এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • তালিয়া

    কনফুসিয়াস লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৫৩১ বার পঠিত
  • বাংলাদেশ কিসে চ্যাম্পিয়ন বলুনতো? ফুটবলে না, ক্রিকেটে না, বাস্কেটবল বা ভলিবল দুরে থাক, এমনকি হা-ডু-ডু তেও না। বিগত পাঁচ বছর ধরে আমরা এমন একটা বিষয়ে চ্যাম্পিয়ান হয়ে আসছি, যেটার কথা আমাদের শিশুরা কখনো তাদের সাধারণ জ্ঞান বইয়ে খুঁজে পাবে না। অ্যাল্‌,ছি ছি, শিশুদের এর মধ্যে টানা উচিত নয়, এটা একেবারে অ্যাডাল্ট ওনলি ব্যাপার।

    কষ্ট করে মাথা চুলকে আর নতুন কোন খেলার নাম বের করতে হবে না। এখানে কোনো রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের গোয়েন্দা গল্প লেখা হচ্ছেনা, তাই বলেই দেওয়া যাক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ইন্ডেক্সে বাংলাদেশ এক নম্বরে! কানে কানে আরও বলি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুযায়ী দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হবার ক্ষেত্রে যাদের সবচে বেশি অবদান -- তাদের নাম হচ্ছে পুলিশ। আইনের রক্ষক যাদেরকে বলে। বেশ বুঝতে পারছি, আর কোথাও চ্যাম্পিয়ন না হতে পারার যাতনা যেন আমাদের সইতে না হয়, পুলিশ বাহিনী সে জন্যে দিনরাত বিস্তর খেটে রীতিমত প্রাণপাত করে দিচ্ছে ।

    আহা, এ হেন প্রচেষ্টার জন্যে তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়।

    বাচ্চালোগ, তালিয়া বাজাও!
    --------------------------------------------------------------------------------------------------

    গত সোমবার দুপুরে গুলশানের শ্যুটিং রেঞ্জে প্রাকটিস করছিলেন আমাদের জাতীয় শ্যুটার আসিফ হোসেন খান।

    এমনিতে শ্যুটিং ব্যাপারটা আমাদের গরীব দেশের মানুষদের খুব একটা প্রিয় খেলা নয়। কিন্তু আসিফ নিজে খুব জনপ্রিয়। বিশ্বমানের প্রতিযোগিতাগুলোর হিটেই বাদ পড়ে যাওয়াটা আমাদের কাছে ডাল-ভাতের মত ব্যাপার। এমনকি সাফ গেমসের মত ঘরের পাশের টুর্নামেন্টেও আমরা খেলোয়াড় পাঠিয়েই সন্তুষ্ট থাকি। কোন পদক আশা করি না কখনো, খেলে টেলে গায়ে খানিকটা ধূলো মেখে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসুক, এরকমই আমাদের চাওয়া।

    প্রায় নিয়মে পরিনত হয়ে যাওয় রুটিনটায় বাদ সাধলেন এই আসিফ। ২০০২ এর কমনওয়েলথ আর ২০০৪ এর সাফ গেমসে তিনি দু'দুটো সোনা বাগিয়ে নিয়ে এলেন। রীতিমতন তুলকালাম ব্যাপার। গরীবের ঘরে হাতির পা! দেশের মানুষ নিজেদের গায়ে চিমটি কেটে দেখল, ভুল করে দেশের ক্রীড়াংগনে কোথেকে একটা তারা এসে জুটেছে, যার কল্যাণে এ ধরনের গেমসে আমরা আর কিছুতে না হোক, শ্যুটিংএ একটা সোনা জেতার স্বপ্ন রাতের বদহজম না হওয়া ছাড়াও দেখতে পারি।

    তো যা বলছিলাম, সোমবার দুপুরে তিনি আরো কয়েকজন শ্যুটারের সাথে প্রাকটিস করছিলেন। সেখানকার মিলনায়তনেই চলছিল এশিয় মহিলা উদ্যোক্তাদের ঈদ মেলা। মেলায় আসা অতিথিরা গাড়ি পার্ক করছিলেন রেঞ্জের সামনেই। কিন্তু একটা গাড়ি পার্কিংএর জায়গা বাদ দিয়ে এসে পার্ক করল ঠিক গেটের সামনে।

    একেবারে যেন অ্যাকশান সিনেমার ক্লাইম্যাক্স! পাঠক কি ভাবছেন? এটা নিশ্‌চয় কোন মন্ত্রীর গাড়ি। না, হলো না। তাহলে? কোনো সচিব, কিংবা আমলা? অথবা, নিদেনপক্ষে গোয়েন্দা কিংবা পুলিশ বাহিনীর প্রধানের গাড়ি?

    তাও হলো না। ওটা ছিল পুলিশের ডিআইজির স্ত্রীর গাড়ি।

    হু হু বাবা,বাঘে ছুঁলে আঠার, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা, আর পুলিশের বউ ছুঁলে? ক্যালকুলেটর লাগবে মশাই, দু হাতের আঙুলে হবে না!

    আবারো, যা বলছিলাম। গাড়ি ওখানে রাখায় রেঞ্জের দারোয়ান বললেন গাড়ি সরিয়ে নিতে। কিন্তু পুলিশের-স্ত্রীর-গাড়ির-ড্রাইভার! তার একটা প্রেস্টিজ আছে না? ড্রাইভার জানালেন, এই গাড়ির-মালিকের-স্বা¡মীর-পদবী হলো ডিআইজি। সুতরা গাড়ি সরবে না।

    লেগে গেলো কথা কাটাকাটি। ড্রাইভার সাহেব হাত চালিয়ে বসলেন। সুতরাং কথা কাটাকাটি অচিরেই বদলে গেল হাতাহাতিতে। পাশ দিয়েই নাকি টহলরত পুলিশের দল হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছিলেন। গন্ডগোল দেখে তারাও এসে হাত লাগালেন। খালি হাতে কি আর তাদের মানায়? সেই হাতে লাঠিও ছিল।

    এদিকে গোলমাল শুনে রেঞ্জের ভেতর থেকে শ্যুটাররা দেখতে এলেন কি হলো। আসিফও ছিলেন সেই দলে। পুলিশের সাথে মারামারি দেখে তারা সেটা থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু পুলিশ তখন দারুন ফর্মে। তারা সামনে যাদের পাচ্ছে তাদেরই পেটাচ্ছে। শ্যুটারদেরও মেরে বসলো। মাটিতে ফেলে মার। কয়েকজন দৌড়ে দোতলায় গিয়েও নিস্তার পেলেন না, সেখান পর্যন্ত ধাওয়া করে গিয়ে মেরে আসা হলো সবাইকে।

    যাবার সময় আসিফ সহ আরো পাঁচজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে গিয়ে আরেকদফা মার। হাতে, পায়ে, পায়ের তলায় লাঠি দিয়ে অমানুষিক মার। লাঠি ভেঙ্গে গেলে হকিষ্টিক দিয়ে শুরু হলো।

    এর মাঝে আসিফ কয়েকবার নিজের নাম ও পরিচয় বললেন। তার উত্তরে তাকে বলা হলো, "রাখ তোর শ্যুটার!'

    বাহ বাহ, একদম চ্যাম্পিয়ানের মত কথা! ওনারা বছর বছর দেশকে চ্যাম্পিয়ান বানাচ্ছেন, তাদের কাছে আসিফ কোন ছার!

    শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আসিফ মোটামুটি চলৎশক্তিহীন। বাম হাতে কোন শক্তি পাচ্ছেন না। ডান হাতও তথৈবচ। আর কোনোদিন রাইফেল হাতে নিতে পারবেন কিনা বলা যাচ্ছে না। যদিও এর মাঝেই তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অভিমান নিয়ে ঘোষনা দিয়েছেন, তিনি শ্যুটিং ছেড়েই দেবেন।
    --------------------------------------------------------------------------------------------------

    পত্রিকার পাতা খুললেই শুধু পুলিশি কীর্তির খবর পাই। কদিন আগে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছিল তারা, সে ছবি পত্রিকায় দেখে শিউরে উঠতে হয়। তারো কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে পিটিয়েছিল সাংবাদিক। কয়েকদিন আগে দেখলাম হরতালরত বিরোধীদলীয় নারী কর্মীদের পরনের জামা ছিড়ে ফেলতেও তাদের একটুও হাত কাঁপেনি।

    নাহ, এসবে কোন সমস্যা নেই আমাদের। বিরোধীদলীয় নারীকর্মী, ফটো সাংবাদিক কিংবা প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এঁরা কেউই আমাদের খুব একটা উপকারে আসবেন না। কাজে আসবেন না আসিফও। একটা দুটো সোনা দিয়ে কিই বা হবে আমাদের? ডিআইজির বউএর কানের দুলেও তার চেয়ে বেশি পরিমান সোনা থাকে।

    সুতরাং পিটিয়ে সবার হাতপা ভেঙ্গে দিন, দেশ ছাড়া করুন, কোন অসুবিধা নেই।

    শুধু ভাবি, পুলিশের দায়িত্বে থাকা বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কি একবারো ভেবে দেখেছেন, প্রতি পাঁচবছর পর সবার পেছনেই "প্রাক্তন' শব্দটি যোগ হবার একটা প্রবল সম্ভাবনা থাকে? তিনি নিজে যখন 'প্রাক্তন' হবেন তখন এই ফ্রাংকেনস্টাইনের হাত থেকে তিনি নিজেকে বাঁচাতে পারবেন তো?

    বাচ্চালোগ, তালিয়া থামাও। এর চেয়ে বরং বসে বসে নামতা পড়ো, পাঁচ-এক্কে-পাঁচ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২০ এপ্রিল ২০০৭ | ৫৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন