আওয়াজকে অনুসন্ধান করতে মোরসালিনের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় ছেলেটি। এক সময় সেখানে ফুটে উঠা আস্বাসের উপর ভর রেখে ছুটতে শুর করে… ব্লকের ঢালে গড়িয়ে যেতে যেতে সে পতঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। মোরসালিনের চোখ যতই ক্ষুদে বণিকটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে, ততই যেন ব্রিজটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। ছেলেটা যত নীচু হতে থাকে, ব্রিজটা ততই উঁচু হতে থাকে তার দৃষ্টিসীমাকে অদ্ভুত সব কনিক উপহার দিয়ে। ... ...
মারিয়ামের ভাষায় গণিতের সৌন্দর্য তার কাছেই ধরা দেয়, যে ধৈর্য ধরে অনুসরণ করতে পারে একে। তিনি দাবী করতেন যে, তিনি একজন ধীর চিন্তক, অনেকটা সময় ব্যয় করার পরই কেবল পরিষ্কার হত তার কাছে পথটা। তার কাছে গাণিতিক সমস্যার সমাধান ছিল যেন জংগলে হারিয়ে যাওয়া, সমস্ত জ্ঞানকে ব্যবহার করে এরপর একটি কৌশল যার প্রয়োগ ও কিছুটা ভাগ্যের সহায়তায় এরপর পাহাড়ের চুড়োয় উঠে যাওয়া, আর সব কিছু পরিষ্কার দেখতে পাওয়া, বিস্তৃতভাবে। মারিয়াম তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, “জানার চেষ্টা কর, আসলেই তুমি কী চাও, আর কখনোই পথ-বিচ্যূত হয়ো না।“মারিয়াম বিনোদন শিল্পে ‘জিনিয়াস’ এর যে অদ্ভুতুরে রূপটি প্রদর্শিত হয়, সেরকম ছিলেন না। তার বন্ধুরা বলেন, “মারইয়াম আর দশজনের মতই মনোরম ছিলেন এবং আমরা তাকে এরকমই ভালবাসতাম যদি তার কোন স্বীকৃতি নাও থাকতো।“ ... ...
কিন্তু সেই ছিল আমার সত্যিকারের স্মার্ট ফোন… না ভুল হচ্ছে, স্মার্ট বললে তাকে অপমান করা হয়, সেই ছিল স্মার্টেস্ট। আমার সেই ফোনটার একটা জীবন ছিল, সে আমার কথা শুনতো, আমায় বুঝতো। সে যে আমাকে চিনতে পারত, বিশ্বাস হয় না? হাতে নিলে টের পেতেন, কেমন গাইগুই করছে! তার একটা ভাষা ছিল - আমি বুঝতে পারতাম; তার একটা আলতো স্পন্দন - সে শুধু আমার কাছেই ধরা দিত। তারও ছিল চাওয়া-পাওয়া, আমায় সে মুখ ফুটে বলেনি, কিন্তু আমি জানতাম, আমি তার কান্না অনুভব করতে পারতাম। কিন্তু কি যে হল! কি করে এতটা অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম? ... ...
অনেক দিন বাদে কিছু লোক তাকে দেখতে পায় একটি গাছ তলায়। একটি বেলচা দিয়ে তলোয়ারের মত করে মূহুর্মূহ আক্রমণ শাণাচ্ছিল সে অনন্ত শূণ্যকে লক্ষ্য করে। সে কি মাছি মারছিল? না কি গল্প তাড়াচ্ছিল, প্রতি মুহূর্তে যারা তার মাথায় ভর করত? সে বলত তার গল্প-পাওয়া রোগের কথা, কেউ সে কথা বিশ্বাস করেনি। একটা সময় সে সবকিছুতেই গল্প পেত, সব গল্প মিলেমিশে এমন গল্পহীন হয়ে উঠতো, সে শেষ খুঁজে পেত না আর! ... ...
বলা হয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত যেত না। সারা দুনিয়ায় ছিল এই সাম্রাজ্যবাদের নাগপাশ, উলম্ব জিহবা। কিন্তু শেখ-শাসিত দেশগুলো হাতে পায়ে ধরে ডেকে এনেছিল এই জিহবাকে, কোন ছল-বল-কৌশল করতে হয় সাপকে জিহবা বিস্তারে। কিন্তু কেন এই আহবান? কোন ভিক্ষার তরে অবনত মস্তক আর করজোর প্রার্থনা ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশরাজের দরবারে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তিন প্রকারের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। প্রথমটি ছিল কুটনৈতিক, যেখানে পরষ্পর যুধ্যমান উপসাগরীয় শাসকদের মধ্যকার শান্তি আলোচনায় সালিসি করতে ব্রিটিশ প্রভুকে প্রয়োজন পড়েছিল। শুধু তাই নয়, আলোচনা থেকে কোন সন্ধি বা যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছুতে পারলে, তাতে জামানতকারী হওয়ার জন্য নিকটস্থ ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিকেই সব থেকে উপযুক্ত মনে হত তাদের। দ্বিতীয় সাহায্যটি ছিল নৌ সম্বন্ধীয় যেখানে সামুদ্রিক চুক্তির শর্তগুলো মানতে বাধ্য করার জন্য ব্রিটিশ দন্ড কামনা করা হত। এছাড়া শেখসাম্রাজ্য ও তাদের অধীনস্ত প্রজাদের নৌ-শত্রুর আক্রমন থেকে প্রতিরক্ষার তরেও ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করা হত। আর সর্বশেষ ও ৩য় প্রার্থিত সাহায্যটি ছিল সামরিক, অর্থাৎ, তাদের অধীনস্ত এলাকাগুলোকে স্থলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করা। তবে এসব ছাড়াও আরো কিছু ভূমিকায় ব্রিটিশকুশীলবরা অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির গতিপথ চিরদিনের জন্য নির্ধারন করে দিয়েছিলেন, এঁকে দিয়েছিলেন অর্থনৈতিক ভুগোলের এক স্থায়ী মানচিত্র অনাগত কালের জন্য। ... ...
কখনো কখনো পকেটে হাত বাড়ায়। আজ এক চিলতে দেখে নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ফ্লাইওভারে অবস্থানকালে সে অনেক নীচের দিগন্ত ছাড়িয়ে যাওয়া সরু রেলপথখানি প্রতিদিন একবার হলেও দেখে নেয়, লাইনের বস্তিগুলোতে চলা জীবনপ্রবাহ তাকে বিষাদগ্রস্ত করে, সামাজিক বৈষম্য নিয়ে চিন্তার খোরাক দান করে। সেখান থেকে ফ্লাইওভারে উঠে আসা হাতই হয়ত তার চোখের সামনে প্রসারিত হয়। কিন্তু একই হাত বার বার এলে বিস্বাদ লাগে ব্যাপারটা। পাতা হাতের বাজারও একই অর্থনীতি চলে মনে হয়, পাতা হাতেও নতুনত্ব চাই, ভিন্ন গল্পের স্বাদ চাই হাতের বিবৃতিতে। ... ...
বিশ্বজুড়ে সম্পদের একটি সাধারণ প্রবণতা হল, গরীবদের কাছে থেকে সেই ধনীদের কাছে চলে যাওয়া যারা ভোগ করে কম, যার স্বাভাবিক পরিণতি- প্রনোদণার অভাবে চাহিদায় বন্ধ্যাত্ব তৈরী হওয়া এবং ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থনীতির তলা ফুটো হয়ে যাওয়া। প্রখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রঘুনাথ রাজন মনে করেন, করোনা মহামারী এ চিত্র কিছুটা হলেও পালটে দিয়েছে, চাহিদা এই মুহুর্তে এতটা পরিপুষ্ট যে, আয় ও সম্পদের সমতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে? ব্র্যাকের একটি গবেষনায় উঠে এসেছে, করোনা মহামারির আগে যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হত, সেখানে করোনাকালে ৪ শতাংশ হারে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্টতই অর্থনৈতিক চাহিদার বলবর্ধক ঔষুধগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠির শরীর অবধি পৌঁছুতে পারেনি আমাদের দেশে। ... ...
এই পৃথিবীটা যেন একটি ছোট্র চায়ের দোকান, এখানে আমরা আসি জীবন নাট্যে অংশ নিতে। কেউ ভূমিকা নেয় প্রভুর, কেউ বা দীনহীন নিরীহ প্রজার। এখানে অভিনীত হয়ে চলে কত ঘটনা, দুর্ঘটনা জীবনের বিশাল ক্যানভাসে। একই সূর্যবংশে সৃষ্ট হলেও, পরষ্পরের আত্মীয় হলেও, সূর্যের লালা রক্ত দিয়ে বাঁধা থাকলেও, আলো- জল-উত্তাপ দিয়ে গড়াপেটা হলেও আমরাই কিনা সারাক্ষণ দ্বন্দ্বে মেতে থাকি, চলে ধ্বংসের হোলিখেলা, ধুলোর সাগরে নিমজ্জিত হয়ে ফের হই ধুলো, যা থেকে সৃষ্টি হয় মহাজাগতিক নক্ষত্রের, “চা খেতে খেতেই ছোট্র সে দোকানে লেগেছিল সে সে-যে কি চুলোচুলি-/মালিকে-চাকরে খিস্তি খেউর/উলুড়ি ধুলুরি কী ধুলোধুলি।“ ... ...
''আমাকে আমার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দাও, আমার হাতগুলোকে মুক্ত কর, আমি তো তোমাকে তোমার জিনিস সব দিয়ে দিয়েছি, নিজের কাছে রাখিনি কিছুই আহা! তোমার চেইনগুলো আমার মণিবন্ধকে রক্তাক্ত করছে আমি সেগুলো রাখিনি, আর সেগুলোও আমাকে নিষ্কৃতি দেয়নি কেন আমি পূরণ করে যাই প্রতিশ্রুতি যার মর্যাদা তুমি রাখো না?’’ ... ...