এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান

    Saikat Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ৮৮২৭ বার পঠিত
  • হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান আদতে একই প্রকল্পের অংশ। আজকের সরকারি হিন্দি একটি অর্বাচীন ভাষা, তথাকথিত নব্য হিন্দুত্বের হাত ধরেই তার জন্ম। দেশভাগের আগে একটি-পৃথক-ভাষা হিসেবে হিন্দির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণে সুভাষচন্দ্র বসু অখণ্ড ভারতবর্ষের যোগাযোগরক্ষাকারী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন 'হিন্দুস্তানি'কে, হিন্দি নয়। হিন্দি বা উর্দু নামের আলাদা কোনো ভাষা সে সময় ছিলনা। শব্দদুটো ছিল, তারা লিপির পার্থক্য বোঝাতে হিন্দুস্তানির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত মাত্র। আর এই হিন্দুস্তানি কোনো নির্দিষ্ট ভাষা ছিলনা, ছিল একটি ছাতা মাত্র, যার মধ্যে নানারকম ভাষা বা কথনরীতি ঢুকে ছিল। আজ যাকে উর্দু বলি, সে তো ছিলই, আরও ছিল খড়িবোলি, আওধী, ভোজপুরি, মৈথিলী ইত্যাদি প্রভৃতি।

    এ হেন সেকুলার এবং বহুমাত্রিক হিন্দুস্তানিকে সরিয়ে হিন্দি নামক অর্বাচীন একটি ভাষার উদ্ভব হয় দেশভাগের পরে ( প্রকল্পটি আগে থেকেই চালু ছিল, কিন্তু সে জটিলতায় এখানে ঢুকছিনা)। এর দুটি কারণ ছিল। একটি ডাহা সাম্প্রদায়িক। যেজন্য উর্দু এবং হিন্দি দুটি আলাদা ভাষা তৈরির দরকার হল। যেন হিন্দি হিন্দুর ভাষা এবং উর্দু মুসলমানের। ভারত এবং পাকিস্তান তৈরির সঙ্গে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন একদম খাপে-খাপে যুক্ত। এই পদ্ধতিতেই ফার্সি শব্দ তাড়িয়ে, তৎসম শব্দ ঢুকিয়ে কৃত্রিম 'হিন্দি' নামক একটি ভাষা তৈরি শুরু করা হয়। প্রক্রিয়াটি দেশভাগের আগে থেকেই চালু ছিল, কিন্তু দেশভাগের পর সেটা সর্বশক্তিমান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প হয়ে দাঁড়ায়। দুই নম্বর কারণটি এর সঙ্গেই আসে। হিন্দি যেহেতু 'ভারত'এর ভাষা, তাই, সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার উপরে কার্যত 'রাষ্ট্রভাষা' হিসেবে হিন্দি চাপানো শুরু হয়। একটু একটু করে আওধী, মৈথিলী, ভোজপুরির মতো ভাষাগুলিকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্যান্য উত্তর ভারতীয় ভাষাগুলির ক্ষেত্রে, পরোক্ষে হলেও, ধংসের পরিকল্পনাটি একই। এবং একই সঙ্গে ভারতকে একটি বহুজাতিক যুক্তরাষ্ট্রের বদলে এক-জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে চালানো শুরু হয়। 'এক ভাষা, এক সংস্কৃতি', 'বোম্বে আর ক্রিকেট আমাদের ঐক্যের প্রতীক', ইত্যাদি। বৈচিত্র্য বাদ দিয়ে স্রেফ ঐক্যের উপর জোর দেওয়া হয়। রাজভাষা প্রসার সমিতি সরকারিভাবে এবং বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আধা-সরকারি ভাবে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। বোম্বে সিনেমা খুব সূক্ষভাবে 'হিন্দু লব্জ' আর 'মুসলমান লব্জ'কে আলাদা করে দেয়। দেশবিভাগের আগে মান্টো হিন্দুস্তানি সিনেমার চিত্রনাট্য লিখতেন, কস্মিনকালেও তাঁর তাতে কোনো অসুবিধে হয়েছে বলে শোনা যায়না। কিন্তু ক্রমশ জানা যায় মান্টো যে উর্দু লেখক, আর প্রেমচাঁদ হিন্দি লেখক। এইসব তথ্য খুব সিস্টেমেটিকালি আমরা জানতে শুরু করি।

    এই প্রকল্প বিনা বাধায় হইহই করে চলেছিল এমন না। দেশভাগ যেমন বাকি সবাইকে বাদ দিয়ে কয়েকজন মাথার সিদ্ধান্তে প্রায় পিছনের দরজা দিয়ে সেরে ফেলা গিয়েছিল, এটা সেরকম হয়নি। ১৯৪৪ সালেও আজাদ-হিন্দ-ফৌজে সুভাষ চন্দ্র বসু রোমান হরফে হিন্দুস্তানির প্রচলন করেছিলেন যোগাযোগের ভাষা হিসেবে। ১৯৪৮ সাল থেকে সিপিআই এক-জাতি-এক-ভাষা তত্ত্বের বিরোধিতা করতে থাকে। পার্টির মধ্যেই একদিকে আসতে থাকে উর্দুকে পুনরন্তর্ভুক্তির দাবী, অন্যদিকে রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমুখরা খড়িবোলি-আওধী-ব্রজভাষার সীমান্ত অনুযায়ী নতুন রাজ্য তৈরির কথা বলেন। ১৯৪৯ সালে সিপিআইএর নানা দলিলে খুব স্পষ্ট করেই ভারতকে একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র (মাল্টিনেশন) বলা হয়। এবং মারোয়াড়ি-গুজরাতি পুঁজিপতিদের আধিপত্যের ছক হিসেবে এক-ভাষা (হিন্দি) কে তুলে ধরার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মাতৃভাষায় বলতে দেবার দাবীতে কক্ষত্যাগও করেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে আঞ্চলিকভাবেও ভাষাগত জাতিসত্ত্বার দাবী মাথাচাড়া দিতে থাকে। ১৯৫২ সালে তেলুগু জাতিসত্ত্বার অধিকারের দাবীতে স্বাধীন ভারতে আমরণ অনশনে প্রাণ দেন শ্রীরামালু। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন অন্ধ্র রাজ্য ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ওই দশকেই জাতিসত্ত্বার লড়াই লড়ে বাংলার মানুষ এবং বামপন্থীরা বাংলা-বিহার সংযুক্তির পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেন। ১৯৬১ তে মাতৃভাষার দাবীতে প্রাণ দেন বরাকের মানুষ। এক-জাতি-এক-রাষ্ট্র তত্ত্বটি আপাতদৃষ্টিতে পরাস্ত হয় এবং ভাষাই রাজ্যগঠনের মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

    এতে করে অবশ্য আগ্রাসন তার চরিত্র বদলায়নি। পদ্ধতি বদলেছিল মাত্র। এর মূল কারণ নিহিত ছিল 'শক্তিশালী কেন্দ্র'তে। সমকালীন একজন রাশিয়ান লেখক লিখেছিলেন, তাঁদের মিউনিসিপ্যালিটিগুলি ভারতের রাজ্য সরকারের থেকে বেশি ক্ষমতা রাখে। কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব এক আলাদা বিষয়, সেটায় এখানে ঢুকবনা, এখানে পয়েন্টটা হল, 'শক্তিশালী কেন্দ্র'র নেতৃত্বে অর্বাচীন হিন্দিকে তৈরি করা শুরু হয়। এর আগে কংগ্রেসি হুইপ সত্ত্বেও মাত্র এক ভোটে সরকারি ভাষা হিসেবে 'হিন্দি'কে চয়ন করা হয়। দক্ষিণী একটি সংবাদপত্র লিখেছিল, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড হস্তক্ষেপ না করলে হিন্দি ভোটে হারত।

    পঞ্চাশের দশকের নতুন হিন্দি ভাষা বলাবাহুল্য খোঁড়াচ্ছিল। ফার্সি এবং অন্যান্য 'বিদেশী' শব্দ বিতাড়ন করে সংস্কৃত শব্দ ঢোকানো প্রচুর হাস্যরসেরও সূচনা করে। বহুল প্রচলিত 'উজির'কে তাড়িয়ে 'সচিব', 'মজলিশ' বা 'দরবার'কে তাড়িয়ে 'লোকসভা', এরকম হাজারো শব্দ তৈরি করা হচ্ছিল সে সময়। ভাষায় এগুলির চল ছিলনা, ফলে তথাকথিত হিন্দিভাষীরা ব্যবহারও করতে পারতেননা বা জানতেননা। দক্ষিণী সংবাদপত্রে এই নিয়ে ঠাট্টা করে বলা হয়, হিন্দিভাষীরা নেতারা নিজের ভাষায় বক্তব্যই রাখতে পারেননা। কথাটা ঠাট্টা হলেও একেবারে মিথ্যে ছিলনা। হ্যারিসন ওই দশকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, সেই সময়ের শিক্ষিত বাঙালিরা ইংরিজির পাশাপাশি নিজের ভাষা জানতেন, অন্তত রবীন্দ্রসাহিত্যে দীক্ষিত ছিলেন। কিন্তু নব্য 'হিন্দি'ভাষীদের সেসব চল ছিলনা। মান্টো-চুঘতাই-ফয়েজ আর হিন্দি নয়, ফলে সে ঐতিহ্য থেকে তাঁরা বঞ্চিত। আওধীতে লেখা লক্ষৌএর মিঠে গজল-ঠুংরি আর তাঁদের নয়। মৈথিলীর অপার্থিব গীতিকবিতাকে হিন্দি তাঁরা বলতে পারেননা। অতএব হিন্দি তৈরি করা শুরু হয় কৃত্রিম, সংস্কৃতবোঝাই রসকষহীন একটি ভাষা হিসেবে।

    এই কৃত্রিম, অর্বাচীন ভাষাটিকে 'জাতীয়' ভাষা হিসেবে তুলে ধরা সহজ ছিলনা। সেজন্য প্রথমে বহু-জাতির পরিবর্তে এক-জাতির একটি প্রকল্প হাজির করা জরুরি ছিল। একাধিক যুদ্ধ এই প্রকল্পটিকে তৈরি করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধে, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিও ভেঙে যায়। যদিও তাত্ত্বিকভাবে কারণ ছিল আলাদা, কিন্তু অন্তত যুদ্ধটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল বলতে কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। ১৯৭১ এর বাংলাদেশ যুদ্ধ বিষয়টিকে আরও একধাপ এগিয়ে দেয়। ইন্দিরা গান্ধী কার্যত 'জাতির নেত্রী' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। 'জাতিয়তা' হিসেবে বাঙালি বা গুজরাতি নয়, ভারতীয়ত্ব প্রাধান্য পেতে শুরু করে। বহু-জাতির বিপরীতে এই 'জাতিয়তা' এবং তার সঙ্গে হিন্দির সংযোগস্থাপনের কাজে বোম্বের চলচিত্র শিল্পও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো রাজভাষা প্রসার সমিতি নয়, এক এবং অদ্বিতীয় বোম্বের উদ্যোগেই 'ভারতীয়' হিসেবে 'হিন্দি' সিনেমাকে উপস্থাপন করা শুরু হয়। এটা একেবারেই বেসরকারি পুঁজির জয়যাত্রা নয়, ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্র প্রত্যক্ষভাবে বিষয়টায় সহযোগিতা জুগিয়েছিল। নেহরু পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই হিন্দি সিনেমার বিশ্বজয়ের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন। তাঁর সক্রিয় উদ্যোগ রীতিমতো ঐতিহাসিকভাবে নথিভুক্ত।

    অনেকে অবশ্য বলেন, হিন্দি সিনেমা ছিল 'ইনক্লুসিভ'। উর্দু জবানকে সে নিজের অক্ষে স্থান দিয়েছিল, 'বিশুদ্ধ' হিন্দিকে নয়। কিন্তু, বস্তুত হিন্দি সিনেমা খুব স্পষ্ট করে হিন্দি-উর্দু বিভাজনকে তুলে ধরেছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের যোগাযোগ স্পষ্ট করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি 'উমরাও জান' এর মতো সিনেমা, যেখানে উর্দু জবানকে ব্যবহার করা হয়েছে মুসলমান খানদানির সঙ্গে যোগ করে। এটি নিঃসন্দেহে 'বাস্তবতা'র কারণে হয়নি। কারণ বাস্তবতা হল সিনেমায় বর্ণিত এলাকার ভাষা ছিল আওধী। ওই অঞ্চলেই ওয়াজিদ আলি শা লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত বন্দিশগুলি, যা কখনই কথাকথিত হিন্দি বা উর্দু নয়। অবশ্য লক্ষৌতে প্রায় সমসময়েই কাটিয়ে গেছেন গালিবের মতো কবি, তিনি আওধীতে লেখেননি, যদিও তাঁর ভাষাও নিঃসন্দেহে শিক্ষিত সমাজ বুঝত। কিন্তু গালিব নিজের ভাষাকে আখছারই 'হিন্দি' বলেছেন। সে ভাষা ছিল সুন্দর ও পালিশ করা। সুমিত সরকার বলেছেন এই শীলিত ভাষায় হিন্দু ও মুসলমানদের সমান অধিকার ছিল। ফলে উর্দু=মুসলমান, হিন্দি=হিন্দু -- এই সমীকরণদ্বয় মোটেই বাস্তবসম্মত নয়, কিন্তু ভারত এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের মতো বোম্বে সিনেমাও এই একই বস্তুকে দাগ কেটে জনমানসে গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছিল।

    ফলে যুদ্ধ, সরকারি ভাষা, বোম্বে সিনেমা, এসবের যোগফলে গোটা সমীকরণটি দাঁড়ায় এরকমঃ ভারতবর্ষ বহুজাতিক দেশ নয়, একটিই জাতি। তার রাজভাষা (এই শব্দটি খুব সুকৌশলে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে) হল হিন্দি। ভারতের জাতিয়তার মূল সূত্র যেমন পাকিস্তান-বিরোধিতা (অর্থাৎ মূলগত সাম্প্রদায়িকতা), তেমনই রাজভাষার মূল সূত্র হল উর্দুর বিপরীতে সংস্কৃত নিয়ে দাঁড়ানো (সেই একই সাম্প্রদায়িকতা)। ভারতের ঐক্যের সূত্র যেমন শক্তিশালী কেন্দ্র, তেমনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ভাষা। আসমুদ্র হিমাচল যতবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাত মুঠো করে শপথ নিয়েছে, যতবার দেব আনন্দ থেকে অমিতাভ হয়ে শাহরুক খানে মুগ্ধ হয়ে 'গুরু' বলেছে, ততবারই এই মূলসূত্রগুলি গেঁথে গেছে জনতার বুকে। আধুনিক হিন্দি যেমন একটি শিকড়হীন ভাষা, ভারতের শক্তিশালী এককেন্দ্রিক (বৈচিত্র্যের সমাহারের বিপরীতে) 'জাতিয়তা' যেমন একটি কয়েক দশকের তৈরি করা ডিসকোর্স, একই ভাবে বোম্বের সিনেমাও সামগ্রিকভাবে একটি অলীক (রিয়েলিজমের বিপরীতে) জগতের সিনেমা।

    এই এক-জাতি-এক-ভাষা ডিসকোর্স দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হয়েছে। যুদ্ধ-সিনেমা-ক্রিকেট এবং সরকারি উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরেই চালু ছিল। মতাদর্শগত আধিপত্য তৈরি হতে সময় লাগে। অবশেষে আশির দশকে এসে পুরো আধিপত্যের গল্পটি হয়ে ওঠে আরও সরাসরি। দূরদর্শনে চালু করা হয় 'জাতীয় কার্যক্রম' এর বাধ্যতামূলক হিন্দি শিক্ষাক্রম। এর আগে পর্যন্ত রেডিওর জমানায় 'স্থানীয় সংবাদ' এবং 'দিল্লির খবর' দুইই প্রতিটি জাতির ভাষায় প্রচার করা হত। খোদ দিল্লি থেকেই শোনা যেত গোটা দেশের খবর। টিভি এসে এক ধাক্কায় 'জাতীয় কার্যক্রম'= হিন্দি/ইংরিজি করে দিল। এক-জাতি-এক-ভাষা তত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হল। তবে এবার আর শুধু হিন্দি নয়, তার সঙ্গে আস্তে আস্তে ঢুকল আরেকটি যোগাযোগরক্ষাকারী ভাষা -- ইংরিজি। সেটা অবশ্য আরও একটু প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে আসে। ইন্দিরা গান্ধির জমানায় শিক্ষাকে রাজ্য তালিকা থেকে সরিয়ে যুগ্ম তালিকায় নিয়ে যাওয়া হয়, তৈরি হয় কেন্দ্রীয় বোর্ড, যার মাধ্যম মূলত ইংরিজি। পরবর্তী কয়েক দশক শিক্ষার আঞ্চলিকতাকে ধ্বংস করে নতুন এই 'রাজভাষা'র বিজয়ের দশক। ক্রমশ এই দুই ভাষায় তৈরি হবে গাদা-গাদা 'জাতীয়' চ্যানেল, তৈরি হবে গাদা 'কেন্দ্রীয়' বোর্ডের বিদ্যালয়। আঞ্চলিকতাকে অগ্রাহ্য করে 'ভারতীয় জাতিয়তা'র হুঙ্কারও সর্বোচ্চ গ্রামে পৌঁছবে ধীরে-ধীরে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও নব্বইয়ের দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র শব্দটা কার্যত অচ্ছুত হয়ে যাবে। রাজ্যগুলির একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়াবে বিদেশী পুঁজি আকর্ষণ করার জন্য কামড়াকামড়ি। নিজের জাতির বা ভাষার হয়ে কথা বলার একমাত্র নাম হবে 'প্রাদেশিকতা'। ভুলে যাওয়া যাবে, ভারতে কোনো প্রদেশ নেই। ভারত নেশন-স্টেট নয়, যুক্তরাষ্ট্র, বহু জাতির বহু জাতিয়তার সমন্বয়। সেই জন্যই এই অঙ্গগুলিকে 'রাজ্য' বলা হয়, 'প্রদেশ' নয়।

    আধিপত্য অবশ্য এতে থামবেনা। এক-জাতি-এক(বা দুই)-ভাষা জিগিরের পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ হল 'ঐক্য'এর অন্তরায় খুচরো 'প্রাদেশিকতা'কে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া। প্রথমে তা আসে ভাষার উপরে। এ কোনো অলীক কল্পনা নয়। মৈথিলী বা ভোজপুরি আজ প্রান্তিক। এমনকি বামপন্থীদের পোস্টারবালক বেগুসরাইয়ের ছেলে কানহাইয়া কুমারও আর বেগুসরাইয়ের মৈথিলী বলেননা, প্রাত্রিষ্ঠানিক হিন্দিতে কথা বলেন, একটু 'বিহারি' টান সহ। বাঙলার বিপ্লবী অবিপ্লবী নির্বিশেষে রাজনীতিকরা বিহারি শ্রমিকদের ভাষাকে 'সম্মান' দিয়ে যখন তাঁদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে যান, তখন ভুলে যান, যে, এ একেবারেই একজন ওড়িয়ার ভাষাকে সম্মান করে তার সঙ্গে অসমীয়া বলার মতো ব্যাপার । কারণ বেশিরভাগ বিহারি শ্রমিকেরই ভাষা হিন্দি নয়, তাঁদের ওটা আলাদা করে শিখতে হয়েছে, এবং সেই কারণেই তাঁদের ভাষা অবলুপ্তপ্রায়।

    গোটা খন্ডিত ভারতবর্ষ জুড়েই এই হিন্দি-ইংরিজি যুগলবন্দী এক শিকড়হীন অদ্ভুত 'ঐক্য'এর ধারণার জন্ম দিয়েছে। বোম্বে, ক্রিকেট আর পাকিস্তান-বিরোধিতা (অংশত বাংলাদেশ) ছাড়া এর আর কোনো জমিগত ভিত্তি নেই। বোম্বের চড়া দাগের গান, নাচ আর মোটামোটা ডায়লগ ছাড়া এর কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নেই। সেই কারণেই হিন্দির জায়গায় ক্রমশ ইংরিজির ঢুকে পড়ায় এর কোনো অসুবিধেও নেই, কারণ রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্যই এর নেই। আদ্যন্ত সাম্প্রদায়িক উৎসের এই আধিপত্যমূলক শিকড়হীন 'ভাষা' তৈরির প্রক্রিয়াটিতে উত্তর-ভারতের বুদ্ধিজীবীরা বিশেষ বাধা দেননি (কিছু বামপন্থী এবং কিছু তথাকথিত উর্দুভাষীর বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ ছাড়া)। তার ফল হিসেবে গোটা ভারত রাষ্ট্র জুড়ে এই শিকড়হীনতার প্রচার, প্রসার এবং গ্লোরিফিকেশন চলেছে এবং চলছে। এবং এই প্রক্রিয়ায় গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক এই রাষ্ট্রের বহুজাতীয় ঐতিহ্যগুলি। ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, যাপনের বৈচিত্র্য, সবকিছু।

    চল্লিশের শেষে বা পঞ্চাশের শুরুতে সিপিআই এর তাত্ত্বিক রামবিলাস শর্মা লিখেছিলেন, রাষ্ট্রভাষার দাবী ভারতীয় বৃহৎ পুঁজির সাম্রাজ্যবাদী এবং ঔপনিবেশিক অভিব্যক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। নানা বর্ণের কমিউনিস্টদের অবস্থান গত ষাট-সত্তর বছরে অনেক বদলেছে, বদলেছে লব্জ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্ক সম্পর্কে মৌলিক অবস্থান মোটের উপর একই আছে। তবুও তাঁদের মুখেও আর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধতার লব্জ আর শোনা যায়না। হেজিমনি আর প্র্যাগম্যাটিজম বড় মায়াবী জিনিস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ৮৮২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৪:০১48177
  • ওহ, আরেকটা কথা বলার জন্য ফিরে আসলাম। ভালো লাগেনি 'পুরোটা কোট করলেই হত'টাও। আমি তো কোথাও লুকোছাপা করিনি, পাণ্ডিত্যও দেখাইনি। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা। যাই হোক। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকব।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৪:১৫48178
  • আদা-জল লেখার জন্য দুঃখিত। আমি লেখার সময় কোনো কারণে ওটা আদা-জল পড়েছিলাম। বাদ্দিন। :-)

    কিন্তু হ্যারল্ড কাওয়ার্ড কী বলেছেন বুঝলাম না। তিনি তো সম্পাদনা করে প্রবন্ধটি ছেপেছেন। সেখানে তো স্পষ্টতই আমি যা লিখেছি সেই কথাই লেখা আছে।

    আর প্রসঙ্গত প্রায়োরিটির যে পার্থক্য বর্ণনা করা হয়েছে, বাংলায়ও তেমনই হয়েছিল। ফার্সি শব্দকে তাড়িয়ে তৎসম শব্দ ব্যবহার শুরু হয়েছিল। পরে নজরুল ইত্যাদিরা এসে আবার প্রচুর ফার্সি শব্দ যোগ করেন। সংস্কৃত এবং ফার্সির প্রায়োরিটি, এই নিয়ে দ্বন্দ্ব বাংলায়ও ছিল, তাতে পূর্ব এবং পশ্চিমবাংলার ভাষাকে আলাদা করে ফেলতে হয়নি।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৪:৩৯48179
  • হিন্দি আর উর্দুর গ্রামার আর সেন্টেন্স স্ট্রাকচার তো একই। এমনকি প্রচুর শব্দও কমন, আগে আরো বেশি কমন শব্দ ছিল আন্দাজ করছি। সেক্ষেত্রে দুটোটে কি আদৌ আলাদা ভাষা বলা যায়? আলাদা ভাষা হওয়ার ক্রাইটিরিয়ার একটা চেকলিস্ট আছে। সেটা কারোর কাছে আছে?

    আমরা যখন মহাভারত দেখছি ছোটবেলায়, তখন প্রথম পরন্তু শব্দটা শুনলাম। পরে দেখলাম ওরা কিন্তু শব্দও ব্যবহার করছে। তার আগে লেকিন, মগর জানতাম।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৪:৫৩48180
  • মুঘল দরবারে টার্কিশ, ফারসী, আরবী(?), হিন্দাভী চলতো মনে হয়। উর্দু বোধয় অনেক পরে এসেছে। তাহলেও রাজপুত রাণীদের সঙ্গে কোন ভাষায় কথা বলতেন?
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.169 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৫:২৮48155
  • লেখাটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। তিনটে জায়গায় খটকা লাগল। তার দু'টো মূল লেখায়, একটা লেখকের মন্তব্যে।

    ১. "১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণে সুভাষচন্দ্র বসু অখণ্ড ভারতবর্ষের যোগাযোগরক্ষাকারী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন 'হিন্দুস্তানি'কে, হিন্দি নয়। হিন্দি বা উর্দু নামের আলাদা কোনো ভাষা সে সময় ছিলনা।" - ডাঁহা ভুল তথ্য যা সৈকতবাবুর থেকে আশা করিনি। উর্দু শব্দের অর্থ সেনাছাউনি। মুঘলদের সেনাছাউনিতে দেশীয় ও ফারসি ভাষী সেনাদের মধ্যে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসেবে এটা ব্যবহৃত হত বলে এটার নাম উর্দু। কিন্তু সেনাছাউনিতে ব্যবহৃত হত বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে এটা শুধু সেনাছাউনির ভাষা। উর্দু মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশের প্রধান প্রচলিত ভাষা ছিল। পরবর্তীতে এই উর্দু ভাষারই বর্ণমালা পরিবর্তন করে নাগরী লিপি চালু হয় এবং আরবি-ফারসি শব্দ বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে হিন্দি ভাষা তৈরি করা হয়। নাগরী লিপির নামের আগে 'দেব' শব্দ যোগ করে এর উপর দেবত্ব আরোপ করা হয়েছিল। আর এই কাজ করা হয়েছিল এই ভুল বিশ্বাস থেকে যে উর্দু নাকি মুসলমানের ভাষা! শাহজাহানের আমলে সেনানিবাসগুলোকে ডাকা হত 'উর্দু-ই-মুহল্লা' বলে।

    ২. এই যে ভাষার সংস্কৃতায়ন এর মূল পাণ্ডা হল ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতরা। এর মূল কারিগর হচ্ছেন 'প্রাতঃস্মরণীয়' বিদ্যাসাগর। একই কায়দায় তিনি বাংলা ভাষা থেকে যবনী মিশেলের আরবি-ফারসি ঝেঁটিয়ে বিদায় করে গুচ্ছের সংস্কৃত শব্দের আমদানি করেন। তার পর থেকেই প্রমিত বাংলা এলিটদের ভাষা হিসাবে গণ্য হয়। এবং সেটা আজও চলেছে।

    ৩. বোম্বে প্ল্যান নিয়ে সৈকতবাবু যা লিখেছেন তাও অর্ধসত্য। প্রকৃত তথ্য হল In the summer of 1945, Birla and Tata led an Indian business delegation to Britain and the U.S.A., and agreements were concluded during that year between Birla and Nuffield (setting up Hindustan Motors) and Tata and Imperial Chemicals. At the same time, bourgeois leaders were quite willing to accept or even urge Indian state investment in sectors like heavy industries, power, irrigation, etc., where initial profits were bound to be low, even while haggling over specific types of state intervention and complaining about neglect or too much controls. The 'Bombay Plan' of January 1944 drawn up by India's leading businessmen (including J.R.D. Tata, G.D.Birla, P. Thakurdas, Shri Ram, and Kasturbhai Laibhai) visualized a doubling of the per capita national income in fifteen years through quick development of basic industries. To quote Kosambi's contemporary analysis again, the bourgeoisie 'needs Nehru's leadership', just as in previous periods of mass struggle it bad been intelligent enough 'to exploit for its own purposes whatever is profitable in the Mahatma’s teachings and to reduce all dangerous enunciations to negative philosophical points'. সুমিত সরকার, মডার্ন ইন্ডিয়া।
  • sm | 2345.110.676712.188 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৫:২৯48181
  • তাঁদের সঙ্গে কথা বলার দরকার পড়তো কি?
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.105 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৬:১৮48182
  • বলেছিলাম আর আসব না। কিন্তু সৈকতবাবু যেহেতু প্রশ্ন করেছেন সেহেতু উত্তর দেওয়ার জন্য শেষবারের মতো আসতেই হল। হ্যারল্ড কাওয়ার্ড আলাদা করে দাউদ রাহবার সম্পর্কে কিছুই বলেননি, শুধু বইটির ২৭৩ পাতায় (২০০৩ সংস্করণ) তাঁর পরিচিতি দিয়েছেন সম্পাদক হিসাবে। লেখাটিতে তিনটি রেফারেন্স আছে। তার ২ ও ৩ নম্বর রেফারেন্সের উল্লেখ আমি এখানে করেছি। ২ নম্বর রেফারেন্স হিসাবে স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন The Linguistic Survey of India-এর স্ন্যাপশট দিয়েছি এবং ৩ নম্বর রেফারেন্স হচ্ছে পিটার হার্ডি, The Muslims of British India। এগুলো ভুল কিনা, হলে কেন ভুল, লেখক এগুলো পড়েছেন কিনা নাকি শুধু নিবন্ধটাই পড়েছেন তা আমি জানি না, জিজ্ঞাসাও করিনি। যখন স্ন্যাপশট দিয়েছিলাম তখনই জিজ্ঞাসা করা যেত যে এটা কোন বইয়ের অংশ। উত্তরও একই আসত। কিন্তু কোট করার পর 'হুঁ হুঁ বাওয়া তোমার দৌড় জানি' মার্কা কথা বলে পুরো লেখাটাকেই ''অপকর্ম' বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনও সঙ্গত কারণ দেখতে পাইনি। বিশুদ্ধ নিজের পাড়ায় দাদাগিরি ছাড়া আর কিচ্ছুটি মনেও হয়নি। বাদ দিন আপনিও।
  • taa bote | 450112.129.4590012.55 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৭:০৪48183
  • কথাটা কিছুটা ঠিক, তবে কিনা এই আপনার টোনটাও কিছুটা 'হুঁ হুঁ বাওয়া চাট্টি ভাট মেরে আমার কাচে সুবিদে হবে না' টাইপ হচ্চিল।
    (গুরুর একটা সুবিধে নানা মতের গুণি লোক থাকায় সব দিকের এজেন্ডাগুলো লজিকালি জানা যায়, একটা রিলেটিভলি লেস বায়াসের ন্যারেটিভ বানান যেতে পারে।
    তবে কি, নিউট্রাল ন্যারেটিভ বোধয় কিছু হতে পারে না, বায়াস সন্ভবত থাকতেই হবে।)
    আপনেরা দুজনেই আর অন্যেরা মার্দাঙ্গা না করে বক্ত্ব্য বিনিময় কর্লে সবাই উপকৃত হয়। খ ও আই ও চাট্টি কতা বল্লে কতই না ভাল হত!
  • রঞ্জন | 232312.176.9007812.107 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৭:৩২48184
  • এই দরকারি লেখাটিতে আমার দু'পয়সাঃ
    উর্দূ ভাষাটির সৃষ্টি ভারতে । এলিট/সরকারি ভাষা ফার্সির ইতরজনের বোলির সঙ্গে মিশ্রণে। শুধু লিপি এবং 'উল্টি জুবান'ই (ডানদিক থেকে বাঁদিকে লেখা) নয় , ড্যাশ দিয়ে দিয়ে ফার্সি সম্বন্ধ পদ ইত্যাদির প্রয়োগে।
    উদাহরণঃ পরবরদিগার-এ -আলম, উজির -এ -আজম, উজির-উল-মুলুক, । এই 'of' বোঝাতে এ/উল/উর ইত্যাদির প্রয়োগ কোনমতেই হিন্দি নয় ।
    আম জনতার ভাষা হয়ে উঠল হিন্দুস্থানি। অর্থাৎ হিন্দির সংগে উর্দুর মিশ্রণ। মানে উর্দু যেন বাংলা সাধুভাষা, তৎসম শব্দ বেশি। আর হিন্দুস্থানি যেন বাংলা চলিত ভাষা তদ্ভব শব্দ বেশি, বিশেষ করে ক্রিয়াপদে। হিন্দুস্থানিতে উর্দুর সম্বন্ধ পদ এর প্রত্যয় গুলো (উল/এ/উর) চলে গেল। খালি লিপি নয় , শেষের চন্দ্রবিন্দুর জায়গায় 'ন' লেখা ও বলা শুরু হল।
    যেমনঃ
    আকাশ= আসমান (হিন্দি)= আসমাঁ (উর্দু)
    আসমাঁকে নীচে, আজ আপনে পিছে, প্যার কী জহাঁ, বসা কে চলে।
    খড়িবোলি হিন্দি যেন সাধুভাষায় কথা বলাঃ কর্ণধার, সত্বর তরণী আনয়ন কর।
    স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে ভারি বিতর্কঃ হিন্দুস্থানি ? নাকি খড়িবোলি হিন্দি?
    দুদিকেই সমান ভোট পড়ল। সম্ভবতঃ ১৬=১৬। শেষে কমিটির চেয়ারম্যান ডঃ রঘুবীরের কাস্টিং ভোটে খড়িবোলি জিতল। এর পেছনের চিন্তা অবশ্যই সাম্প্রদায়িক এবং হেজিমনিস্টিক--যেটা সঠিকভাবে লেখাটির মূল প্রতিপাদ্য।
    তবেঁ মানিক/তারাশংকর যেমন সাধু ও চলিত দু'রকম ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেই বাংলা লিখেছেন -- এখনকার কোন লেখকই বোধহয় লেখেন না --তেমনি প্রেমচন্দ থেকে শুরু করে অনেক বড় লেখকই দুটোতেই লিখেছেন।
    ধীরে ধীরে খড়িবোলি হিন্দি গোড়ার হাস্যকর চেহারা বদলে জায়গা বানিয়ে আজ স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
    দুটো ভাষার স্পষ্ট আলাদা চেহারা ধরা পড়ে কবিতার জগতে ।
    পাকিস্তানের কমিউনিস্ট কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজ এর উর্দু ও হিন্দুস্তানি--দুটোই দেখাচ্ছি।

    " দিল মেঁ অব ইয়ুঁ তেরে ভুলে হুয়ে গম আতে হ্যাঁয়
    জৈসে বিছড়ে হুয়ে কাবে মেঁ সনম আতে হ্যাঁয় ।" (হিন্দুস্তানি)
    "তুমহারী ইয়াদ কে জব জখম ভরনে লগতে হ্যাঁয়
    কিসী বহানে তুমহে ইয়াদ করনে লগতে হ্যাঁয় "।
    (হিন্দুস্তানি)
    "গুলশন-এ ইয়াদ মেঁ আজ দম-এ-বাদ-এ-সবা
    ফির সে চাহে কি গুল-অফশাঁ হো তো হো জানে দো। (উর্দু)
    "করতে হ্যাঁয় জিসপে তয়ন কোই জুর্ম তো নহীঁ
    শৌক-এ-ফিজুলো-উলফত-এ-নাকাম হী তো হ্যায়। (উর্দু)

    দুষ্যন্তকুমার খড়িবোলি হিন্দিতে গজল লিখেছেন যার কিছু লাইন প্রবাদ প্রতিম।
    " কৌন কহতে হ্যায় আসমান মেঁ সুরাগ নেহি হোতী?
    এক পত্থর তো তবিয়ত সে উছালো ইয়ারোঁ।"
    "কে বলে আকাশের বুকে ফাটল ধরানো যায় না ?
    একটা পাথর জোরে ছুঁড়ে দেখই না বন্ধু!"
    তেমনি বড় মাপের কমিউনিস্ট লেখক (গদ্য/প্রবন্ধ/কবিতা) মুক্তিবোধ কেবল খড়িবোলিতেই লিখেছেন কবিতা। ''চাঁদ কা মুঁহ টেড়া' , 'সতহ সে উঠতা হুয়া আদমী' বা 'অন্ধেরে মেঁ'। দ্বিতীয় কবিতাটি নিয়ে মণি কৌল ফিল্ম বানিয়েছিলেন।
    আলোচনা/বিতর্ক চলুক।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.105 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৭:৩৫48185
  • যে নামে গুরুতে লেখেন সেই নামে লিখলে উপকৃত হতাম। এসব চেনা স্টাইল। সৈকতবাবুর সঙ্গে এ নিয়ে অন্যত্র আমার বাক্যালাপ করার সুযোগ ঘটেছিল। সেখানে আস্ত একটা পাতার স্ন্যাপশটও দেওয়া ছিল। সেটা বা গোটা বইটা সৈকতবাবু পড়েননি ধরে নেওয়ার মতো মূর্খ আমি নই। মানে না ভাবলেই ভালো হয় আর কি। আমি তাঁর সঙ্গে 'মার্দাঙ্গা' কোনও দিন করেছি বলে মনে করতে পারছি না। উনি খুবই পোলাইট এবং রসিক মানুষ। এই আচরণ আমার অপ্রত্যাশিত মনে হয়েছে। কেন অহেতুক খোঁচাচ্ছেন বারবার? বলেছি তো বাদ দিন আপনিও। তারপরের 'মার্দাঙ্গা' না বাঁধালেই নয়?
  • রঞ্জন | 232312.176.9007812.107 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৭:৫২48186
  • এস,
    রোজকার কথাবার্তায় কিন্তু লোকজন হিন্দুস্থানিই বেশি বলে , খড়িবোলি নয় ।
    আমরা 'ইয়াদ' করি , ইন্তেজার করি , 'বদতমীজি' করি , গুস্তাখি /জুর্রত, হিম্মত করি । 'ইরাদা' জানতে চাই ।
    'স্মরণ' , 'প্রতীক্ষা', আস্পর্দা, দূঃসাহস, 'দুর্ব্যবহার', করি ্না
    । 'ইচ্ছা ' বা 'উদ্দেশ্য' জানতে চাই না ।
  • কল্লোল | 127812.79.5689.107 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৮:১৫48156
  • বোম্বের হিন্দি সিনেমায় ৬০/৭০এর দশকে হিন্দুস্তানীই চলতো।
    শহরের বাবু/বিবির চরিত্র(হিন্দু) হিন্দুস্তানী বলতেন। হিন্দুস্তানী মানে হিন্দি-উর্দ্দুর মিশেল)।
    যো ওয়াদা কিয়া য়ো নিভানা পড়েগা/রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো আনা পড়েগা
    দিলবর, জানেজানা, মেহেবুবা, ইয়াদ, আঁসু, জিন্দেগী, খ্যায়র, বদতমিজ, দিল, মুহব্বত, শীশা, নিগাহ, শাম, জাম, সুবহ, খত, খতরা এমনতরো সহস্রাধিক উর্দ্দু শব্দ হিন্দি সিনেমায় আখচার ঘুরে ফিরে বেড়াতো। শউরে রাজ কাপুর থেকে অমিতা বচপনএর মুখের ভাষা মূলতঃ হিন্দুস্থানী।
    "শুধ" হিন্দি বিষয়টা ৭৭এর পর থেকে জনতা পাট্টি পরে ভাজপা প্রকল্প।
    এর সাথে হিন্দি(হিন্দুস্থানী)কে রাষ্ট্রভাষা করে তোলার প্রকল্পের যোগ নাই বলে আমার মনে হয়।
    হঠাৎ মনে পড়লো, গান্ধী, নেহেরু, প্যাটেল - এদের জনসভার ভাষা কি ছিলো? কোই রোশনী দিখায়েঁ ?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৮:৩৬48157
  • এখনও হিন্দি সিনেমাতে কিছুটা হিন্দুস্তানীই চলে, বিশেষ করে গানে। কারণ খুব কম কয়েকজন লেখক ছাড়া বাকীরা মুলতঃ উর্দু কবি।

    তবে কমে আসছে। তার সাথে পান্জাবী আর ইদানিং হরিয়ানি ভাষার খুব চল হয়েছে। বাজারের কারণে।
  • বিপ্লব রহমান | 340112.231.126712.75 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৯:৩৫48158
  • বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পরিকল্পিত হিন্দি আগ্রাসন ছড়াচ্ছে শুধু তাই নয়, এপারে ডোরিমন কার্টুন দেখে বাচ্চারাও হিন্দি বলতে শুরু করেছিল, পরে সরকার নিষিদ্ধ করে সেটা বন্ধ করেছে।

    লেখা ও মন্তব্যগুলো থেকে শিখছি। উড়ুক
  • কল্লোল | 127812.79.5689.107 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৯:৫১48159
  • বাংলা ভাষাকে পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে টিভি বিজ্ঞাপনে। প্রায় সব বংলা বিজ্ঞাপনই হিন্দির উপর ডাব করা। ফলে লিপ সিংকিংএর ঠেলায় অদ্ভুত বাংলা শোনা যাচ্ছে।। কি একটা শ্যাম্পুতে চুলের "লম্বাই" নিয়ে বলা হচ্ছে।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.132 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৯:৫৭48160
  • স্যার জর্জ গ্রিয়ার্সন The Linguistic Survey of India গ্রন্থে ভারতের ভাষাচিত্রের যে ছবি তুলে ধরেছিলেন তা এখানে দিলাম।



    কল্লোলবাবু গান্ধী-নেহরু-প্যাটেলের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি কেবল এ ব্যাপারে গান্ধীর মত তুলে ধরলাম। বলাই বাহুল্য, গান্ধীর মতই বাকি দু’জনের মত। ১৯২৫ এর কানপুর কংগ্রেসে এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা হল “This Congress resolves that the proceedings of the Congress AICC and the Congress Working Committee shall ordinarily be conducted in Hindustani”. ১৯৩৬ সালে অখিল ভারতীয় সাহিত্য পরিষদের নাগপুর অধিবেশনে তিনি কিন্তু বলেন, “The national language is Hindi ‘athava’ Hindustani”. স্বাধীনতার অব্যবহিত পুর্বে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, “… that Hindi in Devanagari script can never become the national language of India”. কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৪৯এর নম্ভেম্বর মাসে লোকসভায় দেবনাগরী লিপিকেই ‘national language’ হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব পাশ হয়। প্রসঙ্গত national language কিন্তু কোনও অর্থেই ‘রাষ্ট্রভাষা’ নয়, লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মাত্র।
  • sm | 2345.110.9005612.74 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ১০:০১48161
  • বাংলা ভাষায় কিছু হিন্দি শব্দ ঢুকে পড়লো,এতে বাংলা ভাষার ত্রাহি মধুসূদন হওয়া উচিত নয়
    হিন্দিতেও প্রচুর উর্দূ শব্দ ঢুকে বসে আছে
    নিয়মিত পাঞ্জাবী শব্দ ধুঁকছে আর ভাইসে ভার্সা।বরঞ্চ তলিয়ে দেখা উচিত সাউথ ইন্ডিয়ার লোকেরা কি করে হিন্দি বর্জন করে চালাচ্ছে।
  • কল্লোল | 127812.79.5689.107 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ১০:৫০48162
  • এলেবেলে। ওসব তো দলের অন্দরে মিটিংএর কথা। কিন্তু এঁরা যখন মাঠে ঘাটে বক্তৃতা করতেন তখন কি ভাষায় বলতেন?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ১২:১১48150
  • বম্বের সিনেমা নিয়ে যখন লিখেছেন তখন আরেকটা উদাহরণ দিই। জাভেদ আখতারের একটা ইন্টারভিউতে শুনেছিলাম। উনার মতে মুঘল-ই-আজমে আকবরের উর্দুতে কথা বলারই কথা নয়। কারণ তখনও উর্দু সাধারণ লোকেদের ভাষা ছিলো, নবাব-বাদশাহরা বোধয় জানতেনও না যে ঐ নামে কোনও ভাষা আছে।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ১২:৩৪48163
  • কল্লোলবাবু, অবশ্যই হিন্দুস্থানিতে। সেখানে উর্দুর অবাধ প্রয়োগ ছিল। মালব্য প্রমুখেরা শুদ্ধ মানে সংস্কৃতায়িত হিন্দিতে।

    কিন্তু সৈকতবাবু এটা কী লিখলেন? "দেশভাগের আগে একটি-পৃথক-ভাষা হিসেবে হিন্দির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা"। বেসিকে এত গণ্ডগোল থাকলে তো গোটা ন্যারেটিভটাই জোলো হয়ে যাবে।

    উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ এবং অযোধ্যায় ১৮৬০-৬১ সালে ৬৯,১৩৪ ছাত্র ছিল হিন্দি নিয়ে পড়ার, উর্দুর ছাত্র ছিল ১১,৪৯০ জন। ১৮৭৩এ হিন্দি পড়ুয়া ৮৫,৮২০ এবং উর্দু শিক্ষার্থী ৪৮,২২৯ জন।

    ১৮৯১তে হিন্দি সংবাদপত্র ২৪টা, সার্কুলেশন প্রায় ৮ হাজার; উর্দু আখবর ৬৮টা, সার্কুলেশন ১৬ হাজারের বেশি। ১৯১১তে হিন্দি কাগজ ৮৬, সার্কুলেশন ৭৭ হাজারের বেশি; উর্দু ১১৬টা অথচ সার্কুলেশন ৭৬ হাজার।

    পিটার হার্ডি, The Muslims of British India, 1972, pp. 142-144
  • pp | 9004512.142.340112.12 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ১২:৫৮48151
  • একটু অফ টপিক তাও বলি বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে এরকম তথ্যনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণ ধর্মী প্রবন্ধ নামাও।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ১৮ মে ২০১৯ ০২:১১48187
  • লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট দেখেছি তো। লক্ষ্য করে দেখবেন, দেখেছেন তো বটেই, ওতে আলোচ্য ভাষার তিনটি গোষ্ঠী আছে।

    ১। বিহারী (মৈথিলী, ভোজপুরি ইত্যাদি)।
    ২। পূর্ব হিন্দি ( আওধী ইত্যাদি)
    ৩। পশ্চিমী হিন্দি ( হিন্দুস্তানি ইত্যাদি)।

    এই সীমারেখা অনুযায়ীই পরবর্তীতে রাহুল সাংকৃত্যায়ন জাতির (অর্থাৎ রাজ্যের) সীমান্ত চেয়েছিলেন। সেটা হয়নি। বরং আওধী, মৈথিলী, ভোজপুরীকে দীর্ঘদিন ধরে 'হিন্দি' বলে যাওয়া হয়েছে। যদিও এগুলো কোনো ডায়লেক্ট নয়, আলাদা ভাষা। সুমিত সরকার লিখেছেন, যে ভাষায়্কে 'জাতীয়' মর্যাদা দেবার কথা ভাবা হচ্ছিল, তা ছিল এদের অনেক দূরের জিনিস।

    যতদূর মনে পড়ছে, হিন্দি-উর্দুর ভাষাগত কোনো পার্থক্যও ওই সার্ভেতে নেই। মনেহয় ভুল বলছিনা।

    এই প্রসঙ্গেই আসে দ্বিতীয় বইটি। অর্থাৎ, পিটার হার্ডি। উনি রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে লিখতে গিয়ে বারবারই হিন্দি-উর্দু দ্বন্দ্বের কথা লিখেছেন। পৃথক বিদ্যালয়, সংবাদপত্র ইত্যাদি। আমি বলেছি, দ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল, বস্তুত সাম্প্রদায়িকতার শুরুর দিকের একটা উৎস ওটাই, কিন্তু সেটা মূলত লিপির দ্বন্দ্ব। হিন্দি-উর্দু তফাত বলতে মূলত লিপির তফাত। এটা কেন বললাম? বানিয়ে বলিনি। হার্ডি লিপি না ভাষা স্পষ্ট করে লেখেননি। কিন্তু সুমিত সরকার লিখেছেন। হার্ডিকে তিনি উদ্ধৃতও করেছেন। হার্ডি উল্লিখিত দ্বন্দ্ব (সেই বেনারস থেকে যার শুরু)কে তিনি 'হরফ-বিতর্ক' বলেছেন। বস্তুত বিতর্কটিকেই তিনি উর্দু-দেবনাগরী বিতর্ক বলেছেন, উর্দু-হিন্দি নয়। এবার, একথা অনস্বীকার্য, যে, সংস্কৃতঘেঁষা পন্ডিতরা ভাষায় বেশি সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন, উল্টোদিকের পন্ডিতরা অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলেন ফার্সি-ঘেঁষা শব্দকে। কিন্তু এটুকু টানাপোড়েন তো ভাষায় থাকবেই। আগেই লিখেছি, বাংলায়ও এমনই ছিল।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ১৯ মে ২০১৯ ০২:০৫48190
  • এইগুলোর কী মানে?
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.67 (*) | ১৯ মে ২০১৯ ০৬:৩৪48191
  • কোনও মানে নেই। পাতি গুগল করলে হ্যারল্ড কাওয়ার্ডের সঙ্গে এ দুটোও দেখাচ্ছে তাই @taa bote-র জন্য রেখে গিয়েছি। আপনাকে কিছুই বলিনি।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন