এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • আমাদের বিজ্ঞান গবেষণা - একটি ন্যারেটিভ

    অমিত মজুমদার লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৭১৮ বার পঠিত
  • অবধারিত পরনিন্দা পরচর্চা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সরল সমাধানসূত্র নির্ণয় এবং আপৎকালে পিঠটান ছাড়াও আমরা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকি - বিজ্ঞান গবেষণা। সবাই নয়, কয়েকজন (বাকিরা অবশ্যই মতামত রাখেন)। এবং আমাদের অর্থাৎ কিনা গবেষকদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আহা, আর কিইবা চাইতে পারো? ভারতবর্ষের ন্যাজে খেলানো রাজনীতি ছেড়ে তুমি পেয়েছ গবেষণা ...
    অবশ্যই বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা বিশেষ কিছু কারণে তার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। তবে শিরোণাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এ লেখা সেসব নিয়ে নয়। অতএব অবতরণিকা ছেড়ে শুরু হোক অবতরণ। স্বখাত সলিলে নামি ধীরে ধীরে এক পা, দুই পা - ইল্বল আমাদের ডাকছে।

    ধক থাকলে নেমে পড়ুন
    খেলার মাঠে
    লেঙ্গি খান এবং মারুন
    সময় বুঝে
    --------------------
    আদ্যিকাল থেকে এর শুরু। ঘর জুড়ে রেখে জগদীশ বোস গবেষণা করছে কেন! মার ঠ্যাঙ ধরে টান, ইস্তক গালাগাল। বিদেশ থেকে বিজ্ঞানী এলেন, দেখলেন এবং ধমক দিলেন। অত:পর নুন এবং জোঁকগুলি টুপটাপ খসে পড়ল। আর এক দক্ষিণী বৈজ্ঞানিক F.R.S (Fellow of Royal Society) হলেন, কিছুদিন পর নোবেল পেলেন। কুলোকে বলে, নোবেল পুরষ্কার ঘোষণার বহু আগে থাকতেই তিনি জাহাজের টিকিট কেটে রেখেছিলেন! এই স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক এবং তৎকালীন আর এক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মেঘনাদ সাহা, কেউ তাঁদের সমসাময়িক এক উজ্জ্বল প্রতিভাকে F.R.S এর জন্য nominate করেন নি। সেই প্রতিভার নাম সত্যেন্দ্রনাথ বসু। বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গেছে, ""বুড়োটা শেষ করে দিল''। এই বুড়োর ডাকনাম রিলেটিভিটি।

    লেঙ্গি খেলা এখনও চলছে পুরোদমে। তার সবথেকে বড় ময়দান - শান্তিস্বরূপ ভাটনাগর অ্যাওয়ার্ড। গবেষণাকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে এই দৌড় শুরু হয় - চলে পঁয়তাল্লিশ বছর পার না হওয়া তক। কুকুর মাত্রেই অন্যান্য প্রাণীর থেকে বিশ্বস্ত। তবু সংখ্যা বেশী হলে যা হয় - তারই মধ্যে দীর্ঘকালীন বিশ্বস্ততা ও তার নিদর্শন, কোনটা কম চ্যাঁচামেচি করে, বেশী হাত পা চাটে ইত্যাদি নানাবিধ গুণ বিচার শেষে শিরোপা প্রদান। সাম্প্রতিক কালে এর ভুরিভুরি নিদর্শন আছে যাদের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের নামগুলির উপর চোখ বোলালেই এই সত্য বের হয়ে আসে। ফলত: ছাত্র গবেষকদের বকলমে এই উপাধির নাম ঈষৎ সম্মানযোগে দাঁড়িয়েছে ""ভাঁটনাগর''। এই চূড়ান্ত ছোটলোকামির মুকুটে শেষ পালক - সম্প্রতি জগদীশ চন্দ্র বোস অ্যাওয়ার্ড প্রদান - প্রাপক এক "হাইপ্রোফাইল' থিওরিটিক্যাল কেমিষ্ট!

    মৎস্য ধরিয়া খাইব সুখে
    ----------------------
    বাস্তবে গবেষণার টাকা আসে জণগণের পকেট থেকেই, প্রকারান্তরে। গবেষণাকেন্দ্রের গবেষকরা প্রজেক্ট লিখে পাঠান উচ্চস্থানে এবং (লেঙ্গি খেলে বা সাবধানে বাঁচিয়ে) বিবেচনার পরে স্বীকৃত হয়। নেহাৎ আতা না হলে প্রত্যাখ্যাত হয়না, সরকার মুক্তহস্ত। কয়েক লাখ থেকে শুরু করে কয়েককোটি টাকা অবধি এই স্বীকৃত প্রজেক্টগুলির জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গার ভরাডুবি হয়, জোড়াতালি দেওয়া ছবি দেখিয়ে সাতখুন মাফ। আর কিছু ক্ষেত্রে পর্বতের মূষিক প্রসব। কয়েকলাখ টাকা খরচ করে একটি কি দুটি বামন গবেষণাপত্র, যারা হ্যান করেঙ্গা থেকে শতহস্ত দূরে। শত্তুরের মুখে দিয়ে ছাই, পুনরায় প্রজেক্ট পাঠাই। এবার আরো বেশী টাকা চাই এবং চাপের কিচ্ছু নাই। খুঁটিয়ে দেখলে এর কারণ মূলত দুটি। প্রথমত, যোগ্যতা ও প্রয়োজন বিচার না করে অধিকাংশ ক্ষেজে পোষ্যদের রুটি দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বর্তমান কালে গবেষকদের মধ্যে গেঁড়ে বসা ব্যবসায়ীপনা। প্রজেক্টের টাকা আসছে, অতএব চিন্তাভাবনা শিকেয় তুলে রাখা। কিছু ক্ষেত্রে মোবাইলের বিল মেটানো ও গেরস্থালীর জিনিষপজ খরিদ করার দরুণও এর সদ্বব্যবহার হয়। মেয়াদ শেষ হয়ে এলে নাভিশ্বাস। এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে ঝেড়েমুছে জোড়াতালি দিয়ে তিরিশ পাতা ভূমিকা ও পঁচিশ পাতা ভবিষ্যত পরিকল্পনা সমেত ষাট পাতার প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা পড়ে যায়। এরেই কয় হাতে গরম গবেষণা। সাত মণ তেল পোড়ে, রাধা নাচে না।

    থালাতে খাইব মেঝেতে হাগিব
    ---------------------------
    এই ক্ষেজে একচ্ছত্র আধিপত্য যার, তার নাম রসায়ন গবেষণা। লেড, আর্সেনিক, মার্কারি - এদের রাসায়নিক যৌগ, কাজ শেষ হওয়ার পর অবিকৃত অবস্থায় যেটুকু পড়ে থাকে অথবা কাজ ঠিকমত না হলে ব্যবহৃত পুরো অংশটির লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় বেসিনে। অত:কিম? অত ভাবলে চলে না গুরু। এই তিনজনের সম্পর্কে আমরা অনেকেই অল্পবিস্তর অবহিত। বাকিদের কথা থাক, খামোখা আর কেন গুরুপাক করা। এছাড়া আছে সায়ানাইড, বহু পরিচিত তিনটি অজৈব অ্যাসিড ইত্যাদি ইত্যাদি। অধিকন্তু ন দোষায় - অ্যালকোহল বাদে সমস্ত জৈব দ্রাবক জীবজগতের পক্ষে ক্ষতিকরক। হাতে হাতে নমুনা - ডাইক্লোরোমিথেন, ক্লোরোফর্ম, ডাইমিথাইল ফর্মামাইড, ডাইমিথাইল সালফাইড ইত্যাদি - হাতে ঢেলে দেখুন, পরীক্ষা প্রার্থনীয়। বেঞ্জিন স্কিন ক্যান্সার ঘটাতে সহায়ক, পিরিডিন বন্ধ্যাত্ব ঘটাতে। এদের সবারই সদগতি হয় সেই বেসিনে এবং অবশেষে মা প্রকৃতি। মোটামুটি অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল একটি গবেষণাগারে মাসে কম করে ৫০ লিটার জৈব দ্রাবক বেসিনে যায়। খুব কম কেমিক্যাল রিয়েজেন্ট আছে যাদের বোতলের গায়ে irritant, strench, corrosive, harmful, deadly, poisonous এগুলির কোন একটি বা একাধিক লিপিবদ্ধ নেই! প্রকৃতি আমাদের দু হাত ভরে দিয়েছে। আমরাও তাই অকৃপণ হাতে ঢেলে দিই বিষ।

    বিতর্কিত বিষয়: পারমাণবিক গবেষণা
    -----------------------------------
    এখানে শুধু একটি কবিতার লাইন যাইবে -

    পুরুষের বীজে বিষ এসে মিশে যায়
    নারী ও শস্য ক্ষয়ে যায় পিঠোপিঠি
    হেলিকপ্টার পাক মেরে গর্জায়
    একতিলও নেই রেডিওঅ্যাকটিভিটি

    মেঘে ঢাকা তারা
    ---------------
    কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটে, না বললে অন্যায় হবে। বিখ্যাত এক বৈজ্ঞানিক ভাটনাগর অ্যাওয়ার্ডের জন্য নিজের নামের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। আর এক বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট পাইয়ে দেওয়ার খেলার বিরোধিতা করেন। ফলত: পরবর্তী কালে তাঁর নিজের পাঠানো প্রজেক্টের ফলাফল পেতে আশ্চর্য্য রকম দেরী, বারবার চিঠি দেওয়া সত্বেও কোন উত্তর না আসা। অত:কিম! না দমে গিয়ে সোজসুজি রাজীব গান্ধীকে চিঠি লেখা এবং অবশেষে সেই প্রজেক্টের চটজলদি অনুমতিপত্র প্রাপ্তি। তবু এরা শুধু ব্যতিজম হয়ে থেকে যায়, চারিপাশে শামুক শামুক শুধু। ইল্বল ডাকছে। সময় এগোচ্ছে দ্রুত। বিস্ফোরণ আর বুঝি ক্রোশ দুই বাকি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৭১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন