অমৃতা জীবন ভালোবাসত – অফুরন্ত জীবনীশক্তি নিয়ে সে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছিল জীবনের সাথে। আরো সহজ করে বলতে গেলে সে বড় ভালোবাসা ভালোবাসত। স্বাভাবিক ভাবেই তার কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে ভালোবাসার কথা আর তার সাথে লেগে থাকা জীবনের কথা।
“নারী পরাজিত হতে ভালবাসে
লতিয়ে থাকে ভালো থাকার
ঘন সবুজ আস্তানায়”
একমাত্র ভালোবাসার কাছেই পরাজিত ছিল সে। সেই স্বেছা পরাজয়ের পর খুঁজে নিয়েছে সে নিজের আস্তানা – যেখানে আস্তানা মানে ঘর, আস্তানা মানে আশ্রয়, আস্তানা মানে নিজের একান্তের প্রকাশ। এক সময় কব ... ...
কবি অনেকদিন হতেই “জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা” বলে আশ্বাস দিয়ে এলেও ছোটবেলায় হালকা ডাউট ছিল কবি কোন ধনের কথা বলেছেন এবং ফেলা অর্থে কোথায় ফেলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন? ধন যে ফ্যালনা জিনিস নয়, সেটা আবার নিমোর ছেলেদের থেকে ভালো কে বুঝত! কিন্তু সেই নিয়ে কাব্যি করার জন্যি কনফিউশনটা তৈরী হয় আমাদের মধ্যে। যত দিন যায় ক্রমশঃ ততরূপে ধন আমাদের সামনে পরিস্ফুট হয়। এমন ভাবেই নিমো উন্নত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক অবস্থা পার করা এবং ক্লাস ফাইভে মেমারী বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে উঠে সি এ টি – ক্যাট বলে ... ...
প্রায় মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রফেশ্যনাল ম্যাসাজের বলতে আমার দৌড় ছিল ওই সিধু জ্যাঠা অবদিই। বাড়ির উঠোনে সেই সকাল থেকে বাড়ি শুদ্ধু পাবলিকের দাড়ি, চুল কাটা চলছে। প্রথমেই বাবার দিয়ে শুরু, বাবা দাড়ি কেটে নিমো ফটকগোড়ায় নারানের চায়ের দোকানে রোজকার প্রাতঃকালীন আড্ডায় চলে গেল। কাকা রবিবার ছূটির দিনে দাড়ি ইত্যাদি কেটে একবার গেল চাষের জমিতে রাউন্ড মারতে, সে রাউন্ড মারা অবশ্য সিম্বলিকই ছিল। কাজের কাজ বলতে কাকা মাঝে মাঝে জমি থেকে গোটা কতক মূলো তুলে এনে বলত, মূলো গুলো খাবার মত হয়ে গ্যাছে, মুড়ি দিয়ে খাব বলে নিয়ে এলা ... ...
"কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে” – এই জাতীয় প্রশ্ন মনে হয় কবি আমার মত পাবলিকদের উদ্দেশ্যেই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন সেই কবে। আর তারও আগে থেকে আমার মত পাবলিকদের মায়েরাই ‘সুখে থাকতে ভুতে কিলোয়” বাগধারাটিকে শুধু টিকিয়ে নয় বরং জাগ্রত করে রেখেছেন আমাদের বিদ্ধ করে করেই। সেই দিন ভোর বেলা নাগাদ ফুরফুরে হাওয়ায় বারান্দায় চা খেতে গিয়ে বাঁদরের নাচানাচি এবং পাখির ডাক শুনতে শুনতে ভুতে কিলোনোর ব্যাপারটা আবার চাগাড় দিয়ে উঠল। প্রায় সবার ডাকনাম আছে, কিন্তু আমার কেন নেই – তার মানে কি আমার দিকে ঠিক মত নজর দেওয়া হয় ... ...
বছরের সেই সময়টা এসে গেল – যখন বসের সাথে বসে ফর্মালি ভাঁটাতে হবে সারা বছর কি ছড়িয়েছি এবং কি মণিমুক্ত কুড়িয়েছি। এ আলোচনা আমার চিরপরিচিত, আমি মোটামুটি চিরকাল বঞ্চিতদেরই দলে। তবে মার্ক্সীস ভাবধারার অধীনে দীর্ঘকাল সম্পৃক্ত থাকার জন্য বঞ্চনার ইতিহাসের সাথে আমি প্রবলভাবে ফ্যামিলিয়ার। সেই ভাবধারার অনেক কিছু ভুলে গেলেও মূল সারবস্তু মাথায় গেঁথে আছে – “নিজের অবস্থার জন্য সর্বদাই পরকে দায়ী করবে, তুমি না টের পেলেও জানবে যে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত সবসময় তোমার মাথার উপর ঘুরপাক খাচ্ছে”। সেই আমি যখন ক্যাপিটালিষ্ট ... ...
পর্ব – দুই
সমস্ত রাতের গন্ধে তুমি কি পতঙ্গ রঙ পাও?
“ডাচেরা ফুল ভালোবাসে” এই নিয়ে কবিতা হতে পারে, অথচ ডাচেদের নিয়ে কবিতা লেখার তেমন কিছু নেই আপাত দৃষ্টিতে। ওরা আঁকতে পারে, ডাচেদেরও আঁকতে পারি – সেই উইন্ডমিল, কাঠের জুতো, সাদা-নীল ফ্রক পরে হাত ধরে ঘুরতে থাকা তরুণী, যৌবন, কানের পাশ দিয়ে লতিয়ে নামা সোনালী চুল। এ শহরে কেউ নীল সাদা ফ্রক পড়ে না – গ্রীষ্ম পোষাক উড়িয়ে দেয় নয়ত হিম হিম করে আসা কান ঢাকা, খয়েরী ঠোঁটের ওভারকোট মাথায় নীচু করে বাতাস এড়িয়ে চলে। ... ...
এত প্রশ্ন আমাকে আগে কেউ করেছে কিনা আমার ঠিক মনে পড়ল না। সেই প্রশ্ন কর্তাদের লিষ্টে অন্তর্ভুক্ত আছেঃ
১। অ্যালাপ্যাথি ডাক্তার।
হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নয় কিন্তু – তাদের আবার বিরাট রেঞ্জের প্রশ্ন ক্ষেপণের স্বভাব আছে। আমাদের নিমো বাস স্ট্যান্ডের নারাণ ডাক্তার আমার লাইফ প্রশ্নবাণে যাকে বলে জর্জরিত করে দিয়েছিল একবার। সেবার ডান হাতের তর্জনীর তালুর দিকে একটা কি ফোঁড়ার মতন হল – মাল আর ফাটছে না, এদিকে উইকেট কিপিং করতে গিয়ে দেদার লাগছে। বেশ ভজকট অবস্থা। বাপকে বলতেও পারছি না যে কিপিং করতে অসুব ... ...
১।
সেলিব্রিটি পাবলিকদের মাঝে মাঝে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেবার সময় গুগলি প্রশ্ন দেবার চেষ্টা করে। তেমনি এক অখাদ্য গুগলি টাইপের প্রশ্ন হল, আপনি জীবনে সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট কি পেয়েছেন এবং কার কাছ থেকে। বলাই বাহুল্য আমি বিখ্যাত কেউ নেই, তাই আমাকে এই প্রশ্ন কেউ করে নি। কিন্তু আমি নিজে নিজেকে অনেক করেছি সেই জিজ্ঞাসা।
প্রচন্ড ভেবে ভেবে দেখা গেল - লাইফে কমপ্লিমেন্ট পাবার মতন তেমন কিছু তো করি নি! অবশ্য ক্লাস সেভেন থেকে প্রায় টুয়েলভ পর্যন্ত কার্তিক, চঞ্চল সহ অনেক জনতাকে দায়িত্ব নিয়ে ইংরাজ ... ...
গরমের দিনে মাটির কলসী, শীতের দিনে আসকে পিঠে বানাবার মাটির সড়া, সরুচাকলীর তাওয়া, সর্বসময়ের ধুনুচী, পুজোর সিজিনের ঘট, মোচ্ছবের – হব্যিষ্যির মালসা ইত্যাদি নানা মাটির জিনিসের ওয়ান স্টপ শপ্ আমাদের গ্রামে ছিল রশিদ চাচার দোকান। চাচার বাড়ির কাঠামো ছিল অনেকটা প্যারিসের ল্যুভের মিউজিয়ামের মত, মানে তিন দিক খোলা, একদিক ফাঁকা – আর যে তিন দিক ঘেরা তার দুই দিকে যথাক্রমে পুরানো এবং নতুন বাড়ি এবং একদিকে পাঁচিল। বাকি খালি দিকে রইল গিয়ে জুঙ্গিতে নামক এক দীঘি এবং চাচার অন্দর মহলের অপার রহস্য। এমন নয় যে চাচার অনেক ... ...
নব্বই এর দশকে “শাসো কি জরুরত হ্যা জ্যায়সে...” এবং “ইয়ে কালে কালে আঁখে...” এই দুই যুগান্তকারী ঢেঊয়ের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আমাদের সাথে পরিচয় হয় ‘ক্যালোরি’ নামক জিনিসটির। তবে সেই ক্ষণে ক্যালোরির অর্থ আমাদের কাছে নিতান্তই আক্ষরিক ছিল – শক্তির একক হিসাবে। আরো খুলে বলতে গেলে যান্ত্রিক শক্তি কেবলমাত্র। পড়াশুনার গন্ডির বাইরে এই ক্যালোরি জিনিসটি নিয়ে যে নাড়াঘাঁটা করতে হতে পারে ভবিষ্যতে, সেই ভাবনা আমাদের কল্পনাতেও আসে নি। তবে কিনা ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন এই প্রবাদবাক্য মেনে অভিজ্ঞতা হল যে খাবার ... ...