এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  স্মৃতিকথা

  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি

    প্রবুদ্ধ বাগচী লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ১৬ জুলাই ২০২৩ | ৫১৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি
    প্রবুদ্ধ বাগচী
     
    (পূর্ব প্রকাশিতের পর )

    পর্ব ১৫

    দেখতে দেখতে ‘কলেজ স্ট্রিটের পাঁচালি’র প্রকাশসীমা ইতিমধ্যেই ছ’মাস পেরিয়ে সাতে পা রেখেছে । এবার আস্তে আস্তে গুটিয়ে নেওয়ার পালা। অসীম কালপ্রবাহে চল্লিশ/ পঁয়তাল্লিশ বছর তেমন একটা কোনো বিরাট সময়সীমা নয় ঠিকই কিন্তু মানবজন্মের অনুপাতে এটা একজন মানুষের গড় আয়ুর অন্তত সত্তর/পঁচাত্তর ভাগ যা একেবারে অস্বীকার করা চলে না । আরেকটা বিষয় হল, এই সময়ের পরিধিটা ঠিক কেমন ছিল সেটাও একটা বিচার করার মতো ব্যাপার। মানবসভ্যতার নিরিখে আগুন আবিষ্কার বা চাকা আবিষ্কার যেমন একেকটা ‘সভ্যতার উল্লম্ফন’ বলে ধরে নেওয়া হয় ঠিক একইভাবে আধুনিক ইতিহাসের অগ্রগতিতে পশ্চিমের ‘শিল্পবিপ্লব’ বা ‘বিশ্বযুদ্ধ’ একেকটি মাইলফলক যা গোটা দুনিয়ার মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনধারার ওপর স্থায়ী প্রভাব রেখে গেছে।

     মাও সে তুং এর একটা কবিতাকে অবলম্বন করে একসময় প্রতুল মুখোপাধ্যায় একটা গান বেঁধেছিলেন —- ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ যা আজও নানা জায়গায় গীত হয়। এই গানে যেমন বলা হয়েছিল কিছু কিছু মানুষের মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারি অর্থাৎ তার তাৎপর্য অসীম আর কিছু কিছু মৃত্যু পালকের মতো হাল্কা তার মানে কিছুই মূল্য নেই। ঠিক তেমনি কোনো কোনো সময়ের পরিসীমা এমন হয়, যার বন্ধনীর মধ্যে রেখে সমাজ-সাহিত্য ও জীবনযাপনকে দেখলে মনে হতে থাকে এই সময়ের মধ্যে তার বদল ও রূপান্তর খুব প্রত্যক্ষ। বিপরীতপক্ষে এমন একটা সময়ও থাকতে পারে যা তুলনায় অনেক নিস্তরঙ্গ এবং যার অভিঘাত তেমন জরুরি নয়। বাংলা সাহিত্যের কিছু কিছু লেখায় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে গ্রাম-মফসসলের এমন একটা ঘটনাহীন সময়ের জলছবি পাওয়া যায়, যা নতুন করে তরঙ্গক্ষুব্ধ হয়ে উঠল যুদ্ধ-মন্বন্তর ইত্যাদি সব ঘিরে। একটু খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে বিগত চল্লিশ/পঁয়তাল্লিশ বছরের পরিসীমার মধ্যে বাঙালির জীবনের বদল একেবারে চোখে পড়ার মতো উজ্জ্বল। এই সময়কালের মধ্যে বিভাজিকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নব্বইয়ের দশক । মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যে বাঙালি অন্ততপক্ষে কলেজ স্ট্রিট-সংশ্লিষ্ট মেধাচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন,  নানাভাবে তাঁদের চিন্তা-চেতনা-মনন-সমাজভাবনা ও অর্থনীতি পাল্টে পাল্টে গেছে এই সময়ের মধ্যে । নব্বইয়ের গোড়ায় সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ‘পতন’ দিয়ে যে অভিঘাত তৈরি হয়েছিল ক্রমশ তার পালে হাওয়া লাগিয়েছে বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের নতুন হাওয়া, তার পরে এসে হাত ধরেছে ‘প্রযুক্তি বিপ্লব’ —-- সব উল্টেপাল্টে গেছে আমাদের সামনে। কনজিউমারিজম তার বিশাল ডানায় গ্রাস করেছে ব্যক্তি ও সমাজজীবন, খোলস পাল্টে দেখা দিয়েছে নতুন অর্থনৈতিক দর্শন। দেশের ভিতর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে আগ্রাসী ধর্মীয় মৌলবাদ যা আরও পুষ্ট হয়ে আজ ফ্যাসিবাদের ষোলোকলা পূর্ণ হওয়ার পথে। পাশে পাশে বাঙালির ‘বামপন্থী’ মেজাজেও দেখা দিয়েছে ক্ষয়রোগের স্পষ্ট ছাপ। যে বামপন্থার দর্শন একদিন বাঙালিকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল সেই স্বপ্নের চৌহদ্দির ভিতর কলেজ স্ট্রিট- তো অবশ্যই ছিল। উদবাস্তু স্রোতে দিশাহারা বাংলার সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনে ঘরহারা মানুষগুলো ‘হিন্দু মহাসভা’ বা ‘জনসঙ্ঘ’- র বিষাক্ত প্রচারকে হারিয়ে দিয়ে বামপন্থীদের তাঁদের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বলে চিহ্নিত করেছিল —-- তাঁদের পুষ্ট করেছিল শর্তহীন সমর্থন দিয়ে। একদিন সেই বামপন্থীরাই সে বিশ্বাসের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবার কথা বিস্মৃত হলেন। একুশ শতকের প্রথম দশক পেরোতে না পেরোতেই তাঁদের রাজ্যপাট উঠে গেল শুধু নয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষের ফলা ক্রমশ নিজেদের ধারালো করে তুলে আজ রাজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় তাঁরা নিজেদের ‘জনপ্রতিনিধি’ নির্বাচন করে নিতে পেরেছেন। বাম-বিরোধী শক্তি আজ শাসনক্ষমতায় বসে বাঙালির মন- মেজাজকে ঘুরিয়ে দিতে পারছেন একেবারে অন্য শাসন-প্রণালীর দর্শনে । আর এই যাবতীয় বদল , সমূহ পরিবর্তনের সাক্ষী কলেজ স্ট্রিট। 

    আশির দশকে আমরা যখন স্বাধীনভাবে  কলেজ স্ট্রিটে আনাগোনা শুরু করি আর আমরা যারা আজও কলেজ স্ট্রিটের পথে হেঁটে হেঁটে নিজেদের স্মৃতির তরবারিকে আরও ধারালো করে তুলতে চাই তাঁদের সামনেও ধরা পড়ে এই বিপুল পরিবর্তনের প্রাকার। এই আমরাই আশির দশকে পোস্টকার্ডে চিঠি লিখতাম আর আজ হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠাতে শিখে গেছি অনায়াসে। আশির দশকে আমাদের কারোর বাড়িতে একটা সাবেকি ল্যান্ড টেলিফোনও ছিল না , আজ আমরা কেউ কেউ দুটি-তিনটি করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারি। কোনো সামান্য খবরাখবরের জন্য যে আমাদের এখানে-ওখানে ঘুরে ঘুরে তা জোগাড় করতে হত, আজ গুগলের কাছে একটা দুটো শব্দ লিখে দিলেই অফুরান তথ্যের সাগরে আমরা হাঁসফাঁস করি। আমরা দেখেছি একটা সময়   ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গেলে কী জটিল পদ্ধতিতে জাবদা খাতায় অ্যাকাউন্টের হিসেব রাখা হত, কী মান্ধাতার আমলের প্রথায় সই-যাচাই করা হত গ্রাহকের —- আজ ডেবিট কার্ড-এর দৌলতে  আর এটিএম মেশিনের কল্যাণে পাড়ায় পাড়ায় টাকা তোলার বন্দোবস্ত দিন-রাত যে কোনো সময় । আশির দশকের গোড়ার দিকে ট্রেনের রিজার্ভেশন ব্যবস্থার কথা মনে করা যাক —- হাতে লেখা টিকিটের চিরকুট, রিজার্ভেশন কাউন্টারে দালালের দৌরাত্ম্য। আজ সেখানে ঘরে বসে হাতের মুঠোয় রিজার্ভেশন ও মোবাইলেই পাওয়া যায় ‘সফট কপি’ টিকিট । এখন নাটক সিনেমার টিকিটও পাওয়া যায় ‘অনলাইন’ ব্যবস্থায়, বইও কিনতে পারা যায় ওই একই প্রক্রিয়ায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও  বিপুল অগ্রগতি আজ অনেকটাই আমাদের নাগালের মধ্যে —-- বিশেষত অস্থি, স্নায়ুরোগ, হৃদরোগ, কিডনির চিকিৎসায় বহু ধরনের চিকিৎসায় এখন উন্নত মানের চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসাও আজকে অনেক সুলভ হয়ে উঠেছে —- এটাও নয়ের দশকের উন্মুক্ত অর্থনীতির একটা প্রান্ত। আসলে সব থেকে উল্লেখ্য  বিষয় হল, গত তিরিশ বছরে সমস্ত রকম পণ্যের এক বিপুল বাজার আমাদের চারদিকে উঠে গেছে, কারাপ্রাচীরের মতো। এর গোলোকধাঁধা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা প্রায় অসম্ভব। আগে তথাকথিত ‘জাপানি কোম্পানির’ ইলেক্ট্রনিক পণ্যের জন্য আমরা লুব্ধ হয়ে থাকতাম —- আজ কম্পিউটার-নির্ভর সমস্ত ইলেক্ট্রনিক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার আমাদের সামনে উন্মুক্ত, একইভাবে পোশাক, জুতো, খাবার , গাড়ি, টিভি, রেস্তোরাঁ সবকিছুই আজ ‘গ্লোবাল’  ব্র্যান্ড-নির্ভর। এবং মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে মধ্যশ্রেণির হাতে বেশ কিছুটা বাড়তি অর্থের সংস্থান হয়েছে, তাঁরা অনায়াসে এইসব কিছুর নাগাল পেতে পারেন, একই সঙ্গে এইসবের নাগালের বাইরেও আছেন এক বিরাট সংখ্যক মানুষ। খোলা অর্থনীতি আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিভাজিকাকে যে প্রশস্ততর করেছে এই বিষয়ে পণ্ডিত-গবেষকরা সকলেই প্রায় সহমত।

    কিন্তু এই বিপুল পরিবর্তনের কতটুকু ঢেউ লাগল কলেজ স্ট্রীটের শরীরে ? বাংলা প্রকাশনা জগতের একটা বড় সীমাবদ্ধতা ছিল, সেটি বড় বেশি কলেজ স্ট্রিট কেন্দ্রিক। বলতে গেলে, সারা রাজ্যেরই প্রকাশনা ব্যবস্থার রাজধানী এখানেই। গত একশো বছরের হিসেব নিলে কলেজ স্ট্রিটের এই আয়তনের বাইরে বইয়ের দোকান বলতে ছিল ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে ‘ ডব্লু নিউম্যান অ্যান্ড কোম্পানি’, এসপ্ল্যানেড অঞ্চলে ‘থ্যাকার স্পিঙ্ক অ্যান্ড কোম্পানি’ , তারপরে হল পার্ক স্ট্রিটের ‘ অক্সফোর্ড বুক স্টোর’ — এর কিছুটা পরে চল্লিশের দশকে রাম হালদার একটি বইয়ের দোকান করেন ধর্মতলা স্ট্রিটে ( আজকের লেনিন সরণি) ‘জ্যোতি’ সিনেমা হলের বিপরীতে ‘কমলালয় স্টোর্স’ এর ভিতর, যার সঙ্গে একটা কফি শপ- ও। কিন্তু এগুলো সবই ছিল মূলত ইংরিজি বইয়ের দোকান যেখানে বিদেশি বই পাওয়া যেত, বাংলা বই বা পত্র-পত্রিকা পেতে গেলে কলেজ স্ট্রিটের কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু  বিশ্বায়িত অর্থব্যবস্থায় বাণিজ্যের  এই  কেন্দ্রিক হওয়ার প্রবণতা খুব কাঙ্ক্ষিত নয়। খুব কাছ থেকে কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা ব্যবস্থাকে নিরীক্ষা করে মনে হয়েছে, আজও কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা- ব্যবস্থা  নিজের পিঠে দুটো ডানা লাগিয়ে বৃহত্তর কলকাতা বা জেলা শহরগুলিতে সেইভাবে উড়াল দিতে পারেনি। স্বীকার করছি, কিছু বড় প্রকাশক নিজেদের বই বিপণনের জন্য শহরতলি ও জেলা শহরগুলিতে তাঁদের ছোট ছোট বিপণন কেন্দ্র খুলেছেন। কলেজ স্ট্রিটের ঘেরা চৌহদ্দির বাইরে এসে মননশীল প্রকাশন খুলেছেন কেউ কেউ  —- ‘আলোপৃথিবী’, ‘ধানসিঁড়ি’, ‘কারিগর’, ‘দি কাফে টেবিল’, ‘বুক পোস্ট’  এমনই কিছু উল্লেখ্য নাম। বেশ কিছু ভাল অনলাইন বাংলা  বই-বিপণি আজ রয়েছে,  যারা ভাল পরিষেবা দিচ্ছেন —- ‘বই বাংলা’, ‘ডাকঘর’ ইত্যাদি । কিন্তু বিশ্বায়ন -এর প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতিতে গত তিনদশকে মফসসলগুলিতে যে বিপুল মধ্যশ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে যার প্রতিক্রিয়ায় আজ জেলা বা মহকুমা  শহরগুলিতেও ঝাঁ-চকচকে শপিং মল, আইনক্স, বেসরকারি হাসপাতাল ও স্কুলের রমরমা —-- এই উপভোক্তারা সকলেই বইয়ের পাঠক হয়তো নন, কিন্তু একটা অংশ আছেন যারা নিজেদের হাতের কাছে বই পেলে কিনতে চান। কোভিডের পরে যখন অন্য অনেক বিষয়ের অনলাইন বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে, কিন্তু বই বিক্রির ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা এখনো কলেজ স্ট্রিটের বিচিত্র ও বহুমুখী প্রকাশনার সাম্রাজ্যকে তাঁদের সকলের নাগালে আনতে পেরেছে বললে ভুল বলা হবে। অনলাইন বা অফলাইন কোনো ব্যবস্থাই শাখা মেলতে পারেনি কলেজ স্ট্রিটে।

    প্রায় দুবছরের কোভিড- মহামারী এবং তারই মধ্যে ‘আম্ফান’ -এর প্রলয় আসলে কিন্তু কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা ব্যবসার মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে অনেকটাই। তার একটা বড় কারণ, নানান পরিসরে আজ নিবিড় পুঁজির বিনিয়োগ হলেও বাংলার বই-ব্যবসা তার আশ্চর্যরকম ব্যতিক্রম। মুষ্টিমেয় বড় মাপের প্নেরো-কুড়িটি প্রকাশনা ছাড়া বেশিরভাগ প্রকাশনাই স্বল্প পুঁজির ওপর নির্ভরশীল। আর কলেজ স্ট্রীটের সারি সারি বই-বিপণির বেশিরভাগই তো বইয়ের বিক্রেতা, প্রকাশক তো হাতে গোনা। এটা স্পষ্ট বোঝা যায় বইমেলার সময় —- সেখানে আটশোর ওপর স্টল হয় যার বেশিটাই পুস্তক-বিক্রেতা, পাঁচমিশেলি বই বিক্রি করে তারা সারা বছরের খরচ তোলে। এটা কোনো বাণিজ্যের সুলক্ষণ বলে মনে করা চলে না। এর পাশাপাশি,  ‘আম্ফান-ঝড়’ ও কোভিড-সঞ্জাত দীর্ঘ লকডাউন তাঁদের যে সমূহ আর্থিক ধাক্কা দিয়েছে তাতে তাঁদের অনেকেই ‘সবহারা’ হয়েছেন —- এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আমাদের পাবলিক ডোমেনে তেমন আসেনি, আসেনি সরকারি সাহায্য বা পুনর্বাসন প্যাকেজ। এই লেখা চালু থাকতে থাকতেই খবর পেয়েছি বিশিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা ‘প্রকাশ ভবন’ বন্ধ হয়ে গেল, তাঁদের মতো বিশিষ্ট প্রকাশনে হাল ধরার মতো লোক নেই।  আরেক খ্যাতসংস্থা ‘এম সি সরকার’ (প্রতিষ্ঠা ১৯১০)  একেবারে জীর্ণ, খুব সম্প্রতি তাদের দোকানে গিয়ে মনে হল, যে-কোনোদিন তাঁরা ঝাঁপ গুটোবেন। মন খারাপ হয়ে যাওয়ার মতোই বিষয় —- এই ‘এম সি সরকার’ এর দোকানেই বসত ‘মৌচাক’ (প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক : সুধীরকুমার সরকার)- এর নিয়মিত আড্ডা —-- কত লেখক এখানে এসে নরক গুলজার করতেন। বুদ্ধদেব বসুর আত্মস্মৃতি- তে পড়েছি, হাতে টাকা না-থাকলে চুপি চুপি এসে তিনি হাত পেতেছেন প্রকাশকের কাছে দশ/পনেরো টাকা ধার নিয়ে গেছেন, পরে লিখে শোধ করে দেবেন এই কড়ারে। শম্ভু মিত্রের অনেক নাট্য-বিষয়ক বই —-- ‘সন্মার্গ সপর্যা’, ‘নাটক রক্তকরবী’ ‘চাঁদ বণিকের পালা’ —- এইসব বইয়ের একচেটিয়া প্রকাশক ছিলেন এরাই। এঁরাই ছেপেছিলেন রাজশেখর বসুর ‘মহাভারত’ ও ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’ , ছেপেছেন শোভা সেনের আত্মজীবনী ‘নবান্ন থেকে লালদুর্গ’  ।  

    একটা সময়  সোভিয়েত রাশিয়া থেকে আসা বাংলা ও ইংরিজি বই ও পত্রিকার সোনার খনি ছিল ‘মনীষা গ্রন্থালয়’ । ছেলেবেলার সেই দামি ঝকঝকে কাগজে রঙিন ছবি দেওয়া ‘সোভিয়েত দেশ’ নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যেত সেখানে, ‘দুনিয়া কাঁপানো দশদিন’ ওখান থেকে কেনেনি আমাদের সময়ে তেমন পাঠক খুঁজে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ । শুধু তাই নয়, মায়াকভস্কির কবিতা- সংগ্রহ, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘পৃথিবীর পাঠশালা’,মিখাইল শোলোকভ এর ‘ধীরে বহে ডন’ ( মূল বইটির নাম :And quiet flows the Don), নিকোলাই অস্ত্রভস্কি-র ‘ইস্পাত’, আন্তন চেকভ-এর গল্প-সংকলন সব উজাড় করে কিনেছি এক সময়। অত্যন্ত সস্তায় তারা বিক্রি করতেন মার্ক্স ও লেনিনের সুমুদ্রিত রচনা সংগ্রহ ( তিন/ চার খন্ডে), আলাদা আলাদা করে পাওয়া যেত লেনিনের ‘কী করিতে হইবে’ (what is to be done), ‘এক কদম আগে দুই কদম পিছে’ (one step forward two step backward), ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’(State and Revolution) বা কার্ল মার্ক্স এর ‘ক্যাপিটাল’ এর সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। শুধু বিপ্লবের কথাই নয়, সেখানে মিলত বিজ্ঞান-বিষয়ক চমৎকার সব বই যাদের লেখক ছিলেন ওয়াই পেরেলম্যান, আইজ্যাক আসিমভ ইত্যাদিরা, মিলত উচ্চতর পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা গণিতের বই। ওই বই-বিপণিতেই একবার সন্ধান পেয়েছিলাম একটি আশ্চর্য বই-এর,  তার নাম ‘ Book of the Blockade’ —--- ১৯৪১ এর সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৪ এর জানুয়ারি পর্যন্ত (আটশো বাহাত্তর দিন)  হিটলারের নাৎসি-বাহিনী রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ অবরোধ করে রেখেছিল এবং স্টালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত-বাহিনীর মরিয়া প্রতিরোধের সামনে অবশেষে হিটলার নতি স্বীকার করে ফিরে যায় —- নাৎসি-বাহিনীর এই পশ্চাদপসারণের পাশাপাশি রেড আর্মির গৌরবদীপ্ত শৌর্যমণ্ডিত বিজয় না-ঘটলে সেদিন পৃথিবীর চেহারাটাই পাল্টে যেতে পারত বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন —- সেই দৃপ্ত প্রতিরোধের কাহিনিই  ধরা রয়েছে এই বইয়ে —-- সোভিয়েত আজ ‘অতীত’ কিন্তু ওই উজ্জ্বল বইটি আজও আমার সংগ্রহে। সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই  ‘মনীষা’ একরকম মৃতপ্রায় — রাশিয়ার ‘প্রগতি প্রকাশন’ বন্ধ হয়ে গেছে কবেই, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে  ‘মনীষা’র  সুপরিচিত শোরুম আজ ধুলোয় মলিন, একজন দুজন কর্মচারী কাউন্টারে বসে ঝিমোচ্ছেন ‘বিগত বিপ্লবের’ প্রতিনিধি হিসেবে । আরেক খ্যাত সংস্থা ‘এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং’, যাদের বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন ছিল ‘আমরা বই ছাপি না , বিষয় ছাপি’ —তাঁরা অনেকদিন পরে একটু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন—- কোভিডের অল্প আগে তাঁদের কলেজ স্কোয়ারের  ‘শো-রুমে’ গিয়ে যা দেখেছিলাম তা শোচনীয় ।  বন্ধ আলমারিতে পুরোন বইগুলির করুণ দশা, নতুন কোনো প্রকাশনা বন্ধ —- পুরোনো বইয়ের মধ্যে খোঁজ পেয়েছিলাম দুয়েকটি উল্লেখ্য বই, সেগুলোর দাম এতই কম ছিল যে কেনার সময় ‘কমিশন’ নিয়ে দরাদরি করতে কুন্ঠা হয়েছিল । সম্ভ্রান্ত  ‘করুণা প্রকাশনী’- র কর্ণধার বামাচরণ মুখোপাধ্যায় চলে গেলেন কয়েকমাস আগে, এরপর প্রকাশনার অবস্থা কী দাঁড়াবে বলা কঠিন —- এঁরা একসময় দেবব্রত বিশ্বাসের ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’ প্রকাশ করেছিলেন, ছেপেছিলেন মণিকুন্তলা সেনের ‘সেদিনের কথা’। মনোজ বসু প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল পাব্লিশার্স’ এখন টিমটিম করে চলে —- মনোজ বসুর বই ছাড়াও এরা একসময় দুই খন্ডে প্রকাশ করেছিলেন ‘জীবনানন্দের কাব্য সংগ্রহ’ । প্রয়াত বিরাম মুখোপাধ্যায়ের হাতে-গড়া সুবিখ্যাত ‘নাভানা’ প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে অনেকদিন  — অতি যত্নে ছাপা তাঁদের বইগুলি আমাদের মতো কারো কারো ঘরে আজও রয়ে গেছে। আরেক খ্যাত সংস্থা ‘ভারবি’-ও আর তেমন নতুন বই প্রকাশে অনাগ্রহী। ‘ভারবি’র গলিতে একদা প্রতিষ্ঠিত ‘সিগনেট প্রেস’ বন্ধ হয়েছিল অনেক আগেই —- ২০১১ সালে ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ সংস্থা ‘সিগনেট প্রেস’  কিনে নিয়ে সেটিকে তাঁদের সহযোগী প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করেন —- কয়েক বছর হল বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ‘সিগনেট প্রেস’ এর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি কাউন্টার চালু হয়েছে। অনেক খারাপের পাশে এইটুকু ভাল খবর। তবে ‘সিগনেট প্রেস’ এর পুরোনো দোকানের প্রতিবেশী কাজলদার ‘একুশ শতক’ এক সময় সব বইয়ের গন্তব্য ছিল, বাংলা ইংরিজি যাই হোক তাঁর কাছে খবর গেলে সেই বই তিনি জোগাড় করে দেবেন-ই —-- কর্ণধারের অসুস্থতায় সেই প্রকাশনাও আজ বিপন্ন।  প্রসূন বসু- র প্রয়াণের পর তাঁর  ‘নবপত্র প্রকাশন’ খুব ভাল অবস্থায় আজ আর নেই, ঠিক যেমন অবনী রায়ের ‘কথাশিল্প’ হাতবদল হয়ে এখন ইংরিজি বইয়ের বিপণি। এক সময় র‍্যাডিকাল ও ভাল বইয়ের নিশ্চিত খোঁজ মিলত ‘বুক মার্ক’- এ —-- শারদ উৎসবে পাড়ায় পাড়ায় বইয়ের স্টল হলে ‘বুক মার্ক’ এর মালিক রামুদা নিছক চেনার খাতিরে  ধারে নিজের সংগ্রহ থেকে সাধ্যমতো বই জুগিয়ে যেতেন। বিক্রি না- হলেও সেইসব বই ফেরত নিতেন হাসিমুখে। আমারাও বেশ কয়েকবার তাঁর থেকে বই নিয়ে পুজোয় স্টল সাজিয়েছি, বিজয়ার দিন যখন স্টলে প্রচুর অবিক্রীত বই, তখন তার থেকে নিজেরাই কিনে নিয়েছি সাধ্যমতো, তারপরেও যা পড়ে থাকত ফেরত গেছে ‘বুক মার্ক’-এ —- আমাদের প্রিয় রামুদা তা ফেরত নিয়েছেন একটুও মুখ না-বেঁকিয়ে। ‘বুক মার্ক’- এর হাতবদলের পরে এইসব স্মৃতিও আজ অতীত। সুলভে ইংরিজি পেপারব্যাক পাওয়া যেত শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটের ‘শরৎ বুক হাউস’-এ —- আইনস্টাইনের ‘আইডিয়াজ অ্যান্ড ওপিনিয়ন’ বা ইয়েটস এর ‘সিলেক্টেড পোয়েম’ এসব এখান থেকেই কেনা —-- দোকানের মালিকানা বদল  হয়ে এখন সেখানে শুধুই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই আর ইংরিজি কমিক বইয়ের আড়ত।   এগুলো কোনোটাই সুসংবাদ নয়, হতে পারে না। 

    এরই পাশাপাশি সুদীর্ঘ সময় এই এলাকায় যাতায়াতের সূত্রে তিনটে বিষয়ের অভাবের কথা না বললেই নয়। কলেজ স্ট্রিটের সুবিশাল এলাকার বই-বিপণি ও প্রকাশকদের যতটা সম্ভব একজায়গায় সুবিন্যস্তভাবে স্থাপন করার কথা ভেবে কলেজ স্ট্রিট মার্কেট ভেঙে সেখানে ‘বর্ণপরিচয়’ ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল সেই কবেকার বাম-আমলে, এই উদ্দেশে অন্য একটি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেধেছিল কলকাতা পুরসভা। আশ্চর্য এইটাই, গত দেড়-দুইদশকে গোটা কলকাতায় তৈরি হল অজস্র শপিং মল, পোশাকের বাজার, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়গনিস্টিক ল্যাব, রেস্তরাঁ —--- ‘উন্নয়ন’ আর ‘ সৌন্দর্যায়ন’-এর জোয়ারে আমরা ‘ডুবুডুবু’  —-  কিন্তু আজও ‘বর্ণপরিচয়’- এর নির্মাণ কাজ শেষ হল না বা প্রতিশ্রুতভাবে প্রকাশকদের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হল না। আধা-খেঁচড়া হয়ে থাকা ‘বর্ণপরিচয়’ আদপে এখন ‘বিবর্ণপরিচয়’ —- প্রতিটি তলা নোংরা, শৌচালয়ের দুর্গন্ধ, এলোমেলোভাবে দুয়েকটি প্রকাশক সেখানে ঘর পেয়েছেন, প্রবেশ-পথের সামনে আজও বালি-পাথর ছড়ানো। অথচ বিপুল এলাকা নিয়ে পরিকল্পিত ‘বর্ণপরিচয়’ এর  দুটি ব্লকে অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে এক জায়গায় অনেক প্রকাশককে জায়গা দেওয়া যেত, তার ওপরতলায় হতেই পারত একটা ছিমছাম কফিশপ, থাকতে পারত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার, তৈরি হতে পারত ঢাকা শহরের ‘পাঠক সমাবেশ’ এর মতো বৃহৎ বই-বিপণি। ঘোষিতভাবে কি না জানা নেই, তবে ইতিহাসের বিচারে  কলেজ স্ট্রিট নিশ্চয়ই একটি ‘হেরিটেজ এলাকা’ —- সেখানে শতাব্দী-প্রাচীন প্রকাশনাব্যবস্থার যে একটি সুষ্ঠু আধুনিক সংস্কৃত রূপ গড়ে উঠল না আজও, এটা দুর্ভাগ্যের। 
     
          পরের কথা হল, প্রকাশনার পাশেপাশে মেধাচর্চা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের বিপুল উপাদান এই এলাকার সম্পদ। কিন্তু আজও এই চত্বরে কোথাও একটি আধুনিক সভাগৃহ নেই যেখানে স্বল্প-শ্রোতা নিয়ে সেমিনার বা ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা  আলোচনা করা চলে — অন্তত যার বসার ব্যবস্থা আরামপ্রদ, শব্দ-প্রক্ষেপণ ব্যবস্থা আধুনিক, শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থায় বাইরের অবাঞ্ছিত শব্দের উপদ্রব সহ্য করতে হয় না । সাবেকি ‘স্টুডেন্টস হল’, ‘মহাবোধি সোসাইটি’, ‘থিওজফিক্যাল সোসাইটি’ বা ‘ত্রিপুরা হিতসাধিনী হল’ এগুলো কোনোটাই এই প্রার্থিত মানের নয়, নিতান্তই প্রাচীন। কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের তিনতলায় পুরনো ‘সি গুহর স্টুডিও’ পুনর্বিন্যাস করে ‘বই-চিত্র’ একটা ছোট সভাঘর তৈরি করেছে বছর দশেক আগে, কিন্তু পুরনো বাড়িতে নির্মিত নিতান্ত ছোট ঘরে বাইরের কর্কশ আওয়াজ যে কোনো অনুষ্ঠানের পক্ষে বিড়ম্বনার। এঁদের পাশেই ‘রেনেসাঁ প্রকাশন’-এর একটা ঘর আছে, তবে তাতে বড়জোর জমায়েত হয়ে আড্ডা দেওয়া চলে, সাজানো অনুষ্ঠান নয়। কয়েকবছর আগে আগে ‘এ মুখার্জী অ্যান্ড কোং’ তাঁদের দফতরের পাশে অপরিসর একটি এলাকায় এরকম একটি ঘরের ব্যবস্থা করলেও তা তেমন জুতসই ছিল না। পরে ‘সপ্তর্ষি প্রকাশন’ আরেকবার উদ্যোগ নেন, তাও সফল হয়নি। ইদানিং মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের শো-রুমের পেছনে অবস্থিত ‘বিদ্যাসাগর টাওয়ার’-এ ‘দে’জ’ এর উদ্যোগে একটি ছোট সভাঘর ( ‘বই-ঘর’)  তৈরি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে ওই প্রকাশনের ছোটখাটো বই-প্রকাশের অনুষ্ঠানই মূলত হয়। ‘লালমাটি’ প্রকাশনও শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটে  একটা ছোট ঘরের ব্যবস্থা করেছেন, ছোট পরিসরে ‘অভিযান বুক ক্লাব’-ও  একটু জায়গা পেয়েছেন  ; ‘পুটিরাম’ এর দোকানের দোতলায়  তাঁদের নতুন শো-রুমে এরকমই একটা আয়োজন করতে চাইছিলেন ‘প্রতিক্ষণ’ —- কিন্তু তাঁদের কর্ণধার প্রিয়ব্রত দেব-ও চলে গেলেন হঠাৎ —- এর পরে সেই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ আপাতত বিপন্ন। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি যে কোনো উদ্যোগেই অন্তত শ-আড়াই শ্রোতা বসতে পারেন এমন একটি  সর্বার্থে আধুনিক সভাঘর আজও কলেজ স্ট্রিট দাবি করে, যা এখনো অধরা। 

             ঠিক-বেঠিক বিচার করছি না, তবে আজকের হাল-ফ্যাশনের শপিং মলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল সেখানকার ‘ফুড কোর্ট’ । ক্রেতারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাজার করবেন বা ঘুরে বেড়াবেন তারপর নিজেদের খিদে মেটাতে আসবেন এইসব খাবারের দোকানে এটাই আজ দস্তুর। সেদিক দিয়ে কলেজ স্ট্রিট এলাকায়, আজকের চোখে যেরকম ‘ভদ্রস্থ’ খাওয়ার দোকান হয়, তেমন একটিও নেই। এর আগের কোনো পর্বে এলাকার খাওয়ার দোকানের পরিচয় দিয়েছি,  কিন্তু সেগুলো সবই সাবেকি। আজকের ক্রেতা একটু ভিন্ন রকম ‘ইটিং হাউস’ প্রত্যাশা করেন, যার আয়োজনেও পেছিয়ে আছে কলেজ স্ট্রিট। বইয়ের অনেক রকম ক্রেতা থাকেন —- সবাই রণজিত গুহ বা শঙ্খ ঘোষ কিংবা অরিন্দম চক্রবর্তী পড়েন না, বাজারচলতি অনেক আখ্যান-সাহিত্যের পাঠকই বেশি, তাঁরা ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে বা ইউ পি আই-এ বইয়ের দাম মেটাতে চান, ক্লান্ত হয়ে একটু ঠান্ডা রেস্টুরেন্টে বসে রসনা মেটাতে চান। বাস্তব হল, এখনো কলেজ স্ট্রিটের শতকরা পঞ্চাশভাগ দোকানেও এইসব আধুনিক ব্যবস্থার উপাদান নেই, নেই কোনো ওই ধরনের খাওয়ার দোকান। ‘কফি হাউস’ থাকুক, ‘পুটিরাম’ থাকুক, পাশাপাশি অন্যরকম ক্রেতাদের জন্য ভিন্ন আয়োজনও থাকুক না, ক্ষতি কী? মেডিক্যাল কলেজের ঠিক বিপরীতে প্রায় বছর পনেরো আগে ‘পেপসি’ কোম্পানির সৌজন্যে এমন একটা দোকান চালু হয়েছিল, কিন্তু সেটা তেমন সাড়া ফেলেনি। আমার বিচারে এইটুকু দাবি কলেজ স্ট্রিট করতেই পারে। সম্প্রতি, কলকাতা পুরসভার সূত্রে খবর পেয়েছি, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক দফতর’ এর অনুদানে কলকাতার কিছু রাস্তায় পুরসভা পরিচালিত আধুনিক বিধিসম্মত খাবার দোকান সম্বলিত  কিছু ‘ফুড স্ট্রিট’ এলাকা গড়ে তোলা হবে। একেকটি এইরকম এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এক কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে পুরসভা- চিহ্নিত দশটি এলাকার মধ্যে কলেজ স্ট্রিট রয়েছে —- কিন্তু আপাতত তিনটি এলাকার জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এসেছে তার মধ্যে অবশ্য কলেজ স্ট্রিটের নাম নেই। ফলে এই দাবি বা চাহিদার কবে সুরাহা হবে তা আপাতত বড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে, যদিও তাতে দাবিটির সারবত্তা লঘু হয়ে যায় না। 

           স্মৃতিকন্ডুয়নের পালা এবার শেষের পথে। যে কোনও একটি সময়সীমার অন্তর্গত হয়ে কেউ যখন জীবিত থাকে তার ভাগে পড়ে অনেক না-দেখা এবং কিছু দেখার স্মৃতি। আমায় যদি আজ প্রশ্ন করা হয়, কলেজ স্ট্রিটের কোন পুরনো ঘটনার শরিক থাকলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব —- তাহলে আমার নিশ্চিন্ত জবাব হবে ‘সেনেট হল’- এ আয়োজিত সেই ঐতিহাসিক কবি-সম্মেলন ( ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি ১৯৫৪)  যেখানে স্বয়ং জীবনানন্দ দাশ থেকে কবিতা পড়েছিলেন বাংলার উজ্জ্বল কবিরা। ষাটের দশকে সেই ‘সেনেট হল’ যখন ভেঙে ফেলা হচ্ছিল, পূর্ণেন্দু পত্রী তার বিপরীতদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা  দাঁড়িয়ে তাঁর ক্যামেরায় ধরে রাখছিলেন সেই ভাঙনের বিষণ্ণ- স্থিরচিত্র, শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখছিলেন, ‘ তৎপর কর্ণিক হাতে নিয়ে/ সংস্কার পান্থ হে বন্ধু , ভেঙে যাচ্ছ পুরোনো কলকাতা’ (সেনেট ১৯৬০) । ‘সেনেট হল’ আমাদের স্মৃতিতে নেই। কিন্তু আছে প্রেসিডেন্সি কলেজের দুশো বছরের পুরোনো প্রবেশদ্বার। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎক্রান্তির পরে গত একদশকের মধ্যে কোন এক গভীর নিষ্ঠুরতায় ভেঙে ফেলতে দেখেছি সেই ‘হেরিটেজ প্রবেশদ্বার’ ।  যে প্রেসিডেন্সিতে আগে অনায়াসেই ঢোকা যেত, মূল বিল্ডিঙের একতলার বারান্দার ধারের রেলিং ছিল এতটাই প্রশস্ত যে অনায়াসে সেখানে দুজন বসা যেত পাশাপাশি, কাটিয়ে দেওয়া যেত অলস দ্বিপ্রহর —-- আজ সেই বিদ্যায়তন চেহারা নিয়েছে ‘ফোর্ট উইলিয়ামের’। সম্ভবত ২০১৮-র নভেম্বরে কোনো এক সময়ে কলেজ স্ট্রিট এলাকায় সমস্ত ধরনের মিছিল-মিটিং-সমাবেশ ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে সরকারি ফরমান বেরোয়। যেদিন থেকে সেই নির্দেশ লাগু হওয়ার কথা, ঘটনাচক্রে আমি সেদিন সকালে ছিলাম কলেজ স্ট্রিটেই —-- কলকাতা ইউনিভার্সিটির সামনে বেশ কিছু পুলিশের গাড়ি ও প্রিজন ভ্যান মোতায়েন, রাস্তায় পুলিশের আধিপত্য। কলকাতার কোনও বাংলা নিউজ-চ্যানেল নয়, একটি সর্বভারতীয় ইংরিজি নিউজ চ্যানেলের প্রতিনিধি ক্যামেরা-বুম হাতে ঘুরছিলেন, এই নির্দেশ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার সন্ধানে  —- আমায় দেখে বুম বাড়িয়ে ধরলেন। সেই তরুণী সাংবাদিককে সেদিন বলেছিলাম, এই যে সরকারি ফরম্যান, এটা কলেজ স্ট্রিটের সংস্কৃতি নয়। এইটুকু প্রতিবাদের সৌভাগ্যই বা ক’জনের হয় ?  হয়তো সে ছিল আমার মতো  আরও অনেকেরই মনের কথা । এই ‘কণ্ঠরোধ’-এর সূত্রেই মনে ঝাঁপিয়ে এসেছিল অন্য এক স্মৃতি —-- সেটা ১৯৬২, চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত-সংঘর্ষ চলছে আর তারই সূত্রে সারা দেশ জুড়ে সুতীব্র চিন-বিরোধী প্রচার, ‘চিনের দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিনা বিচারে বন্দি করা হচ্ছে একশ্রেণির কমিউনিস্টদের । আর তখনই কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মনোজ বসু-র ‘চিন দেখে এলাম’ ইত্যাদির মতো কিছু বই যাতে লাল-চিনের বিষয়ে নানা প্রশংসাসূচক কথা লেখা হয়েছিল, চিন ভ্রমণের সূত্রে। যারা এইসব লিখেছিলেন তাঁরা যে নিজেরা আলাদা করে চিনের রাজনীতির সমর্থক ছিলেন এমনও নয়। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদের এইটাই ধরন, সে ‘শত্রু’-দেশ বিষয়ে সব কিছুকেই সন্দেহ করতে শেখায়, কোনো যুক্তির তোয়াক্কা না করেই —- আজও সেই ট্র্যাডিশনের একই অবস্থান। কিন্তু এই ঘটনার আলাদা উল্লেখ এই কারণেই যে সেদিন ওই বহ্নি-উৎসবের নেতৃত্বে ছিলেন কলেজ স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা এক চিত্রশিল্পী —-- যিনি পরে তার ‘কাক’-সিরিজ এঁকে প্রচুর নাম করেছিলেন এবং বছর দশ-বারো আগে তাকে রাজ্যের ‘পরিবর্তন’ এর সমর্থনে পথে-ঘাটে-সভায়-টিভি চ্যানেলে সোচ্চার হতে দেখা যেত ! তার এই ‘সুকৃতি’ তিনি সগর্বে  উল্লেখ করেছেন তাঁর আত্মকথায় !

     কিন্তু সব খারাপেরই একটা উলটো পিঠ থাকে। দুনিয়ার ইতিহাসে বই পোড়ানোর মতো সভ্যতা-বিরোধী কাজ আর কিছুই হতে পারে না —- আজও মানব সভ্যতা রাইখস্ট্যাগ-এর আগুনের কথা ভোলেনি। ভোলেনি বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির ধ্বংস বা কলেজ স্ট্রিটেই বিদ্যাসাগরের প্রস্তরমূর্তির শিরশ্ছেদ !    তাই এই বছরের (২১ জানুয়ারি ২০২৩) যখন চে গুয়েভারার কন্যা ডঃ অ্যালেইদা গুয়েভারার সমর্থনে মানুষের ঢল নামল এই কলেজ স্ট্রিটেই, তখন মানুষের উদ্দীপনা আর উষ্ণতার জোয়ারে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছিল ওই সরকারি নির্দেশ। চব্বিশ বছর পরে আবার কলকাতায় আসা  উচ্ছ্বসিত ও অভিভূত চে- কন্যা প্রকাশ্যে মাইক ধরে  বললেন, এত বছর পরেও মানুষের উষ্ণতা ও উদ্দীপনা দেখে আমি অভিভূত ! (The warmth and enthusiasm of the people of this city have remained the same over the years,” – টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন )  ।  এও তো এক কলেজ স্ট্রিট, একে ঠিক কীভাবে ব্যাখা করা যাবে ?  
     
    আসলে এই সব আলো-অন্ধকার মিলিয়েই কলেজ স্ট্রিট। দুধারের প্রাচীন স্থাপত্য, এলোমেলো বসতি, সংকীর্ণ বই-বিপণি, প্রকাশনা, অজগরের মতো ছড়ানো ট্রামের লাইন, সাবেকি চায়ের দোকান, ফুটপাথে বইয়ের স্তূপ। এই কলেজ স্ট্রিটেই আমরা একদা আবিষ্কার করেছি আমাদের যৌবনের স্পর্ধা, বাঁচবার আনন্দ, প্রতিবাদের বারুদ ও মননের দীপশিখা। আজও তাই চাই —- এক মুক্ত আকাশের ডাক, রামধনু রঙ, দৃপ্ত আর শাণিত মগজের শুদ্ধি। তবে এরই মধ্যে আমার একটি নিজস্ব স্বপ্ন-দৃশ্যের ইশারা আছে। যেন কলেজ স্ট্রিটের ‘সমস্ত স্বাভাবিক আলো নিভে গেছে সেইদিন। ফাঁকি বা মেকি নয়, একদম নিখাদ খাঁটি অন্ধকার। সে অন্ধকার যেন জেগে উঠেছে তার আদিম রূপযৌবন নিয়ে। সেই অতল আকুলে চোখ আটকে যায় অদূরেই। আর সেই নিবিড় অমার মধ্যেই যেন চাঁদ উঠল কলেজ স্ট্রিটের মাথার ওপর, আস্ত একটা জ্বলজ্বলে চাঁদ । কলেজ স্ট্রিট জুড়ে অথৈ জোছনার আছাড়ি-পিছাড়ি। সমস্ত পথ জুড়ে এক স্বচ্ছ নীল আভা, যেন এইমাত্র ভোর হল।’ রাস্তার দুপাশে আজও যত নাছোড়বান্দা গাছ, বিলবোর্ড, ক্লিন্ন পোস্টার আর হোর্ডিং তাদেরই ভিতর দিয়ে এক অবাক আলোর লিপি যেন লেখা হয়ে চলেছে রাজপথে। হেঁটে যাওয়া মানুষদের পায়ের তলায় ‘শান্ত এক চান্দ্র- ছায়ার অবয়ব’। মাথার ওপরের আকাশে মন-ভালো-করা চাঁদের মুচকি হাসি। এ কী হল আজ কলেজ স্ট্রিটের ? কেমন করে আজ কলেজ স্ট্রিট ফিরে পেল এই ঐশ্বর্য ? সেই সালঙ্কৃত রাজপথের আজ আমিও যেন এক পথিক। কেবলই ভেবে চলেছি —-- আমাদের এই  কলকাতার, এই  কলেজ স্ট্রিটের কতদিনের ‘মরা আকাশ বিশ্বের আনন্দছন্দে কি জেগে উঠবে আবার’ ?
     
    জাগবে। জাগবে । নিশ্চয়ই জাগবে। হয়তো আমাদের অতল আয়ুর পরপারে। রাত্রির অন্ধকারের অন্তরালেও হৃদয় থাকবে , থাকবে  ভিন্ন কোনো প্রশ্বাসের পায়ের আওয়াজ ।  আর এখানেই আমরা আবার খুঁজব জীবনের মানে। একদিন, চিরদিন। 

    শেষ 
                                   
                                                                                                                         **************************
                                                                                                              প্রবুদ্ধ বাগচী-র পরবর্তী ধারাবাহিক
                                                                                                                       ‘অঙ্কে যত শূন্য পেলে’
                                                                                                            প্রকাশ  শুরু হবে শারদোৎসবের আগেই 
                                                                                                আগ্রহী পাঠক- রা খেয়াল রাখুন গুরুচন্ডালি-র পাতায় 
                                                                                                                     ************************************

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • স্মৃতিচারণ | ১৬ জুলাই ২০২৩ | ৫১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:২৩521354
  • এ লেখা দিয়েই ধারাবাহিকটি পড়তে শুরু করলাম। মনশ্চক্ষে অনেক কিছু দেখছি, এ পারে আমাদের ছাত্র জীবনের উড়ে বেড়ানোর দিনগুলো মনে পড়ছে। 

    একদা ঢাকায় বাংলাবাজার, পুরনো পল্টন, শাহবাগ, নীলক্ষেতে বিশাল পুরনো বইয়ের দোকান ছিলো,  বাংলাবাজার,  স্টেডিয়াম,  বেইলি রোড, নিউ মার্কেট ছিলো অভিজাত বইপাড়া। পরে আজিজ সুপার মার্কেট বই বাজার হয়ে ওঠে। 

    এখন সবই ধুসর অতীত। ক্রমে ভিসিয়ার, ডিভিডি, সিডি ও ইন্টারনেটে ছবি এলো,  অনলাইন/ অফলাইন গেমিং এ ডুবে গেল প্রজন্মের পর প্রজন্ম,  নেশা আর নষ্ট রাজনীতি হাতছানি দিলো রংগিন দুনিয়ার... আমাদের জীবন থেকে আলগোছে পুস্তক সংস্কৃত খসে গেল। একের পর এক পাড়ার বইয়ের দোকানগুলো ফার্স্ট ফুড আর বিরানি হাউজ হলো, বাস স্টপেজের পত্রিকা স্টলগুলো উঠে গেল, রাতারাতি বিশাল হাউজিং সোসাইটি আর শপিং মল হলো বই পড়ায়, আজিজ সুপার মার্কেট এখন জামা কাপড়ের রমরমা বাজার। ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে বাংলাবাজার, নীলক্ষেত। 

    একদিন এই নিয়ে এই রকম করে লিখবো হয়তো, দিন গেল দিন গেল রে! 

     

     
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:২৬521355
  • পুনশ্চঃ পুরো লেখা কি বোল্ড হয়ে প্রকাশিত? খুব চোখে লাগছে, অনুগ্রহ করে সম্পাদনা বিভাগে গিয়ে ঠিক করে নিন। শুভ 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন