রাত একটা বেজে গেল । কাবেরীর কবিতা লেখার নেশা ধরেছে । লিখছে আর কাটছে । যেন অদৃশ্য কার সঙ্গে কাটাকুটি খেলা চলছে কাবেরীর । কেটেকুটে চেঁচে ছুলে যাহোক একটা দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত । রাত সওয়া দুটো বাজে । কাবেরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে এবার । এই সব ছাই পাঁশ সে কেন যে লিখছে কে জানে । এগুলো কার কি কাজেলাগবে ? অবশ্য দু একজন শ্রোতা বা পাঠক যাই হোক , আছে .... যেমন নীলাঞ্জন , যেমন নিখিল স্যার । ওদের দেখানোর বা শোনানোর জন্যই এই এত রাত পর্যন্ত নিজেকে কষ্ট দেওয়া । এটা একটা ... ...
ঘরটায় মনে হচ্ছে অনেকদিন ঝাঁট পড়েনি। দেয়ালের এ কোণে ও কোণে ঝুল জমেছে। ঘরে কয়েকটা চেয়ার আর একটা মাঝারি সাইজের টেবিল আছে। একপাশে একটা ক্যাম্বিশের খাট কাত করে রাখা আছে। মজিদ আর বাবলু রাত ন'টা নাগাদ ঢুকে দেখল মনোরঞ্জনবাবু একটা চেয়ারে বসে সিগারেট টানছেন। ঘরে একটা ষাট পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে। মনোরঞ্জন বললেন, ' হুঁ ... আয় আয় ... পকেটে মেশিন টেশিন ... ...
মজিদ আর বাবলু কাশী বোস লেনের মুখে দাঁড়িয়ে ছিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ। মনোরঞ্জন মজুমদারের এখান দিয়েই যাবার কথা বৃন্দাবন বোস লেনের দিকে স্বরূপ খাঁড়ার বাড়ির দিকে। বাড়ির নীচতলায় খাঁড়াবাবুর অফিস। মনোরঞ্জনকে সকাল বিকেল দুবেলাই হাজরে দিতে হয় সেখানে। নানা চিন্তা রাতদিন সাঁতার কাটে মনোরঞ্জনবাবুর মাথায়। খাঁড়ার খপ্পরে তিনি এমনভাবে পড়েছেন যে ইচ্ছে না থাকলেও তার মোসাহেবী করতে ... ...
মজিদ আর বাবলু এখন সন্তোষের সঙ্গে কাজ করছে। সন্তোষের দোকানেও বসে। সন্তোষ দোকানে বসেই বলল, ' তোদের একটা খবর করতে হবে। কানুদা মার্ডার হয়েছে জানিস তো ? সাগরদার ডানহাত ছিল ... ' মজিদ ঘাড় নাড়ল। বাবলু বলল, ' হ্যাঁ জানি। সাগরবাবুর ডানহাত ছিল। দেখিনি অবশ্য কোনদিন ... ' ---- ' হ্যাঁ ... ঠিক। এমনি তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কি বলিস ? ' ----- ' না না ... তা হয় নাকি ! বদলা ... ...
মাণিক, বাদল, শম্ভু, কানাই, সন্তোষ আর নন্দ সাগরের বাড়ির বাইরে দুটো বেঞ্চে বসে ছিল। সাগর দু কোমরে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে মাটির ওপর দুচোখ রেখে বসেছিল। সে এক ভাবনার সাগরে ডুবে বসে আছে। তবে চোখ বরাবরের মতো শান্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই এক আগুনে বাজপাখি চক্কর মারছে তার মনের আকাশে। চক্কর মেরেই যাচ্ছে ... মেরেই যাচ্ছে ... সঠিক নিশানার সন্ধানে। নিশানা ঠিক হলেই বাতাস কেটে বিদ্যুৎবেগে নেমে ... ...
নিখিলবাবু মাধব ব্রহ্মচারির সব কাহিনী টাহিনি শুনে বললেন, ' বাঃ, ভালই অভিজ্ঞতা হল তোদের। না না ... পানিহাটির আশ্রমে আমার যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। ওসব আমি অনেক দেখেছি। তোরা তো দেখে এলি। এসব সারা পৃথিবীতেই চলে, চলতেও থাকবে। জনগণের চিন্তাধারা তো তুমি দু দিনে পরিবর্তন করতে পারবে না। কয়েক শ' বছরে কিছু হল না। আর দুদিনে হবে ... গ্যালিলিও, সক্রেটিস, যীশু ... ...
সাগর বলল, ' নে নন্দ, এবার চল ... অনেক হয়েছে ... ' ----- ' হ্যাঁ ... চল ... ' ওরা দুজন সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছিল, সাগর হঠাৎ বলল, আরে ... দাঁড়া ... একটু দাঁড়িয়ে যা ... ' ----- ' কেন, কি হল ? ' ----- ' ওদের চিনিস ? ' ---- ' কাদের ? ' ----- ' ওই, যে দুজন কথা বলতে বলতে ওপরে ... ...
সাগর চাপা গলায় বলল, ' কে, বুঝতে পেরেছিস তো ? ' ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... চিনি ... স্বরূপ খাঁড়া ... ' ---- ' এখানকার এক মাতব্বর মনে হয়। তাকিয়ে আছে দেখ ... যেন পরমানন্দ খাঁড়া, ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না ... ' খাঁড়াবাবু করজোড়ে বাবার দিকে ঝুঁকে পড়ে কি যেন বললেন বশংবদ ভঙ্গীতে। বাবা প্রসন্নমুখে মৃদু হেসে একপাশে সামান্য ঘাড় কাত করলেন। খাঁড়া আবার খাড়া হল। এখান থেকেই ঘনিষ্ঠ পরিজনদের মতো একটা হাত তুলে দুবার সামনের দিকে ঠেলা ... ...
বাড়ির দোতলার বারান্দায় মাইক লাগানো হয়েছে । সাগর আর নন্দ যখন গিয়ে পৌঁছল সেখানে নাগাড়ে ভক্তিগীতি হয়ে চলেছে । বাবার নামেই নানা গান আর কি ... আট দশ রকম ঠাকুর দেবতাদের মিলিয়ে মিশিয়ে । নীচে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে ভক্তি গদগদ চোখমুখ নিয়ে । ওপরে মনে হয় হাউস ফুল । নাহলে এই গড়াগড়ি খাওয়া ভক্তরা নীচে দাঁড়িয়ে থাকত না । বোধহয় ভোরবেলা থেকে কিংবা কাল শেষ রাত থেকে হত্যে দিয়ে লাইনে বসে থাকা ভক্তের ... ...
শিয়ালদায় নেতাজী সুভাষ ইনস্টিটিউট হলে বহুরূপী আবার একবার নবান্ন নাটক মঞ্চস্থ করবে বিজন ভট্টাচার্যের পরিচালনায়। শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র তো আছেনই। বিজনবাবুও প্লে করবেন। বিভূতিবাবু বেশ উত্তেজিতভাবে নিতাইবাবুকে খবরটা দিলেন, যদিও নিতাইবাবুর কোন তাপ উত্তাপ দেখা গেল না। বললেন, ' আবার ... কি দরকার ওসব কাঁদুনে জিনিস দেখানোর ... লোকে এখন এসব ... ...