এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভোটবাক্স  বিধানসভা-২০২১  ইলেকশন

  • আগামীর নীল নকশায় সবুজের ছিটেফোঁটা 

    অনিন্দিতা রায় সাহা
    ভোটবাক্স | বিধানসভা-২০২১ | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৭৯ বার পঠিত
  • ইস্তেহার যে কোনও নির্বাচনের অঙ্গ। ইস্তেহারেই লেখা থাকে পরিকল্পনা - ভবিষ্যতের, যা থেকে আঁচ পাওয়া যায় বিভিন্ন বিষয়ে রূপরেখার। এই নিবন্ধে তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে তিনটি বড় দলের নির্বাচনী ইস্তেহারের পরিবেশ ভাবনার।

    করোনাকালীন বিপন্নতার সময়ে এবারের নির্বাচন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, সব জায়গার মানুষই সর্বব্যাপী রোগ, ভীতি আর জীবিকার অনিশ্চয়তার মাঝে এগিয়েছে তাদের পরবর্তী নেতৃত্বকে বেছে নিতে। অতিমারীর সাথে লড়াই করতে করতে ভবিষ্যৎ জীবন যাপনের নীল নকশা তৈরি হচ্ছে। মানুষ চাইছে একটি সুস্থ, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ জীবন। আপাত সহজ সেই সাধারণ রাস্তাটা খুঁজতে আমরা স্বভাবতই দিশেহারা। সমস্যা চারদিকে। কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান যদি হয় অর্থনৈতিক  বিকাশের  মূল ভিত্তি, তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো হল তার পরিবর্ধিত রূপ। উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোতে হলে আরো চাই নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুব কল্যাণ, চাই উন্নত পরিষেবা, চাই সামাজিক ন্যায় ও সুরক্ষা। প্রতিটি নাগরিকের ‘রোটি কাপড়া অউর মকান’-এর চাহিদা চিরকালই সবচেয়ে প্রাথমিক, অথচ আজও সবচেয়ে দুরূহ। উন্নত সমাজের সংজ্ঞায় এছাড়াও থাকতে হবে প্রতিটি নাগরিকের সম্মান, পারস্পরিক  শ্রদ্ধা ও সহাবস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার,  সামাজিক-রাজনৈতিক কার্যকলাপে যোগদান, এমনি আরো কত কি! এই চাই-চাই-এর লিস্টিটা নেহাত ছোট নয়। হাজার হোক, এটা উন্নয়নের পথে যাত্রা যে! ভোটের মুখে হবু নেতারা তাই নিতান্তই হিমশিম। জনগণ বেবাক মুখ্যু বটে, তবু ভেবেচিন্তে সাজাতে হবে তো! পশ্চিমবঙ্গের তিনটি মুখ্য প্রতিযোগী দল ঘোষণা করেছে তাদের নির্বাচনী  ইশতেহার। নানা প্রতিশ্রুতির বন্যা বইছে। কারো যদি থাকে বিগত বছরগুলোর কার্যতালিকার খতিয়ান, তো আর কারো আছে ভবিষ্যতের অঙ্গীকার। 

    ছোট্ট করে যদি একটা তুলনামূলক নজর দিয়ে নেওয়া যায়, তবে মূল বিষয়গুলোতে বেশ মিল দেখা যাবে। মনে হবে, আর্থিক বিকাশ এই এলো বলে। কৃষি, শিল্প, কর্মসংস্থান আর সমস্যা হয়ে থাকবে না। বৃহৎ শিল্প এবং প্রচুর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন হবে, কৃষির উৎপাদন বাড়বে হৈ হৈ করে। তার ওপর সস্তায় রেশন, ক্যান্টিনে খাবার, সকলের জন্য ন্যূনতম আয়- সবে মিলে সুখের দিন দোরগোড়ায়। আর বর্তমান সরকারের রিপোর্ট কার্ড যা দেখানো হয়েছে, তাতে তো মনে হচ্ছে গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম সেরা পারফরমার। স্টেট জিডিপি থেকে শুরু করে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার, মাথাপিছু আয় থেকে শুরু করে রাজ্যের কর রাজস্ব সংগ্রহ, সবেতেই বিশাল বিশাল সংখ্যা দেখে মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়। অন্যদিকে নাকি রাজ্যের ফিস্কাল ডেফিসিট কমছে। দারিদ্র্যসীমার নীচে মানুষের সংখ্যা কমছে। জঙ্গলমহল, পাহাড় ও চা বাগানে উন্নয়ন খাতে লক্ষ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। উপকূল অঞ্চলে পুনরুদ্ধার কাজ, শরণার্থী পুনর্বাসন, মাইক্রো ফিনান্স, স্বল্প সঞ্চয়, কী নেই এই উন্নয়নের কিসসায়! খাদ্যশস্য, মাছ, ডিম ইত্যাদির উৎপাদন ও বণ্টন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, আবাসন ও বস্তি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ আর জলসেচ  ব্যবস্থা- সবেতেই প্রভূত উন্নতি। তা সত্ত্বেও কেন যে ছেলেপুলেগুলো কাজ খুঁজতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়! শিক্ষা, খেলাধুলা, শিল্প, সংস্কৃতি সবেতেই নাকি দশ বছরে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। কেবল প্রতি বছর কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আরো আরো ছাত্রছাত্রী যখন ভর্তি হতে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুয়ারে কড়া নাড়ে, তখন আমার  গর্বিত বাঙালি মাথাটা ক্রমশ ঝুঁকে পড়তে থাকে। যাক গে, পেছনে তাকিয়ে পরিতাপ আর নিন্দুকের সমালোচনা বাদ দেওয়া যাক। এ বছরের প্রতিশ্রুতিগুলো তো আছে, আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়ন আসবে বই কি! প্রতিযোগী অন্য দুটি রাজনৈতিক দলের অবশ্য কোনো পারফরম্যান্স রিপোর্ট কার্ড নেই, সবটাই আগামীর দিকে তাকিয়ে। তাই তাদের ইশতেহারে এতো ভারী ভারী পরিসংখ্যান নেই। তবু কৃষি-শিল্প-শ্রম-শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে সোনালী স্বপ্ন দেখাতে কেউ পিছিয়ে নেই। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এর কিছুটা নিশ্চয় সাকার হবে। অর্থনৈতিক বিকাশের সাধারণ নীতি অনুযায়ী মূল সূচকগুলি তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বেই। অর্থশাস্ত্রের প্রচলিত তত্ত্ব মেনে চেনা রাস্তায় উন্নয়নমুখী যাত্রার চেষ্টা আগেও চলছিল, এখনও চলবে। 

    কিন্তু অনেক খুঁজেও যে শব্দটা চোখে পড়লো না, তা হল ‘টেঁকসই উন্নয়ন’, ২০২১ সালে গোটা পৃথিবী যার মর্ম টের পেয়েছে। অতিমারী-আক্রান্ত, স্বজন-হারানো, কর্মচ্যুত দিশেহারা মনুষ্যজাতির সামনে চেতনার যে নতুন পর্ব শুরু হয়েছে, তার ফলশ্রুতি হিসেবে একটি ঠাসবুনোট পরিবেশ নীতির প্রত্যাশা কি সবচেয়ে স্বাভাবিক নয়? এই সময়ের পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কঠোর গদ্যটির নাম পরিবেশ। টেঁকসই উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা চিন্তা নতুন নয়। তিন দশক আগে ব্রুন্টল্যান্ড কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই এর যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে দেখা গিয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন, উষ্ণায়ন, প্রদূষণ  কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমাগত হ্রাস। কৃষি সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। শিল্প, পরিবহন এবং কৃষি ভিত্তিক সমগ্র ভোগ ও উৎপাদন ব্যবস্থাকে টেঁকসই করে তোলার ডাক পড়েছে টেঁকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলিতে (এস ডি জি  ১২)। অন্যান্য লক্ষ্যগুলির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে জল-স্থল-বায়ু সহ পরিবেশের গুণমান সম্পর্কে সচেতনতা। পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে  প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখন নিত্য ঘটনা। হিমবাহের গলন, সমুদ্র জলের স্ফিতি, বন্যা-ভূমিকম্প-ঘূর্ণিঝড়, এ সবই তো  পরিবেশ সমস্যার  ফলশ্রুতি। জীবজগতের বৈচিত্র্য কমে যাওয়া একটা ক্রমবর্ধমান সংকট। অর্থনৈতিক প্রগতির অবশ্যম্ভাবী মূল্য বৃহৎ পরিমাণ জঙ্গল কেটে ফেলা আর সেই সঙ্গে প্রাণীজগতের বাসস্থান ধ্বংস করা। আজ বিশ্বজোড়া মহামারীর কালে আমরা সবাই জেনেছি কেন এবং কীভাবে সৃষ্টি হচ্ছে পশু থেকে আসা মানুষের অসুখ। এর একটা বড়ো কারণ মানুষের সাথে প্রাণীজগতের সংঘাত। ক্রমবর্ধমান নাগরিক জীবন আর বৃহদর্থে অর্থনৈতিক প্রগতি ক্রমশঃ প্রকৃতির ওপর থাবা বসাচ্ছে। প্রায় সাতাশি লক্ষ জ্ঞাত প্রজাতির মধ্যে মাত্র একটি হল মনুষ্যজাতি। অথচ আমরাই গ্রাস করেছি সমগ্র বিশ্ব। এই ভয়ঙ্কর পরিবেশ সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সবচেয়ে প্রয়োজন অর্থনীতির সঙ্গে পরিবেশনীতি মিলিয়ে একটি সামগ্রিক নীল নকশা। একটা দীর্ঘস্থায়ী টেঁকসই উন্নয়ন মানে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশগত উন্নয়নের সাযুজ্য। আন্তর্জাতিক, জাতীয়, স্থানীয়- সব স্তরেই পরিবেশ চেতনা ছাড়া টেঁকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

    জাতিবৈষম্য আর কোভিড মোকাবিলা বাদ দিলে জো বাইডেন যে তাস দিয়ে তুরুপ করেছেন, তা স্পষ্টতই পরিবেশ। প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসা, আন্তর্জাতিক ক্লাইমেট অ্যাকশন-এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া, এগুলো কি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় না যে আজকের দুনিয়ায় যে কোনো নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান দায় পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়ন? বেঁচে থাকলে তবে তো আর সব। তাহলে কেন সেই সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না আমাদের এই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়? বর্তমান সরকারের নীতিটাই প্রথমে দেখা যাক। পরিবেশ সম্পর্কে কোনো ঘোষিত নীতি নেই এই পঞ্চাশ পৃষ্ঠা ব্যাপী ইশতেহারে। বিগত দশ বছরের সাফল্য আর আগামী পাঁচ বছরের লক্ষ্য- কোথাও কোথাও সামান্য কিছু সবুজ রঙের ছিঁটেফোঁটা উঁকি দিচ্ছে ইতি উতি, কিন্তু তাকে বোধ হয় নীতি বলা যায় না। সূচিপত্রের দশটি ঘোষিত হেডিং-এ পরিবেশ নামটা চোখেই পড়বে না। পরিবেশ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের উল্লেখ আছে কিনা তা খুঁজে নিতে হবে নিজের চেষ্টায়। যেমন ধরুন, সবুজ সাথী সাইকেল। এটি যদি মেয়েদের পড়তে যাওয়ার সুবিধা ছাড়াও পরিবেশবান্ধব নীতি হতো, তবে তো শহুরে পরিবহনে সবুজায়ন নিয়েও আলোচনা হতো। বিদ্যুৎ পরিষেবা নিয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোলার, উইন্ড, ননকনভেনশনাল এনার্জি ইত্যাদি নিয়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন করার প্রয়োজন ছিল। ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো এমিশন টার্গেট-এ পৌঁছোবার নীল নকশা কই? শিল্প স্থাপন হবে, আর তার জন্য পরিবেশগত নিয়মকানুনের বাধ্যবাধকতা থাকবে না? বন্যা-ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত নীতি কি কেবল ত্রাণসামগ্রী আর ত্রাণশিবিরে সীমাবদ্ধ থাকবে? এ তো ব্রিটিশ ভারতের গোড়ার দিকের ফ্যামিন পলিসির কথা মনে করিয়ে দেয়। দুর্ভিক্ষের পরে সহায়তা দেওয়া হবে, নাকি তার প্রতিরোধের জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? দুর্ভিক্ষের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত স্থান পেয়েছিল লেবার টেস্ট - কাজ তৈরি করে আয়ের ব্যবস্থা আর প্রতিরোধের প্রস্তুতি একসাথে। পুনরুদ্ধার আর পুনর্বাসন ছাড়াও চাই প্রতিরোধের অগ্রিম ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমিয়ে আনার বৈজ্ঞানিক চেষ্টা আর বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষণ। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের শিক্ষা মূল ধারার অন্তর্ভুক্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমাতে হলে সব রকমের ক্রিয়াকলাপকে করে তুলতে হবে পরিবেশবান্ধব। এক দিনে হবে না, তাই শুরু করতে হবে আজই।

    এবার যদি দেখি জল সংক্রান্ত নীতিটি, সেখানেও গালভরা প্রতিশ্রুতি - সকলের জন্য পাইপের শোধিত জল। কিন্তু জল সংরক্ষণ নীতিটি হারিয়ে গেলো কোন ফাঁকে? দেখতে পেলুম না তো। ‘জল ধরো জল ভরো’ কীভাবে হবে, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং কীভাবে লাগু হবে, তার বৈজ্ঞানিক কারিগরি নকশা আঁকা হয়েছে কি? কেবল চাষ জমিতে জলসেচই তো যথেষ্ট নয়। কয়েকটি এদিক সেদিক চেক ড্যাম আর খালবিলের সীমিত ক্ষমতায় ভূগর্ভের ক্রমশ নামতে থাকা জলস্তরকে আটকানো যাবে না। শহরের ক্রমবর্ধমান চাপের মোকাবিলা করতে একটি বৃহত্তর জলনীতি প্রণয়ন করা আশু প্রয়োজন। দ্রুতহারে কমে আসা জলসম্পদ সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত ও বৈজ্ঞানিক প্রস্তুতির যেমন দরকার, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্র ও রাজ্য নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা। জলের যথার্থ ব্যবহার করতে আর অপচয় রোধের জন্য জলের ওপর প্রয়োজনে কর বসাতে হতে পারে। এটা অর্থনীতির পুরোনো ধাঁধা- ওয়াটার ডায়মন্ড প্যারাডক্স। বহুমূল্য হীরে ছাড়াও মানুষ দিব্যি বেঁচে থাকে, অথচ জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য জল বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কিন্তু জলের দাম তো রাজনীতির খেলায় ভোটরঙ্গে চলবে না। শহরের আরো একটি গুরুতর সমস্যা জঞ্জালের ব্যবস্থাপনা। ২০১৬ সালের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট লাগু করার বা আদৌ কোনো ব্যবস্থাপনার কথা কি বিবেচনায় আসা উচিত ছিল না? সারা দুনিয়া এখন বলছে একটি বৃত্তাকার অর্থব্যবস্থা তৈরি করার কথা। সেখানে উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হবে, বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করা হবে, প্রকৃতি থেকে যা নেওয়া হবে তা বারবার ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত শুধু জৈব বর্জ্য পদার্থটুকুই  প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ ধরনের কোনো বিষয় ঠাঁই পায় নি এই প্রতিশ্রুতিমালায়। পরিবেশ সংক্রান্ত কোনো লক্ষ্যই তো স্থির করা হলো না! অতিমারী তবে কী শেখালো? কোভিড কি শুধু একটি নিরাময়যোগ্য রোগ যে, ১০২ টি হাসপাতালে কোভিড-উপযুক্ত ব্যবস্থা করলেই তার মোকাবিলা করা হয়ে  যায়? এই অতিমারী একটি ভয়ঙ্কর অশনি সঙ্কেত, ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির সতর্কবার্তা। তাই ২০২১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে একটা সবুজ নীতি অতি প্রত্যাশিত ছিল, একটা পরিবেশ নীতির ভীষণ প্রয়োজন ছিল। 

    অন্য যে পক্ষটি গেরুয়া রং-এ ঢেকে ফেলতে চাইছে চারদিক, তার ঘোষণাতে সবুজ রঙের বড়ই অভাব। একদম শেষে একটি ছোট্ট অংশ পরিবেশ। পুরো পুস্তিকায় এটিই সবচেয়ে কম শব্দে বলা একটি নীতি। ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প যদি একমাত্র পরিবেশ নীতি হয়, তবে তার শুরু এবং শেষ মা গঙ্গাই জানেন। 

    বাকি রইল তৃতীয় পক্ষ বামফ্রন্ট। এটিই একমাত্র ইশতেহার যেখানে পরিবেশকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং আর্থিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘোষিত হয়েছে পরিবেশ, বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। সর্বপ্রথম এসেছে প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ- জীব বৈচিত্র্য, অরণ্য, জলাশয় ও জলাভূমি। তারপর ধীরে ধীরে এসেছে প্রদূষণ- বায়ু, জল ও শব্দ। চিহ্নিত হয়েছে তার কেন্দ্রগুলি- কলকারখানা, যানবাহন, প্লাস্টিক। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে কয়লা নয়, ব্যবহার করতে হবে সৌরশক্তি, জল এবং হাওয়ার মতো অপ্রচলিত শক্তি। বৃক্ষরোপণ এবং সামাজিক বনসৃজন সার্বিক নীতি হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পরিশেষে এসেছে আমার আপনার নাম। হ্যাঁ, নাগরিক সমাজ। ব্যক্তিগতভাবে যে কথাগুলো আমি সুযোগ পেলেই আপনাদের গেলাবার চেষ্টা করি, সেই আমার মন কী বাত- পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে জনসাধারণকে যুক্ত করা। বিশ্ব জুড়ে এখন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কথা বলা হচ্ছে। শুধু সরকার, কমিটি আর কমিশন নয়, পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই লড়তে হবে আমাদের সবাইকে। তাই বাম জোটের ইশতেহারে পরিবেশের  নীল নকশা দেখে আশান্বিত হলাম। রাজ্যে বাস করলে আমার একটি মাত্র ভোট আমি পরিবেশের নামেই দিতাম।



    অলংকরণ- মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভোটবাক্স | ০৬ এপ্রিল ২০২১ | ২৫৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ০৬ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৪৮104507
  • টেকসই কি সাস্টেনেবল এর বাংলা?

  • Anindita | 160.202.36.54 | ০৬ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৫৬104510
  • এটাই উইকিপিডিয়া সহ সর্বত্র প্রচলিত। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ অবশ্য 'দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন '। বহুব্যবহৃত বলে সহজবোধ্য হবে ভেবে  'টেঁকসই উন্নয়ন' ব্যবহার করেছি। 

  • Ranjan Roy | ০৬ এপ্রিল ২০২১ ১৭:০৩104511
  • ঠিকই বলেছেন। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন