কালীবাবুর অবশ্য ঘটনাক্রমে এরকম একটা অস্বস্তিকর ঝক্কি নেবার দরকার হল না শেষ পর্যন্ত। সাগর সন্ধেবেলা সেদিন সাইকেল চালিয়ে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট দিয়ে শ্যামবাজারের দিকে যাচ্ছিল। হাতিবাগানে নেমে একবার বাজারে ঢুকল সাইকেল নিয়েই। একটু দূর থেকে নিজেকে আড়াল করে নজর রাখল মনোরমা ভান্ডারের দিকে। না, ওখানে দোকানের সামনে টুল চেয়ার ... ...
তিন সপ্তাহ কেটে গেল এরপর। পুজো এসে পড়েছে দোরগোড়ায়। বারোয়ারি পুজোর প্যান্ডেল বাঁধার কাজ চলছে জোর কদমে। বিভূতিবাবু টুকটুক করে কাছাকাছি পাড়ার প্যান্ডেল বাঁধার কাজ দেখে বেড়াচ্ছেন সকালে কিংবা বিকেলে। একদিন বিকেলে জন্মেজয়বাবুর সঙ্গে দেখা হল রামদুলালের মোড়ে। বিভূতিবাবু বললেন, ' বিবেকানন্দ স্পোর্টিং-এর প্যান্ডেল বাঁধা দেখতে যাচ্ছি ... হয়ে এল প্রায় .... চলুন ... ...
সাগর মাথা নেড়ে বলল, ' বাজারে একবার যেতে হবে ... বাজারে নিশ্চয়ই একবার যেতে হবে। দেখা দরকার কি কারবার চলছে। কিন্তু আপনার সঙ্গে যে কথা ছিল ... সেটা এখানেই বলে নিলে হত না ? ' ---- ' না না ... বাড়িতে কোন কথা বলতে পারব না ... কথা যা হবার মনোরমায় হবে ... ' ----- ' মনোরমা কি দাদা ? ' ----- ' আরে ... মনোরমা ভান্ডার. ... ...
হাতিবাগান বাজারে মনোরমা ভান্ডার আদতে মনিহারি দোকান। ছোটখাট ইলেকট্রিকের সরঞ্জামও রাখে। বেলা দশটায় দোকান খুলে গেছে। দোকানের মালিক জগন্নাথ পাল দোকান খুলে ভিতরটায় খুচখুচ করে ঝাড়ন মারছে। দুটো কাঠের টুল বার করে দোকানের বাইরে রাখল।তারপর হাত ঝেড়েঝুড়ে খবরের কাগজ খুলে বসে হেডলাইনগুলোয় চোখ বোলাতে লাগল। উল্টোদিকে একটা মশলাপাতির ... ...
দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে। মনোরমা আকাশ আজ খেলছে বেশ উদাসি তুলো মেঘ আর রোদ্দুরের সঙ্গে। বসন্ত কেবিনের একপাশে ফুটপাথের ওপর ডুগডুগি বাজিয়ে একটা লোক বাঁদর খেলা দেখাচ্ছে। কেউ ডেকেছে হয়ত। গোল হয়ে কিছু লোক দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু লোক উঁকি মেরে চলে যাচ্ছে। সাগরও দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিল একবার। আঠারো দিন পর সে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। অনেকদিন পর পটলের ... ...
জন্মেজয়বাবুর মনটা আজ বেশ ফুরফুরে আছে। অখিল তাদের সবাইকে বোটানিকাল গার্ডেনে নিয়ে যাবে শিবপুরে। সে নাকি এক প্রকান্ড বাগান। হেঁটে হেঁটে শেষ করা যায় না। ওখানে গিয়ে তারা দেখল ওমা সত্যিই তাই। তাদের কুমিল্লার গ্রামে এরকম গাছগাছালি অনেক আছে। কিন্তু এরকম সাজানো গোছানো নয়। খোলামেলা মাঠ ঘাট, নদী, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, জল মাটি গাছপালা সব অযত্নে ছড়িয়ে ... ...
সৌরেন্দ্রবাবু সাত্ত্বিক প্রকৃতির লোক। তিনি বিভিন্ন ধর্ম প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করেন, বিশেষ করে রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দ সংযুক্ত নানান সমিতির প্রতি তার প্রবল অনুরক্তি আছে। সৌরেনবাবু প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একবার দক্ষিণেশ্বরে যান। আর বিশেষ বিশেষ তিথি পার্বণে তো আছেই। পরমহংসদেবের ঘরে বসে অনেকের মতো তিনিও ধ্যানে বসেন। তিনি আয়কর বিভাগে করণিকের ... ...
কাবেরী আগে থেকে এসে বসে আছে কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। আজ নিখিল স্যারের কাছে পড়া আছে সন্ধেবেলায়। এভাবে অনার্সের ক্লাস বাঙ্ক করা নিয়ে তার মনটা খচখচ করছে। সে ঠিক করেছে এই সময়ে পার্থপ্রতিমকে আর সময় দেবে না। তাতে যা হয় হোক। অবশ্য সে নিজেই জানে না পার্থর ওপর তার এই ঝোঁক কতদিন বজায় থাকবে। মাঝে মাঝে অমিতাভর মুখটা ঝিলিক দেয় তার মনে। সে বড় অস্থির বোধ করছে ক'দিন ধরে। এই টানাপোড়েন থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। প্রতিবিম্বর ব্যাপারটা মুছে যাওয়ার পর তার ভালই কাটছিল। সেদিন ট্রামে হঠাৎ পার্থপ্রতিমের সঙ্গে দেখা হয়ে আবার নতুন করে একটা জট তৈরি হল। কি দরকার ... ...
দুপুর দুটো বাজে। কালীকিঙ্করবাবুর ঘন ঘন হাই উঠছে। কাল রাতে ভাল ঘুম হয়নি। রাত্রে থানাতেই ছিলেন। পরপর দুটো চা আনিয়ে খেলেন। এক পেট ভাত খেয়েছেন বেলা একটা নাগাদ। আবার কেমন খিদে খিদে পাচ্ছে কালীবাবুর। চা খাওয়ার পর একটু বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন কালীবাবু। থানার একপাশে এক ছোকরা জামরুল নিয়ে বসেছে। বেশ বড় বড় রসালো জামরুল। দু তিনজন সেখানে দাঁড়িয়ে জামরুল কিনছে বেছে বেছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে দেখে। কালীবাবুও তাদের দলে যোগ দিলেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ... ...
সন্তোষের অভিষ্ট লক্ষ্য কিন্তু অসৎ নয়। সে বেইমান নয়। সাগরের উপকার করতেই সে এখানে এসেছে। সে দোকানদার বিশ্বামিত্র দাসকে বলল, ' সাগরদাকে আমি তোমার কথা অবশ্যই জানাব। চিন্তা কর না। শুধু একটা খবর আমায় একটু দাও .... ছাব্বিশের বি -র রাত্রি রায় কি আবার সাগর মন্ডলের কাছে যাবে ? জান তো সেই হাসপাতালে যাওয়া থেকে একটা সম্পক্ক তৈরি হয়েছে ... সাগরদার একটু অসুবিধে হচ্ছে ... বুঝতেই তো পারছ ... ' দোকানদার বলল, ' হ্যাঁ তা ঠিক ... ...