এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • কোনাল ইয়েলোক্ল-এর আজগুবি কাণ্ডকারখানা (আইরিশ উপকথার আংশিক অনুবাদ)

    বিক্রম পাকড়াশী লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ৯৮৫ বার পঠিত
  • এরিন বলে এক শহরে এক সময় কোনাল ইয়েলোক্ল বলে এক হাট্টাকাট্টা পোক্ত জোয়ান ভাড়ায় থাকতো। তার ছিলো তিন ছেলে। এরিনে তখন রাজাগজার আকাল, তাই ঐ এক শহরেই কে রাজা হবে তা নিয়ে বড়োলোকদের মধ্যে বড়োই খেয়োখেয়ি লেগে থাকতো। সে যাই হোক, কোনালের বাড়ির কাছে যে বড়োলোকের দাপট বেশি তাদের সঙ্গে কোনালের ছেলেদের একদিন মহা ঝামেলা বাধলো। কোনালের ছেলেরা বাপকা বেটা, তাদের সাথে বড়োলোকের ছানাপোনারা পারবে কি করে? মারপিট করতে গিয়ে বড়োলোকের বড়ো ছেলে বেঘোরে প্রাণটি খোয়ালো।

    বড়োলোকের বড়োই অহংকার, কারণ সে নাকি আসলে রাজা। বেশ, তাকে আমরা রাজামশাই বলেই না হয় ডাকবো। তো সেই রাজামশাই পুত্রশোকে অস্থির হয়ে কোনালকে এত্তেলা পাঠালেন - রে কোনাল! আমার ছেলে তোর কি ক্ষতি করেছিলো যে তোর ছেলেরা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মেরে ফেললো? আমি চাইলে এখনি এর বদলা নিতে পারি, কিন্তু সে বদলা নিলে তোর আর আমার তফাত রইবে না। আমি মনস্থ করেছি, তোকে এক কঠিন কাজ দেবো। সে কাজ করতে পারলে আমি তোর ছেলেদের প্রাণভিক্ষা দেবো। লগলানের রাজার আস্তাবলে যে বাদামী ঘোড়াটা আছে সেটা নিয়ে আয়, তোর ছেলেরা প্রাণে বেঁচে যাবে।

    জবাবে কোনাল জানালো - জাঁহাপনার খুশির জন্য আমি সদাই তৎপর, কিন্তু তা না পারলে আমার ছেলেদের প্রাণসংশয় নিয়ে যে খুব মাথাব্যথা আছে তা নয়। যাই হোক, জাঁহাপনার আদেশ পালন করা কঠিন বটে, কিন্তু আমি কথা দিলাম, যে হয় মন্ত্রের সাধন নয় শরীর পাতন হবে, আমার আর ছেলেদের প্রাণ থাকতে আমরা সে ঘোড়া না নিয়ে ফিরছি না।

    কোনাল পরদিন ভোরে উঠে তার তিন ছেলেকে নিয়ে সমুদ্র ধরে সোজা লগলানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। আর সেইখানে গিয়ে যেমনটা হওয়ার তেমনিই হলো, কোনাল ধরা পড়ে গেলো। কিন্তু কোনাল হলো এরিনের বেশ পুরনো আর পোক্ত লোক - তাকে কে না চেনে। লগলানের রাজা অবধি দেখে হাঁ - আরে কোনাল, আমি কি যা দেখছি তা সত্যি! কোনাল বলে - স্যার, সব সত্যি স্যার। কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে একাজ করতে রাজি হয়েছি। আমার অবস্থা বড়োই করুণ। এই বলে কোনাল তার দু:খের কথা লগলানের রাজাকে শোনালো। - এবারে বলুন স্যার, আমি যদি এ ঘোড়া চাইতাম, তবে কি আর পেতাম? নিরুপায় হয়ে আমি তস্করবৃত্তি অবলম্বন করেছি। এখন আপনি আমাকে যে শাস্তি দেবেন আমি মাথা পেতে নেবো।

    রাজা সে গল্প শুনে বললেন, হুম্‌ম্‌ম্‌ম্‌ম, আগে ভেতরে এসো। এই, ওদেরকে কিছু জলযোগের ব্যবস্থা করে দাও। আর একদম নজরবন্দী করে রাখো। কোনাল, বাপ আমার, শোনো, মনে করো কালকে তোমার ছেলেদেরকে ধরে ফাঁসি দেওয়া হবে - এর চেয়ে বেশি পাকে কোনওদিন পড়েছো? আমি বলছি না এমনটা হবেই, তবে হতেও তো পারে? তুমি যেমন নিরুপায়, আমিও তেমন নিরুপায়। তবে আমার দয়ার শরীর, যদি তুমি এমন একখানাও ঘটনা বলতে পারো যা আজকের এই অবস্থার মতো বা তারও বেশি মুশকিলের, তাহলে হয়তো তোমার ছেলেগুলো বেঁচে যাবে।

    এই শেষ সুযোগ দেখে কোনাল বললো - আছে, এমন ঘটনা আছে। শুনুন তবে। আমার যখন বয়েস কম ছিলো, তখন আমাদের অবস্থাও বেশ ভালো ছিলো। আমার বাবার জমিজমা ছিলো কিছু, আর ছিলো প্রচুর গরু। তা এদের মধ্যেই একটা গরু একদিন সবে বাছুর বিয়েছে, আর বাবা বলেছে সেটাকে ঘরে নিয়ে ফিরতে। আমি ফিরছি, এমন সময় বরফ পড়তে আরম্ভ করলো।

    বরফ থেকে বাঁচতে আমি গরু আর ঐ কচি বাছুরটাকে নিয়ে গরুর ঘরে ঢুকে বসে আছি, এমন সময়, সে কি অদ্ভুত ব্যাপার যে কি বলবো, দেখি তাতে দশ দশটা বেড়াল ঢুকলো, সামনে তাদের পাণ্ডা, আরও একটা বেড়াল। সে ব্যাটার আবার একটা চোখ, গায়ের রঙ দেখলে শেয়াল বলে বেভ্যুল হয়ে যায়। এইসব বেড়ালের কারবার আমার প্রথম থেকেই মোটেও সুবিধের লাগছিলো না। দেখলাম ঠিকই ভাবছিলাম। হেড বেড়ালটা বাকিদের বললো - খামোখা বসে থেকে লাভ কি? তার চেয়ে তোরা কোনালকে একটু গান ফান গেয়ে শোনা না। বেড়ালগুলো যে কি করে আমার নামটা জানলো কে জানে? যাই হোক, গান থামলে একচোখো বিল্লি বললো - কি হে। গান গাইলাম, তার বকশিশ পাবো না? আমি বললাম - আমার কাছে কিছু নেই, যদি না ঐ বাছুরটা নিয়ে তোমাদের কোনও লাভ হয়। আর যেই না বলা, এগারোটা বেড়াল মিলে ঝাঁপিয়ে বাছুরটা মেরে একদম চাকুম চুকুম করে খেয়ে শেষ করে দিলো।

    কিন্তু একটু বাদেই সেই বেড়ালের পাণ্ডা উশখুশ করে উঠে বললো - খামোখা বসে থেকে লাভ কি? তার চেয়ে তোরা বরং কোনালকে আরেকটা গান শোনা। গানে আমার উৎসাহ নেই, কিন্তু কে শোনে কার কথা। এগারোটা বেড়াল, সামনে দাঁড়িয়ে গান ধরলো। আর ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, গান শেষ হতেই তাদের বকশিশের আব্দার শুরু হলো। ভয়ে ভয়ে বললাম - আমি কতবার বলছি আমার দেবার মতো কিচ্ছু নেই, এই গরুটা খালি পড়ে আছে। আর যেই না বলা, এগারোটা বেড়াল গরুটার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে মেরে একেবারে খেয়ে সাবড়ে ফেললো।

    আর ঠিক যেমন আগের বার হয়েছিলো, সেভাবে একটু বাদেই একচোখো বেড়ালটা হাঁ করে বলে উঠলো - খামোখা বসে থেকে লাভ কি? তার চেয়ে তোরা বরং কোনালকে আরও একখানা গান শোনা। আমি দিব্যি বুঝতে পারলাম যে এবারে আমার পালা। তাই এবারে যেই ওরা গান শেষ করে বকশিশের জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলো , আমি বললাম - সব তো নিয়ে নিলে, আর কতো? আমার কাছে এবারে কিছুই নেই। লোভে ওদের চোখ চকচক করে উঠলো, আর এগারোটা বেড়ালে মিলে ওয়াঁ ওয়াঁ করে আগে কে যাবে তাই নিয়ে সে যে ঝগড়া আরম্ভ করলো কি বলবো। আমিও মওকা বুঝে যা থাকে কপালে বলে জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিলাম। তখন বয়েসটা কম বলে গতরে শক্তিটাও বেশি, আর তেমন চটপটে পা। তরতর করে গাছ বেয়ে উঠছি আর টের পাচ্ছি পেছনে বেড়ালগুলো আমায় খুঁজছে। আমি গাছে ঘাপটি মেরে রইলাম আর বেড়ালগুলো আমায় খুঁজে বেড়াতে লাগলো। কিন্তু একচোখো শিয়ালরঙা বেড়ালটা ধুরন্ধর। সে ঠিক গাছের তলায় এসে দাঁড়িয়ে বললো - তোদের দু দুটো করে চোখ আছে কি করতে? ঐ দেখ, রাস্কেলটা গাছে উঠে বসে আছে। লে চু: চু:, বলে সে একটা বেড়াল আমার ওপর লেলিয়ে দিলো। তবে আমার নামও কোনাল, যেই সে বেড়াল আমার ওপর লাফাতে যাবে,আমার সঙ্গে অস্ত্র ছিলো একটা, তার ভবলীলা তক্ষুনি সাঙ্গ করে দিলাম।

    এবারে ওদের লীডার একটু ঘাবড়ে গেলো - বেড়াল মলে তো ওর দল আর ভারী থাকে না। এবারে বেড়ালগুলো বুদ্ধি করে করলো কি, গাছের শেকড়ের কাছে আঁচড়ে আঁচড়ে এমন মাটি তুলতে শুরু করলো যে আমি বুঝলাম গাছের মাথায় চড়ে খুব বেশিক্ষণ যুঝতে পারবো না। বেড়ালগুলো আমায় গাছ থেকে ফেলবে বলে যেই নাড়া দিয়েছে, আমি ভয়ের চোটে বাঁচাও বাঁচাও করে এক চিৎকার দিলাম। সে চিৎকার যে সে চিৎকার নয় স্যার। কাছেই এক গির্জায় ছিলো এক পাদ্রি - আর তার সঙ্গে ছিলো দশ দশটা জোয়ান লোক। পাদ্রিসাহেব শুনেই বললেন - ব্যাপারটা সুবিধের লাগছে না, চলো দেখি। কিন্তু ঐ দশ জনের একজন বললো - এভাবে দুম করে দেখতে যাওয়া কি ঠিক হবে, শব্দটা আবার হয় কি না দেখি। আর যেই না বলা, সেই সময়েই বেড়ালগুলো একটা মোক্ষম নাড়া দিলো আর আমি আগের থেকেও বেশি চেঁচাতে লাগলাম। এবারে পাদ্রিসাহেবের প্রতীতি হলো। বললেন - চলো তো দেখি! আর ঠিক এই সময়, বেড়ালগুলো গাছ বেয়ে উঠতে শুরু করলো আর নিচ থেকে বাকিরা গোড়া ধরে নাড়াতে লাগলো। শেষ আশায় আমি আবার বাঁচাও বলে এক গগনবিদারী আর্তনাদ করলাম। সে আওয়াজ ঠিক ওদের কানে গেলো, আর ওরা হৈ হৈ রৈ রৈ করে বেলচা নিয়ে দৌড়তে দৌড়তে এসে দশ আর একে এগারোটা বেড়ালকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিলো। তবে আমি সে গাছ থেকে নিজের জানটা হাতে করে নামতে পারলাম। আপনি বলুন স্যার এমন ভয়ংকর অবস্থার থেকেও কি কালকে আপনি যা করবেন বলছেন তা বেশি ভয়ংকর?


    লগলানের রাজা বললেন - হো: কোনাল, তোমার গুলের নেই সীমা। কিন্তু গল্পটা হয়েছে বেশ। তোমার ছোটো ছেলেকে আমি মাপ করলাম। কিন্তু তুমি যদি তার পরের ছেলেটিকে চাও, তবে তোমায় এমন এক ঘটনা বলতে হবে, যা আগের গল্পের থেকেও খতরনাক। কোনাল দেখলো, সব এখনও শেষ হয় নি। সুযোগ আছে। সে বললো, বেশ, আপনি আজ্ঞা দিলে শোনাই তবে আরেক কিস্যা।

    আমার যখন বয়েস কম ছিলো, তখন আমাদের অবস্থাও বেশ ভালো ছিলো। আমার বাবার জমিজমা ছিলো কিছু, আর সেই জমি ছিলো সমুদ্রের ধারে। আর সে কি সমুদ্র, যেমন তার পাথর, পাশ দিয়ে খাড়া পাহাড় উঠে গেছে, নিচে লুকনো সব গুহাকন্দর। তো আমি বেশ ওপর দিয়ে হাঁটছি, হঠাৎ দেখি দুটো বিরাট পাথরের মধ্যে জলের ওপর যেন ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এমন কাণ্ড আগে দেখি নি। হাঁ করে দেখছি, হাঁটছি আর ভাবছি - জলে ধোঁয়া? এ কি রে বাবা! তাতে করে যেটা হলো, পথ দেখে না চললে যা হয় তাই হলো। ভাগ্যিস যেখানে পড়েছিলাম সেখানে নরম ঘাস ছিলো, তাই বাঁচোয়া, নইলে তো হাড়গোড় একেবারে গুঁড়ো হয়ে যেত। ওপরে তাকিয়ে দেখি বহু উঁচু থেকে পড়েছি, কি করে নিস্তার পাবো জানি না। ঐ পাথর বেয়ে উঠতে দিন কেটে যাবে। কিন্তু এই পাণ্ডববর্জিত ঘাসের ওপরে বসে থাকলে তো একেবারেই মরে যাবো।

    বসে বসে দু:খ করছি আর ভাবছি, হঠাৎ দেখি এক বিরাট দৈত্য দু ডজন ছাগল আর একটা রামছাগল নিয়ে মহা সাড়াশব্দ করতে করতে আসছে। ছাগলগুলোকে বেঁধেছেঁধে সেই দৈত্য বললো - আরে কোনাল যে। কবে থেকে তোর মাংস খাবো বলে ছুরি নিয়ে ঘুরছি, তুই তো তাতে মরচে ফেলতে বসলি। আমি দেখলাম যে গভীর বিপদ। মাথা না খাটালে নিস্তার পাওয়া যাবে না। আমি বললাম - সে আর বলতে। কিন্তু খাবার আগে একটা কথা ভেবে দেখো, তুমি আমায় ছিঁড়ে খেলে তোমার হবে এক রাতের খানা। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোমার আবার একটা চোখ কানা। আমার সম্বন্ধে তো অনেক কিছুই জানো, কিন্তু এটা কি জানো যে আমি বেশ ডাকসাইটে কবরেজও বটে? শেকড় বেটে তোমার ও চোখের আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পারি।

    সে শুনে সেই মুশকো দৈত্য বেশ খুশি হয়ে একটা বিশাল হাঁড়ি এনে আগুনে বসালো। আমি তো শেকড় বাকড় লতা গুল্ম কুড়িয়ে বেশ একটু রজন বের করলাম। তারপরে ঐ দৈত্যের ভালো চোখটাকে প্রথমেই এসব দিয়ে অন্যটার মতো কানা করে দিলাম। চোখ ভালো করার চেয়ে খারাপ করা অনেক বেশি সোজা। যখন বুঝলাম যে দৈত্য আর কিছুতেই দেখতে পাচ্ছে না, আমি তখন বীরদর্পে বললাম - দেখ কেমন লাগে। তোকের নাকের ডগা দিয়ে আমি বেরিয়ে যাবো। আর তোর জন্য থাকবে ডডনং। সেই শুনে দৈত্য বিপুল ঝাঁকানি দিয়ে হাঁড়ির বাকি জল ছিটিয়ে একশা করলো আর গুহার মুখে আমায় ধরবে বলে দাঁড়িয়ে রইলো। আমার বুদ্ধিও কম নয়। আমি সারা রাত নি:শ্বাস চেপে রইলাম যাতে ও কিছুতেই বুঝতে না পারে আমি গুহার মধ্যে আছি কোথায়।

    পরদিন সকালে যখন পাখপাখালি ডাকতে আরম্ভ করলো, সে দৈত্য বাইরে থেকে বললো - হেইও, এখন ঘুম দিস নাকি? ওঠ্‌, আর আমার ছাগলগুলোকে চরতে ছাড়। আমি তখন বুদ্ধি করে রামছাগলটাকে মেরে ফেললাম। যেই না মারা, সে দৈত্য বাইরে থেকে বলে কি - তোর এত বড়ো আস্পর্ধা তুই আমার রামছাগলটাকে মারলি। আমি মিছিমিছি বললাম - আরে না না, ছাগলগুলোর দড়ি বড় শক্ত করে তুমি বাঁধো, আলগা করতে আমার দুর্বল হাতে সময় বেশি লাগে। এই বলে আমি একটা ছাগল গুহা থেকে ছেড়ে দিলাম। সে ছাগল বেরোতেই দৈত্য তার সারা গায়ে হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো - এই তো আমার উলকম্বল, হাস্নুহানা, চাঁদের কণা, তুই আমাকে দেখতে পাস আমি তো আর পাই না। আমি একটা একটা করে ছাগল বের করতে লাগলাম আর সেই সুযোগে রামছাগলটার সব নাড়িভুঁড়ি বার করে একেবারে ব্যাগের মতো করে ফেললাম। তারপরে সবার শেষে তার মধ্যে ঢুকে হাত পা গলিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এলাম।

    যথারীতি দৈত্য আমার পিঠে হাত রেখে বললো - এই তো আমার গুষ্টিসুখের মিষ্টিমুখের রামছাগল, তুই আমাকে দেখিস কিন্তু আমার চোখে নেই আলো। আর আমি গুট গুট করে ঠিক বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসে, ও:, সে কি আনন্দ! আমি সেই চামড়ার খোল থেকে বেরিয়ে বললাম - ওরে বোকা দৈত্য, দেখ কি করে তোকে বোকা বানিয়ে আমি বেরিয়ে এলাম। দৈত্য বড়ো বিমর্ষ হয়ে পড়লো। শেষে বললো - বেশ, তুমি এত ধুরন্ধর আমি ভাবতে পারি নি। আমি হেরে গেছি। চলো, আমার কাছে একটা আংটি আছে, সেটা আমি তোমায় দিলাম, এটা রাখো, তোমার ভালো হবে। আমি বললাম - আমায় এত বোকা পাওনি। ও আংটি আমি তোমার হাত থেকে নিচ্ছি না। দূরে ছুঁড়ে দাও, আমি তুলে নেবো। সে তাই করলো। আমি তখন সেই আংটি তুলে আঙুলে পরে নিলাম। দৈত্য বললো - ফিট করেছে? আমি বললাম - দিব্যি।

    তখন দৈত্য বললো - আংটি, আংটি, তুই কোথায়? আর আংটি বলে উঠলো - আমি এখানে। সেই বিটকেল দৈত্যটা এবারে আংটির গলার আওয়াজ শুনে সেদিকে তাড়া করে আসতে লাগলো। আমি দেখলাম শিয়রে শমন। উপায়ান্তর না দেখে আমি একটা ছোটো ছুরি বের করে এক আঘাতে আমার সেই আংটি পরা আঙুলটা ছিন্ন করে ছুঁড়ে যতদূর পারি ফেলে দিলাম। সে গভীর নিচে, সমুদ্রে গিয়ে পড়লো। দৈত্য ডাক দিলো - আংটি, তুই কোথায়? সমুদ্রের থেকে আংটি জবাব দিলো - আমি এখানে। আর সেই আংটি লক্ষ্য করে দৈত্য পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিলো, তারপরে ঐ ভয়ংকর ঢেউয়ের মধ্যে তার সলিল সমাধি হলো। দৈত্যের অন্ত দেখে আমিও শান্ত হলাম। কিন্তু সে তো তখনকার মতো, এখন তো কালকের কথা ভেবে আমার মন বড়ো বিমর্ষ হয়ে পড়ছে। যখন দৈত্য মলো, আমি তার ঘরে গিয়ে যত সোনাদানা ছিলো সব এরিনে নিয়ে এসেছিলাম, আর এই দেখুন আমার এই আঙুলটা কাটা। স্যার আমার আরেকটা ছেলে বাঁচবে তো?

    লগলানের রাজা মুণ্ডু নাড়িয়ে বললেন - কোনাল, তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। কাটা আঙুল তো অবশ্য দেখতেই পাচ্ছি। তুমি দুই ছেলের জীবনও ফিরে পেলে। কিন্তু বলো দেখি, এর থেকেও বেশি কঠিন পরিস্থিতিতে তুমি পড়েছিলে কি না? এবারে না হয় তোমার বড়ো ছেলের প্রাণটা ক্ষমা করে দেওয়া যাবে। অবশ্য বলতে না পারলে তো কালকে ফাঁসির ব্যবস্থা করেই রেখেছি।

    কোনাল আর বিলম্ব করলো না। - আমার যখন বয়েস কম ছিলো, তখন আমাদের অবস্থাও বেশ ভালো ছিলো। আমার বাবার জমিজমা ছিলো কিছু,আর বাবা একদিন আমার জন্য একটি লাল টুকটুকে বৌ নিয়ে এলেন। তখন সবে বিয়ে হয়েছে, আমি গেছি শিকারে। সমুদ্রের ধার ধরে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি দূরে সমুদ্রের মধ্যে একটা দ্বীপ। তার এপারে একটা নৌকো, নৌকোর সামনে রশি, পেছনে রশি আর মধ্যে কত যে ধনরত্ন কি বলবো। এইসব দেখে আমার খুব লোভ হলো আর এক পা নৌকোয় দিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম এইসব দামী ধনরত্ন কি করে হাতানো যায়। এই করতে গিয়ে আমার পা গেলো ফসকে আর আমি নৌকোর মধ্যে ঢুকে গেলাম - অমনি সে নৌকো একেবারে সমুদ্রের মধ্যে ভাসতে ভাসতে গিয়ে সেই দূরের দ্বীপে গিয়ে আটকালো। আমি তো সে নৌকো বেঁধে নতুন দ্বীপে ভাবতে বসলাম যে এবারে এই জনহীন জায়গায় কি করা যায়। পোষাক নেই, খাদ্যের চিহ্ন নেই, পশু পাখি নেই, বাড়ির দেখা মেলে না, সে কি অবস্থা। আমি সেই দ্বীপে একটা টিলা মতো ঢিবি পেরিয়ে ওপারের উপত্যকায় নেবে এলাম।

    দেখি বীভৎস অবস্থা। এক মহিলা তাঁর বাচ্চাকে কোলে করে বসে আছেন। তাঁর হাতে একটা ছুরি - সেই ছুরি তিনি বাচ্চাটির গলায় বসানোর চেষ্টা করছেন। যেই বসাতে যাবেন, অমনি বাচ্চাটা খিলখিল করে হাসতে আরম্ভ করলো, মহিলা কাঁদতে কাঁদতে ছুরি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম - আপনি এখানে কী করছেন? উনি বললেন - আপনি কে? কি করে এ জায়গায় এলেন? আমি তখন আমার গল্পটা বললাম। উনি আমাকে তখন ওনার বাড়ির দিকে নিয়ে গেলেন। আমি সে বাড়িতে ঢুকে সাহস করে বললাম - আপনি ছুরি নিয়ে একটু আগে কী করছিলেন! উনি তখন খোলসা করে বললেন। এই দ্বীপে এক মানুষখেকো রাক্ষস থাকে। তার জন্য ঐ বাচ্চাকে রান্না করে দিতেই হবে, তা না হলে সে এসে সব ছারখার করে দেবে। আর সেই কথা বলতেই মানুষখেকো রাক্ষসের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এবারে আমি কী করি? কী উপায় আমার? বলে মহিলা কাঁদতে লাগলেন। আমি হাঁড়ির কাছে গিয়ে দেখি জল চাপানো হয়েছে, কিন্তু তখনও তেমন গরম হয় নি। বুদ্ধি করে আমি তার মধ্যে ঢুকে গেলাম। আর সেই রাক্ষসও তার পরমুহূর্তে সে ঘরে ঢুকলো। সে হুংকার দিয়ে উঠলো - এই! বাচ্চার ঝোল হতে আর কতক্ষণ! মহিলা বললেন - এখনও তৈরি হয় নি। আর আমি ভেতর থেকে বললাম - মা, মা এই তো আমি হাঁড়ির মধ্যে সেদ্ধ হচ্ছি। সে শুনে রাক্ষস হাউ হাউ খৌয়া খৌয়া করে হাসতে হাসতে গাদাখানেক কাঠ উনুনে ঢুকিয়ে দিলো।


    আমি সম্যক বুঝতে পারলাম, যে ঝলসে মরতে চলেছি। কিন্তু কপালের নাম কোনাল, সে রাক্ষস হাঁড়ির পাশেই শুয়ে এক ঘুম দিলো। ততক্ষণে আমার পাছা গেছে ঝলসে। মহিলা যেই দেখলেন যে রাক্ষস ঘুমিয়েছে, উনি হাঁড়ির মুখ তুলে আমায় ফিসফিস করে বললেন - বেঁচে আছেন? আমি বললাম - হ্যাঁ। হাঁড়ির ঢাকাটা উঁচু ছিলো বলে রক্ষে, তাই মাথাটা জলের ওপরে তুলে রেখেছিলাম। এবারে বাকি শরীরটা বের করতে শুরু করলাম, মুশকিলটা হলো পাছার কাছাকাছি এসে, কিন্তু কি আর করা, সেখান থেকে চামড়া ছেড়ে জলেই খসে গেলো, কিন্তু আমি কোনওক্রমে বেরিয়ে এলাম। মেহিলা বললেন - রাক্ষস একমাত্র ওর অস্ত্রেই বধ হবে। আমি গোপনে ওর বল্লমটা বের করে নিতে লাগলাম, খুব ধীরে ধীরে, যাতে কিছুতেই না বুঝতে পারে, আর সে এমন নি:শ্বাস নিচ্ছে যে আমার মনে হচ্ছে যেন ঐ মুখের মধ্যেই সেঁধিয়ে যাবো। যেমন যেমন নি:শ্বাস নিচ্ছে, তেমন তেমন আমি পিছিয়ে আসছি।

    কিন্তু এমন করতে করতেই আমি পট করে বল্লমটা খুলে নিলাম। সে কি ভারী বল্লম রে ভাই। বিরাট ঝড়ের সামনে খড়কুটোর মতো আমার অবস্থা। আর রাক্ষসের সে কি বীভৎস মুখ - মুখের মাঝখানে একখানা মাত্র চোখ। ঐ বল্লম নিয়ে ওকে আক্রমণ করাটা আমার পক্ষে অসম্ভব। সারা শরীরের সমস্ত শক্তি আমি একত্র করে ফলাটা ওর আজগুবি চোখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রাক্ষস জেগে উঠলো আর উঠে বসতেই বল্লমের বেরিয়ে থাকা ডগাটা ছাদে ধাঁই করে এক ধাক্কা খেলো, আর যেই না খাওয়া, ফলাটা সিধা ওর মাথার মধ্যে দিয়ে ঢুকে গেলো। বাস,খেল খতম। আর আমার সে কি আনন্দ তারপর। সেদিন রাতটা আমরা ও বাড়ি থেকে দূরেই রইলাম, পরদিন সকালে খুব দু:খের সঙ্গে তাঁকে বিদায় জানিয়ে নৌকো নিয়ে ফিরে গেলাম।

    কোনালের এই গল্প বলতে বলতে লগলানের রাজার মা আগুনে কাঠ দিতে ঢুকেছিলেন। গল্পের টানে উনিও আটকে গেলেন। কোনালের গল্প শেষ হতে রাজমাতা বললেন - সেই দ্বীপে তুমি গেছিলে? কোনাল বললো, হ্যাঁ, আমি নিজে, আর কে? উনি বলে উঠলেন - ও:! কে এসেছে আজ এখান! ওরে তোরা দেখে যা রে! সেই মহিলাই আমি, আর যে বাচ্চাকে বাঁচানো হয়েছিলো, সেই আজকের লগলানের রাজা। এ কথা শুনে সকলেরই যৎপরোনাস্তি আনন্দ হলো। লগলানের রাজা বললেন - কোনাল, তোমার বড়োই কষ্ট গেছে। তুমি আমার বাদামী ঘোড়াটা তো পাবেই, আর তার সাথে এই যে, বস্তাভর্তি ধনরত্ন সব তোমার জন্য। তুমি না বাঁচালে আমি কি আর থাকতাম?

    সে রাত্তিরে কোনাল লগলানের রাজার বাড়িতেই শুলো। কোনাল নিজে ভোরে ওঠে, কিন্তু পরদিন সকালে রানীমা স্বয়ং আগে জেগে উঠে কোনালের সব বন্দোবস্ত ঠিক হচ্ছে কিনা তার তদারক করলেন। কোনাল লগলানের রাজার পেয়ারে বাদামী ঘোড়ায় চেপে বস্তাভর্তি সোনা-রুপো হীরে-জহরত ধনরত্ন সব নিয়ে আর ছেলেদের সঙ্গে করে এরিনে ফিরে গেলো। ধনরত্ন সব সে রাখলো বাড়িতে। আর ঘোড়াটা দিলো এরিনের রাজামশায়কে। এর পরে কোনাল আর রাজামশায়ের বন্ধু হওয়া রোখে কে? কোনাল গেলো তার বৌয়ের কাছে ফিরে আর সবশেষে তারা এক ভোজের আয়োজন করলো, সে এমনি ভোজ, কি বলবো ভাই, তুমি আমি কেউ কক্ষনো কোথথাও কোনওদিনও দেখেনি।


    চিত্রাঙ্কন: সায়ন কর ভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৪ নভেম্বর ২০১১ | ৯৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন