এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • জোনাকি

    Jeet Bhattachariya লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৮২৯ বার পঠিত
  • রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আনন্দ প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে কত কি না ভাবে।

    একটা পুরাতন জীর্ণ বাড়ি। দুই দিকের দেওয়াল খসে পড়েছে সময়ের ওজনে। একটা বড় বটগাছ ময়াল সাপের মত জড়িয়ে নিচ্ছে আসতে আসতে। পরিত্যক্ত এই বাড়িটার চারদিকে এলোমেলোভাবে অনেক গাছ গাছড়া জন্মেছে। ছোটগল্পে যে ভুতুড়ে বাড়িগুলোর কথা লেখা থাকে, খানিকটা সেরকম।

    ছোটবেলা থেকেই বাড়িটা দেখছে আনন্দ। তার ইতিহাস, ভূগোল কিছুই জানা নেই। কোনোদিন সেরকম উৎসাহও দেখায় নি। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আর দশটা বাড়ি যেমন চোখের মায়া কাটিয়ে বেরিয়ে যায় ঠিক সেইরকমই খানিকটা। তবে একটু আলাদা। একবার সাহস করে ঢুকেছিল, কিন্তু সে অনেক আগেকার কথা।

    বাড়িটার ঠিক উল্টো দিকে কিছু ছোট ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। আনন্দের ছোটবেলায় সেগুলো ছিল না। কিংবা ছিল হয়তো, কোনোদিন ভালো করে খেয়াল করেনি। এরকম তো কত জিনিসই থাকে, সব কি আর খেয়াল করা যায়? সব কি আর মনে রাখার মতো? ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর গতিপথে কত কি না ছিটকে বেরিয়ে যায়, কে তার খেয়াল রাখে। তার পরিবারও আলাদা কিছু নয়। কোটি কোটি জনসংখ্যার মধ্যে সামান্য কয়েকজন মানুষের জীবনগাথা নিয়ে কেউ কোনোদিনও বিশেষ মাথা ঘামায়নি। মা, বাবাকে হারিয়ে এখন এই বিশাল ভূখণ্ডে এক অনু বালুর মতো পরে আছে আর নিয়তির সুতোর টানে পুতুলনাচ করছে।

    "আনন্দ না? চিনতে পারছিস?", একটা গলা ভেসে এলো।

    আনন্দ মুখ ঘুরিয়ে দেখলো শাড়ি পরা এক মাঝবয়সী ভদ্রমহিলা মুখে মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে আছে। মাস্কের উপর দিয়ে দুটো করুন চোখের নরম চাহুনি হালকা চেনা চেনা লাগছে।

    আনন্দ একটু না চেনার ভান করেই বলল, "ঠিক চিনতে পারছি না। আসলে মাস্ক আছে তো"।

    মহিলা মুখ থেকে মাস্ক খুলতেই আনন্দর চেতনাতে একটা প্রাচীন ছবি ভেসে এলো।

    "বিদিশা দি? কেমন আছিস?", আনন্দ ঠোঁটের উপর হালকা হাসি ফুটলো। পুরোনো কোন কাছের মানুষ হঠাৎ করে ফিরে এলে যেমন হয় ঠিক সেরকম ধরণের হাসি।

    বিদিশাদি মাস্কটাকে ভাঁজ করতে করতে বলল, "এই চলে যাচ্ছে রে। তুই কেমন আছিস? আমি খবর পেয়েছি সব। শুনে খুব খারাপ লাগলো"।

    আনন্দ মাথা নিচু করে পায়ের তলার দিকে তাকিয়ে রইলো। পুরানো বাড়িটার ছায়া তাকে লেপ্টে আছে। ভুলে যাওয়া দুঃখের সাপ যেন পিছনে পরে থাকা বাড়িটাকে ছেড়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে লাগলো। মুখ ফুটে আর টু শব্দটি করতে পারলোনা। এক ধরণের অতিসাধারণ নিস্তব্ধতা এসে দাঁড়ালো তাদের দুজনের মধ্যে।

    "বাড়ির দিকে যাবি নাকি?", বিদিশাদি শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো।

    আনন্দর বুকটা ধড়পড় করছে। কিসের জন্য সে নিজেও ঠিক করে জানে না। হয়তো বা জানে, কিন্তু কাউকে বলে বোঝাতে পারবেনা। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে একবার খালি ঘাড় নাড়ালো। তারপর দুজনে মিলে আসতে আসতে এগোতে থাকলো পিচ বেছানো রাস্তার উপর দিয়ে। ছোট ঝুপড়িটার মধ্যে থেকে খিনখিনে রেডিও কণ্ঠে একটা গান ভেসে আসছে। ভালো শুনতে পারছেনা আনন্দ। তবে মনে মনে ভাবছিল হয়তো রবীন্দ্রসংগীত হবে। না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। কিন্তু ভাবতে তো দোষ নেই।

    একটু এগোতেই বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলল, "কতদিন পরে দেখা না?"

    বিদিশা মাস্কের ভেতর থেকেই বলল, "হ্যাঁ, কি আশ্চর্য তাই না? একই শহরে থেকেও আর দেখা হয়না আমাদের। তা তুই কি আর বম্বেতে ফিরবিনা?"

    আনন্দ যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। তারপর বলল, "জানিনা রে। সেরকম কিছু ভাবিনি"।

    বিদিশা আর কথা বাড়ালো না। বেশী ঘাটানো ঠিক হবে কিনা সে নিজেও বুঝতে পারছিলো না। এতদিন পরে দেখা, কত কথাই না জমে আছে।

    সামনে একটা ঠেলা গাড়ির উপর একজন ভদ্রলোক পরোটা ভাজছে। গরম পাম তেলের উপর ময়দার রুটি চিড়চিড় করে কেঁপে উঠলো আর আনন্দের জিভে জল চলে এলো।

    "পরোটা খাবি বিদিশা দি?"

    বিদিশাদি ওর দিকে একটু অবাকভাবে তাকিয়ে বলল, "তুই একটুও পাল্টাসনি। এখনো পরোটার লোভ যায়নি?"

    আনন্দ একটু হেসে ফেলল। ছেলেবেলা থেকেই এই পরোটার প্রতি তার প্রবল আকর্ষণ। যখন খুব ছোট ছিল তখন একবার চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় বাবা খাইয়েছিল। সেই থেকেই যেন জিভে লেগে আছে। বাড়িতে মা যতই যত্ন করে বানাক না কেন, সেই স্বাদ আর আসেনা। কিছু জিনিসের স্বাদ রাস্তাতেই থাকে। বিদিশাদি ওর এই পাগলামিটা জানতো। একসাথে, এক পাড়ায় বড় হয়েছে। কতবার বিদিশার সাইকেলে চেপে আনন্দ পরোটা, ফুচকা খেয়ে বেরিয়েছে তার ঠিক নেই।

    বাবা ছোটবেলায় সাইকেল কিনে দেয় নি। তার ভয় ছিল ছেলে সাইকেল পেলে দুমদাম এক্সিডেন্ট করবে। কিন্তু সেই সব ছেলে ভোলানোর কথা। আসল ব্যাপারটা হলো টাকা ছিল না। বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলের শ্রমিকের ছেলের নিজস্ব সাইকেল থাকবে ? সমাজ বা বাবার পকেট কোনোটাই মেনে নেবে না।

    তাই বিদিশার সাইকেল করেই সব জায়গায় ঘোরা। আর বিদিশাও কোনোদিন মানা করতো না। নিজের থেকে বছর কয়েকের ছোট আনন্দকে সাইকেলের পিছনে বসিয়ে ঘুরতে বেশ মজাই লাগতো। তারা একসাথে কত নতুন রাস্তা ,কত গলি যে আবিষ্কার করেছে তার ঠিকানা নেই।

    গরম গরম পরোটা খেতে খেতে আনন্দ জিজ্ঞেস করলো, "বিদিশা দি, তোর কি এখনো সেই জোনাকি ধরার শখ আছে?"

    বিদিশা একটু চোখ তুলে বলল, "তোর মনে আছে?"

    "মনে থাকবে না কেন?"

    বিদিশা একটু মিচকে হেসে উঠলো। কিছু একটা ভাবছিল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠতে পারলোনা। দূরে ঝুপড়িটার থেকে ভেসে আসা গানটা এখন স্পষ্ট হয়েছে।

    "এই রাত তোমার আমার, এই সুর তোমার আমার"।

    গানটা স্পষ্ট শুনতে পেয়ে আনন্দ আপন মনেই বলে উঠলো, "এটা রবীন্দ্রসঙ্গীত না?"

    "না, না। আধুনিক", বিদিশা প্লেটটা শেষ করে নিচে নামিয়ে রাখলো।

    আনন্দরও খাওয়া প্রায় শেষ। গানটা শেষ হওয়ার পর থালাটা নামিয়ে বলল, "কিরে বললিনা তো?"

    বিদিশা টাকা বার করতে করতে বলল, "কি?"

    আনন্দ বিদিশার একেবারে হাতটা চেপে ধরে বলল, "খবরদার। টাকা আমি দেব।"
    "ধুর বোকা। আমি বড় না?"

    আনন্দ প্রায় নাছোড়বান্দা হয়ে পকেট থেকে টাকা বার করে পরোটাওয়ালার হাতে টাকা গুঁজে বলল, "হয়ে গেছে। এবার তুই বলতো এখনো জোনাকি ধরিস কিনা?"

    বিদিশা আনন্দের পাগলামি দেখে হেসে ফেলল। সে টাকাটা মানি ব্যাগে ঢুকিয়ে বলল, "ধরি না। এখন পুষি বলতে পারিস।"

    আনন্দর চোখ বড় বড় হয়ে গেল, "তুই জোনাকি পুষিস কিভাবে?"

    "দেখলেই বুঝতে পারবি। আয় না একদিন আমার বাড়িতে। চিনিস তো আমার বাড়ি?"

    আনন্দ শুনেছিল কোথায় বিদিশার বাড়ি কোথায় কিন্তু কোনোদিন যাওয়া হয়নি। যোগাযোগটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেলেও, কিছু সম্পর্ক ঘাসের মতো হয়। একটু জল আর একটু রোদ্দুর, বেশী যত্ন লাগে না।

    "না মানে, পাড়াটা চিনি।"

    "ঠিক আছে। আমার ফোন নাম্বারটা রাখ। পাড়ায় এসে ফোন করিস। আজই আয়।"

    আনন্দ কি বলবে বুঝে উঠতে পারলোনা। বিকেলে কি তার কোন কাজ আছে? না, সেরকম কিছু নেই। নেড়া মাথায় সদ্য গজিয়ে ওঠা চুলগুলো চুলকাতে চুলকাতে বলল, "বেশ, বিকেলেই আসছি"।

    (২)

    অন্যদিনের তুলনায় আজ যেন বেলা বেশী বড়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল যেন আসতেই চাইছিল না। আনন্দ বারে বারে খালি ঘড়ির দিকে তাকায়। অপেক্ষা করে আছে কখন যে ঘড়ির কাঁটাগুলো পাঁচের ঘর ছোঁবে। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজ তাহলে আর যাওয়া হবে না।

    পুরানো গিটারটা আলমারির পাশে পরে ধুলো খাচ্ছিল। কি করবে, কি করবে ভাবতে ভাবতে সেইটাকে হাত দিয়ে বসলো। একটা ছেঁড়া কাপড় দিয়ে বেশ করে মুছে কোলে নিয়ে গিটারের তারগুলোর সাথে খেলা করতে শুরু করলো। E, B, G, D, A, E - মনে মনেই উচ্চারণ করতে করতে তারগুলো বাজিয়ে দেখলো। বাবার থেকে ভালো করে শিখে নিতে পারেনি গিটারটা। ওই কোনোরকম টুংটাং। গানটা একটু বেশীই ভালোবাসে ,তবে একটা মুদ্রাদোষ আছে । সব বাংলা গানই রবীন্দ্রসংগীত ভাবে। ওর মতে যেকোন গানকে ভালো করে বিশ্লেষণ করলে রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাওয়া যাবে। গিটারটা একটু বাজিয়ে নামিয়ে রাখলো। তারগুলোর সুর নষ্ট হয়ে গেছে। আর এখন এই বৃষ্টিতে পুরানো সুরের অপেক্ষায় তার মন ভিজে গেছে ,তাই একেবারে ইচ্ছে করছেনা নতুন করে সুর খোঁজবার।

    বিছানার পাশে টেবিলে থাকা মা বাবার ফটোটা দেখে চোখে জল চলে এলো। চোখদুটো হঠাৎই মেঘের মতো ঘোলা হয়ে গিয়ে এক রাস বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লো । হাজার হাজার পুরানো স্মৃতি ভেসে উঠলো তার সামনে।

    এই ঘরেই কোন এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে প্রথমবার বাবা গিটার বাজানো শিখিয়েছিল, প্রথমবার তার রেজাল্ট দেখে বাবার চোখ গর্বে ভোরে উঠেছিল। এখনো আলনার দিকে তাকালে মায়ের শাড়িগুলো ধরা পরে। এখনো বিছানায় বসলে মায়ের আঁচলের গন্ধে ঘুম চলে আসে। মুম্বাইতে বড় চাকরি পেয়ে নিয়ে গিয়েছিল দুজনকেই। সমুদ্রের ধারে সন্ধেবেলায় ঘুরতে ঘুরতে কত সূর্যাস্তই না দেখেছে তারা তিনজনে একসাথে। কিন্তু হঠাৎ করে যে কি হলো। ভেঙে গেল সব কিছু। ইচ্ছে ছিল নিজের একটা বড় বাড়ি হবে, সেখানে থাকবে বাবা মা। ইচ্ছে ছিল দেশ বিদেশে নিয়ে ঘুরবে, পৃথিবীর সমস্ত খুশি তাদের ঝুলিতে ভোরে দেবে। কিন্তু সব ইচ্ছাই কি আর পূরণ হয়?

    ইচ্ছা তো এটাও ছিল বিদিশাদিকে বিয়ে করবে। ছোটবেলা থেকেই ভেবে নিয়েছিল যে তারা সারাজীবন একসাথে থাকবে। কিন্তু তা আর হলো কৈ \? ভালোবাসা এই সমাজে অনেকরকম মাপকাঠি দিয়ে বিচার হয়। সতেরো বছর বয়সে যখন তার স্কুলের গন্ডি অব্দি পার হয়নি তখন উনিশ বছরের বিদিশার বিয়ে হয়ে যায়। মুখ ফুটে বলতে অব্দি পারে নি কাউকে। ভয় পেয়েছিল। হ্যা, সাহসী সে কোনোদিন ছিল না। সারাজীবন ভয় পেয়ে এসেছে। টাকার ভয়, ক্ষমতার ভয়, ভালোবাসার ভয়। তাই আর জীবনে কারুর সাথে ভালোবাসাটা হলোনা।
    ঘড়ির কাঁটাটা পাঁচের ঘরে পরতেই আর নিজেকে আটকাতে পারলোনা আনন্দ। একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বৃষ্টির মধ্যেই। কিসের আশায় সে নিজেও ভালো করে জানেনা। বিদিশাদির বিয়ের পর এই প্রথমবার তাদের দেখা হলো। বছর বারো তো হবেই । এতদিন যখন নিজে থেকেই দেখা করে নি তো আজ তার কেন এমন উতলা লাগছে?

    ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে হেটে চলল বিদিশাদির বাড়ির দিকে। রাস্তায় কোন গাড়ি নেই, কোন মানুষ নেই, খালি চারদিকে জল আর বৃষ্টির ঝরে পরার শব্দ। শান্ত বিকেলে পথ বড় বেশী মনে হচ্ছে আনন্দর। ঘন কালো মেঘগুলোর মাঝে সাদা সাদা কি একটা যেন কেঁপে উঠলো। রাস্তার ধারে বিক্ষিপ্তভাবে গজিয়ে ওঠা দোকানগুলোর নিচে কয়েকটা কুকুর গুটিয়ে শুয়ে আছে।
    তাদের দিকে চোখ যেতেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। এরকম তো সে আগেও দেখেছে তাহলে আজ কেন মন খারাপ করছে। হয়তো নতুন করে খেয়াল করা শুরু করেছে। হয়তো নতুন করে অনুভব করতে শিখছে।

    প্রায় পনেরো মিনিট চলার পরে বিদিশাদির পাড়ার সামনে এসে দাঁড়ালো আনন্দ। এবার তো বাড়ি চেনা দায়। পকেট থেকে ফোন বার করে কল করলো বিদিশাদিকে।
    "এসে গেছিস?", ফোনটা ধরেই বলে উঠলো বিদিশাদি।
    "হ্যাঁ"
    "আচ্ছা, এবার সামনে দেখ একটা পুকুর আছে। পুকুরের পাশে দেখবি একটা একতলা বাড়ি আছে। সাদা রঙের"।
    "আচ্ছা", ফোনটা রেখে হাটতে থাকলো আনন্দ। পুকুর পেরিয়ে দেখে একটা জীর্ণ সাদা বাড়ি সামনে প্রচুর ঝোপঝাড়ে ভর্তি। দূর থেকে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা যে এরকম একটা বাড়িতে মানুষ থাকতে পারে। ভাঙা পাচিলের সাথে লাগোয়া একটা পুরানো গ্রীলের গেট ঠেলে ঢুকে পড়লো আনন্দ। আসতে আসতে কত কি না ভেবেছিল ! বিশাল একটা বাড়ি হবে বিদিশাদির, সামনে বিরাট গাড়ি থাকবে , মার্বেল পাতা ঘর। কিন্তু এ যে সামান্য বাড়ির ভগ্নাংশ মাত্র।

    বাড়ির গেটের সামনে বিদিশাদি একটা রঙিন শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে। মুখটা একটু উস্কো খুস্কো হলেও সেই জগৎভোলানো হাসিটা এখনো লেগে আছে। চেহারা একটু ভারী হয়েছে। কিন্তু হাতে কোন শাখা পলা নেই, মাথায় সিঁদুর নেই। তাহলে কি? ভাবতেই গা টা শিউরে উঠলো আনন্দর।

    "আয় ভেতরে আয়"।

    আনন্দ তার দেখানো পথ দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো। হালকা ছিমছিমে দুটো ঘর। আসবাবপত্রের কোন বিলাসিতা নেই। বারান্দায় একটা সেলাই মেশিন। প্লাস্টিকের চেয়ার। ঘরের দেয়াল গুলো থেকে প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। দু একটা জায়গায় ক্র্যাক ও পড়েছে।

    "আয় বস", একটা চেয়ার টেনে এগিয়ে দিল বিদিশাদি।

    চেয়ারে বসে একবার ভালো করে দেখলো আনন্দ বিদিশাদিকে। সময় যে তার প্রতি খুব একটা সহানুভূতিশীল, তা দেখে মনে হলো না।
    "চা খাবি তো?"
    আনন্দ বলে উঠলো, "না, পরে খাবো। তুই বস না।"
    একটা চেয়ার টেনে বিদিশাদি বসতেই আনন্দ জিজ্ঞেস করে উঠলো, "তোর বরকে দেখতে পাচ্ছিনা যে "
    বরের কথা শুনতেই বিদিশাদির চোখ নিচে নেমে গেল। একটু থেমে থেমেই বলল ,"বছর পাঁচেক আগে ডিভোর্স হয়ে যায় রে আমাদের। সেই থেকে একলাই এখানে আছি"।

    আনন্দ কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলোনা। চুপ হয়ে রইলো।
    "বড় অত্যাচার করতো রে। তাই থাকতে পারলাম না।", একটু ভাঙা ভাঙা গলায় বলল বিদিশাদি।
    আনন্দ এবার জিজ্ঞেস করলো, "এই বাড়িটা ...?"
    "ভাড়া নিয়েছি। বাবা মা তো ভাইয়ের কাছে থাকে। ডিভোর্স হওয়া মেয়েকে বেশিদিন ঘরে রাখতে চাইলো না। আমি তাই এখানে একাই আছি"।
    আনন্দ মাথা নিচু করে বলল, "আমি একেবারে জানতাম না রে।"
    বিদিশা এবার একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল, "ছাড় ঐসব। তুই কেমন আছিস বল? বোম্বে তো খুব সুন্দর জায়গা। কবে যাবি আবার ওখানে?"
    "দেখি। ভাবিনি সেসব কিছু।"
    "তুই বস. আমি একটু চা করে নিয়ে আসছি", বলেই বিদিশাদি উঠে রান্নাঘরের দিকে চলল।

    আনন্দ কোন প্রতিবাদ না করে চুপচাপ সামনের বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলো। মনটা কেমন যেন হয়ে গেল ওর। ভেবেছিল বিয়ে করে হয়তো বিদিশাদি খুব সুখে আছে। ছেলে পুলে নিয়ে সংসার করছে হয়তো। কিন্তু কে জানে এরকম হবে। সুখ কি কারুর জীবনে নেই ? কেউ কি ভালো নেই এই জগতে?

    বৃষ্টির জল সামনে পুকুরের উপর টপটপ করে পরে নানা ধরণের জলছবি আঁকছে। মনে হচ্ছে শত শিল্পীর তুলি একসাথে জেগে উঠেছে। বাইরের আলো কমে আসছে। সন্ধে প্রায় হয়ে এলো। বাদলার দিনের অবশ্য তাড়াতাড়ি অন্ধকার নামে।

    (৩)

    একটু পরে বিদিশাদি একটা ট্রে তে করে দুকাপ চা আর কিছু পেঁয়াজি নিয়ে আনলো।
    "এইসব আবার কি ?"
    বিদিশাদি একটু হেসে বলল, "খা না। বৃষ্টির দিনে একটু পিঁয়াজি না হলে মনটা কেমন করে।"
    একটা পিয়াজি তুলতে তুলতে আনন্দ জিজ্ঞেস করলো, "তোর পোষা জোনাকিগুলো তো দেখছি না ?"
    বিদিশাদি একবার আর চোখে আনন্দর দিকে তাকিয়ে বলল, "একবার ভালো করে দেখ পুকুরের দিকে।"

    আনন্দ অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে দেখে পুকুরপাড়ের সামনে বিন্দু বিন্দু করে আলো ফুটে উঠেছে। চা এর কাপটা নিচে নামিয়ে রেখে সে চেয়ার ছেড়ে আসতে আসতে এগিয়ে চলল পুকুরপাড়ের দিকে। বৃষ্টিটা একটু ঝরেছে। তাই গায়ে সেরকম লাগছেনা। বিদিশাদি তার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, "আয় ,আমার সঙ্গে আয়"।

    আনন্দ বিদিশাদির হাত ধরে এগিয়ে চলল ওই ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে। পুরো অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে প্রায় শত শত জোনাকির টিমটিম আলো আকাশের নক্ষত্রমন্ডলীর মতো জ্বলছে। বাচ্চাদের মতো হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে, "বিদিশাদি..."।

    কথা বলতে পারলোনা আনন্দ। এরকম সুন্দর প্রকৃতি কোনদিন সে দেখেনি। খালি বহুবছর আগে একবার সেই জীর্ন বাড়িটার মধ্যে দেখেছিল। রাতের অন্ধকারে সেই সময়ও বিদিশাদির হাত ধরে প্রকৃতির এই মায়াময়ী লীলার সাক্ষী হয়েছিল দুজনে।

    "কিভাবে ..মানে...কি করে যোগাড় করলি তুই এদের ?", আপ্লুত কণ্ঠে বলে উঠলো আনন্দ।

    বিদিশাদি ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল, "নেশা চেপে গেছিল। খুব একটা খাটনি না, তবে অনেক পড়াশুনা করতে হয়েছে। তুই জানিস, মেক্সিকোর তোলাস্কালা জঙ্গলে এক একটা সিজনে পুরো জঙ্গল আলোকিত করে দেয় এই জোনাকিরা। আমার খুব ইচ্ছে জীবনে একবার যাবো সেই জঙ্গলে।"

    আনন্দ চোখ বড় বড় করে প্রানভরে এই জোনাকিদের নৃত্য দেখছে। প্রকৃতির কি বিচিত্র খেলা, আজ সকালেই সেই পুরানো বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিল আর হয়তো জোনাকি দেখতে পাবেনা। এতো শিল্পায়ন ও জনবসতির জন্য এখন তো জঙ্গলই দেখা যায় না। বৃষ্টির পরে ব্যাঙের ডাক ,ঝি ঝি পোকার শব্দ সব যেন ফেলে আসা দিনগুলোর মতো স্মৃতিতেই রয়ে গেছে। এতদিন পরে আবার যে এরকম দৃশ্য দেখবে তা ভাবেনি কখনো।

    বিদিশাদি এবার বলে উঠলো, "চল, চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আর তারপর বৃষ্টির দিনে কোথায় সাপ খোপ লুকিয়ে থাকবে। আয়, আমার সাথে সাথে আয়।"

    বিদিশাদি আবার আনন্দের হাত ধরে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো ঘরের দিকে। কিন্তু একটু যেতে না যেতেই আনন্দ দাঁড়িয়ে হাতটা চেপে ধরলো। অন্ধকারের মধ্যে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিশাদিকে একেবারে অন্যরকম লাগছে। জোনাকিদের আলোতে তার ভেজা ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে আনন্দ বলে উঠলো, "তোর সেই বাড়িটার কথা মনে পরে না বিদিশাদি?"
    বিদিশাদি চোখ নামিয়ে বলল, "থাক না রে, পুরানো সেই কথা ভেবে আর কি লাভ?"

    আনন্দ স্থীরভাবে বলে উঠলো, "আমার কিন্তু এখনো মনে পরে। প্রতিদিন ,প্রতিক্ষনে আমি এখনো সেই রাতের কথা ভেবে বেঁচে থাকি বিদিশাদি। আগে রাগ হতো, তুই তো নিজের সংসারটা গুছিয়ে নিলি বিয়ে করে একটা পর পুরুষকে। আর আমি ? আমি শুধু মন খারাপটাই নিয়ে রইলাম। কেন সেইদিন আমাকে চুমু খেয়েছিলি ? কেন ভালোবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছিলি?"

    বিদিশাদি এবার চোখ মেলে তাকালো আনন্দের দিকে, "আমি তোর থেকে বড় আনন্দ। আমাদের এই সমাজ কিছুতেই মেনে নিতো না আমাদের এই সম্পর্কটা।"

    আনন্দ দেখতে পেল বিদিশাদির চোখটা ছলছল করছে। এক ব্যর্থ স্বপ্ন, এক অত্যাচারী স্বামী, এক জ্বালাময়ী সমাজের বেদনা তার নরম চোখের মধ্যে দিয়ে ফুটে ফুটে উঠছে। সে বিদিশাদিকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, "একটা কথা রাখবি?"
    বিদিশাদি ওর দিকে তাকিয়ে বলল, "কি?"
    "না করবি না বল আগে?"
    বিদিশাদি কিছু বলল না। চুপ করে তাকিয়ে রইলো। একটা বৃষ্টির ফোঁটা তার ঠোঁট বেয়ে শাড়ির উপর পরে ভিজিয়ে দিলো।
    "আমি তোকে মেক্সিকোর ওই জঙ্গলে নিয়ে যেতে চাই। যাবি আমার সঙ্গে?"
    বিদিশাদি এবারো শুধু তাকিয়ে রইলো।
    "কি রে বল, জাবি আমার সাথে?"
    বিদিশাদি এবার একটু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তারপর আনন্দের বুকে মুখ গুঁজে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, "এতো সুখ আমার সহ্য হবেনা রে। আমার সহ্য হবেনা"।
    আনন্দও তাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। পুকুরধারে প্রায় একসাথেই অনেকগুলো ব্যাঙ ডেকে উঠলো। অন্য সময় হলে আনন্দ এটাকেও রবীন্দ্রসংগীত ভেবে ফেলতো কিন্তু এখন তার মন অন্য দিকে, অন্য জগতে। মেঘলা আকাশ আর সুরেলা প্রকৃতির মধ্যে দুই প্রাচীন জোনাকি নতুন করে তাদের জীবনের আলো ফিরে পেল।

    ©জীৎ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ৩১ আগস্ট ২০২১ | ৮২৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নীল  - Jeet Bhattachariya
    আরও পড়ুন
    সবুজ - Jeet Bhattachariya
    আরও পড়ুন
    লাল - Jeet Bhattachariya
    আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন