( শেষ পর্ব )সেদিন দত্ত ভিলা থেকে ফেরবার রাস্তায় লেক থানায় এসে বাইক ভেড়াল কলতান ।পার্থসারথিবাবু বললেন, ' আরে .... আসুন আসুন ... আমি আপনার কথাই ভাবছিলাম ...'----- ' আরে ... আর বলেন কেন , হ্যাপা কি কম ... যাক সেসব পরে হবে'খন ... এই মোবাইল দুটো রাখুন .... '----- ' কার মোবাইল এগুলো ? '----- ' সতীনাথ এবং তার ওয়াইফ প্রিয়দর্শিনীর মোবাইল এ দুটো । এগুলোর কল রেকর্ড চেক করতে হবে কোন সাইবার এক্সপার্ট দিয়ে । এদের দুজনের সুনীল ধাড়ার সঙ্গে কল রেকর্ড চাই ইন ডিটেল । ইটস ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট । '----- ' ওকে ওকে .... ... ...
ভোরের আলো পাপড়ি মেলে । কলতান উঠে পায়চারি করতে লাগল । কি মনোরম লাগছে চারপাশ । রাস্তার ধারে গাছগুলোর পাতার আড়ালে আড়ালে পাখিরা জেগে উঠে নানাবিধ জরুরী কথোপকথন শুরু করেছে নিজেদের মধ্যে। আর ঘন্টাখানেক পরে সুনীল ধাড়ার ডিউটি শেষ হবে । সে রাস্তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আনমনে কি সব ভেবে চলেছে । কলতান খানিকক্ষণ পায়চারি করে আবার সুনীলের পাশে এসে বসল । ----- ' আমি তা'লে এখন আসি সুনীল । রাতটা এখানে বেশ ভালই কাটল । তোমার সঙ্গে গল্প করতে করতে কেমন সুন্দর কেটে গেল সময়টা । মনে হয় শিগ্গীর আবার আমাদের মধ্যে অনেক গল্প হবে ...'সুনীল কি বুঝল কে জানে কষ্ট ... ...
সুনীল বলল, ' কি দেখছেন স্যার ? ' গলাটা যেন একটু কেঁপে গেল । ----- ' না কিছু না ... বোতামগুলো দেখছি ... বোতামের কালারগুলো খুব সুন্দর ... '----- ' এটা তো এখানকার এই ইউনিফর্মের সঙ্গেই আছে .... '----- ' সে যাই হোক .... এই রঙটা আমার খুব ভাল লাগে ... ' , বলে, কলতান সুনীল ধাড়ার জামার বোতামগুলো আগ্রহভরে আঙুল বুলিয়ে দেখতে লাগল । সুনীল হাল্কা অস্বস্তি এবং বিস্ময়মাখা চোখে কলতানের দিকে তাকিয়ে রইল । ------ ' হ্যা.... ওই আর কি ... আর তো কিছু দেয় না ... মানে, শুধু এই ইউনিফর্মটাই ... ' ----- ' হ্যা ,তাই তো .... এটা ... ...
পার্থসারথিবাবু কলতানকে ফরেনসিক রিপোর্টটা মেল করলেন । তাতে টেবল কভার এবং মেঝেতে পড়া মাংসের ঝোলের দাগের সময়কালও জানা গেল । সেটা সতীনাথের বলা সময়ের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গেছে । সতীনাথ বলেছিল যে , বেলা তিনটের সময় তারা লাঞ্চ করেছিল । রিপোর্টেও ঝোলের দাগের টাইম আছে ----- সেদিন বেলা তিনটের কাছাকাছি । রাত এগারোটার সময় কলতানের বাইক এসে দাঁড়াল নিউ হরাইজনের সামনে । সুনীল ধাড়ার আজ নাইট ডিউটি আছে । কিয়স্কের ভিতর আর একজন বসে আছে । এর কি নাম কে জানে ।#দত্ত_জুয়েলার্স_১২পার্থসারথিবাবু কলতানকে ফরেনসিক রিপোর্টটা মেল করলেন । তাতে টেবল কভার এবং মেঝেতে পড়া মাংসের ঝোলের দাগের সময়কালও জানা গেল ... ...
বউবাজার থানায় বিদ্যুৎ তরফদারের সামনে বসে একাগ্রচিত্তে কিয়স্ক রেজিস্টারের একফালি ছবির মধ্যে ডুবে গেল । প্রায় তিন মিনিট কেটে গেছে । বিদ্যুৎ নিজের টেবিলে বসে এটা ওটা ফাইল ওল্টাচ্ছে । কলতান আপনমনেই বলে উঠল , ' কারেক্ট কারেক্ট ... কোন ডাউট নেই .... খালি চোখেই পরিষ্কার .... 'কথাটা বিদ্যুতের কানে গেল । সে বলল, ' কি হল কলতানদা ? '---- ' না কিছু না .... এন্ট্রি আর এগজিট-এর হ্যান্ডরাইটিং পরিষ্কার আলাদা । এর জন্য কোন এক্সপার্টের দরকার নেই ।'বিদ্যুৎ ফাইল বন্ধ করে বলল, ' তার মানে সতীনাথ দত্ত এই কথাটা অন্তত সত্যি বলেছে । '----- ' হ্যা.... তাতেই আমাদের চিন্তা আরও ... ...
সুকিয়া স্ট্রীটের এপকন টেস্টিং ল্যাবে কলতানের অনেক বছরের যাতায়াত । ল্যাব চালায় বাদল সাহা । পিওর কেমিস্ট্রিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এস সি । বাষট্টি বছর বয়েস ।কলতান বলল , ' এই স্যাম্পেলগুলো রাখ । কাল দুপুরের মধ্যে রিপোর্ট চাই । টিসু পেপারে মোড়া দুটো বোতল সবুজ রঙের বোতাম এবং ক'টা বোতল ভাঙা কাঁচের টুকরো বার করে বাদলকে দিল । বলল, ' আরও দুটো ভাইটাল টেস্ট আছে । ওগুলো পুলিশের ফরেনসিক সেল ক্যারি আউট করবে .... '------ ' খুব ইন্টারেস্টিং কেস মনে হচ্ছে । '----- ' কেস তো সবই ইন্টারেস্টিং । ইন ফ্যাক্ট কেস যত ইন্টারেস্টিং, তত ঘোরাল । ভীষণ টাফ ... ...
সন্ধে সাতটা বাজে । বিদ্যুৎ তরফদারের কাছে প্রিয়দর্শিনীর আজব কিস্যা বর্ণনা করছিল কলতান বউবাজার থানায় বসে । নেকলেসটাও থানার জিম্মায় জমা করে দিল সে । এখন পুলিশের দায়িত্ব যথাযথ জায়গায় এটা হস্তান্তর করার । প্রয়োজন হলে তারা প্রিয়দর্শিনীকে এবং সতীনাথকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে । কলতান বলল, ' প্রয়োজন হলে আমাকে ডাকতে পার, সে ওদের মুখোমুখি বসে বয়ান দেবার জন্যই হোক বা লিখিত বয়ান দেবার জন্যই হোক ... লিগ্যাল কোন লুপহোল না থাকে ... '----- ' আরে দূর ... ছাড় তো ... তোমাকে ডিপার্টমেন্টে কে না চেনে ... এর জন্য আবার ডিপোজিশান লাগবে ? এখন আইটেম তো বউবাজার থানার কাস্টডিতে । আইটেম ... ...
কলতান ভাবল , মিসেস দত্তকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করে, তার কলতানের কাছে আসার উদ্দেশ্য কি । যেসব কথা বলছে, সেসব তো সে আগেই জেনে ফেলেছে । সে প্রিয়দর্শিনীকে একটা খোঁচা মারল, ' সতীনাথবাবুর ব্যাপারে কি ভাবছেন আপনি ? 'এবার আর কোন হেঁয়ালি করলেন না ভদ্রমহিলা । প্রাঞ্জল ভাষায় বললেন , ' ওর ব্যাপারে আর ভাবার কি আছে । ইহকাল পরকাল সবই তো গেছে । আর আমার জীবনেরই বা আর কি আছে ? মেয়েটার ভবিষ্যৎ যদি সুখের হয় সেটুকুই কামনা .... ' ------ ' হ্যা ...... সে তো ঠিকই .... কিন্তু নেকলেসের সমস্যাটার তো সমাধান করতে হবে..... আপনার কাছে কো-অপারেশান চাইতেও সংকোচ বোধ ... ...
কলতান সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল না । পরের দিন সকাল পর্যন্ত মুলতুবি রাখল চিন্তাভাবনা করার জন্য । তার গোয়েন্দা মন জানে, অত সহজে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না । একজন বিবাহিতা মহিলা একা আসতে চাইছে প্রকাশ্য স্থানে কিছু বলবার জন্য এটা শিশুসুলভ সরলতায় গ্রহণ করাটা অবিমৃশ্যকারিতা হতে পারে । তাছাড়া দেখা যাচ্ছে ভদ্রমহিলা নিউ হরাইজনের কথা জানেন । এখানেই ব্যাপারটা আরও জটিল লাগছে । হয়ত তিনি মহুয়া মিত্রের ব্যাপারটাও জানেন । প্রিয়দর্শিনীকে ফোন করাটা ওনার পক্ষে নিরাপদ হবে কিনা বলা মুশকিল । তাই ভোরবেলায় কলতান প্রিয়দর্শিনী দত্তকে একটা মেসেজ পাঠাল ----- "বেটার টু মিট অ্যট মাই প্লেস ইফ পসিবল ফর ইউ, ... ...
সন্ধে ছটা নাগাদ কলতান বৌবাজার থানায় ঢুকল । বিদ্যুৎ থানায় ছিল ।----- ' আরে কলতানদা..... আসুন আসুন .... আপনার জন্যই ওয়েট করছিলাম ....খুব ঘেমে গেছেন ..... কোল্ড ড্রিঙ্কস আনাই ? ' কলতান রুমাল বার করে ঘাম মুছতে মুছতে বলল, ' আনাও .... আনাও .... সারাদিন প্রচুর প্রেসার গেল ...... 'বিদ্যুৎ একজনকে ডেকে দুটো ঠান্ডা বোতল আনতে দিল । ----- ' তারপর ....... বালীগঞ্জ অপারেশান সাকসেসফুল ? '---- ' হ্যা .... যে উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম সেটা করে আসতে পেরেছি । সতীনাথবাবুর এ ব্যবসায়ে কোন অংশীদারিত্ব নেই । তিনি তার দাদার অধীনে দোকানের ম্যানেজার স্তরের কিছু ... আর কি ..... এবং যে কারণেই ... ...