ইনি কে জানো না বুঝি ? ইনি সরস্বতী দেবী।
কোন সরস্বতী ? যার ফুলের দোকান আছে ?
আরে দুৎ ! তা কেন ? ফুলওয়ালী সরস্বতী নয় – মা সরস্বতী ।
ইনি কি করেন ?
কি করেন আবার কি ?বিদ্যা দান করেন !
ও বুঝেছি ! ঐ যে অভিনয় করে, নেচে কুঁদে - মানুষজন সব টিকিট কেটে দেখতে যায় -
দূর মুখ্যু ! বিদ্যা বললেই বুঝি অভিনেতা বুঝতে হবে, বা টিকিট কেটে সিনেমা দেখতে হবে ? তাছাড়া বুঝি বিদ্যা হয় না ?
ও ! তাহলে ?
মানে বিদ্যে শিখে নানারকম বিদ্যে সকলকে দান করছেন , লেখাপড়া শেখাচ্ছেন । ইনি আজ পর্যন্ত কত কী বিদ্যে দান করেছেন তোমরা তার খবর রাখ কি ? ওঁর সেই নম্বর বর্ধক বড়ির খবর রাখ কি ? সেই বড়ির আশ্চর্য গুণ ! আমি নিজে দেখিনি বা খাইনি কিন্তু আমাদের বাড়িওয়ালার কে যেন বলেছেন যে সে ভয়ঙ্কর বড়ি । সে বড়ি খেলে চাকরির ওষুধ, মাখলে পরে বাড়ি-গাড়ি, ঐশ্বর্য্য, আর গোঁফে লাগালে দেড় দিনে আধহাত লম্বা মান-মর্যাদার লেজ হয় ।
সে কি ! তাও কি হয় ?
আলবাৎ হয় ! বললে বিশ্বাস করবে না, কিন্তু নন্দলাল ডাক্তার বলেছে ভুলু মিত্তিরের খোকাকে ওই বড়ি খাইয়ে তার এয়া বড় চাকরি হয়ে গেছিল ।
কি আবোল তাবোল বকছেন মশাই !
বিশ্বেস করতে না চাও করো না, কিন্তু চোখে যা দেখছ তা বিশ্বেস করবে ত ? কি কান্ড হচ্ছে দেখছ তো ? ঐ দেখ মা সরস্বতীর নতুন বই তৈরী হচ্ছে। নতুন বই, নতুন নোটস, নতুন সব । একি সহজ কথা ভেবেছ ? ওই রকম আর গোটা পঞ্চাশ বই আর হাজার দশেক নতুন নোটস তৈরী হলেই উনি কোচিংসেন্টার খুলবেন ।
সব নতুন রকম হচ্ছে বুঝি ?
নতুন না তো কি ? নতুন অথচ সস্তা ! ওই দেখ বই আর ওই দেখ নোটস, বইতে কি আছে ? মায়া প্রকাশনী আছে আর হজমী গুলি আছে। নোটসের মধ্যে হজমী গুলি ভরে খুব খানিক জল মুখে নিয়ে হোঁকৎ করে যেমনি গিলে ফেলবে অমনি ফস্ করে হজমী গুলি পেটে ঢুকে পড়বে আর গ্যালগ্যাল করে গলে যাবে ।
তারপরে ?
তারপরেই তো হচ্ছে আসল মজা । হজমী গুলির মধ্যে কি আছে জান ? ব্রাহ্মীর রস আছে, কডলিভার অয়েল আছে, ত্রিফলার গুঁড়ো আছে, কালোজিরে বাটা আছে, দুব্বো ঘাসের রস আছে, আরও কত কি আছে, তার নামও আমি জানি না। যত রকম হজমের ওষুধ আছে, যত রকম ঝাঁজালো তেজালো স্মৃতিবর্দ্ধক জিনিস আছে, আশ্চর্য শৈল্পিক কৌশলে সব তিনি মিশিয়েছেন ঐ গুলির মধ্যে । সেদিন ছোট একটা গুলি ওঁর পেটে চলে গিয়েছিল শুনেছ তো ?
তাই নাকি ? তারপর হল কি ?
যেমনি গুলি পেটে চলে গেল অমনি তিনি চট্ করে বমি করে ফেলেছিলেন, নইলে কি হত কে জানে । তবু দেখছ গুলির প্রভাবে আর ঝাঁঝে মায়ের নাম-গান, মান মর্যাদা কেমন বেড়ে গেছে । তার আগে ওঁর অবস্থা ছিল দীনদরিদ্রের মত; একমনে একান্তে শিক্ষা লাভ আর জ্ঞানার্জনই ধ্যান-জ্ঞান ছিল ! সত্যি !
সত্যি নাকি ?
সত্যি না তো কি ?