এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • লাল ইস্কুল, গোলাপী খাতা আর চোরকাঁটা

    শারদ্বত লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৯৫৮ বার পঠিত
  • লাল ইস্কুলের খাতাগুলো বড্ড মায়াময় হালকা গোলাপী আর হালকা সবুজ রঙের। তা সে হার্ড-বাউন্ড হান্ড্রেড পেজ প্লেন, রেজিস্টার, ফিফটিটু প্লেন, রেজিস্টার, নাইন্টিটু প্লেন আর রেজিস্টার যাই হোক না কেন। তাতে কীসব আশ্রমবালকদের কালো কালো স্কেচ কিংবা কেমন অদ্ভুত টাইপ সরস্বতীর কালো কালো ছবি... বয়েজ স্টোরে কাজলদার কাছ থেকে শুনে শুনে নামগুলো মুখস্ত হয়ে গেছে তদ্দিনে। এই লোকটা কেমন অদ্ভুত, বেশি পেন কিনলেই বকে। বা রে, আমি কিনলে তো তোমাদেরই ভালো...!

    হান্ড্রেড পেজ রেজিস্টারটাকে আমি সহ্য করতে পারি না একদম। ছোট কিংবা লিখতে অসুবিধে বলে নয়, ওই খাতাগুলো ক্লাসকোর্টের খাতা হিসেবে বানানো হয় বলে।

    ক্লাস কোর্ট কী? ক্লাসে যে জমিদার থুড়ি মনিটর যার নামটা কিন্তু সেবক, সে গোলমেলে ছেলেদের নাম লিখে রাখে একটা খাতায়। গোলমাল করলে নাম ওঠে, আরো গোলমাল করলে তাতে স্টার বসে। সারা সপ্তাহ জুড়ে সব ক্লাস আর স্টাডি মিলিয়ে যারা সবচেয়ে গোলমাল করে, তাদের নাম যায় অসীম মহারাজের কাছে। স্টেটমেন্ট (মুচলেকা) লিখতে হয়, নীলডাউন করে থাকতে হয় আধঘন্টা, তার ওপর ছড়ির বাড়ি।

    ক্লাস ফোরে তখন অভি আর অর্ক সেবক, প্রশান্তদা আর অজয়দার ছেলে, স্যরেরা আগে থেকেই চেনেন বলে ওদেরই সেবক করেছেন। তাতে গুরুত্বহীন-আমরা বড়ই কনস্পিরেসি খুঁজে পাচ্ছি, পার্শিয়ালিটি আর চাটুকারিতার মত নতুন নতুন শব্দ শিখে ফেলছি। আর নীলু-গদা যথারীতি গোলমাল করে যাচ্ছে, যেমন যায়। কদিন বাদে অর্ক ছেড়ে দিতে বোধহয় উদি সেবক হয়েছিল। একদিন ক্লাসে স্যর আসেননি, অফ পিরিয়ড। নীলু গদার মাথায় চাঁটি মারছে, আর গদা যথারীতি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কমপ্লেন করছে। অভি চটে গিয়ে বোর্ডে গিয়ে নীলুর নাম লিখল। নীলু নাম উঠতে দেখে আরেকবার গদাকে চাঁটি মারল। অভি স্টার বসাল। এভাবে চাঁটি আর স্টার বাড়তে বাড়তে যখন সাতখানা স্টার পড়ে গেল, আমরা উত্তেজনায় সবাই নীলু আর অভির দিকে তাকিয়ে আছি, নীলু আরেকবার চাঁটি মারতেই অভি 'ধ্যাত্তেরি' বলে চক-ফক ছুঁড়ে ফেলে দুম দুম করে পা ঠুকতে ঠুকতে সীটে গিয়ে মাথা নীচু করে বসে রইল। নীলু তখন আমাদের প্রোলেতারিয়েত হিরো। সন্ধ্যেবেলা অনিন্দ্য করদা, সিনিয়র ক্লাসের সেবক সব শুনে 'ক্লাস কোর্ট খাতা' চালু করল। আর নতুন সেবক হল রাজকুমার। একটা হান্ড্রেড পেজ রেজিস্টার নিয়ে ও ক্লাস কোর্ট খাতা বানাত। গোলমাল করলেই চুপি চুপি তাতে নাম টুকে আবার খাতা বন্ধ করে রেখে দিত। মাঝে মাঝে স্যরের গোলমালের জন্য নাম চাইলে ও সেখান থেকে নাম বলত। দুদিনেই নিরীহ রাজকুমার আমাদের দুর্দান্ত দুশমন হয়ে উঠল।

    আমি আর শঙ্খ বসতাম পাশাপাশি। আমরা ছিলাম রবিনহুড। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের স্টাডির পর 'ক্লাস কোর্ট খাতা' জমা পড়ার কথা, সেদিন ঠিক ফোর্থ পিরিয়ডের পর আমরা সবাই খেলতে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম। তারপর সেবকের ক্লাস কোর্ট খাতা ঝেঁপে জামার মধ্যে ঢুকিয়ে আমরা সোজা সারদা-মন্দিরের পেছনে। সেখানে একটা সেপটিক ট্যাঙ্ক না কী চৌবাচ্চার ঢাকনা বারোমাস হালকা ফাঁক করাই থাকত। সেখানে ক্লাস কোর্ট বিসর্জন।
    পরেরদিন অসীম মহারাজ এসে,
    - সেবক, সেবক কে?
    রাজকুমার উঠে দাঁড়াল।
    - ক্লাস কোর্ট খাতা জমা দাওনি কেন?
    - মহারাজ, হারিয়ে গেছে...
    - মানে?
    - কালকে বিকেল থেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না...

    সেবক বদল, নতুন সেবক আর নতুন হান্ড্রেড পেজ রেজিস্টার। আবার একই কাজ। আবার সেবক বদল, নতুন সেবক আর নতুন হান্ড্রেড পেজ রেজিস্টার। টানা চারবার এরকম হওয়ার পর পালা ঘুরে আমিও সেবক হলাম একবার। ক্লাস সামলাতে পারতাম না, কেউ মানত না, আর নীলু-গদা?? ওরেব্বাবা!!! আবার বৃহস্পতিবার আসতেই আমার আর শঙ্খর বিপ্লবী সত্তা চাগাড় দিয়ে উঠল। নাম জমা দেওয়ার মত অমানবিক কাজ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

    হ্যাঁ, যা ভাবছেন তাই। নিজের নতুন খাতা, চার পাঁচটা পাতায় যার কিছু নাম টোকা আছে, যার মধ্যে অর্ধেক নাম আবার নীলু-গদার, সবশুদ্ধু সেই চৌবাচ্চায়। খাতা গেল, সেবকগিরিও গেল, ঘাড় থেকে একগাদা ঝক্কি গেল, কেবল বিপ্লবী সত্তা বেঁচে রইল।

    অসীম মহারাজ এসে ক্লাস কোর্ট সিস্টেমটাই তুলে দিলেন কয়েকদিন পর। পরে ক্লাস ফাইভে ভার্গব মহারাজ এসে নীলুকেই সেবক করে দিয়েছিলেন। তার কড়াকড়ির চোটে আমাদের ত্রাহি ত্রাহি রব। সে আরেক গল্প।

    * * *

    বিদ্যাপীঠের লাল ইস্কুলবাড়ি কিন্তু পুরোটা লাল নয়, আসলে গোলাপী, লাল রঙটা তার হাইলাইট। যেমন সবসময় হয়, ভিত্তিটা ভুলে গিয়ে আমরা চুড়োটাকেই দেখতে পাই, সেরকম গোলাপী রঙটা ভুলে গিয়ে আমাদের মনে জেগে থাকে তার হাইলাইটটা... বিদ্যাপীঠের সেই মিথিক্যাল সবুজ মাঠও কিন্তু বর্ষা-শরতের তিনমাস ছাড়া কখনই সবুজ নয়, তাও আবার মাঝে মাঝে লুকনো কাদার ছাই ছাই রঙ। গরমকালে সে মাঠে ফ্যাকাশে মরা সবুজ, মাঝে হলদে সবুজ ওরাংওটাং এর মত চাপড়া চাপড়া রং, শীতকালে কালচে সবুজ, শীত-শীত সবুজ আভা, বিকেলে সে মাঠে পা রাখলে মনে হয় সন্ধ্যে নেমে এসেছে মাঠে, গায়ে যদিও বিকেলের আলোর আভা... সে পড়ুকগে। কোথাও আবার চোরকাঁটার লালচে আভা...

    চোরকাঁটা বলতে মনে পড়ল, খুব ছোটবেলায় মামাবাড়িতে দাদু যে নীচু ডিভানে শুতো, তার ওপর দাঁড়িয়ে আড়াই-তিন বছরের আমি খুব জোরে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে 'বীরপুরুষ' কবিতাটা আবৃত্তি করছি। সেই-
    'চোরকাঁটাতে মাঠ গিয়েছে ঢেকে
    মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে
    গোরু-বাছুর নেইকো কোনোখানে
    সন্ধ্যে হতেই গেছে গাঁয়ের পানে
    আমরা কোথায় যাচ্ছি কে তা জানে?
    অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো'
    - এই জায়গাটা বলার সময় আমি মনে মনে কল্পনা করে নিতাম একটা মাঠ, তার পর একটা নীচু ঢালু শুকনো খাত, আমার কল্পনায় সেই শুকনো খাতেও সবুজ ঘাস, মাঝখানে পায়েচলা একটা পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে অনেক দূর... তখন আমার গলা নেমে আসত খাদে, সামনে মা আর দিম্মা খুব আগ্রহ নিয়ে শোনার জন্য ঝুঁকে পড়ত আমার দিকে... স-অ-ব মনে আছে আমার। কেবল জানতাম না চোরকাঁটা কী জিনিস, আমার কল্পনার চোরকাঁটা শজারুর কাঁটার মত কোনো শক্ত ঘাস... হাওড়ার গ্রামে চোরকাঁটা দেখিনি, দেখেছি সবুজ-সাদা ফুল ফুল পার্থেনিয়াম আর খালের জলে কচুরিপানা...

    বিদ্যাপীঠে এসেছি এক বছরও হয়নি। এখানে এসেই বুঝে গেলাম চোরকাঁটা একটি নিরীহ শয়তান। নতুন মোজাগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ক্লাস ফোরে এক শীতকালের বিকেলে প্লে ওভারের ঘন্টা পড়েছে, সবাই মাঠ ছেড়ে শিবানন্দ সদনের দিকে হাঁটা দিয়েছে। মাঠের ওই পারে তারজালি, বিদ্যাপীঠের বর্ডার। ফুটবল ওইপারে চলে গেলে তার তলার দিয়ে গ'লে গিয়ে বল আনার মজাই আলাদা, তিরিশ সেকেন্ডের মুক্তি, এখন যেখানে সুইমিং-পুল... যদিও সেদিন আমি এসব কিছু ভাবছি না। আমি মাঠের এক প্রান্তে ভুরু কুঁচকে ব'সে আছি, কারণ আচমকা হুমড়ি খেয়ে পড়েছি সামনে। মাঠে খুব নুড়ি-কাঁকর ছিল, চার-পাঁচটা নুড়ি আমার হাতের নুনছালে কয়েকটা পকেট বানিয়ে ঢুকে পড়েছে... শীতকালে তার ব্যাথা বেড়েছে আরো, আমি খেলার শেষ দশ মিনিট ধরে সেই কাঁকরগুলো একটা একটা করে বার করেছি, এখন জিরোচ্ছি। আমার পেছনে বিদ্যাপীঠ গ্রাউন্ড, দাদারা খেলছে তখনও আর আমার চারপাশে চোরকাঁটা। আমি উঠে দাঁড়াতেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য আনমনা হয়ে গেলাম। একটা মাঠ, তার পর একটা নীচু ঢালু শুকনো খাত, সেই শুকনো খাতে সবুজ ঘাস নেই, আছে একটা প্রায়-সবুজ ধানজমি, মাঠ আর খাতের মাঝে একটা তারজালির বর্ডার, আর তার সামনে দিয়ে জলপটকার ঝোপের পাশ দিয়ে করমচা গাছগুলোর সামনে দিয়ে একটা পায়েচলা-সাইকেলচলা রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে চ্যারিটেবলের দিকে। দূরের গাছগুলোর নীচে ঘনিয়ে আসা একটা ঝুব্বুস অন্ধকার, 'অন্ধকারে দেখা যায় না ভালো'...

    কল্পনার মাঠটা বিদ্যাপীঠে খুঁজে পেয়ে ভর্তি হওয়ার নয়-দশমাস পরে এই প্রথম মা'র জন্য আমার মনকেমন করতে লাগল।

    লাল ইস্কুল ১
    দেবজ্যোতি মিত্র, বিদ্যাপীঠ ১৯৯৪-২০০৩

    আমাদের দুটো ইস্কুল বাড়ি। একটা লাল রঙের, সেখানে ক্লাস ফোর থেকে সেভেনের পড়াশোনার ব্যবস্থা। গোলাপি রঙের প্রধান ইস্কুল বাড়িতে এইট থেকে টুয়েলভ। সেই লাল রঙের ছোটদের ইস্কুল বাড়ির দেওয়ালে পিঠ ঘষে গেলে লাল রঙ উঠে আসে জামায়, প্যান্টে, হাতে – আরও মজবুত আত্মীয়তা জমে ওঠে। বড় ইস্কুল বাড়ি ঘিরে আবার অনেকটা বেশি শ্রদ্ধামেশানো ভালোবাসা, একটু ভয় , একটু একলা ডুবে যাওয়া, শেষদিনে অনেকটা মনখারাপ। আজ যখন মন দিয়ে বা অমনোযোগে বিদ্যাপীঠের কথা মনে করি , আমি আমার ইস্কুলকে লাল রঙে দেখতে পাই , লাল রঙ, লাল ভালোবাসা, লাল ইস্কুল, মোট কথা লাল। মোহন বাঁশির রেখা ধরে খুব ইচ্ছে করে কটা কথা লিখে ফেলি। কিছুটা আমি লিখি, কিছুটা আরও কেউ লিখুক , তারপর আরও অন্য কেউ, আমাদের বদমায়েশ বিদঘুটে বিত্তাল ব্রহ্মচর্য নিয়ে একটু লেখা হোক।

    আমার ইস্কুলের সবার খুব ঘুম পেত। ছাত্র থেকে শিক্ষক থেকে মহারাজ থেকে গাছ সবাই নিজের মেজাজে নিজের সুযোগে লুকিয়ে চুরিয়ে ঘুমত। সকালে কর্মকাণ্ড শুরু ৬টা থেকে – সময়মত বিস্বাদ ও সারাবছর সমস্বাদের খাবার খেয়ে যখন তখন ভেতর থেকে জাগতিক মায়া ছাড়িয়ে সমাধির উত্তরণ ছিল অনিবার্য। এই ঘুমিয়ে পড়া এবং অসময়ের ঘুমিয়ে ধরা পড়লে বাস্তব জগতে ফিরিয়ে আনার বিভিন্ন উপায় নিয়ে একটা গবেষণা হতেই পারে।

    ভজনের সময় ঘুম

    আমাদের রুটিনে সকাল ও সন্ধ্যে দুবার আমাদের একটি ঠাণ্ডা শান্ত ঘরে বসে আরাধনা করার কথা ছিল। কিন্তু কথা কেউ কোনোদিন রাখে না, তাই এই দুটো সময়ে ঘুমন্ত নির্মল কিশোররা বড় নিষ্পাপ হয়ে ঢুলতো , দুলতো। সিনেমাহলে যেমন পেছনে টিকিটের দাম বেশি, খেলার মাঠে সামনের জায়গা তেমন ভজনহলে ছিল থাম।থামে হেলান যে অধিকার করল , তার ঘুম হল গভীর এবং সহজ। একটা সাপোর্ট জীবনে কে না চায় বলুন। এরা কাউন্ট। সবার ওপরে , এদের সচ্ছলতা সবাই হিংসে করে। ডিউক তারা যারা নিজেদের ঘুম নিজেদের হাতে থাম ছাড়া ম্যানেজ করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ নিজের চূড়ান্ত জ্ঞানশুন্য মুহূর্তেও এদের মাথার ঘূর্ণি কখনই পেছন থেকে কোনও মহারাজ বা শিক্ষক স্পট করতে পারবে না। স্থির একাগ্রতায় এরা নির্জীব হয়ে ঘুমোবে, কেউ কিছু বুঝবে না। এরা একলা ও কমপ্লিট। ব্যারনেরা সামনের বন্ধুর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে না ঘুমিয়ে থাকতে পারে না এবং এই ক্ষেত্রে সামনের বন্ধুর সামান্য নড়াচড়া কিংবা তার নিজের ঘুমিয়ে পড়া প্রত্যেকটি অভিব্যক্তির ওপর ব্যারনের ঘুমের গভীরতা ও শান্তি সমানুপাতিক। আপনি হয়তো এক মনে ভজনে ঢুকেছেন ভক্তিভাবে ডুবুডুবু হয়ে কিন্তু আপনার পিছনে বসা ঘেমো ব্যারন আপনার ধৈর্য ও পিঠ দুয়ের শক্তি পরীক্ষা করতেই পারে। মনে আছে, এরা প্রায়ই মহারাজ বা সেবক( আমাদের লাল ইস্কুলে মনিটরদের সেবক বলা হত) হাতে ধরা পড়ে হেনস্থা হত এবং সেসব দিনে নিজের ভাগ্যকে দুষতে দুষতে স্টাডি হলে গিয়ে বাকি ঘুম সম্পূর্ণ করতো। কোনও সুত্র, উপাপাদ্য ব্যতিক্রম ছাড়া জমে না। সেরকমই প্রার্থনায় ঘুমন্ত পাবলিকদের মধ্যেও কিছু উটকো স্টাইল দেখা যেত সবসময়। যেমন আমাদের এক বন্ধু ভজন শুরু হলেই একেবারে মাপ করে ৯০ ডিগ্রীতে ডান বা বাম দিকে ঢুলত। সারা জীবনে বাসে, মন্দিরে, প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষকে হাস্যকর ভাবে ঘুমতে দেখেছি কিন্তু আমার ওই বন্ধুর মত সোজা ডানদিকে ঢুলে পড়ে যেতে কাউকে দেখিনি। আমার বিশ্বাস ওর যোগাসনে একটা বড় কিছু করার মেধা ছিল, বেচারা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলো।

    স্টাডিহলে ঘুম

    প্রার্থনায় ঘুম অনেকটা টি ২০ ম্যাচের মত, অর্থাৎ ভক্তিমুলক বোরিং গান শুনে আপনার ঘুম পাবে এবং আপনি ঘুমবেন – এতে আর এমন কি কৃতিত্ব। প্রার্থনায় ছেলেদের যেতে হয় হয় রাতের অসমাপ্ত ঘুম থেকে উঠে ভোরবেলায় নয়তো খেলাধুলার পরে। মানে শরীরের ক্লান্তি সহযোগী, এমনকি চিয়ারলিডার প্রোটোকল অনুযায়ী আপনাকে একটা ধীরগতির আরতিও সহায়ক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে- পাটা পিচ। স্কিল থাকে তো ঘুমিয়ে দেখান দু ঘণ্টার স্টাডিতে। ভজনহলের মত জনসমাবেশে হারিয়ে যাওয়ার সুবিধা নেই, প্রতি ৩০ জন পিছু একজন শিক্ষক তদারকিতে নিযুক্ত , কুচুটে সেবক বা বেআক্কেলে সহপাঠীর আনুকুল্যে যেকোনো সময় আপনার ব্যক্তিগত মুণ্ডুর মুণ্ডপাত আসন্ন। যথার্থ টেস্ট ম্যাচ। মনে রাখবেন ,প্রার্থনায় ঘুম নিন্দনীয়, ধরা পড়লে আপনার কপালে ধিক্কার ,বিবেকে টুসকি এসব জুটবে কিন্তু স্টাডিতে ঘুমের শাস্তি নির্মম, কঠোর এবং জ্বালাময়ী । মনে মনে একবার বৈষ্ণব ও আঘোরিদের ছবিটা ভেবে নিন, বুঝে যাবেন। স্টাডিতে ঘুমের ট্যাক্টিকে খুব বেশি বৈচিত্র্য ছিল না, আলো সরলরেখায় বিচরণ করে অর্থাৎ নিজেকে শিক্ষকের ভিউপয়েন্ট থেকে আড়াল করে ফেলো। হয় সামনের সহপাঠীর পিঠের পিছনে আড়াল হও অথবা বইপত্র স্তূপাকার করে হারিয়ে যাও নালান্দার ভগ্নাবশেষের আড়ালে। কিছু চ্যাঙ্কা বিপ্লবী এখানেও জেগে থাকার চেষ্টা করে ঢুলতও, সবার আগে চোখে পড়ে তারা মারধোর খাওয়ার শহীদবুকে প্রথম নাম লেখাত। আসল দ্রাবিড়, লক্ষ্মণরা সবসময়ই বেঞ্চ বা দেওয়ালের সাপোর্টে স্থির ভাবে ঘুমের জন্যই বিখ্যাত। যাই বল বস, ক্লাস ইস পার্মানেন্ট!

    তবে টেস্ট ম্যাচ শুধু ব্যাটসম্যানদের প্রতাপমঞ্চ নয়। এক এক শিক্ষকের এক এক রকম স্যাডিস্ট মেথড ছিল ঘুমন্ত অপরাধী ধরার পর। মধুদা ভালবাসতেন দেয়ালের দিকে বসা ঘুমন্ত ছেলে ধরতে, সজোরে মাথা ঠেলে দিতেন দেওয়ালের দিকে , সোজা ঢং শব্দে ক্লাস জানতে পারত হেলমেট ভেঙ্গে বাউন্সার লেগেছে আসামির, আর আসামি আগের মুহূর্তের তূরীয় মার্গ থেকে সোজা ফ্রি ফলে বাস্তব। একবার মধুদা মিডলে বসা একটি ছেলের চারিদিকে দেওয়াল না খুঁজে পেয়ে মাথার ওপরে বলপ্রয়োগ করে তার থুতনি ঠুকে দেন টেবিলে – আজ আমাদের সেই বন্ধু ফিল্মমেকার হয়ে দুগ্ধনখর নামে একটি ছবি বানিয়েছে ,কদিন বাদে রিলিজ করবে, এমনি মাঝেমধ্যে আউট অফ কন্টেক্সট কথা বলতে ইচ্ছে করে, বললাম। টিঙ্কুদা ঘুমন্ত কাউকে পাকড়াও করলে কাঠের স্কেল নিয়ে তার দু পায়ের মধ্যে ফটাফট বাজনা বাজাতেন , রিফ্লেক্সে সে যত দুপায়ের ফাঁক বড় করে ফেলত, স্কেলের চলনপথ আরও বড় হয়ে গিয়ে আরও জোরে ব্যথা লাগত, টিঙ্কুদা মজা পেতেন , সরল হাসি হাসতেন। এছাড়াও ডাস্টার নিক্ষেপ ,ছাতার বাঁট গলায় জড়িয়ে টান, কান ধরে ঘুমিয়ে থাকা ছেলেকে সোজা টেনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া এসব দুসরা তিসরা তো ছিলই। খুব কম সময়ের জন্য নীলমণিদা নামে একজন অন্যরকম মানুষ এসেছিলেন , এই অধম ঘুমিয়ে ধরা পড়েছিল নীলমণিদার হাতে । কোনও হিস্টরিকাল ডেটা নেই, কেউ জানেনা এবার কি হবে। একটু শারীরিক আঘাতে বিশ্বাস করতেন না নীলমণিদা , মাইন্ড ইস দ্য সিন অফ ক্রাইম, উনি মন র শিলনোড়া নিয়ে বসেছিলেন। দু ঘণ্টা আমাকে বকিয়ে বকিয়ে বোর করে আমার চিন্তাশক্তি ,মনন, আত্মা থেঁতো করে দেন। শুধু কথা বলিয়ে এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করা সম্ভব কেউ জানত না, শুধু উনি স্টাডিতে এলে আচ্ছা আচ্ছা ঘুমিয়েও চোখ বড় বড় করে জেগে থাকতো, এটা মনে আছে।
    শুধু কি ছাত্ররা ঘুমত নাকি লাল ইস্কুলে। সুকান্ত ভট্টাচার্যর মত পোসে গালে হাত দিয়ে গোবিন্দদা স্টাডি নিতে এসে ঘুমিয়ে পড়লে সারা ক্লাসের জ্যামিতি বক্স এক করে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। যে ফেলত বা গোবিন্দদা কেউ আজ বেঁচে নেই, তাই ও নিয়ে বেশি লিখছি না ,মনখারাপ হয়ে যায়। তবে কোনও শিক্ষক বা মহারাজকে বেমক্কা ঘুমতে দেখলে প্রতিশোধ হত সুচিন্তিত, নিষ্ঠুর ও পরিণত। সারা দিনের কর্মকাণ্ড শেষ করে তিনটে ঘণ্টা বাজিয়ে আমাদের ইস্কুল গুটিসুটি মেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ত। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে শুনতে পেতাম ট্রেন চলে যাচ্ছে, সেই ট্রেনে করে বাড়ি যাওয়া যায়। রাত্তির এক আকাশ তারা বিছিয়ে আমাদের ঘিরে রাখত । একশো রকম উদ্দীপনায় ফুটতে ফুটতে খুব শান্তির ঘুম , সহপাঠী বা শিক্ষকদের নিয়ে মজার মজার স্বপ্ন দেখা – এই তো চলত। আমাদের ভর্তি হওয়ার কিছু আগে মদন মহারাজ রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন, সিনিয়ররা যত্ন নিয়ে নিজেদের রসদ মিশিয়ে সেই আতঙ্ক পরিবেশন করতো লাল ইস্কুলে পড়তে আসা নিষ্পাপ ভিতু বাচ্চাগুলোকে। অনির্বাণ রায় বলে আমার এক বন্ধু খুব তাড়াতাড়ি একটা ভ্যাম্পায়ারের স্বপ্ন দেখেছিল, উড়ন্ত ভ্যাম্পায়ারের বুকে কাগজ সাঁটা – মদন! এটা জানাজানি হওয়ার পরই মদন মহারাজ গল্পের হরর কোশেন্ট উলটে গিয়ে ওটা হাসির গল্পের খাতায় চলে যায়। এরকম কত গল্প আছে, দেবপ্রিয় একটা বল না!

    লাল ইস্কুল - ২
    দেবপ্রিয় সমাদ্দার, বিদ্যাপীঠ ১৯৯৪-২০০১

    দেবজ্যোতি ঘুম নিয়ে দারুণ নস্টালজিক করে দিয়েছে। ওর লেখার হাত বরাবরের ভালো। কিন্তু আমায় গল্প বলতে দিয়েই যত গোল বাধালো। আসলে লাল ইস্কুলে পড়ার সময় অমনযোগীদের লিস্টিতে নাম তুলতে এত মনযোগ দিয়েছিলাম, যে খুটিনাটি অনেক কিছুই খেয়াল হত না। তাই স্মৃতির তোরঙ্গ ঘেঁটে কিছু বের করতে বেগ পেতে হবে, এ আর নতুন কি! তোরঙ্গ জিনিসটা ভারী অদ্ভুত। তার প্রমাণ সাইজের লৌহজঠরে লুকিয়ে থাকে অনেক প্রয়োজনীয় রহস্য। আমাদের প্রত্যেকেরই এরকম একটা করে তোরঙ্গ থাকত। যার ভালোনাম ছিল, ট্রাঙ্ক। এই ট্রাঙ্ক ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন রূপ ধারণ করে আমাদের অভিভাবকত্ব করত। আমারটা ছিল, স্টক বাক্স (খাবার রাখার বাক্স)। তবে শুধুমাত্র ছাত্র নয়, এই ট্রাঙ্কের মাহাত্ম্য কত, সেটা জেনেছিলাম আমাদের হনুমান ছাপ জিমনেশিয়ামের ভিতরের ঘরে, যেখানে দাউদ বা ছোটা রাজনের মত, অশোকদা আর অজানীদার হুকুম চলে, বোধহয় আজও। ব্যক্তিগত ভাবে মিনি ক্রিকেটে প্রাত্যহিক পরিচয় এবং শীতের ড্রিলে ক্রমাগত অনুপস্থিতির কারণে অশোকদা কোনদিনই নেক নজরের টুকরো আমাদের দিকে গড়িয়ে দেন নি। কিন্তু অঘটন তো, ঘটেই যায়। এক দিন কেন কিভাবে জানি না, সেই চিচিং ফাঁকের অন্দরমহলে একেবার পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর দেখেছিলাম সেখানে জমানো ট্রাঙ্ক ভর্তি রাশি রাশি ব্যান করা বল, ব্যাট, উইকেট। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। সেই গুপ্তধনের মৃত্যুঞ্জয় যেবার সোনাটোনা দেখে সাইকোসিসে হাবুডুবু, অথবা ফেয়ারি টেলের হ্যান্সেল আর গ্রেটেল যেমন কেক চকোলেটের তৈরি বাড়ি দেখে ভেবলে গিয়ে সপাটে মুরগি, আমিও তখন তেমনই ছানাবড়া! কিন্তু হায়, সো ক্লোস, ইয়েট সো ফার। সে তোরঙ্গে আমার নিজস্ব দু দুটি ব্যান হওয়া জলজ্যান্ত ক্যাম্বিস বলের গায় শুধু হাল্‌কা আদর করে এসেছিলাম।

    আমার লাল ইস্কুলে গিয়ে দুটি অনাঘ্রাত কন্সেপ্টের সাথে পরিচয় হয়েছিল। একটি ধ্যান, অন্যটি ব্যান। ধ্যান নিয়ে দেবজ্যোতির মুখবন্ধ পিএইচডিপ্রায়। আমি বরং ব্যান নিয়ে বসি। ব্যান শব্দটা অবশ্য তখন একটু অন্য চেহারায় চিনেছিলাম, এবং সেটা ছিল ‘ব্যান্ড’। না, যদি ভেবে বসেন এর সাথে চুল ঝাঁকানো কর্কশ সঙ্গীতরসের কোনো সম্পর্ক আছে, তবে দু মিনিট সময় নিন। এই ব্যান্ড হল ব্যানের পাস্ট টেন্স। মানে ধরুন এই মিনিট খানেক আগে গেছোদাদা যদি আপনার প্রপারটি থাকে, বর্তমানে তা আপনার হাত ঘুরে কোনো এক দুর্গম লেভেলে ফুড়ুৎ। সে আপনি যতই চেষ্টা চরিত্র করুন না কেনো, সেই গেছোদাদার নাগাল যে আপনি পাবেন, সে টি হবার জো নেই। সাধারণত এই ব্যান্ড পার্টির শিকার হত বেনিয়ম যে কোনো স্থাবর অস্থাবর। শিকারীর ভূমিকায় থাকতেন ওয়ার্ডেন, সন্ন্যাসী মহারাজ কিংবা ফড়ে সিনিয়র সেবকবৃন্দ। বিদ্যাপীঠে ব্যান প্রকল্পে পা দেয়নি এরকম প্রাণীর সংখ্যা মুষ্টিমেয়। কারণ ব্যান আপনার যে কোনো জিনিসে যে কোনো সময়ে আসতে পারে। একটা উদাহরণ দিই। আমার জীবনে ব্যানের সাথে প্রথম মোলাকাত ক্লাস ফোরে, গ্রীষ্মের এক সন্ধ্যে বেলায়। তখন আমার ইস্কুলিক বয়স এক হপ্তাও হয়নি। শিবানন্দ সদনের ইন হাউস ভজন হলে সন্ধ্যারতির সময় কি চিবাবো এই নিয়ে এক বন্ধুর সাথে জল্পনা হচ্ছে। আমার পকেটে চিকলেট, বন্ধুবর সেন্টার ফ্রেসের মালিক। অর্থাৎ ভাগ্যবান। কাঁচা বয়েস তো, দুটো চিকলেটের এর বদলে একপিস জলভরা বিনিময়ের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এমন সময় ধরা পড়লাম টিঙ্কুদার হাতে। আমাদের ওয়ার্ডেন। কান ধরে নিয়ে গেলেন নিজের গুহায়, পকেটের গুলো তো বটেই, সাথে বাড়ি থেকে পাঠানো সবকটা চিউইং গাম বাজেয়াপ্ত হল। হ্যাঁ, ব্যানে আমার হাতে খড়ি চিউইং গাম দিয়ে। এরপর দিন তিনেক টিঙ্কুদার আশে পাশে ঘুরঘুর করেছি হৃত সম্পত্তির আশায়। মেওয়া ফলেনি।

    ব্যানের ছিল নিজস্ব হাইরারকি, নিজস্ব বর্ণাশ্রম। মনে আছে, তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভ। বাজারের এক নতুন মাদকে সব্বাই ফ্ল্যাট। এ মাদকে ভীষ নাই, লেকিন সার্বজনীন আপীল আছে। ভিডিও গেম। মোটামুটি দু প্রকার, এয়ার ফাইটার এবং ব্রিক গেম। দাবানলের মত ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস এই জীবনদর্শনের স্বাদ চাখতে লাগল আপামোর। তখন সে এক মায়াবী দুনিয়া। আসলে এই ভিডিও গেমে ছিল একাধারে নিঃশব্দে দুপুরের ধাম রেস্টে বিনোদনের আশ্বাস এবং জনৈক নিরীহ স্যারের তদারকিতে স্টাডি হলে মুচমুচে টাইম পাশের গ্যার‍্যান্টি। আমি দেবজ্যোতির এয়ার ফাইটারে কোনোদিন ওকে টপকাতে পারিনি, নিজে ব্রিক গেমে হাত পাকিয়েছিলাম তো। এরপর লাল ইস্কুলের প্রবল কম্পিটিটীভ মার্কেটে যা হবার তাই হয়। অর্থাৎ কেক চকোলেটের বাজী রেখে হাই স্কোরের চ্যালেঞ্জ, বচসা, ইত্যাদি। ব্যাপারটা যখন সিস্টেমের শিরায় শিরায় থকথকে, নড়ে ওঠে অথারিটির টনক। ছাত্রদের জীবন আলুনী রাখা অত্যন্ত জরুরী! তাই জরুরী অবস্থায় সত্তরের কাকভোরে ময়দানে গুপাগুপ লাশ পতনের মত, টপাটপ ব্যান হল ভিডিও গেম। ব্যাস, মাস খানেকের মধ্যে, অল টিকটিকিজ খতম! হারাধনের যে কটি ব্যান হল না, সেই কতিপয় ভাগ্যবান ভিডিও গেম বাবা মায়ের ব্যাগে চেপে রাতের ট্রেনে বাড়ি ফিরল। আমাদের শৈশবের সেই সব সন্ধ্যেগুলোর নরম গালে হাত বুলোলে এখনও ভিজে ভিজে লাগে। তার পর ও রোগের আর সেরকম মহামারী চোখে পড়েনি। কিন্তু বিপ্লবের ওপর হোমিওপাথি চলে না। সে ফুসকুড়ি বহুরূপে সম্মুখে আবার ধরা দেবেই। এই ধরণের ব্যান ছিল নিপাট বস্তুবাদী, নেহাতই শূদ্র লেভেলের।

    বৈশ্যব্যানে আবশ্যিক ছিল অর্থনৈতিক রক্তক্ষরণ। ক্লাস এইট তখন, শিয়রে বলিউড। আমার মত বেশ কিছু উঠতি দুর্ধর্ষ দুশমনের বাড়ি থেকে এল সংগীত সংগ্রহ। আজ্ঞে না, আমি ওয়াকম্যান আর ক্যাসেটের কথা বলছি। দিনের আলোয় এই লারেলাপ্পা হিন্দি গান নিষিদ্ধ, তাই রাতের অন্ধকারে তার চাক ভাঙা হত। আসলে নিত্য সকাল প্রার্থনায় ভক্তির কড়াপাক, অথবা ফি সন্ধ্যে অতিদীর্ঘ ভজনের পথ্য-গ্রেভী হজম করে আমরা যারা হাঁসফাঁস করতাম, তাদের ঢেঁকুর তোলাতে অনু মালিক, যতিন-ললিত ছিল যথেষ্ট। এই কার্টেলের দমনে গৌতমদা ছিলেন মন্ত্রসিদ্ধ। স্করসিসের ডিপারটেড নেহাৎ হিট করে গিয়েছে, নইলে...। আমাদের পরবর্তী কালে অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, উনি হিন্দি গানের গন্ধ পেতেন। হেডফোনের আল্ট্রাসোনিক ফ্রিকয়েন্সি শুনে ফেলতেন। যন্তরটির ক্রয়মূল্য নিছক ফেলনা নয়, তাই ধরা পড়লে শাইলকের প্যাঁচে অ্যান্টোনিওর মত বৈরাগী দার্শনিক হওয়া ছাড়া গতি ছিল না। বৈশ্যব্যান গোত্রে ফেলা যেতে পারে এরকম অনেক কিছুই। সে ভালো ডিউস ব্যাট হোক, কি স্টাডিতে লুকিয়ে পড়তে যাওয়া নতুন পূজাবার্ষিকী। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে একমাত্র আশার আলো জ্বালাতেন আমাদের প্রণবদা। কারণ রোববার সকালের স্টাডিতে টিনটিন, ফ্যান্টম, চাচা চৌধুরী বাজেয়াপ্ত করে উনি নিজেই তার সুব্যাবহার করতেন ঠিকই, কিন্তু স্টাডির শেষে ফিরিয়েও দিতেন। তাই ঘন্টা কয়েক আগে খাওয়া ডাস্টারের গাঁট্টার দুঃখে প্রলেপ পড়ত। ট্রু জেন্টেলম্যান, মাই রেস্পেক্ট!

    উকিল সবাই হতে পারে না, বিশেষ করে যাদের ছোটবেলায় কান খোঁচানোর ইয়ার বাড ব্যান হওয়ার ইতিহাস আছে। কিন্তু আমাদের অর্ণব দাস এই সব থিওরিকে নস্যাৎ করেছে। আমাদের ইস্কুলের রং লাল ছিল, আমাদের ডাইনিং হলের রংটা ভুলে গেছি। কারণ ওখানকার সবকিছুই বড় সাদাকালো। দূরদর্শন ‘ক’-এর মত। দিনে চারবেলা যেতাম সেখানে, আর ফেরার সময় টের পেতাম, খিদে পাচ্ছে। যেকোনো বিপ্লবের একটা পটভূমি থাকে, যেখান থেকে দু রকম গতিতে হ্যাপি এন্ডিংএর লোলুপ ললিপপ দেখা যায়। এক হল পরিত্রাতা মোড, যেমন প্রভাস মহারাজ। আমাদের বাইরে থেকে মোগলাই-রোল খাওয়ার চরম লাইফলাইন। বাবার কাছে পয়সা চাইবার সময়টা ছিল সন্ধ্যেবেলার ভজনের ঠিক আগে। হাল্কা মেলোড্রামা এবং প্রপার টাইমিং এর মিশ্রণে যে কটি টাকা আদায় হত, সবই আমাদের লেগে যেত মোগলাই কায়দায় প্রাণরক্ষা করতে। সেই খাবার যখন সদনে ঢুকে শক্তিদার হাতে ব্যান হত, আমাদের ক্ষাত্রধর্ম হাস্পাতালের সি ডায়েটের মতই জোলো হয়ে যেত। সারভাইভালের আরেকটা মোড হল রবিন হুড, আসছি সে বিষয়ে। কিন্তু স্কুলজীবনের সবচেয়ে আজিবোগারীব ব্যান হয়েছিল ক্লাস সিক্সে।

    ত্রিগুণাতীতানন্দ ধাম। এক রাত্রে কেন মনে নেই আমাদের ডর্মে লাগলো যুদ্ধ। আজ্ঞে হ্যাঁ, ওয়ার, ঘমাসান। প্রবল সোরগোলে গৌতমদা এসে দেখলেন বেশ কটি এগারো বারো বছরের সদ্য গোঁফ ওঠা ইয়াং টার্কস একমনে যুদ্ধ করছে। মুখে স্পার্টান নির্ভীক দ্যুতি, হাতে অজেয় সমরাস্ত্র – বালিশ। হ্যাঁ, ফুলকাটা কি সাদা ওয়াড় লাগানো। গৌতমদা সেদিন ব্যানের ইতিহাসে ব্রাহ্মণত্বের প্রচলন করলেন। শান্তির সাদা পতাকা হোয়েস্টিং করতে করতে যখন কান ধরে নীল ডাউন হচ্ছি, আমাদের আর্সেনাল তখন প্রায় ফাঁকা। রাতে স্যারের ঘরে অনেক বালিশ জমেছিল, যদিও পরের দিন ফেরত পেয়ে যাই। জানি না, তার পর আর কোনোদিন পিলো ফাইট আমার লাল ইস্কুল দেখেছিল কিনা, বা তারপর বালিশের মত এত ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র ব্যান হয়েছিল কিনা। হয়ে থাকবে নিশ্চয়ই, আমার আঁতুড়ঘর বলে কথা!

    রবিন হুড

    আন্ডারওয়ার্লডের মগডালে একজন কিংপিন না থাকলে সে সাম্রাজ্য ন্যাড়া ন্যাড়া লাগে। আমাদেরটা ন্যাড়া ছিল। সাম্রাজ্য নয়, কিংপিনের নামই ন্যাড়া, ফ্রম নাইনটি ফোর। আমাদের যাবতীয় ডানপিটেমোর চটি থেকে মুগ্ধবোধ যাকে উৎসর্গ করা, আমাদের ক্রাইম প্যাট্রলের প্যাঁটরা যার কাছে পিগি ব্যাঙ্ক সম, আমাদের দৌরাত্মের ফিনিশিং লাইনে যার প্রাতঃকালের আড়মোড়া ভাঙা, সেই ন্যাড়ার গসপেলেও ব্যানের উল্লেখ পাওয়া যায়। ন্যাড়া সম্পর্কে যারা জানেন না তারা ইউটিউবে "nyarap" ভিডিওটা চেখে দেখতে পারেন।

    এই ন্যাড়ার ব্যাট আর বল থাকত দু সেট। মিনি ক্রিকেটে প্রমত্ত অবস্থায়, কখনও শক্তিদা ঘরে রেড মারলে এক সেট ব্যান হয়ে অন্য সেট বেরোতো, বাট দ্য শো মাস্ট গো অন। এর পরে দ্বিতীয় সেটও যদি কখনও ধরা পড়ে, ন্যাড়ার হাতযশে আগের সেটটা কি ভাবে যেন আবার ফিরে আসত ওরই কাছে। বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা আমরা করতাম না। তাতে শিল্পীর অবমাননা করা হয়। আমরা সম্মান দিতাম, কুর্ণিশ করতাম। শক্তিদা এরূপ অঘটনের সাথে আস্তে আস্তে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছিলেন, হাজার হোক, প্রাজ্ঞ ব্যক্তি। ন্যাড়ার কর্মকাণ্ডের তারিফ করে একবার বলেই ফেলেছিলেন, তোদের এই ন্যাড়া, কখন যে বল দিয়ে যায়, কখন যে নিয়ে যায়, কি যে করে! সেই সব অদ্ভুত মুহূর্ত যখন ক্রিকেট মানুষকে এ জগতে কে কার টাইপের ওয়ান লাইনার দিয়ে যায় আর কি।
    এখন এইসব মনে পড়ে যখন, ভালোই লাগে। ভালো লাগে যে আমার এক টুকরো ইতিহাস আজও লাল ইস্কুলের পুরনো গাছটায় আঁটকে থাকে। আমার রাতকানা ফুরসৎ ভজন হলের চাতালে আকাশের অনেক তারা দেখতে দেখেতে অন্ধকারে আরেকবার হোঁচট খায়। আমার মন কেমনের পাঁচ মিনিট এখনও রাতের ট্রেনের শব্দে কোলকাতার দিকে পাশ ফিরে শোয়। আমার নুনছাল ওঠা হাঁটু দুটো নীল ডাউন হয়ে থাকে আরো কিছুক্ষণ। ব্যান হয়ে থাক ওরা। জমে থাক ওখানেই।

    এখানে এখন তো মাংস থেকে সাহিত্যিক, কত কিছুই ব্যান হচ্ছে, সেসব নিয়ে আর লিখতে ইচ্ছে করে না।

    পুনশ্চ, দেবজ্যোতি, ক্যাপ্টেন হ্যাডক, মনুজেশ, শারদ্বত বা যে পারিস/পারো লাল ইস্কুলের গল্প শোনালে বেশ লাগবে!


    লাল ইস্কুল - ৫
    অরিজিৎ রায়, বিদ্যাপীঠ ২০০২-২০১০

    লাল ইস্কুল ৫.১

    লেখালিখি আমার কাজ নয়। কিন্তু ক্ষ্যাপামি বড়ই ছোঁয়াচে। মহান joker বলেছিলেন না, “all you need, is a little push”. সুতরাং, নেমে পড়লাম আসরে।

    আমাদের লাল ইস্কুলে রেনি ডে’র ছুটি বলে কিছু ছিলোনা। রেনি ডে এর অজুহাত দেবার কোনো সুযোগও থাকার কথা নয়। হোস্টেল থেকে ১০০ মিটার দূরে ইস্কুল, বৃষ্টি কেন, সাইক্লোন হলেও ছুটি পাবার কোনো চান্স নেই। তবে রেনি ডে’র মজা ছিল অন্য জায়গায়। শিবানন্দ সদনে কীভাবে স্কুলে যেতাম ঠিক মনে নেই, তবে স্কুল এর পর কাগজের নৌকো, বালতিতে মাখানো মশলা মুড়ি – এসব বেশ মনে আছে।

    বড় হবার পর রেনি ডে এর মজা ছিল অন্য জায়গায়। সবার প্রথমে ওয়ার্ডেন মহারাজকে বোঝানো - বৃষ্টিতে ভিজলে চামড়া’র জুতোর কী কী ক্ষতি হতে পারে ইত্যাদি ভুজুং ভাজুং দিয়ে চটি পরে স্কুল এ যাবার অনুমতি আদায় করা। শেষপর্যন্ত মহারাজ রাজি হলে সে কী যুদ্ধজয়ের আনন্দ! হাওয়াই চটি পরে, সাদা প্যান্ট এর পেছনে মেটে রঙা polka dot এর প্রিন্ট করিয়ে স্কুল এ যাবার সময় সে কী কেত। অন্যান্য ধাম এর ছেলেরা যারা তাদের অতি নিয়মনিষ্ঠ ওয়ার্ডেনদের ম্যানেজ করতে পারত না তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে স্কুল যেতাম।

    আর বৃষ্টির দিনে স্কুল মানে—ক্লাস অ্যাসেম্বলি। ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, স্কুল এর সব ছাত্র একসাথে লাইন নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করাটাকে বলা হত স্কুল অ্যাসেম্বলি। আর যখন কোনো কারনে সেটা সম্ভব হতো না, তখন ক্লাসরুম এর মধ্যেই একটা শান্তিমন্ত্র পাঠ করে কাজ সারা হত। সেটাকেই আমরা বলতাম ক্লাস অ্যাসেম্বলি। ক্লাস অ্যাসেম্বলি’র অনেক সুবিধা ছিল।

    প্রথমত, শুরুতে সবাই একসাথে দাঁড়ানো, লাইন দেওয়া, হেডমাস্টারের জন্য চুপচাপ অপেক্ষা করা, সাবধান-বিশ্রাম এইসব আজেবাজে সময় নষ্ট হতনা। সেই সময়ে বেশ কয়েকটা জম্পেশ পেন-ফাইট হয়ে যেত। সে আরেক গল্প, পরে বলা যাবে।

    দ্বিতীয়ত, একটা মাত্র শান্তিমন্ত্র পাঠ করেই ছুটি। জাতীয় সঙ্গীত – বিদ্যাপীঠ গীতি’র বালাই থাকতোনা।

    কিন্তু এই শান্তিমন্ত্র পাঠ এ একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা ছিল সব সেকশান গুলোর মধ্যে। কে কত জোরে গাইতে পারে সেটা তো ছিলই, সে সরস্বতী পুজো’র পুষ্পাঞ্জলিতেও হত, সেদিকে যাচ্ছিনা। প্রতিযোগিতার প্রধান প্যারামিটার ছিল গানের লয়। সেটা তাড়াতাড়ি শেষ করার, না যতটা সম্ভব টেনে লম্বা করার প্রতিযোগিতা, সেটার কোনো ঠিক ছিলোনা, কেউ ঠিকও করে দিত না। যে ক্লাস আজকে ৪০ সেকেন্ডে শেষ করেছে, সেই ক্লাসই হয়ত পরের বার ২ মিনিট অবধি টেনে দিত। বিভিন্ন লয়ে, বিভিন্ন স্কেলে, বিভিন্ন ক্লাসরুম থেকে ভেসে আসা সেই আওয়াজ, সে এক অদ্ভুত কনসার্ট। লম্বা দৌড়ের শেষ ল্যাপ এর মত এখানেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘শ্রীরামকৃষ্ণর্পনমস্তু’ এর জায়গাটা। যেদিন শেষ করার তাড়া থাকত সেদিন এই জায়গাটায় ‘শ্রীরামকৃষ্ণ-ররর-মস্তু’ গোছের কিছু একটা দিয়ে শেষ করে দেওয়া হত। আবার লম্বা টানার দিনে জিনিসটা দাঁড়াতো ‘শ্রীরামকৃষ্ণঅঅঅঅঅঅঅর্পঅঅঅনমঅঅঅঅঅস্তুউউউউউউউউউউ’র মতন।

    একবার সারদা মন্দির এর বাইরের থেকে এই অপূর্ব কনসার্ট টা শোনার ইচ্ছে আছে।

    লাল ইস্কুল ৫.২

    ক্লাস ফাইভ না সিক্স জানিনা, ICতে একটা গল্প ছিল ‘এগিয়ে যা’। ICটা কী জিনিস, সেটা লিখতে গেলে উপন্যাস হয়ে যাবে। মোটের ওপর বলা চলে, IC মানে ‘নীতিশিক্ষা’। তো, গল্পটা ছিল এরকম-
    এক গরীব কাঠুরে বনে গিয়ে কাটার মত গাছ না পেয়ে নিজের অদৃষ্টের কথা ভেবে দুঃখ করছে, এমন সময় এক সাধুর সঙ্গে দেখা। সাধু তার কষ্ট দেখে তাকে আশীর্বাদ করে বললেন, ”এগিয়ে যা!” তারপর এগিয়ে যেতে যেতেই ক্রমশ চন্দনের বন, রুপোর খনি, সোনার খনির সন্ধান পায় সে।

    প্রথম লেখাটা লিখে সন্তুষ্টিটা ঠিক আসেনি, তাই, আমার সেলিব্রিটি(?) বন্ধু মান্না সেটা পড়ে বলল, “এগিয়ে যা”... enthu পেয়ে বসে গেলাম আবার...

    আগের লেখাটায় পেন ফাইটিং এর কথা বলছিলাম না? সেটা এক অদ্ভুত লড়াই। এখানে ‘Pen is mightier than sword’ কথাটা লিট্যারালি সত্যি হতে দেখেছি অনেকবার। তার গেমপ্ল্যান, স্ট্র্যাটেজির কাছে দাবার মতো খেলাও নস্যি বোধ হত। ছোট-পেন, রোগা-পেন, মোটা-পেন, জেল-পেন, গ্রিপার-পেন, ভারী-পেন এরকম বিভিন্ন ক্যাটেগরি আর ক্লাস ছিল। এক এক পেনের মুনশিয়ানা এক এক দিকে।

    Cello Pointec Gel Pen, বোর্ডের রাজা। খুব বড় না, ছোটও না, বেশ ভারী, মাঝখানটা একটু উঁচু। বিপক্ষের পেন জোরে এসে মারলেও পুরো মোমেন্টামটা টেনে নেবে। মাঝখানটা উঁচু বলে আরেক সুবিধে, পেনটা লাট্টুর মত টেবিলে ঘুরত। যদি বিপক্ষের পেন ঠিক মাঝামাঝি আঘাত হানতে না পারে, তাহলে সুইসাইড। উল্টোদিক ঘুরে এসে এক গুঁতোয় ছিটকে দেবে বিপক্ষের পেনকেই। তবে জেল পেনে পেন-ফাইটিং খেলা পেনের পক্ষে ক্ষতিকর।

    Reynolds Jetter (Feathersoft) এর সারা শরীর হাল্কা গ্রিপে মোড়া। তাকে ধাক্কা মেরে বোর্ড থেকে ফেলা যেমন কষ্টকর, তাকে দিয়ে অন্য পেনকে ফেলাও ঝকমারি, হয় নড়বেই না, বা নড়লেও লাফিয়ে উঠে নিজেই বেরিয়ে যাবে।

    আমার সবদিক দিয়ে সেরা মনে হত Montex Hi-Slim কে। ধানী লঙ্কা। শুরুর দিকে সবচেয়ে কম চাহিদা ছিল এর। কিন্তু মনে নেই কোন কলম্বাস এই আন্ডারডগকে আবিষ্কার করেছিল। দেখতে নিরীহ প্যাঁকাটির মত। তার ওপর লম্বা গলার ওপর ছোট ঢাকনা বসানো। ঢাকনাটা দেখলে জেমস ক্যামেরনের এলিয়েন মুভির এলিয়েনগুলোর মাথাটার কথা মনে পড়ে যায়। আর, পেনটার অস্বাভাবিক বড়ো গ্রিপ, যার পুরোটাই ঢাকনার বাইরে। এই গ্রিপটাই আসলে গ্যারিঞ্চার বাঁ-পায়ের মতো অস্বাভাবিক আর এফিশিয়েন্ট। খুব জোরে ধেয়ে আসা ঘুরন্ত Cello Pointec কতবার এই গ্রিপে হোঁচট খেয়ে ছিটকে গেছে টেবিলের বাইরে। যদিও পেনটার Attack Index কম ছিল। এর আক্রমণ স্টাইলটা অনেকটা অফসাইডের বাইরের আউটসুইঙ্গারের মত। ফাঁদে পড়ে খোঁচা মারলেই স্লিপে ক্যাচ। অব্যর্থ।

    হুঁ হুঁ বাব্বা, এই খেলাতেও ডোপিং আছে। এক বন্ধুকে জানি, সে ব্যাটা Cello Pointec এর রিফিল বার করে বালি ভরে দিয়েছিল, পেন আরো ভারী, আরো ভয়ানক, প্রতিটা গেমেই অপ্রতিরোধ্য। তবে রিফিল ছাড়া কী পেন হয়? বাকি বন্ধুরা চেঁচামেচি করায় সেই এফিড্রিন-ভরা, থুড়ি, বালি-ভরা পেন আজীবন নির্বাসনে গেল। এ হল পেন-ফাইটিং এর মারাদোনা।

    খেলাটায় খুব একটা ভালো ছিলাম না আমি। ট্যাকটিক্স নিয়ে তাই বেশি ঘাঁটাঘাটি করলাম না আর। আমাদের সেকশনে সাহা ছিল চ্যাম্পিয়ন। ও হয়ত ভালো বলতে পারবে আরও।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৯৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 116.51.225.92 (*) | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:০৫69305
  • ভালো লাগলো
  • Byaang | 233.237.189.29 (*) | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:৩৯69306
  • বাঃ ঃ) খুব ভালো লাগল পড়তে।
  • Abhyu | 126.203.157.85 (*) | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:১৫69307
  • ভারি মিষ্টি লেখা
  • K | 130.56.222.84 (*) | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২২69308
  • কোন ব্যাচ?
    এখ্ন কোথায়?

    আমি ১৯৮৯ মাধ্যমিক।
    এখন দিল্লিতে।
  • de | 69.185.236.54 (*) | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:১৩69309
  • ভালো লাগলো - আরো লিখুন!

    অতো ছোট থেকে আত্মীয় পরিজন ছেড়ে যারা হস্টেলে থাকে তাদের ছোটবেলার ভাবনাগুলো জানতে খুব ইচ্ছে হয় -
  • শারদ্বত | 212.142.71.47 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০৬69310
  • K দাদা, আমি ২০০৮ মাধ্যমিক, ২০১০ উচ্চ মাধ্যমিক, আপাতত হাওড়াতে... বাড়িতে। :)
  • ঝর্না | 24.96.225.104 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:১৩69313
  • ভীষণ ভালোলাগল পড়ে লেখাটা...
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২০69314
  • হ্যাঁ, এখানে পুরোটাই দিতে থাক না।
    বেশ লাগছে।

    চোরকাঁটায় মনে পড়লো, ফিল্ডের ঠ্যালায় আমার কতগুলো সালোয়ার যে শরবিদ্ধ হয়ে শহীদ হলো ! হাজারে হাজারে কাঁটা। একেকদিন এমন হত, গ্রামের লোকজনই কাটারি দিয়ে কাঁটা চেঁচে দিতেন।
    ওখানে আবার বলতো বনগুটি।
  • de | 69.185.236.53 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৪৭69312
  • পুরো সিরিজটাই এখানে দিয়ে দিন না - একজায়গায় পড়া যাবে বেশ -
  • শারদ্বত | 212.142.71.219 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:১৮69315
  • পুরো সিরিজটাই দিলাম...
  • Abhyu | 190.215.74.145 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৪০69316
  • শারদ্বত আর তার বন্ধুদের লেখা খুব ভালো লাগল। তবে প্রেয়ার হলে ঘুম দেখতে হলে পুরুলিয়ায় হবে না, আসতে হবে নরেন্দ্রপুরে, শরণ নিতে হবে রঞ্জনদার বন্ধু স্বামী পূরাতনানন্দ মহারাজের।
  • শারদ্বত | 212.142.119.96 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:৪৫69317
  • বাকি লেখাগুলো এখানেই অ্যাপেন্ড করে দিলাম...
  • পুপে | 74.233.173.198 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:১৫69318
  • ওই পেন ফাইটিং আর ব্যানের গপ্পো গুলো বেশ। বা:
  • de | 69.185.236.54 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:১৭69319
  • বাঃ - খুব ভালো লাগলো - আরো লিখুন -
  • Blank | 213.99.211.18 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২৬69320
  • সুন্দর হয়েচে
  • | 213.132.214.83 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:০১69321
  • খুব ভালো লাগলো ঃ)
  • শারদ্বত | 212.142.119.240 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:১০69322
  • Abhyu, আমরা রোজ সকালে হস্টেল থেকে ভজন হল গিয়ে ভজন করে ভান্ডারে যেতাম, সেখানে ব্রেকফাস্ট করে আবার হস্টেল। ওখানেই দেড় কিলোমিটার হাঁটা হয়ে যেত... ক্লান্তি থেকেই জমাটি ঘুম আসে, নরেন্দ্রপুরে সব একটা বাড়িতে... হেঃ, নরেন্দ্রপুরে আবার ঘুম... নটেশাকের আবার ক্যাশমেমো... :P
  • de | 24.139.119.173 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:১৭69323
  • :))) @ নটেশাকের ক্যাশমেমো
  • Atoz | 161.141.84.176 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:০৭69324
  • ভালো লেখা।
  • ranjan roy | 24.99.207.237 (*) | ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:৫৬69325
  • অ্যাই অ্যাই যত উচ্চিংড়ের দল!
    "ধ্যান" হল বরানগর মিশনের মনোপলি! ( ১৯৬১--৬৫)।
    স্বামীজি তো বরানগরেই মিশন শুরু করেছিলেন না।
    বল্লে হবা!

    এবার একটু বিটকেল ব্রহ্মচর্য নিয়ে হোক। শারদ্বত যেমন প্রমিস করেছে। আমি এখনও সাহস পাচ্ছি না।

    খুব খুব ভালো লাগলঃ)))
  • | 24.96.160.28 (*) | ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২১69326
  • পড়তে খুবই ভাল লাগল।

    একটা প্রশ্ন। এই মহারাজ ইত্যাদিরা কি জেনারেলি একটু স্যাডিস্ট টাইপ? মানে রোজই ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়ে আর রোজই বিভিন্ন নিত্যনতুন উপায়ে মারধোর এবং মার খেয়ে কষ্ট পেতে দেখলে "মজা পেতেন। সরল হাসি হাসতেন।" ??
  • Abhyu | 127.194.194.5 (*) | ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৬69328
  • নটেশাকের ক্যাশমেমোটা খাসা হয়েছে!
    তবে কিনা আমরা তো ঘুমোতাম না (বিশেষ একটা) ঘুমোতেন শ্রীমদ স্বামী গবানন্দ। হোস্টেলের গল্পের টই একটু খুঁজে দেখো না :)
  • ranjan roy | 24.96.184.95 (*) | ২১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪০69327
  • না, সবাই না। কিন্তু কেউ কেউ।
    বিশেষ করে হায়ারার্কিতে নীচের দিকে যাঁরা।
    আর তখন শারীরিক শাস্তিদান বাচ্চাদের শাসনে রাখার প্রকৃষ্ট উপায় বলে মনে করা হত। বেত মারা (স্কুল লেভেলে) খুবই কমন ছিল।
    মনে হয়, ওঁরা অনেকেই মনে করতেন ঠিক কাজই করছেন।
    গার্জেনরাও তাই ভাবতেন।
  • শারদ্বত | 212.142.80.234 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৫৯69329
  • নিশানদার লেখা? না অনেকে মিলে?
  • শারদ্বত | 212.142.80.234 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:০১69330
  • আর ইয়ে, ক্যাশমেমোটা আমার কথা নয়, শীর্ষেন্দুর... আমি যখন তখন ঝেড়ে দিই।
  • Atoz | 161.141.84.176 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:২৬69331
  • খুব ভালো লাগছে লেখাগুলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন