এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সাক্ষাৎকারঃ কথাবার্তার ব্যাপারে আমি খুব সংযমী

    বাজে খবর লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ জুলাই ২০১৪ | ৭৭০ বার পঠিত
  • সাম্প্রতিক একটি মেগা হিটের পর টালিগঞ্জের মেগাতারকা গুণধর পাল ছুটি কাটাতে আছেন আত্মগোপনে। সেই হাইড-আউট থেকে বেরিয়ে এসে ফ্লুরিজের ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসেছিলেন কেবলমাত্র "বাজে খবর" এর সঙ্গে কথা বলবেন বলে। রইল গুণধর পালের এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ। একমাত্র "বাজে খবর"এ।

    -------------------------------

    চিরশিশু গুণধর। ফাইলচিত্র।
    -------------------------------

    বাজে খবরঃ লাস্ট যখন আপনার ইন্টারভিউ করেছিলাম সেটা ছিল আহেলি তে। এ বার আপনার সঙ্গে ফ্লুরিজ-এ ব্রেকফাস্ট...

    গুণধরঃ দুটোই আমার খুব প্রিয় জায়গা। এই জায়গাগুলোতে এত স্মৃতি আছে আমার...তাই এখানেই আড্ডা মারতে ভাল লাগে। এরকম আরও অনেকগুলো জায়গা আছে। গাদিয়াড়া। তারপর শ্রীরামপুরের গঙ্গার ঘাট।

    বাজে খবরঃ আর চন্দননগর? চন্দননগরের কোনো স্মৃতি নেই?

    গুণধরঃ সে কি হয়? ওই নদীর পাড়ে সাইকেল নিয়ে কতবার গেছি। কত সূর্যাস্ত দেখেছি। কত মাস্তানি করেছি।

    বাজে খবরঃ মাস্তানি? কিরকম?

    গুণধরঃ আরে মাস্তানি শুনে অবাক হবার কি আছে? (আস্তিন গুটিয়ে) আপনাদের নায়ক কি চিরকালই এরকম শান্তশিষ্ট নাকি? ওসব কমবয়সের রক্তগরম। একটু আধটু ধাতানি দিতে হয় তো। ফরাসী কলোনি হলে কি হবে, সব লোকজনের তো কালচার নেই। আজেবাজে কাজ করত। প্ররোচনা দিত। এই ল্যাক অফ কালচারটা আমার তখন থেকেই সহ্য হয়না। ওদের ওরকম করেই ঢিট করতে হবে। ওদের ওতেই অভ্যেস। মায়েরা কুকুরের সঙ্গে শুয়ে জন্ম দিয়েছে, অন্যরকম কী হবে।

    বাজে খবরঃ একটা প্রশ্ন করি?

    গুণধরঃ আরে প্রশ্ন করতেই তো এসেছেন। ঘাবড়াচ্ছেন কেন? আপনাকে তো বলিনি।

    বাজে খবরঃ মানে, আপনি কি নর্মালি এই ভাষাতেই কথা বলেন? প্রথম থেকেই?

    গুণধরঃ এইটা ভালো বলেছেন। না না, কথাবার্তা বিশেষ বলতাম না, হাতটাই চলত বেশি। গুলি দেখেছেন তো? হা হা।

    বাজে খবরঃ মারামারি করেছেন তাহলে ভালই।

    গুণধরঃ আরে না। মারামারি ঠিক না। ওসব কায়দা আছে। একবার একটা কুত্তার বাচ্চা বাঁদরামি করছিল, কি করলাম বলুন তো?

    বাজে খবরঃ কি?

    গুণধরঃ তার বান্ধবীর প্যান্ট খুলে নিলাম। একদম রাস্তার মাঝখানে। নে এবার কি করবি কর।

    বাজে খবরঃ অ্যাঁ, এতটা বাড়াবাড়ি করেছেন?

    গুণধরঃ আরে ধুর। যা ভাবছেন তা না। রেপটেপ কিছু নয়। ওই খুলে দিলাম আর কি। কী দৌড় রাস্তা দিয়ে। ভাবতে পরবেন না। হা হা।

    আসলে ওসব লাগেনা। এইটা বুঝে নিন।

    বাজে খবরঃ কী লাগেনা?

    গুণধরঃ ওই রেপটেপ। একবার ছেলেদের দিয়ে করিয়ে দেব বললেই হল। ভয়ে ল্যাজ গুটিয়ে এইটুকু। কুত্তার বাচ্চা হলে যা হয়।

    বাজে খবরঃ একটা অপ্রিয় কথা বলি। এই রেপ করব বলে ভয় দেখানোটাও তো খারাপ।

    গুণধরঃ কে বলল। পুরো জিনিসটা দেখতে হবে। আমাদের নাট্যকারকে জিজ্ঞাসা করুন না, ওনার তো পড়াশুনো আছে। পার্কস্ট্রিটের ওই ঘটনার পর বলেছিলেন, রেপ টা বড়ো কথা না, প্রেক্ষিতটা দেখতে হবে। ভুল বলেছিলেন মনে হয়?

    বাজে খবরঃ কিন্তু আপনি তো নিজেই বলেছিলেন...

    গুণধরঃ (উত্তেজিতভাবে) কী বলেছিলাম?

    বাজে খবরঃ এই ২০০৯ সালে বলেছিলেন, যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের হাতের কাছে পেলে পিটিয়ে মেরে ফেলুন। আমি গুণধর বলছি।

    গুণধরঃ প্রেক্ষিতটা দেখেছেন?

    বাজে খবরঃ কি সেটা?

    গুণধরঃ (রাগতস্বরে)শুনুন। বুঝুন ব্যাপারটা ভালো করে। আপনার বোনকে কেউ রেপ করল। আপনি কি করবেন?

    বাজে খবরঃ পুলিশে খবর দেব।

    গুণধরঃ আপনার মুন্ডু। কোথায় থাকেন, আমেরিকায়? পুলিশ ফুলিশ দিয়ে এখানে কিসু হায়না। হয় যে করেছে, তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবেন। নয় তার বোনকে গিয়ে রেপ করবেন। এই তো সলিউশন। তখন মেরে ফেলতে বলেছিলাম, এখন রেপ করিয়ে দেব বলছি। প্রেক্ষিতটা আলাদা। বক্তব্য একই আছে। ইন ফ্যাক্ট এখন দুটোই বলছি। রেপও করুন, ধরে গলার নলিও কেটে দিন। এবার বিশ্বাস হল?

    বাজে খবরঃ এইসব নলি-টলিও কেটেছেন নাকি?

    গুণধরঃ আপনি কি আমাকে গুন্ডা ভেবেছেন নাকি? পিটিয়ে মারা, গলার নলি কেটে দেওয়া, এইসব সিনেমায় করেছি। রিয়েল লাইফে হয়ে ওঠেনি। তবে, মিথ্যে বলবনা, ফ্যান্টাসি একটা আছে।

    বাজে খবরঃ কী সেটা?

    গুণধরঃ তেমন কিছু না, ভিলেনদের প্রায়ই স্বপ্ন দেখি। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গলা কাটছি, মেরে শেষ করে দিচ্ছি।ভিলেনের ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোকেও রেহাই দিইনি। ব্যাটারা কাঁদছে, আর একটা একটা করে মুন্ডু কাটছি। কচি কচি কাটা মুন্ডু গুলোর চোখের জল শুকোয়নি, ভাবুন একবার।

    বাজে খবরঃ তাতে কি লাভ?

    গুণধরঃ লাভ-ক্ষতির কি আছে? স্বপ্ন হল স্বপ্ন। বলে দিলাম, ছাপতে হলে ছাপবেন, নইলে ছাপবেন না।

    বাজে খবরঃ আচ্ছা এবার শেষ প্রশ্ন।

    গুণধরঃ কেন যা বললাম ছাপতে পারবেন না?

    বাজে খবরঃ এখনও পর্যন্ত যা বলেছেন, পারব। তবে স্পেসের একটা ব্যাপার আছে তো। শেষ তো করতে হবে।

    গুণধরঃ বেশ বলুন।

    বাজে খবরঃ আপনার এই চিন্তাভাবনা নিয়ে পারিপার্শ্বিকর সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়না?

    গুণধরঃ কিসের অসুবিধে?

    বাজে খবরঃ আপনার ভাবনার সঙ্গে আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার-পরিজন, সবাই একমত? কোনো ঠোকাঠুকি লাগে না?

    গুণধরঃ সবাই একমত। একশবার।

    বাজে খবরঃ কিন্তু আপনার স্ত্রী নাকি বলেছেন, আপনি একটি গন কেস?

    গুণধরঃ বোগাস।

    বাজে খবরঃ কোনটা বোগাস? বলেননি, না ভুল বলেছেন?

    গুণধরঃ বললাম তো বোগাস। এর বাইরে আমাকে দিয়ে আর একটি কথাও বলাতে পারবেন না। কথাবার্তার ব্যাপারে আমি খুব সংযমী। শত প্ররোচনাতেও বাজে কথা বলিনা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ জুলাই ২০১৪ | ৭৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ari | 119.163.234.2 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০২:০৬74622
  • এটা পুরো জুতোর বাড়ি হয়েছে।
  • T | 24.139.128.15 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৪:৫০74634
  • অ্যাঁ, না না হারিয়ে যাবে কেন? আচ্ছা আমি ব্লগ খুলে লিখে রাখব একসময়।
  • এইটা | 233.29.202.132 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৪:৫১74623
  • গুড হয়েছে
  • Pubদা | 85.115.172.155 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৫:০০74624
  • ঠিক জমল না - আরেকটু বেশি expect করেছিলাম ...
  • I | 24.99.140.78 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৬:০৪74625
  • জমে নি।
  • Pubদা | 202.193.216.148 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:০৬74635
  • এই তো জমছে ;)
    T , b - খাসা খাসা !! ;)
  • de | 190.149.51.69 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:১৭74626
  • জমেছে কি জমেনি - সেটার থেকে বড়ো হোলো নানা ফর্মে প্রতিবাদটাকে রেজিস্টার করা - সেই কাজটা শুরু হয়েছে। এবার বাকিরাও শুরু করুক এখানে -
  • ranjan roy | 24.99.152.249 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:২৬74636
  • b,
    এমন কিছু ছন্দ নষ্ট হয় নি। ওটুকু গাইবার সময় ম্যানেজ করা যাবে। দোহার দেওয়ার সময় অন্ত্যমিলে দু-অক্ষর সামান্য বদলে নেওয়া যাবে।ঃ))

    দ এর সাজেশনকে সাপোর্টালাম।
    দে-দির সঙ্গে একমত।
    এই নিন্দার ভাষা নাই,
    সর্বত্র প্রতিবাদ চাই!
  • Pubদা | 202.193.216.147 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:৪৫74637
  • ফেবুতে পেলাম :

    তাপস পালকে নিয়ে বাঙালির গালাগালির কিছু নমুনাঃ
    ১) আপনি মানুষ না তাপস পাল
    ২) মেয়েদের দিকে তাপস পালের মত তাকাতে লজ্জা করেনা ?
    ৩) স্যার বাইরে কিছু তাপস পাল এসেছে পার্টির চাঁদা চাইতে
    ৪) এই মাল তো পুরো তাপস পাল
  • কৃশানু | 213.99.211.19 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:৫৮74627
  • দরকারী।
  • | 24.96.190.121 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৭:৫৮74628
  • দে'র সাথে একমত। এখন খুব বেশী করে নানা ফর্মে(খিস্তিখেউড় বাদ দিয়ে) প্রতিবাদ আসা দরকার। জমেছে কি জমে নি সেটা বড় কথা নয়।
  • san | 52.104.25.232 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৮:০০74629
  • দে-দির সঙ্গে একমত।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৮:১০74638
  • পালবংশ, পদবী পাল শব্দের অর্থ হইল গিয়া প্রোটেক্টর - রক্ষক। ৭৫০ সালে শুরু করসিলেন গোপাল। তারপর আইলেন ধর্মপাল, দেবপাল।
    হেইক্ষণে, একবিংশ শতাব্দীতে অবশেষে তাপোস্পাল।
  • সিকি | 132.177.30.252 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৮:১৬74630
  • একমত। প্রতিবাদের ধরণটা পছন্দ হয়েছে। লেখাটাও খুব খারাপ লাগে নি, তবে একটু তাড়াহুড়োয় লেখা।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ০৯:১৬74631
  • ফেসবুকে পেলাম
    কৃষ্ণনগর বড় পুণ্যময় স্থান ।
    পালেরা তথায় বসে মূর্তি বানান ।।
    এরই মাঝে আছেন এক পাল-চূড়ামণি।
    'প' থেকে দু'ঘর গেলে তারে ঠিক জানি।।
    অতীব ক্যালানে হীরো ছিলো এক কালে।
    ঘড়ি দেখে উঠে গেলো তৃণমূলি ডালে।।
    এ-ডাল সে-ডাল করে অদ্য সাংসদ ।
    সহস্র নদীয়াবাসী তার বশংবদ ।।
    হঠাৎ ফাঁসিয়া গেলো, লীক্‌ হলো টেপ।
    শোনা গেলো বলছেন, "করে দেবো রেপ" ।।
    অতঃ কিম - তুলে দেবে বিধবা-বিবাহ
    কিংবা আনিবে ফিরে ফের সতীদাহ ।।
    সময়ে জানিবে কত ধানে কত চাল ।
    অদ্য গাও গলা তুলে ঃ "জয় তাপস পাল" ।।
    ইমহো, শেষ লাইনে অল্পবিস্তর ছন্দ্চ্যুতি ঘটেছে।
  • T | 24.139.128.15 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ১১:৪৬74632
  • নিজস্ব প্রতিবেদনঃ ধর্মতলায় রাণী রাসমনি অ্যাভিনিউতে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে শাসক দলের সম্মেলন। এই উপলক্ষ্যে ধর্মতলা টইটম্বুর। বহুদুরের গাঁ গঞ্জ থেকে লোকেরা এসেছেন। গত পরশু থেকেই বাইপাস ধরেই পরপর বাসের মিছিল চোখে পড়ছিল। লরি, টেম্পো, অটো, ট্রাক, ট্রেন, বাস ট্রাম কিচ্ছু বাদ নেই। মাঝসমুদ্রে যারা ট্রলারে মাছ ধরতে গেছিল তাদেরকে অবধি টেনে আনা হয়েছে। শাসক দলের ঘনিষ্ট এক বাম বিধায়ক জানালেন, প্রত্যেক জেলার সভাধিপতি, সভাপতি, পতি, এবং পাতি নেতাদেরকে লোক ধরে আনার নির্দিষ্ট টার্গেট দেওয়া হয়েছিল। পাশ মার্ক পেতে সবাই মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা জানালেন, সব কিন্তু মানুষ নয়, ভিড়ের মধ্যে বেশ কিছু জালিও আছে।

    জালি খোঁজার জন্য গেস্টাপো হাউসের পেছনে ঢুঁ মারতেই দেখা গেল টিভি চ্যানলের ওবি ভ্যানের পাশে কাঠকুটো দিয়ে উনুন বানিয়েছেন বৃদ্ধ বশিরুল। প্রশ্ন করাতে একগাল হেসে বললেন, সেই দাদুর হাত ধরে আসতাম। কতপুরুষের ব্যবসা। প্রতিবারই খুব বিক্রীবাটা হয়, তবে এবারকার মতো কোনোবার দেখিনি। এই নিয়ে তিন হাঁড়ি আলুরদম ফুরোলো।

    কথাটা বেশ সত্যি। স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে সকাল থেকে চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন, বশিরুলের স্ত্রী জরিনা বিবি। ছ ছেলে এক মেয়ের মা জানালেন ছিয়াশিতে বশিরুল মারা যাওয়ার পর থেকে, একাই সামলাতেন। পাঁচ ছেলে সঙ্গত করত। ছোটোটা তখন সবে হামা দিতে শিখেছে। মেয়েটি কুটনো কাটত। চোদ্দোয় পাঁচ ছেলের মাথা কেটে নেওয়ার পর থেকে ওরা সিপিএম হয়ে যায়। তারপর আর যোগাযোগ নেই । ছোটটি তখনো হামা দিত। সংসার সামলাতে শরীরে ধকল পরত খুব। ধীরে ধীরে অবস্থা ফিরেছে। মেয়ে এখন জুটমিলে রিসেপশনে বসে। বাপ চাচার ব্যবসায় তার আর উৎসাহ নেই। বাধ্য হয়ে বশিরুলই এখন টুকটাক খেটে দেন। খদ্দের দের চা আর ডিম পাঁউরুটি সাপ্লাই দিতে দিতে উজ্জ্বল লুখে জরিনা জানালেন, ধম্মতলায় প্রতিবছর এই খানে ছোটোছেলের সাথে দেখা হয়, সে এখন ডেকরেটর হয়েছে। তবে এখনো হামা টানে।

    পিকাডিলি স্ট্রীট থেকে ধর্মতলায় আসার মুখে রাস্তার ক্রসিং এ দেখা হ’ল বর্ষীয়ান টালিগঞ্জের অভিনেতার সাথে। নীল সাদা পাঞ্জাবি, মুখে সিগারেট। একগাল হেসে বুকপকেট চাপড়ে দেখালেন টিকিট রয়েছে। ভিতরে ঢুকবেন? কেন ঢুকব না, বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে জানালেন একসময়ের বড়ো পর্দার নায়ক। থার্ড ফ্লোরের সিট পেতে অনেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে জানেন। লাস্টে বাড়ি বাড়ি রেপ করব বলাতে একটা চিঠি পাঠাল। সেখানে আবার হলফনামা দিতে হ’ল। সাথে ভিডিও ক্লিপিংস। তবে পরিষ্কার দেখিয়েছি যে মোট ছ বার নলি কাটব বলেছি। তাইতে মনে হয় ফাইনালি চিঁড়ে ভিজেছে। এরপরই নিচু স্বরে জানালেন, রাজ্য কমিটির অন্য নেতাদের দেখুন, স্রেফ বোম মারব বললেই লাস্ট ফ্লোরের টিকিট পাচ্ছে, সেখানে...। অভিমানী নায়কের গলায় হতাশা আর আফশোস ঝরে পড়ল। গোষ্টীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তাহলে মিথ্যে নয়।

    সূর্য পাটে ঢলছে। বেকার স্ট্রীট থেকে আসা মিছিলে একদল লোকের গায়ে নীল সাদা জার্সি। তাদের সামনে হাঁটছেন রাজ্য কমিটির নেতারা। ব্যানার ফেস্টুনে মোড়া মিছিলের ভেতর থেকে ক্ষনে ক্ষনে শ্লোগান উঠছে। প্যারোলে মুক্ত মস্তানরা সামান্য পিছনের সারিতে। ছ বার রেপ ও তিনটি খুনের মালিক এক নাবালক মস্তান লাজুক হেসে জানালেন, বিকেলবেলা প্রতিদিন চমকাতে ভালো লাগে না। তাই একটু এলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, টিকিট আছে? চোখ নাচিয়ে কাঁধের ব্যাগের দিকে ইঙ্গিত করলেন। বুঝলাম বৈধ টিকিট নেই, কিন্তু অন্য ব্যবস্থা করেছেন। গোটা কলকাতা আর তার আশেপাশ জুড়ে কদিন ধরে যে দড়ি আর ফোল্ডিং মই ইত্যাদির স্টক শেষ বলে কানাঘুষোয় খবর আসছিল, তা আসলে সত্যি।

    কৃষক সংগঠন থেকে শুরু করে কর্পোরেট সেক্টর জানাচ্ছে যে এই ক্রেজ আগে কখনো দেখা যায় নি। এমন গণসম্মেলন ঐতিহাসিক। এক কলেজপড়ুয়া ছাত্রনেতা সোৎসাহে কলার তুলছেন। পৃথিবীর আর কটা দেশে হয়েছে দেখান দাদা। প্রচুর টাকা তুলেছি জানেন। দুবার অধ্যক্ষ সাজতে হয়েছে, রেজিস্ট্রার একবার। পালা করে ক্যাশে বসতাম সবাই। খুব খেটেছি। এঁর কাছেও টিকিট, অবশ্য গ্রাউন্ড ফ্লোরের। তবে তাতে দমছেন না তরুণ নেতা। একবার শুধু ভিতরে ঢুকতে দিন। তারপর খেলা দেখবেন।

    মঞ্চের ব্যবস্থাপকদের খোঁজ করছিলাম। এত ব্যস্ত যে কারোর সাথে যোগাযোগ করা গেল না। দায়িত্ব অবশ্য প্রচুর। অত উঁচু পিরামিডাকার মঞ্চের পেছনে ঢাকা পড়েছে রাইটার্স, হাইকোর্ট। রীতিমতো ক্রেন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি লেগেছে বানাতে। একদম গ্রাউন্ড ফ্লোরের স্ট্রাকচার পুরোটাই স্টীলের। ফাউন্ডেশন। প্রথম পর্যায়ের রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হবে ওখানেই। যত বড় নেতা, তত উঁচুতলায় তাঁর নির্দিষ্ট সিট। সেখানে তাঁরা লড়বেন পরস্পরের সাথে। একদম চুড়োর ঘরটা কার জন্য তা বলতে পারার কোনো পুরষ্কার নেই। ওখান থেকেই উনি বেছে নেবেন পরবর্তী সংগ্রামী নেতাদের। শোনা যাচ্ছে ওখানে লাগানো হয়েছে বেলজিয়ান গ্লাসের বিরাট আয়না। হুইসেল না বাজা অবধি লড়াই চলবে। টিকিট ছাড়া প্রবেশের প্রচন্ড কড়াকড়ি। অবৈধভাবে দড়ি ও মই ব্যবহার করে যাতে কেউ উপরে না উঠে যায় তা দেখার দায়িত্ব পুলিশ ও সংগঠকদের। পর্যাপ্ত অক্সিজেন মাস্ক যোগাড় করতে আপাতত তারা নাজেহাল।
    এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাত সাড়ে দশটা অবধি মানুষের ঢল। ভীন রাজ্য থেকে যাদবগণও চলে এসেছেন। কাতারে কাতারে মানুষ প্রবেশপথের সামনে হুমড়ি খাচ্ছেন। শ্লোগান চীৎকারে ভরপুর। জায়ান্ট স্ক্রীনের সামনে থিক থিক করছে ভীড়। ভেতরে একটু পরেই লড়াই শুরু হবে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা, তারপরেই মধ্যরাতের গীর্জার ঘন্টাধ্বনির সাথে সাথে শুরু হয়ে যাবে বাঙালীর প্রথম গ্রেটেস্ট ফেস্টিভ্যাল।
  • | 24.97.128.83 (*) | ০২ জুলাই ২০১৪ ১১:৫৯74633
  • ওহে টি,

    এটাকে হয় একটা টই খুলে নয় ব্লগ খুলে ফেলো। নইলে হারিয়ে যাবে খামোখা।
  • PM | 121.223.100.50 (*) | ০৩ জুলাই ২০১৪ ১২:২৯74639
  • বহুকাল আগের কথা। আমি বেশ ছোটো। তখন দাদার কীর্তি আর সাহেব দুটই রিলিজ করে গেছে। চন্দনগর স্টেসনে মা আর অমি বেন্চে বসে। সকাল ১১ টা তখন , কলকাতায় ফিরছি সাথে ছোটোমামা। মা বললো ঐ দেখ তাপস পাল। দেখি প্ল্যটফর্মের ধারে একটা রোগা মিস্টিমতো ছেলে গলা বড়িয়ে সিগনাল দেখছে, হাতে ব্রিফ্কেস। একটু পরে লোকটা আমাদের পাশে এসে বসলো। কি করে জানি সাথে কথা বর্ত শুরু হলো মনে নেই। এটুকু মনে আছে খুব নিচু গলায় সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছিলো। আমার বেশ ভালো লেগেছিলো। এটাও মনে আছে যে আশ পাশের লোকেরা কেউ-ই আলাদা করে কোনো গুত্ব দেয় নি ছেলেটিকে।

    শেষ কিছু বছরে সেই তাপস পালের মুখ থেকে এহেন বানী শুনে অবিশ্বাস্য আর সাংঘাতিক খারাপ লাগছে। মানুষ এতোটাও পাল্টায়? কে ওকে অতো অধঃপতিত করলো কে জানে--সিনেমা না রাজনীতি? নাকি দুটৈ?
  • S | 69.160.212.37 (*) | ০৬ জুলাই ২০১৪ ০৯:১২74641
  • "আপনার মুন্ডু। কোথায় থাকেন, আমেরিকায়? পুলিশ ফুলিশ দিয়ে এখানে কিসু হয়না।"
  • Tathagato Rai Dastidar | 116.51.234.80 (*) | ১৯ জুলাই ২০১৪ ১০:০১74642
  • দারুণ!

    ‘তেমন কিছু না, ভিলেনদের প্রায়ই স্বপ্ন দেখি। পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গলা কাটছি, মেরে শেষ করে দিচ্ছি।ভিলেনের ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোকেও রেহাই দিইনি। ব্যাটারা কাঁদছে, আর একটা একটা করে মুন্ডু কাটছি। কচি কচি কাটা মুন্ডু গুলোর চোখের জল শুকোয়নি, ভাবুন একবার।’
    এইটা বোধহয় সব থেকে অসাধারণ। এবং আমার ধারণা, বহু রেপিস্ট ও উড বি রেপিস্টও এই ধরণের স্বপ্নই নিয়মিত দেখে থাকেন।

    প্রসঙ্গত একটা কথা — নিজের ঢাক একটু নিজে পেটাচ্ছি বটে, তবে কয়েকদিন আগে এই বিষয়েই একটা ছোট লেখা লিখলামঃ
    http://bhetobangali.wordpress.com/2014/07/14/rape-made-easy/
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন