পাড়ার মধ্যে শুধু দুটো বাড়িতে টেলিফোন আছে। এক মানিকলাল চ্যাটার্জি, যার বাড়িতে ঘড়িবাবু নরেন পাল ঘড়িতে দম লাগাতে আসে। আর দুই নম্বর হল পরিমল শীল। বউবাজারের শীলদের জ্ঞাতি। বেশিদিন না, চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর আগেও বাইজি নাচত ওদের বউবাজারের বাড়িতে। তেমন জরুরী প্রয়োজন পড়লে ওদেরই শরণাপন্ন হতে হয় পাড়ার লোকের। পাড়ার অনেক লোকের কিছু জরুরী ট্রাঙ্ককলও ... ...
বিভূতিবাবু অনিমেষদের তিনজনকে নিয়ে ট্যাক্সি করে বাড়ি ফিরলেন। সংসারনাথবাবুর বাতের ব্যথা ইদানীং খুব বেড়েছে। লাঠিতে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। তিনি রোজ সন্ধেবেলায় হেদুয়ায় গিয়ে টুকটুক করে একটু হাঁটাহাঁটি করেন। ডাক্তার বলেছে একেবারে বসে গেলে শরীরও বসে যাবে। বিকেলের দিকে একটু হাঁটবেন। নকুড়ের দোকানের সামনে বিভূতিবাবুদের সঙ্গে দেখা হয়ে ... ...
নিবারণ সাহা আগের রবিবার কি একটা ঝঞ্ঝাটে পড়ে কথা রাখতে পারেনি। এ রবিবারে কিন্তু তার কথার নড়চড় হল না। সকাল সাড়ে নটার মধ্যে সে নিতাইবাবুর বাড়ি এসে হাজির হল। ----- ' হ্যাঁ ... চলেন নিতাইবাবু ... আজ আর এদিক ওদিক করব না একদম ইয়ে ছিলাম। সিঁথির দিকে দুটো জমি দেখাব ... ' ----- ' ঠিক আছে একটু বসুন ... এক কাপ চা খান আমি চান করে আসছি ... ' ----- ' আচ্ছা ঠিক আছে। বেশি দেরি করবেন না কিন্তু ... ...
কানাই সিকদার করিতকর্মা লোক। সে বিয়ের ঘটকালি থেকে শুরু করে মিউনিসিপ্যালিটির পারমিট বা ছোটখাট মামলার জন্য উকিলের জোগান দেওয়া সব কাজেই সে বেশ দড়। সুমনাদের বাড়িতে কানাইবাবুর যাতায়াত অনেকদিনের। আসলে কানাই হল সুমনা, চন্দনা, বন্দনার মামারবাড়ির দিককার চেনাশোনা লোক। মানে, সুমনাদের মা বাসন্তীদেবীর চেনা লোক বিয়ের আগে থেকেই। তার বাবার সঙ্গে বেশ খাতির ... ...
লাইটহাউসে অনিমেষদের সিনেমা দেখতে যাওয়া এ সপ্তাহে হল না কারণ উৎপলের বাবা একটু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যে কারণেই হোক মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। এক মিনিটের মতো অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। ডাক্তার হরিপদ মিত্র এসে তাকে সবরকম পরীক্ষা করে বললেন, ' ব্লাড প্রেসারটা একটু হাই আছে ... একটা ই সি জি করিয়ে নেওয়া ভাল ... পাঁচমাথার মোড়ে সাধনা ঔষধালয়ের ওপরে একটা ক্লিনিক আছে ... ভালই করে। এখন থেকে প্রেসারের ... ...
শ্রী সিনেমার উল্টোদিকে নলিন সরকার স্ট্রিট। প্রতিবিম্বের সহপাঠি সুশোভন সেন এই গলিতে থাকে। গান তাকে খুব টানে। সুশোভন কিছুদিন তবলা শিখেছিল। নানা কারণে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তার গান শোনার তীব্র আকর্ষণ। ক্ল্যাসিক্যাল বা লঘু যে কোন ধরণের সঙ্গীত। লোকগীতি বা রবীন্দ্রনাথের গান। ভজন, কীর্তন বা ফিল্মের গান, তা সে বাংলা বা হিন্দী যাই হোক। যে কোন ধরণের ভাল মানের গানে ... ...
নিবারণবাবু ঘরে এসে বসলেন। বললেন, ' আমি কৈলাশ বোস স্ট্রিটে থাকি। তা প্রায় পঁচিশ বছর আছি ওখানে। পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি করি। সামান্যই পাই। তাই সাইডে কিছু করতে হয় আর কি ... আপনি কোথায় আছেন ? ' ----- ' ইস্টার্ন রেলে ' ------ ' ও আচ্ছা ... ভাল ভাল। দেবেনদার সঙ্গে আমার ... ...
আজ কাবেরী কলেজে আসেনি । কালই বলছিল শরীরটা ভাল নেই , জ্বর জ্বর লাগছে । দেড়টা বাজে । একটা অফ পিরিয়ড আছে এখন । ক্লাসের দু তিনজন গেটের বাইরে এসে ঘুগনিওয়ালার কাছ থেকে ছোট ছোট গোল গোল আলুর দম কিনে খেতে লাগল । সুপর্ণা বলল, ' ঝোলটার কি টেস্ট ... না ? আর একটু দাও তো ... 'ওর দেখাদেখি দীপালিও শালপাতার পুরিয়াটা বাড়িয়ে ধরে .... ' এই যে .... আমাকেও একটু ... 'ঘুগনিওয়ালা তিনজনকেই একটু একটু দেয় ।আজ আকাশ বেশ মেঘলা। চারপাশে ... ...
হরিপদ ঘোষ রাজারহাটের এক গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে আসে শ্যামবাজার বাগবাজারে দুধ বিক্রী করতে। রাজাবাজারে ক' বিঘে ধানজমি আছে হরিপদর। তবু জাত ব্যবসা ছাড়ে নি সে। রামকান্ত বোস স্ট্রিটে বিভূতিবাবুর শ্বশুরবাড়িতেও সে দুধ দেয়। ওখানে সবাই বলে হরিপদ দুধে জল মেশায় না, জলে দুধে মেশায়। হরিপদ একটা টিনের কৌটো ভরা দুধ দেখিয়ে বলে, 'এটা একদিন খেয়ে দেখুন না ... দুধ কাকে বলে বুঝতে পারবেন। এই দেখুন ... ' , বলে একফোঁটা দুধ নিজের হাতের উল্টোদিকে ফেলে বলে, 'দেখুন দেখুন ... একেবারে বটের আঠার মতো ... পয়সা খরচ করবেন না তার কি হবে ... '। বাড়ির কারোরই অবশ্য হরিপদর এই দামী দুধের সঙ্গেও বটের আঠার ... ...
বুধবার বিকেলে তিনজনে আবার জড়ো হল শ্যামবাজারের কফিহাউসে । অমিতাভ স্নেহাংশুকে বলল, ' সেদিন ওরা কি বলছিল রে ? '----- ' কারা ? '----- ' ওই শতদল আর কমল দাস । '------ ' ও ... কিছু না । বলছিল কলেজ স্ট্রিটের হাউসে যেতে ... যোগাযোগ রাখতে .... এইসব । আমি আমাদের ব্যাপারটা ডিসক্লোজ করিনি ... '----- ' ভাল করেছিস । ফাইনালি পত্রিকা বেরোলে তো দেখতেই পাবে । আর ওদের কাছ থেকে কোন হেল্পের আশা না করাই ভাল .... 'সুনির্মল বলল, 'ওরা নিজের ধান্দা ছাড়া আর কিছু বোঝে না । আসলে ওরা চাইছে ... ...