এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ভারতের জমিনীতি সংস্কার

    মৈত্রীশ ঘটক, পরীক্ষিৎ ঘোষ, ও দিলীপ মুখার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ | ১৫৯৫ বার পঠিত
  • এই নিবন্ধটি যখন লেখা শেষ হয়েছে, তার পরে বিজেপির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সংবাদসূত্র (http://www.dnaindia.com/analysis/column-consequences-of-a-pro-industry-land-acquisition-act-2011149) অনুযায়ী, এই আইনের কিছু অংশ বদলানো হচ্ছে; যার ফলে জমি অধিগ্রহণ করা কম ঝামেলার হবে। এই বদলের মধ্যে দিয়ে সরকারি-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পগুলোর জন্য সম্মতির নিয়মটি সহজীকরণ করে দেওয়া হচ্ছে, বড়মাপের প্রকল্প বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত প্রকল্পে সামাজিক প্রভাবের খতিয়ান নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, এবং বহুফসলী জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এইসব পরিবর্তনগুলো লাগু করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, বিকল্প হিসেবে, যে সমস্ত প্রকল্প এই আইনের মূল নিয়মগুলোর বাইরে আছে, সেই প্রকল্পের তালিকাটি আরও লম্বা করার পরিকল্পনা চলছে।

     

    ভারতের জমিনীতি সংস্কার

    প্রায় একদশকের টানা দ্রুতগতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা ক্রমশ মন্থর হওয়া থেকে বাঁচতে যে যে সমস্যার সমাধান আশু প্রয়োজন, জমি সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম। মূলত এর দুটো কারণ আছে।

    কৃষি থেকে শিল্প ও পরিষেবা খাতে সম্পদ পুনর্নিয়োগ করা হল উন্নয়নের একদম গোড়ার কথা। যতক্ষণ না কৃষি জমিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার ফলে উদ্বৃত্ত শ্রম শিল্পে নিয়োজিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই মূলগত পরিবর্তন সম্ভব নয়। ভারতে কৃষির উৎপাদনশীলতা কম হবার কারণ অনেক – অসাম্য, খন্ডিত জমি, বিশ্বাসযোগ্য জমি নথির অভাব, অসুরক্ষিত ও অনির্দিষ্ট সম্পত্তি আইন, জমি ভাড়ার সীমিত আয় ও জমি বন্ধক রেখে ঋণ পাওয়ার অসুবিধে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে জমির উৎপাদন বাড়ানোর কোনো ব্যবস্থা না নিলে, খাদ্য যোগানও অসুবিধের হয়ে দাঁড়াবে।

    দ্বিতীয় কারণ হল, আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যার এক বড় অংশ নির্ভর করে উর্বর জমির ওপর। অকৃষিজনিত উৎপাদনের জমিও আসে কৃষি ক্ষেত্র থেকেই, আমরা বিগত দশকে এও দেখেছি নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন থেকে সিঙ্গুর, জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মানুষের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন। অবশ্যই এটা এক পরিণত গণতন্ত্রের  উদাহরণ, যেখানে উন্নয়নের নাম যথেচ্ছভাবে গরীবদের উৎখাত করা যায় না।

    তবে এমন নয়, যে এই সমস্যার কথা কেউ জানে না বা সুরাহার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে খাদ্য সুরক্ষা আইন ও জমি অধিগ্রহণ বিষয়ক আইন প্রণয়নের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। জমি সংস্কারের একটি বিল ও বিবেচনাধীন। দুর্ভাগ্যজনক যে, এই আইনগুলোর উদ্দেশ্য শুভ হলেও জনমানসে বাজারের শক্তির ভূমিকা বা সীমাবদ্ধতার ব্যপারে এরা বিশেষ মাথা ঘামায় নি। সিদ্ধান্ত নেবার উপযুক্ত তথ্যের অভাব ও নীতিগত জটিলতার ফলে জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

    জমি অধিগ্রহণ আইন

    ১৮৯৪ সলের আইনের ওপর ভিত্তি করেই এখনো পর্যন্ত পণ্ডিতমহলের আলোচনা গড়ে উঠেছে, এই আইনানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় বিক্রির সময়কালে ওই অঞ্চলের জমির দাম ও অন্যান্য বিক্রীত জমির লেনদেনের হিসেবের উপর ভর করে। নতুন আইনে এতে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়। ১) ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক্ষেত্রে ধার্য্য হয়েছে অনেক বেশি – বাজার দরের দ্বিগুণ (শহর), চতুর্গুণ (গ্রামে) ২) জমির মালিক ও অন্য যাঁরা জীবিকা হারালেন (ভাগচাষি/ অন্যান্য কৃষি শ্রমিক যাঁরা চাষের জমির ওপর নির্ভরশীল), তাঁরাও এই ক্ষতিপূরণের দাবিদার হবেন ৩) জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক দিকে আরো দৃঢ়তা আনা যাতে সরকারি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আরো বেশি কমিটির ছাড়পত্র লাগবে ও যেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থাকবে সেখানে অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের কমপক্ষে ৭০%এর সম্মতি বাধ্যতামূলক।

    নতুন আইনের মূল্যায়ন করার আগে পুরনো আইনের ফাঁকফোকর গুলো একবার দেখা যাক। বাজারদরের হিসেবে ক্ষতিপূরণ যে ন্যায্য নয় এটা সহজবোধ্য ব্যাপার কারণ বাজার দর আর জমির মালিকের কাছে মূল্য সমান নয়।

    দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারিত হয় ফসল উৎপাদন, খাদ্য সুরক্ষা, বন্ধকী সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিষেধক, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদির ওপর। জমির দাম এবং যে দামে মালিক বিক্রি করতে ইচ্ছুক হবেন সেটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত এবং একজনের থেকে আরেকজনের ক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা। আমরা যদি এটা ধরেও নিই যে দেশে দক্ষ জমি বাজার আছে ও লেনদেন স্বচ্ছ, সেখানেও অনেক মালিকই জমির এমন মূল্য ধার্য করবেন যা বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি। এই কারণেই তাঁরা এখনো পর্যন্ত জমি বিক্রি করেন নি।

    বাজার দরের হিসেবে ক্ষতিপূরণ তখনি কার্যকরী হত যদি এক নিখুঁত বাজারে (perfect market) যে পরিমাণ পার্থিব সম্পদ (physical asset)  যে দামে বিক্রি হচ্ছে সেই দামেই কেনা যেত। নীচের উদাহরণ দুটো দেখলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।

    ১) সরকারের প্রয়োজনবশত কিছু নাগরিকের থেকে গাড়ি অধিগ্রহণ করা  ২) আপৎকালীন সময়ে কিছু নাগরিকের বাধ্যতামূলক শ্রম দান। আমরা যদি স্বাধীনতা / সম্পত্তি আইন ইত্যাদি দূরে রাখি কিছুক্ষণের জন্য, তাহলে দেখব প্রথম ক্ষেত্রে বাজার দরে ক্ষতিপূরণ ন্যায্য মনে হলেও, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে একেবারেই নয়। কারণ প্রথম ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলেই ক্ষতিপূরণের অঙ্কে ওই গাড়ি আবার কেনা সম্ভব, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সেই একই সময় তাঁদের পক্ষে কিনে নেওয়া সম্ভব হবে না।

    দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তাই শ্রমিকদের সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। ধরুন কোনো স্বনিয়োজিত (self employed) উকিল, ডাক্তার, বা ব্যবসায়ীকে জোর করে কোনো সরকারি প্রকল্পে কাজ করিয়ে বাজারের বর্তমান শ্রমমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া যদি ন্যায্য হত, তাহলে আমরা কি এটাই আশা করতাম না যে ওঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত পেশা ছেড়ে চাকরি করবেন? ঠিক একইভাবে স্বেছায় জমি বিক্রি করতে চাওয়া বা চাকরি করা মানুষদের স্বীকৃত দামে কাউকে জমি বিক্রি করতে বা চাকরি করতে বাধ্য করা যায় না। জমি অধিগ্রহণ অনেকটা গাড়ির উদাহরণ মনে হয়, কিন্তু আমরা যদি বাস্তবের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, প্রকৃতপক্ষে উদাহরণটা বাধ্যতামূলক শ্রম দানের মত। জমি বাজারের অপ্রতুলতা উন্নয়নশীল দেশের একটা বড় সমস্যা  (Deininger and Feder,2001 and  Deininger,Jin and Nagarjan, 2009)। জমির বাজার দরের কোনো গুরুত্ব নেই, যদি না সেই দামে একই সমপরিমাণ জমি একই অঞ্চলে কেনা সম্ভব। একই ভাবে বেকারত্ব ও সংঘাতপূর্ণ শ্রম বাজারে বর্তমান শ্রমমূল্যে চাকরি পাওয়া কঠিন। 

    বাজারদরের হিসেবে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার আরো অনেক যুক্তি আছে – প্রচুর পরিমাণে কৃষিজমি অধিগ্রহণ এলাকার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির যোগানের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। যোগান ও চাহিদার নিয়ম মেনেই এলাকার জমির মূল্য ও ভাড়া দুই ই বেড়ে যায়, ফলে যেখানে জমির দাম এতই বেড়ে গেহে যে বিক্রির দামে সমপরিমাণ কৃষিজমি কেনা অসম্ভব, সেখানে ঐতিহাসিক জমির দামের ওপর ভিত্তি করা সম্ভব হবে না। নতুন প্রকল্পের আশেপাশে উদ্বৃত্ত অর্থনৈতিক উন্নতি আরো সহকারী শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করে, এলাকায় জমির দাম আরো বাড়িয়ে তোলে অনেক ক্ষেত্রে। এছাড়াও অতীত লেনদেনের ওপর ভরসা করাও অসুবিধে এজন্য, বেশির ভাগ সময়েই স্ট্যাম্প ডিউটি এড়ানোর জন্য জমির বিক্রয়মূল্য কম করে দেখানো হয়। এ আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে বাজার দরে ক্ষতিপূরণ, যথেষ্ট নয়।এটা কতটা বাড়ানো হবে তা আঞ্চলিক জটিলতার ওপর নির্ভর করে, যা একেক জায়গায় একেক রকম। ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয় জমির বাজার কতটা নিখুঁত, কতটা অধিগৃহীত এলাকার ওপর প্রকল্প গড়ে উঠবে, যেসব চাষি জমি হারাবেন তাঁদের বিশেষত্ব কী, এসব আলোচনার ওপর ভিত্তি করে। জরিপ করে দেখা গেছে, এ ব্যাপারে বৈচিত্র্য প্রচুর।

    সিঙ্গুরে এটাই দেখা গেছে যে চাষের জমির বৈচিত্র্য হিসেবে না ধরে ক্ষতিপূরণ ঠিক করায় বিক্ষোভ আরো দানা বাঁধে (Ghatak, Mitra, Mookherjee, and Nath,  2013)। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক মোটামুটি সে অঞ্চলে জমির গড় দামের কাছাকাছিই ছিল তবুও ১/৩ অংশ জমি বেচতে অস্বীকার করেন। এই ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ জমিতে সেচের প্রয়োজন, বহুফসলী বা যানবাহনের নৈকট্য ইত্যাদি ব্যপার হিসেব করে নি, যা নিঃসন্দেহে ব্যর্থতা ডেকে এনেছিল। এমনকি যাঁদের ঘরে অধিকাংশ কৃষি জমির ওপর নির্ভরশীল বা মূল আয়ের অধিকাংশ কৃষি ভিত্তিক তাঁরাও বিরোধিতা করেন। আর্থিক সুরক্ষা এজন্যেই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, বিশেষ করে চাষের মত দক্ষতানির্ভর জীবিকার ক্ষেত্রে, যা একজনের থেকে আরেকজনের কাছে জমির মত হস্তান্তর করা যায় না। যাদের কাছে জমির মূল্য একমাত্র বৈষযিক (যাঁরা জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পাননি, বরঞ্চ কিনেছেন বা জমি রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারা জমির মালিক সম্প্রদায়) তাঁরাও এ প্যাকেজে বিশেষ আগ্রহী হবেন না।

    নতুন আইনে যে স্থির গুণিতক (দ্বিগুণ/ চারগুণ) কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একমাত্র শহর বা গ্রাম বাদে আর কোনো পার্থক্য স্বীকার করা হয়নি। সঠিক গুণিতক এক্ষেত্রে বের করা বেশ সমস্যার, যদি খুব কম বেশি দাম হয়ে যায় তাহলে শিল্পের পক্ষে অলাভজনক ও তাদের অনীহার ফলে ইচ্ছুক চাষিরা মোটা লাভ থেকে বঞ্চিত হবেন, কম দাম হলে সিঙ্গুরের মত ঘটনা ঘটবে। এই দুই বা চার কিভাবে হবে তার কোনো যুক্তিও পেশ করা হয়নি, তাই গড় করে নিলেও সমস্যা মিটবে না।

    বিকল্প ব্যবস্থা –জমি নিলাম

    (Ghatak and Ghosh, 2011) মতে নিলামভিত্তিক দাম নির্ধারণ কোনো গুণিতকভিত্তিক হিসেবের থেকে বেশি বাস্তবসম্মত। প্রথম ধাপে সরকার যেখানে প্রকল্প গড়ে তুলছে সেই এলাকায় মোটামুটি সমান মাপের জমি নিলাম করে কিনবে, তারপর প্রকল্প এলাকার মধ্যে যাঁরা জমি বেচেন নি তাদেরকে জমির বদলে জমি হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।এভাবে প্রকল্পের জন্য জমিও এক জায়গায় সহজে করা যাবে।

    এ ব্যবস্থায় সর্বপ্রথম দাম নির্ধারণ দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মচারীদের হাত থেকে নিয়ে সরাসরি নিলামের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী করা হয়েছে। ফলে পণ্ডিতদের জোরাজুরি না থাকায় রাজনৈতিক জমি আন্দোলনের সম্ভাবনাও কম থাকবে। দ্বিতীয়ত উদ্বৃত্ত্ জমি তাঁদের মধ্যেই ভাগ করে দেওয়া হবে যে চাষিরা জমির ওপর সর্বাধিক দাম রেখেছেন। ধরা যেতেই পারে যে নিলামে এঁরাই সবথেকে বেশি দর হাঁকবেন ও শেষ পর্যন্ত নগদ নয় বরং জমির বিনিময়ে জমি হিসেবে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এভাবে জমির বাজার না থাকার সমস্যাও দূর করা যাবে।

    এই নিলাম পদ্ধতি আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। কোন জায়গায় শিল্প প্রকল্প চালু হবে তাও বহুস্তরী নিলাম ব্যবস্থায় ঠিক করা যায়। প্রথমত সরকার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জমি ও তার রিজার্ভ দাম ঠিক করবে। এরপরে বিভিন্ন সমিতি তাদের এলাকায় শিল্প স্থাপনের জমির জন্য দর দিতে পারবে। সমস্ত দরই ঠিক হবে ন্যুনতম ধার্য জমি মূল্যের হিসেবে, যা দিয়ে তারা তাদের এলাকায় ইচ্ছুক জমি মালিকদের থেকে প্রয়োজনীয় জমি কিনতে পারবে।

    এই নিলাম পদ্ধতি বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে দিলে তা জনমানসে সরকার থেকে চাপিয়ে দেওয়া অধিগ্রহণ হিসেবে প্রতিফলিত হবে না। শুধু পঞ্চায়েতকর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে সরকারি আধিকারিকদের থেকে, কিভাবে নিলাম করতে হয়। এর ফলে পঞ্চায়েত তার নিজ এলাকায় শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে আরো বেশি ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারবে।

    প্রাক্তন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ও তাঁর সঙ্গী মোহাম্মদ খান জমি অধিগ্রহণে সরকারের প্রত্যক্ষ ও কেন্দ্রীয় ভূমিকায় বিশ্বাসী। তাঁদের মতে ভারতে জমির বাজার নিখুঁত নয় এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে প্রচুর ক্ষমতা ও তথ্যের পার্থক্য আছে। 

    বাজার না থাকলে যা প্রয়োজন তা হলো ১) এমন দাম স্থির করা যেটা বাজার গড়ে উঠলেও থাকে এবং প্রকল্প জনিত সমস্ত তথ্য ও অর্থনৈতিক ভূমিকা সবার কাছে পৌছে যায় সহজে; ২) প্রকল্প চালু হলে, চাষিদের বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রাখা।

    আমাদের এই বিকল্প ব্যবস্থায় ঠিক এইগুলোর কথাই বলা হয়েছে যেখানে নতুন আইনে এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না, বরঞ্চ আনুমানিক ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হয়।

    গ্রামীণ জমির বাজার সংস্কার

    আমরা এতক্ষণ যা দেখলাম, বহু জায়গায় জমি বাজারের অস্তিত্ব না থাকা অধিগ্রহণের মূল সমস্যা।

    গ্রামে এরকম ছিন্নবিচ্ছিন্ন জমি বাজারের অবস্থানের কারণ অনেক – অস্বচ্ছ জমির হিসেব ফলে হস্তান্তরে অসুবিধা, জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে মালিকানা গোপন, বিক্রির জটিলতা, বিক্রেতাদের বেশিদূর যেতে না চাওয়া, দালালির সুযোগ না থাকা, ব্যাঙ্কের হাত সীমাবদ্ধ হওয়ায় উপযুক্ত ঋণের অভাব।

    অন্য দিকে জমিই যেখানে বীমা, সঞ্চয়, আয়ের উৎস সেখানে জমির বাজার ঠিক হলেও গরীব চাষিরা নিছক লাভ দেখে জমি বিক্রি করবেন না। যেহেতু জমি সহজে বিক্রি করা যায় না, সেহেতু জমি বন্ধক রেখে ঋণও পাওয়া শক্ত। ঋণ বাজারও নিখুঁত না হবার ফলে কম উৎপাদনশীল চাষির থেকে বেশি উৎপাদনশীল চাষির হাতে জমির হস্তান্তর কঠিন। ঋণ বাজার নিখুঁত না হবার ফলে মালিক চাষির পক্ষে নতুন প্রযুক্তির চাষ, উচ্চ ফলনশীল বীজ, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি আধুনিক চাষ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ নেওয়া অসম্ভব। শুধু বৈষম্য কমানোর জন্য নয়, আমরা যদি জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কথা ভাবি যার ফলে উদ্বৃত্ত শ্রম শিল্প ও পরিষেবার জন্য ব্যবহার করা যাবে, জমি সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। সম্পত্তি অধিকার আইনের সুষ্ঠু ব্যবহার শুধুমাত্র যে ব্যক্তিগত জমির মালিকানা চূড়ান্ত (optimum holding) করে তাই না, অপ্রত্যক্ষ ভাবে ঋণ বাজার সংগঠিত করে উৎপাদনশীলতা বহুগুনে বাড়িয়ে তোলে। সরকার অধিগৃহীত জমি থেকে ক্ষতিপূরণের অধিকার নির্দিষ্ট করার প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য, কারণ সিঙ্গুর থেকে আমরা দেখেছি ১/৩ অংশের বিরোধিতার মূল কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ জমির রেকর্ড। শেষ আয়যোগ্য জমির পরিমাপ জানতে জরিপ হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, তারপরে সেই রেকর্ড কতটা ঠিকঠাক করা হয়েছে তা পুরোটাই জমির মালিক কতবার দুর্নীতিপ্রবণ জমি প্রবন্ধন দফতরে নিজের জমি হিসেব সংশোধন করতে গেছেন তার ওপর নির্ভরশীল। অনেকেই স্ট্যাম্প ডিউটি দেওয়ার ভয়ে সংশোধন করেন নি ও পরবর্তীকালে এর ফলে ভুল জমি ভাগ হয়েছে ও ক্ষতিপূরণ সঠিক মালিকের কাছে পৌঁছায় নি। সেচযোগ্য জমির সঠিক হিসেব না থাকায় জমির শ্রেণীবিভাগ ঠিক মত হয়নি ও অসেচযোগ্য জমির হিসেবে যারা সেচের জন্য খরচা করেছিলেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। যা অবশ্যই খুবই অল্প। যাদের জমির হিসেব ঠিকঠাক ছিল তাঁরা স্বভাবতই প্রতিবাদ করেছেন কম, ক্ষতিপূরণ দর কম ছিল না কিন্তু সমস্যা ছিল জমির শ্রেণীবিভাগ নিয়ে। সেইজন্য সঠিক বাজার দর জানানর জন্য জরুরী জমির সঠিক শ্রেণীবিভাগ।

    নতুন জমি/ ভূমি সংস্কার আইন এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রশাসনের লক্ষ্য সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা ও কম্পিউটারাইজ করা। এর জন্য যা দরকার জমি মালিকদের সঠিক জমির হিসেব দেওয়ার সহযোগিতা। জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে প্রচুর জমির মালিকানা গোপন ও বেনামী, অন্যদিকে সরকারি অধিগ্রহণ হলে মালিকরা অবশ্যই চাইবেন সঠিক ক্ষতিপূরণ যার জন্য জমির হিসেব ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজন। এই ভাবেই জমি সংশোধন ও অধিগ্রহণের মধ্যে এক সহজ সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় অংশ ঠিকঠাক কাজ করতে হলে প্রথম অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন, আর প্রথম ক্ষেত্রে উন্নতি হলে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে মালিকদের উৎসাহ দিতে, কিছু পুরস্কার যেমন, সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া যেতেই পারে। সহজে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, NREGA, ভর্তুকি, জন বন্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়। একই ভাবে গত পঞ্চাশ বছরে জমি সংস্কার বলবৎ করতে আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের জন্য উর্ধ্বসীমা আইন কিছুটা শিথিল করা যেতেই পারে যাতে মালিকরা সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হন। বিশেষত দেখা গেছে যে জমিসংস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি উন্নতির পরিপন্থী হয়েছে, ও এর দায়ভাগ আরো বেশি বর্তায় জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ওপর (Ghatak and Roy, 2007 )। এমনকি জমির রেকর্ড ঠিক করার জন্য ও সঠিক তথ্য জানালে আয়করে ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। আদিবাসী এলাকায় কৃষি জমি বিক্রির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ আরোপ, আদিবাসীদেরই স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। এই বিধিনিষেধ তফশিলী জাতি, উপজাতি আদিবাসীদের সঠিক জমি ব্যবহারে সাহায্য তো করেই নি উপরন্তু তাদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও গড়ে তোলে নি। আপাতদৃষ্টিতে বৈষম্যের নামে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে আদতে কিছু লাভ হয়নি। জঙ্গল রক্ষা আইন সংরক্ষণের নীতির বিরোধী হয়ে উঠেছে । সম্পত্তি আইনে আওতায় জঙ্গল জমি আনার উদ্দেশ্য অবাধ কৃষি ও বন কাটা নয় বরং, তাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসা শিকার ও সংগ্রহণ বৃত্তি থেকে যদি তারা উচ্ছেদ হয় তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও করা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বাস্তবের সাথে আদর্শের মেলবন্ধন না ঘটাতে পারা আমাদের ব্যর্থতা, ঠিক যেরকম বন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন ও বন ধ্বংস রোধ করার ভারসাম্য রক্ষা করতেও আমরা সক্ষম হইনি। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য জমির বন্টন আরো সমান ভাবে হওয়ার সাথে সুষ্ঠু জমি বাজার ও জমির আরো উন্নত ব্যবহার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে কোনো সংঘাত নেই সেই সত্যি যত তাড়াতাড়ি বোঝা যায় ততই মঙ্গল।


    যোজনা পত্রিকায় নভেম্বর ২০১৩-এ প্রকাশিত মৈত্রীশ ঘটক, পরীক্ষিৎ  ঘোষ, ও দিলীপ মুখার্জী রচিত “রিফর্মিং ইন্ডিয়া’স ল্যান্ড পলিসি” প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ। 

    মূল প্রবন্ধটির সূত্র : http://econ.lse.ac.uk/staff/mghatak/yojana.pdf । সেখানে উল্লিখিত অন্যান্য প্রবন্ধগুলির সূত্রও পাওয়া যাবে।

    অনুবাদঃ সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শমীক মুখোপাধ্যায়

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ | ১৫৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অপাত্র | 160.107.178.230 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৬87220
  • অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম নাকি বলে, কৃষি থেকে শিল্পের পথে যাওয়াটা সমাজের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা। এটাকে সত্য ধরে নিয়ে এগোনো যাক। বুদ্ধবাবু এই কথাটা বলে অবশ্য হাফ শিক্ষিত নকশালদের কাছে খিস্তি খেয়েছিল। এখন দেখছি, অর্থনীতির প্রেক্ষিতে এটা খুবই সত্য ও স্বাভাবিক। তাহলে সমস্যাটা আসছে ক্যানো। ক‌ৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে ডুবে থাকা একজন কৃষকতো স্বাভাবিক নিয়মেই শিল্পের দিকে শিফট করবে। অথচ সে ভাবছে, ১, তাঁর জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। তাঁর কৃষির অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ২. মওকা বুঝে চড়া দামে জমি বিক্রি করে কোটিপতি হওয়ার একটা প্রলোভনও থাকছে। এক্ষেত্রে একটা জিনিষ লক্ষনীয়। দুটি ক্ষেত্রেই নতুন শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির সঙ্গে তাঁর কোনওরকম সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে না। উল্টে দুটি ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ধরে অর্জন করা স্কিল সেট সে হারাচ্ছে। নতুন অর্থনীতিতে শিফট করার পর নতুন কোনও স্কিলসেট তাঁর মধ্যে তৈরি হচ্ছে না। সে অবশ্য টাকাপয়সা দিয়ে ব্যবসা শুরু করতেই পারে। কিন্তু সেটা বেসিক স্কিল কিনা, তা নিয়ে একটা ধন্ধ থেকেই যায়।
    টাটা অবশ্য গাড়ি কারখানায় কাজ দিতে সিঙ্গুরে একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খুলেছিল। সেটা কমন প্র্যাকটিস কিনা, তা অবশ্য জানা নেই।
    এবারে চাষীর দুঃখে কাঁদা নিয়ে বলি। গরীব চাষীর দুঃখে কাঁদাটা ন্যাকামো, ভণ্ডামো দুটোই বলা যায়। কিন্তু চাষীর কাজটা ভয়ঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। ডিএনএ-র লিঙ্কটায় একটা জায়গায় দেখলাম,
    But how about shunning both: the high fertilizer, high tech, high irrigation, high pesticideGreen Revolution as well as the zeal to steam-roll everything for big industry? Instead, how about investing more money and brains to support 'family and small-scale farming', the rib-cage of Indian agriculture? Experts across the globe now believe that this mode of farming can offer the world food and nutrition security, safeguard agro-biodiversity and boost local economies. The data are stunning: 98 per cent of all farms are family farms, accounting for 56 per cent of the total agricultural production and 70 per cent of the world's food. In Asia, small farmers constitute 90 per cent of the agricultural labour, producing 80 per cent of the regional food. This is why the UN has declared 2014 to be the Year of Family Farming. In India out of around 129.222 million farm holdings, 121.751 millions are owned by family farmers, with farms of less than one to four hectares, accounting for 95 per cent of India's operational holdings. It is, therefore, easy to imagine that a vast number of Indians might directly benefit from a proper policy support to small scale family farming, not to mention its multiplier effect on the rural society. There are huge challenges, however. To script this success story, the government must ensure for the marginal and small farmers access to and control of land, water and other natural resources, to nearby markets, credit, investment and agricultural extension.

    বোঝাই যাচ্ছে, আসলে জনসংখ্যার নিরিখে ভারত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির একদম একদম শুরুর দিকে আছে। ভারতবর্ষ দেশটা সামাজিকভাবে একদম কৃষিভিত্তিক জায়গায় আছে। শিল্পে শিফট করার মুভটা বলা যেতে পারে, রাও-মনমোহন জমানা থেকে শুরু হয়েছে। এবং এখনও পর্যন্ত অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। এতটাই যে সরকারি ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্টেও জমি নিয়ে ক্যাজরা শুরু হয়ে গিয়েছে। আগে স্টেশন করার জন্য, রাস্তা করার জন্য, স্কুল করার জন্য স্থানীয় মানুষ নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে জমিদান করতো। কলকাতা ও মফস্বল এলাকার সমস্ত ক্ষেত্রেই এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। আর এখন মেট্রোর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজও জমিজটে আটকে আছে। ভাড়াটে পাবলিক নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ- আন্দোলন হচ্ছে।
    এইটা খুব কনট্রাডিকরি লাগছে। আসলে জমি মালেই মাল চোষার কারবার।এমন একটা সেন্টিমেন্ট গ্রো করছে। কেউ বলছে পসকো, বেদান্ত জমি চুষে নিচ্ছে। কেউ বলছে চাষীরা উল্টোপাল্টা দাম বলে শিল্পপতিদের কাছ থেকে বেশি মাল চুষে নিচ্ছে।
    এক্ষেত্রে বিগ ক্যাপিটালের একটা রোল আছে বলে আমার মনে হয়। জমি যেহেতু সামাজিকভাবে একটা বিরাট জায়গা ধরে আছে, বিগ ক্যাপিটালকেও সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। টাকা দিয়ে জমি নিয়ে আমি আমার মত স্কিম চালু করলাম, এটাতে কোথাও একটা বিচ্ছিন্নতা আছে। মানে বলছি কৃষি টু শিল্প এই ট্রানজিশনটা স্মুদ হচ্ছে না। বিগ ক্যাপিটালকেই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। নয়তো বাওয়াল আরও বাড়বে। এখানে স্টেটের রোল অতটা নেই। মনিটরিং ও প্রপার আইন করা ছাড়া। শিল্পই ভবিষ্যৎ, এটাকে মাথায় রেখেই অবশ্য পুরো আলোচনা। উন্নত দেশগুলির ট্রেন্ডও তাই বলে। ভারতের মত জনবহুল দেশে কৃষি জিডিপিতে বিরাট কনট্রিবিউট করে না। কিন্তু ম্যাসিভ কর্মসংস্থান করে, এটা সত্যি। জীবনযাত্রার মান হয়তো উন্নত নয়, কিন্তু খেয়ে পরে থাকে। নতুন সিস্টেমে এটাকে সুরক্ষিত রেখে উত্তরণের পথে না হাঁটলে গাঁড় মারা যাবে। এটাকে প্রপারলি হ্যান্ডেল না করলে গৃহযুদ্ধ লাগবে। সেটাকে অবশ্য নানালোক নানাভাবে ব্যবহার করবে। এখানেই বিপদ। গেরুয়ারা এই আনরেস্ট টাকে নানাভাবে কাজে লাগাবে। যুদ্ধের কারণ কিন্তু অর্থনীতির জায়গা থেকেই আসবে। তাই জমিনীতি ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপির তরফে কোনও হেলদোল নেই। ব্লাটান্ট একটা শিল্পনীতির পথে হাঁটছে। ভাবছে, চাবুক মেরে সব ঠিক হয়ে যাবে। খিস্তি খেলেও বলছি, এমন একটা সময়ে মনমোহন লোকটাকে দেশের আরও কিছুদিন দরকার ছিল। সঙ্গে জয়রাম রমেশ নামের লোকটিও হয়তো ভরসাযোগ্য ছিল। জানি স্থানীয়স্তরে কোরাপশন ওঁদের পক্ষে আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু পলিসির জায়গা থেকে দরকার ছিল। বিজেপি এই আনরেস্টটাকে পুরোপুরি ভুলভাবে হ্যান্ডেল করবে। আরও ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে। সলিউশন না খুঁজে দাঙ্গা লাগাবে, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ‍
  • ranjan roy | 24.97.206.93 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬87221
  • অপাত্র বলছেনঃ
    ১)"শিল্পই ভবিষ্যৎ, এটাকে মাথায় রেখেই অবশ্য পুরো আলোচনা। উন্নত দেশগুলির ট্রেন্ডও তাই বলে"।
    ২)"ভারতের মত জনবহুল দেশে কৃষি জিডিপিতে বিরাট কনট্রিবিউট করে না। কিন্তু ম্যাসিভ কর্মসংস্থান করে, এটা সত্যি। জীবনযাত্রার মান হয়তো উন্নত নয়, কিন্তু খেয়ে পরে থাকে। নতুন সিস্টেমে এটাকে সুরক্ষিত রেখে উত্তরণের পথে না হাঁটলে গাঁড় মারা যাবে। এটাকে প্রপারলি হ্যান্ডেল না করলে গৃহযুদ্ধ লাগবে। সেটাকে অবশ্য নানালোক নানাভাবে ব্যবহার করবে। এখানেই বিপদ। "
    ৩)" বিজেপির তরফে কোনও হেলদোল নেই। ব্লাটান্ট একটা শিল্পনীতির পথে হাঁটছে। ভাবছে, চাবুক মেরে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
    উপায়?
    উনি ভাবছেনঃ
    ১)এক্ষেত্রে বিগ ক্যাপিটালের একটা রোল আছে বলে আমার মনে হয়। জমি যেহেতু সামাজিকভাবে একটা বিরাট জায়গা ধরে আছে, বিগ ক্যাপিটালকেও সেই দায়িত্বটা নিতে হবে। টাকা দিয়ে জমি নিয়ে আমি আমার মত স্কিম চালু করলাম, এটাতে কোথাও একটা বিচ্ছিন্নতা আছে। মানে বলছি কৃষি টু শিল্প এই ট্রানজিশনটা স্মুদ হচ্ছে না। বিগ ক্যাপিটালকেই সেই দায়িত্বটা নিতে হবে।
    ২)"বোঝাই যাচ্ছে, আসলে জনসংখ্যার নিরিখে ভারত শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির একদম একদম শুরুর দিকে আছে। ভারতবর্ষ দেশটা সামাজিকভাবে একদম কৃষিভিত্তিক জায়গায় আছে। শিল্পে শিফট করার মুভটা বলা যেতে পারে, রাও-মনমোহন জমানা থেকে শুরু হয়েছে। এবং এখনও পর্যন্ত অভিজ্ঞতা খুব খারাপ। "

    আমার দু'পয়সাঃ
    ১) উপরের সব অবসার্ভেশনগুলোকে সত্যি বলে ধরে নিয়ে একটাই কথা। ১৮ এবং ১৯ শতকে উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে কৃষি অর্থনীতি থেকে শিল্প-অর্থনীতিতে উত্তরণ হয়েছিল তা কি আজ সম্ভব?
    সেই সময় সবগুলোই ছিল কলোনিয়াল দেশ। শিল্পবিপ্লবের জন্যে আবশ্যক পুঁজির বড় অংশই আসত তৃতীয় বিশ্বের লুঠ করা সম্পদ থেকে।
    -- বিজেপি যে ব্লাটান্ট শিল্পনীতি , আপনার ভাষায় চাবুক মেরে সব ঠিক করা, নিয়েছে সেটা স্পশ্টতঃ ওই উন্নত দেশগুলোর মডেলের মিসপ্লেসড প্রয়োগ।
    ২) বরং ভাবা উচিত কী করে আপনার ""ভারতের মত জনবহুল দেশে কৃষি জিডিপিতে বিরাট কনট্রিবিউট করে না। কিন্তু ম্যাসিভ কর্মসংস্থান করে, এটা সত্যি। জীবনযাত্রার মান হয়তো উন্নত নয়, কিন্তু খেয়ে পরে থাকে। নতুন সিস্টেমে এটাকে সুরক্ষিত রেখে উত্তরণের পথে না হাঁটলে গাঁড় মারা যাবে" এই প্রেক্ষিত মাথায় রেখে ইনক্লুসিভ গ্রোথের কথা ভাবা যায়।
    ৩) আপনি বলছেন এক্ষেত্রে স্টেটের বিশেষ কোন ভূমিকা নেই, বিগ ক্যাপিটালের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
    --- বিগ ক্যাপিটালের বয়েই গেছে। ১৯৮২ তে ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটুট অফ ব্যাংকার্স আয়োজিত প্রথম পুরুষোত্তম দাস ট্যান্ডন বক্তৃতামালায় অমর্ত্য সেন বলেছিলেন --ভারতীয় পুঁজি ও শিল্পপতিদের জিরো-সাম গেম না খেলে উইন- উইন গেম খেলতে। সেসব কথায় যে চিঁড়ে ভেজেনি দেখাই যাচ্চে।
    ৪) আমার চিন্তা--ইন্ক্লুসিভ গ্রোথ।
    কী করে ব্যাপক কৃষক সমাজকে উন্নয়ন মডেলে সামিল করে উইন-উইন গেমের শিল্পবিকাশ করা যায়। মনে হয় মৈত্রীশ ঘটকরা খানিকটা সেই জাতীয় কিছু বলছেন।
    ৫) কেন?
  • ranjan roy | 24.97.206.93 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩87222
  • আপনারই কোট থেকেঃ
    ১)"কিন্তু চাষীর কাজটা ভয়ঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। ডিএনএ-র লিঙ্কটায় একটা জায়গায় দেখলাম,
    ২) "Instead, how about investing more money and brains to support 'family and small-scale farming', the rib-cage of Indian agriculture?
    Experts across the globe now believe that this mode of farming can offer the world food and nutrition security, safeguard agro-biodiversity and boost local economies.
    3)The data are stunning: 98 per cent of all farms are family farms, accounting for 56 per cent of the total agricultural production and 70 per cent of the world's food. In Asia, small farmers constitute 90 per cent of the agricultural labour, producing 80 per cent of the regional food.
    4)This is why the UN has declared 2014 to be the Year of Family Farming. In India out of around 129.222 million farm holdings, 121.751 millions are owned by family farmers, with farms of less than one to four hectares, accounting for 95 per cent of India's operational holdings.
    5)It is, therefore, easy to imagine that a vast number of Indians might directly benefit from a proper policy support to small scale family farming, not to mention its multiplier effect on the rural society. There are huge challenges, however.
    ৬) লক্ষ্য করুনঃ To script this success story, the government must ensure for the marginal and small farmers access to and control of land, water and other natural resources, to nearby markets, credit, investment and agricultural extension.
    ৭)তাই সরকারের ভূমিকা এড়ানো যাবে না। আমাদের বন্ধু একক যেভাবে one-to-one কন্ট্রাক্ট ও নেগোশিয়েট করার কথা বলছেন সেটা মাইক্রো মডেলে মন্দ না। কিন্তু ম্যাক্রো মডেলে অপ্ট করলে ডিজ্যাস্টার বলে আমার মনে হয়।
    আর এতে সোশ্যালিজমের কিছু নেই। পুরো কেইনসীয় ঐতিহ্য।ঃ)))
    মুশকিল হল স্টেটের হস্তক্ষেপ দেখলেই ফ্রিডম্যান গোষ্ঠী ও আমাদের এককের মত থিংকার ( আমি এককের পাখা ওর আউট অফ দি বক্স সাহসী চিন্তার জন্যে) সোশ্যালিজমের ভূত দেখে।
    একই সঙ্গে কথিত বামেদের বড় অংশ স্টেটের জায়গায় ব্যক্তিগত পুঁজি দেখলেই ভাবে সোশ্যালিজমের জাত মারা গেল।ঃ(((
    ৮) বরং সরকারের পজিটিভ ভূমিকা হতে পারে গ্রামীণ ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, বাজার-বিপণন এর ইনফ্রস্ট্রাক্চার ও সেচ ব্যব্থায় বিনিয়োগ, শিক্ষায় বিনিয়োগ-বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে।
    এতে গ্রাসরুট লেভেলে রোজগার/ জীবিকা/কর্মসংস্থান বাড়বে। আর শিল্পবিপ্লবের জন্যে আবশ্যক স্কিল-সেট তৈরির ভিত্তি শুরু হবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন