এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • লকডাউন

    Anirban M লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১০ জুন ২০২১ | ২৭৬২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)

  • হঠাৎ চোখটা খুলে গেলে বিলু জানলার পর্দার পেছন দিয়ে হাল্কা আলোর আভা দেখতে পায়। ঘড়ি না দেখেও বিলু জানে এখন ভোর চারটে। ঠিক এই সময় প্রতিদিন ওর ঘুম ভাঙ্গে। কোন কারণ নেই, তাও ভেঙ্গে যায়। এত ভোরে উঠে বিলু কি করবে জানে না। আজ প্রায় একমাস হল লকডাউন চালু হয়েছে, অফিস, কাছারি, স্কুল, কলেজ সব বন্ধ। ঠিক বন্ধ নয়, সব এখন অনলাইন। কি এক ভাইরাস এসেছে দেশে, সেই ভয়ে সব বন্ধ। বিলুর অবশ্য মরার ভয় নেই। আসলে এত এত বেঁচে থেকে কী হবে সেটাও বিলু ভাল বুঝতে পারে না। তবে ওর বন্ধুবান্ধব সবাই বাঁচতে চায়। তাদের সংসার আছে, সন্তান আছে, তাদের বড় করতে হবে। বিলুর এরকম কোন লক্ষ্য নেই। যে দুটো কারণে মানুষ বাঁচতে চায় – সংসার আর প্রতিভা, তার কোনটাই বিলুর নেই। মা-বাবা যতদিন ছিল, তাদের বাঁচিয়ে রাখাটা একটা কাজ ছিল। সেসবও অনেকদিন হল চুকেবুকে গেছে। অথচ বিলু যে মরতে চায় তা নয়। কিন্তু কেন যে বাঁচবে সেটাও ভাল বুঝতে পারে না। কিন্তু যেহেতু বেঁচে আছে, তাই টাকা লাগে, তাই চাকরি, উপার্জন। উপার্জন বিলু খুব খারাপ করে না। এককালে ভাল ছাত্র ছিল, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিল, সেই সূত্রে টাকা ভালই পায়। মানে তার মতে ভালই পায়। তার বন্ধুবান্ধরা মনে করে বিলুর যা পাওয়া উচিত তা সে পায় না।


    বাইরে একটা কাক ডেকে ওঠে। তার মানে এখন সাড়ে চারটে বাজে। বিলুর ধারণা একটাই কাক রোজ ডাকে এই সময়ে। বিলু তার নাম দিয়েছে কালীকৃষ্ণ। অবশ্য একটাই কাক যে ডাকে তা বিলু কোনদিন পরখ করে দেখে নি। অবশ্য দেখলেও কি বোঝা যেত? দুটো কাকের মধ্যে বিলু কোনদিন ফারাক করতে পারে নি। কাকরাও কি মানুষের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারে? তবে কাক আজকাল কমে এসেছে। একাধিক কাক ঠিক সাড়ে চারটের সময় এসে ডাকবে, এমনটা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু কালীকৃষ্ণ কেন তাকে সকাল সাড়ে চারটেতে এসে ডাকে তা বিলু অনেক ভেবেও বুঝতে পারে নি। সে কি খেতে চায়? নাকি সে অন্য গ্রহের প্রাণী, অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে তার? প্রশ্ন দুটো নিজের মাথাতেই সোনার কেল্লা সিনেমায় ফেলুদার ডায়ালগের মত শোনাল। সকালের দিকটা, বিলু ভেবে দেখেছে, নানারকম হাবিজাবি চিন্তা আসে। সে কোনদিন আটকানোর চেষ্টা করে নি। আসলে জীবনে কোনকিছু নিয়েই সে আর কিছু চিন্তা করে না। যা আসার তা আসে, যা যাওয়ার তা যায়।


     মোবাইলটা বেজে ওঠে। তার মানে এখন ভোর সোয়া পাঁচটা । প্রতিদিন এইসময়ে এক ফোনটা আসে। এক ভদ্রমহিলা গণেশ গুহ নামে কাউকে চান আর প্রতিদিন বিলু রঙ নাম্বার বলে কেটে দেয়। এরকম ফোন আজকাল আসে, মোবাইলে রং নাম্বার। আজকাল কেউ কোন ফোন ছেড়ে দিলে, কিছুদিন বাদে ফোন কোম্পানি তার নাম্বার অন্য কাউকে দিয়ে দেয়। হয়ত এই নাম্বারের ফোন গণেশ গুহ কোনদিন ব্যবহার করতেন। কিন্তু যারা এরকম ভুল নম্বরে ফোন করেন, তারা উল্টোদিক থেকে রং নাম্বার শোনার পরও দু-একবার তখন তখনই চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে কিন্তু তা হয় না। প্রতিদিন সকাল সোয়া পাঁচটায় বিলুর ফোনে গণেশ গুহ’র খোঁজে ফোন আসে। বিলু প্রথমে দু’একবার জানিয়েছে তার নাম গণেশ গুহ নয়। কিন্তু তাতেও ফোন আসা বন্ধ হয় নি। প্রতিদিন ঠিক সোয়া পাঁচটা।


    আজ হঠাৎ কী মনে করে বিলু ঠিক করল আজ সে গণেশ গুহ হয়েই ফোনের উত্তর দেবে। ফোন তুলে বলল, বলুন। উল্টোদিক থেকে সেই চেনা গলা ভেসে আসে, “গণেশ গুহ বলছেন?” “বলছি”, বিলু উত্তর দেয়। মহিলা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেন, “ গণেশ বাবু, আমার বন্ধু সমরেশের কাছে আপনার কাজের প্রশংসা শুনেছি। ও একবার আপনার সাহায্য নিয়েছিল। আমিও একটা খুন করাতে চাই। আপনার যা রেট তাই দেব”। কথাটা শুনে বিলু খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ফোন নিয়ে, কী বলবে বুঝতে না পেরে। ফোনের ওদিক থেকে “হ্যালো, গণেশবাবু, হ্যালো…” ভেসে আসতে থাকে।



    এখন রাত সাড়ে চারটে। বিলুর ভাল ঘুম হয়নি গত তিনদিন, সেদিন ওই ফোনটা ধরার পরে থেকেই। সাধারণত বিলুর ঘুম ভাঙ্গে চারটেয়। সেদিনের ফোনালাপের পর থেকে, আজকাল সাড়ে তিনটেয় ঘুম থেকে উঠে পড়ে বিলু। একদৃষ্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। নাম্বারটা সে ক্লায়েন্ট বলে সেভ করে রেখেছে। একটা খুনের কন্ট্রাক্ট তো এসেছিল! সে যদি নিত কন্ট্রাক্ট, তবে কি সে কন্ট্রাক্ট কিলার হত? এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা আবার বেজে ওঠে। সে ভাবে ক্লায়েন্ট আজ তাড়াতাড়ি ফোন করল? কিন্তু এরকম তো হয় না। গত তিনদিন ঠিক সোয়া পাঁচটাতেই ফোনটা এসেছে, যদিও বিলু তোলে নি। কিছুটা কৌতুহলি হয়ে ফোনটা হাতে নিতে দেখল তার বন্ধু সুরজিত। তাড়াতাড়ি ফোন তুলে হ্যালো বলল বিলু। ওপার থেকে একটা ধরা ধরা গলা ভেসে আসে, “ মা চলে গেল রে, বিলু”। খবরটার গুরুত্ব বুঝতে বিলুর কয়েক মূহুর্ত সময় লাগল। তারপর শক খাওয়ার মত খাটের ওপর বসে পড়ল বিলু। মাসিমার করোনা হয়েছিল বিলু জানত। গত সাতদিন হাসপাতালে ছিলেন, সেটাও। সুরজিত জানিয়েছিল ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হয়েছে, আশা করছিল বিপদ হয়ত কাটল এবার। বিলু আর খুব কিছু শুনতে পারছিল না…ফোনের ওপার থেকে টুকরো টাকরা শব্দ ভেসে আসছিল…কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট…বাইপ্যাপ…সিটি ভ্যালু…কিন্তু বিলু ঠিক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। ঘোরটা ভাঙ্গল সুরজিতের কান্নায়, “মাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারলাম না রে বিলু। ওরা ওখান থেকেই দাহ করে দেবে”। বিলু কী বলবে বুঝতে না পেরে ফোনটা রেখে দিল।


    ঘরের আবছা অন্ধকার ছাদে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বিলুর অনেক পুরোন কথা মনে পড়ছিল। সুরজিতের সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব, সেই সূত্রে ওর বাড়ি বিলুর যাওয়া আসা, মাসিমার সঙ্গে ওর আলাপ…এরকম অনেক কিছু। মাসিমা সাহিত্য পড়তে খুব ভালবাসতেন, বিশেষত বাংলা কবিতা। সেই সূত্রে বিলুর সাথেও নানারকম আলোচনা হত, কবিতার একাল সেকাল এরকম আরো অনেক কিছু। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা ওনার জীবনকে দেখার অন্যরকম দৃষ্টি ছিল। চূড়ান্ত সংসারি হয়েও, মাসিমা বলতেন, “এই জীবনের কোন মানে নেই রে। জন্মে গেছি তাই বেঁচে থাকার জন্য এই সব করে যাচ্ছি, কিন্তু ভেবে দেখ এই বিরাট মহাবিশ্বে, মহাকালের মাঝখানে তোর, আমার কারোরই জীবনের কোন মানে নেই”। পৃথিবী পালটে দেওয়ার আশা রাখা বিলুর তখন রক্ত গরম, পাল্টা তর্ক জুড়ত সে। কিন্তু যত দিন গেছে বিলুর ততই মনে হয়েছে  মাসিমাই হয়ত ঠিক। হয়ত এইসব কিছু অর্থহীন। কিন্তু সমস্যা হল এরকম ভাবনা নিয়ে একটা লোক কী করবে তাহলে? বিলুর তো ভগবানেও বিশ্বাস নেই। নাহলে হয়ত সে সন্ন্যাসী হওয়ার চিন্তা করত। এসব ভাবতে ভাবতে আবার বিলুর ফোন বেজে ওঠে, স্ক্রীনে ফুটে ওঠে ক্লায়েন্ট। বিলু জানে ঘড়িতে এখন ঠিক সোয়া পাঁচটা।



    অনেক দূর থেকে আসা ট্রেনের বাঁশির শব্দে বিলু উঠে পড়ে। সে বুঝতে পারে একটা ট্রেন ক্রমশ এগিয়ে আসছে আর তার শরীরের নিচে একটা ধাতব, ঠান্ডা অনুভূতি – সে শুয়ে আছে রেললাইনের ওপর। সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে আর দেখতে পায় রেললাইনের ওপর আরো অনেক লোক শুয়ে আছে – পুরুষ, নারী, শিশু। বিলু দেখতে পায় দূর থেকে ট্রেন আসছে, ও সবাইকে জাগানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। একসময় ট্রেন এসে প্রায় কুড়ি তিরিশ জনের ঘুমিয়ে থাকা দলটা কে কেটে দিয়ে যায়। রক্ত, ঘিলু আর নাড়িভুঁড়ি ছিটকে লাগে বিলুর মুখে, মাথায়। বিলুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিলু বোঝে ওর সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। ব্যাপারটা স্বপ্ন কিন্তু আসলে স্বপ্নও নয়। কয়েকদিন আগে লকডাউনের মধ্যে হেঁটে বাড়ী ফেরার চেষ্টা করছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা দল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল রেল লাইনের ওপর আর তখন ট্রেন এসে পিষে দিয়ে যায় তাদের -- মুম্বই থেকে তিনশ ষাট কিলোমিটার দূরে, ভোর সোয়া পাঁচটায়। সেই ঘটনাই বিলুর অবচেতন বেয়ে স্বপ্নে আশ্রয় করেছে।  পুরো যুক্তিজাল বুঝে ফেলার পরেও, এটা মনে করার পরেও যে সে এখন তার বাড়ির সুরক্ষার মধ্যে আছে, বিলু স্বস্তি পায় না।  একটা অসম্ভব কষ্ট গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে। তারপর আস্তে আস্তে কষ্টটা রাগের দিকে ঘুরে যায়। কী করবে বুঝতে না পেরে বিলু দেওয়ালে ঘুষি মারতে থাকে, একটা আলপিন নিয়ে আঙ্গুলে ফুটিয়ে ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে। তারপর পড়শিরা কী ভাববে জাতীয় ভাবনা এসে পড়ায় মুখে হাত চাপা দিয়ে, চুপ হয়ে যায়। ঠিক এই সময় আবার ফোনটা বেজে ওঠে, সোয়া পাঁচটা্র ক্লায়েন্ট কল। কিছু না ভেবে ফোনটা তুলে বিলু বলে ওঠে, “হ্যাঁ, গণেশ গুহ বলছি। বলুন কাকে খুন করতে হবে”? ওপারে খানিক্ষণের স্তব্ধতা, বিলু একবার ফোনটা কান থেকে সরিয়ে দেখে নেয় সেই নাম্বারটাই কিনা। নিশ্চিত হয়ে কানে দেওয়ার পরে শুনতে পায়, “আমি হোয়াটস্যাপ করছি। আপনার রেটটা”? বিলু বলে, “স্ট্যান্ডার্ড”। ওদিক থেকে ফোনটা কেটে যায়। ফোনটা রেখে বিলু ভাবতে থাকে মানুষ খুনের স্ট্যান্ডার্ড রেট কত হওয়া উচিত। খুনের তো একটা প্রস্তুতি লাগে। তাহলে কী ঘন্টা পিছু টাকা চাওয়া উচিত? না কি কিছুটা অ্যাডভ্যান্স আর বাকীটা কাজের পরে? খুনে ব্যর্থ হলে কী সে অ্যাডভ্যান্স ফেরত দেবে না রেখে দেবে? কারণ খুন করতে না পারা সব সময় খুনির ওপর নির্ভর করে না। এসব ভাবতে ভাবতে বিলু বিছানার ওপর টলে পড়ে যায়।



    সন্ধে সাড়ে ছটা। আর ঘন্টা তিনেক কাটিয়ে দিতে পারলে ডিনারের সময় হয়ে যাবে। তারপর আধঘন্টা এদিক ওদিক করলেই ঘুমের সময়। তার মানে আরো একটা দিন কেটে গেল। বিলু চিন্তা করতে থাকে এই তিন ঘন্টা কীভাবে কাটানো যায়। এমনিতে সময়ের একটা সুবিধে হল কিছু না করলেও সময় কেটে যাবেই। ভালো কাটা, খারাপ কাটা, উত্তেজনা, বোরডম – এসব অবশ্য অন্য আলোচনা। কিন্তু মোদ্দা কথা হল সময়ের কেটে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। বিলুর বাড়িতে টিভি নেই। বিলু মোবাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপে গুচ্ছ ফরোয়ার্ড যেগুলো অত্যন্ত স্টুপিড এবং ট্রিভিয়াল। এই দুটো শব্দেরই খুব যুতসই কোন বাংলা বিলু খুঁজে পেল না। বিলু আজকাল বুঝতে পারে তার চারপাশের বেশীরভাগ লোকই অসম্ভব স্টুপিড, তাদের সাথে কথা বলা যায় না। তার স্কুল-কলেজ জীবনে কিন্তু এরকম ছিল না। তাহলে কী এই সোশ্যাল মিডিয়া বিস্ফোরণের পর এত লোক বোকা হয়ে গেল? নাকি বেশীরভাগ লোক বরাবরই বোকা, সোশ্যাল মিডিয়ার তাদের বোকামি বিলু দেখতে পাচ্ছে। আবার এমনও হতে পারে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিলু সিনিক্যাল হয়ে যাচ্ছে। আবারও কোন যুতসই বাংলা খুঁজে পেল না বিলু। ফরোয়ার্ড ছাড়া আর যা সব মেসেজ সবই পড়া হয়ে গেছে। শেষ মেসেজ এসেছে তার ছোটবেলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথাগতর থেকে। কথোপকথনটা ছিল এরকমঃ


    -কেমন আছিস?


    -ভাল। তুই?


    -ভাল।


    -একদিন দেখা করা যাক।


    -হয়ে যাক।


    বিলু দেখেছে যবে থেকে হোয়াটস্যাপে ও তথাগতর সাথে মেসেজ চালাচালি করছে, ঠিক এরকমই কথার আদানপ্রদান হয়েছে। মাঝে মাঝে গোলমরিচের গুঁড়োর মত ছড়িয়ে রয়েছে তথাগতর বউ বাচ্চার খবর, বিলুর চাকরি, খুব বেশী হলে কতদিন দেখা হয় নি জাতীয় হাহুতাশ। কিন্তু কোনদিনই দেখা করা হয়ে ওঠে নি। আসলে বিলুও যে খুব দেখা করতে চায় তা নয়। বিলু দুচারবার বন্ধুদের সাথে দেখা করে দেখেছে তার আসলে খুব কিছু বলার নেই। অন্য মানুষের জীবন নিয়ে তার কোন আগ্রহও নেই। এছাড়া বন্ধুরা কেউই মদ না খেয়ে দেখা করতে পারে না। বিলু মদ খেলে একা একাই খেতে পছন্দ করে। কিন্তু সেটাতেও তার খুব আগ্রহ নেই।


    মোবাইলটা ঘাঁটতে গিয়ে দুদিন আগে আসা মেসেজটায় চোখ আটকে গেল। ক্লায়েন্টের মেসেজ। সেই ভদ্রমহিলা সেদিনই তার টার্গেটের ছবি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গে নাম আর ঠিকানা। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সোয়া পাঁচটার ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। বিলু পুরো ব্যাপারটা ভুলে যেতে পারত কিন্তু মাঝে মাঝেই মেসেজটাতে চোখ চলে যাচ্ছে। ঘড়িতে এখন সাতটা। তার মানে আরো আড়াই ঘন্টা কাটাতে হবে। বিলুর কৌতুহল হয় তার টার্গেট সম্পর্কে জানার। কেন কোন মহিলা লোকটিকে মারার জন্য গণেশ গুহকে ভাড়া করবে? লোকটা কি দাগী অপরাধী? মহিলা কোন পুরোন ঘটনার প্রতিশোধ নিতে চান? নাকী সম্পত্তির ব্যাপার? না ত্রিকোণ প্রেম? মূলত আড়াই ঘন্টা কাটানোর সঙ্কল্প নিয়ে বিলু ল্যাপটপ খোলে। একটা ওয়ার্ড ফাইলও খুলে ফেলে আর তার নাম দেয় টার্গেট। সেখানে হোয়াটস্যাপ থেকে লোকটার ছবি নিয়ে লাগিয়ে তলায় নাম ঠিকানা সব লেখে। টার্গেটের নাম বিনয় রায়। ছবিটা একটা গোলগাল, শ্যামবর্ণ, টাকমাথা একটা লোকের। লোকটাকে দেখে মনে হয় ভালমানুষ, নির্বিরোধী একটা লোক। একে কেন কেউ খুন করতে চাইছে? বিলু ফেসবুকে ঢুকে তার টার্গেটকে খুঁজতে শুরু করে।



    রাত দুটো। গত দুদিন ধরে টানা গবেষণা চালিয়ে বিনয় রায়ের জীবন এখন বিলুর ঠোঁঠের ডগায়। বিনয় রায় একটা বেসরকারী সংস্থায় চাকুরে। মাইনে খুব বেশী নয়। বিলুর আন্দাজ মাসে বিশ-পঁচিশ হাজারের বেশী নয়। এক মেয়ে,এক ছেলে আর বউ নিয়ে দক্ষিণ শহরতলীর একটা ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন। ভদ্রলোক পুরোন হিন্দি গান শুনতে ভালবাসেন আর খুব বোকা বোকা কবিতা লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন। লাইক পান ওই গোটা পঞ্চাশ মত। ওনার ফেসবুক বন্ধু শ-দুই । বিলুও মধ্যবয়সী সরকারি কেরাণী আশুতোষ রায় নাম নিয়ে বিনয়ের বন্ধু হয়ে গেছেন। বিনয় খুব সন্দেহপ্রবণ নন, ফেসবুক বন্ধুত্বে তাঁর আপত্তি নেই। এই দুদিনে বিলু, জিম ইন্সট্রাক্টর ভিকি হিসেবে ওনার মেয়ের সাথে আর উঠতি কবি শিনা নামে ওনার ছেলের সাথে ফেসবুক বন্ধুত্ব পাতিয়েছে। এছাড়া প্রবাসী বাঙালি শ্রাবণী রায়ের থেকে একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ওনার স্ত্রীর কাছেও গেছে। কিন্তু এখনও তার ঊত্তর আসেনি। এসবের নিট ফল হল বিলু এখন ওনাদের বাড়ির সবার গতিবিধি জানে। অবশ্য এই লকডাউনের বাজারে গতিবিধির খুব কিছু নেই। বিনয়বাবুর ছেলে আর মেয়ে পড়াশুনো করে এবং ওনার স্ত্রী গৃহবধূ। সব মিলিয়ে নিপাট মধ্যবিত্ত পরিবার। বিলু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না এরকম একটা লোককে খুন করার দরকার কী পড়ল। বিলু কয়েকবার তার ক্লায়েন্টের নাম্বারে ফোন করে দেখেছে। প্রতিবার সুইচড অফ। বিলু ভেবে দেখেছে খুনের সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ ব্ল্যাকমেল। বিনয় হয়ত কিছু জেনে ফেলেছিলেন ক্লায়েন্টের সম্পর্কে, তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া পৃথিবী থেকে। এই একটা ব্যাপার বিলুর মাথার মধ্যে খচখচ করছে আজ কয়েকদিন হল। কিন্তু গণেশ গুহর কাছে খুন তো একটা পেশা। বিলু গণেশ গুহর মত ভাবতে চেষ্টা করে। গণেশ গুহ কী সিনেমার মত শুধু দুষ্টু লোকেদের মারে? ধরা যাক যদি গণেশ তা করেও, সে জানবে কী করে কোন টার্গেট ভাল আর কে খারাপ? বিলুর মাথা ঝিমঝিম করে, ঘুম পায়। সে শুতে যাওয়ার আগে ক্লায়েন্টের হোয়াটস্যাপে মেসেজ করে, ““বাট হোয়াই? কেন”?


    সকাল আটটায় ঘুম ভাঙ্গলে মোবাইল তুলে বিলু দেখে জ্বলজ্বল করছে ক্লায়েন্টের উত্তর, “ডাস ইট ম্যাটার ”?



    গত দশ দিনে বিনয়ের গতিবিধি মোটামুটি জানা হয়ে গিয়েছে বিলুর। বিনয়ের বাড়ি আসলে বিলুর বাড়ির থেকে খুব দূরে নয়। কিলোমিটার দুয়েক হবে। লকডাউন আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে। তাই সাইকেল নিয়ে বিনয়ের বাড়ির সামনে চক্কর দিতে খুব অসুবিধে হয় নি বিলুর। তাছারা এখন সবাই মুখোশের আড়ালে এবং মুখোমুখি। তাই মুখ মনে রাখার ঝামেলা নেই। আরো সুবিধে হল বিনয়ের বাড়ির সামনে একটা পার্ক আর তার গায়ে লাগোয়া চা এর দোকান। পার্ক আর চা-এর দোকানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায় এরকম বেকারের অভাব কলকাতায় নেই। তাই কারো কিছু মনে হয় না। যদিও অফিসের কাজে সমস্যা হয়েছে। সারারাত জেগে খুন নিয়ে চিন্তা করার কারণে বিলু দিনের বেলা অফিসের কাজ খুব মন দিতে পারে না। তারপর বিনয়ের বাড়ির চারপাশ রেইকি করার কারণে দুচারদিন ডুবও দিতে হয়েছে। তবে এই সময় যখন চেনা লোক দুমদাম মরে যাচ্ছে, তাই অসুস্থতার অজুহাতকেও অফিসের বস প্রশ্রয় দিয়েছে। বিলু দেখেছে বিনয় রোজ সকালে দুধ আনতে বেরোয় আর দুদিনে একবার বাজারে। এছাড়া বিনয়ের অফিস বোধহয় খুলে গেছে, তাই একটু দেরি করে হলেও অফিস যায় সে। সম্ভবত রোজ যায় না, শিফট এ কাজ। বিনয়ের অফিস বাইপাসের ধারে, রুবির আশেপাশে। বিলু একদিন তার এক বন্ধুর বাইক ধার করে বিনয়ের স্কুটার ফলো করেছিল। বিনয়ের বাড়ির আর কেউ খুব একটা বেরোয় না। আপাততঃ বিলুর সমস্যা দুটো। এক, খুনের অস্ত্র আর দুই, খুনের জায়গা। সিনেমার পেশাদার খুনিরা পিস্তল ব্যবহার করে। কিন্তু বিলুর জন্য পিস্তলের সমস্যা অনেক। প্রথমত, বিলু জানে না পিস্তল কোথায় পাওয়া যায়। তাছাড়া বেআইনি পিস্তল কেনাবেচার দিকে পুলিশেরও নজর থাকে। খুনের পরে খোঁজ পড়লে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। দ্বিতীয়ত, বিলু পিস্তল চালাতে জানে না আর তৃতীয়ত, গুলির শব্দ ঢাকা মুশকিল। বিষ একটা ভালো উপায়। বিলু ইন্টারনেটে বিষ  খুঁজতে গিয়ে তিনটে বিষের খুঁজে পেল – হেমলক, স্ট্রিকনিন আর কিউরারে। হেমলক সক্রেটিসের জন্য বিখ্যাত। স্ট্রিকনিন আর কিউরারের উল্লেখ বহু ডিটেকটিভ গল্পে পেয়েছে বিলু। যেটা বিলু ইন্টারনেট পড়ে জানতে পারল সেটা হল ঊনবিংশ শতাব্দীতে ড থমাস নিল ক্রিম নামে এক সিরিয়াল কিলার, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা মিলিয়ে অন্তত  আটজনকে এই বিষ দিয়ে খুন করেন। এই তিনটি বিষই ফুসফুসকে বিকল করে দিয়ে মৃত্যু ঘটায়। বিলু ডার্ক ওয়েবে খুঁজে এই তিনটে বিষ পেয়েও গেল। কিন্তু তবু বিষ দিয়ে খুনটা মনে হয় না গণেশ গুহর সাথে যায়। অন্তত বিলুর তাই মনে হয়।  অন্য কিছু, অন্য কিছু চাই। ভাবতে ভাবতে মনে হল গলায় স্টিলের তার পেঁচিয়ে মারা। এটার সাথে হেমলক দিয়ে খুনের একটা মিল আছে। দুটোতেই, যে মরবে সে অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতে মরবে। কিন্তু তবু গলায় তার পেঁচিয়ে মারাটা যেন আরো ডিরেক্ট, আরো নৃশংস। বিলুর মাথায় যে গণেশ গুহ সে এরকমই।  বিলু কোথায় যেন পড়েছিল বা দেখেছিল এরকম খুনের পদ্ধতি। সিনেমা নয়, বাস্তবের কোন চরিত্র। কিন্তু কে এভাবে খুন করত? কোথায়? এদিক ওদিক গুগল করতে করতে পেয়ে গেল নামটা – আনোয়ার কঙ্গো। ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে ইন্দোনেশিয়াতে কম্যুনিস্ট সন্দেহে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে খুন করা হয়। সেই সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ খুনে বাহিনীর নেতা ছিল আনোয়ার। সে নিজে হাতে প্রায় হাজারের ওপর কম্যুনিস্ট খুন করে, গলায় তার পেঁচিয়ে। মনে পড়ে যায় বিলুর। অনেকদিন আগে সে এই নিয়ে ডকুমেন্টারি দেখেছিল একটা, সেখানে কঙ্গোকে হাজির করেছিলেন পরিচালক। বছর খানেক আগে কঙ্গো মারা গেছে, ৭৮ বছর বয়সে – খবরে পড়েছিল বিলু। হয়ত সেই কারণেই খুনের এই পদ্ধতিটা মনে থেকে গেছে। বিলু ঠিক করে ফেলে বিনয় রায় কে সে দার্শনিকের মৃত্যু নয়, কম্যুনিস্টের মৃত্যু দেবে।



    সবকিছু হয়ে যাওয়ার পরে বিলুর জন্য যেটা সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো সেটা হল খুনের জায়গা। ইতিমধ্যে বিলু দুধ আনার ছুতোয় আলাপ জমিয়েছে বিনয়ের সাথে। বিনয়কে চা খাবার অছিলায় নিজের বাড়িতে আনাই যায়। কিন্তু নিজের বাড়ি থেকে একটা লাশ গায়েব করা সহজ না। সবথেকে ভাল হয় বিনয়ের বাড়িতে কাজটা সারতে পারলে। কিন্তু সেখানে ওর বউ, ছেলে, মেয়ে আছে। বিলু অপেক্ষা করতে থাকে। সুযোগ আসে কিছুদিনের মধ্যেই, নেহাতই কপালজোরে।  দুধের দোকানে গিয়ে বিলু জানতে পারে বিনয়ের পরিবারের সবাই করোনা হয়ে সেফ হোমে। বিনয়ের উপসর্গ নেই আর পরীক্ষার রিপোর্টও আসে নি এখনও। তাই বাড়িতে, আইসোলেশনে । বিলু ঠিক করে দেরি করা ঠিক নয়। কিছু চাল, ডাল পৌঁছে দেওয়ার অছিলায় বিলু বিনয়ের বাড়ির দরজায় ধাক্কা দেয় বিকেল চারটেয়। বিনয়ের সাথে দুধের দোকানেই আলাপ জমিয়েছিল বিলু। তাই একটুও সন্দেহ না করে দরজা খুলে দেয় বিনয়। এরকম একটা অসময়ে বিলুর মত একজন অপরিচিত সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে দেখে কিছুটা যেন আপ্লুতই মনে হয় বিনয়কে। অন্তত বিলুর তাই মনে হয়। “বাড়িতে তো সেরকম কিছু নেই। এককাপ চা খান বরং”। বিলু রাজি হয়। তার হাতে অনেক সময় আর তাছাড়া বিকেলে চা খাওয়া তার অনেকদিনের অভ্যেস। বিনয় চা করতে রান্নাঘরে ঢোকে। বিলু তাকিয়ে দেখে ফ্ল্যাটের চারপাশ। সাধারণ গৃহস্থ ফ্ল্যাট। ঠাকুর পূজোর জায়গা, দেওয়ালে দুটি ছবিতে মালা দেওয়া। এনারা সম্ভবত বিনয়ের স্বর্গত মা-বাবা। একটা রট আয়রনের সোফা সেট যার হাতলে বিশ্রী সোনালি রঙ। গদির রঙও চোখে লাগার মত ক্যাটকেটে। একটা শো-কেস যার মধ্যে কিছু বিবর্ণ দিঘার স্মৃতি লেখা পেনস্ট্যান্ড, কিছু পুরীর জগন্নাথ ছাপ শো-পিস আর একটা সমুদ্রের ধারে এক দম্পতি আর তাদের ছেলে মেয়ের ছবি। সম্ভবতঃ বিনয়ের পরিবার।  ইংরিজিতে garish বলে একটা শব্দ আছে। এর ঠিকঠাক বাংলা প্রতিশব্দ বিলুর জানা নেই। কিন্তু তার উদাহরণ এই ফ্ল্যাট। বিলু খেয়াল করে দেখেছে বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাটে দুরকমের অন্তর্সজ্জা থাকে। একটা হল বিনয়ের ফ্ল্যাটের মত, আরেকটা বিষ্ণুপুরী ঘোড়া আর যামিনি রায় ওয়ালা। বিলুর কাছে দুটোই অসহ্য। রান্নাঘর থেকে চামচের ঠুংঠাং ভেসে আসছে, কিছুক্ষণ পরেই বিনয়ও এসে পড়বে। বিলু একবার পকেটে হাত দিয়ে স্টিলের তারটা ঠিক আছে কিনা দেখে নেয়। করোনার জন্য তার মুখে মুখোশ আর হাতে গ্লাভস। তাই কোথাও হাতের ছাপ থাকার ভয় নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে বিনয় চা নিয়ে আসে, দুধ,চিনি এলাচ দেওয়া মশলা চা। মুখোশ নামিয়ে চা খেতে থাকে বিলু। লক্ষ্য করে বিনয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টে। কিছুটা অস্বস্তি থেকেই চা খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায় বিলু। ফ্ল্যাট দেখার অছিলায় ঘুরতে ঘুরতে এসে দাঁড়ায় বিনয়ের পেছনে আর তারটা বের করে ঝটিতি পেঁচিয়ে দেয় বিনয়ের গলায়। বিনয় ছটফট করতে থাকে একটু অক্সিজেনের জন্য। কিন্তু বিলু শরীরের সমস্ত ওজন দিয়ে স্থির থাকে। আস্তে আস্তে বিনয়ের ছটফটানি কমতে থাকে। বিলু বোঝে অক্সিজেনের অভাব বিনয়ের মস্তিষ্ককে অচল করে দিচ্ছে। আর এক মিনিট বড়জোর। ঠিক তাই হয়, বিনয়ের মাথা ঝুলে আসে। পালস দেখে বিলু বোঝে তার প্রথম কন্ত্রাক্ট কিলিং এ সে সফল।



    বিলু ধীরে সুস্থে তার নিজের চেয়ারে এসে বসে। উল্টোদিকের চেয়ারে বিনয়ের লাশ। সামনের টেবিলে বিনয়ের ফোন। লক নেই। ফোনটা তুলে হোয়াটস্যাপ খোলে বিলু। হয়ত সেই পুরোন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার তাগিদেই। হোয়াই? কেন এই খুন? মেসেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটা চেনা নাম্বারে – তার ক্লায়েন্ট। উৎসাহ নিয়ে মেসেজটা খোলে বিলু। হয়ত এখানেই পাওয়া যাবে রহস্যের চাবিকাঠি। মেসেজ খুলে সারা শরীর হিম হয়ে যায় বিলুর। সেখানে তার নাম, ছবি আর ঠিকানা পাঠিয়েছে ক্লায়েন্ট। বিলুও তাহলে টার্গেট। কিন্তু কেন? হোয়াই? প্রথমটা খুব ভয় পায় বিলু। তারপর বিনয়ের লাশের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সবাই গণেশ গুহ হতে পারে না। বিলু পেরেছে, বিনয় ফেল। মুখে একটা হাসি খেলে যায় বিলুর, সাফল্যের হাসি। তার মধ্যে একটা কিলার ইন্সটিঙ্কট আছে, তার সহপাঠীরা বলত। সেটা যে এভাবে আক্ষরিক ভাবে ফলে যাবে বিলু ভাবে নি কখনো। নায়ক সিনেমার উত্তম কুমারের মত টেবিলে ঘুষি মেরে বলে ওঠে, “ আই উইল গো টু দ্য টপ, দ্য টপ,…”। তৃতীয় টপ বলার আগেই হঠাৎ বিলু বোঝে সে শ্বাস নিতে পারছে না। সে দুহাত দিয়ে গলা চেপে ধরে, হাঁ করে বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফুসফুসে কিছু পৌঁছয় না। বিলু বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে। তার চোখ যায় সামনের টেবিলে রাখা তার চায়ের কাপের দিকে আর তারপর সামনের চেয়ারে বসা বিনয় রায়ের লাশের দিকে। দৌড়ে রান্নাঘরে ঢোকে বিলু আর দেখতে পায় একটা শিশি। সে বোঝে বিনয় রায় তাকে দার্শনিকের মৃত্যু উপহার দিয়েছে। তার মেয়াদ খুব বেশি হলে আর কয়েক মিনিট। হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ক্লায়েন্টের ফোন। বিলু ফোন তুলে চিৎকার করে ওঠে, “বাট হোয়াই? কেন”? ওদিক থেকে নারীকন্ঠ ভেসে আসে, “ডাস ইট ম্যাটার নাও”? ফোন ছুঁড়ে ফেলে ফুসফুসে অক্সিজেন নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে নিস্তেজ হয়ে আসে বিলু। ভাঙ্গা স্ক্রীনের মধ্যে দিয়ে মোবাইল জানান দেয় এখন বিকেল সোয়া পাঁচটা।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১০ জুন ২০২১ | ২৭৬২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
    আরও পড়ুন
    বটগাছ - Anirban M
    আরও পড়ুন
    লাইক-ইট - Anirban M
    আরও পড়ুন
    বর্ম - Anirban M
    আরও পড়ুন
    প্লাবন - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ১১ জুন ২০২১ ১০:৫৩494839
  • লেখার মুন্সিয়ানা চমৎকার!

  • Ramit Chatterjee | ১১ জুন ২০২১ ১৬:৩৬494844
  • ফাটাফাটি। পারফেক্ট শর্ট ফিল্ম। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন