পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
পশ্চিমবাংলায় ভোটের দামামা বেজে গেল। চারিদিকে একটা গরম ভোটের হাওয়া। বাংলা নিউজ চ্যানেল আর খবরের কাগজে চোখ রাখলেই মনে হচ্ছে হই হই করে বিজয়বর্গী তার বর্গী সেনা নিয়ে বাংলার মসনদের দখল নিল বলে।
আবার গত এক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বিজেপি আর মোদীর জমানায় একের পর এক সমস্যা নিয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ। এক দিকে করোনা, তার ওপর লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিকদের সংকট, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন দুর্বল হচ্ছে, দিকে দিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে নারী এবং দলিতদের ও পর অত্যাচার বাড়ছে, আর NRC/CAA করে ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ এবং বহুত্ববাদী চরিত্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আবার দেখা গেল বিজেপির বড় বড় নেতারা সব কাজ ফেলে কলকাতা আর জেলাসফর করে বেড়াচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে বাংলা দখল হয়ে গেলেই দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। করোনা পালাবে, পেট্রোলের দাম ৪৫ টাকা আর রান্নার গ্যাস ৪০০ টাকা হবে। পাকিস্তান আর চিন আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। অর্থাৎ বিজেপির কাছে বাংলা দখল এই বছরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
গোদের ওপর বিষফোড়ার মত, কিছু দিন আগে আনন্দবাজারে দেখা গেল বিজেপি নাকি প্রবাসী বাঙালিদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করেছে আর তারা বেশ জোর গলায় বলতে শুরু করেছে “এই দেখ সমস্ত প্রবাসী বাঙালি পরিবর্তনের পক্ষ নিয়ে মোদীর জয়গান গাইছে” – ওই Howdy Modi ঢং আর কী!
আর না-পেরে বিদেশে থাকা কিছু বন্ধু বান্ধব আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে দেখা গেল সবাই মোটামুটি একই কথা ভাবছে। বিজেপির বিপদ সম্পর্কে কারও মনে কোনও দ্বিধা নেই। অনেকের মনে হচ্ছে একটা বার্তা দেওয়া দরকার যে সব প্রবাসী বাঙালি একেবারে সাচ্চা হিন্দু রামভক্ত বিজেপির বানরসেনা হয়ে যায়নি। অতএব শুভ কাজে বিলম্ব না করে কয়েকজন মিলে শুরু করে দেওয়া হোল একটা ছোট্ট উদ্যোগ – বিজেপি বিরোধী প্রবাসী বাঙালিদের গ্রুপ – বর্গী এল দেশে। দেশের বিভিন্ন শহরে এবং বাংলার বিভিন্ন এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেও দেখা গেল ভাবনার ধরণ একই। দলে জুড়ে গেল তারাও। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল একটা বিজেপি বিরোধী কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা করা। আমাদের মূল বক্তব্যগুলি সংক্ষিপ্ত ভাবে বলে ফেলা যাক –
বিজেপিকে আমরা কেন বাংলার জন্য বিশেষ বিপদ বলে মনে করছি
১। পশ্চিমবাংলার মত একটি সীমান্তবর্তী রাজ্য যেখানে আজও দেশভাগের ঘটনা এবং তার পরবর্তী Humanitarian Disaster মানুষের মনে একটা দগদগে ক্ষত, সেখানে বিজেপির মত একটা সাম্প্রদায়িক এবং বিভেদকামী মতাদর্শ গোটা রাজ্যের জন্য একটি অস্তিত্বের সংকট তৈরি করবে বলে আমরা মনে করি। সিপিএম, কংগ্রেস বা টিএমসি-র মত রাজনৈতিক দল গত ৫০ বছর ধরে বহু জনবিরোধী কাজ করেছে, দুর্নীতি করেছে, মানুষের অধিকার হরণ করেছে, কিন্তু তারা কেউ শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে একটা রাজ্যের ৩০% মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানানোর পরিকল্পনা করেনি।
২। পশ্চিমবাংলার জন্য CAA/NRC হল এক অভূতপূর্ব বিপদ। বিজেপি ইতিমধ্যে ঠিক করে ফেলেছে কয়েক কোটি বাঙালি হল আসলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলেই চিড়ে আর মুড়ি খাওয়া বাঙালির শুদ্ধিকরণ হয়ে যাবে। আসামের দিকে তাকালেই দেখা যাবে CAA/NRC কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ঠেকে শেখার থেকে দেখে শেখা আমরা ভাল বলে মনে করছি।
৩। বিজেপি আসলে হল হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান পার্টি। তাই যদি আজ বিজেপি জেতে, এই হিন্দি একাধিপত্যবাদীরা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাপনের প্রতিটি দিক পরিবর্তন করার চেষ্টা করবে। রবি ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, নজরুল আর সুকান্তর উদারপন্থী, মানবতাবাদী সংস্কৃতির সর্বনাশ হবে। যে বাঙালি দেবদেবীদের মন্দির থেকে বের করে ঘরের লোক করে ফেলেছে, যে শিব ঠাকুরকে বাঙালি ছাই-মাখা, গাঁজা-খাওয়া আপনজন করে ফেলেছে, সেই বাঙালিকে খাওয়ানো হচ্ছে উত্তর ভারতীয় রামের মডেল আর সিক্স প্যাক শিব। আরএসএস আর সংঘ পরিবার ঠিক করবে আমরা কী খাব, কী পরব, কার সাথে প্রেম করব, আর কী সিনেমা দেখব।
৪। বিজেপির অর্থনৈতিক মডেল, একেবারে আম্বানি আর আদানির মত বড় ব্যাবসায়ীদের লাভ বাড়াবার জন্য তৈরি। এ বিষয়ে এরা কংগ্রেসের তৈরি মডেলের অভূতপূর্ব উন্নতি করে Crony Capitalism কে একেবারে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত ৬ বছরে জিএসটি, বিমুদ্রাকরণের মাধ্যমে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সর্বনাশ করেছে, ছোট ব্যাবসাদারদের জীবন ওষ্ঠাগত করেছে, আর জনগণের টাকা পকেটে পুরেছে মালিয়া আর নিরব মোদীরা। আজকের কৃষি বিল দিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির সম্পূর্ণ কন্ট্রোল তুলে দিচ্ছে আবার বড় কর্পোরেটদের হাতে।
আমরা কী করতে চাইছি
১। বিজেপি প্রচুর টাকা খরচ করে একটা হাওয়া সৃষ্টি করছে যে এবারে তারা ক্ষমতায় চলেই এসেছে। এর উলটো দিকে আমরা একটা সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার তৈরি করতে চাই যে বিজেপি হল আসলে একটি কাগুজে বাঘ। আমরা দেশে এবং বিদেশে থাকা বাঙালিদের বলতে চাই সব প্রবাসী বাঙালি বিজেপির পক্ষে নেই।
২। বিজেপি আইটি সেল বিভিন্ন মিম, ভিডিও আর মিথ্যা প্রচার তাদের হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি র মাধ্যমে বাংলার জেলায় জেলায়, গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে একটু পাল্টা দিতে চাই। কিছু ব্যাঙ্গাত্মক রাজনৈতিক কনটেন্টের অডিও ভিসুয়াল দিয়ে কাজটা শুরু করেছি। খুব শিগগিরি তথ্যভিত্তিক বিষয়ও প্রকাশ করব – যেমন বিজেপির সোনার বাংলা আসলে কী। এটা বোঝানোর জন্য গুজরাত আর উত্তর প্রদেশে আসলে কী হচ্ছে, আর.এস.এস. আসলে কী ভাবে আর কী করে, বিজেপির রাজ্যগুলিতে মহিলাদের ওপর কীরকম অত্যাচার হচ্ছে, ইত্যাদি।
৩। আমরা মুলত আমাদের ফেসবুক পেজ এবং ইউ টিউব চ্যানেল – বর্গী এল দেশে – এর মাধ্যমে এই প্রচার শুরু করছি। আমরা চাই সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন এবং সমমনস্ক মানুষ আমাদের এই প্রচেষ্টাকে নিজেদের বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করুন।
৪। আমরা কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ভোটে জেতাতে বলছি না। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল বিজেপির বিপদ সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব মানুষকে সচেতন করা।
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
সাধু উদ্যোগ
টাকা পেলে আমি বিজেপির পক্ষে ও বিপক্ষে প্রচার করতে রাজি আছি।
একদম
সঠিক ও সময়োচিত উদ্যোগ। সাথে আছি।
আপনাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ভারতবর্ষে বিজেপি সবচেয়ে বিপজ্জনক শক্তি। পশ্চিম বাংলার নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিজেপিকে পশ্চিম বাংলায় পরাজিত করাই শুভশক্তির উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ।
সাধু উদ্যোগ
নিখাদ বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, বাম শাসনের অবসানের আগে গণমাধ্যমের এই ভূমিকা ছিল। তৃণমূলের ঘাসের ওপরেও বিষ্ঠা চোখে পড়ছে না। মাথা বিক্রি । অসাধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অনুপ্রাণিত প্রয়াস। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলা বানানোর ডাক দিক গুরু ভন্ডের দল, আর টাকা ছাপানোর মেশিন।
https://www.anandabazar.com/state/bjp-s-nri-for-bengal-campaign-shows-signs-of-conflict-1.1257870
শুভ প্রয়াসে আমার সমর্থন।
'অব কী বার, ট্রাম্প সরকার!" ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এবার-----
উদ্যোগ চমৎকার, মারা যাক সব বিজেপি এবার!
ওরা যে রকম প্রচার করে .....মানে... একটা এগ্রেসিভ ভাবে .....মিথ্য়ে কথাবলে ।..একই সঙ্গে ভুল ভাল তথ্য দিয়ে।.. এবং ।..কুরুচি পূর্ণ ভাষায় ???? তাহলে তাই বলি ।..মাথা মোটা দের মোটা মাথা দিয়ে ফাইট করি না কেন ?? যেমন ।..গরুর দুধে সোনা আছে ।...আমরা যদি দিলীপ গুন্ডা কে বলি ।..""দিলীপ বাবু ।..একটু কম জল খান ।..পেচ্ছাব হলদে হবে ।..আর সোনা বেরুবে ???? দিলীপ গুন্ডা তো জবাব দেবে না ।..কারণ ওটার শুওরের চামড়া !!কিন্তু বিজেপি ভক্ত রা ঢিট হবে !!!বা , প্রধান মন্ত্রীর ছেলে মেয়ে আছে ?? নাথাকলে উনি কি ইম্পটেন্ট ???জবাব পাবো না জানি !!কিন্তু ভক্ত রা রাগ করুক না !!!কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাক !!অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ তো এখন সংবিধান স্বীকৃত !!! সরকারের লোকেরা বলে যে !!
মানে ওরা যা করছে আমাদের তাই করতে হবে? আমরা হব ওদের মিরর ইমেজ?
এটা অনেক সিরিয়াস ব্যাপার। দিলীপ ঘোষের লেভেলে নেমে ওদের মত গালাগালি দেওয়া নয়। ওদের ট্রোলদের চুপ করানোর চেয়ে বেশি জরুরি সাধারণ মানুষের মধ্যে গিয়ে বোঝানো। ওরা মানুষের ভেতরে যে জাতি-ধর্মভিত্তিক ঘৃণা জাগিয়ে তুলছে সেটার মোকাবিলা করা।
লঘুচালে গুরু বিষয়ে চন্ডালের প্রয়াস।
নাম করে পলিটিকাল পার্টির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার ব্যাপারটাতে আমার সায় নেই। তবে যাঁরা করছেন, তাঁরা যদি নিজেদের conflict of interest declare করেন এবং খোলাখুলি বলেন যে আমরা অমুক পলিটিকাল পার্টির অ্যাফিলিয়েট, সেটা অন্য ব্যাপার।
একটি গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় ভোট চাওয়া যেতে পারে, কাকে ভোট দেওয়া যেতে পারে তাই নিয়ে তথ বহুল আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়, ফ্যাসিস্ট আইডিয়ার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখুন, এসব ই গণতান্ত্রিক একতিয়ারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু একটি লেজিটিমেট পলিটিকাল পার্টির বিরুদ্ধে নাগরিক পরিসরে এভাবে জনমত তৈরীর প্রয়াসটি দেখে মনে হচ্ছে আপনারা কোথাও স্টেপ ওভার করছেন কিনা বিচার বিবেচনা করে দেখার জায়গা আছে।
ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা আর নাম করে রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা এক নয় কিন্তু। নিউজ লিটারেসি বাড়ানোর প্রয়াস সমর্থনযোগ্য, সরাসরি এই ধরণের আক্রমণ কতটা যৌক্তিক, বিশেষ করে গুরুচণ্ডালীর মতন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, এ নিয়ে তর্কের অবকাশ রয়েছে।
খুব ভাল লাগলো। খুব প্রয়োজনীয়।
এতে বাংলার বাইরের ভারতের বাংগালী দের ও নিশ্চয়ই খবর দেওয়া হচ্ছে। আমি আমার বন্ধুদের বলবো।
কে পয়সা ঢালছে - ছিপিএম, তিনোমুল নাকি সোজাসুজি পেট্রো ডলার ?!
সহমত ।
১৯২১-১৯৪৩ ইতালী ১৯৩২-১৯৪৫ জারমানীর শিক্ষা যাঁরা ভুলে যেতে চান তাঁদের করুনা করি।
বিজেপির তাত্ত্বিক (? ) ভিত্তি হল আর এস এস, যারা কোন ভাবেই মুসলিম দের সহ্য করতে রাজি নয়। কাজেই এদের প্রতি পদক্ষেপের পিছনে আছে মুসলিম বিরোধী চিন্তা, কখনো প্রকাশ্যে কখনো প্রচ্ছন্নভাবে। এমনিতেই বাঙালি হিন্দু ওদের চোখে যথেষ্ট হিন্দু নয়। অতএব যেকোনো ভাবে বিরোধ তৈরি করে, অসত্য তথ্য/খবর/ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে এরা হিংসা ও বিভেদ সৃষ্টির কাজে মত্ত। সরকার পরিচালনার প্রতি ক্ষেত্রে এদের অপরিসীম ব্যর্থতা থেকে নজর সরাতে চলে পাকিস্তানের ধুয়ো, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রভৃতি। নাজী পার্টি র সাথে এদের কোন তফাৎ নেই।
কাটমানির ভাগ এলো?