এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মানব সন্ততি

    Ritam Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ মে ২০১৭ | ১৯৭৭ বার পঠিত
  • সালটা ২০২৭। দ্রিয়োপিথেক, অস্ত্রালোপিথেক থেকে শুরু করে মেসোপটেমিয়া, গ্রীক-রোমান সভ্যতা,ইউরোপের রেনেসাঁ, শিল্প বিপ্লব, হিরোশিমা নাগাসাকি, অর্থনীতির বিশ্বায়ন দেখা মানস সভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখে। কারণ, গত আঠারো বছরে একটিও মানব শিশু জন্মায়নি।পুরুষ নারী উভয়েই বন্ধ্যা।পৃথিবীর কনিষ্ঠতম মানুষটির বয়স সাড়ে আঠারো।ঠিক দুই ঘন্টা ফ্যান দের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে গিয়ে সে খুন হয়েছে এক পাগল ভক্তের হাতে। পারমাণবিক যুদ্ধ, মনসান্টো জাতীয় কর্পোরেশনের দৌলতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই দুর্ভিক্ষ, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।এর মধ্যে ব্রিটেনের অবস্থা একটু পদের। মিলিটারি শাসন দিয়ে কোনরকমে বন্যার জলের মতো উদ্বাস্তুদের আটকানোর চেষ্টা করছে সরকার।দু একটা উদ্বাস্তু মরছে বটে, কিন্তু দেশ চালাতে গেলে এরকম একটু হয়েই থাকে। ছোট্ট ঘটনা।শরণার্থীদের সাথে বাক্যালাপ করা, চাকরি/ আশ্রয় দেওয়া আইনত পাপ। রেল স্টেশনে খাঁচা ভর্তি দেখে, আর বন্ধ রেল বাসের জানলার ওদিকে পুলিশের শরণার্থী পেটানো দেখে মানুষ আজকাল ভড়কায় না।এসব নিয়ে অবশ্য থীও-র সেরকম মাথাব্যাথা ছিল না। সরকারের উঁচু পদের চাকরি, কফি, সপ্তাহান্তে একটু গঞ্জিকা আর জন্মের এক বছরের মধ্যেই মরে যাওয়া ছেলে আর ছেড়ে যাওয়া বউ জুলিয়ানের কথা ভেবে দু এক পাত্র বেশি মদ খেয়েই দিন চলে যাচ্ছিল। সরকার মাইনে তো ভালই দিচ্ছে।তাহলে অত ভাববে কেন?নেহাত প্রাক্তন বউটা একটা অতিবিপ্লবী দলের মাথা হয়েছে, শুনতে পায়। পুলিশের পোস্টার-ও পড়েছে।তারা নাকি চায় উদ্বাস্তুদের-ও সমান অধিকার থাকুক। দুসসালা, হয় নাকি? বিপ্লব টিপ্লব যে আসবে থীও-ও ছাত্র বয়সে স্বপ্ন দেখতো।ইনফ্যাক্ট সেখান থেকেই জুলি-র সাথে আলাপ।কিন্তু তারপরেই মোটা মাইনের সরকারী চাকর বলে গেলো।ব্যারিকেডের উল্টোদিক থেকে ওসব ভাল্লাগতো না।তার মধ্যে বাচ্চাটাও চলে গেলো ভাইরাল ফিভারে।নাহ, বেশি ভাবলে থীও-র মাথা ধরে।আর ভাববে না।
    এমন অবস্থায় একদিন জুলিয়ান দলবল নিয়ে এসে থীও-কে অনুরোধ করে একটা উদ্বাস্তু মেয়েকে সীমান্ত পেরিয়ে সেফ প্যাসেজ দিতে।থীওর দাদা ক্যাবিনেট মন্ত্রী।মিথ্যে বলে তার থেকে ট্রানজিট পেপার জোগাড় করতে সেরকম অসুবধে হওয়ার কথা নয়। পুরনো দল আর ছেড়ে যাওয়া স্ত্রীর মুখ চেয়ে যদি থীও এটুকু করে দেয়। বিপ্লবী দল যখন টাকা পয়সা-ও অফার করছে থীও আর না করলো না। তাছাড়া হাসলে জুলি কে আজও খুব সুন্দর লাগে।ট্রানজিটের কাগজ পত্র জোগাড় হয়ে গেলে পরে একদিন থীও,উদ্বাস্তু মেয়ে কী ,জুলিয়ান, জুলিয়ানের দলের আরেক নেতা লিউক রওনা দেয় উপকূলের দিকে।রাস্তায় একদল ভবঘুরে ছিনতাইবাজের হাতে খুন হয় জুলিয়ান, লিউক দুজন পুলিশ কে গুলি করে,গোটা দল টার পিছনে পুলিশ লাগে, কী-র আয়া মারা যায়, আর এসবের পরে থীও জানতে পারে কী পৃথিবীর একমাত্র গর্ভবতী।শুধু এটুকুতেই শেষ নয়, জুলিয়ান মারা যাওয়ার পেছনে যে আসলে তার-ই দলের লোকের হাত আছে,সেটাও আড়ি পেতে জানতে পারে থীও।জুলিয়ান নাকি বুঝতে পেরেছিলো দল থেকেই তাকে সরানোর তোড়জোড় চলছে, কী কে বলে গেছিল একমাত্র থীও কে বিশ্বাস করতে, আর থীও-র সাহায্যে একমাত্র স্বাধীন দেশ আযোরেসে বন্ধ্যাত্ব দুরীকরণ ল্যাবরেটরিতে পৌঁছতে।কিছু বিজ্ঞানী সেখানে বন্ধ্যাত্ব দুরীকরণ নিয়ে গবেষণা করছেন। কী-কে নিয়ে থীও পালায়।পুলিশ আর বিপ্লবী দলের ফিশের বিদ্রোহী সদস্য -দুদলের হাত থেকে বাঁচতে থীও-র বন্ধু জ্যাস্পারের খামার বাড়িতে আশ্রয় নেয় দুজনে। কিন্তু ফিশ বাহিনী সেখানেও পৌঁছে যায়। বাধ্য হয়ে আউসউইতজের ঢঙে বানানো বেক্সহিল উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় থীও, কী আর নবজাতক। এদিকে ক্যাম্পেও অভ্যুত্থান শুরু হয়। এরই মধ্যে এক আশ্রয় থেকে অন্য আশ্রয়, তিন অসমবয়সী মানুষ পালাতে থাকে। পেছনে বুলেটের আওয়াজ, বোমারু বিমান ফেলে রেখে। সামনে আযোরেস আর সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
    পিডি জেমসের উপন্যাস থেকে আফোন্সো কুয়ারোনের সিনেমা "চিলড্রেন অফ মেন" -এর শেষটা অবশ্য ডিস্টোপিক।মন্ত্রীর বাড়ীর ডাইনিং রুমে পিকাসোর গুয়েরনিকা টাঙ্গানো থাকে। শিল্প টিল্প-র প্রয়োজন শেষ মানুষের কাছে। মাইকেলেঞ্জেলো-র ডেভিডের এক পা ভেঙ্গে যাওয়ার লোহার রড দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয় সরকারী টাকায়। এদিকে লন্ডনের রাজপথে উদ্বাস্তু রিকশাচালককে পিটিয়ে মারে পুলিশ।মিলিটারি অফিসার বলে ঘুষ-টুষ চায় না, শুধু সেফ প্যাসেজ দেওয়ার বদলে কী কে একটু তার সাথে "ছেড়ে দিতে"। লেখিকা জেমসের ভাষায় " in a world with no future where the very words 'justice,' 'compassion,' 'society,’ 'struggle,' 'evil,' would be unheard echoes on an empty air" । পরিচালক আফোন্সো কুয়ারোন মানুষের উর্বরতাকে বেছে নেন আশাবাদের প্রতীক হিসেবে।তাই ছবিটির শেষ দৃশ্যের পরে কি হয় , সেটা দর্শকের একান্ত নিজস্ব। cliffhanger । এই সময়ের শ্রেষ্ঠ সিনেমাতোগ্রাফার ইমানুয়েল লুবিজস্কি-র ক্যামেরা মুভমেন্ট এই ছবির সম্পদ হয়ে ওঠে।টানা দৃশ্য, জিরো এডিটিং-এর জন্য মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে- কোন খবরের চ্যানেল দেখছি না তো?ডকু ফিচারের আদলে এই সিনেমাতোগ্রাফি-র জন্যেই সিনেমাটা একাধিকবার দেখা যায়।
    যদি পাঠক/পাঠিকা সিনেমাটি দেখেন অতি অবশ্যই গাড়ির দৃশ্যটি একাধিক বার দেখবেন, যার ইউটিউব লিংক --

    ----------------------------------------`
    সিনেমা- Children of Men
    পরিচালক- Alfonso Cuaron
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ মে ২০১৭ | ১৯৭৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 116.210.155.175 (*) | ০৭ মে ২০১৭ ০৪:১৬59713
  • ইন্টারেস্টিং!! নোট করলাম।

    লেখাটা কি খুব তাড়াতাড়ি একটানে লেখা? দুই এক জায়গায় কেমন যেন অসুবিধে হচ্ছে পড়তে। আর প্লীজ যদি একটু মাঝে মাঝে প্যারা ব্রেক করে দেন।
  • Ritam Ghosal | 113.77.47.167 (*) | ০৭ মে ২০১৭ ০৯:২৭59714
  • হ্যাঁ একটু তাড়াহুড়ো করে লেখা। একেবারেই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য। মূল উদ্দেশ্য ছিল সিনেমাটার কথা সবাইকে জানানো
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন