এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • গল্পঃ রেড বুকের লোকেরা

    Muradul islam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ নভেম্বর ২০১৯ | ১৮২১ বার পঠিত
  • রবিবার। সকাল দশটার মত বাজে।

    শহরের মিরপুর ডিওএইচেসে চাঞ্চল্যকর খুন। স্ত্রীকে হত্যা করে স্বামী পলাতক।

    টিভি স্ক্রিণে এই খবর ভাসছে। একজন কমবয়েসী রিপোর্টার চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলছে। কথা আর কিছুই নয়, চিরাচরিত খুনের ভাষ্য। বলার ভঙ্গিতে সাসপেন্স রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুনির ভাইয়ের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। এই ভাইটি স্বামী স্ত্রী’র সাথে থাকত। ভয়ার্ত মুখে ছেলেটি জানাচ্ছে, ঐদিন সে বাসাতে ছিল না।

    সাইকিয়াট্রিস্ট হায়দার সাহেব বিরক্তির সাথে চোখ মুখ কুচকে নিউজটি দেখছিলেন। তার স্ত্রী আমেনা আফসার রুমে এসে ঢুকতেই তিনি টিভি রিমোর্ট চেপে অন্য চ্যানেলে নিয়ে গেলেন। সেখানে ক্রিকেট খেলা চলছে। হায়দার সাহেব ভান করতে চেষ্টা করলেন যে তিনি খেলাই দেখছিলেন।

    আমেনা আফসার হায়দার সাহেবের ঠিক সামনে এসে অন্যদিকের সোফায় বসলেন। তার মুখ থমথমে। তিনি গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলেটাই তো?

    হায়দার সাহেব অবাক হওয়ার মত ভঙ্গি করে বললেন, কোন ছেলে?

    বিরক্তি চেপে আমেনা আফসার বললেন, আমি টিভি রিপোর্টের ছেলেটার কথা বলছি। ঢং করবে না। এই ছেলেটা তোমার কাছে আসতো না?

    হায়দার সাহেব আমতা আমতা করে বললেন, কোন ছেলের কথা বলছো?

    আমেনা আফসারের গলা চড়ে গেল। রাগে তিনি ফুঁসছেন। উত্তেজিত কন্ঠে বললেন, তুমি কি সবাইকে নিজের মত মনে করো? যে ছেলে তার স্ত্রীকে খুন করে পালিয়েছে সে তোমার চেম্বারে আসতো না গত কিছুদিন ধরে?

    হায়দার ঢোক গিলে বললেন, হ্যা, হ্যা, সে তো আসতই। মকবুলে হুদা। কিন্তু কিন্তু…

    কিন্তু কী?

    বিশ্বাস করো আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। সব ঠিক ঠাক মত এগুচ্ছিল। এর মধ্যে, বিশ্বাস করো, আজকে এই খবর দেখে আমি নিজেও চমকে উঠেছি।

    তোমাকে নিয়ে আমি কী করব হায়দার? তুমিই বলো? কতোবার আমি সব ঠিক করে আনি আর তুমি একটা না একটা ঝামেলা বাঁধাও। এবার আমি বাবার কাছে কী বলব? বাবা কি এটা ক্ষমা করবেন!

    হায়দার সাহেব নিরব হলেন। বাবার কথা মনে হওয়ায় তার মনেও আতংক ভর করল। যদিও শুরু থেকে বাবার ভয়েই তিনি চিন্তিত ছিলেন খবরটি দেখে, কিন্তু এখন আমেনা আফসারের কথায় সেই ভয় যেন বহুগুণে বেড়ে গেল।

    বাবা হচ্ছেন জামশেদ আফসার খান। একজন বিশ্বখ্যাত সাইকিয়াট্রিস্ট। দেশ বিদেশে কাজ করে তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন…

    হায়দার সাহেব জামশেদ আফসারের অধীনে কাজ করেছিলেন কিছুদিন। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী। জামশেদ আফসারের প্রভাব প্রতিপত্তির দিকে তিনি আকৃষ্ট হন এবং এরই মোহে পড়ে তার মেয়েকে বিয়ে করেন। তার মেয়ে আমেনা আফসার নিজেও সাইকিয়াট্রিস্ট। জামশেদ আফসারের সংঘটন পিপল অব রেড বুক সাইকিয়াট্রিস্টদেরই সংঘটন।

    এই সংঘটনের প্রধান হিসেবে জামশেদ আফিসারের পরে তিনিই কাজ করবেন বলে মনে করেন হায়দার সাহেব, যার ভালো আলী হায়দার খান।

    কিন্তু এইরকম একটা ভুল করে কি সেই স্থানে যাওয়া যাবে?

    আর জামশেদ আফসার খুবই মারাত্মক লোক, কাছ থেকে দেখেছেন হায়দার সাহেব। নীতিতে তিনি অবিচল। নীতির বিরুদ্ধ কাজ করলে তিনি তার নিজের মেয়েকেও শাস্তি দিতে দুইবার ভাববেন না। এছাড়া আরেকটি খুবই ভয়ংকর কথা হলো, অন্যায় বা ভুল করে পালিয়ে যাবার কোন উপায় নেই। আইন প্রশাসন ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে অদৃশ্য ভাবে ছড়িয়ে আছে জামশেদ আশরাফের হাত। পালানোর কোন উপায় নেই।

    হায়দার সাহেব নানা কথা ভাবছিলেন। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে। তাছাড়া তিনি আসলে বিশ্বাসই করতে পারছেন না এমন একটি ভুল তার হয়েছে।

    একসময় আমেনা আফসার উঠে বললেন, আমি একটু বের হচ্ছি।

    হায়দার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, কোথায়?

    আমেনা আফসার উত্তর করলেন, বাবার ওখানে যাচ্ছি। যে কাজ করেছো এর জন্য তো আমারই কিছু করতে হবে।

    আমেনা তার কালো গাড়িটা নিয়ে বের হলেন। জানলা দিয়ে গাড়িটা বের হতে দেখলেন হায়দার সাহেব। স্ত্রীর ব্যাপারে তার ধারণা খুব ভালো না। নিতান্ত লোভে পড়ে বিয়ে করেছিলেন। ক্ষমতার লোভ।

    আমেনা আফসার বহুগামী প্রকৃতির মহিলা। সময়ে সময়ে তিনি সঙ্গী পালটাতে পছন্দ করেন। হায়দার সাহেব এটি সহ্য করতে পারেন না। সম্প্রতি একজন বিজনেস ম্যানের সাথে সম্পর্ক হয়েছে তিনি খবর পেয়েছেন। এটি নিয়ে কয়েকদিন আগে তাদের খারাপ ধরনের ঝগড়াও হলো। এমতাবস্থায় আমেনা কি তাকে সাহায্য করবে?

    হায়দার সাহেবের অস্বস্থি হলো। তিনি যেন কিছুই ভাবতে পারছেন না।

    বিকেলের দিকে ছেলেটি এলো তার বাসায়। মকবুলে হুদা। যে আজ তার স্ত্রীকে খুন করে নিরুদ্দেশ হয়েছে বলে টিভিতে দেখাচ্ছে। হায়দার সাহেবের সামনে সে মুখ কাচুমাচু করে বসল।

    হায়দার সাহেব শান্তভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী করলে তুমি? এটাই কি আমি তোমাকে এতোদিন ধরে বুঝালাম? তুমি আমার সকল কিছু শেষ করে দিয়েছো মকবুল।

    মকবুল চোখ বড় বড় করে তাকাল হায়দার সাহেবের দিকে। কোন কথা বলল না।

    হায়দার সাহেব বলতে থাকলেন, আমি তোমাকে কী বলেছিলাম? আমি বলেছিলাম দিন দেখে কাজ করবে? আজ কি বার? আজ কি শনি মঙ্গলবার? তুমি এটা কী করলে মকবুল! এখন জামশেদ সাহেবের লোকেরা আমাকে ধরতে আসবে, তোমাকেও ধরতে আসবে।

    মকবুল জিজ্ঞেস করল, কী করবে স্যার?

    হায়দার সাহেব বললেন, কী করবে তারাই জানে।

    মকবুল বলল, স্যার পালাইয়া যাই।

    দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হায়দার সাহেব বললেন, জামশেদ সাহেবের হাত থেকে পালানোর কোন উপায় নাই মকবুল। আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। ওরা আসবে।

    ওরা আসলো সন্ধ্যায়। কালো পোষাকধারী তিনজন লোক, একটা মাইক্রোবাস নিয়ে। দুইটি লাশ নিয়ে।

    হায়দার সাহেব মকবুলকে নিয়ে বাড়ির পেছনের খোলা জায়গায় দু’টি গর্ত করে লাশগুলি মাটি চাপা দিলেন। সব কাজ শেষ হতে হতে অনেক সময় লাগল।

    নিজের স্ত্রীকে হারিয়ে হায়দার সাহেবের খারাপ লাগল না, খারাপ লাগার কথাও না অবশ্য। যে স্ত্রী তাকে ফাঁসানোর জন্য এমন ষড়যন্ত্র করতে পারে তার জন্য খারাপ লাগার কোন মানে হয় না।

    মকবুলের কিছুটা খারাপ লাগল তার ভাইটির জন্য। তার ভাই যে এভাবে দিন তারিখের গোলমাল লাগিয়ে তাকে ভুল বুঝাবে আরেকজনের হয়ে, এটা সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। আর এইজন্যই ভুল দিনে সে খুন করল তার স্ত্রীকে। যে খুন কোন কাজেই লাগল না রেড বুকের লোকদের।

    অন্যদিকে, মেজাজ খারাপ হয়েছে জামশেদ আফসারের। এই খুনটি ঠিকঠাক মত করার পরিকল্পনাই করেছিল আলী হায়দার। তিনি জানতেন। সব ঠিকঠাক হলে মঙ্গলবারে লাল তারকাগুলি যখন নিকঠবর্তী হতো পৃথিবীর, সেদিনই লক্ষণযুক্ত মেয়েটির আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যেত, আর তার রক্তপাতের সাথে সাথে খুলে কালো দুনিয়ার প্রবেশদ্বার। জামশেদ আফসার অপেক্ষা করে ছিলেন। অনেকদিনের অপেক্ষা। কিন্তু তারই মেয়ের নির্বুদ্ধিতার কারণে সব ভেস্তে গেল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ নভেম্বর ২০১৯ | ১৮২১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হেলেন - Muradul islam
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন