ইউনিফর্ম পরা সেন্ট মার্গারেটের মেয়েরা ঢুকছে স্কুলের ভিতরে। বাইরে কিছু ছাত্রীর মায়েরা তাদের মেয়েদের লেখাপড়া সংক্রান্ত ব্যাপারে গুরুগম্ভীর আলোচনা করছে। দুটো রিক্শাওয়ালা রিক্শা নিয়ে বসে আছে। আইসক্রিম, কামরাঙা,আমড়া, হজমিগুলি এবং ঝালমুড়িওয়ালাদের এখনও বসার সময় হয়নি। দুপুর একটার আগে ওদের দেখা ... ...
বিভূতিবাবু কিন্তু শ্যামবাজারের মেসে দীনবন্ধুর জায়গা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। ওখানে তার যাতায়াত অনেকদিনের। ধীরেন চন্দ্র নামে তার এক পুরনো বন্ধু এখানে থাকত স্বাধীনতার বছর চারেক আগে থেকে। সেই ডিসেম্বর মাসে যখন জাপানীরা বোমা ফেলল কলকাতায় ধীরেন তখন প্রাণের ভয়ে তার গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে গেল। সারা পৃথিবী তখন যুদ্ধে ভেসে যাচ্ছে। ফিরে এসেছিল সাত আট ... ...
দুজনে বৈকুন্ঠ বুক হাউসের দিকে কোণের গেট দিয়ে ঢুকে ধীর পায়ে উত্তর দিকে আসতে লাগল চুপচাপ। দূর থেকেই দেখা গেল প্রতিবিম্ব শিরিষ গাছের নীচে বেঞ্চে বসে একটা লম্বা খাতায় চোখ বোলাচ্ছে। কাবেরী নতুন কোন রোমাঞ্চের আভাস পেয়ে নীচু গলায় বলল, ' ওই দেখ ... এসেছে ... ...
আজ সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। এলোমেলো হাওয়া বইছে। টিপটিপ করে দু এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে মাঝে মাঝে। ময়দানে আজ মোহনবাগান আর মহমেডান স্পোর্টিং-এর খেলা আছে। চারপাশে বেশ সাজো সাজো মেজাজ পাড়ায় পাড়ায়। উত্তেজনাও যথেষ্ট। ফিরতি লীগের খেলা। আজকের খেলার রেজাল্টের ওপর লীগ চ্যাম্পিয়ানশিপ ভালররকম ... ...
আজ রবিবার। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ঘড়িবাবু নরেন পাল এসেছে ঘড়িতে দম দিতে। মাণিকলালবাবু বললেন, ' পালকাকা, ঘড়ি প্রায় দশ মিনিট স্লো যাচ্ছে ... দেখ তো কিছু বুঝতে পার কিনা ... পঞ্চাশ বছরের মধ্যে তো এরকম কোনদিন হয়নি ... তবে কি ওর আয়ু ফুরিয়ে এল ... ' নরেন পাল উঁচু টুলটায় উঠে ... ...
শীত এখনও গেল না ঠিকমতো, বসন্তের হাওয়া দিতে শুরু করেছে। আজ ফেব্রুয়ারির দশ তারিখ। বেথুনের সামনে রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া হলুদ আর লাল রঙা ছিটেয় গা ছুপিয়ে নিচ্ছে ক্রমে ক্রমে। দুপুরবেলা আজ বেশ গরম লাগছে। এ বছরের মতো বোধ হয় শীতবস্ত্রের পাট চুকল। বিকেলবেলায় এলোমেলো দখনে সমীর থেকে থেকে উন্মদ চামর বুলিয়ে যাচ্ছে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট, হেদুয়ার ওপর দিয়ে। এসব রোমান্টিকতা ... ...
বংশীবাবু সময় নষ্ট না করে পটলের দোকানের দিকে চলে গেলেন। দোকানটা সহজেই পেয়ে গেলেন। দোকানে একটা ছেলে কালিঝুলি মেখে কাজ করছে। দোকানের মুখে টুলে বসে একটা চাকায় স্পোক লাগাচ্ছে বছর তিরিশের একজন। দোকানের সামনে বংশীবাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে টুলে বসা পটল বলল, ' কি সাইকেল আছে ? দেরি হবে ... ...
প্রতিবিম্ব প্রায় পনের মিনিট ধরে হেদোর বেঞ্চে বসে আছে। সুমনার দেখা নেই। প্রতিবিম্ব বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মাঝে মাঝে খাতা খুলে নোটে চোখ বোলাচ্ছে। কিন্তু ঠিকমতো মন দিতে পারছে না। আরও পাঁচ মিনিট কাটল। প্রতিবিম্ব উসখুস করতে লাগল। ভাবল, আজ তো টাইম দেওয়া ছিল। সুমনার তো সময়ের নড়চড় হয় না। শরীর টরীর ... ...
বিকেল পাঁচটা নাগাদ সাগর উল্টোডাঙার সিদ্ধেশ্বর হার্ডওয়্যারে এসে বসল। সাগরের দুই অনুগত সহচর শম্ভু আর মাণিক তার অপেক্ষাতেই ছিলাম। শম্ভু বলল,' দাদা কাল এলেন না যে ... '----- ' নাহ্ ... কাল আর হল না। কাজ ছিল শ্যামপুকুরে .... হ্যাঁ শোন, কাল একটা কাজ আছে ... সকাল সাড়ে নটা নাগাদ খান্নার দিকে নলিন সরকার স্ট্রিটের মুখে থাকবি। কানু আর বাবলাকেও থাকতে বলবি। একসঙ্গে দাঁড়াবি না... ভাগাভাগি করে দাঁড়াবি। আর কানুকে বলবি পকেটে ছোটখাট কিছু একটা যেন রাখে। আমার কাছেও থাকবে ... দরকার হবে না অবশ্য। যদি লাগে চমকাবার জন্য তাই ... বুঝে নিয়েছিস? '----- ' হ্যাঁ দাদা ... বড় কেস ... ...
অঞ্জলির মামাতো ভাইয়ের ছেলে দীনবন্ধু, সেই যে কাটোয়া থেকে এসেছিল চাকরির ইন্টারভিউ দিতে, সে হঠাৎ রবিবার বিকেলে এসে হাজির হল। অঞ্জলি বলল, ' আরে দীনু যে ... হঠাৎ ! ' ------ ' হ্যাঁ পিসী ... চলে এলাম ... ওই যে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম, চাকরিটা হয়ে গেছে। কাল জয়েনিং ... ' ----- ' আরে এ তো দারুণ খবর ... দাঁড়া তোর পিসেমশাই ... ...