সিম্পসন’স প্যারাডক্স : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | ধারাবাহিক : শিক্ষা | ১৭ এপ্রিল ২০২১ | ৬৪২৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৪৬
সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে?
ব্লাড টেস্ট, প্রসিকিউটর’স ফ্যালাসি ও ওয়ান্ডার উওম্যানের ল্যাসো – এজলাসে Bayes-বাবু : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : স্বাস্থ্য | ০৮ মে ২০২১ | ৩৭৬২ বার পঠিত | মন্তব্য : ২৪
ও-জে-সিম্পসন নিজের স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন, বহুদিন ধরে বহুল-চর্চিত ট্রায়াল হয় তার, সে ট্রায়ালের সম্প্রচার হয় সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, প্রথমবার ট্রায়ালে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছাড় পেয়ে যান ওজে। প্রসিকিউশন প্রমাণ এনে দেন ওজে নিজের স্ত্রীকে মারধোর করতেন, কিন্তু ডিফেন্স অ্যাটর্নি অ্যালান ডেরশোউইজ সওয়ালে বলেছিলেন, তাতে কী? প্রতি ২৫০০-এ নির্যাতনকারীর ১ জন খুন করেন শেষমেশ। জুরির লোকেরা একটু বেইজ থিয়োরেম জানলেই দেখতে পেতেন এই তথ্য বরং প্রমাণ করে যে ওজে সিম্পসনের দোষী হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% এর উপরে!
মার্জারিন, ডিভোর্স, ভ্যাক্সিন ও সিগারেট -- কাকতালীয় ও কার্যকারণ সম্বন্ধ : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ৩১ জুলাই ২০২১ | ৩০৪২ বার পঠিত | মন্তব্য : ৭
কখনো কখনো দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এক তৃতীয়জন, ‘লার্কিং ভেরিয়েবল’ অথবা ‘কনফাউণ্ডার’। চাদ্দিকে এর মেলাই উদাহরণ, এই যেমন আপনার মাইনেও বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে ব্লাড প্রেশার, হয়তো দেখা যাবে, মাইনে বাড়ছে বয়সের সাথে, রক্তচাপ-ও তাই ... আবার কিছু মাথামুন্ডু নেই এমন জিনিষেও কোরিলেশান বেশি হতেই পারে, Zআনতি পার না। আই-এস-আই-এর একটা মজার গল্প আছে এই নিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর কোর্স, মিড-সেমেস্টারে প্রশ্ন এসেছে, 'মানুষের উচ্চতাও যেমনি বাড়ছে, মাথার চুলের ঘনত্ব তেমনি কমছে ... ক্যায়সে?' আমার এক প্রিয় জুনিয়র দুর্ধর্ষ উত্তর লিখে এলো, 'লম্বা লোকের টাক সূর্যের অনেকটাই কাছে, সেখানে গরম বেশী, খুব ঘাম ... ঘেমো টাকে অল্প চুল যদি না-ই পড়লো, তা'লে আর ঘেমে লাভ কি?' (বলাই বাহুল্য, আসলে হাইট আর জেন্ডারের সম্পর্ক আছে, ‘জেণ্ডার’ এখানে লার্কিং ভেরিয়েবল।)
জন স্নো, কলেরা ও ব্রড স্ট্রিটের একটি পাম্প : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৭০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৬
১৮৫০-এর লণ্ডন। তার একদিকে বর্ণিল সন্ধ্যার মায়াবী হাতছানি, আর একদিকে ঘিঞ্জি গলিতে আবর্জনার মধ্যে পিলসুজের তলার মানুষের লড়াই। এর-ই মধ্যে বারেবারে হাজার-হাজার মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কলেরার দৈত্য। রোগের কারণ অজানা, মনে করা হত দূষিত বাতাস বা মায়াজমা থেকেই কলেরা ছড়ায়, যদিও মায়াজমা ঠিক কি জিনিস তা অবশ্য কেউ-ই জানতেন না। ঠিক সেই সময়েই লন্ডনের এক তরুণ ডাক্তারবাবু, জন স্নো, ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলেরার মোকাবিলায়, দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রমাণ করলেন মায়াজমা নয়, দূষিত জল-ই এই রোগের বাহক। আজকের যদুবাবুর টিউশনিতে সেই জন স্নো-র গল্প, এক মহামারির দানবের চোখে চোখ রেখে সত্যি খোঁজার রূপকথা।
আপনি যেখানেই থাকুন : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | লঘুগুরু : উৎসব | ১৩ অক্টোবর ২০২১ | ৩০৫০ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম দিবসে বাবার হাত ধরে আমিও যেতাম সেই সব রোমহর্ষক সংগ্রামে। তখন-ও ‘দিনেরাতে মুলে রাখে কান’ মোবাইল ছিল না পকেটে-পকেটে, তবুও ঘাবড়াইনি কোনোদিন, জানতাম রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে পকেটে একটা নাম-ঠিকানা লেখা চিরকুট থাকলেই চলে, হারিয়ে গেলেও কেউ খুঁজে পেয়ে আমাকে ক্যুরিয়ার করে দেবেন। তবে কি না, ছোটোবেলায় হারাইনি কোনোদিন-ই, ইচ্ছে ছিল একবার অন্তত হারিয়ে গিয়ে বাবার নাম ধরে মনের আনন্দে চ্যাঁচাবো, সেই গোপালের ছেলে যেমন চিল্লিয়েছিল “অ্যাই গোপাল, গোপাল”! কিন্তু সে শখ আর পূর্ণ হল না কোনোদিন।
তবে হারিয়ে একবার গেছিলাম, তাও আবার আধদামড়া, হিজল-দাগড়া বয়সে। সে-ও সেই অভিশপ্ত সপ্তমীর দিনটাতেই। সেই গল্প বলছি।
প্রোফেসর বক্সের সাবধানবাণী – ভূ-পর্যটকের ভুল অথবা টলেমি ও কে সি পালের পৃথিবী : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩২০৫ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩১
মনে করুন সেই ছোট্টবেলার ভূগোল বই – সৌরজগতের ছবি আঁকা। প্লুটো তখন-ও লাইনের শেষে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে আছে, আর বাকিরা আগে-পিছে উঁকি মারতে মারতে ঘুরে চলেছে – আমাদের দেখা সৌরজগতের প্রথম ‘মডেল’ এবং বলাই বাহুল্য, সেটিও খুঁটিয়ে দেখলে ‘ভুল’-ই। তবে এক্কেবারে ডাহা ভুল নয়, অন্তত সূর্য তো মধ্যিখানে, তাই না?
একটা সময় তা-ও ছিল না, যেমন ধরুন টলেমি আর কোপারনিকাস – টলেমি-র মডেল ‘জিওসেন্ট্রিক’ আর কোপারনিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক’। ‘জিওসেন্ট্রিক’ অর্থাৎ পৃথিবীর চারদিকে সূর্য বা অন্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এমন কথা এখন বাচ্চারাও শুনলে হাসবে। আর বড়দের মধ্যে? সেই এক বিখ্যাত কন্সপিরেসি-থোরিস্ট কে-সি-পাল ছাড়া আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন, এমন ভাবনা-ই অসম্ভব, কিন্তু টলেমি নেহাত বোকা বা গোঁড়া মানুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন জিনিয়াস!
চ্যালেঞ্জারের দুর্ঘটনা ও প্রোফেসর ফাইনম্যানের মাইনরিটি রিপোর্ট : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১৯ মার্চ ২০২২ | ৩১৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৮
ফাইনম্যান নাসার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট লিখে মতামত দেন, যে এই ভেঙে-পড়া ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া অবধি মহাকাশযাত্রা স্থগিত থাকুক। বলেন, “For a successful technology, reality must take precedence over public relations, for nature cannot be fooled”। রজার’স কমিশনের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও সে রিপোর্ট শেষমেশ প্রকাশ পায়, তবে একেবারে শেষে অ্যাপেন্ডিক্স-এফ হিসেবে। অথচ, থিওকল, বইসজলি আর তাদের সঙ্গীদের সমস্ত সাবধানবাণী ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, নাসার ম্যানেজমেন্ট উৎক্ষেপণের আগে যে প্রি-লঞ্চ এস্টিমেটটি কষেছিলেন, তাতে বলা ছিল, লঞ্চে শাটল ফেল করার সম্ভাবনা ১০০,০০০এ মাত্র ১ – প্রায় নেই বললেই চলে। তাহলে?
হাণ্ড্রেড-ইয়ার ফ্লাড, এক্সট্রিম ভ্যালু থিওরি এবং একটি রাজনৈতিক হত্যার দলিল : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৫ নভেম্বর ২০২২ | ১৮৬৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৮
ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনার কথা ভেবে তর-তম করেন ভূবিজ্ঞানীরা, হাণ্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, ফাইভ-হান্ড্রেড ইয়ার ফ্লাড, থাউজ্যান্ড … ইত্যাদি। কিন্তু, এই হাণ্ড্রেড-ইয়ারস ফ্লাডের মতো এমন ঘটনা যা হয়তো কোথায় একবার-ও হয়নি আগে, বা হলেও হয়তো সেই কোন মান্ধাতার আমলে, সেই বিরল থেকে বিরলতম দুর্ঘটনার মোকাবিলা করার পরিকল্পনা করবেন কেমনে? একটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন ভাবলে সুবিধে হয়, ধরুন আপনি সেই ছোটোবেলার হান্স ব্রিঙ্কারের গল্পের মত এক ডাচ গ্রামের লোক, বন্যার জল আটকাতে চারদিকে এমন বাঁধ দিতে চান, যাতে আগামী একশো, কি হাজার বছরের বন্যার জল-ও কক্ষণো সেই বাঁধ টপকাতে না পারে, এইবার ভাবুন কত উঁচু বাঁধ বানাবেন হান্স? উচ্চতা মাপবেন কী করে সেই অনাগত বিপুল তরঙ্গের?
আধুনিক বিজ্ঞানের বহু বহু প্রশ্নের উত্তর যে রাশিবিজ্ঞান দিয়েছে সে তো বলাই বাহুল্য। সেসব প্রশ্নের উত্তর যোগানোর জন্য তথ্য (ডেটা)-ও তো আছে প্রচুর পরিমাণে, বরং দরকারের চেয়ে কিছু হয়তো বেশিই। কিন্তু এই ধরণের এক্সট্রিম ইভেন্টের (চূড়ান্ত?) সম্ভাবনা মাপার সূত্রটি ধরতে গেলে সেইসব অঙ্কের ভাঁড়ারেও কিছু কমতি পড়ে যায়। দরকার পড়ে অন্য একরকমে প্রোবাবিলিটি থিয়োরি – থিয়োরি অফ এক্সট্রিমস।
সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি - ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি! : যদুবাবু
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সমাজ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৩৬৬ বার পঠিত | মন্তব্য : ৩৫
আজ থেকে প্রায় বাহাত্তর বছর আগে, ১৯৫০ সালে, প্রোফেসর উইলিয়ম এস রবিনসন একটি যুগান্তকারী পেপারে (“Ecological Correlations and the Behavior of Individuals”) প্রমাণ করে দেখান, যে, দুটি রাশির মধ্যে সম্পর্ক (অর্থাৎ কোরিলেশন) সম্পূর্ণ আলাদা-আলাদা দুরকম হতেই পারে, যদি একটি মাপা হয় সমষ্টির জন্য (অর্থাৎ এগ্রিগেট লেভেল) আর একটি ব্যক্তির পর্যায়ে (অর্থাৎ ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলে)। রবিনসনের পেপারে ১৯৩০ সালের আমেরিকান জনগণনার—অর্থাৎ সেন্সাসের—ডেটা অ্যানালাইজ করে দেখানো হয়, যে ঐ সময়ের ৪৮টি স্টেটে যদি বিদেশে-জন্মানো (ফরেন-বর্ন) শতাংশ এবং সাক্ষর জনতার (আমেরিকান ইংলিশে সাক্ষর) শতাংশের মধ্যে কোরিলেশন পজিটিভ: ০.৫৩। এর থেকে ধারণা হতে পারে—যে রাজ্যে যত বিদেশ থেকে আসা লোক, সে রাজ্যে তত কম নিরক্ষর মানুষের শতাংশ, অথবা, তত বেশি সাক্ষরতার হার। আর একটু এগিয়ে ব্যক্তি-স্তরে নিয়ে গেলে, এমন মনে হতে পারে—যে, বিদেশে-জন্মানো মানুষের (আমেরিকান ইংলিশে) সাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা দেশে-জন্মানোদের থেকে বেশি। কিন্তু, এই সম্পর্ক-ই যদি ব্যক্তির স্তরে দেখেন, ঐ দুই রাশি—বিদেশে জন্ম আর সাক্ষরতা—এবার কিন্তু কোরিলেশন নেগেটিভ: —০.১১, অর্থাৎ সমষ্টি থেকে ব্যষ্টি-স্তরে আসতেই সম্পর্ক উল্টে গেলো।
তবুও কখনো কখনো ব্যক্তির আচরণ আর সমষ্টির ব্যবহার এক-ই হয়, কখনো হয় এক্কেবারে উলটো। সেই গণ্ডগোলের নাম “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি”। “ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসি” শব্দবন্ধ অবিশ্যি রবিনসনের দেওয়া নাম নয়, সেটির আবির্ভাব কিছুদিন পর সেলভিনের ১৯৫৮ সালের পেপারে – ইকোলজিক্যাল ফ্যালাসির সংজ্ঞা পেলাম আমরাঃ ‘the invalid transfer of aggregate results to individuals’!