এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • এপার গড়া আর ওপার ভাঙার অর্থনীতি

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ৮০৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এপার গড়া আর ওপার ভাঙার অর্থনীতি

    স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসে প্রায়ই খবর হয় রনাঙ্গনের কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, বিবৃত হয় সেই পরিবারের কোন সদস্যের কায়িক শ্রমের কঠোর জীবনধারনের কথা। খবর পাঠ শেষে পাঠকের মনকে তাড়া করতে থাকে যে অবধারিত প্রশ্নটি, তা হল, বাংলাদেশ এই পঞ্চাশ বছরে কতটুকু উন্নয়ন করেছে তাহলে? কিন্তু এই মুক্তিযোদ্ধা সন্তান যদি দিনমজুরী না করে শুয়ে-বসে কাটাতো আলিশান দালানের সুশীতল  কক্ষে, তাহলেও কি পাঠক একই প্রশ্ন দ্বারা তাড়িত হত?

    অর্থনীতির অণুবীক্ষণে একজন পরিণত বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের দিনমজুরের জীবন উন্নয়নের প্রচলিত সংজ্ঞার সাথে তেমন বিরোধ তৈরী করে না কিন্তু।  সত্যি বলতে কি, যে যার জ্ঞান ও দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করে এবং আধুনিক অর্থনীতির দাবিও তাই। কিন্তু কোন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান যদি তার পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পায়, অথবা, এমন মজুরী না পায় যা থেকে সে তার বাচ্চার ভাল খাওয়া, পরা নিশ্চিত করতে পারে, অথবা, যদি তার সন্তান ভাল শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসুরক্ষার অভাবে তার মেধাকে বিকশিত করতে না পারে সৃষ্টিশীল কোন খাতে,  উন্নয়নের গল্প সেক্ষেত্রে অবশ্যই রূপকথায়  পর্যবসিত হয়।   

    বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় ২৫৫৪ ডলার যা শক্তিশালী ভারতের সাথে ক্লোজ ফিনিস রেসে রয়েছে। গত ১৩ বছরে আমাদের গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৩ শতাংশ, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫.১ শতাংশ।  ১৯৯১ সালের পর জাতীয় দারিদ্র্য ধারাবাহিক হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালে ৩১.৫%, ২০১৬ সালে ২৪.৩% এবং ২০১৯ সালে ২০.৫% দাঁড়িয়েছে।

    এই বাংলাদেশই আবার জিনি সহগ ০.৫৫, যা পাকিস্তানের থেকে ১০ গুন বেশি। জিনি সহগ বৈষম্যের পরিমাপ করে, সেই বৈষম্য যার জবাব দিতে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। আশির দশক থেকে দারিদ্র্য হ্রাস পাওয়ার ধারা অব্যাহত আছে সত্যি, কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৬ সময়ে হ্রাসের হার সংকুচিত হয়ে ১.২% -এ নেমে গিয়েছে ২০০৫ থকে ২০১০ সময়ের ১.৭% থেকে। প্রবৃদ্ধির ঘোড়া তীব্র বেগে ছুটে চলার পরেও এই সংকোচন আমাদের স্মরন করিয়ে দেয়, আয় বন্টনে অসমতার অসুখ বিপদজনক মোড় নিচ্ছে।  বৈষম্যের আরেক সূচক পালমা রেশিও ১৯৬৩-৬৪ সালের ১.৬৮ থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৩ সালে ২.৯৩-এ পৌঁছেছে। পাঁচ বছরের  শিশুদের অপুষ্টির শতকরা হার সবচেয়ে দরিদ্র অর্থাৎ নীচের ২০% জনগোষ্ঠীতে ৪৫, যেখানে সবচেয়ে ধনী অর্থাৎ উপরের ২০% জনগোষ্ঠীতে এই হার ১৭.৪। 

    তাহলে সমস্যা কোথায়? উত্তর পেতে দেশ জুড়ে চলা মেগা প্রজেক্টগুলোর তাকানো যেতে পারে। প্রফেসর রেহমান সোবহানের মতে, এগুলো যে  চার থেকে পাঁচগুন বেড়ে যায়, তা থেকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠিবিশেষের নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের আলামত স্পষ্ট। তার মতে, বিগত  ৫০ বছরে সম্পদ বন্টনে বড় ধরণের অন্যায্যতা হয়েছে, বাজার অর্থনীতি জনগনের নাগালে নেই, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান মানুষের খাস জমি দখল করে নিচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যে পুঁজি যোগান দেয়া হয়েছে, তা সামাজিক ও নিরাপত্তা খাতের চেয়ে বেশি। খবর বেরিয়েছে, দেশের ব্যক্তিখাতের ১৫% সম্পদ কেন্দ্রীভূত গুলশানে।

    বিশ্বজুড়ে সম্পদের একটি সাধারণ প্রবণতা হল, গরীবদের কাছে থেকে সেই ধনীদের কাছে চলে যাওয়া যারা ভোগ করে কম, যার স্বাভাবিক পরিণতি- প্রনোদণার অভাবে চাহিদায় বন্ধ্যাত্ব তৈরী হওয়া এবং ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থনীতির তলা ফুটো হয়ে যাওয়া।  প্রখ্যাত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ রঘুনাথ রাজন মনে করেন, করোনা মহামারী এ চিত্র কিছুটা হলেও পালটে দিয়েছে,  চাহিদা এই মুহুর্তে এতটা পরিপুষ্ট যে, আয় ও সম্পদের সমতা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে? ব্র্যাকের একটি গবেষনায় উঠে এসেছে,  করোনা মহামারির আগে যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হত, সেখানে করোনাকালে ৪ শতাংশ হারে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে। স্পষ্টতই অর্থনৈতিক চাহিদার বলবর্ধক ঔষুধগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠির শরীর অবধি পৌঁছুতে পারেনি আমাদের দেশে।    

    একবার ব্রিটিশ ভারতের কয়েকটি প্রদেশে স্যানিটারি কমিশন গঠিত হয়েছিল; কিন্তু তা ছিল মূলত সেনাবাহিনির স্বাস্থ্যরক্ষার দিকটা খেয়াল করতে। সেই সময় অর্থাৎ ১৮৮২ সালে সৈন্যবাহিনীতে মৃত্যু হার হ্রাস পেয়ে হাজারে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছিল; অথচ ১৮৮১-৯১ সময়টাতে আপামর জনসাধারণের মধ্যে গড় মৃত্যুর হার ছিল হাজারে ৪০। ব্রিটিশ শাসন আমলে রেলপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে ১৮৩২ মাইল হলে বঙ্গদর্শনে বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের মন্তব্য ছিলঃ ‘’ আজি কালি বড় গোল শুনা যায় যে আমাদের দেশের বড় শ্রীবৃদ্ধি হইতেছে। এতকাল আমাদিগের দেশ উৎসন্নে যাইতেছিল, এক্ষণে ইংরেজের শাসন কৌশলে আমরা সভ্য হইতেসি। আমাদের দেশের বড় মংগল হইতেসে। কি মংগল দেখিতে পাইতেস না? ঐ দেখ লৌহবর্ত্মে লৌহতুরংগ, কোটি উচ্চৈঃশ্রবাকে বলে অতিক্রম করিয়া, এক মাসের পথ এক দিনে যাইতেসে। ঐ দেখ অগ্মিময়ী তরণী ক্রীড়াশীল হংসের ন্যায় …. বাণিজ্য দ্রব্য বাহিয়া ছুটিতেসে। ….গ্যাসের প্রভাবে কোটি চন্দ্র জ্বলিতেসে….’’

    কিছুদিন আগে উপজেলা পর্যায়ের একটি স্কুলে  যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল কর্মসূত্রে।  মূল কম্পাউন্ডে পৌঁছুনোর আগে একটি বিশাল পুকুর চোখে প্রশান্তি ও আনন্দের পরশ বুলিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো। তো সেই আনন্দ  ফিকে হতে শুরু করলো যখন স্কুলটির হেড মাস্টার মহোদয় তার উন্নয়ন পরিকল্পণা সবিস্তারে বর্ণনা করতে শুরু করলেন। জানা গেল, খুব শীঘ্রই পুকরটি ভরাট করার কাজ শুরু হচ্ছে।  অচিরেই একটি নতুন ভবন নির্মিত হবে এবং নতুন কিছু শাখা খোলা হবে।  আমি খুব ব্যথিত হলেও অবাক হলাম না, কারণ আমাদের প্রধান শিক্ষাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই তো একটি মানুষ গড়ার ফ্যাক্টরিতে পরিণত হচ্ছে, একটি করে নতুন ডিসিপ্লিনের জন্ম নিচ্ছে বিশ্বের শিক্ষাকাশে আর নতুন ভবন দাড়িয়ে যাচ্ছে তাকে জায়গা করে দিতে। দেহের উপরিভাগের এই উন্নয়ন মডেল এখন দেশজুড়ে; যেখানে যতটুকু পারছে, জলাশয়, বন, মাটি সবকিছু খামচে ধরছে সে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।

    আমাদের উন্নয়নগুলো যেন কেমন কেমন, এ যেন সেই গানের ‘এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে, এই তো নদীর খেলা’র মত। যেমন, খবরে প্রকাশ, চলতি অর্থবছরে  রফতানি আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ।  ওদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২১  অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে টেক্সটাইল খাতকে, যা আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রাণবায়ু। এক ঐতিহাসিক আক্ষেপ করেছিলেন, সভ্য মানুষ পৃথিবীর উপর দিয়ে জোর কদমে হেঁটে গেছে আর রেখে গেছে বিপুল ধ্বংস তার পদচিহ্ন জুড়ে। এই কারণেই নাকি প্রগতিশীল সভ্যতাগুলি এক স্থান থেকে আর এক স্থানে সরে গেছে সব সময়। আমাদের দেশও সেদিকে এগুচ্ছে? বেপজা মিরসরাইয়ে ১১৫০ একর জমি লিজ নিয়েছে বেজার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর গড়ে তুলতে। তিন বছর আগে শুরু হওয়া এ কাজে ভূমি উন্নয়ন করতে যেয়ে বেজা ইছাখালি ইউনিয়নের ডাবরখালি খালটির দুই কিলোমিটার জুড়ে ভরাট করে ফেলেছে, ফলে খালটি ধীরে ধীরে মৃত্যুপানে ধাবিত হচ্ছে। অথচ ৩০০০ একর জমির চাষাবাদ নির্ভর করে এই খালটির উপর। সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর অবশ্য খালটি পুনর্স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন। এই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রচলিত আরেকটি উন্নয়ন মডেল। প্রাকৃতিক আঁধার ভরাট করে কাঠামো বানাতে টাকা খরচ করা হবে, পরে আবার তা ফিরিয়ে দিতে ফের খরচ করা হবে।

    ‘মাতাল তরণী’ কাব্যগ্রন্থে বিশ্বখ্যাত কবি আর্তুর র‍্যাঁবোর একটি পংক্তি আছেঃ 

    ‘এখন গ্রহটা গেছে প্যাচপ্যাচে বিশৃংখলায় ভরে
    চমকে উঠে ছুটে চল গ্রাম থেকে হয়ত শহরে
    আবার শহর থেকে ফিরে আয় গ্রামে
    গোলকধাঁধায় কারা প্রাণপণ আরামেই আছে …!’  

    একটি পরিসংখ্যানে পাওয়া যায়, ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসমষ্টির প্রায় অর্ধেক শহরে বাস করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে ৮৭ হাজার গ্রাম পাবে শহরের সুবিধা ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের অধীনে। কিন্তু এক ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়ন ঢাকায় জনসংখ্যার যে নিয়ন্ত্রন ছাড়া দাবানল ঘটাচ্ছে তা অর্থনীতির যেকোন মানসীমাকে ছাড়িয়ে গেছে, অন্য সব শহরের বৃদ্ধিকে বিঘ্নিত করছে, সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে। এর অর্থনৈতিক মূল্য হিসেবে প্রায় ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আমরা হারাচ্ছি।

    ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টঃ বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০’-এ গ্রামীন রুপান্তরের কথা বলা হয়েছে গ্রামাঞ্চলে কৃষি ও কৃষিবহির্ভূত খাতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। আবার, একই প্রতিবেদনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে, যারা কিনা প্রায়শই কৃষিজমিতে থাবা বসাচ্ছে। কৃষিমুখিতা সূচকে বাংলাদেশের মান ০.৫ থেকে ০.৪-এ নেমে এসেছে। এ নিম্নগামীতা থেকে স্পষ্ট যে, দেশের মোট জিডিপিতে কৃষির অবদানের তুলনায় সরকারী বিনিয়োগ প্রাপ্তি কম হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ জিডিপি মানে উচ্চ আয়ের দেশ হবে ঠিকই, কিন্তু সে অর্জন আসবে এর প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষ করার বিনিময়ে।

    স্মল ইজ বিউটিফুল বইতে শুমেখার দেখিয়েছেন, নির্বিচার নগরায়ন, জমি ও প্রাণী ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সঞ্চিতিকরন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ – এসব দারিদ্র্যের কারণে ঘটছে না, বরং, মেটা-ইকোনোমিক (অর্থাৎ, নীতির প্রতি একনিষ্ঠ থেকে সম্মিলিত স্বার্থের সর্বাধিক সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ) মূল্যবোধের প্রতি আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস না থাকাটাই এর জন্য দায়ী। প্রকৃতি শূণ্যতা ঘৃণা করে; তাই যখন মননগত জায়গাটা কোন উচ্চতর মূল্যবোধ দ্বারা পূর্ণ না থাকে, তখন তার স্থান নেয় অর্থনৈতিক ক্যালকুলাস যা  ক্ষুদ্র, নীচ ও বৈষয়িক স্বার্থের পাখায় ভর করে চলে।

    থমাস পিকেটি দেখিয়েছেন ফরাসি বিপ্লব ও দুইটা বিশ্বযুদ্ধ ধনীদের সপদ কমিয়েছে; যেহেত মূলধনের উপর মুনাফার হার সবসময়ই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারের থেকে বেশী থাকে, একমাত্র যুদ্ধ বা বড় কোন ঘটনাই পারে সুবিধাভোগী সমাজের সম্পদের মূল্য কমাতে। কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে সকলের আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ নিশ্চিতকরণে যে ‘জাতীয় আর্থিক অন্তর্ভূক্তি কৌশল – বাংলাদেশ’ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পণার সাথে সাযুজ্য রেখে, তাকে বাস্তবায়ন করতে পারলে আর যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না।  আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পণায় পরিবেশের ক্ষতি না করেই দীর্ঘ মেয়াদে অন্তর্ভুক্তিমূলক  ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, পানি, মাটি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

    একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, এই নীতি থেকে সবার জন্য গ্রামে বিনামূল্যে বাড়ি করে দেয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন আমাদের সরকার। কিন্তু বাড়ি হলেই যে মানুষ দুষিত শহর ছেড়ে চলে যাবে, তা নয়। তাদের পেট চালানোর ব্যবস্থাও করতে হবে। প্রগতিশীল ব্যক্তিগত আয়কর পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবনচক্রভিত্তিক রোজগার নিশ্চিত করা যায়।  নির্বিচার কর অব্যাহতি ও বেপরোয়া ব্যয়ের বর্জ্য অপ্রতিরোধ্য গতিতে ফাঁকা করছে সরকারের পকেট। কর ও ব্যয়নীতির আমুল সংস্কার সামাজিক বৈষম্যের অসুখ সারাতে সব থেকে কার্যকরী ঔষুধ হতে পারে।

    ১৯৫৫ সালে টম ডেল ও ভার্নন গিল কার্টার নামে দুজন পরিবেশবিদ ‘টপসয়েল এন্ড সিভিলাইজেশান’ নামে একখান বই প্রকাশ করেন, তাতে তারা লেখেনঃ হোক সভ্য বা বর্বর, মানুষ আসলে প্রকৃতির শিশু, কখনই প্রকৃতির প্রভু সে নয়। প্রকৃতির এই সূত্র মাথায় রেখে ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’  – জাতীয় এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলে সত্যিকারের উন্নত দেশ হয়ে উঠবে আমাদের জন্মভূমি। 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১২ ডিসেম্বর ২০২২ | ৮০৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বঙ্কিমের কোটেশনটা  | 117.194.211.119 | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:০৬514532
  • ঠিক করে দেবেন। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫৫516670
  • মামুন ভাই
     
    অসামান্য ! সহজ হওয়া সবচেয়ে কঠিন কাজ। আপনি অবহেলায় সেটি সাধন করেছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন