এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জেড প্লাস

    Suvendu Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২১৮১ বার পঠিত
  • ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষী সৎবন্ত সিংহ ও বিয়ন্ত সিংহ অপারেশন ব্লু স্টার চলাকালীন স্বর্ণমন্দির নামে পরিচিত শিখদের সর্বোচ্চ তীর্থ হরমন্দির সাহিবে সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতে তাঁকে হত্যা করে। আইরিশ টেলিভিশনের জন্য নির্মীয়মান একটি তথ্যচিত্রের প্রয়োজনে ব্রিটিশ অভিনেতা পিটার উস্তিনভকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা ছিল শ্রীমতী গান্ধীর। নতুন দিল্লির ১ নং সফদরজঙ্গ রোডের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাগানের পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। সৎবন্ত ও বিয়ন্ত সিংহের দ্বারা রক্ষিত একটি ছোটো দরজার ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা সরাসরি ইন্দিরা গান্ধীকে গুলি করে। বিয়ন্ত সিংহ পাশ থেকে তিন রাউন্ড এবং সৎবন্ত সিংহ নিজের স্টেনগান থেকে তাঁর তলপেট লক্ষ্য করে ত্রিশ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। অন্যান্য দেহরক্ষীরা বিয়ন্তকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করে এবং সৎবন্তকে গ্রেফতার করে। সেই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর সুরক্ষায় ১৯৮৮ সালে গঠিত হয় স্পেশাল প্রোটেশন গ্রুপ (SPG)। এসপিজি হলো একটি সশস্ত্র সুরক্ষা বাহিনী, যার কাজ প্রাক্তন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, এবং তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া। এই সুরক্ষা বাহিনীর কাছে থাকে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, মর্ডান কমিউনিকেশন গেজেট। এই সিকিউরিটি বাহিনীর প্রতিটি সদস্যই মার্শাল আর্ট এবং খালি হাতে যে কোন ধরনের লড়াইয়ের মোকাবিলায় দক্ষ। এখনও পর্যন্ত ১৭ জন ভিভিআইপি এই বাহিনীর সুরক্ষার আওতায় আছেন। সাধারণভাবে হাই-রিস্ক সুরক্ষার আওতায় পড়েন প্রধানত রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা।

    দিল্লী, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই এই চার মহানগরী সহ ভারতে রাজ্যের সংখ্যা ২৫টি। এই সমস্ত রাজ্যের নেতা নেত্রী, মন্ত্রী আমলাসহ খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়ী মিলিয়ে ভিভিআইপির তালিকা বানাতে বসলে চিত্রগুপ্তের খাতাকেও হার মানাবে। হামেশাই দেখা যায় ভিভিআইপিরা পাব্লিক প্লেসে গেলে সুরক্ষার খাতিরে তাদের চারপাশে পুলিশ, কম্যান্ডো মিলিয়ে এক লম্বা লটবহর। মনে হবে যেন তারা মিটিং মিছিল, বা কোনো অনুষ্ঠানে নয়, যুদ্ধে চলেছেন। এতটাই তাদের সুরক্ষার বহর। এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে এত ভিআইপি, ভিভিআইপি সকলেরই কি নিরাপত্তা প্রয়োজন? এত জনকে স্পেশাল নিরাপত্তা দিতে গিয়ে দেশের এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কতটা ফাঁক থেকে যায়? এই সমস্ত ভেরি ভেরি স্পেশালদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, খরচই বা পড়ে কত? প্রশ্ন অনেক, তবু উত্তর দেবার দায় কারো নেই। নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এখন আর শুধু প্রাণের ভয়ে নয়, তা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্যাটাস সিম্বল। ভিভিআইপিদের স্ট্যাটাসের মান রাখার ঠেলায় ট্যাক্সের বোঝা আমজনতার কাঁধে। এমনকী আপস করা হচ্ছে জনতার সুরক্ষাতেও। কিভাবে! একটু খতিয়ে দেখা যাক।

    সুরক্ষার সুরতহাল

    বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই সন্ত্রাসের যা হাল তাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষদের নিরাপত্তা একান্তই প্রয়োজন। ভারতে প্রাণনাশের হুমকির গুরুত্বের উপর বিচার করে কিছু হাই প্রোফাইল মানুষকে নিরাপত্তা দেয় পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন। গুরুত্বের বিচারে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চারটে ভাগে ভাগ করা হয় - জেড প্লাস, জেড, ওয়াই, এবং এক্স। এই ধরনের নিরাপত্তা দেয় প্রধানত চারটি সরকারি সংস্থা – এসপিজি, ন্যাশানাল সিকিউরিটি গার্ডস (এনএসজি), ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) এবং সিআরপিএফ। এর মধ্যে এনএসজি নিরাপত্তা দেয় জেড প্লাস নিরাপত্তার আওতায় থাকা ভিভিআইপিদের। আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতা- নেত্রী, হাই-প্রোফাইল সেলিব্রিটি, বিজনেস টাইকুন, বিল্ডার্স, অভিনেতা এবং খেলোয়াড়রা এমনকী ধর্মগুরুরা পর্যন্ত আসেন এই হাই-প্রোফাইল ভিভিআইপি তালিকায়। এলিট শ্রেণীর এই মানুষেরাই এ ধরনের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। যদিও সরকারি অফিসার ও কিছু রাজনৈতিক নেতা নেত্রী ছাড়া অন্যান্যদের এই সিকিউরিটির জন্য খরচ নিজেদেরই বহন করতে হয়। যদিও তা যথেষ্ট নয়। তাদের দেয় খরচের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যয় হওয়া খরচ অনেক বেশি। কাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, কোন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় ইন্টেলিজেন্টস ব্যুরো (আইবি), হোম সেক্রেটারি, এবং হোম মিনিস্টার। এবার দেখে নেওয়া যাক বিভাগ অনুসারে নিরাপত্তার বহর।
    এসপিজি ক্যাটাগরির নিরাপত্তার পর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা হলো জেড প্লাস। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে ৩৬ জন নিরাপত্তা কর্মী। যার মধ্যে ২৮ জন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এনএসজি কম্যান্ডো,এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কোবরা কম্যান্ডো এবং ১২ জন হোমগার্ড। তাছাড়াও রয়েছে একটি এসকর্ট, একটি পাইলট ও একটি টেইলিং ভেহিকল। জেড প্লাস নিরাপত্তায় কম্যান্ডোদের হাতে থাকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, যার মধ্যে সফিস্টিকেটেড এমপি৫ সাব-মেশিনগান যা কয়েক সেকেন্ডে ৩০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে পারে, এসজি ৫৫০/৫৫১ অ্যাসল্ট রাইফেল, গ্লক১৭ পিস্তল, ইত্যাদি। এছাড়াও থাকে অত্যাধুনিক কমিউনিকেশন গ্যাজেট, যেমন জ্যামার। নিরাপত্তার তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি হলো জেড। ৪ থেকে ৫ জন এনএসজি কম্যান্ডো, ইন্ডো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ, সিআরপিএফ মিলে মোট ২২ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং একটি এসকর্ট গাড়ি থাকে এই ক্যাটাগরিতে। ওয়াই ক্যাটাগরিতে থাকে ১-২ এনএসজি কম্যান্ডো, পুলিশ, সিআরপিএফ মিলে মোট ১১জন নিরাপত্তা রক্ষী। এক্স ক্যাটাগরিতে থাকে মোট ২-৫ জন সশস্ত্র পুলিশ রক্ষী। শেষক্তো এই দলে কোনো কম্যান্ডো থাকে না।
    এতো গেলো নিরাপত্তার শ্রেণী বিভাগ। এবার দেখে নেওয়া যাক কারা কারা ভিভিআইপি আর ভিআইপি তালিকভুক্ত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে বাদ দিলে জেড প্লাস নিরাপত্তা তালিকায় আছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মনমোহন সিং, অটল বিহারী বাজপেয়ী, গান্ধী পরিবার – সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদরা, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম. করুণানিধি, মুলায়ম সিং যাদব, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, চন্দ্রবাবু নাইডু, বেণীপ্রসাদ বর্মা, মুকেশ আম্বানি, রাজনাথ সিং , আমিত শাহ তালিকার প্রচুর। জেড তালিকাও কম নয়, বাবা রামদেব, রাজস্থানের বিজেপি প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী হরিভাই প্রার্থিভাই চৌধুরী, কংগ্রেস নেটা জগদিস টাইটেলার, সজ্জন কুমার কে নেই? মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নিতা আম্বানি, জম্মু কাশ্মীরের বিজেপি প্রেসিডেন্ট যুগল কিশোর শর্মা, প্রাক্তন চিফ ইলেকশন কমিশনার এইচ.এস ব্রহ্ম প্রভৃতি আছেন ওয়াই ক্যাটাগরিতে। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনি শুরুতে জেড ক্যাটাগরি তে থাকলেও বর্তমানে তার সুরক্ষা কমিয়ে ওয়াই করা হয়েছে। শুরুতেই বলছিলাম তালিকার বহর শেষ হবার নয়, তাই তালিকা ছেড়ে এবার যাওয়া যাক খরচের হিসেবে।

    খরচের সুরক্ষা আপস জনসাধারণের নিরাপত্তায়
    একটি সরকারি সুত্র মতে ভিআইপি, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার ব্যায়ের ক্ষেত্রে মনমোহন সিংহের ইউপিএ সরকারের থেকে নরেন্দ্র মোদির এনডিএ সরকার মুক্তহস্ত। এনডিএ সরকারের আমলে প্রায় ৪৫০ জন জেড সিকিউরিটি পায়, যেখানে ইউপিএ আমলে এই সুরক্ষা পেত মাত্র ৩৫০ জন। মোদি সরকার দিল্লীতে ৫৫ জন কে জেড প্লাস সিকিউরিটি দেয়, যেখানে ইউপিএ জামানায় দেওয়া হতো মাত্র ২০ জন। দিল্লীতে শুধু রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তায় হওয়া খরচ চোখ কপালের তোলার মত। ভারতের তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কত, তা জানতে চেয়েছিলেন মুম্বাইয়ের যোগেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা মনসুর দরবেশ। জবাবে তাকে জানানো হয়েছে ২০১২-১৩ সালে এই খরচ ছিল ৩০ কোটি ৯৬ লাখ আর ২০১৪-১৫ সালে ছিল ৪১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দরবেশকে তার প্রশ্নের জবাবে আরও জানানো হয়, ২০১৫ সালে এপ্রিল মাসে ফোনের বিল আসে ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা, মার্চে আসে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাকে আরও জানানো হয়, শুধু রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে কাজ করেন ৭৫৪ জন। রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচিবের সংখ্যা ৯। গাড়ির চালক ২৭ জন। মে মাসের বেতন বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বার্ষিক খরচ হয় ১০০ কোটি। এছাড়াও রয়েছে রাষ্ট্রপতির বিদেশ ভ্রমণের খরচ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল মোট ২২টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। এজন্য খরচ হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। একটি সরকারি সূত্র মতে ভিআইপি সুরক্ষা খাতে সরকারের বছরে ৩৪১ কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৩-তে সুপ্রিম কোর্ট নির্বিচারে ভিআইপি সুরক্ষা বন্দোবস্ত করার তীব্র সমালোচনা করেছিল।
    নরেন্দ্রে মোদীর সুরক্ষা

    একশ একুশ কোটির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা নরেন্দ্রে মোদির মাস-মাইনে মাত্র এক লাখ ষাট হাজার টাকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও একথা সত্যি। প্রধান মন্ত্রী সচিবালয় থেকে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বেতন ও আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার বিস্তারিত তালিকা। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক বেতন ৫০,০০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যয়নিয়ন্ত্রক ভাতা হিসেবে ৩০০০ টাকা, দৈনন্দিন ভাতা ৬২,০০০ টাকা এবং সাংসদ ভাতা ৪৫,০০০ টাকা।
    এবার দেখা যাক কত খরচ হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদির সুরক্ষায়? মাইনে ছাড়াও কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন দেশের শাসন ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিটি। এর মধ্যে প্রথমেই আসে তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা। প্রধানমন্ত্রীর মতো চরম গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তির জন্য রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী যার পোশাকি নাম এসপিজি। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নিকটতম আত্মীয়দের জন্য স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল করা হয়। পায়ে হেঁটে , নিজস্ব গাড়িতে চড়ে, রেল বা আকাশপথে প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, তাঁকে ঘিরে থাকে নিশ্ছিদ্র এসপিজি বলয়। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের আদলেই তালিম দেওয়া হয় এসপিজি জওয়ানদের।

    মোদীর বাসভবন

    ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি আবাস দিল্লির ৭ রেসকোর্স রোডের বাগানঘেরা প্রাসাদোপম বাড়ি, সরকারি খাতায় কলমে যার নাম পঞ্চবটি। বসবাস করার জন্যই শুধু নয়, এখানেই নানান গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও রাজনৈতিক বৈঠকও সারেন প্রধানমন্ত্রী । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০১০ এর ভারত সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী মিশেল ওবামাকে পঞ্চবটিতে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌর। দিল্লিতে ১২ একর জমির উপর মোট ৫টি বাংলো (বাংলো নম্বর ১,৩,৫,৭ ও ৯) নিয়ে আশির দশকে তৈরি হয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। এই ৫টির মধ্যে একটিতে অতিথি নিবাস এবং একটি বাংলোয় এসপিজির ঘাঁটি। বাকিগুলি প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করেন। বাড়িটিতে ঢোকার একমাত্র গেটে এসপিজি জওয়ানেরা ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন থাকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন-তখন দেখা করতে পারেন না নিকট আত্মীয়-পরিজনেরাও। একমাত্র মুখ্য সচিবের তালিকা অনুযায়ীই রোজ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্প্রার্থীদের এই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অনুমোদিত পরিচয়পত্র। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের রোড সংলগ্ন এলাকার আকাশপথে বিমান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পঞ্চবটি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে বহুতল সম্রাট হোটেলের শীর্ষতম চারটি তলা ভাড়া দেওয়া নিষেধ। এগুলি নিরাপত্তার খাতিরে সরকার অধিগ্রহণ করেছে।
    মোদীর বাহন:
    যাতায়াতের জন্য নরেন্দ্র মোদি ২০০৯ সালে তৈরি ২টি কালো রঙের বিএমডব্লিউ সেভেন সিরিজ সেলুন ব্যবহার করেন। গাড়ি দু-টির আপাদমস্তক বি-৭ লেভেল নিরাপত্তায় মোড়া। তাপ অনুসন্ধানকারী যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র, গ্যাস আক্রমণ ও বোমা নিরোধক গাড়ি দু-টিতে আছে অত্যাধুনিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা। গাড়িগুলির তেলের ট্যাঙ্ক দু-টিও বিশেষ ভাবে সুরক্ষিত। দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও তাতে বিস্ফোরণ ঘটবে না। এই গাড়ি দু-টির নিজস্ব অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও রয়েছে। এ দু-টি গাড়ি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্যে আছে আরও চারটি বিএমডব্লিউ। যার মধ্যে দু-টি অতিথিদের জন্য এবং দু-টি গাড়ি দেশের যেখানে যেখানে প্রধানমন্ত্রী সফর করেন সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজিদের জন্য রয়েছে পাঁচটি অত্যন্ত সুরক্ষিত বিএমডব্লিউ এক্স-৫ গাড়ি।

    আকাশপথে যাতায়াতের জন্য আছে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বিমান বোয়িং ৭৪৭-৪০০ এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান। এয়ার ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে এ রকম আরও ৫টি বিমান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য রাখা আছে। প্রতিটি বিমানের ভেতর আছে একটি বিলাসবহুল সুইট, একটি শোওয়ার ঘর, একটি লাউঞ্জ এবং ৬ জনের বসার মতো একটি ছোট অফিস। বিমানটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা। এই বিমানটির উড়ান নিয়ন্ত্রণ করে পালাম এয়ারফোর্স স্টেশন। প্রধানমন্ত্রীর আকাশপথে ভ্রমণের আগে থেকেই উড়ানের সমস্ত খুটিনাটি চলে যায় এসপিজির দায়িত্বে। বিমানের জ্বালানি থেকে পানীয় জল, সবকিছুই পরীক্ষা করে দেখে এসপিজি নিরাপত্তাবাহিনী। এবার দেখা যাক রাজ্যেগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থার খরচ কত?

    দিল্লী
    প্রথমেই দেখা যাক দিল্লীর হাল। সরকারি সূত্র জানা গেছে, শুধুমাত্র দিল্লিতেই ভিভিআইপির নিরাপত্তায় সরকারের বার্ষিক খরচ ৩৪১ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি জিএস সিংঘভির বেঞ্চে কাছে দিল্লী রাজ্য সরকার এক হলফনামায় জানিয়েছে গত আর্থিক বছরে ভিআইপি সুরক্ষা খাতে খরচ হয়েছে ৩,৪১,২৪,৩২,০০০ টাকা। যার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ভবনের নিরাপত্তায় খরচ হয়েছে ৩৮,৪৮,৭৬,০০০ টাকা। রাজ্যের তরফে বেঞ্চের কাছে দেওয়া হলফনামায় বন্ধখামে ভিআইপি সিকিউরিটি প্রদান করা হয়েছে এমন ৪৬০ জনের একটি তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই নাম প্রকাশ্যে আসেনি। এই তালিকায় থাকা ৩৭৬ জন কে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা এবং ৮৩ জন কে স্থানীয় সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই হলফনামায় আরো জানানো হয়েছে যে মোট ৬৩৯৮৫ জন রক্ষী ল অ্যাণ্ড অর্ডার মেন্টেনের জন্য, ৩৪৪৮ জন আছেন অপরাধ দমন এবং তদন্তের কাজে, নিযুক্ত আছেন।
    উত্তরপ্রদেশ

    উত্তরপ্রদেশের তালিকায় রয়েছে ১৫শ ভিআইপি যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন থাকে দুই হাজার ৯১৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা। সরকারি কাগজপত্র থেকে জানা যায় এই বিপুল সংখ্যক ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে অখিলেশ যাদবের সরকারের খরচ হয় বার্ষিক ১২০ কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সূত্রে জানা গেছে হুমকির কথা বিবেচনা করে আগে থেকেই ব্যবস্থার ভিত্তিতে এক হাজার ৪৭৬ জনকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য রাজ্যের কেউ প্রাণনাশের হুমকির প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করলে পুলিশ তা খতিয়ে দেখে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তার অনুমোদন দেয়।” রাজনৈতিক বিবেচনায় ওইসব তথাকথিত ‘ভিআইপি’দের নিরাপত্তা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ভিআইপিদের নিরাপত্তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলাদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। রাজ্যের বেশিরভাগ ভিআইপি বিশিষ্ট এলাকাগুলো হলো-লক্ষ্ণৌ, আল্লাহাবাদ, নৌদা, কানপুর, ইত্তাওয়াহ ও মাইনপুর। লক্ষ্ণৌতে ২৩২, আল্লাহাবাদে ৯১, নৌদায় ৬০ জন ভিআইপি রয়েছেন।
    কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের যে নিরাপত্তা দেওয়া হয় সেই নিরাপত্তা পান উত্তরপ্রদেশের ভিআইপিরা!

    মহারাষ্ট্র
    উত্তরপ্রদেশের পর এবার পালা মহারাষ্ট্রের। তথ্য অধিকার আইনের এক প্রশ্নের উত্তরে মহারাষ্ট্র প্রশাসন জানিয়েছে, মুম্বাইয়ের মোট ৪৮,৯৬৯ জন পুলিশের মধ্যে ২৭,৭৪০ ভিআইপির নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকে। ফলে মুম্বাইয়ের ২ কোটি মানুষের নিরাপত্তার জন্য ২০,০০০ পুলিশ নিয়োজিত আছে। নাগরিক অধিকার কর্মী বিহার দুরেভের করা প্রশ্নের জবাবে তথ্য কমিশন আরও জানিয়েছে, প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ১৩৭ জন পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাৎ ভিআইপিদের সুরক্ষা দিতে গিয়ে ফাঁক থেকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের সুরক্ষায়। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

    কাশ্মীর

    জম্মু কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নিরাপত্তা ও সফরে খরচ পড়ে বছরে ১০০ কোটি টাকা। তবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে চলেছে মোদী সরকার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা থেকে শুরু করে জেড নিরাপত্তা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীর পরিদর্শনে এসেছিল একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। কিন্তু এই দলের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা নূন্যতম সৌজন্য দেখাননি। এই দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকও করেননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের প্রতি কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে চলেছে এনডিএ সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ সূত্র থেকে জানা গেছে , হুরিয়ত নেতাদের সফর, হোটেল ও নিরাপত্তার জন্য বছরে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। সরকারি অর্থেই এই সব বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে থাকেন এবং সরকারি গাড়িতেই যাতায়াত করেন। সারা বছর প্রায় এক হাজার নিরাপত্তা রক্ষী তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন থাকে। এছাড়াও কয়েক কোটি টাকা খরচ হয় তাঁদের খাওয়া-দাওয়ায়। শুধু তাই নয় এইসব বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা দেশে ও বিদেশে যে চিকিত্সা করান তার ব্যয়ভারও সরকারই বহন করে। এরপরও তাঁরা পাকিস্তানের পক্ষেই কথা বলেন। এমনকি, জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকদের ভারতের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেন। তাই কেন্দ্র বিচ্ছিন্নবাদী নেতাদের জন্য যে খরচ হয় তাতে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য সরকারকেও তা করতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই শ্রীনগরে এসেছিল সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার বাড়িতে পর্যন্ত যান প্রতিনিধি দলের কয়েকজন সদস্য। কিন্তু তিনি দেখা করতে অস্বীকার করেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের এই ব্যবহার ভালোভাবে গ্রহণ করেনি কেন্দ্র।
    সূত্রের খবর, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।

    বিহার

    বিহারের মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, এমনকী বিত্তবান মানুষদের মধ্যেও যে ভাবে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে চলাফেরার প্রবণতা বাড়ছে তাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ভিআইপি বা সম্পন্ন মানুষদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘোরাফেরার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একবার বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাতেও যে পরিস্থিতি বদলায়নি তা বোঝা গিয়েছে এই খাতে সরকারি খরচের বহর দেখে। মন্ত্রী, বিধায়ক বা নানা স্তরের আধিকারিকদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে ১৭০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে প্রতি বছর। এর সঙ্গে আছে সম্পন্ন মানুষের জন্য নিরাপত্তা। বিহারে এঁদের নিরাপত্তা দিতে রাজ্যের ৬০ হাজার পুলিশের মধ্যে ৫ হাজার কেবল যুক্ত আছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে। তার খরচ ওই বিত্তবানরাই দেন। নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে নিরাপত্তা রক্ষীর খরচ হিসেবে সরকারকে দিতে হয়।বিহারে সংগঠিত অপরাধ, বিশেষ করে অপহরণের যা রমরমা, তাতে সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়া থাকতেই ভয় পান। যদিও লালু-রাবড়ী জমানার পরবর্তী পরিস্থিতি তুলনায় অনেকটাই ভাল।
    তবে ভিআইপিদের নিরাপত্তার এমন বহর দেখে বোধহয় মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে ঘোরা যেন ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে পড়েছে।” কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর এই কথায় কেউ আশ্বস্ত হতে পারেননি, উল্টে নিরাপত্তা রক্ষী রাখার বহর যেন বেড়েই চলেছে। কেবল ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে সরকারি তহবিল থেকে এত টাকা বছরে খরচ হয়ে গেলেও হোলদোল নেই কোনও রাজনৈতিক দলেরই।
    ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার বাস্তব চিত্রটা কি স্পষ্ট হচ্ছে না? এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন , “এই নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।” এডিজির (সদর) কথায়, “রাজ্য জুড়ে ৩০ জনের মতো বিত্তবান মানুষ নিরাপত্তা রক্ষী নিয়েছেন। এর জন্য সরকারকে তাঁদের টাকা দিতে হয়। নূন্যতম ২৫ হাজার টাকা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা আরও বেশি।” কাদের, কেমন নিরাপত্তা দেওয়া হয়? পুলিশের একটি হিসেব বলছে, আগে বিধায়ক পিছু একজন নিরাপত্তা রক্ষী থাকতেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বিজেপি-র বিধায়ক রাজকিশোর কেশরী পূর্ণিয়ায়, নিজের বাড়িতে খুন হওয়ার পরে আতঙ্ক যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই সব ভিআইপিদের। এরপর তাঁদের দাবি মেনে বিধায়ক পিছু তিনজন করে পুলিশ নিয়োগ করা হয় নিরাপত্তার জন্য। যুক্তি দেখানো হয়, একজন পুলিশ কর্মীর পক্ষে ভিআইপিকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দেওয়া সম্ভব না। দাবি ওঠে ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা রক্ষীর। সেই দাবি মেনে তিনটি শিফ্টে ভাগ করে দেওয়া হয় তিন জন কার্বাইন ধারী পুলিশকে। ফলে যা ছিল এক, তা বেড়ে দাঁড়ালো তিনে। বিধায়কদের পরে আছেন মন্ত্রীদের মতো ভিআইপিরা। তাঁদের জন্য বরাদ্দ তিন জন সশস্ত্র কনস্টেবল ও একজন করে এএসআই বা এসআই পদমর্যাদার অফিসার। এরপরের তালিকায় আছেন জজ থেকে শুরু করে সাংবিধানিক কোনও কমিটির কর্তাদের নিরাপত্তাও। রাজ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জেড্ প্লাস নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে। তার জন্য এক ব্যাটেলিয়ন পুলিশ সব সময় মোতায়েন রাখা আছে। এর সঙ্গে থাকে স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ এবং জেলা পুলিশের একটি দল।

    পশ্চিমবঙ্গ

    এইবার এই রাজ্যের নিরাপত্তার খরচের দিকেও একবার চোখ বোলানো যাক। যদি অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ভিআইপিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের খরচ সবচেয়ে কম। তবে নবান্নের খবর নিরাপত্তা বাবদ গত তিন বছরে খরচ বেড়েছে তিন গুন। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীসহ ভিআইপিদের নিরাপত্তার ভার সিকিউরিটি ডিরেক্টরেটের, যার পোশাকি নাম স্পেশ্যাল সিকিওরিটি উইং (এসএসডব্লিউ)। এই উইঙে আছে ৫০০ জন কর্মী।২০১১ -১২ সালে এই উইংয়ের বার্ষিক খরচ ছিল পাঁচ কোটি টাকা।চলতি বাজেটে যা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি। যার মধ্যে শুধু নিরাপত্তারক্ষীদের যাতায়াত বাবদই খরচ পাঁচ কোটি টাকা। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য তিন কোটি টাকা খরচ হয়। অস্ত্র ও সরঞ্জাম খাতেও প্রতিবছর মোটা টাকা খরচ হয়।
    একটি পাইলট গাড়ি, পুলিশের একটি মোবাইল ভ্যান,সাদা পোশাকে নিরাপত্তারক্ষী, নিরাপত্তা অফিসারদের জন্য দুটি গাড়ি, অতিরিক্ত কমান্ডো নিরাপত্তা,কমান্ডোদের জন্য গাড়ি, ২ জন ব্যক্তিগত পুলিকর্মী, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী অফিসারদের জন্য একটি গাড়ি এবং ৩৬ জন কর্মীর ঘেরাটোপ। হ্যাঁ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। বিরোধীরা যাঁকে রাজকুমার বলেও কটাক্ষ করেন, সেই অভিষেকের নিরাপত্তা এবার জেড থেকে বাড়িয়ে জেড প্লাস করা হয়েছে। রাজ্যের এক শীর্ষ আধিকারিক এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। খোলা মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক সাধারণ ব্যক্তি চড় মারার পরেই পুলিশ এই সিদ্ধান্ত নেয়। চড় খাওয়ার আগেও যদিও খুব একটা কম নিরাপস্থা ব্যবস্থার ঘেরাটোপে ছিলেন না অভিষেক। এতদিন জেড নিরাপত্তা উপভোগ করছিলেন অভিষেক। পুলিশের বক্তব্য, চড় খাওয়ার পরে অভিষেকের উপর হামলার আশঙ্কা আরও বেড়েছে, সেই কারণেই জেড নিরাপত্তা আপগ্রেড করে অভিষেককে জেড প্লাস নিরাপত্তার আওতায় আনা হল। নিরাপত্তার খরচ বহন করে রাজ্যই। তবে এক্ষেত্রে অভিষেক তো আর শুধু সাংসদ নন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপোও বটে। সাধারণত যারা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর থেকে হুমকি পায় তাদের জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এটা নজিরবিহীন যে কোনও সাংসদকে এই ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হচ্ছে। চড় খাওয়ায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এ দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। যদিও এত সব নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কয়েকদিন আগেই সিঙ্গুরে থেকে ফেরার পথে তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় সাঙ্ঘাতিক ভাবে জখম হন।
    পশ্চিমবঙ্গের ভিআইপি নিরাপত্তা কাদের আছে? দেখা যাক নিরাপত্তা বন্টনের হালটা কি! তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তায় রয়েছে ২৫ জন পুলিশ। তাঁর বাবা, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর পাঁচ জন, শুভেন্দুর ভাই, তথা কাঁথি (দক্ষিণ)-র তৃণমূল বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী দু’জন রক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন। অর্থাৎ শুধু অধিকারী পরিবারের পিছনেই রক্ষী লাগছে ৩২ জন! প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়েরও রক্ষীর সংখ্যা কম নয়। ১০ জন। সরকারি অনুযায়ী, জঙ্গলমহলে মাওবাদী দৌরাত্ম্য হ্রাসের দরুণ সেখানকার অধিকাংশ সিপিএম নেতার দেহরক্ষী ফেরানো হলেও শালবনির তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর নিরাপত্তায় রক্ষী সংখ্যা ৯ জন পুলিশ। জঙ্গলমহলের আরও তিন বিধায়ককে চার জন করে রক্ষী দিয়েছে সরকার। মাওবাদী হুমকির জেরে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ দশ জন কার্বাইনধারী রক্ষী পান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের নিরাপত্তায় মোতায়েন ন’জন। ওটা না-হয় জঙ্গলমহল বলে ছাড় দেওয়া গেল, কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার এসপি’র পাহারায় সাত রক্ষী কেন? কেনই বা পূর্ব মেদিনীপুর বা নদিয়ার এসপি পাঁচ জন করে দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরবেন? নেতা-মন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার পিছনে এই বিপুল ব্যয় দেখে জনতার মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উঠছেও। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের এক বাসিন্দা। দিল্লির নির্ভয়া কান্ডের পরে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ-মামলা করে তাঁর অভিযোগ, ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। এই মামলার প্রেক্ষিতে ভিআইপিদের নিরাপত্তা দানের ঢালাও প্রবণতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলাটির সূত্র ধরে সমস্ত রাজ্যের কাছে শীর্ষ আদালত জানতে চেয়েছে, জনসাধারণের নিরাপত্তায় তারা কত পুলিশ দিচ্ছে? ভিআইপি-নিরাপত্তায় রক্ষীর সংখ্যা কত? ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ক’জন সরকারি খরচে ব্যক্তিগত রক্ষী পাচ্ছেন, রাজ্যগুলোর কাছে সে তথ্যও তলব করেছে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মহাকরণ যে তথ্য দিল্লিতে পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে: এ রাজ্যে ১৬৯৮ জন ভিআইপি-র নিরাপত্তায় ২৯৫২ জন রক্ষী বরাদ্দ করেছে সরকার। অর্থাৎ, ভিআইপিপিছু গড়ে দেড় জনের বেশি। আর আমজনতার ক্ষেত্রে? প্রতি ১৬৫৮ জন মানুষের পাহারায় মাত্র এক জন পুলিশ! যার মানে, সাধারণ নাগরিকপিছু পুলিশের অনুপাতটা গাণিতিক রাশিতে ধর্তব্যেই আসে না।
    আমনাগরিকের সরকারি নিরাপত্তার শোচনীয় ছবি দেশ জুড়েই। তবে পশ্চিমবঙ্গ এ ক্ষেত্রে বিহার-গুজরাত-উত্তরপ্রদেশের চেয়েও পিছিয়ে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় ‘ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’-এর তথ্য। “সাধারণ মানুষ যে পুলিশি নিরাপত্তা বলতে কার্যত কিছুই পান না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।” আক্ষেপ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার।
    ব্যর্থতা ও বিতর্ক

    এত খরচের বহর এত আয়োজন সত্ত্বেও এই নিরাপত্তা বলয়ে থেকেও কি বাঁচা যায় নাশকতা থেকে? এই নিরাপত্তা বলয়ে থেকেই কিন্তু একটি আত্মঘাতি হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ২০০৮ এ রাজবীর সিংহ নামে এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট জেড লেভেল সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। প্রাক্তন ইউনিয়ন মিনিস্টার প্রমোদ মহাজন তো খুন হন তাঁর ভাইয়ের হাতে। গত ২৫শে অক্টোবর হাসপাতাল উদ্বোধনে এসে জঙ্গী হামলা থেকে অল্পের জন্য রেহাই পেলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। তাঁর এক দেহরক্ষী আহত হন। উখরুল জেলার এক হেলিপ্যাডে এই ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন (আইএম) দিকে সন্দেহের তীর।
    এত করেও সরকার ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে পারছে কই? অথচ এই ভিআইপিদের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা এনএসজির। তারা নতুন করে ভিভিআইপি’দের দায়িত্ব নিতে নারাজ। আধা সামরিক বাহিনীতে এমনিতেই কর্মী সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তার ওপর নরেন্দ্র মোদী সরকারের ভিআইপি তালিকা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর এতে উদ্বিগ্ন আধা সেনা বাহিনীগুলি। গতবছরর প্রথম দিকে সরকার তালিকা থেকে ৩০ জনের নাম ছাঁটাই করেছিল। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই পূর্বতন ইউপিএ জমানার। কিন্তু তাদের বদলে যুক্ত হয়েছে আরও ৫০ জনের নাম। ঢুকিয়েছে এনডিএ সরকার। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ইউপিএ জমানার ৩৫০ জনের তালিকা এনডিএ আমলে বেড়ে হয়েছে ৪৫০। আর এতজন ভিআইপি-র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে আধা সেনা বাহিনীকে। সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াস সিকিওরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-র ঘাড়ে বর্তমানে ৫৫ জনের নিরাপত্তা প্রদানের দায় চেপেছে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ৪৪। এ কারণে সিআইএসএফ তাদের স্পেশ্যাল সিকিওরিটি গ্রুপের কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আর্জি জানিয়েছে। বাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কর্মী সংখ্যা না বাড়ালে ভিআইপি-দের নিরাপত্তা প্রদান তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নেতাদের কাছে ভিআইপি নিরাপত্তাটা একটা মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ঘনিষ্ঠ নেতারা সহজেই এই নিরাপত্তা পেয়ে যান। মোদী জমানাতেও এর কোনও ব্যতিক্রম হয়নি।
    ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে জেড-প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আবার বিজেপির হয়ে প্রচার চালানো বাবা রামদেবও এই স্তরের নিরাপত্তা পেয়ে গিয়েছেন। মুজফফরনগরের হিংসার ঘটনা অভিযুক্ত বিধায়ক সঙ্গীত সোম, বিজেপি সহ সভাপতি ও পি মাথুরও এই তালিকায় এসেছেন। দেশের বিভিন্ন অংশে মাওবাদী মোকাবিলায় নিযুক্ত সিআরপিএফ। বাহিনীর এক পদস্থ আধিকারিক প্রশ্ন তুলেছেন, বাড়তি কর্মী না থাকলে এই বোঝা টানা তাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব। উল্লেখ্য, ২০১৩-তে সুপ্রিম কোর্ট নির্বিচারে ভিআইপি সুরক্ষা বন্দোবস্ত করার তীব্র সমালোচনা করেছিল। তা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে যে নতুন করে ভাবনাতিন্তা হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ | ২১৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৪65195
  • 'এ রাজ্যে ১৬৯৮ জন ভিআইপি-র নিরাপত্তায় ২৯৫২ জন রক্ষী বরাদ্দ করেছে সরকার। অর্থাৎ, ভিআইপিপিছু গড়ে দেড় জনের বেশি। আর আমজনতার ক্ষেত্রে? প্রতি ১৬৫৮ জন মানুষের পাহারায় মাত্র এক জন পুলিশ!' - :-(((
    তাও 'অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ভিআইপিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের খরচ সবচেয়ে কম'।
    সুপ্রিম কোর্ট-ই আশা -এই জঘন্য, অশ্লীল ব্যবস্থা-কে যদি কিছুটা মানবিক করা যায়।
    ভারতে একমাত্র বিচার ব্যবস্থাই কিছুটা কাজ করে
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:১৮65194
  • জেড প্লাস নিরাপত্তা সম্পর্কে অনেক জ্ঞান লাভ করে ঋদ্ধ হলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন