...অথচ শুরু থেকেই এটি অপহরণের ঘটনা হিসেবে আমলে নিয়ে তদন্ত করলে হয়তো কিশোরী পাহাড়ি মেয়ে লাকিংমের সন্ধান পাওয়া যেত, অপহরণের পর ১১ মাস ধরে মেয়েটিকে কিভাবে কোথায় কোথায় রাখা হয়েছে, কিভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে তার ধর্ম, ভূয়া জন্ম সনদে কিভাবে বাল্যবিবাহে বাধ্য করা হয়েছে সবই বেরিয়ে আসতো। হতভাগ্য মেয়েটিকেও হয়তো এভাবে জীবন দিতে হতো না। সবচেয়ে বড়কথা, ১২ দিন আগে সন্তানের জন্ম দিয়েই একটি মেয়ে তুচ্ছ পারিবারিক কলহের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষয়টি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়! ... ... ...
…এই ছবি মুক্তির সাথে সাথে যেন বাঙালি পুরুষ জাতির শৌর্যবীর্য দিকে দিকে প্রকাশিত হচ্ছে। স্বস্তিকার অভিনয় শিল্প ও কাহিনীর চরিত্রের সাথে মানানসই লকডাউনে ঈষৎ আটপৌরে পোষাক ইত্যাদিতে স্যোশাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভার্চুয়াল যৌন হেনস্তার বান ডেকেছে। কেন স্বস্তিকা পোস্টারে অন্তর্বাস ও আঁচল সরে যাওয়া স্তনাভাস দেখালেন, কেন ফেসবুক “হইচই” পেজের বিজ্ঞাপনে তিনি স্মার্ট হেয়ার স্টাইলে নারী মুক্তির কথা বললেন, এ নিয়ে একের পর এক কি বিভৎস ধর্ষমর্ষকামী অগনিত কুৎসিত মন্তব্য আসছে!...আসলে এইসব বেটাগিরির চপেটাঘাতই এই ছবি ... ...
শেষ বিকেলের রোদে আমরা পৌঁছাই রূপকারী গ্রামে। সেখানে রূপালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের এক কোনে মঞ্চ নির্মাণ করে পিসিপি শোকসভার আয়োজন করেছে। মঞ্চের পেছনে সদ্য নির্মিত চারটি কালো রঙের স্মৃতিস্তম্ভ মনে করিয়ে দেয় কল্পনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে চারজন তরুনের জীবনদানের কথা। শোকসভাকে ঘিরে কয়েকটি গ্রামের আদিবাসী নারী-পুরুষ-শিশু ভীড় জমান। পুরো স্কুল মাঠ যখন কানায় কানায় পূর্ণ, তখন মঞ্চে উঠে কল্পনা চাকমাকে নিয়ে লেখা গান ধরেন স্কুল শিক্ষক ব্রহ্মকুমার (লালফা) চাকমা। এবার সমবেশে ওঠে শব্দহীন কান্নার রোল। মঞ্চে পিসিপির ছেলেমেয়েরা বক্তৃতা দিতে গিয়ে বার বার খেই হারিয়ে ফেলেন, কান্নায় তাদের গলা বুজে আসতে চায়।... ... ...
হাজংদের ‘প্যাঁক খেলার’ মতো কক্সবাজার-পটুয়াখালির রাখাইনদের রয়েছে আরেক ঐতিহ্যবাহী পানি-খেলা উৎসব-- সাংগ্রেং। পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারাও পানি খেলার আয়োজন করেন, তারা একে বলেন-- সাংগ্রেই পোয়ে। সেটি অবশ্য বর্ষ বিদায় ও বর্ষ বরণের ভিন্ন এক উৎসব। আর বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে বসবাসকারী গারো বা মান্দি জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে বীজ বপনের উৎসব ‘রঞ্চুগালা’ ও নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’। আর চাকমাদের বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় উৎসবের নাম ‘বিঝু’। ত্রিপুরারা তাদের চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবকে বলেন ‘বৈসুক’। সাঁওতাল আদিবাসীর রয়েছে নবান্ন উৎসব ‘সোহরাই বাহা’ ও বৃক্ষ বন্দনা ‘কারাম’ উৎসবের ঐতিহ্য। ... ...
“…আমি পরিমান বা সংখ্যাকে প্রাধান্য দেই না। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র কয়েকটা, কিন্তু সুনীল গাঙ্গুলীর প্রায় চারশ’। অথচ বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমবাবুকে কেউ অতিক্রম করতে পেরেছেন? লেখকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মেধাবী রচনা লেখা। লেখকের যদি লেখার প্রতি কমিটমেন্ট না থাকে”… বিশিষ্ট লেখক, চিন্তক আহমদ ছফা, নয়ের দশকের আলাপচারিতায় ... ...
...লোকালয় বিচ্ছিন্ন বান্দরবানের পাহাড়ের রুমার দূর বগালেকের পাড়ের রেস্ট হাউজ, কাম মাচাং ঘরটি প্রাচীন কোনো গুহা বলে ভ্রম হয়। যেন পথহারা দুই পর্বত অভিযাত্রী অবিরাম পরিকল্পনা করে চলেছেন উদ্ধারের আশায়। বুনো পাখির ঝাঁক প্রাতরাশ সারতে বেরিয়ে তীব্র চিৎকারে ডাকে বার বার। দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা দ্রব্যগুনের প্রলাপে ছেদ পড়ে।... ... ...
…বন্ধু বুদ্ধজ্যোতি চাকমাসহ কিশোরী কন্যা ময় মহাজনের আপ্যায়নে শাপলা লতা-সিঁদোলের (সিঁদোল বা নাপ্পি, একধরণের শুটকি মাছ) ঝোল তরকারি ও খানিকটা গরম ভাতে সেরে ফেলা হবে সকালের খাবার। এক ফাঁকে “ময়” কথাটির অর্থ জানতে চাওয়ায় লাজুক কিশোরীর চতুর উত্তর হবে এ রকম : “যখন আপনারা ক্রেওক্রাডং-এর চুড়ায় পৌঁছাবেন, তখনই জানতে পারবেন এই নামের অর্থ!” অবশ্য আরো পরে জানা হয়েছে, বম ভাষায় “ময়” কথাটির মানে সুন্দরী। ক্রেওক্রাডং-এর খাড়া পাহাড়ি পথ ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা চলা শুরু। দীর্ঘতর পাহাড়ের পথযাত্রায় মুগ্ধ হতে হয় বিচিত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। চারপাশে সুনসান নীরব পাহাড়ের পরে পাহাড়, মেঘের পরে মেঘ, অরণ্যর পরে অরণ্য, সবুজের পর আরো সবুজ...যেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি টেলিভিশনের ভেতর ঢুকে পড়া গেছে। ... ...
…"অতএব, আমরা হইহই করে বাসে চেপে বেরিয়ে এলাম জাদুঘর - ডোডোপাখির দিকে চোখ টিপে বললাম, সি ইউ দেন - চিড়িয়াখানার শিম্পাঞ্জিটা আমাদের দেখে হইহই করে উঠল, মানুষ না দেখে দেখে বড্ডো ক্লান্ত ছিল সে-ও - ভিক্টোরিয়ার ঘাসগুলো বেড়ে উঠেছে অনেকটা এরই মধ্যে, বসতে গেলে একটু অস্বস্তিই হয় - সে হোক, আমাদের হাতে দস্তানা, মুখে ঢাকনা আঁটা। আসলে, ভুলে গেছিলাম, মারণাস্ত্র সবক্ষেত্রে দৃশ্যমান নয়।"… (বিষাণ) ... ...
…এবার দুজনে ছোট একটা পাহাড় থেকে নীচে নামতে থাকি। ছম ছম শব্দ এখন আরো প্রকট হচ্ছে। হঠাৎ টর্চের আলোয় এক বিস্ময়ের খানিকটা দেখে জুমলিয়ান দা’র বাহু আকড়ে ধরি। ‘ও দা, ও দা, মুই মরি যেম।’ ...অপর বাংলার পাহাড়ে পরিভ্রমণ… ... ...
শত ব্যস্ততা, নিত্যকর্ম, আর কর্পোরেট কার্টিসির ব্যুহ ভেদ করে বার বার মনের গহিনে গোপনে হানা দেয় পাহাড়ের গণহত্যা, গণধর্ষন, ত্রিপুরার শরণার্থী শিবির, কল্পনা চাকমা অপহরণ, মেশিন গানের গুলির ভেতর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মিছিল-- আরো অসংখ্য রক্তাক্ত অতীত স্মৃতি… কেউ জানে না সে এক গোপন হরর থ্রিলার যাত্রা, ব্যাং ব্যাং ক্লাবের একই কেভিন-যন্ত্রণা! আর ঘুমের ঘোরে এখনো ফিরে ফিরে আসে বাঘাইছড়ির সেই আশ্চর্য দেবশিশুর দল।... ... ...