শীত এখনও গেল না ঠিকমতো, বসন্তের হাওয়া দিতে শুরু করেছে । আজ ফেব্রুয়ারির দশ তারিখ । বেথুনের সামনে রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া হলুদ আর লাল রঙা ছিটেয় গা ছুপিয়ে নিচ্ছে ক্রমে ক্রমে । দুপুরবেলা আজ বেশ গরম লাগছে । এ বছরের মতো বোধ হয় শীতবস্ত্রের পাট চুকল । বিকেলবেলায় এলোমেলো দখনে সমীর থেকে থেকে উন্মদ চামর বুলিয়ে যাচ্ছে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট, হেদুয়ার ওপর দিয়ে । এসব রোমান্টিকতা বংশীলালবাবুর ধাতে নেই। তার গায়ে আর কোট নেই । দু সপ্তাহ ধরে তিনি ঘুরে ঘুরে হয়রাণ হচ্ছেন । কাজের কাজ কিছু হল না এখনও । রাগে তার গা জ্বলছে । অথচ কিছু করতে পারছেন না ... ...
বংশীবাবু সময় নষ্ট না করে পটলের দোকানের দিকে চলে গেলেন। দোকানটা সহজেই পেয়ে গেলেন। দোকানে একটা ছেলে কালিঝুলি মেখে কাজ করছে। দোকানের মুখে টুলে বসে একটা চাকায় স্পোক লাগাচ্ছে বছর তিরিশের একজন। দোকানের সামনে বংশীবাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে টুলে বসা পটল বলল, ' কি সাইকেল আছে ? দেরি হবে ... ...
প্রতিবিম্ব প্রায় পনের মিনিট ধরে হেদোর বেঞ্চে বসে আছে। সুমনার দেখা নেই। প্রতিবিম্ব বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মাঝে মাঝে খাতা খুলে নোটে চোখ বোলাচ্ছে। কিন্তু ঠিকমতো মন দিতে পারছে না। আরও পাঁচ মিনিট কাটল। প্রতিবিম্ব উসখুস করতে লাগল। ভাবল, আজ তো টাইম দেওয়া ছিল। সুমনার তো সময়ের নড়চড় হয় না। শরীর টরীর ... ...
বিকেল পাঁচটা নাগাদ সাগর উল্টোডাঙার সিদ্ধেশ্বর হার্ডওয়্যারে এসে বসল। সাগরের দুই অনুগত সহচর শম্ভু আর মাণিক তার অপেক্ষাতেই ছিলাম। শম্ভু বলল,' দাদা কাল এলেন না যে ... '----- ' নাহ্ ... কাল আর হল না। কাজ ছিল শ্যামপুকুরে .... হ্যাঁ শোন, কাল একটা কাজ আছে ... সকাল সাড়ে নটা নাগাদ খান্নার দিকে নলিন সরকার স্ট্রিটের মুখে থাকবি। কানু আর বাবলাকেও থাকতে বলবি। একসঙ্গে দাঁড়াবি না... ভাগাভাগি করে দাঁড়াবি। আর কানুকে বলবি পকেটে ছোটখাট কিছু একটা যেন রাখে। আমার কাছেও থাকবে ... দরকার হবে না অবশ্য। যদি লাগে চমকাবার জন্য তাই ... বুঝে নিয়েছিস? '----- ' হ্যাঁ দাদা ... বড় কেস ... ...
অঞ্জলির মামাতো ভাইয়ের ছেলে দীনবন্ধু, সেই যে কাটোয়া থেকে এসেছিল চাকরির ইন্টারভিউ দিতে, সে হঠাৎ রবিবার বিকেলে এসে হাজির হল। অঞ্জলি বলল, ' আরে দীনু যে ... হঠাৎ ! ' ------ ' হ্যাঁ পিসী ... চলে এলাম ... ওই যে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম, চাকরিটা হয়ে গেছে। কাল জয়েনিং ... ' ----- ' আরে এ তো দারুণ খবর ... দাঁড়া তোর পিসেমশাই ... ...
আকাশ ক্রমে আড়ামোড়া ভেঙে খোলস খসিয়ে ফেলল। আলোয় ধোয়া অবারিত নীল সামিয়ানা থেকে নির্মল আলো ঝরে পড়ছে। বেলা বারোটা বাজল। বিস্তর ঘাসফড়িং স্ফূর্তিময় ওড়াওড়ি করছে। ঘাস, পাতায় একটু বসে আবার ঠিকরে যাচ্ছে। বৃন্দাবন কড়ায় মাংস কষছে। গন্ধে ম ম করছে ... ...
পরপর দুটো ক্লাস হয়ে গেল। তারপর পনের মিনিটের একটা ফাঁক আছে। সুমনা আর থাকতে পারল না। অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছিল। এবার আর না বলে থাকতে পারল না। ----- ' কিরে কাবেরী, তোর কি খবর? ' কাবেরী স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে অকপট জবাব ... ...
সুমনা কাবেরীদের দিকে নজর রেখে বলল, ' দাঁড়াও এদিকেই আসছে হাঁটতে হাঁটতে। ডানদিকে ঘুরে মনে হয় এখান দিয়েই যাবে যদি না রামদুলালের দিকের গেট দিয়ে বেরিয়ে যায় ... ' ----- ' আরে, বাদ দাও না ওসব ... তোমার দরকার কি? ' প্রতিবিম্ব বিরক্ত বোধ করে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। ফেমিনিন কিউরিওসিটি বলে কথা। সুমনা ... ...
বিভূতিবাবু রামকান্ত বোস স্ট্রিটে শ্বশুরবাড়িতে নিয়মমাফিক হাজির হলেন সকাল এগারোটা নাগাদ। এসে দেখলেন তার শ্বশুরমশাইয়ের ঘরে একজন বছর পঞ্চান্নর ভদ্রলোক বসে আছেন। শ্বশুরমশাই বললেন, ' অখিল , এই যে ... এ হল আমার জামাই ... হেদোর ওদিকে থাকে। বিভূতি, এ হল অখিল গাঙ্গুলি। আমার এক বন্ধু ছিল না ... পার্বতীচন্দ্র মুখার্জি ... তুমি হয়ত দু একবার দেখেছ ... ছেচল্লিশ সালে চলে ... ...
ভালয় ভালয় নিতাইবাবুর বাড়ির গৃহপ্রবেশের কাজ মিটে গেল। বিভূতিবাবু সস্ত্রীক এসেছিলেন। উৎপল আর সমীরণও এসেছিল। নিবারণ সাহা এবং শশীভূষণবাবু সারাক্ষণ ছিলেন। বিভূতিজায়া রমাদেবী বললেন, 'জায়গাটা পিকনিক করার পক্ষে খুব ভাল। কুলগাছগুলোয় কেমন কুল ধরেছে দেখ ....এখানে ওখানে কেমন গাঁদা ফুল ... ...