এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • মদীয় মদকাহিনি

    ঈপ্সিতা পালভৌমিক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৪৯৯৫ বার পঠিত
  • ওয়ার্কশপে গেছি। সে আমার প্রথম আম্রিগাবাস। ওয়ার্কশপে বারোটা দেশের তেরোটা ছেলেপুলেদের প্রায় সব কটা ঘোর মালখোর। প্রায়টা জুড়লো, আমার জন্য। তখন আমি মদ টদ মোটে ছুঁতুমটুঁতুম না, মানে বিয়ার মুখে দিয়ে বি গ্রেড নিমের পাঁচন মনে হওয়া আর ওয়াইন খেয়ে মাথা ঘুরে যাবার পরে আর কিছু ছোঁবাটোবার ইচ্ছেটিচ্ছে হয়নি।


    তো, সে তোরা নিজেরা যা ইচ্ছে খাবি খা, কিন্তু না, আমা হেন ঘোর মদনাস্তিককে দীক্ষিত না করে তাদের আত্মার শান্তি, প্রাণের আরাম কিছুই হচ্ছেনা। বিশেষত আমার রুমমেট হার্মাদ কন্যা তো এই কনভার্টিকরণকে পুরো ধর্মপ্রচারের মতন সিরিয়াসলি নিয়ে নিল। কীসব ফলের ফ্লেভারে বিয়ার দিয়ে আমার ক্লাস শুরু হল। তা, তাতে সবে একটু একটু উন্নতি দেখাচ্ছি বলে টিচার যখন রায় দিচ্ছেন, তখনি সব ভেস্তে দিলেন এক প্রফ।


    ও হ্যাঁ, ওয়ার্কশপের প্রফেরাও সব এক সে বঢ়কর এক মালখোর। কয়েকজন তো বোঝানোরও চেষ্টা করেছিলেন, মাল খেতে খেতেই নাকি আসলি সায়েন্সটা হয়। তাই এই মাল খেতে যাওয়াটা নাকি মাস্ট এবং মাস্ট। তো্, সুজ্জি ডুবতে না ডুবতেই প্যারাসাইটদের হয় বংশবৃদ্ধি হতে দিয়ে, নয়তো সেদ্ধ হতে দিয়ে, নয়তো তাদের ডি এন এর চচ্চড়ি বানাতে দিয়ে টিচার স্টুডেন্ট সবে মিলে সেই তাড়িখানায় হানা দেওয়া ছিল নিত্যিকার পর্ব। কী যেন নাম ছিল সেই বারের। কত্তদিন আগের কথা, সব ভাল করে মনেও নেই ছাই। ক্যাপ্টেন কিডস কেবিন বোধহয়।


    বারের ঝুম ঝুম আলো আর ছোপ ছোপ অন্ধকার । ক্যামেরা তখনো হয়নি। হলে নাহয় সেই ছবি তুলে তুলেই কাটিয়ে দিতে পারতুম। এদিকে জলের গেলাস নিয়ে কতক্ষণ আর বসে থাকা যায়। একপাল মোদো মাতালের সাথে। তাও আবার কনকনে ঠান্ডা জল। বরফ বাদ দিতে বল্লে যে জল আসে, সেটা সত্যি সত্যিই ঐ জল থেকে কেবল বরফটুকুনি বাদ দেওয়া জল আর সে জলের তাপমাত্রা আমার ফেরিঞ্জাইটিসাক্রান্ত পান থেকে চুন খসলে ধরে যাওয়া গলার জন্য মোটেও আরামপ্রদ বা নিরাপদ নয়। কী বললে যে নন– ঠান্ডা জল আসে তাও জানা নেই। ওটার হিন্দিটা তাও শিখেছিলাম, ঠেকে। সেই প্রথমবার কানপুরে গিয়ে ওরকম ঠান্ডা জল দেখে কী চাই কী চাই ভেবে কোন জুতসই শব্দ মনে পড়লো না। ফস করে বেরিয়ে গেল, ঠান্ডা নহি, গরম পানি দিজিয়ে। তো, হাজির হল, কেটলির ফুটন্ত জল। বাংলায় পাতি এমনি জল বলে কাজ চলে গেছে তো কী বলে তাই নিয়ে থোড়াই মাথা ঘামিয়েছি। কানপুরের মেসে পরবর্তী এটেম্পট নিয়েছিলুম, নর্ম্যাল টেম্পরেচর কা পানি দিজিয়ে বলে। ফ্যালফ্যালানো দৃষ্টি জুটেছিল।অতঃপর ওই ঠান্ডা আর গরম জল মিশিয়ে বল্লুম, আয়সা পানি।


    লোকটার চোখে তখন হা ভগবান মার্কা চাউনি। বলে, ক্যায়া নোরমাল-মোরমাল বোল রহে থে, সাদা পানি মাঙ্গনা থা না !!


    বোঝো!


    তা, নন– ঠান্ডা কিম্বা সাদার ইঞ্জিরিটা আর জেনে ওঠা হয়নি বলে ওই বারে গিয়ে আর সেসব কিছু চাইবার রিস্কি নিইনি। নিজেই বসে বসে থেকে যতটা ঠান্ডা কাটানো যায়, কাটিয়ে নিতুম।


    ছোটবেলায় গরম কমপ্লান-দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতুম বলে মায়ের কাছে কী ধ্যাতানি খেয়েছি। হায় রে, এখন যদি হাতে নিদেনপক্ষে ঐ গরম কমপ্লান-দুধও থাকতো!


    জুস-ফুস পোষায় না। ওই বারে পাওয়া যেত কিনা ভুলেও গেছি। মোট কথা গলাকাঁপানো ঠান্ডা জলের গেলাস নিয়ে বসে বসে পাতি বোর হতুম, এ বিলক্ষণ মনে আছে। তাই মদ ধরার জন্য আমার রুমির শিক্ষানবিশ হতে আর বিশেষ আপত্তি করিনি। যদি কিছু ভালো লেগে যায় তো এ যাত্রা বেঁচে যাই।


    পড়েছি কিছু পাগল ছাগলের হাতে, মদ খেতেই হবে সাথে।


    আর শুধুই তো সেখেনে শেষ না। ওই তাড়িখানা পর্ব সমাপনান্তে ল্যাবে ফিরে আরেকপ্রস্থ এক্ষপি চালু করে পাশের ঘর, ( যেটারো আবার কী ছাই একটা নাম ছিল, সেও ক্যাপ্টেন দিয়েই, ও হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে, ক্যাপ্টেন মার্ভস), যা কিনা ছিল ঐ ওয়ার্কশপের নিজস্ব বার, মানে ঐ আর কী, বেসিক্যালি মালের গোডাউন, সেখানে গিয়ে শুরু হত গোডাউনের মাল সহযোগে নৃত্য। মানে, একা মালে রক্ষে ছিল না, নেত্য দোসর জুটলেন !


    যেহেতু এক ডজন দেশ, তো কম ক'রে খান বিশ রকম নৃত্য তো ছিলই!তার মধ্যে আবার সুপারহিট ছিল আমাদের বলিউডি ডান্স। ওঃ! সে ছিল আরেক টর্চার। অস্ট্রেলিয়া থেকে অস্ট্রিয়া, লোকজন রীতিমতন কেলাস করে সে নাচ শিখে এসেছে! আর অ্যাজ এক্সপেক্টেড, ইন্ডিয়ান রমণী মাত্রেই ভাংরা নৃত্যপটিয়সী ধরে নিয়ে সে আরেকপ্রস্থ টানাটানি। এক হাত ধরে টানবে মদের গেলাস ধরানোর জন্য তো অন্য হাত ধরে টানবে ভাংরা নাচের জন্য! সে এক আশ্চর্য বিপদ।


    শেষমেশ একদিন আর না পেরে ক্লাসের বাইরে টাঙ্গানো পৃথিবীর ম্যাপে ভাল করে সবাইকে পঞ্জাব থেকে বঙ্গের দূরত্ব বোঝালাম। মহান মিলনের মেলায় চাপা পড়ে যাওয়া বিবিধ নিয়ে দু-চার পিস জ্ঞানদান করলাম। তারপর আমাদের সমোস্কিতির নিদর্শন হিসেবে নাড়ু নৃত্য প্রদর্শন করলাম। কাজরা রে কাজরা রে-র সাথেই। তা তালে তালে সে নাচই যে কালে কালে সুপারহিট হয়ে যায় তাও কি আর বলে দিতে হবে? তবে শাকিরা থেকে ব্রিটনি থেকে ডঃ বম্বে থেকে দালের সবেতেই তালে তালে এক পাল কালো-ধলো-পিলে ছেলেপিলে যখন ওই হাত পা মাথা নেড়ে নেড়ে নাড়ু নৃত্য করতে থাকে তখন যেসমস্ত দৃশ্যের জন্ম হতে থাকে ক্যামেরাবিহীন আমার পক্ষে তা বর্ণনার অতীত। নিজেরা কল্পনা করে ন্যান। আর এসব বর্ণনা দিচ্ছিই বা কেন, এসব তো না, কী যেন বলছিলুম, হ্যাঁ, আমার মদ্যপ হয়ে ওঠার চেষ্টায় এক প্রফের প্রায় জল থুড়ি জিন ঢেলে দেবার গপ্পো। নাঃ, তাও ঠিক না, এ গপ্পো তো আসলে টেকিলার গপ্পো।


    তবে হ্যাঁ, ম্যাজিক বল সেই প্রথম দেখি। অন্ধকার ঘরে, ঘুরে চলেছে। কেবল একটি ম্যাজিক বল ঘুরে চলেছে।


    সেই প্রথম বুঝি, অন্ধকারেও নেশা হয়। ম্যাজিক বলের আলোতে। অন্ধকার ঘরে পিছলে পিছলে যেতে থাকা আলো আঁধারির জাফরিনকশায় খালি হাতেই যে সন্ধে আসে, সে সন্ধেতেও খালিপিলি নেশা হয়। ম্যাজিক?


    তো, যা বলছিলুম, এরকম এক সন্ধেতে আমার কী এক এক্ষপি পড়ে গেছে। মানে, প্যারাসাইটরা তার আগেরদিন রাতে ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া করেনি, নতুন রক্ত টক্ত যোগাড় করে তাদের বাবা-বাছা করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দিতে দিতে বাকি সব এক্ষপির দেরি।এদিকে পাঁঠা, মানে ঐ প্যারাসাইট পুরুষ্টু পুরন্ত না হলে তাকে কেটে বেশি মালপত্তরও পাওয়া যাবেনা।তারপরে একেক্টা দিন এমন আসে না, যেদিন আমরা অভাগা হয়ে যাই, যেদিকপানেই তাকাই, একটা না একটা গড়বড় উইথ ক্যাপিটাল জি। দেখা গেল, সেল লাইস করার ডিটারজেন্ট সল্যুশনও খতম। আর হতভাগা নতুন ডিটারজেন্ট গুঁড়ো, সে আর গুলতেই চাইছে না, আর গুলতেই চাইছে না। প্যারাসাইট না হয় সারাদিন খেয়ে-পরে বলি দেবার মতন মোটাসোটা হল, কিন্তু তার পর্দা টর্দা কাচার জন্য ডিটারজেন্ট, তাকে তো গুলতে হবে! তা তিনি দয়াপরবশ হয়ে দ্রবীভূত হলেন, অবশেষে, কিন্ত ততক্ষণে মন্দ মন্থরে সন্ধ্যাদেবীও হাজির হবেন হবেন। আর তাঁর আগমন সম্ভাবনা দেখেই এই বাজারে একজন নিজেকে মোটেও অভাগা মনে করলোনা। বরম শাপে বর হয়েছে মনে করে মনে মনে প্যারাসাইট থেকে শুরু করে ডিটারজেন্ট সবাইকে থ্যাঙ্কু বলল।


    গ্রুপের আর সবাই (এক্ষপি গুলো গ্রুপ করে হত) যখন হায় হায় করছে, সন্ধ্যার তাড়িখানা অভিযান আজকের মতন পণ্ড হল বলে, এই বীরাংগনা তখন ঝাঁপিয়ে পড়লেন,  সঙ্কট থেকে পরিত্রাণায়। --আমিই নাহয় রয়ে গেলুম, এক্ষপি গুলো সামলে নেব, একটা সন্ধেরই ব্যাপার তো, এ আর এমন কী, ঠিক পারব, তোমরা সব ঘুরে এসো, তোমরা এই সন্ধেটা নষ্ট কোরোনা ইঃ ইঃ।


    সে ক্ষীঃ স্বার্থত্যাগ। পারিনা-পারিনা টাইপ পুউরো। এবং অন্যেরাও এই সুযোগ লোপ্পাই ক্যাচের মতন লুফে আর বেশি কথা না বাড়িয়ে তাড়িখানার পথে পা বাড়াল। কেউ মনে মনে তো কেউ মুখে মুখে আমাকে বেশ খানিক আশিব্বাদ করে। আর অলক্ষ্যে তখন নিগঘাত কেউ ...


    এদিকে প্রাত্যহিক সান্ধ্য তাড়িতামাশার হাত হইতে নিস্তার পাবার সুখ বেশ বেদনাজনক ভাবে খুবই ক্ষণস্থায়ী হইল। মানে, যে ক্ষণে অনুধাবন করলাম, ছ’জনের এক্ষপি একার ঘাড়ে নেবার মানে ৬ x ৯৬ টা প্লেটে পাইপেটিং করা এবং তার আনুষঙ্গিক কাজকম্মোও প্রায় ছগুণ। অন্য কাজ তো আছেই।


    যাহোক শাস্ত্রে বলে গেছে, যেচে নেওয়া বাঁশ নিয়ে বিলাপ নিষিদ্ধ। এবং মনকে মনে পড়ানোর চেষ্টা করলুম, প্রতি সন্ধ্যার সেই ঠান্ডা জলের গ্লাস হাতে বসে থাকার দু তিনি ঘণ্টার নিত্য নির্যাতনের কথা আর বোঝানোর চেষ্টা করলুম, ৫৭৬ টা ওয়েল নিয়ে কাজ করা সে তুলনায় তপ্ত কড়াই। যাহোক, মনের দুক্ষু মনে চেপেই প্রাণপণে পাইপেটিং করতে করতে প্রায় যখন মেরে এনেছি, হঠাৎ শুনি ভারি গলার আওয়াজ। তাকিয়ে দেখতে গিয়ে মাথা তুলছি তো তুলছিই।


    ছ ফুটএর উপরে অন্তত আরও চার পাঁচ ইঞ্চি তো হবেনই। প্রফ। নতুন প্রফ।


    আমাদের ওয়ার্কশপের একেক্টা মডিউল থাকত। এম্নিতে রোজ সকালে সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে বারোটা অব্দি কেলাস। একেকদিন একেকজন প্রফের লেকচার। আর দুপুর থেকে একজন প্রফের সঙ্গে এক্ষপেরিমেন্টাল প্রোজেক্ট। একেকজনের দু হপ্তা ধরে। তো এই প্রফের মডিউল শুরু হয়েছিল গত কাল কিন্তু তিনি এসেছেন আজই।  আমি তো হুব্বা, ইনি ওই মদমোচ্ছব ছেড়ে এখেনে!


    তা, তিনি নাকি ইম্প্রেসড। গ্রুপমেটদের কাছে শুনেছেন আমার এই এতবড় আত্মত্যাগের কথা, আর তাতে নাকি তিনিও একটু ত্যাগ-ট্যাগ করে চলে এসেছেন, আমাকে কোম্পানি দিতে! আমি তো সকালে লেকচার শুনে ইম্প্রেসড ছিলুমই আর এম্নিতেও আমাদের ফিল্ডে নামী লোক, ইম্প্রেসড হবার মত কাজ, তারপর ঐ ছয়পাঁচিয়া অথচ ছিপছিপে চেহারায় ফ্রেঞ্চ উরুশ্চারণে ইঞ্জিরি, সেও যে ইম্প্রেস করেনি, তা বললে নেহাত অনৃতভাষণ হয়।


    ওনার ত্যাগের বাদবাকি নমুনা অবশ্য বিশেষ প্রকট ছিলনা। হাতে একটা পাত্তর নিয়েই এসেছিলেন। সে যাগগে। আমাকে পাত্তর নিয়ে সঙ্গ দিতে হচ্ছেনা, এই ঢের।


    হাতের কাজটা শেষ হবার পরে কিছুটা ইঙ্কিউবেশন পিরিয়ড ছিল। গালগপ্পো শুরু করলেন।


    তারপর বললেন, একটু সায়েন্স হয়ে যাক! তোমার রিসার্চের কাজ দেখাও। এমনিতে ওয়ার্কশপে্র শুরুতেই আমাদের নিজেদের রিসার্চের কাজ প্রেজেন্ট করতে হয়েছিল, সেটাই দেখতে চাইলেন। তা বেশ। আমিতো দিব্বি খুশি হয়ে ল্যাপি খুলছি, উনি বললেন, রেডি করো, আসছি। সে-ও বেশ। আমি খুলে টুলে গুছিয়ে টুছিয়ে বসেছি, অপেক্ষায়।


    উনি এলেন।


    এবং হাতে দুটো পাত্তর।


    এবং এসে হেসে বললেন, সায়েন্স তো আর এটা ছাড়া চলবে না। এই নাও, ধরো।


    হা রে ছাগলী, ওঁর ঐ ক্যাপ্টেন মার্ভসের ঘরে যাওয়াতেও তুই সিঁদুরে মেঘ দেখলিনে!


    গদগদচিত্তে বসে থাকলি কোন আক্কেলে! তখনি যদি বলে দিতিস তো নিয়ে হাজির হতেন না! এখন?


    এখন না ধরে আর উপায়?


     


    উপায় নেই মানে?  যা থাকে কপালে, যা অভদ্রতা হয় হোক, এই বিয়ারের জন্য, এও নয়, এর বদলে শুধু জলের গ্লাস ধরে বসে থাকার জন্যই ৫৭৬ টা ওয়েল পাইপেটিং এর ত্যাগ স্বীকার করেছি, আর এখন তীরে এসে এভাবে তরী ডোবাব?


    অন্তর্সত্তা কভি নেহি বলে গর্জে উঠলো।


    ভদ্রতার মাথা খেয়ে বলেই দিলুম, বিয়ার আমি খেতে পারিনে।


    তাড়াতাড়ি প্রেজেন্টেশন খুললাম। প্রথম স্লাইড ক্লোরোকুইন নিয়ে।


    উনি বললেন, আঃ ক্লোরোকুইন? দাঁড়াও দাঁড়াও।


    ওটা আমি খেয়ে নেব। তোমার জন্য স্পেশাল ড্রিঙ্ক বানিয়ে আনছি। ওয়েট মাডি।


    কতবার আর অভদ্রতা করা যায়, তাছাড়া আশা ছিল, আমার রুমির মত হয়তো ফ্রুট ফ্লেভারের বিয়ার নিয়ে আসবেন, সে রসে তখন একটু একটু স্বাদ পাচ্ছি, সেতো আগেই বলেছি।


    এলেন। বম্বে স্যাফায়ার্সের একটা বোতল নিয়ে। নামটা দেখে তো আমার বেশ পছন্দ হল।


    সাগর সাগর নীল রংটা দেখেও। ওহো, আরো একটা বোতল এনেছেন। সেটার রংটা আরো সুন্দর। সবুজ। পছন্দ হল।


    দুটো থেকে ঢেলে মিশিয়ে টিশিয়ে হাতে ধরালেন, বললেন নাও, খাও, আর খেতে খেতে বলো তোমার কুইনাইন, ক্লোরকুইন আর মশাদের গপ্পো।


    কিন্তু তার আগে এই জিন টনিকের গপ্পোটাও শুনে নাও। জানো কী? সবুজ বোতলটা দেখিয়ে বললেন, এ হল টনিক ওয়াটার। কুইনাইন মেশানো। তোমাদের দেশে যখন ব্রিটিশরা গেল, তখন ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বাঁচতে হাকুচ তেতো কুইনাইন খাবার রাস্তা বের করতে এই জিন টনিক বানায়। এই দিয়ে কুইনাইনের স্বাদটা কিছুটা সহনীয় হত।


    -নাও, খা্‌ও, আর খেতে খেতে বলো এবার তোমার কুইনাইন, ক্লোরকুইন আর মশাদের গপ্পো।


     


    ততক্ষণে মুখে দেওয়া হয়ে গেছে। ওঁর সামনে বমি যে হয়নি সেই আমার ভাগ্যি।


    আর ভাগ্যি! বিয়ারের উত্তপ্ত কটাহ থেকে ...


    বাহান্নটা স্লাইড দেখিয়েছিলাম ওই মুখে কোনরকমে গেলাসটা ঠেকিয়ে। তারপর ছাড়া পেতে বাকি জিন টনিক সিঙ্কে ঢালি আর এই ঘটনা আমার রুমমেটের আমাকে মদ্যপ বানানোর সেই প্রোজেক্টে জল ঢালে, বলাই বাহুল্য। তবে, মদ তারপর নানা খাতে বয়েছিল এবং বহুদূর গড়িয়েছিল, এবং এতোটাই গড়িয়েছিল সে গল্প বলার জন্য জন্য আরেকটা বোতল খুলে বসতে হবে। খালি এটুকু বলি, এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই ঘোরতর টাকিলাখোর বলে আমি খ্যাতিলাভ করি। 


    ওয়ার্কশপের শেষে আমাদের একটা করে টি-শার্ট হয়েছিল। কাস্টম্মেড।


    তার পিছনে সবার নাম+বীয়ার=... এমনি লেখা ছিল।


    আমার বেলায় ছিল ঈপ্সিতা+টাকিলা=....


    এবং চাঁদা তুলে আমাকে একখানি টাকিলার বোতল উপহার দেওয়া হয়। 


    আর এখনো আমাদের সেই বন্ধুবান্ধব বা প্রফেসরদের সাথে দেখা হলে আমার নাম করে টাকিলার বোতল খোলা হয়। শুনেছি আমি না থাকলেও। 


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৪৯৯৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কবিতা - Avi Samaddar
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • বিপ্লব রহমান | ১১ মার্চ ২০২০ ২৩:২৫91409
  • প্রতিভা দি, 

    পাইদি স্ল্যাং বলেন না বলেই লক্ষ্মী?

    দূরাগত পর্যবেক্ষণে মনে হয়, তিনি তারও বেশি, খুব স্থির বুদ্ধির মানুষ।  বিশেষ  করে বছর দশেক আগে থেকে গুরুর ফেসবুক গ্রুপ যখন খুব গোলমেলে, ফেক আইডি আর ছাগু/চাড্ডিদের গোয়াল ঘরে পরিনত হতে বসেছিল, তখনো তিনি নিত্য কর্ম সেরে এইসব অনেকটা একাই সামাল দিয়েছেন।

    আবার প্রচণ্ড দ্বিমত, বিতর্ক থাকা স্বত্তেও দূরে ঠেলে দেননি। নির্দ্বিধায় স্বীকার করি, সেই বদ্ধ ডোবায় পাই দি, সৈকত দা, কখনো কল্লোল দা (দাশগুপ্ত) দূর বাংলাদেশের এক অখ্যাত সাংবাদিকের টুজি ফোনে গুরুচণ্ডালি যেন আলোকবর্তিকাই হয়ে ধরা দিয়েছেন বার বার। আমি প্রতিদিন ঋদ্ধ হয়েছি, এখনো ঋদ্ধ হই, অনেক শিখি আরো অনেকের কাছে। 

    #

    এই ফাঁকে জানিয়ে দেই, হঠাৎ মেজাজ হারালে রোদ্দুর রায় হতে ইচ্ছে করে, মুখ ফস্কে দু-্একটি স্ল্যাং বেড়িয়ে আসে। এইটুকু ক্ষমাঘেন্না করো প্লিজ।

    আর এই সেদিনই ট্রাফিক আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া আমাদের কিশোর বিদ্রোহীরাও কিন্তু রাষ্ট্রকে প্রচণ্ড চপেটাঘাত করে প্রকাশ্যে প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে স্ল্যাং-এ  রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল,

    “পুলিশ কোন চ্যাটের বাল?“ 

    তাই বলে তারা অলক্ষ্মী? ভালো থেকো। 

  • Pi | 162.158.227.55 | ১২ মার্চ ২০২০ ০৯:১০91417
  • আরে বিপ্লবদা, ঠিক আছে ঃ)।

    হ্যাঁ হ্যাঁ প্রতিভাদি, আমি বেজায় লকখী :D
  • সুমনা সান্যাল | 162.158.23.108 | ১২ মার্চ ২০২০ ২২:২৯91438
  • নাড়ুনৃত্য থেকে টাকিলা! দারুণ! ছবিটা পরিস্কার দেখা গেলো। আর এত ঝরঝরে গদ্য! একটানে পড়তে পারা আর পড়ার পরে ভালোলাগার রেশ টেনে রাখা লেখা!
  • দ্যুতি | 162.158.167.53 | ১২ মার্চ ২০২০ ২২:৪০91439
  • জীবনের কত ধাপ সবাই কাটায়। সত্যি গড়গড়িয়ে পড়ে ফেললাম। প্রতিভা দি, বিপ্লব বাবুর কমেন্ট তোর উত্তর কিছুই চোখ এড়ায়নি। অনেক ভালোবা।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন