square, and the adjoining streets, a few weeks ago. Within two hundred and fifty yards of the spot where Cambridge Street [now Lexington St.] joins Broad Street [now Broadwick], there were upwards of five hundred fatal attacks of cholera in ten days.” (Snow [1855] p. 38).

    জন স্নো-ও ঝাঁপিয়ে পড়লেন তথ্য সংগ্রহের কাজে, তবে শুধু তথ্য নয়, আঁকতে শুরু করলেন ছবিও – সাউথ লন্ডনের ম্যাপ আঁকলেন দিনের পর দিন নিখুঁত হিসেবে, আর প্রত্যেকটি রাস্তার ম্যাপে রেকর্ড করলেন কোন ঠিকানায় মৃত্যু হয়েছে কয়জনার।

    জন স্নো-র আঁকা সেই অরিজিনাল ম্যাপটি নীচে দিলাম। একটু খেয়াল করে দেখুন, ছোট্ট ছোট্ট কালো রঙের বার আঁকা রাস্তার গায়ে গায়ে, যে ঠিকানায় একাধিক মৃত্যু – সেখানে বারগুলির উচ্চতা বেশি, যেখানে কলেরার থাবা বসেনি, সেইখানগুলি ফাঁকা। আরও যদি একটু তাকিয়ে থাকেন ম্যাপটির দিকে, মনে হবে যেন মৃত্যুগুলি সেই একটি রাস্তার চারিদিকেই জমে আছে – সে রাস্তাটির নাম ব্রড স্ট্রিট, যার ঠিক কর্নারেই একটি জলের পাম্প।


    জন স্নোয়ের আঁকা সাউথ লণ্ডনের ম্যাপ, ঠিক মধ্যিখানে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন ব্রড স্ট্রিট, আড়াআড়ি মিশেছে কেমব্রিজ স্ট্রিট, যার মোড়ে সেই পাম্পটি। আর উল্টোদিকে দুই-পা হাঁটলেই সেই ব্রিউয়ারি। সোর্সঃ https://wellcomecollection.org/images

    স্নো-এর গল্পের ‘স্মোকিং গান’ এই ব্রড স্ট্রিটের জলের পাম্প-টিই, আর প্রমাণ হিসেবে ম্যাপটিকে খুঁটিয়ে দেখে একের পর এক অকাট্য যুক্তি সাজালেন তিনি, তার সেই ১৮৫৫-র মনোগ্রাফ “On the mode of communication of cholera”, এখনো একটি ঐতিহাসিক দলিল।

    তার যুক্তির কয়েকটা তুলে দিচ্ছি এখানে।

    (১) বেশ কয়েকটি মৃত্যু হয়েছে এমন বাড়িতে, সোজাসুজি লাইন টানলে রুপার্ট স্ট্রিটের পাম্পের থেকে যেগুলি অনেক বেশি কাছে ব্রড স্ট্রিটের সেই পাম্পটির থেকে, তাহলে? জানা গেল, সেই কয়েকটি বাড়ির লোকেদের জন্য রুপার্ট স্ট্রিটের পাম্পটিতে সিধে-রাস্তায় হেঁটে যাওয়া মুশকিল ছিল অন্ধগলি আর বন্ধ রাস্তার ঝামেলায়, তাই তারা একটু দূরের ব্রড স্ট্রিটের পাম্পটিতেই যেতেন বেশি।
    (২) অনেকগুলো ব্লক দূরে ছড়ানো-ছিটানো কয়েকটি শিশুমৃত্যু দেখেছিলেন স্নো। সে বেচারিরা কেউ-ই থাকত না ব্রড স্ট্রিটের চৌহদ্দিতে – শুধু, তারা ইস্কুলে যাওয়ার রাস্তায় জল খেত ব্রড স্ট্রিটের সেই পাম্পের থেকে। পাম্পের জল নাকি ঠান্ডা ছিল, আর স্বাদেও মন্দ নয়!
    (৩) ঠিক দুই ব্লক দূরেই সরগরম ভাটিখানা লায়ন ব্রিউয়ারি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আশেপাশে যাই হোক, লায়ন ব্রিউয়ারি অক্ষত – কারণ সেখানের শ্রমিক-রা জলটল খেতেন না বিশেষ, বিয়ারের উপরেই থাকতেন, খুব তেষ্টা পেলে ব্রিউয়ারির নিজের পাতকুয়ো ছিল চত্ত্বরেই। (মাতাল ভাইবোনদের বলছি, এই গল্পটি গাঁত করে নাও, কাজে লাগবে জীবনে।)

    পাম্পের কি আর কফিন হয়, তবুও সেই মেটাফরিক্যাল ‘কফিনে শেষ পেরেক’ সোহোর দুর্গন্ধ থেকে বহুদূরের ছায়া-ঘেরা হ্যাম্পস্টিড অঞ্চলের সুজ্যানা ইলি-র কলেরায় মৃত্যু। পরে জানা যায় শ্রীমতি ইলি-র সেই ব্রড স্ট্রিটের পাম্পের জল ভারি পছন্দের ছিল বলে ভাইঝি ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে পাম্পের জল কোনোভাবে সরবরাহ করা যায় ওঁর বাড়িতে। ‘লিটল ডিড শি নো’।

    আসলে ব্রড স্ট্রিটের সেই পাম্প যে কুয়ো থেকে জল সরবরাহ করতো, তার খুব কাছেই ছিল একটি cesspit, মলমূত্র-আবর্জনার গর্ত, আর সেই সেসপিট থেকে দূষিত জল লিক করে করে বিষাক্ত করে তুলেছিল পাম্পের কুয়োর জলকে।

    ১৮৫৪-র সেপ্টেম্বরের সাত তারিখে, এক বিষ্যুদবারের সন্ধ্যেয়, জন স্নো সেন্ট জেমস’ প্যারিশের বোর্ড অফ গার্ডিয়ান-দের সামনে পেশ করেন একে একে সাজানো যুক্তি, ম্যাপ। তাঁরা পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলেন তা নয়, তবুও তাঁরা একটা কাজের কাজ করেন – ব্রড স্ট্রিটের সেই কুখ্যাত পাম্পটির হাতল-টি তারা সরিয়ে দেন। ততদিনে অবশ্য কলেরার মহামারির প্রকোপ সেইবারের মত কমে গেছে অনেকটাই, তবুও ঐ হাতল সরিয়ে যে কত লোকের প্রাণ বেঁচেছে, তার কোনো হিসেব নেই।

    ব্রড স্ট্রিটের পাম্পের হ্যান্ডল সরানোর গল্পটা এখন ঢুকে গেছে আমাদের পাঠ্যবইয়ের পাতায়, সেইরকম এক বইতে পড়েছিলাম, সিডিসি-তে বৈজ্ঞানিকরা যখন মন দিয়ে খোঁজেন মহামারির উৎসমুখ, একে অপরকে নাকি তাঁরা জিগ্যেস করেন, ‘where is the handle to this pump?’


    সোহো-র সাফল্য যে ইন্ধনটুকু জুগিয়েছিল, তার কল্যাণে জন স্নোয়ের শেষ কাজ বিখ্যাত ‘গ্র্যাণ্ড এক্সপেরিমেন্ট’। স্নো দেখেন লন্ডনের বিশাল অংশের জল সরবরাহের দায়িত্বে দুইটি কোম্পানি – সাউথওয়ার্ক এণ্ড ভক্সহল (এস-এন্ড-ভি) আর ল্যামবেথ। ল্যামবেথের জল আসে টেমস নদীর উপরের অংশ থেকে, যেখানে আবর্জনা ফেলা হয় তার আগেই, আর এস-এন্ড-ভির জল আসে ডাউনস্ট্রিম টেমস থেকে, যার জল অনেক বেশি দূষিত।

    শুধু তাই নয়, স্নো দেখলেন যাঁদের বাড়িতে এই দুই কোম্পানির জল যায়, তাঁদের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই। সোজা ওঁকেই উদ্ধৃত করি: “Each company supplies both rich and poor, both large houses and small; there is no difference either in the condition or occupation of the persons receiving the water of the different Companies … there is no difference whatever in the houses or the people receiving the supply of the two Water Companies, or in any of the physical conditions with which they are surrounded …”

    তাহলে এই দুই কোম্পানির তফাৎ শুধু জলের উৎসে অর্থাৎ শুদ্ধতায়, আর মৃত্যুর হারের দিকে তাকালে কি দেখব? প্রতি দশ হাজার বাড়িতে ল্যামবেথের মৃত্যুহার মাত্র ৩৭, আর S&V-র ৩১৫ – প্রায় দশ গুণ !



    সরবরাহের অঞ্চল  বাড়ির সংখ্যা  কলেরায় মৃতের সংখ্যা  প্রতি ১০,০০০ বাড়িতে মৃত্যু
    সাউথওয়ার্ক এণ্ড ভক্সহল৪০,০৪৬১,২৬৩৩১৫
    ল্যামবেথ২৬,১০৭৯৮৩৭
    বাকি লন্ডন২৫৬,৪২৩১,৪২২৫৯

    শুধু রোগের উৎসের সন্ধান দেওয়াই নয়, স্নো আর তার সহকর্মী হোয়াইটহেড সমাধান-ও বাতলে দিয়েছিলেন কলেরার সঙ্গে যুদ্ধের: এক, দূষিত জল আর টেমসের জলে মেশানো যাবে না, আর দুই, জল সরবরাহের ব্যবস্থা লন্ডন থেকে আরও উৎসের দিকে (আপ-স্ট্রিম) সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, ল্যামবেথের মতন।

    সেই সময়ে সেগুলো কানে তোলেননি অবশ্য কেউ-ই। অবশ্য, কবেই বা রাষ্ট্রশক্তি সময়ের কাজ সময়ে করেছে বলুন? তবে সমাধান একটা হয়, শোনা যায় ১৮৫৮ সালের গ্রীষ্মে টেমসের সেই “গ্রেট স্টিঙ্ক”-এর সুবাতাস দোলা দিয়েছিল পার্লামেন্ট হাউজের অলিন্দে। তখন এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, স্যার যোসেফ ব্যাজালগেটের তত্ত্বাবধানে বিশাল দুই নালি বসে টেমসের দুই পাশে, দূষিত জল লন্ডনের সীমানা পেরিয়ে নদীর অন্য কোথাও, আরও ডাউনস্ট্রিম অংশে, ফেলতে। বাতাসে ধর্মের কল না হোক কিছু তো একটা নড়ে!


    ব্রড স্ট্রিটের সেই কুখ্যাত পাম্পটির বর্তমান চেহারা। বলাই বাহুল্য, হাতলটি দেড়শ' বছর ধরে মিসিং।

    স্নোয়ের থিয়োরি কিন্তু তখন-ও পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি বিজ্ঞানীদের সকলে অথবা প্রশাসকের দল। প্রমাণ যাই থাক, ওরাল-ফিক্যাল ট্রান্সমিশন, অর্থাৎ মানুষের বর্জ্যপদার্থ (পড়ুন হাগু-মুতু) থেকে পাত্রমিত্ররাজাগজা সবার রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে – এমন দাবি করলে লন্ডনের লোকের হজম পছন্দ হবে না ভেবেছিলেন মন্ত্রীমহোদয়রা।

    দুর্ভাগা জনগণের আরও কিছু মূল্য চোকানো বাকি ছিল বোধহয়। এক দশক পরেই, ১৮৬৬ সালে কলেরার আরেকটি মহামারি শুরু হয়, কিন্তু সে আটকে থাকে ইস্ট লন্ডনের (ব্রমলি বাই বো) একটি অঞ্চলেই। দেখা যায়, হতভাগ্য সেই অংশটিই বাকি ছিল স্যার ব্যাজেলগেটের নিষ্কাশনী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে। কলেরা যে সত্যি-ই একটি জলবাহিত রোগ – এর পরে আর সন্দেহের কোনোই অবকাশ থাকল না – বললেই চলে। ভেবে দেখুন না, একটা শহরের ঠিক সেখানেই আউটব্রেক যেখানে দূষিত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই, আর বাকি শহর বিপন্মুক্ত।

    জন স্নো অবশ্য তাঁর তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা বা খ্যাতি কিছুই দেখে যেতে পারেননি, ১৮৫৮ সালেই হঠাৎ স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম যদিও অমর হয়ে থাকবে, যতদিন মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করবে মানুষ।

    শেষ করব দু’টো ছোট্ট লেজুড় কথা বলে।

    এক, যদুবাবুর প্রথম কিস্তিতে সারভাইভারশিপ বায়াসের কথা লিখেছিলাম, মনে আছে? ঐ যে বুলেটের গর্ত-অলা প্লেনের ছবি আর আব্রাহাম ওয়াল্ড? জন স্নো-ও আরেকটু হলে এই বায়াসের চক্করে পড়ছিলেন, কারণ উনি শুরু করেছিলেন শুধু ব্রড স্ট্রিটের কলেরায় যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের তথ্য নিয়ে, দেখাতে চেয়েছিলেন সেই মৃতদের তালিকায় ব্রড স্ট্রিটের পাম্প ব্যবহারকারী-ই বেশি। কিন্তু যাঁরা মারা যাননি, সেই ‘সারভাইভার’দের কথা শুরুতে ভাবেননি তিনি, আর এইখানেই গণ্ডগোলের সম্ভাবনা: “But Snow had not investigated the drinking patterns of the neighborhood residents who had survived the epidemic. If that group turned out to have drunk from the Broad Street pump at the same rate, then the whole basis for Snow’s theory would dissolve.” (Johnson [2007] p. 173)

    সেই কাজটা করেন এক ধর্মযাজক, রেভারেন্ড হোয়াইটহেড – ঐ অঞ্চলের প্রায় পাঁচশো মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি, নিয়মনিষ্ঠ ভাবে নথিবদ্ধ করেন সমস্ত তথ্য, অক্লান্ত পরিশ্রমে। দু’জনের সম্মিলিত চেষ্টায়, তথ্যের সাহায্যে প্রমাণ হয় পাম্পের জলের সাথে কলেরার কার্যকারণসম্বন্ধ।

    ভাবুন তো একবার আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, একজন ধর্মগুরু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন একজন ডাক্তার বা বিজ্ঞানীর সাথে একটি অতিমারীর মোকাবিলায়?

    আর দুই, দেড়শো বছর আগের ঘটনা মানেই অতীত নয়, কলেরার দুঃস্বপ্ন এখনো কিছুই মুছে যায়নি পৃথিবী থেকে। আমাদের দেশে, আমাদের বাংলায় কলেরার মহামারীতে মৃত্যু যে কত হয়েছে, তার হিসেব মেলানো ভার। আমাদের সাহিত্যেও তার পায়ের ছাপ স্পষ্ট। মনে আছে ছেলেবেলায় শরৎচন্দ্র পড়তে পড়তে চমকে উঠেছিলাম ইন্দ্রনাথের মুখে কলেরার বর্ণনায়:

    “হঠাৎ একটা দমকা বাতাসের সঙ্গে সেই দুর্গন্ধটা এমন বিকট হইয়া নাকে লাগিল যে, অসহ্য বোধ হইল। নাকে কাপড় চাপা দিয়া বলিলাম, নিশ্চয় কিছু পচেছে, ইন্দ্র! … ইন্দ্র বলিল, মড়া। আজকাল ভয়ানক কলেরা হচ্ছে কিনা! সবাই ত পোড়াতে পারে না... মুখে একটুখানি আগুন ছুঁইয়ে ফেলে দিয়ে যায়। শিয়াল-কুকুরে খায় আর পচে। তারই অত গন্ধ।”

    কলেরার মত জলবাহিত রোগ এখনো স্বল্প-সামর্থ্যের দেশের উপর এক বিশাল বোঝা, বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর, বা যুদ্ধের পর। হাইতির ২০১০-এর ভূমিকম্প, ইয়েমেনের ২০১৭-র গৃহযুদ্ধের পরে জলবাহিত রোগের মরার উপর খাঁড়ার ঘা তার প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য।

    ফকনার সাহেব বলেছিলেন না, “the past is never dead. Its not even past”?



    সূত্র:

    1. Coleman, T. (2019). Causality in the time of cholera: John snow as a prototype for causal inference. Available at SSRN 3262234.
    2. Tulchinsky, T. H. (2018). John Snow, Cholera, the broad street pump; waterborne diseases then and now. Case Studies in Public Health, 77.
    3. Bynum, W. (2013). In retrospect: On the mode of communication of Cholera. Nature495(7440), 169-170.
    4. সবকটি ছবি উইকিমিডিয়া এবং ওয়েলকাম ট্রাস্টের ডিজিটাল ইমেজ লাইব্রেরী থেকে নেওয়া, তবে ২ নং রেফারেন্সটিতে অজস্র সূত্র দেওয়া আছে, R package ও অন্যান্য সমস্ত ডেটা, ম্যাপ ইত্যাদি। যা যা চাইতে পারেন আর যা যা ভাবেননি সে সব-ই প্রায় পেয়ে যাবেন।
    5. Observation and Visualization: John Snow and the Broad Street Pump
    6. Steven Johnson. The Ghost Map: The Story of London’s Most Terrifying Epidemic–and How It Changed Science, Cities, and the Modern World. Riverhead Books, New York, reprint edition, October 2007. ISBN 978-1-59448-269-4
    7. John Snow. On the mode of communication of cholera. London: John Churchill, 2nd edition, 1855. (এই সেই মোনোগ্রাফ, পাতা উলটে দেখুন)


    বিন্যাস/গ্রাফিক্সঃ সুনন্দ পাত্র।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৬৬৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নবীন - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 14.139.196.16 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:৩৩498318
  • এই  কাহিনীটা সম্ভাবত ঐন্দ্রিল ভৌমিক আগে লিখেছিলেন। 
  • অনিন্দিতা | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩৮498319
  • হোয়াইটহেডের সমীক্ষায় সারভাইভার দের জল পানের কী ধারা এবং ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছিল? 
  • যদুবাবু | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৩498320
  • @অনিন্দিতা, খুব ভালো প্রশ্ন। আমি দুটো জায়গা থেকে একটু একটু কপি-পেস্ট করে দিচ্ছি, হোয়াইটহেডের মূল অবদান ছিলো দেখানো যে যারা পাম্পের জল খেতেন না তাদের মধ্যে সংক্রামণের হার তুলনায় অনেক কম। এর একদম মূল ডেটা-ও পাওয়া যায়। এই দেখুনঃ 


    @b: ঐন্দ্রিল-বাবু আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক, বিশেষ করে এই গত দু বছরে, তাও কী করে যেন ওঁর লেখাটা পড়া হয়নি। চোখ এড়িয়ে গেছে। খুঁজে দেখি পাই কি না। যদি হাতের কাছে লিঙ্ক থাকে দেবেন। 
  • যদুবাবু | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:১০498329
  • @b: থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ !!! দারুণ একটা ট্রেজার ট্রোভের সন্ধান দিলেন। এই সিরিজের একটাও লেখা পড়া নেই। আক্ষেপের কথা কিন্তু আনন্দের-ও কথা। আজকের দিনটা দারুণ কেটে যাবে। 
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:০২498335
  • খুব ভালো লেখা
  • যদুবাবু | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:১০498358
  • Thank you, @অভ্যুদা। 
  • সুকি | 49.207.213.122 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭498361
  • কালকেই পড়েছিলাম - খুব ভালো লেগেছে।   
  • aranya | 2601:84:4600:5410:f037:8bf7:a22:228d | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:২৭498362
  • দারুণ 
  • যদুবাবু | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:৪৪498401
  • @সুকি, অরণ্যঃ অজস্র ধন্যবাদ! 
  • b | 14.139.196.16 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২২498474
  • যদু বাবু আপনার ই মেল আই ডি  একটু পাওয়া যাবে ?
  • যদুবাবু | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২২498498
  • @b: অবিশ্যি পাওয়া যাবে। আমার বাপমায়ের দেওয়া নাম জ্যোতিষ্ক, আইডিও ঐটাইঃ jyotishka অ্যাট vt ডট edu। এরকম পেঁচিয়ে লিখলাম বলে সরি, লোকে বলে পাবলিক ফোরামে ইমেল আইডি দিলে পেঁচিয়ে-ঘুঁচিয়ে দিতে যাতে ওয়েব-স্ক্রেপার-রা সহজে স্ক্রেপাতে না পারে। তাতে লাভ হয় কি না জানি না। 
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:০৮498507
  • এই নিন, পরিষ্কার ইউনিভার্সিটির ওয়েবপেজ বানানোই হয়েছে এই জন্যে - তার আর সোজা আর ঘোরানো প্যাঁচালো কি!
    http://search.vt.edu/search/person.html?person=7955798
  • অপু | 2409:4060:111:9fbd::73d:8ac | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৩:১১498647
  • জ‍্যোতিষ্ক, জাস্ট দুরন্ত। টু গুড।
  • যদুবাবু | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৭498665
  • থ্যাঙ্কু ব্রতীন্দা !! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন